অবনীর বিয়ে..

oputanvir
4.7
(68)

আমার খুব ইচ্ছে অবনীকে একটু জড়িয়ে ধরি । মেয়েটার চোখে দিয়ে অনবরত পানি পড়ছে । আমার জন্য মেয়েটা কাঁদছে । কেঁদেই চলেছে । ক্যাম্পাসের এই পুকুর পাড়টা একটু নির্জন । মানুষ জন খুব একটা আসে না । অবশ্য আসলেও খুব একটা সমস্যা ছিল না । আমরা এমন কোন কাজ করছি না যে কেউ দেখে ফেললে সেটা আমাদের জন্য খারাপ কিছু হবে । তবে কেউ দেখলে তাদের মনে ঠিকই এই প্রশ্ন জাগবে যে মেয়েটা কেন এভাবে কাঁদছে !

আমি কোন মতে বললাম, অবনী, তুমি কেঁদো না প্লিজ । এভাবে কেঁদো না ।

অবনীর কান্না তো কমলোই না বরং বাড়ল আরো । কোন মতে সে বলল, আমি বাবাকে অনেক বার বোঝানোর চেষ্টা করেছি । বিশ্বাস করুন ।

-আমি জানি তুমি চেষ্টা করেছ । তুমি কেন কাঁদছো?

অবনী কেমন চোখে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো । আমার বুকের ভেতরে কেমন যেন করে উঠলো । মনে হল, ইস ! এই মেয়েটাকে আমার আর বিয়ে করা হল না । এই চমৎকার মেয়েটা কে আর পাওয়া হল না । 

আমি নিজের হাত দিয়ে অবনীর মাথায় হাত রাখলাম । তারপর বলল, কেঁদো না । এই জীবনে বাবা মায়ের ইচ্ছেটা অনেক বড় । তারা তোমার সব থেকে আপনজন । তারা তোমার ভালই চাইবে । 

অবনী কোন কথা বলল না । আমার দিকে তাকিয়ে রইলো আর নিরবে কাঁদতে লাগলো । 

ওর কান্না থামতে আরও কিছু সময় লাগলো । আমি তাকিয়ে দেখলাম চারিপাশটা অন্ধকার হয়ে আসছে । অবনীকে বললাম, বৃষ্টি নামবে মনে হয় । চল যাওয়া যাক । 

অবনীর নিজেকে সামলে নিতে আরও কিছু সময় লাগলো । টিস্যু নিয়ে নিজেকে চেহারা মুছে নিল । তারপর আমরা সামনের দিকে এগোতে লাগলাম । ক্যাম্পাসের সামনের দিকে এসেছি এমন সময় বৃষ্টি নামলো । আমি একটু তাড়াহুড়া করে হাটতে শুরু করতে যাবো, তখন দেখি অবনী হাটছে আস্তে আস্তে । ওর যেন দ্রুত হেটে বৃষ্টির হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার কোন ইচ্ছেই নেই । ওর ইচ্ছেই বৃষ্টিতে ভেজার । আমার দিকে তাকিয়ে বলল, আমার সাথে বৃষ্টিতে ভিজবেন ?

-চল ভিজি। 

বলতে না বলতেই ঝুম বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল । আমার কাছে মোবাইল ছাড়া আর কিছু নেই যা ভিজলে সমস্যা হবে  অবনী সেটা নিয়ে নিজের ব্যাগের ভেতরে ঢুকিয়ে রাখলো । তারপর আমার সাথে ভিজতে লাগলো । 

সত্যি বলতে কী, এমন একটা দিন যে আসবে সেটা আমি ভাবতে পারি নি ।

অবনী ঠিক আমার প্রেমিকা নয় । এমন কী সে আমার বন্ধুও নয় । ওর সাথে আমার পরিচয় আমাদের একটা কমন বন্ধুর মাধ্যমে । পড়ালেখা শেষ করে চাকরি পাওয়ার পরপরই আমার বাসা থেকে বিয়ের জন্য মেয়ে দেখা শুরু করে । এটাই স্বাভাবিক ছিল । আমারও খুব একটা আপত্তি ছিল না । এমনই এক সময়ে অবনীকে দেখতে পেলাম । বাবার দিককার এক আত্মীয় বাড়িতে । বিয়ের দাওয়াতে । সেখানেই ওকে আমার মা অবনীকে দেখলো । আমাকে দেখালো । তারপর মাস খানেকের মধ্যে মা কিভাবে যেন সব খোজ খবর নিয়ে ফেলল । 

চাকরি শুরু করলেও ক্যাম্পাসে আমি আসতাম নিয়মিত । আমার কয়েকজন বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতাম নিয়মিত । এই ক্যাম্পাসেই আবার অবনীর সাথে দেখা হল । আড্ডাই দিচ্ছিলাম তখন দেখলাম অবনী তার কয়েকজন বন্ধুর সাথেই আড্ডা দিচ্ছিলো । আমার মত সেও আমার দিকে তাকাচ্ছিল বারবার । এবং অবাক করার ব্যাপার হচ্ছে আমি যখন বন্ধুদের সাথে কথা বলছি তখনই আমার ফোনে একট ফোন এসে হাজির হল । অপরিচিত নম্বর । ফোন ধরতেই ওপাশ থেকে একজন বলে উঠলো, কত সময় থাকবেন ?

আমি বলতে গেলাম কে বলছেন কিন্তু থেমে গেলাম অবনীর দিকে তাকাতেই । অবনীর কানে ফোন এবং আমার দিকে তাকিয়ে রয়েছে । আমার বুঝতে মোটেই কষ্ট হল না যে যে ফোনটা অবনীই করেছে । সম্ভবত সে আমার নম্বর যোগার করেছে । 

আমি বললাম, এই আধা ঘন্টা । 

অবনী ওপাশ থেকে বলল, আচ্ছা যাওয়ার আগে একটু রোকেয়া হলের সামনে দাড়াবেন প্লিজ । 

আমি দেখলাম যে একটু পরে অবনী উঠে গেল । আমিও উঠে দাড়ালাম । বন্ধুদের সাথে বিদায় নিয়ে বের হয়ে এলাম । গিয়ে হাজির হলাম হলের সামনে । আমার দাড়াতেই দেখলাম অবনী সামনে এল । আমার দিকে তাকিয়ে বলল, কেমন আছেন?

-ভাল। তুমি ?

প্রথমেই তুমি বলতে একটু অস্বস্থি যে লাগছি না সেটা বলব না । তবে মেয়েটা আমার ছোটই হবে । এখনও পড়ালেখা শেষ হয় নি । ক্যাম্পাসের সিনিয়ার হিসাবেও তো তাকে তুমি বলা যায় । 

-আমি আছি ভালই । তা আপনি কি নিয়মিতই এখানে আসেন?

-হ্যা । অনেক দিনের অভ্যাস !

এইভাবে আমাদের কথা শুরু হল । প্রতিদিন আমাদের দেখা হল ক্যাম্পাসে । টুকটাক কথা হত । চা খাওয়া হত । ফোনে মেসেঞ্জারে প্রথমে চ্যাট তারপর ভয়েজ ভিডিও কল । এভাবে কেটে গেল মাস দুয়েক । বিয়ের কথা টুকটাক এগিয়ে চলছে । এমন সময় সব বন্ধ হয়ে গেল । অবনীর বাসা থেকে আমাদের জানানো হল যে এখন তারা মেয়েকে বিয়ে দিবে না । 

প্রথম কদিন দেখলাম অবনীও আমাকে এড়িয়ে চলল। তারপর একদিন নিজ থেকেই দেখা করলো । দেখা করে জানালো যে তার বাবা এক বিসিএস কাস্টম অফিসারকে পছন্দ করে তার জন্য । তার সাথেই বিয়ে দিবে । 

আমার মন একটু খারাপ হল । পাত্র হিসাবে আমি মোটামুটি । একটা বেসরকারী ব্যাংকে আমি চাকরি করি । বেতন বলা যায় বেশ তবে । তবে সেটা বিসিএস কাস্টমস অফিসারের কাছে কিছু না । যে কোন মেয়ের বাবাই আমাকে রেখে ঐটাই ভাল অপশনকেই মেনে নিবে । আমার বড় বোনের ক্ষেত্রেও আমার বাবা একই পন্থা বেঁছে নিয়ে। 

আমি একটু হাসলাম । তারপর ওকে ভাল থেকো বলে চলে এলাম । 

তবে অবনী তারপরেও আমার সাথে দেখা করতে থাকলো । ও মুখ ফুটে কিছু না বললেও আমার বুঝতে কষ্ট হল না যে মেয়েটা আমাকে পছন্দ করেছে এবং আমাকে বিয়ে করতে চায় কিন্তু বাবার কারণে কিছু বলতে পাচ্ছে না । আমিও কিছু বলতে পারছি না । 

কালকে অবনীর গায়ে হলুদ । আজকেও সে আমার সাথে সাথে দেখা করতে এসেছিল । এবং এ সময়ে এমন ভাবে বৃষ্টি নামলো । আমরা একসাথে আরও কিছু সময় বৃষ্টিতে ভিজলাম । তারপর এক সাথে রিক্সাতে করে আরও কিছু সময় ঘুরলাম আমরা । আমার মনে অদ্ভুত একটা অনুভূতি হচ্ছিলো । কেমন যেন ভাবছিলাম । বারবার কেবল মনে হচ্ছে এই মেয়েটার সাথে আমার বিয়ে হচ্ছে না । কালকেই মেয়েটা অন্য কারো হয়ে যাবে । ভাবতে কষ্ট লাগল। 

ওকে ওর বাসায় নামিয়ে দিলাম । তারপর আমি আরও কিছু সময় একা একাই ঘুরে বেড়ালাম একা একা । মনটা বড় বেশি উদাস হয়ে গেল । 

আমি ভেবেছিলাম হয়তো অবনীর সাথে আর কোন দিন দেখা হবে না । কিন্তু পরের দিনই যে আবার দেখা হবে সেটা আমার ধারণার বাইরে ছিল । সকালে অফিসে যাওয়ার জন্য বের হয়েছি এমন সময় অবনীর ফোন এসে হাজির । আমি ফোনটা পেয়ে একটু অবাক হলাম । ফোনটা ধরতেই ওপাশ থেকে বলল, আমি যাচ্ছি পার্লারে । আপনি আসবেন?

-আমি?

-হ্যা । আসবেন প্লিজ ?

-আচ্ছা । কোন পার্লারে?

-আপনার অফিসের কাছেই । ঐ রেনোভাটা আসে না, ওখানে…

-আচ্ছা আমি আসছি । 

অফিসের কাছে যেহেতু তাই খুব একটা সমস্যা হওয়ার কথা না । কিছু কাটিয়ে আবার অফিসে ফিরে যাবো । আমি পার্লারের সামনে যেতেই দেখতে পেলাম ওকে । ওর পরনে একটা সাদা টিশার্ট আর কাল জিন্স । হাতে একটা ব্যাগ । আমি কাছে যেতেই বললাম, আর কেউ আসে নি তোমার সাথে?

-না । 

-ও । চল ভেতরে ।

-আমি ভেতরে যাওয়ার জন্য আসি নি আজ।

আমি যেন ছোট খাটো একটা ধাক্কা খেলাম । কোন মতে বললাম, মানে? 

-মানে ?

-কালকের পরে কোন ভাবেই আমার কাউকে বিয়ে করা সম্ভব না । আমি সারা রাত ভেবেছি । 

-কিন্তু তোমার বাবা মা !

-আমি অনেক রিকোয়েস্ট করেছি তাদের । অনেক বুঝানোর চেষ্টা করেছি । তারা শুনে নি । কেবল নিজের সিদ্ধান্ত আমার উপরে চাপিয়ে দিয়েছে । এই ব্যাপারটা কাল আরও ভাল করে বুঝেছি আমি । 

-এখন?

-এখন আমি চাই আপনাকে বিয়ে করতে । যদি আপনি চান।

-আমি তো অবশ্যই চাই ।

-তাহলে চলুন । আর দেরি করে লাভ নেই । একবার বিয়ে হয়ে গেলে আর কিছু করার থাকবে না । 

তাই তো । একবার বিয়ে হয়ে গেলে আর কিছু করার থাকবে না । 

আমাদের অফিসের পাশেই একটা কাজী অফিস রয়েছে । ওকে নিয়ে সেই দিকে পা বাড়াতে যাবো ঠিক সেই সময়েই আমার কিছু একটার সাথে বেঁধে আমি পড়ে গেলাম । এবং সাথে সাথেই আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল । তাকিয়ে দেখি দুপুর হয়ে গেছে । আমি এতো সময় তাহলে স্বপ্ন দেখছিলাম । অবনী আসে নি । আসার কোন কারণ নেই । আজকে তার গায়ে হলুদ । কাল বিয়ে ।

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 4.7 / 5. Vote count: 68

No votes so far! Be the first to rate this post.


Discover more from অপু তানভীর

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

About অপু তানভীর

আমি অতি ভাল একজন ছেলে।

View all posts by অপু তানভীর →

2 Comments on “অবনীর বিয়ে..”

  1. বৃষ্টি তে ভেজাও হয় নি,,জড়িয়ে ধরাও হয় নি,,একরাশ অপুর্নতা রেখেই তাকে যেতে দিতে হয়েছিলো।। 😊

  2. আপনার তো বাস্তব সপ্ন সবই আসে, আমার কো কিছুই আসে না

Comments are closed.