রিয়ানার আচরণে আমি কিছুটা অবাক হলাম। আমার সাথে সে এমন ভাবে কথা বলছে যেন আমি ওর অনেক দিনের পরিচিত। এবং আমাদের মাঝে একটা ভাল ভাব ভালবাসা রয়েছে। ভাল কলিগদের ভেতরে যেমনটা থাকে তেমন। অথচ সে আমাকে পছন্দ করতো না। মানে রিয়ানার দুর্ঘটনা পড়ার আগে সে আমাকে মোটেই পছন্দ করত না। অন্তত তার আচরণে তো আমার তাই মনে হয়েছে। কিন্তু এখন রিয়ানা আমার সামনেই বসে বসে পাস্তা খাওয়ার ব্যস্ত। সেই সাথে ওর নন স্টপ কথা চলছে। এমনটা হচ্ছে রিয়ানা সুস্থ হয়ে পুনরায় অফিস জয়েন করার পরেই। আজকে নিয়ে আমরা এক মাসে তিনবার অফিসের পরে ডিনার করছি এবং এটা রিয়ানার ইচ্ছেতেই হচ্ছে।
আমি জানি যে মানুষ যখন মৃত্যুর মুক্ষ থেকে ফিরে আসে তখন তার ভেতরে একটা পরিবর্তন আসা স্বাভাবিক। আমার বড় মামা চেইন স্মোকার ছিলেন। মাঝে মাঝে আবার ড্রিংস করতেন। একবার বাইক এক্সিডেন্ট করলেন। যাকে বলে একেবারে যমে ডাক্তারে টানাটানি। তবে শেষ পর্যন্ত টিকে গেলেন। যদিও বাঁম পা টা একটু খুড়িয়ে হাটেন। তবে সব থেকে বড় পরিবর্তন হল তার মানসিক পরিবর্তন। তার পর থেকে আমার মামা আর কোন দিন সিগারেট ছুয়ে পর্যন্ত দেখেন নি। আগে যেমন উড়নচণ্ডি ভাব ছিল সেটাও একেবারে বদলে গেল। তিনি ধর্মে কর্মে মন দিলেন।
আমার কেন জানি মনে হচ্ছে যে রিয়ানার সাথেও ঠিক এই কাজটাই হচ্ছে। সে আস্তে আস্তে বদলে যাচ্ছে। আমার সাথে তার এই হঠাৎ ভালো সম্পর্কই সেটা প্রমা করে। আজকেও রিয়ানা ওর এক্সিডেন্ট নিয়ে কথা বলছিল। রিয়ানার ড্রাইভার সেদিন গাড়িতেই ছিল। সেদিন রিয়ানা কোমাতে গেলেও তার ড্রাইভার মারা গিয়েছিল। তবে রিয়ানার কন্ঠে কেন জানি আমি কোন প্রকার দুঃখবোধ দেখলাম না। এই প্রথম আমার কেন জানি ব্যাপারটা খানিকটা অস্বাভাবিক মনে হল। একজন মানুষজ মারা গেছে অথচ রিয়ানার ভেতরে কোন অনুভূতি নেই। বিশেষ করে যখন সেই মানুষ তার পরিচিত।
আমার মনের কথাটা যেন রিয়ানা চট করেই ধরে ফেলল। সে খাওয়া থামিয়ে আমার দিকে তাকাল। তারপর বলল, আমার আচরণ অদ্ভুত মনে হচ্ছে, তাই না?
-কিছুটা!
-আসলে আমার সব কিছু কেমন যেন বদলে যাচ্ছে। এমন না যে আমি বদলাতে চাচ্ছি তবে আপনা-আপনি হচ্ছে।
-এমনটা হওয়া স্বাভাবিক। বড় দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে ফিরলে মানুষ এমন হয়, তাদের ভেতরে পরিবর্তন আসাটা স্বাভাবিক।
-সেটা হয়তো ঠিক কিন্তু এমন সব পরিবর্তন আমার ভেতরে এসেছে যা আমি ভাবতেও পারছি না।
আমি খানিকটা কৌতুহল নিয়ে তাকালাম রিয়ানার দিকে। তারপর বলল, কেমন পরিবর্তন শুনি?
-একটা তো দেখতেই পাচ্ছ!
রিয়ানা আসলে কোনটা ইংঙ্গিত করল সেটা আমি বুঝতে পারলাম। ও আমার কথা বলছে। এক্সিডেন্টের আগে আমাদের সম্পর্ক ভাল ছিল না। আর এখন আমার সাথে ওর এতো ভাল সম্পর্ক তৈরি হয়ে গেছে। এই পুরোটাই রিয়ানার একক ইচ্ছে হয়েছে। আমি কিছুই করি নি।
আমি একটু হাসলাম। তারপর বললাম, আর ?
-আমি আগে ভেজিটেরিয়ান ছিলাম। এখন গোগ্রাসে মাংস খাই। এখন আমার কাছে মনে হয় যে মাংসের থেকে স্বাদের খাবার আর কিছু নেই। আগে কুকুর ভালোবাসতাম। এখন বিড়াল এতো পছন্দ হওয়া শুরু হয়েছে যে দুইটা এডোপশনে নিয়েছি। এই রকম আরও কত পরবর্তন যে হয়েছে সেটা আমি তোমাকে বলে বোঝাতে পারব না। আমি যেন একেবারে আলাদা একটা মানুষ। এমন না যে আমি আগের সব কিছু ভুলে গেছি, আমার আগের জীবনের সব কিছুই মনে আছে। মনে না থাকলে তো আর আমি এই পরিবর্তনগুলো বুঝতে পারতাম না। আমি জানছি যে আমি আগে এমন ছিলাম না। এখন এমন হয়ে যাচ্ছি।
আমি প্রশ্ন করলাম, খারাপ কিছু কি হচ্ছে? মানে যে পরিবর্তনগুলো হচ্ছে সেগুলোতে কি খারাপ কিছু হয়েছে?
রিয়ানা একটু চিন্তা করল। তারপর বলল, না তা না। বরং ভাল হচ্ছে। এই যেমন আগে আমি একটু অহংকারী ছিলাম। এখন সেটা আমার ভেতরে নেই।
আমি এবার রিয়ানার ইদকে তাকালাম ভাল করে। সত্যিই আগে রিয়ানা অহংকারী ছিল। একটু না বেশ ভাল পরিমানেই। আমি বললাম, তাহলে তো ভালই হচ্ছে। চিন্তা কী বল! পরিবর্তন যদি ভালোর জন্য হয় তাহলে সেটাকে স্বাগত জানানো ভাল। তাই না?
রিয়ানা মাথা নাড়াল।
তবে এর কয়েক দিন পরে আরেকটা অদ্ভুত ব্যাপার ঘটল। বৃহস্পরিবার অফিস ছুটির পরে আমরা বসুন্ধরাতে গিয়েছিলাম। ফেরার পথে সে আমার দিকে একটা কাগজ বাড়িয়ে দিল। আমি দেখলাম সেখানে একটা ঠিকানা লেখা। সেটার দিকে তাকিয়ে বললাম, কিসের ঠিকানা এটা?
-আমরা কাল এখানে যাবো।
-পরিচিত কেউ?
-জানি না।
-তাহলে? আর এতোটা ঠিক স্পেসিফিক ঠিকানাও না। এটা উত্তরার একটা এলাকা। এখানে কে আছে?
-জানি না কে আছে। তবে এই জায়গাটা আমার কাছে বড় পরিচিত মনে হচ্ছে। পরিচিত জায়গা যেমন করে চোখের সামনে ভেসে ওঠে, ছবি দেখলে পরিচিত মনে হয় তেমন ভাবে।
-এই ঠিকানা কিভাবে পেলে?
-গত পরশুদিন একটা রিলস চোখের সামনে এসেছিল। সেখানেই একজন ছেলেকে দেখলাম এখানে নাচানাচি করছে। আমার কাছে পেছনের জায়গাটা এতো পরিচিত মনে হল। প্রোফাইলে ঢুকে আরও কিছু ভিডিও দেখলাম। একই এলাকার ভিডিও। ছেলেটাকে নক দিয়ে জায়গাটার কথা জানতে চাইলাম। তারপর নেটে সেই জায়গা খুজে দেখলাম, গুগল স্ট্রিট ভিউ দেখলাম। তারপর পরিচিত জায়গাটা খুজে পেলাম। আমার কাছে জায়গাটা এতো পরিচিত মনে হচ্ছে অথচ আমি এখানে আগে যাই নি। আমার সারা জীবনই কেটেছে ধানমণ্ডির দিকে। আমি কবে উত্তরা গিয়েছি সেটা আমার মনেও নেই। তাহল এই জায়গাটা আমার কাছ এতো পরিচিত কেন মনে হচ্ছে? আমি ওখানে গিয়ে দেখতে চাই।
পরের দিন সকালের দিকেই আমরা সেদিকে উত্তরার গিয়ে হাজির হলাম। রিয়ানা বেশ কয়েকটা জায়গাতে গেল। সেই পার্কেও গিয়ে হাটাহাটি করল। রিয়ানা জানালো যে এসব তার কাছে বেশ পরিচিত মনে হচ্ছে। এখানে নাকি সে ঘুরে বেড়িয়েছে। ব্যাপারটা আমার কাছেও অদ্ভুত মনে হল। এমনটা কেন মনে হবে? আর রিয়ানাকে আমি যতদুর চিনি ও মিথ্যা বলার মানুষ না। এমনটা মনে হওয়ার পেছনে ওর কারণ কী? রিয়ানা নিজেও এই ব্যাপারটা নিয়ে বেশ চিন্তিত। এমন করে ওর কেন মনে হচ্ছে?
এর পেছনে আসলে কী কারণ থাকতে পারে সেটা আমাদের দুইজনের কারোর মাথায় ঢুকলো না।
দুপুর পর্যন্ত আমরা ওখানেই থাকলাম। এদিক ওদিক ঘুরে বেড়ালাম। আশে পাশের নানান জায়গাতে গেলাম। এবং রিয়ানা যেমন করে হাটছিল আমার কেন জানি সত্যিই মনে হল রিয়ানা আগেও এখানে এসেছে। আমরা যখন একেবারে প্রথম কোনো স্থানে যাই তখন আমাদের হাটার ধরণ এক রকম থাকে আর যখন আমরা পরিচিত কোন স্থানে গেলে আমাদের হাটার ধরণ অন্য রকম থাকে। রিয়ানার হাটার ধরণ দেখেই আমার মনে হল যে রিয়ানা আগেও এখানে এসেছে।
দুপুরে আমরা সেখানকার একটা খাবার হোটেলে ঢুকলাম। হোটেলের লোকটা যখন খাবারের অর্ডার নিতে এল তখন রিয়ানা নিজ থেকেই বলল, মামা হাঁসের মাংস দিবেন, তবে তেল যেন না থাকে। মাথা আর বুকের মাংস । পিয়াজ ভর্তার ভেতরে একটু কাঁচা ঝাল মিক্স করে দিবেন। সাথে ডাল দিবেন।
আমি খানিকটা অবাক হলাম রিয়ানার অর্ডার শুনে। এখানে যে হাসের মাংস আর পিয়াজ ভর্তা পাওয়া যায় এটা তো আমি নিজেও জানতাম না। রিয়ানা এমন ভাবে অর্ডার দিল যেন সে আগেও এই হোটেলে খেয়েছে। রিয়ানা অর্ডার দেওয়ার পরে ব্যাপারটা ধরতে পারল। আমার দিকে অদ্ভুত ভাবে তাকাল। তবে আমি যখন লোকটার দিকে তাকালাম তখন দেখি খানিকটা বিস্মিত চোখে রিয়ানার দিকে তাকিয়ে আছে।
আমার তখনই মনে হল যেন এই লোক এমন অর্ডার আগেও শুনেছে।
পিয়াজের ভর্তাটা আমি মুখে দেখি তীব্র ঝাল অথচ রিয়ানা খুব মজা করে খাচ্ছে। হাঁসের মাংসটা বেশ মজার হয়েছে।
খাওয়া শেষে বিল দিতে গিয়ে আমি লোকটা বললাম, মামা একটা কথা জিজ্ঞেস করব যদি কিছু মনে না করেন।
-জ্বে কন।
-আমি দেখলাম অর্ডার নেওয়ার সময় আপনি বেশ অবাক হলেন। কেন জানতে পারি?
লোকটা কিছু সময় চুপ করে থেকে বলল, আমার পিয়াজ ভর্তা এমনিতেই অনেক ঝাল । তার উপরে আফা যখন আরও ঝাল দিতে কইলো তখন অবাক হইলাম।
-আর কেউ এমন করে ঝাল মেশাতে বলত?
লোকটা আবারও কিছু সময় দ্বিধা নিয়ে বলল, হ, মেহরীন আফা । আমি হবাক হইলাম এইটা দেইখা যায় মেহরীন আফা আমার হোডেলে আইয়া ঠিক এই খাবার গুলাই খাইতো, তেল ছাড়া হাসের মাংস দিতে কইতো। মাথা আর বুকের মাংস।
আমি এবার সত্যিই অবাক হলাম। রিয়ানা বলল, সে কোথায় থাকে বলতে পারেন?
লোকটার মুখটা মলিন হয়ে গেল। সে বলল, হেতি আর বাইচ্চা নাই।
আমরা চুপ করে রইলাম। আমার কেন জানি অবাক লাগল না। বরং আমার কাছে কেন জানি এইটাই স্বাভাবিক মনে হল।
-তার বাসার ঠিকানা আপনি জানেন?
-এই তো কাছেই । আকিজ মহলদারের মাইয়ায়া। দুই বাড়ি পরেই মহলদার বাড়ি। সেইটার দুই তলায় থাকত।
আমরা যখন দুই বাড়ি পেরিয়ে মহলদা্র বাড়ির সামনে এসে দাড়ালাম তখন আমরা কেউই জানি না যে আমরা কেন এখানে এসেছি। আমি রিয়ানাকে বললাম, ভেতরে ঢুকবে?
-তারপর? ভেতরে ঢুকে কী বলব? আমিও তো জানিও না আমি কী খুজছি!
-বলল যে আমরা মেহরীনের পরিচিত।
-ডাহা মিথ্যা বলা হবে।
-হোক। তবুও চল ভেতরে। আমার মনে একটা অসম্ভব সম্ভবনা দেখা দিয়েছে। যদিও সেতা একেবারে অবাস্তব তারপরেও কেন জানি মনে হচ্ছে এটাই সত্য হবে।
রিয়ানা আমার দিকে তাকাল। তারপর বলল, তুমি বলতে চাইছো মেহরীনের আত্মা আমার ভেতরে এসে ভর করেছে?
আমি জানি এটা একেবারে বাজে শোনাচ্ছে। এমন কথা যদি কেউ বলে তার মস্তিস্কের সুস্থতা নিয়ে প্রশ্ন উঠা স্বাভাবিক তবে এখন আমার কাছে ঘুরে ফিরে এই কথাটাই কেবল আসছে। আর কিছু না । আমার কাছে মনে হচ্ছে যে এটা ছাড়া আর কিছু হতেই পারে না।
আমরা তখনও নিজেদের ভেতরে কথা বলছি তখনই একটা অদ্ভুত ঘটনা ঘটল। আমরা গেটের সামনে দাঁড়িয়েই কথা বলছিলাম তখনই আমাদের পাশে একটা রিক্সা থামল। সেখান থেকে এক মাঝ বয়সী লোক আর তার সাথে ১৫/১৬ বছরের একটা মেয়ে নামল। মেয়েটার কোলে একটা সাদা রঙয়ের বিড়াল। মেয়েটা যখন নামল রিক্সা থেকে তখনই কোলের বিড়াল এক চিৎকার দিয়ে মেয়েটার কোল থেকে ঝাপিয়ে নেমে পড়ল এবং সোজা রিয়ানার কোলের দিকে এসে লাফ দিল। রিয়ালা চমকে গেলেও বিড়ালটাকে ঠিকই সময়মত কোলে নিতে পারল। আমিসহ বাকি তিনজন অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম বিড়াল আর রিয়ানার দিকে।
বিড়ালটা রিয়ানার কোলে এমন ভাবে মাথা ঘষতে লাগল যেন বহুদিনের পরিচিত সে।
মাঝ বয়সী লোকটা আমাদের সামনে এসে বলল, মিমি কারো কোলে যায় না। আপনারা কে?
আমার তখন মনে হল যে এই বিড়ালটা মেহরীনের বিড়াল। এই লোকটা হচ্ছে মেহরীনের বাবা আকিজ মহলদার। আমি সেটাই প্রশ্ন করলাম ভদ্রলোককে। এটা মেহরীনের বিড়াল?
-হুম। আপনারা? মেহরীনকে চিনতেন?
রিয়ানা এবার আমার দিকে তাকাল। আমি কী বলব প্রথমে খুজে পেলাম না। যা বলব তা বড় অদ্ভুত শোনাবে আমি জানি কিন্তু কেন জানি মনে হচ্ছে এটাই এখন এদের বলা দরকার। বিশেষ করে বিড়ালটা যেভাবে রিয়ানার কোলে লাফ দিয়ে উঠল, যেটা দেখার পরে আমার মনে এই ধারণাটা আরও পাকাপোক্ত ভাবে গেড়ে বসেছে।
আমি বললাম, আচ্ছা মেহরীন কি স্কোয়ার হসপিতালে ভর্তি ছিল?
-হ্যা কেন বলুন তো?
-ওকে ! আমি যা বলব আ শুনে আপনাদের বড় অদ্ভুত শোনাবে। তবে এটা ছাড়া আমার কাছে আর কোন ব্যাখ্যা নেই।
আমি কিছু বলতে যাচ্ছিলাম তার আগে ভাকিজ সাহেব আমাদের ভেতরে নিয়ে গেলেন। তার বাসার সোফার বসে আমি রিয়ানার পুরো ব্যাপারটা খুলে বললাম।
সব শেষে রিয়ানা বলল, আমি জানি না এসব আমার সাথে কী হচ্ছে তবে এক্সিডেন্টের আগের আমি আর পরের আমির ভেতরে আকাশ পাতাল পার্থক্য।
তখন রিয়ানা আরেকটা কাজ করল। ছোট মেয়েটার দিকে তাকিয়ে বলল, তোমার আপুর মোবাইল ফোন আছে না, ওটা একটু নিয়ে এসো তো!
মেয়েটা একটু ইতস্তর করে তার বাবার দিকে তাকাল। তার বাবা সম্মতি দিতে ঘরের ভেতরে চলে গেল। ফোন ফিরে এল একটু পরেই। ফোনটা রিয়ানার হাতে দিতেই রিয়ানা স্কিনের দিকে কিছু সময় তাকিয়ে রইল। ফোনে প্যাটার্ন লক দেওয়া। আমি তীব্র অবাক হয়ে খেয়াল করে দেখিলাম রিয়ানা এক বারের প্যাটার্নলকটা খুলে ফেলল। ফোনে এল বা এন টাইপের লক দেওয়া ছিল না। বেশ জটিল লক ছিল।
রিয়ানা ফোনটা আবার ফেরত দিল মেয়েটার হাতে। তারপর বলল, জাস্ট মনে হল এটাই হবে।
এবার আমি দেখলাম আকিজ সাহেবের চেহারায় বেশ ভাল পরিবর্তন এসেছে। এতো সময় তিনি আমাকে একটু কেমন চোখে দেখছিলেন।
রিয়ানা বলল, এই ব্যাখ্যা আমার কাছে সত্যিই নেই। কিন্তু কোন ভাবে মেহরীনের পছন্দ অপছন্দ চলে এসেছে। হয়তো আমরা হাসপাতালে কাছাকাছি ছিলাম এই কারণে। এছাড়া আসলে আর কোন ব্যাখ্যা আমার কাছে নেই। আমি আসলে কিছুদিন এই ব্যাপারগুলো নিয়ে একটু আপসেট ছিলাম। এখন মনে হচ্ছে একটু শান্তি আসবে।
আমরা চলে আসতে চাইলেও মেহরীনের মা কোন ভাবেই আমাদের আসতে দিলেন না। দুপুরে খাওয়াতে চাইলেন বটে তবে আমরা খেয়েছি জেনে আর বেশি জোড়াজুড়ি করলেন না। আমরা মেহরীনের ঘরে গেলাম। রিয়ানা চারিদিকে এমন ভাবে তাকাচ্ছিল যেন এটা তার সত্যিই পরিচিত ঘর। বিকেলে ফিরে আসার সময় বাধল আরেক বিপত্তি। মেহরীনের বিড়াল কিছুতেই রিয়ানাকে ছাড়বে না। শেষে বাধ্য হয়ে আমরা সেটাকে কোলে নিয়েই ফেরার পথ ধরলাম। মেহরীনের মা রিয়ানাকে জড়িয়ে ধরে অনেকটা সময় কাঁদল। মায়ের মন বলে কথা। রিয়ানা বলল যে সে নিয়মিত আসবে এই বাসায়। এই বাসাটা যেন তার নিজেরই।
রিয়ানার সাথে আসলে কী ঘটছে সেটা আমার জানা নেই। এটার কোন ব্যাখ্যা আমার কাছে নেই। রিয়ানার ভেতরের এই পরিবর্তন কেন হল কিভাবে এটার কোন বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা কেউ দিতে পারবে বলে মনে হয় না। তবে রিয়ানা প্রথম প্রথম যেমন এই পরিবর্তন নিয়ে কিছুটা অস্বস্তিতে থাকত এখন আর তেমনটা থাকে না। সে ঘন ঘন যায় মেহরীনের বাসায়। আমিও যাই তার সাথে মাঝে মাঝে। ও হ্যা, এরই মাঝে আমাদের ব্যাপারটা আমাদের পরিবারকেও জানানো হয়েছে। তাদের কারো কোন আপত্তি নেই আপাতত। বিয়েটা খুব জলদি হয়ে যাবে।
আমি একটা ব্যাপার নিয়ে মাঝে মাঝে ভাবি। রিয়ানার সাথে আমার হঠাৎ সম্পর্ক ভাল হয়ে ওঠার কারণ কী? রিয়ানা যখন কোমায় ছিল তখন আমি কয়েকবার তাকে দেখতে গিয়েছিলাম। কেন গিয়েছিলাম সেটা অবশ্য আমি নিজেও জানি না। তবে আমার মনে হয় যে যখন আমি হাসপাতালে গিয়েছিলাম তখন মেহরীন ছিল সেখানেই। সেখান থেকেই সে আমাকে পছন্দ করেছে। ব্যাপারটা বড় হাস্যকর শোনাচ্ছে আমি জানি তবে এটা ছাড়া আসলে আমার কাছে আর কোন ব্যাখ্যা নেই। অবশ্য সব কিছুর যে ব্যাখ্যা থাকতেই হবে এটার কোন কারণ নেই। থাকুক না কিছু ব্যাখ্যাতীত !
ফেসবুকের অর্গানিক রিচ কমে যাওয়ার কারনে অনেক পোস্ট সবার হোম পেইজে যাচ্ছে না। সরাসরি গল্পের লিংক পেতে আমার হোয়াটসএপ বা টেলিগ্রামে যুক্ত হতে পারেন। এছাড়া যাদের এসব নেই তারা ফেসবুক ব্রডকাস্ট চ্যানেলেও জয়েন হতে পারেন।
Discover more from অপু তানভীর
Subscribe to get the latest posts sent to your email.