এই সব মিথ্যা গল্প 2.4

oputanvir
4.3
(72)

মীরা কান্না বন্ধ করে কিছু সময়ে তাকিয়ে রইলো ওর ঘরের দিকে । পুরো ফ্লোর জুড়ে ভাঙ্গা কাঁচের চুকরো ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে । মীরার ইচ্ছে করছে না সেগুলো পরিস্কার করার । কার জন্য করবে? যার জন্য পরিস্কার করতো সেই মানুষটাই ওকে ছেড়ে চলে গেছে ! কেন করতে গিয়েছিলো কাজ টা? কেন জিসানের সাথে দেখা করতে গিয়েছিলো কেন ড্রিংক করেছিলো । কী দরকার ছিল ? জিসানের মনে যে এমন কিছু ছিল সেটা ও কোন দিনই ভাবতেও পারে নি ।

তারপর নিজেকেও দোষ দিল সে । কই ও তো নিজেও অপুকে বলেনি কথাটা । বলতে পারতো । যদি সেদিনই বলে দিত তাহলে আজকে অপু ওকে ছেড়ে চলে যেত না । নিজের ভুল স্বীকার করে নিলে সে আজকের মত এমন আচরন করতো না কোন ভাবেই ।

অপুর রাগের পেছনে কারণটা মীরা পরিস্কার বুঝতে পারে । যে কারো প্রেমিকা যদি তার প্রাক্তন প্রেমিকে চুমু খায় এবং সেই ভিডিও যদি অন্য কারো কাছ থেকে দেখতে পায় তাহলে যে কারো মাথা গরম হবে । যে কেউ ভাঙ্গচুর করবে । অপুও তাই করেছে । টেবিলে যত গ্লাস ছিল সব ভেঙ্গে ফেলেছে ও । এমন কি নিজের পছন্দের ল্যাপটপটাও ভেঙ্গে ফেলেছে । ওর রাগত চেহারাটা বারবার মীরার চোখের সামনে ভেসে উঠছে । সেই রাগান্বিত চেহারার পেছনে একটা তীব্র কষ্টে আহত মানুষের প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠেছিলো । প্রিয় মানুষটার কাছ থেকে প্রতারিত হওয়ার আঘাতে আহত ।
ও কি অপুকে প্রতারিত করেছে?
হ্যা তাই করেছে । অপু যদি একই কাজটা করতো তাহলে ওর নিজেও একই কথা মনে হত । ও যে অন্যায় করেছে সেটা কোন ভাবেই অস্বীকার করছে না । এই জন্য নিজেকে আরও বেশি ছোট লাগছে । অপুকে সে হারিয়ে ফেলেছে । একেবারে হারিয়ে ফেলেছে ।

মীরা আরেকবার ফোন দিল অপুকে । ফোন বন্ধ পেল । একটু আগেও রিং হচ্ছিলো । এখন আর হচ্ছে না । মোবাইলটা বন্ধ করে দিয়েছে অপু । আবারও সোফার উপরে গা টা এলিয়ে দিল সে । চোখ দিয়ে আবারও এক ফোটা পানি গড়িয়ে পড়লো ওর।

জিসানের সাথে ওর স্কুল আর কলেজ জীবনে একটা সম্পর্ক ছিল । কিন্তু একটা সময়ে টের পেল যে জিসানের স্বভাবটা ভাল না । প্রায়ই সে এর ওর দিকে সুযোগ নিতে যায় । অন্য অনেক মেয়ের সাথে কথা বলে এবং সেটা কেবল কথা বলাতে সীমাবদ্ধ নয় । আরও বেশি কিছু । একদিন একজনের সাথে হাতে নাতে জিসানকে ধরে ফেলল সে । তারপর সব সম্পর্ক শেষ করে দিল । জিসান অবশ্য আর ওকে খুব একটা জ্বালাতন করতে সাহস পায় নি । মীরার বাবা একজন পুলিশ অফিসার ।

এরপর বিশ্ব বিদ্যালয় জীবনে অপুর সাথে দেখা হয় । আস্তে আস্তে চেনা জানা তারপর এক সাথে হয়েছে ওরা । যতই দিন যাচ্ছিলো মীরার কেবল মনে হতে লাগলো যে এই ছেলেটা একদমই মনের মত । ঠিক যেমন ছেলে ও পছন্দ করে অপু ওকে একদমই তেমন ! তাই মীরা খুবই সিরিয়াস ছিল ওদের সম্পর্ক নিয়ে । অপুও তাই ছিল । পড়াশুনা শেষ করে চাকরি নেওয়ার পরপরই ওরা এক সাথে থাকতে শুরু করলো । যদিও বাসায় এখনও ওদের ব্যাপারটা জানানো হয় নি । বাসায় জানে একট ফ্ল্যাটে একজন রুমমেটের সাথে থাকে ও । কিন্তু সেই রুমমেটটা যে অপু এই ব্যাপারটা বাসায় এখনও জানে না । জানলে যে কী করবে সেটা মীরা ঠিক জানেও না । যদিও ওর ইচ্ছে খুব জলদিই ওরা বিয়ে করে ফেলবে । অপু আরও একটু ঘুছিয়ে নিয়ে বিয়ের দিকে যেতে চাইছে ।

তারপরেই ঘটনাটা ঘটলো । কলেজের রিউইনিওনে মীরা নিজের জেলায় গিয়ে হাজির হল । অনেকের মত জিসানও ছিল সেখানে । পার্টি আড্ডার ভেতরে ওরা আলাদা ভাবে একটু ড্রিংকও করলো সবাই মিলে । তখনই ঘটনাটা ঘটলো । জিসান এক পাশে নিয়ে গিয়ে চুমু খেল আর মীরা তাতে বাঁধাও দিল না । কিছু সময় চুমু খাওয়ার পরে ওর হুস ফিরলো । সাথে সাথে জিসানকে সরিয়ে দিয়ে অন্য দিকে চলে গেল ।

ফিরে আসার পরেও সে অপুকে বলল না কথাটা । মীরার এটা ভুল ছিল । অপুকে সত্য বলাটা দরকার ছিল । হয়তো সে কষ্ট পেত তবে ওকে এভাবে ছেড়ে যেত না । পরিস্থিতি ঠিক মত বুঝিয়ে বললে অপু বুঝতো । কিন্তু জিসানের মনে অন্য কিছু ছিল । জিসান ওর আরেক বন্ধুকে বলেছিলো চুমু খাওয়ার দৃশ্যটা ভিডিও করতে । তাই করেছিলো সে । সেই ভিডিওটাই অপুকে পাঠিয়ে দিয়েছে সে । ভিডিওটা অপু মীরাকে দেখালো । মীরা কেবল চোখ বড় বড় করে সেটার দিকে তাকিয়ে ছিল । ভিডিওকে কোন প্রকার জোর জবদস্তি ছিল না ।
মীরা কিছু বলতে পারলো না ।
অপু ওর সাথে কোন প্রকার চিৎকার চেঁচমিচি করলো না । তবে টেবিলে রাখা গ্লাস গুলো আছাড় ভেঙ্গে ফেলল । টেবিলের একদিকে ওর ল্যাপটপ টা ছিল । সেটাও প্রবল বেগে আছাড় মারলো । মীরা কেবল চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইলো । কোন কথাই বের করতে পারলো না । অপু এবার চিৎকার করে বলল, তোমার কাছ থেকে এটা আমি আশা করি নি মীরা । সত্যিই না । ইউ ব্রোক মাই হার্ট ! ইউ বিট্রেইড মি ।

আর কিছু না বলে অপু বের হয়ে গেল রুম থেকে । মীরা কেবল কাঠ হয়ে বসে রইলো ।

কখন যে মীরা ঘুমিয়ে পড়েছিলো সেটা নিজেও জানে না। ঘুম ভাঙ্গলো কিছুর একটা আওয়াজে । চোখ খুলতেই দেখলো অপুকে । মেঝেতে পড়ে থাকা কাঁচ পরিস্কার করছে । মীরা প্রথমে মনে করলো ও হয়তো স্বপ্ন দেখছে । চোখ পিটপিট করে তাকালো কিছু সময় । যখন বুঝতে পারলো যে স্বপ্নে দেখছে না তখন তীব্র একটা অনুভূতি একটা চিন্তাও করলো না সেটা নিয়ে । সোজা গিয়ে অপুকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো । তারপর ওর তীব্র কান্না বেরিয়ে এল । হুহু করে কেঁদেও ফেলল সে ।
এক সময়ে অনুভব করলো যে অপু ওর মাথায় হাত রেখেছে । মীরা যেন আরও শক্ত ভাবে জড়িয়ে ধরলো অপুকে ।

কাঁদতে কাঁদতেই মীরা বলল, বিশ্বাস কর আমি বুঝতে পারি নি । আমি খুব সরি । আমি খুব সরি । প্লিজ আমাকে ছেড়ে যেও না ।
অপু ওকে শান্তনা দেওয়ার সুরে বলল, আচ্ছা বাবা আমি যাচ্ছি না কোথাও । তখন আসলে ওভাবে তোমাকে চুমু খেতে দেখে সহ্য করতে পারি নি ।
-আমাকে ছেড়ে যাবে না তো ?
-না যাবো ।

এইবার মীরা যেন আরও একটু সাহস পেল । অপুকে একটু ছেড়ে দিয়ে এরপর শক্ত করে ওর ঠোঁটে শক্ত করে চুমু খেল ।

একটু পরে যখন নিজেকে খানিকটা শান্ত করলো তখনই পায়ের ব্যাথাটা অনুভব করতে পারলো । একটু চাপ দিতেই আউ করে মুখ দিয়ে চিৎকারটা বের হয়েই এল । অপু সাথে সাথেই বলল, কী হল?
-পায়ে !
অপু সেদিকে তাকিয়ে দেখলো সেখান দিয়ে রক্ত পড়ছে ।
অপু বলল, পা কেটে গেছে । তুমি কী বাচ্চা মানুষ । কাঁচের ভেতরে এভাবে কেন চলে এল !

তারপর ওকে কোলে তুলে নিয়ে ঘুরে সোফার উপরে বসালো । নিজে বসলো সামনে । তারপর মীরার পা টা নিজের হাটুর উপরে তুলে পরীক্ষা করতে লাগলো । সাথে চলল বকা দেওয়া । এতো কেয়ারলেস কেন সে !

মীরা অবশ্য সেদিকে খেয়াল করছে না । ওর চোখ তখন অপুর মুখের দিকে । সেখানে মীরার জন্য কী ব্যকুলতা । মীরা কী ভয়টাই না পেয়ে গিয়েছিলো । ভেবেছিলো অপুকে হয়তো সে হারিয়ে ফেলেছে । তবে এখন সেটা মনে হচ্ছে না । এই ছেলেটা ওকে ছেড়ে যাবে না । নিজের কাছেই একটা প্রতিজ্ঞা করলো মীরা । এই ছেলেটা মনে কষ্ট পায় এমন কোন কাজ সে আর কোন দিন করবে না । কোন দিন না !

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 4.3 / 5. Vote count: 72

No votes so far! Be the first to rate this post.

About অপু তানভীর

আমি অতি ভাল একজন ছেলে।

View all posts by অপু তানভীর →

One Comment on “এই সব মিথ্যা গল্প 2.4”

  1. কখনোই এরম হবার নয়।
    না গ্লাস ভাংচুর আর না ফিরে আসা?
    আমি ক্ষমা করে দিব কিন্তু ফিরে পেতে চাইবো না।

Comments are closed.