অপেক্ষার প্রহর শেষ

অপু তানভীর
4.3
(11)

নীরা নিজেও জানে না সে কেন এখানে এল? এখানে আসার সময়ে এই প্রশ্নটা সে নিজেকে বেশ কয়েক করেছে। বারবার মনে হচ্ছিল যে সে কেন যাচ্ছে ফয়সালের কাছে? কয়েকবারই মনে হয়েছে যে ট্রেন থামলেই সে ফিরতি পথ ধরবে। তবে সেটা আর করা হয় নি। সুমনের মা তাকে অনেকটা জোর করে পাঠিয়েছে এখানে। সে দিনের পরে দিন নিজের ভেতরেই থেকেছে। সুমনের স্মৃতি নিয়ে বাকি জীবন সে পার করে দিতে চেয়েছে। বেঁঁচে থাকতে চেয়েছে কেবল সুমনকে নিয়েই।
সুমনের মৃত্যুর প্রায় দুই বছর পরে সে এখানে এল। এই অচেনা গ্রামে, অচেনা একজন মানুষের কাছে। কেন সে এখানে এল সেটা নীরা সত্যিই জানে না।
বুড়োলোকটা জানালো যে ছোট সাহেব মাঠে গিয়েছে। ছোট সাহেব মানে যে সে ফয়সালকে বুঝিয়েছে সেটা নীরার বুঝতে কষ্ট হল না। নীরা বড় উঠানের দিকে তাকাল। বেশ কয়েকটা ছাগল আর তাদের সাথে তাদের ছোটছোট বাচ্চা ঘুরে বেড়াচ্ছে। নীরার কী মনে হল, ওখান থেকে একটা ছাগলের বাচ্চা কোলে তুলে নিল। সাথে সাথে বাচ্চাটা ম্যাম্যা বলে চিৎকার জুড়ে দিল। কিছু সময় কোল থেকে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টাও করল । তবে নীরা যখনই একটা আদর করল বাচ্চাটাকে তখন বাচ্চা চুপ হয়ে গেল । সে নিশ্চিত ভাবে বুঝতে পেরেছে যে ওকে যে কোলে তুলে নিয়েছে সে তাকে কোন ক্ষতি করবে না বরং তাদের আদর করছে। পশু পাখি এই আদর ভালোবাসার ব্যাপারটা বুঝতে পারে খুব ভাল ভাবেই।
নীরা বাচ্চাটাকে কোলে নিয়েই সামনে দিকে এগিয়ে গেল। চারিদিকে একবার তাকিয়ে দেকছে সে। একই সাথে কয়েক জোড়া কৌতুহলী চোখও নীরার নজরে এল। সবাই ওর দিকে তাকিয়ে আছে তবে সাহস করে এগিয়ে আসছে না কেউ। গেট দিয়ে ঢুকেই বাড়ির বড় রোয়াক। তারপর বিশাল বড় একটা উঠান। এক দিকে রান্না ঘর অন্য দিকে একটু দুরে একটা গোয়াল ঘর দেখা যাচ্ছে। এই দুয়ের মাঝ দিয়ে গেলে একটা বড় পুকুরের পাড়। নীরা বাচ্চা কোলে নিয়ে সেই পুকুর পাড়ের দিকে এগিয়ে গেল। বসার জন্য সেখানে সিমেন্টের বেঞ্চ রয়েছে। নীরা সেখানে বসে পড়ল।
বাড়িটা সত্যিই একেবারে গল্পের বইয়ের মত সুন্দর। ফয়সাল তাহলে গত আড়াই বছর ধরে এখানেই আছে। একেবারে শহরের জীবন ত্যাগ করে দিয়ে এখানে চলে এসেছে। নীরা জানে ফয়সালের এই সিদ্ধান্তের পেছনে তার একটা হাত আছে। ফয়সাল ওর নিজের কারণেই ঢাকা ছেড়ে এখানে চলে এসেছে। আর আজকে সে এখানে এসেছে ফরসালের কারণে। ফয়সালের সেই চিঠিতে সে কী অদ্ভুত ভাবেই বলেছিল যে সুমনের প্রতি ওর এই ভালোবাসা দেখে ফয়সালের ওর প্রতি আগ্রহ নাকি আরও বেড়েছে। জীবনে একবার হলেও এই ভালোবাসার স্বাদ সে নিতে চায়?
আচ্ছা নীরা কি আসলেই সুমন ছাড়া আর কাউকে কোন দিন ভালোবাসতে পারবে? তার বুকের ভেতরে নিংড়ে থাকা প্রতিটা ভালোবাসার বিন্দু কেবল সুমনের জন্যই। সেখানে অন্য কারো স্থান কোন দিন হয় নি।
ফয়সাল এলো আরও আধা ঘন্টা পরে। নীরা ভেবেছিল সে বুঝি পাক্কা কৃষকের মত লুঙ্গি পরে আসবে তবে তেমন কিছুই হল না। সাধারণ টিশার্ট আর একটা প্যান্ট পরনে। প্যান্টটা গোটানো হাটু পর্যন্ত। পায়ে একটু কাদা মাটি লেগেছে । নীরার দিকে তাকিয়ে একটু হাসল। এমন একটা ভাব যেন ফায়সাল সত্যিই জানতো যে নীরা আসবে।
পুকুর পাড়ে হাত পা ধুয়ে ফয়সাল উঠে বসল নীরার পাশে। তারপর বলল, অবশেষে এলে !
নীরা একটু দ্বিধায় পড়ল। যখন ফরসালের সাথে অফিসে কাজ করতো তখন সে ফয়সালকে আপনি করেই বলত। এখন ফয়সাল ওকে খুব স্বাভাবিক ভাবে তুমি করে বলছে। নীরার কী তুমি করে বলা উচিত? নারীর মধ্যে দ্বিধা কাটল না।
নীরা সেই প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে একটু হাসল।
ফয়সাল বলল, আমাকে আগে জানালে আমি স্টেশনে যেতাম।
-আসলে কোন কষ্ট হয় নি। সেই দিন থেকে এখানেই আছেন?
-হুম। এখানেই। বলতে পারো তোমাকে পাঠানো ঠিকানা তো এটাই ছিল। আমার মনে একটা বিশ্বাস ছিল একদিন না একদিন তুমি আসবেই।
-দেখুন আমি এখন কন কথা আগে থেকেই দিচ্ছি না। আমি নিজেও জানি না এখানে আমি কেন এসেছি। সত্যিই জানি না।
ফয়সাল যেন একটু আশাহত হল। তবে সেটা মুহুর্তের ভেতরেই কেটে গেল। সে বলল, চল ভেতরে যাওয়া যাক। এখানে আর না বসে থাকি। নীরার আরেকটু বসে থাকতে ইচ্ছে হল বটে তবে সে আর বসল না। ছাগলের বাচ্চাটা কোলে নিয়ে উঠে দাড়াল।
রাতে খাওয়া দাওয়া করে একটু যেন জলদি শুয়ে পড়ল। গ্রামে নাকি সবাই জলদি জলদি ঘুমিয়ে পড়ে। শহরের মত অনেক রাত পর্যন্ত কেউ জাগে না। তবে সবাওই বেশ সকাল বেলাতে উঠে পড়ে। নীরার একটা ভয় ছিল যে নতুন জায়গা বলে বোধহয় তার ঘুম আসবে না। তবে নীরা খানিকটা অবাক হয়েই দেখলো যে বিছানাতে উঠতেই ঘুমে তার চোখে লেগে এল। ৫ মিনিটের ভেতরে ঘুমিয়ে পড়ল সে। শেষ কবে এতো জলদি নীরা ঘুমিয়ে পড়েছিল সেটা তার জানা নেই।

খুব ভোরে নীরার ঘুম ভাঙ্গল। কিছু সময় শুয়েই রইলো রাতের বেলা তার জলদি ঘুমিয়ে পড়ার ব্যাপারটা মনে পড়ল। এতোদিন পরে সে রাতের বেলা সুমনের কথা না ভেবেই ঘুমিয়ে পড়েছে। ব্যাপারটা ওর কাছে অন্য রকম লাগল। এমন কেন হল? গতরাতে ঘুমানোর সময় সে সুমনের কথা কেন ভাবল না। মনের ভেতরে একটা তীব্র অপরাধবোধ জাগল ওর।
সুমন প্রতিরাতে ওর সাথে লম্বা সময় ধরে কথা বলত। এমন কি যখন সুমন অসুস্থ হয়ে পড়ল তখনও ওরা অনেক কথা বলত। যখন ফোনে আর কথা বলার মত অবস্থা রইলো না তখন নীরা নিজেই সুমনের বাসায় এসে থাকতে শুরু করল। সুমন চলে যাওয়ার পরেও নীরার এই অভ্যাসটা রয়েই গেল। রাতে ঘুমানোর একটা লম্বা সময় সে কল্পনাতে সুমনের সাথে কথা বলত। প্রতিদিন কত ওদের। এমন কি এখানে আসার আগের দিনও সে সুমনের সাথে কথা বলেছিল। বলাই বাহুল্য যে সব কথা সে নিজেই বলে, নিজেই আবার উত্তর দেয়। কিন্তু গতকাল রাতে বিছানায় মাথা ঠেকাতেই ঘুম চলে এল, সকালে উঠে এই ব্যাপারটা ওর কাছে সত্যি অবাক করল। এমনটা কেন হল সেটা নীরা বুঝতে পারল না।
নীরা জানালা দিয়ে বাইরে তাকালো। বিশাল বড় জানালা দিয়ে বাইরের আলো এসে পড়ছে। জানালাটা খোলাই ছিল। ফয়সাল ওকে জানিয়েছিল যে এখানে চোরের কোন ভয় নেই। তাই চাইলে জানালা খুলেই সে ঘুমাতে পারে। তাহলে রাতে ভাল ঘুম হবে। কিন্তু এতো ভাল ঘুম হবে সেটা নীরা ভাবে নি।
বিছানা থেকে উঠে সে সামনের বারান্দায় এসে দাড়াল। এই বারান্দা থেকে বিস্তৃর্ণ ফসলের মাঠ দেখা যাচ্ছে। মাঠের চেহারা এখন খানিকটা সোনালী। ধান পাঁকতে শুরু করেছে। নীরা সেদিকে মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে রইলো। একটু আগের মন খারাপের ভাবটা কেটে গেল দ্রুত। এক ভাবে সে বাইরের দৃশ্যের দিকে তাকিয়ে রইলো। কতটা সময় পার হয়েছে সেটা সে নিজেও জানে না। তার তন্ময় ভাঙ্গল যখন নিচ থেকে ডাক আসল। তাকিয়ে দেখল ফয়সাল দাঁড়িয়ে আছে। ওর দিকে তাকিয়ে বলল, গুড মর্নিং। নাস্তায় খাবে?
নীরা একটু হাসল। গুড মর্নিং।
-ঘুম ভাল হয়েছে।
-হ্যা। অনেক দিন পরে রাতে ভাল ঘুম হল।
-এটাই এখানকার সুবিধা। ঘুম ভাল হয়। তা খাবে কী সকালে?
-একটা কিছু হলেই হল।

সকালে নাস্তা টেবিলে দেখল বেশ ভাল আয়োজন করা হয়েছে। পরোটা, কয়েক ধরনের ভাজি, মুরগির মাংস।
-প্রতিদিন সকালেই কি এতো রান্না হয় নাকি শুধু আমার জন্য?
-এতো না রান্না হলেও কাছাকাছি । আমি সাধারণত তেল ছাড়া পরোটা খাই। সাথে ভাজি আর মাংস থাকে। বাকিরা রুটি আবার কেউ খিচুরী খায়। এখন খেয়েই সবাই যাবে মাঠে। দুপুর আসবে খেতে তারপর আবার কাজ বিকেল পর্যন্ত।
-জীবন তাহলে চমৎকার কাটছে এখানে?
-বলা যায়। আরেকটু ভাল কাটতো যদি ….
ফয়সাল কথাটা শেষ করে না। নীরা ঠিকই বুঝতে পারল সে আসলে কী বলতে চেয়েছিল।
নাস্তার পরে নীরা নিজেই গ্রামটা ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগল। সাথে ফয়সাল ছিল। সত্যি বলতে নীরা ভাল লাগছিল। সুমনের মৃত্যুর পরে সে নিজেকে একেবারে বন্দী করে রেখেছিল। জীবনের সব আনন্দ থেকে নিজেকে খানিকটা বঞ্চিত করে রেখেছিল। তার কাছে কেবলই মনে হত যে যদি সে নিজে ভাল থাকে আনন্দ করে তাহলে সেটা সুমনের সাথে প্রতারণা করা হবে। সে স্বপ্ন দেখেছিল সুমনকে নিয়ে জীবনের সব আনন্দ করবে। সুমন চলে যাওয়ায় তার সব আনন্দ চলে গেছে। তাই সে ভাল থাকতে ভয় পেত। মনে হল যে একটু আনন্দ করলেই বুঝি সুমন মন খারাপ করবে।
সুমনের মা ওকে এই ব্যাপারটা থেকে বের হয়ে আসতে বলেছেন। সে যদি ভাল থাকে আনন্দে থাকে তাহলে সব থেকে সুমন ভাল থাকবে।
তাই সেই সুযোগ দিতেই সে এই গ্রামে এসেছে। কিছুটা সময় শহরের কোলাহল থেকে মুক্তি পাক সে।

দেখতে দেখতে নীরা প্রায় সাতটা দিন থাকল। নীরা এই সাতদিনেই একটা বড় পরিবর্তন লক্ষ্য করল। সে রাতে খুব দ্রুত ঘুমিয়ে পড়তে পারছে। প্রথম দুইদিন সে পুরো গ্রাম ঘুরে বেড়িয়েছিল তবে তারপর থেকেই সে বাড়ির কাজে হাত লাগাতে শুরু করছে। রান্নার কাজে হাত লাগাতে নীরার ভাল লাগছিল। দুপুরে সে পুকুরের টলটলা পানিতে গোসল করত। সাত দিনের মধ্যে নীরা একেবারে যেন বদলে গেল। নীরা বুঝতে পারল যে সে চাইলেই সুখী হতে পারে। চাইলেই আসলে ভাল থাকা যায়। নীরা এতোদিন ভাল ছিল না কারণ সে নিজে চাইছিল না।
তবে একদিন একেবারে অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটল। সেদিন বাইরে বৃষ্টি হচ্ছিল। নীরা নিজের ঘরে শুয়ে বসে কাঁটাচ্ছিল। দুপুরের দিকেই নীরার কী মনে হল সে বৃষ্টিতে ভিজতে নেমে গেল। যদিও সকালবেলা ফয়সাল বেশ ভাল করেই মানা করে গিয়েছিল যেন নীরা কোন ভাবেই বৃষ্টিতে না ভেজে। কারণ এই বৃষ্টিটা অসময়ের । এখন বৃষ্টিতে ভিজলে জ্বর আসবে। কিন্তু নীরা সেটা শুনলো না। সে ঠিকই বৃষ্টিতে ভিজল। তবে বৃষ্টির এক পর্যায়ে নীরা বুঝতে পারল যে তার জ্বর আসছে। সত্যিই তাই হল। বিকেলের ভেতরেই তার জ্বর এসে হাজির হল। রাতে রীতিমত কাঁপতে শুরু করলো জ্বরে।
তার পরের কয়েকটা দিন নীরার কোন হুসই রইলো না। সে জ্বরের ঘোরে কী যে করলো তার কোন ঠিক নেই। তবে প্রতিবারই যখন নীরার একটু হুস ফিরতো তখন সে অনুভব করত কেউ তার পাশে বসে রয়েছে আর তার একটা হাত ধরে রেখেছে।

চার দিন পরে নীরা সুস্থ হল। আরও একটা দিন লাগল পুরোপুরি সুস্থ হতে। পরের দিন সে ঢাকায় ফেরার জন্য তোড়জোড় শুরু করল। ফয়সাল নিজে তাকে নিয়ে স্টেশনে গিয়ে হাজির হল। কিন্তু যখন ট্রেনে উঠতে যাবে তখনই অবাক হয়ে খেয়াল করল যে ফয়সাল নিজেও ট্রেনে চড়ে বসেছে। নীরার অবাক ভাব দেখে ফয়সাল বলল, আরে রাস্তা তো খুব বেশি দুরের না। আমি এখন গিয়ে বিকেলে ফিরে আসতে পারব। আর না আসলেও সমস্যা নেই। ঢাকায় তো বাবা মা ভাই থাকে। সেখানেও না হয় গিয়ে থাকলাম।
নীরা আর কোন কথা বলল না। ট্রেনে পাশাপাশি বসেই ওরা ঢাকায় রওয়ানা দিল। নীরার কেন জানি খারাপ লাগছিল না। বরং ভাল লাগছিল। ট্রেন চলতে শুরু করলে ফয়সাল যখন নীরার হাত ধরল তখন নীরা কেন জানি হাতটা সরিয়ে নিল না। তার জ্বরের পুরোটা সময় ফয়সাল ওর হাত ধরে ছিল। এই খবর সে বাড়ির লোকজনের কাছ থেকেই জেনেছে। এই চারদিন ফয়সাল কোন কিছুই জন্যই নীরাকে ছেড়ে যায় নি।
নীরা বলল, আমার এতো দেখাশোনা করার জন্য ধন্যবাদ।
-তুমি আমার মেহমান । তোমার জ্বর আসা মানে হল আমি তোমাকে ঠিক মত দেখাশোনা করতে পারি নি।
-আপনার কোনো দোষ নেই। আপনি তো মানা করেছিলেন আমিই শুনিনি । তবুও যেভাবে আমার দেখা শোনা করলেন। জানেন আমিও শেষ সময়ে সুমনের পাশে ঠিক এই ভাবে বসে থাকতাম। ওর হাত ধরে। সুমন এটা পছন্দ করত। ও বলত যখন ঘুমের ভেতরে ও কোন দুঃস্বপ্ন দেখত তখন অনুভব করতো কেউ তার হাত ধরে আছে। এটা তাকে শান্তি দিত। এই চার দিনে আমি সব সময় এটা অনুভব করেছি কেউ পরম মমতায় আমার হাত ধরে রেখেছে। আমার ভয়ের কোন কারণ নেই।
ট্রেন থেকে নেমে একেবারে নীরার বাসা পর্যন্ত ফয়সাল নীরার হাতটা ধরেই রইলো। যখন বিদায়ের বেলা এল তখন ফয়সাল বলল, এই কয়টা দিন আমার জীবনের সব থেকে আনন্দের দিন নীরা।
-আমারও চমৎকার সময় কেটেছে। শহরের কোলাহল থেকে দুরে এই সময় সত্যিই ভাল কেটেছে। আমি আবারও যাবো আপনার ওখানে।
-আমি অপেক্ষায় থাকবো।

নীরার একবার মনে হল ফয়সালকে সে বাড়ির ভেতরে ডাক দেয়। কিন্তু বাড়ির ভেতরে নিয়ে নিয়ে গেলে মায়ের সামনে পড়তে হবে। ফয়সালের কথা তার মা জানে। নীরা যে ফয়সালের বাসায় গিয়েছিল এই কথা সে তার মাকে জানায় নি। বলেছিল অফিসের কাজে বাইরে যাচ্ছে সাথে কয়েকদিন এদিক সেদিক ঘুরবে।
ফয়সাল একেবারে মোড় পর্যন্ত যাওয়ার আগ পর্যন্ত অনেক কয়বার ফিরে তাকাল। তার চোখে একটা আকুলতা খেয়াল করল নীরা। কিন্তু যখন ফয়সাল মোড়ের আড়ালে চলে গেল তখন নীরার মাঝে একটা অদ্ভুত একটা অনুভূতি মনে হল। মনে হল যে খুব কাছের কেউ তাকে ছেড়ে চলে যাচ্ছে। নীরার মনে কী হল নীরা বলতে পারবে না সে ব্যাগটা বাড়ির সামনে রেখেই মোড়ের দিকে পা বাড়াল। একটু দ্রুত পা বাড়াল যে। মনে হল যেন সে দৌড় দিল । তাকে ফয়সালের কাছে যেন পৌছাতেই হবে।
কিন্তু মোড়ের কাছে গিয়ে ফয়সালকে সে দেখতে পেল না। সে রিক্সা নয়তো সিএনজি নিয়ে চলে গেছে। নীরার মনের ভেতরে অদ্ভুত একটা কষ্ট এসে জড় হল । আপনা আপনি চোখ দিয়ে পানি বের হয়ে এল । কেন এল সেই কারণটা নীরার কাছে অজানা। তবে যখন নীরা আবার ঘুরে বাড়ির দিকে হাটা দিতে যাবে তখন অনুবভ করল যে কেউ তার কাধে হাত রেখেছে। নীরা ফিরে না তাকিয়েও অনুভব করতে পারল পেছনে কে এসেছে। এবার তার চোখের পানির বাঁধ আর কেউ ধরে রাখতে পারল না।

পরিশিষ্ট
ফয়সাল একটা দিনও অপেক্ষা করতে রাজি হল না। সে সেদিন বিকেলেই নীরাকে বিয়ে করতে চায়। তার কথা হচ্ছে তার প্রতি নীরার এই ভালোবাসা যেমন হঠাৎ করে এসে হাজির হয়েছে, এটা তেমনি ভাবে হঠাৎ করে চলে যেতে পারে। সেই সুযোগ সে নীরাকে দিতে রাজি নয়। তাই দ্রুতই তাকে বিয়ে করতে চায়। অনুষ্ঠান পরে করলেও চলবে তবে বিয়ে আজই হবে।

আগের পর্ব

ফেসবুকের অর্গানিক রিচ কমে যাওয়ার কারনে অনেক পোস্ট সবার হোম পেইজে যাচ্ছে না। সরাসরি গল্পের লিংক পেতে আমার হোয়াটসএপ বা টেলিগ্রামে যুক্ত হতে পারেন। এছাড়া যাদের এসব নেই তারা ফেসবুক ব্রডকাস্ট চ্যানেলেও জয়েন হতে পারেন।

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 4.3 / 5. Vote count: 11

No votes so far! Be the first to rate this post.


Discover more from অপু তানভীর

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

About অপু তানভীর

আমি অতি ভাল একজন ছেলে।

View all posts by অপু তানভীর →