কাশ্মীর

4.8
(4)

কাশ্মীর বর্তমান সময়ে আলোচিত একটা নাম। বর্তমানে বললে আসলে ভুল হবে, এটি জন্মের শুরু থেকেই আলোচিত হয়ে আসছে। হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত এই অপরূপ সুন্দর উপত্যকা অবশ্য সেই আদিকাল থেকেই অনেকের আগ্রহের বিষয়। কাশ্মীরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি জটিল, বহুমাত্রিক এবং সমৃদ্ধ ইতিহাসের জন্য এটি বিখ্যাত। কাশ্মীরকে নিয়ে ভারত, পাকিস্তানের ভেতরে তীব্র বিরোধের ব্যাপারটা আমাদের কারো অজানা নয়। এছাড়াও এর দার্শনিক, শৈল্পিক, এবং সাংস্কৃতিক অবদান বিশ্ব ইতিহাসে একটি বিশেষ স্থান দখল করে।
খ্রিস্টপূর্ব যুগ থেকেই কাশ্মীরের ইতিহাসের সূচনা। সেই সময় থেকেই কাশ্মীর প্রাচীন ভারতীয় সভ্যতার গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে পরিনত হয়েছিল। কাশ্মীরের প্রাচীন ইতিহাস সম্পর্কে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য উৎস হলো ১২শ শতাব্দীর ঐতিহাসিক কালহানের লেখা ‘রাজতরঙ্গিণী’। এখানে কাশ্মীরের রাজবংশ, শাসন, এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের বিস্তারিত বিবরণ দেওয়া হয়েছে। রাজতরঙ্গিণী অনুসারে, কাশ্মীরে গোনান্দ রাজবংশের শাসন ছিল। সেই সময়ে এই অঞ্চলটা হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মের লোকেদের বাস ছিল। খ্রিস্টপূর্ব ৩য় শতাব্দীতে মৌর্য সম্রাট অশোক কাশ্মীর দখল করে নেয়। অশোক বৌদ্ধ ধর্মের প্রচারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, এবং কাশ্মীরে বৌদ্ধ বিহার ও স্তূপ নির্মিত হয়। শ্রীনগরের প্রাচীন নাম ‘শ্রীনগরী’ অশোকের সময়ে দেওয়া হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়। খ্রিস্টীয় ১ম শতাব্দীতে কুষাণ সাম্রাজ্যের অধীনে কাশ্মীর বৌদ্ধ ধর্মের অন্যতম প্রধান কেন্দ্রে পরিণত হয়। সম্রাট কনিষ্কের শাসনকালে এখানে চতুর্থ বৌদ্ধ সংগীতি অনুষ্ঠিত হয়। এটি সেই সময়ে উপমহাদেশে মহাযান বৌদ্ধ দর্শনের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই সময়ে একই সঙ্গে, হিন্দু ধর্মও কাশ্মীরে প্রভাব বিস্তার করে, বিশেষ করে শৈব ও বৈষ্ণব মতবাদ। পরবর্তীতে কাশ্মীরী শৈব দর্শন ভারতীয় দর্শনে একটি অনন্য অবদান রাখে।
খ্রিস্টীয় ৭ম শতাব্দীতে কাশ্মীরে কারকোটা রাজবংশ শক্তিশালী প্রতিষ্ঠিত হয়। এই রাজবংশের সবচেয়ে বিখ্যাত শাসক ছিল ললিতাদিত্য মুক্তপিদ (৭২৪-৭৬০ খ্রিস্টাব্দ)। সে কাশ্মীরের সীমানা মধ্য এশিয়া ও উত্তর ভারত পর্যন্ত বিস্তৃত করেছিল। সে আবার শিল্প, স্থাপত্য, এবং সাহিত্যের পৃষ্ঠপোষক ছিল। তার শাসনকালে মার্তণ্ড সূর্য মন্দির নির্মিত হয়। এটি কাশ্মীরী স্থাপত্যের মধ্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ নিদর্শন। ৯ম শতাব্দীতে উত্পল রাজবংশ ক্ষমতায় আসে, এবং রাজা অবন্তিবর্মন (৮৫৫-৮৮৩ খ্রিস্টাব্দ) শিল্প ও সাহিত্যের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই সময়ে কাশ্মীর সংস্কৃত সাহিত্য, কাব্য, এবং দর্শনের একটি প্রধান কেন্দ্র হিসেবে খ্যাতি অর্জন করে। কাশ্মীরী পণ্ডিতরা ভারতীয় জ্ঞান-বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখেন।
১৩শ শতাব্দীতে কাশ্মীরে ইসলামের আগমন ঘটে। তখন এই অঞ্চলের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিতে বড় পরিবর্তন আসে। সুফি সাধকদের মাধ্যমে ইসলাম শান্তিপূর্ণভাবে প্রচারিত হয়। বুলবুল শাহ এবং শাহ হামাদানের মতো সুফি সাধকরা স্থানীয় জনগোষ্ঠীর মধ্যে ইসলামের বার্তা পৌঁছে দেন। ১৩৩৯ সালে শাহ মীর কাশ্মীরে প্রথম মুসলিম শাসক হিসেবে শাহমিরি রাজবংশ প্রতিষ্ঠা করে। এই সময়ে হিন্দু ও বৌদ্ধ জনগোষ্ঠীর একটি উল্লেখযোগ্য অংশ ধীরে ধীরে ইসলাম গ্রহণ করে। তবে হিন্দু ও বৌদ্ধ সংস্কৃতি টিকে থাকে। শাহমিরি রাজবংশের সবচেয়ে বিখ্যাত শাসক ছিল সুলতান জয়নুল আবেদিন (১৪২০-১৪৭০)। সে ‘বুদশাহ’ নামে পরিচিত ছিল। সে ধর্মীয় সহিষ্ণুতা, শিল্পকলা, এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য বিখ্যাত। তার শাসনকালে কাশ্মীরী শাল শিল্প, পশমিনা, এবং হস্তশিল্প আন্তর্জাতিক খ্যাতি অর্জন করে। জয়নুল আবেদিন হিন্দু ও মুসলিম প্রজাদের মধ্যে সম্প্রীতি বজায় রাখে এবং সংস্কৃত ও ফারসি সাহিত্যের পৃষ্ঠপোষকতা করে। এই সময়ে কাশ্মীরে হিন্দু, বৌদ্ধ, এবং ইসলামী সংস্কৃতির একটি অনন্য সংমিশ্রণ ঘটে। কাশ্মীরী সুফিবাদ, যা ‘রিশি পরম্পরা’ নামে পরিচিত, স্থানীয় ঐতিহ্যের সাথে ইসলামের সমন্বয় সাধন করে। শেখ নুরউদ্দিন নুরানি এই পরম্পরার প্রধান প্রতিনিধি ছিল। তার কবিতা ও শিক্ষা কাশ্মীরী জনগণের মধ্যে গভীর প্রভাব ফেলে।
১৫৮৬ সালে মুঘল সম্রাট আকবর কাশ্মীরকে মুঘল সাম্রাজ্যের অধীনে নিয়ে আসে। মুঘলরা কাশ্মীরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে এখানে বাগান, প্রাসাদ, এবং মসজিদ নির্মাণ করে। সম্রাট জাহাঙ্গীর কাশ্মীরকে “পৃথিবীর স্বর্গ” বলে অভিহিত করেছিল। তার শাসনকালে শালিমার বাগ, নিশাত বাগ, এবং চশমা শাহি উদ্যান নির্মিত হয়। মুঘল শাসনকালে কাশ্মীরের অর্থনীতি সমৃদ্ধ হয়। এর ভেতরে বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে শাল শিল্প, কার্পেট তৈরি, এবং পশমিনা উল্লেখোগ্য। কাশ্মীরী কারিগররা মুঘল দরবারে বিশেষ সম্মান পেত। তবে, মুঘল শাসনের শেষের দিকে প্রশাসনিক অব্যবস্থাপনা এবং অর্থনৈতিক অবনতি কাশ্মীরে অস্থিরতা সৃষ্টি করে। ১৭৫১ সালে মুঘল সাম্রাজ্যের পতনের পর কাশ্মীর আফগান দুররানি সাম্রাজ্যের অধীনে চলে যায়। আফগান শাসনকালে কাশ্মীরে অর্থনৈতিক শোষণ এবং ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা বৃদ্ধি পায়। আফগান গভর্নররা উচ্চ কর আরোপ করে । একই সাথে তারা স্থানীয় সংস্কৃতির প্রতি অবহেলা দেখায়। এর ফলে আফগান শাসকদের প্রতি স্থানীয় জনগনের মনে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়।
১৮১৯ সালে শিখ মহারাজা রঞ্জিত সিং কাশ্মীরকে শিখ সাম্রাজ্যের অধীনে নিয়ে আসে। শিখ শাসনকালে কাশ্মীরের অর্থনীতি কিছুটা পুনরুদ্ধার হয় এবং একই সাথে প্রশাসনিক কাঠামো কিছুটা শক্তিশালী হয়। তবে, শিখ গভর্নররা মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠীর সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে ব্যর্থ হয়। তাই কাশ্মীরে ধর্মীয় ও সামাজিক উত্তেজনা অব্যাহত থাকে। ১৮৪৬ সালে প্রথম অ্যাংলো-শিখ যুদ্ধের পর আমৃত্য সন্ধি স্বাক্ষরিত হয়। এই সন্ধির মাধ্যমে ব্রিটিশরা ৭৫ লাখ রুপির বিনিময়ে জম্মু ও কাশ্মীরের শাসনভার দোগরা রাজা গুলাব সিং-এর হাতে তুলে দেয়। গুলাব সিং ছিলেন জম্মুর একজন হিন্দু রাজপুত রাজা। এইভাবে জম্মু ও কাশ্মীর স্বাধীণ দেশ থেকে দেশীয় রাজ্যে পরিণত হয়। দোগরা শাসনকালে প্রশাসনিক আধুনিকীকরণের চেষ্টা করা হয়। রাজা রণবীর সিং (১৮৫৭-১৮৮৫) শিক্ষা ও অবকাঠামো উন্নয়নের দিকে গুরুত্ব দেন। তবে, হিন্দু শাসকদের অধীনে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী প্রায়ই বৈষম্যের শিকার হতো। জম্মু ও কাশ্মীর দেশীয় রাজ্য হলেও, মূলত ব্রিটিশরাই এটাকে পরোক্ষ ভাবে নিয়ন্ত্রণ করত। ব্রিটিশ রেসিডেন্টরা সব সময় কাশ্মীরে উপস্থিত থাকত। একই ভাবে তারা রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে প্রভাব বিস্তার করত। ১৯৩১ সালে মুসলিম জনগোষ্ঠীর মধ্যে দোগরা শাসনের বিরুদ্ধে প্রথম বড় আন্দোলন শুরু হয়। শেখ আবদুল্লাহর নেতৃত্বে জম্মু ও কাশ্মীর মুসলিম কনফারেন্স (পরবর্তীতে ন্যাশনাল কনফারেন্স) গঠিত হয়। এখান থেকে সামাজিক ন্যায়বিচার এবং রাজনৈতিক সংস্কারের দাবি তোলা হয়।
১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ ভারত ভারত এবং পাকিস্তান নামে দুটি স্বাধীন রাষ্ট্রে বিভক্ত হয়। ভারতের ৫৬২টি দেশীয় রাজ্যকে ভারত বা পাকিস্তানের সাথে যুক্ত হওয়ার জন্য সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। জম্মু ও কাশ্মীরের মহারাজা হরি সিং কোন দিকে যাবেন সেটা নিয়ে দ্বিধাগ্রস্ত ছিল। জম্মু ও কাশ্মীরের জনসংখ্যার প্রায় ৭৭ শতাংশ ছিল মুসলিম, তবে শাসক ছিল হিন্দু। ভৌগোলিকভাবে এটি ভারত ও পাকিস্তান উভয়ের সাথে সংলগ্ন ছিল। হরি সিং প্রাথমিকভাবে জম্মু ও কাশ্মীরকে স্বাধীন রাখতে চেয়েছিল। তবে, ১৯৪৭ সালের অক্টোবরে পাকিস্তান-সমর্থিত পশতুন উপজাতি এবং আরও কিছু সৈন্যরা মিলে জম্মু ও কাশ্মীর আক্রমণ করে। তারা দ্রুত মুজাফফরাবাদ এবং বারামুল্লা দখল করে শ্রীনগরের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। এই আক্রমণের সময় ব্যাপক সহিংসতা, লুণ্ঠন, এবং হত্যাকাণ্ড ঘটে। মহারাজা হরি সিং-এর সেনাবাহিনী এই আক্রমণ প্রতিরোধ করতে অক্ষম ছিল। ফলে, সে ভারতের কাছে সামরিক সাহায্য প্রার্থনা করে। ভারতের তৎকালীন গভর্নর জেনারেল লর্ড মাউন্টব্যাটেন এবং প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু রাজাকে এই শর্ত দেয় যে, সাহায্য পাওয়ার জন্য জম্মু ও কাশ্মীরকে ভারতের সাথে যুক্ত হতে হবে। ২৬ অক্টোবর ১৯৪৭ সালে হরি সিং ইন্সট্রুমেন্ট অফ অ্যাকসেশন স্বাক্ষর করে, যার মাধ্যমে জম্মু ও কাশ্মীর আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতের অংশ হয়ে যায়। এই দলিলে বলা ছিল যে, ভারত প্রতিরক্ষা, পররাষ্ট্র নীতি, এবং যোগাযোগের দায়িত্ব গ্রহণ করবে, এবং অন্যান্য বিষয়ে কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসন বজায় থাকবে। পাকিস্তান এই দলিলের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুললেও, ভারত এটিকে আইনি এবং চূড়ান্ত বলে গ্রহণ করে।
যোগদানের পর ভারতীয় সেনাবাহিনী ২৭ অক্টোবর কাশ্মীরে প্রবেশ করে এবং পাকিস্তান-সমর্থিত আক্রমণকারীদের বিরুদ্ধে প্রথম ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ শুরু হয়। ভারতীয় সেনারা শ্রীনগর, বারামুল্লা, এবং উপত্যকার বেশিরভাগ অংশ পুনরুদ্ধার করে। ১৯৪৮ সালে ভারত এই ইস্যু জাতিসংঘে নিয়ে যায়। জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় ১ জানুয়ারি ১৯৪৯ সালে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হয়। এর ফলে কাশ্মীর বিভক্ত হয়ে যায়: ভারত-নিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মীর (কাশ্মীর উপত্যকা, জম্মু, এবং লাদাখ) এবং পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত আজাদ কাশ্মীর ও গিলগিট-বালতিস্তান। যুদ্ধবিরতির এই রেখাটা লাইন অফ কন্ট্রোল (LoC) নামে পরিচিত হয়। এটি কাশ্মীরকে দুই ভাগে বিভক্ত করেছে। জাতিসংঘ ১৯৪৮ সালে কাশ্মীরে একটি গণভোটের প্রস্তাব রাখে। সেখানে বলা হয় যে কাশ্মীরের জনগণ ঠিক করবে তাদের ভবিষ্যৎ (ভারত, পাকিস্তান, বা স্বাধীনতা) কী হবে। তবে, এই গণভোটের জন্য শর্ত ছিল যে পাকিস্তানকে তাদের সৈন্য প্রত্যাহার করতে হবে এবং ভারতকে তাদের সৈন্যের সংখ্যা কমাতে হবে। ভারত পাকিস্তানের কেউ ই এই শর্ত মানে নি।
১৯৪৯ সালে ভারতীয় সংবিধানে ধারা ৩৭০ অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এই ধারা জম্মু ও কাশ্মীরকে বিশেষ স্বায়ত্তশাসন প্রদান করে। এই ধারা অনুসারে, ভারতীয় সংসদের কেবল প্রতিরক্ষা, পররাষ্ট্র নীতি, এবং যোগাযোগ সংক্রান্ত বিষয়ে আইন প্রণয়নের ক্ষমতা ছিল। অন্যান্য বিষয়ে জম্মু ও কাশ্মীরের নিজস্ব সংবিধান এবং আইন প্রণয়নের অধিকার ছিল। ধারা ৩৫এ জম্মু ও কাশ্মীরের স্থায়ী বাসিন্দাদের জন্য বিশেষ অধিকার নিশ্চিত করে, যেমন সম্পত্তি ক্রয়, সরকারি চাকরি, এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অগ্রাধিকার। সেই সময়ের জম্মু ও কাশ্মীরের প্রধানমন্ত্রী (পরে মুখ্যমন্ত্রী) শেখ আবদুল্লাহ এই স্বায়ত্তশাসনের প্রধান প্রবক্তা ছিলেন। তবে, তার স্বাধীনতাবাদী মনোভাব ভারত সরকারের সাথে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করে। ১৯৫৩ সালে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর ফলে কাশ্মীরে আবার রাজনৈতিক অস্থিরতা বৃদ্ধি পায়।
১৯৬৫ সালে পাকিস্তান কাশ্মীরে “অপারেশন জিব্রাল্টার” চালু করে। এই অপারেশনের লক্ষ্য ছিল স্থানীয় বিদ্রোহ উসকে দেওয়া। এটি দ্বিতীয় ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সূচনা করে। যুদ্ধের পর তাসখন্দ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় বটে তবে তা কাশ্মীর সমস্যার কোনো সমাধান হয়নি। ১৯৭১ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ, যদিও প্রাথমিকভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য ছিল, কাশ্মীরে উত্তেজনা বাড়ায়। ১৯৭২ সালের শিমলা চুক্তিতে ভারত ও পাকিস্তান সম্মত হয় যে কাশ্মীর সমস্যা দ্বিপাক্ষিকভাবে সমাধান করা হবে। তবে, এই চুক্তি সত্ত্বেও কাশ্মীর ইস্যু অমীমাংসিত থাকে।
১৯৮০-এর দশকের শেষের দিকে কাশ্মীরে সশস্ত্র বিদ্রোহ শুরু হয়, যা এই অঞ্চলের রাজনৈতিক ও সামাজিক কাঠামোতে বড় পরিবর্তন আনে। জম্মু ও কাশ্মী লিবারেশন ফ্রন্ট (JKLF) এবং হিজবুল মুজাহিদিনের মতো গোষ্ঠী স্বাধীনতা বা পাকিস্তানের সাথে যুক্ত হওয়ার দাবিতে সংঘর্ষে জড়ায়। পাকিস্তানের সামরিক ও আর্থিক সমর্থন এই বিদ্রোহকে আরও জোরদার করে। এই সময়ে কাশ্মীর থেকে ব্যাপক সংখ্যক কাশ্মীরী পণ্ডিত নির্যাতনের শিকার হয়ে উপত্যকা ছেড়ে চলে যায়। এটি কাশ্মীরের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ব্যাপক ক্ষতি করে। ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনী বিদ্রোহ দমনের জন্য ব্যাপক সামরিক অভিযান চালায়। তবে অভিযোগ ওঠে এই অভিয়ানে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে। ১৯৯৯ সালে কার্গিল যুদ্ধে পাকিস্তানি সেনা এবং জঙ্গিরা কার্গিলে অনুপ্রবেশ করে। ভারত সফলভাবে তাদের প্রতিহত করে, কিন্তু এই যুদ্ধ কাশ্মীরের উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে দেয়।
২০১৯ সালে ভারত সরকার ধারা ৩৭০ এবং ৩৫এ বাতিল করে। এর ফলে জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহার করা হয় এবং এটি দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে বিভক্ত হয়: জম্মু ও কাশ্মীর এবং লাদাখ। এই সিদ্ধান্তের পর কাশ্মীরে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা, ইন্টারনেট বিচ্ছিন্নতা, এবং রাজনৈতিক নেতাদের গ্রেপ্তারের ঘটনা ঘটে, যা আন্তর্জাতিক সমালোচনার জন্ম দেয়। বর্তমানে কাশ্মীর ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে একটি প্রধান বিরোধের কারণ। ভারত জম্মু ও কাশ্মীরকে তার অবিচ্ছেদ্য অংশ বলে দাবি করে, যখন পাকিস্তান আজাদ কাশ্মীর এবং গিলগিট-বালতিস্তান নিয়ন্ত্রণ করে এবং পুরো কাশ্মীরের উপর দাবি জানায়। চীনও অক্ষাই চীন অঞ্চল নিয়ন্ত্রণ করে, যা ১৯৬২ সালের ভারত-চীন যুদ্ধের পর থেকে তার দখলে রয়েছে। চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডর (CPEC) গিলগিট-বালতিস্তানের মধ্য দিয়ে গেছে, যা ভারতের জন্য উদ্বেগের বিষয়। ২০২০ সালে লাদাখে ভারত-চীন সীমান্ত সংঘর্ষ কাশ্মীর ইস্যুকে আরও জটিল করে তুলেছে। কাশ্মীরের জনগণের মধ্যে বিভিন্ন মতামত রয়েছে। কেউ ভারতের সাথে থাকতে চায়, কেউ পাকিস্তানের সাথে যুক্ত হতে চায়, এবং কেউ স্বাধীনতা চায়। যদি সত্যিই কাশ্মীরে কোন দিন স্বাধীন গনভোট অনুষ্ঠিত হয় তখন হয়তো জানা যাবে যে কাশ্মীরের অধিকাংশ মানুষ আসলে কী চায় !

ফেসবুকের অর্গানিক রিচ কমে যাওয়ার কারনে অনেক পোস্ট সবার হোম পেইজে যাচ্ছে না। সরাসরি গল্পের লিংক পেতে আমার হোয়াটসএপ বা টেলিগ্রামে যুক্ত হতে পারেন। এছাড়া যাদের এসব নেই তারা ফেসবুক ব্রডকাস্ট চ্যানেলেও জয়েন হতে পারেন।

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 4.8 / 5. Vote count: 4

No votes so far! Be the first to rate this post.


Discover more from অপু তানভীর

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

About অপু তানভীর

আমি অতি ভাল একজন ছেলে।

View all posts by অপু তানভীর →