আরিয়ানা আমার দিকে তাকিয়ে রইলো খানিকটা বিব্রত ভাবে । আমি নিজেও খানিকটা অস্বস্তি বোধ করলাম । মনে হল আমার এখানে আসা মোটেই উচিৎ হয় নি । মেয়েটা সম্ভবত ওর মায়ের সাথে কথা বলছিল ফোনে । আমার সেই কথা শুনে ফেলা মোটেই উচিৎ হয় নি । অন্তত এমন পারিবারিক কথা বাইরের কারোই শোনা উচিৎ নয় । আমি শুনতেও চাই নি কিন্তু আমি এমন সময় চলে এসেছি যে না শুনে পারি নি ।
আমি আবার যেদিক থেকে এসেছিলাম সেদিকেই চলে গেলাম । আপাতত কফি খাওয়ার চিন্তা বাদ থাকুক । মেয়েটা আপাতত কিছু সময় একা থাকুক।
আরিয়ানাকে আমাদের অফিসে সবাই অন্য চোখে দেখে । সবার চোখেই একটা সমীহের একটা ভাব । এবং সবাই তাকে সব সময় একটা ইম্প্রেস করার চেষ্টাতে আছে । আমার ভেতরেও যে নেই সেই কথা আমি মোটেই বলবো না । এমন টা হওয়াই স্বাভাবিক । মেয়েটার বাঙালী হলেও আমেরিকান সিটিজেন । সেখানেই সে বড় হয়েছে । মাত্র কিছুদিন হয়েছে মেয়েটা আমাদের অফিসে এসে জয়েন করেছে ।
আমার মনে সব সময় একটা প্রশ্নই ঘুর পাক খেয়েছে যে এই মেয়েটা বড় হয়েছে আমেরিকাতে । সেখানকার সিটিজেন এবং পড়াশুনাও সেখানে । কিন্তু চাকরি করতে কেন এই দেশে এসে হাজির হল । নিজের দেশে এর থেকে আরও অনেক ভাল চাকরি সে করতে পারতো । আরও চমৎকার জীবন পেতে পারতো ! তাহলে এই দেশে কেন আসতে হল মেয়েটাকে? আজকে সম্ভবত একটা কারণ আমি জানতে পারলাম ।
মেয়েটার সাথে তার মায়ের সম্পর্ক সম্ভবত ভাল নয়। অন্তত ফোনে মেয়েটা যে কথা বলছিল সেটা শুনে আমার এটাই মনে হল ।
আমাদের অফিসের এক কোনায় একটা কিচেন রয়েছে । সেখানে যে কেউ চাইলে গিয়ে চা কিংকা কফি বানিয়ে খেতে পারে । আমি মাঝে মাঝে সেখানে গিয়ে নিজের কফি নিজে বানিয়ে নিয়ে আসি । এখানে তাই করতে হয় । পিয়ন যদিও আছে তবে তাদের কফি বানিয়ে নিয়ে আসা নিষেধ । কেউ যদি চা কফি খেতে চায় তাহলে তাকে নিজে উঠে নিয়ে আসতে হবে । আমিও আজকে নিজের কফি নিয়ে আসতে যাচ্ছিলাম । দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকতেই আরিয়ানাকে ভেতরে দেখতে পেলাম । সেও কফি খেতে এসেছিল । তবে সে এখন ফোনে কথা বলছে । খানিকটা চিৎকার করেই বলছে । আমি কয়েকটা লাইন শুনতে পেলাম কেবল।
মম আই হেইট ইউ । ডু ইউ হিয়ার দ্যাট । আই হেইট ইউ । আমি কোন দিন তোমার মুখ দেখতে চাই না ।
এই সময়ই আমাদের চোখাচোখি হল । আমার তখন কি করার দরকার আমি বুঝলাম না । কয়েক মুহুর্ত একে অন্যের দিকে তাকিয়ে রইলাম । তারপর আমার মনে হল আমার এখন চলে যাওয়া উচিৎ । তাই করলাম । আবারও দরজা বন্ধ করে দিয়ে আমি বের হয়ে এলাম । তারপর নিজের ডেস্কে গিয়ে বসে পড়লাম । নিজের কাজে মন দিতে চাইলাম কিন্তু বারবার আরিয়ানার কথাই মনে আসছিল । মেয়েটা তার মাকে ঘৃণা করে । সম্ভবত এই কারণেই দেশ ছেড়ে এখানে চলে এসেছে । এখানে একা একা থাকছে । কি এমন কারণ থাকতে পারে যে মেয়েটা এভাবে একা একা এতো দূরে চলে এল ? জানতে মন চাইছে কিন্তু জানার কোন উপায় নেই । আরিয়ানাকে কোন ভাবেই গিয়ে তো জিজ্ঞেস করা যাবে না কারণ টা । সুতরাং কৌতুহল টা দমন করে রাখতে হল ।
তবে একটা অবাক করার ঘটনা ঘটলো একটু পরেই । আমি নিজের ডেস্কে এসে বসেছি তার কিছু সময় পরে আরিয়ানা এসে দাড়ালো আমার সামনে । ওর হাতে একটা কফির মগ । আমার টেবিলে সেটা রাখতে রাখতে বলল, চিনি একটু কম দিয়েছি । আসলে জানি না তো কি রকম চিনি খান আপনি !
আমি সত্যিই অবাক হলাম । এটা ওর কাছ থেকে আশা করি নি । সম্ভবত ওকে দেখে আমি ফিরে চলে এসেছি, ওর মনে হয়েছে ওর কারণে আমি কফি খেতে পারি নি তাই নিজ থেকেই কফি বানিয়ে নিয়ে এসেছে । আমি কেবল বললাম, আরে আপনি কষ্ট করতে গেলেন কেন?
-ও কিছু না । ইঞ্জয় ইয়োর কফি !
আরিয়ানা চলে গেল । আমি কিছু সময় ওর চলে যাওয়া পথের দিকে কিছু সময় তাকিয়ে থেকে কফি হাতে নিলাম । চুমুক দিয়েই মনে হল আহ ! চমৎকার । মেয়েটা সত্যিই চমৎকার কফি বানায় তো ! এর ভেতরে কি দিয়েছে কে জানে , স্বাধটা চমৎকার লাগছে। আসলেই কি? নাকি আরিয়ানা বানিয়েছে বলে এমন চমৎকার মনে হচ্ছে !!
আরিয়ানার সাথে কথা হল ঐদিনই । অফিস থেকে বের হতে যাবো দেখলাম সামনে আরিয়ানা দাড়িয়ে রয়েছে । আমার জন্যই যে দাঁড়িয়ে রয়েছে সেটা বুঝতে আমার মোটেই কষ্ট হল না । আমাকে দেখতেই সামনে এগিয়ে এল । বলল, ব্যস্ত আছেন কি?
-কেন বলুন তো !
-না মানে আপনার সাথে কয়েকটা কথা বলার ছিল ।
-চলুন । আপনার জন্য সব ব্যস্ততা এক পাশে দূরে রাখকা হল ।
আরিয়ানেক নিয়ে পাশের একটা রেস্টুরেন্টে বসলাম । কফির অর্ডার দেওয়া হল । সাথে হালকা কিছু স্ন্যাক্স ।
আরিয়ানাকে কেমন যে একটু ইতস্তর করতে দেখলাম । আমার মনে হল সে আমাকে যে বলতে এসেছিল কিংবা চেয়েছিল শেশ মুহুর্তে এসে নিজের কাছে একটু দ্বিধায় পরেছে । আমাকে আসলেই কথাটা বলা ঠিক হবে কি না বুঝতে পারছে না । সেই নিয়ে মনের ভেতরে দ্বিধা দ্বন্দ্ব চলছে । আমি তার মনের দ্বিধা কাটাতে বললাম, যদি কিছু বলতে না চান ওকে । কোণ সমস্যা নেই । আমরা কলিগ যেহেতু, কফি খেতেই পারি ।
আরিয়ানা এবার আমার দিকে তাকালো । তারপর বলল, আপনি তো শুনেছেন কিছু কথা তাই না?
আমি বললাম, আমি আসলে এমন কিছুই শুনি নি । আপনাকে এটা নিয়ে মোটেই চিন্তিত হতে হবে না । আমি কেবল শুনেছি যে আপনি কোন কারণে আপনার মায়ের উপর রেগে আছেন। এমন টা স্বাভাবিক হতেই পারে ।
আরিয়ানা মাথা নাড়ল । তারপর বলল, না এটা স্বাভাবিক না । আমি সত্যিই তাকে ঘৃণা করি । সম্ভব ঘৃণা করি ।
কথা টা বলতে বলতেই দেখতে পেলাম যে আরিয়ানার মুখটা কেমন যেন লাল হয়ে গেল । একটা তীব্র রাগের চিহ্ন দেখতে পেলাম আমি । আমি এটা দেখে একটু অবাকই হলাম । এতো রাগ এতো ঘৃণার কারণ কি থাকতে পারে !
আরিয়ানা ঐদিন আর কিছু বলল না । তবে আমরা এর পর থেকে বেশ ভাল বন্ধু হয়ে গেলাম । টুকটাক কথা বলতাম । এদিক ওদিক যেতাম ।
একদিন আরিয়ানা আমাকে বলল, এই দেশে সব কিছু এমন কেন?
-এমন বলতে?
-মানে একটা মানুষের খোজ পাওয়া এতো মুশকিল কেন? কোন কিছুরই সঠিক রেকর্ড নেই । কেউ সাহায্য করতে চায় না । সব কেমন অসম্ভব মনে হচ্ছে ।
আমি হাসলাম । তারপর বললাম এটা থার্ড ওয়ার্ল্ড কান্ট্রি । এমন টা হওয়াটাই স্বাভবিক । এখন বল তুমি কাকে খুজছো?
-একটা মানুষ আরমান আহমেদ নাম ছিল তার ।
-এই এক নাম দিয়ে তো খোজ বের করা যাবে না । বাবা নাম, গ্রাম, জেলা এসব দরকার ।
-বাবার নাম বলতে পারবো না। গ্রামও না ।
-তাহলে কিভাবে হবে ?
-লোকটা আজ থেকে ২৪ বছর আগে জেলে গিয়েছিল । তার ১৪ বছর জেল হয়েছিল ।
আমি একটু চমকালাম । জেল ! ২৪ বছর আগে! আমি বললাম, ২৪ বছর আগে ! তার মানে ১৯৯৬ সালে । কোন আদালতে বিচার হয়েছিল বলতে পারবে?
-ঢাকাতেই ছিল ।
-তার মানে ঢাকা জজ কোর্টে । কি কেসে জেল হয়েছে?
-নারী নির্যাতন কেস । তার বউ মামলা করেছিল ।
আমি কিছু সময় কি যেন ভাবলাম । বিশেষ করে আরিয়ানার মুখের ভাবের পরিবর্তন দেখে আমার মাথায় চিন্তাটা এল । মেয়েটার মুখ হঠাৎ কালো হয়ে গেছে । কেমন একটা বেদনার ছাপ দেখতে পেলাম । আমি বললাম, আই গেস আই ক্যান্স হেল্প !
-পারবে?
-হ্যা । আমার এক বন্ধু আছে এসিস্ট্যান্ট জাজ। এছাড়া বেশ কয়েজকন বিসিএস ক্যাডার বন্ধু আছে । পুলিশে রয়েছে । আশা করা যায় খোজ বের করা যাবে । লেট মি ট্রাই !
সত্যিই খোজ পাওয়া গেল । রবিন খুব সাহায্য করলো । সেই পুরানো কেস ফাইন বের করে নিয়ে এল । ১৯৯৬ সালেই কেস ফাইন হয়েছিল । বিচার হয়েছিল দ্রুত । আরমান আহমেদ নিজের বউকে পেটাতো । বউয়ের অভিযোগে আরমান আহমেদ কে গ্রেফতার করা হয় । তার ব্যাগের ভেতর থেকে এক বোতল এসিড উদ্ধার করা হয়েছিল । সে স্বীকার করে সে তার স্ত্রীর মুখে ছুড়ে মারার জন্য এই বোতল নিয়ে ঘুরছিল । তার ১৪ বছরের জেল হয় । পরে জেল থেকে সে ২০০৬ সালে মুক্তি পায় । জেলে তার আচরনের কারণেই তাকে একটু আগে আগে মুক্তি দেওয়া হয় । এরপর অবশ্য আর কোন খোজ নেই । জেল থেকে বের হয়ে সে কো দিকে গেছে কারো জানা নেই । তবে এই কেস ফাইল থেকে তার নাম বাবার নাম, গ্রামের বাড়ি ঠিকানা পাওয়া গেল ।
আমি আরিয়ানার সাথে যেতে চাইলাম । গ্রাম টা মুন্সিগঞ্জের ভেতরে । বসুল্লাহ নামের একটা গ্রাম । আরিয়ানা কোন দিন সেদিকে যায় নি আমি নিশ্চিত । কিন্তু এখনু এটা বুঝতে পারছিলাম না যে এই লোকটাকে সে কেন খুজছে। আই মিন যে লোকটা নিজের বউকে এভাবে পেটাতো সেই লোকটাকে খোজার কারণ কি সেটা আমি মোটেও বুঝতে পারছিলাম না ।
একটা নোয়া ভাড়া করলাম পুরো দিনের জন্য । সকালে রওয়ানা দিবো আর সন্ধ্যা কিংবা রাতে ফিরে আসবো । পুরো সময়ে গাড়ি আমাদের সাথেই থাকবে ।
গাড়ি চলতে শুরু করলে আমি আরিয়ার মুখে একটা চাপা উত্তেজনা দেখতে পাচ্ছিলাম । কেমন একটা উদ্দিগ্নের ছায়া দেখতে পাচ্ছিলাম । যদিও আমরা কেউই জানি না যে আমরা যে লোকটাকে খুজতে যাচ্ছি সে ঐ গ্রামে আদৌও আছে কি না ।
যাওয়ার পরে আরিয়ানা চুপচাপই ছিল । হঠাৎ সে বলে উঠলো, তোমার মনে খুব কৌতুহল হচ্ছে তাই না?
-একটু যে হচ্ছে না তা বলব না । তবে তুমি যদি না বলতে চাও কিংবা বলতে অস্বস্থি লাগে তাহলে বলতে হবে না । তোমার সাথে যে ঘুরে বেড়াচ্ছে আমি এতেই খুশি ।
আরও কিছু সময় চুপ করে থেকে আরিয়ানা বলল, আরমান আহমেদ আমার বাবা !
-বাবা !
-হুম । বাবার সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না । কেবল জানি আমার মায়ের কারণে আমার বাবার জীবনটা নষ্ট হয়ে গেছে । বাবার বিয়ের আগেই মায়ের একজনের সাথে সম্পর্কে ছিল । সে সম্পর্কে মায়ের খালাতো ভাই ছিল । তবে মায়ের বাবা মানে আমার নানার কারনে সেই ছেলের সাথে নাকি মায়ের বিয়ে হয় নি । বিয়ের দুই বছর পর্যন্ত সব ঠিক ছিল । নানা মারা গেলেন । ততদিনে আমি হয়েছি। একদিন মা বাবার নামে এই নির্যাতনের মামলা করেন । শক্ত কেস হয় । বাবার জেল হয় । জেল হওয়ার কয়েক মাসের মাথায় মা তার সেই খালাতো ভাইকে বিয়ে করেন এবং আমাকে সহ আমেরিকা চলে যান ।
আমি বললাম, তুমি কি নিশ্চিত?
-হ্যা । এটা আমি তাদের মুখেই শুনেছি। আমি যখন বুঝতে শিখেছি তখন থেকেই বিশ্রেই ঝগড়া করতো তারা । মানে আমার মা আর তার নতুন স্বামী । মা ততদিনে আমেরিকার সিটিজেনশীপ পেয়ে গেছে । বিশ্রী সেই ঝগড়ার ভেতরে এই কথা গুলো উঠে আসতো । আমার এক খালা, মানে মায়ের বোন থাকে নিউ জার্সিতে । সম্পর্কে খুব একটা ভাল নয় মায়ের সাথে । তার সাথে একদিন আমার পরিচয় হয় । সে আমাকে আরও বিস্তারিত সব বলে । তবে বাবার নাম ছাড়া সে কিছুই বলতে পারে নি। বেশি কিছু তার জানা ছিল না ।
দেখতে পেলাম আরিয়ানা কাঁদছে । আমার কি মনে হল ওর হাত ধরলাম । তারপর বললাম, তাকে খুজে পাবো । চিন্তা কর না ।
-জানো অপু, এই সত্য জানার পর থেকে আমার পুরো পৃথিবী যেন নড়ে উঠেছিল । একজন মানুষ কিভাবে অন্য একজনের এমন একটা ক্ষতি করতে পারে ! কিভাবে? মন টিকছে না, ভালোবাসো না ওকে ছেড়ে দাও । আলদা হয়ে যায় ! তাই বলে এই ভাবে একজনের জীবন ধ্বংশ করে দিতে হবে !
কথায় আছে কপালে থাকলে কি না হয় । আরমান আহমেদ কে আমরা ঠিকই খুজে পেলাম । কিন্তু তার অবস্থা ছিল খুবই খারাপ । জেল থেকে বের হয়ে সে নিজের গ্রামে ফিরে এসেছিল । তার নিজের ভাইদের কাছে । আর বিয়ে শাদী করেন নি । ভাইদের বাসার পাশে একটা ছোট ঘরে সে থাকতো । একেবারে নির্জীব হয়ে গিয়েছিলেন সে । কার সাথে কথা বলতো না মিশতো না । সারাদিন নিজের ঘরে নয়তো পুকুর পাড়ে বসে থাকতো আর উদাস চোখে সামনের দিকে তাকিয়ে থাকতো ।
গতবছর তার শরীর হঠাৎ করেই খারাপ হয়ে যায় । ডাক্তারের কাছে নিয়ে গিয়ে জানা যায় যে কোণ সিরিয়াস রোগ তার শরীরে নেই তবে সে নিজে বেঁচে থাকতে চাইছে না । তার মনে সেই আশা নেই । এই কারণে শরীরের সব কিছু আস্তে আস্তে কেমন ম্যালফাংশ করা শুরু করেছে । এক সময় তিনি বিছানাতে পড়ে গেলেন। দিন দিন এগিয়ে যেতে লাগলেন মৃত্যুর দিকে । এতোদিনে সম্ভবত মরেই যেতেন তবে আরিয়ানার কারণেই সম্ভবত এতোদিন মারা যান নি । আমরা যখন বাজারে আরমান আহমেদ নাম করে খুজতেছিলাম তখন আরমান আহমেদের ছোট ভাইয়ের সাথে আমাদের দেখা হয় । তার দোকান রয়েছে বাজারে । সেই আমাদের নিয়ে যায় পরে সব কিছু বলে ।
আমরা এসেছিলাম এক দিন থাকবো বলে তবে আমরা থাকলাম মোট তিন দিন । ঠিক তিন দিনের মাথায় আরিয়ানার বাবা মারা গেলেন । তবে তিনি এই তিন দিন উঠে বসেছিলেন । আরিয়ানার হাত ধরে হেটেছিলেন। তার মুখে আমি একটা তৃপ্তিময় আনন্দ দেখতে পেয়েছিলাম । নিজের মেয়েকে কাছে পেয়ে সে অতীত জীবনের সব কষ্ট যেন ভুলে গিয়েছিলেন ।
পরিশিষ্টঃ
আরিয়ানা কে নিয়ে ফিরে আসার সময় ও আমার খুব কাছে বসে ছিল । এক সময় আমার কাধে মাথা রেখে টুকটাক কথা বলছিল ।
-জানো বাবা শেষ সময়ে কি বলেছিল?
-কি ?
-বলল যে আমি মায়ের উপরে রাগ না রাখি । তার কাছে যেন ফিরে যাই । আমি ছাড়া নাকি তার আর কেউ নেই। কি অদ্ভুত মানুষ টা ! যে মানুষটা তার জীবন নষ্ট করে দিল সেই মানুষটার জন্য এখনও ভাবছে সে !
আমি বললাম, তুমি বরং একটু ঘুমাও ।এই কটা দিন তুমি পুরোটা সময় বাবার পাশে ছিল । অনেক পরিশ্রম হয়েছে ।
-কি যে শান্তি পেয়েছি জানো !
-তোমার বাবাও শেষ সময়ে শান্তি পেয়েছে । তার সব কষ্ট দূর হয়েছে। মনের ভেতরে আফসোস রেখো না ।
আরিয়ানা জবাব দিলো না । অনুভব করলাম সে চোখ বন্ধ করে ঘুমিয়ে পরেছে । ওকে আর জাগালাম না । ঘুমাক ।
সমাপ্ত
গল্পটির মূল থিম টি হিমু সিইরজের একটা বই থেকে নেওয়া । আরও বিস্তারিত।
খুবই ভালো লাগলো