চিতংবুড়া (শেষ পর্ব)

4.6
(20)

রায়হান পানির বোতল থেকে এক ঢোক পানি খেলো । দিনের আলো কমে আসছে ধীরে ধীরে । একটু পরেই অন্ধকার নেমে আসবে। সে কোন দিকে যাবে ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না। পথ যে হারিয়েছে সেটা বুঝতে পেরেছে অনেক আগেই। বেশ কিছু সময় কোন চিন্তা ভাবনা ছাড়াই সে কেবল হেটে বেড়িয়েছে। অবশ্য খুব বেশি চিন্তিত সে নয়। এই পাহাড়ে সে এসেছিল নিজের জীবনটা শেষ করে দিতেই। ইচ্ছে ছিল উচু একটা পাহাড় থেকে খাদের ভেতরে লাফ দিবে। রেমাক্রি থেকেই তাই গাইডকে চলে যেতে বলেছিল। গাইড অবশ্য রাজি হচ্ছিল না। 

রায়হান তাকে আশ্বস্ত করে বলেছিল যে কোন সমস্যা নেই। সে সব রাস্তা ঘাট চেনে। দুইদিনের ভেতরেই ফিরে আসবে। তারপর তার হাতে কিছু টাকা গুজে দিয়ে যে এই পথে হাটা দিয়েছিল। অন্য দিকে যখন থানচি থেকে সে রওয়ানা দিয়েছিল সে কৌশলে নিজের নামটা লিখে আসে নি ক্যাম্পে । তাই সে যদি হারিয়ে যায় তাহলে কারো কোন মাথাব্যাথা থাকবে না । কেউ কোন দিন জানতেই পারবে না যে সে হারিয়ে গেছে। 

প্রথম দিনেই রায়হান পথ হারিয়ে ফেলল । তারপর কোন দিকে যে গিয়েছে আর কোন হিসাব ছিল না । সাথে খাবার আর পানি ছিল । সেটা দিয়েই এগিয়ে যাচ্ছিল । তবে দুইদিনের মাথায় সেটাও শেষ হয়ে গেল । তিন দিনের মাথায় কেবল পানিটুকু ছিল। 

পানি খেয়ে রায়হান হাটতে লাগল সামনে। অন্ধকার হয়ে আসছে। দুটোদিন সে একেবারে বনে বাদারে ঘুড়েছে, খোলা আকাশের নিচে ঘুমিয়েছে। আজকেও তেমন ভাবে ঘুমাতে হবে সেটা নিশ্চিত । আজকে সকাল থেকে খাওয়ার মত কিছুই পায় নি সে। তাই ক্ষুধাটা বেশ জানান দিচ্ছে। আজকে রাতে এই ক্ষুধা নিয়ে তার ঘুম আসবে কিনা কে জানে । 

হাটতে হাটতেই অন্ধকার হয়ে এল । মোবাইল আর টর্চের আলো আজকে আর নেই। সবগুলোর চার্জ শেষ। এখন অন্ধকারের ভেতরে হাটতে লাগল । ঠিক সেই সময়েই দূর্ঘটনা ঘটল । খাঁদটা সে দেখতে পায় নি। পা হড়কে নিচে পড়ে গেল। বেশ কয়েক স্থানে ধাক্কা খাওয়ার পরে জ্ঞান হারিয়ে পরলো নিচে। 

কত সময় রায়হানের জ্ঞান ছিল না সেটা সে জানে না। জ্ঞান ফেরার কিছু সময় পরে সে বুঝতে পারল না যে কোথায় আছে। তবে একটা সময়ে তা মনে পড়ল কী হয়েছিল, মাটি থেকে উঠার চেষ্টা করল । তখনই অনুভব করল যে পুরো শরীরে তীব্র ব্যাথা । হাত দিয়ে একটা চটচটে তরলের অস্তিত্ব পেল । বুঝতে কষ্ট হল না যে রক্ত বের হয়েছে। সেটা বন্ধ হয় নি। তখনও পড়ছে। 

অন্ধকারের ভেতরেও সে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করল । জায়গাটা সমতল মনে হচ্ছে। তবে আরও একটু যাওয়ার পরেই বুঝতে পারল যে কোন একটা গুহার ভেতরে ঢুকে পরেছে। শরীরে তীব্র অবসাদ এসে ঠেকেছে। তারপরেও নিজের শরীরটা টেনে নিয়ে গেল। একটা স্থানে নিয়ে আবারও জ্ঞান হারাল সে। 

সকালে যখন তার জ্ঞান ফিরল তখন দেখতে পেল সে একটা গুহার ভেতরে শুয়ে আছে । চোখ মেলতেই সে অদ্ভুত বানরের মত মূর্তিটা দেখতে পেল । মনের ভেতরে একটা বিস্ময় ভাব ফুটে উঠল। বুঝতে পারল না যে এই পাহাড়ের গুহার ভেতরে এই মূর্তিটা কিভাবে এল ! উঠতেই যাচ্ছিল তখনই অবাক হয়ে একটা ব্যাপার খেয়াল করল । তার শরীরে কোন ব্যাথা নেই। অথচ গতকাল সে ব্যাথার কারণে জ্ঞান হারিয়েছিল । ডান হাতটার কনুইয়ের কাছে কাঁটা অংশটা দেখতে পেল। অবাক হয়ে সেদিকে তাকিয়ে দেখল যে সেটা একরাতের ভেতরে একেবারে শুকিয়ে গেছে। মনে হচ্ছে যেন অনেক দিন আগের কাঁটা । ব্যাপারটা অবাক করল ওকে। তারপর যখন উঠে দাড়াল তখন দেখত পেল ব্যাপারটা । মাটিতে একটা শুকিয়ে যাওয়া রক্তের ধারা । ওটা যে নিজের শরীর থেকে বের হয়েছে সেটা ওর বুঝতে কষ্ট হল না। এতো রক্ত বের হয়েছে শরীর থেকে! ধারাটা সোজা গিয়েছে মূর্টিটার পা পর্যন্ত। সেটার দিকে বেশ কিছুটা সময় তাকিয়ে থেকে রায়হান বের হয়ে এল গুহা থেকে। শরীরে বেশ শক্তি অনুভব করছে । এই শক্তি কোথা থেকে সেটা আসছে সেটা সে বলতে পারবে না ।

বাইরে বের হয়ে আসার পরেই সে চারিদিকটা ঘুরে দেখতে শুরু করল । ওর কাছে পুরো জায়গাটা কেমন যেন পরিচিত মনে হল খুব। মনে হল যেন এই জায়গাটা সে চেনে ভাল করে। সব কিছুই যেন তার চেনা । কোন পথে গেলে সে একেবারে রেমাক্রিতে চলে যাবে সেই পথটাও যেন সে চিনতে পারছে। কিভাবে পারছে সেটা সে জানে না । 

তবে রায়হান সেদিকে গেল না। সে গেল খাদ থেকে আরও একটু নেমে গেল । সে জানে এখান থেকে সামনে এগিয়ে গেলেই সে একটা গয়ালের দেখা পাবে। সেই গলার দিকে এগিয়ে গেল সে। 

রায়হানের কানে কানে কেউ যেন বলছে ওখানে যাও । গয়ালকে গুহার ভেতরে নিয়ে এসো। রায়হান মন্ত্রমুগ্ধের মত সেদিকে এগিয়ে যাচ্ছে। রায়হানের পক্ষে এই নির্দেশনা অগ্রাহ্য করা একেবারে অসম্ভব । 

গয়ালকে গুহাতে নিয়ে আসাটা কষ্টকর হল না। গুহার ভেতরেই গয়ালটা রেখে সে বের হয়ে এল । বের হয়ে আসার পর মুহুর্তেই একটা মাত্র ডাক শুনতে পেল গয়ালটার। রায়হান আর দাড়াল না । সে গুহা দেয়াল বের হয়ে এল উপরে। সেখানে ওর ব্যাগ আর জিনিসপত্র পড়ে আছে। সেগুলো নিয়ে সে হেটে গেল সামনের দিকে । বিকেলের ভেতরেই সে রেমাক্রি পর্যন্ত পৌছে গেল। সেখান থেকে থানচি হয়ে আবার ঢাকা । তবে রায়হান খুব ভাল করেই জানে যে তাকে আবারও ফিরে আসতে হবে । খুব জলদি । 

***

নীতু ভয়ে ভয়ে তাকিয়ে রয়েছে । এতো সময় ঋদ্ধ রায়হান যা বলে গেল তা কেবল বিস্মিত হয়ে শুনেছে । নীতুর মুখ থেকে আপনা আপনি বের হয়ে গেল, তারপর?

ঋদ্ধ রায়হান যেন প্রশ্নটা শুনে বেশ মজা পেল । অবশ্য মজা পাওয়ারই কথা। যে মানুষটা একটু পরেই মারা যাবে, সে কিনা মৃত্যু চিন্তা না করে গল্প জানতে চাচ্ছে। মানুষের কৌতুহল বুঝি এমন এক ব্যাপার। 

-তারপরেই ঘটনা সহজ । পরের সপ্তাহে আমি আবার এলাম । গুহার ভেতরে ঢুকে কেবল সেই গয়ালটার দেহবাশেষ পরে আছে। কোন রক্ত নেই শরীরে। এরপরের আমি একে একে আরও আরও গইয়াল আর বন্য ছাগল এনে দিতে শুরু করলাম গুহার ভেতরে । কেন করলাম সেটা আমি জানি না তবে আমার ভেতরের কেউ বারবার বলতে শুরু করল যে তাকে ভোগ দিতে। আমি বারবার সেই ভোগ এনে দিচ্ছিলাম । 

কিছু সময় চুপ থেকে ঋদ্ধ রায়হান বলল, আমি কেন সুইসাইড করতে এসেছিলাম জানো? আমার ভেতরে লেখক হওয়ার একটা তীব্র বাসনা ছিল। এইজন্য আমি কখনো অন্য কিছু করি নি। করতে ইচ্ছে হয় নি। কিন্তু সেই একই সাথে আমি নিজেও জানতাম যে আমি যা লিখছি তা অখাদ্য ছাড়া আর কিছু ছিল না । যখন মনে হল যে আমার দ্বারা আর যাই হোক লেখক হওয়া সম্ভব না তখন মনে হল এই দুনিয়াতে আর বেঁচে থাকার কোন মানে নেই। আমি সেই কাজটাই করতে এসেছিলাম । ঐদিন রাতে যখন আমি প্রথমবার গুহার ভেতরে ঢুকেছিলাম, আমার শরীরর শক্ত গিয়ে পড়েছিল চিতংবুড়ার শরীরে । তাতেই সে জেগে উঠেছিল। তারপর তাকে আমি আস্তে আস্তে আরও রক্ত দিয়ে জাগিয়ে তুলেছি। আমার মনের ভেতরে কেউ বলছিল যে তাকে সন্তুষ্ট করলেই আমি পাব আমি যা চাই। 

ঋদ্ধ রায়হান এবার আগুনটা নিভিয়ে দিল। তারপর অদ্ভুত স্বরে কিছু যেন পড়তে শুরু করল । চোখের সামনে সব অন্ধকার হয়ে গেল । ঋদ্ধ রায়হানের মুখ থেকে বের হওয়া শব্দগুলো বড় ভয়ংকর মনে হতে লাগল নীতুর কাছে। মনে হল যেন ভয়ংকর অশুভ কিছু বের হয়ে আসছে। সেই সাথে ভয়ংকর অশুভ কাউকে সে ডাকছে। 

একটা সময়ে সব কিছু একেবারে নিরব হয়ে এল। কত সময় এভাবে থাকল সেটা নীতু জানে না। তবে একটা সময়ে ভারী নিঃশ্বাসের আওয়াজ পেল সে। ঋদ্ধ রায়হান এবং তার নিজের নিঃশ্বাসের আওয়াজ ছাড়াও আরও একটা নিঃশাস! ভয়ংকর কোনো নিঃশাস !

নীতু অনুভব করল কেউ ওর দিকে এগিয়ে আসছে। পায়ের আওয়াজ পাচ্ছে সে। এগিয়ে আসছে । নীতু আরেকবার নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করল। নীতু অনুভব করল একেবারে ওর নাকের কাছে চলে এসেছে সেটা । নীতুর মনের ভেতরে অদ্ভুত একটা অনূভূতি হল। মনে হল এটাই তাহলে ওর জীবনের শেষ সময়। ওর লাশটাও হয়তো কেউ পাবে না। ওর মায়ের কথা মনে পড়ল । অদ্ভুত ভাবে ওর সেই মোচওয়ালা ছেলেটার কথাও মনে পড়ল যার সাথে ওর বিয়ের কথা ঠিক হয়েছিল। 

ঠিক যখন মনে হল সেই নিঃশ্বাসটা একেবারে ওকে শরীরের কাছে চলে এসেছে ঠিক সেই সময়ে একটা ভারী বাতাস এসে লাগল ওর মুখে । যেন কেউ ছিটকে গেল ওর থেকে। ছিটকে যাওয়ার সময়ে নীতু অনুভব করল ওর কাঠের বেদিটাকে ধাক্কা দিল কেউ। সেটা একেবারে শোলা কাঠের মত উড়ে গেল । দুরে গিয়ে গুহার মেঝেতে পড়ল। প্রচন্ড একটা ব্যাথায় নীতুর পুরো মাথাটা কেঁপে উঠল যেন । কয়েক মুহুর্তের জন্য সে চেতনা হারাল । 

নীতুর জ্ঞান ফিরে এল কয়েক সেকেন্ড পরেই । জ্ঞান ফিরে আসতেই সেই ব্যাথার তোড়টা ফিরে এল । একেবারে উল্টে গিয়ে পড়েছে দূরে। তবে এতে একটা ব্যাপার হয়েছে । বেদির কাঠটা ভেঙ্গে গিয়ে নীতুর এক হাতের বাঁধনের স্থানটাও ভেঙ্গে যাওয়াটা সেই হাতটা মুক্ত হয়ে গেছে। সেই হাত দিয়ে সে অন্য হাতটা মুক্ত করল । একই ভাবে পায়ের বাঁধন খুলে ফেলল। এই ভেতরে সে গুহার ভেতরে ভয়ংকর আওয়াজ শুনতে পেল কেবল। ঋদ্ধ রায়হানের চিৎকার একবারই শুনেছে সে। 

নীতু নিজেকে মুক্ত করে উঠে দাড়াল । সেই জিনিসটা এখনো গুহার ভেতরেই আছে তবে ওর দিকে আসছে না। আসলে এতো সময় চলে আসত। কেন আসল না?

নীতু জানে না। সেটা আপাতত ওর জানার কোনো ইচ্ছেও নেই। এখান থেকে পালাতে হবে এটাই সব থেকে জরুরী ব্যাপার। গুহার মুখটা সে দেখতে পাচ্ছে । বাইরের অন্ধকারটা গুহার ভেতরের অন্ধকার থেকে একটু পাতলা। সেই পাতলা আলো আসছে ঘরে। সেটা দিয়ে গুহার মুখটা দেখা যাচ্ছে। 

নীতু একটা পা বাড়াতেই পায়ে কিছু একটা বাঁধল।  দা-টা পড়ে আছে । দা-টা ডান হাত দিয়ে শক্ত করে চেপে ধরল । এরপর টর্চের জন্য হাতড়ালো । কিছু সময় খোজার পরে সেটা হাতে ঠেকল । 

নীতুর খুব ইচ্ছে করল টর্চ জ্বেলে গুহার ভেতরে কী আছে সেটা দেখে। কিন্তু সেটা দেখতে সাহস হল না। যখন একেবারে গুহার মুখে এসে দাড়িয়েছে ঠিক সেই সময় পেছন থেকে একটা চাপা গর্জনের মত আওয়াজ ওর কানে এল। চোখের সামনে শিকার হাত হয়ে যাচ্ছে দেখে কোন পশু যেমন ভাবে চাপা গর্জন করে ঠিক সেই রকম !

নীতু আর দাড়ানোর সাহস হল না। এক প্রকার দৌড়েই গুহা থেকে বের হল । তারপর আলো জ্বালল । সেই দড়ি বেয়ে সে উঠল উপরে। রাস্তার উপরে তার ব্যাগটা একই ভাব পড়ে আছে । সেটা কাধ নিয়ে এবার সামনের দিকে ছুট লাগাল। পেছনে তাকানোর কোন সময় নেই। যদিও সে জানে যে তাকে আক্রমণ করবে না তবুও সে দৌড়াতে লাগল । 

মনের ভেতরে ভয়টা কিছুতেই যাচ্ছিল না । মনে হচ্ছিল যে কিছু একটা আসছে ওর পেছন পেছন। দৌড়ানো থামালো না। প্রাণ ভয়ে সে কত সময় দৌড়াল তার কোন ঠিক নেই। সঠিক পথেও দৌড়াল কিনা সেটাও নীতু জানে না। কেবল সে জানে যে তাকে থামলে চলে না। একটা সময় অনুভব করল আকাশে আলো ফুটতে শুরু করেছে। সকাল হয়ে আসছে।

নীতু যখন ঋদ্ধ রায়হানের বাসায় সামনে এল তখন দেখতে পেল সাং গেটের কাছে এসে দাড়িয়ে আছে। ওর চোখের দিকে তাকিয়েই বুঝতে পারছিল যে ছেলেটা ওকে নিয়ে চিন্তিত হয়ে ছিল। তাই ভোর বেলাতেই রওয়ানা দিয়েছে। 

নীতুর প্রচন্ড ক্লান্তি লাগছিল তবে সে জানে যে এখানে থামা চলবে না। দ্রুত বাসার ভেতরে ঢুকে ওর সমস্ত জিনিসপত্র নিয়ে আবার বের হয়ে এল। তারপর সাংয়ের সাথে ওর পাড়ার দিকে রওয়ানা দিল। পথে মধ্যে যখন পুরো ঘটনা সাংকে খুলে বলল সাং তখন বলল, আমি আপনাকে যে লকেটটা দিয়েছিলাম সেটা কই?

নীতুর চট করে ব্যাপারটা মনে পড়ল । প্যান্টের ডান পকেটে হাত দিয়ে সেটার অস্তিত্ব বের টের পেল সে। সেটা হাতে নিয়ে আসতে সাং হাসল । বলল, এটা থাকতে কোন অশুভ কিছু আপনার কাছে আসবে না । এই কারণেই ওটা আসে নি আপনার কাছে।

সাংদের পাড়াতে গিয়ে পুরো দিনটা নীতু ঘুমিয়ে কাটাল । রাতে ওকে ঘিরে ধরল সবাই। নীতু আবার সব খুলে বলল। ওদের পাড়ার কারবারি বলল, এবার কিছু একটা করতে হবে। ঋদ্ধ রায়হানকে কেউ ঠিক পছন্দ করত না । এতোদিন তারা কেবল সন্দেহ করত যে ঐ লোকের ভেতরে সমস্যা আছে। এখন তো এটা প্রমাণিত । এর একটা বিহীত এবার তারা করবেই। 

নীতুর অবশ্য এতো কিছু দেখার কোন দরকার ছিল না । পরের দিন সে পাড়া থেকে রেমাক্রি হয়ে থাকচি আসে। তারপর সেখান থেকে সোজা ঢাকায় । 

দুইদিন দিন অফিসে গিয়ে সে সোজা হাজির হয় সম্পাদকের অফিসে। ওকে দেখে একটু চমকে ওঠে সম্পাদক। ওকে আশাও করে নি । কারণটা নীতু খুব ভাল করে জানে। টেবিলের উপরে একটা কাঁচের পেপার ওয়েট রাখা ছিল সেটা স্বজোরে সম্পাদকের মাথা দিকে ছুড়ে মারে । তিনি চিৎকার করে চেয়ারে কাত হয়ে পড়েন। নীতু অবশ্য আর দাড়ালো না। অফিস থেকে বের হয়ে এল । যদিও আরও বেশি করার দরকার ছিল তবে এখন আর কিছু করার ইচ্ছে নেই ওর। থানায় অভিযোগ করলে কোন কিছু সে প্রমাণ করতে পারবে না। 

অফিসের ফটকে দাড়িয়েই নীতু মনে হল এখন সোজা সেই মোচওয়ালা পাত্রের অফিসে গিয়ে হাজির হবে। বেটা নিশ্চিত চমকে যাবে। আজকে সারা দিন বেটাকে জ্বালাতন করবে সে। যদি মুখ বুজে সব সহ্য করে নিতে পারে তবে সামনের দিনের কথা চিন্তা করবে। 

পরিশিষ্টঃ 

এদিকে ঋদ্ধ রায়হান যেন হঠাৎ করে দৃশ্যপট থেকে গায়েব হয়ে গেল। ঠিক যেভাবে সে হাজির হয়েছিল ঠিক একই ভাবে তার বই আসা বন্ধ হয়ে গেল। কেউ আর কোনো খোজ পেল না। তার বাড়িতে সে আর ফিরে আসে নি। সাংদের পাড়ার লোকজন তার বাড়ির পরের রাস্তাটা মন্ত্রপুজা পাঠ করে একেবারে বন্ধ করে দিয়েছে। মাঝে একবার আর্মির একটা দল গিয়েছিল একেবারে সে গুহা পর্যন্ত । সেখানে কারো কোন চিহ্ন পাওয়া যায় নি । এমন কি কোন মূর্তিরও না। ঋদ্ধ রায়হান কোথায় হারিয়ে গেল কেউ জানে না।

আগের পর্ব । প্রথম পর্ব

ফেসবুকের অর্গানিক রিচ কমে যাওয়ার কারনে অনেক পোস্ট সবার হোম পেইজে যাচ্ছে না। সরাসরি গল্পের লিংক পেতে আমার হোয়াটসএপ বা টেলিগ্রামে যুক্ত হতে পারেন। এছাড়া যাদের এসব নেই তারা ফেসবুক ব্রডকাস্ট চ্যানেলেও জয়েন হতে পারেন।

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 4.6 / 5. Vote count: 20

No votes so far! Be the first to rate this post.


Discover more from অপু তানভীর

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

About অপু তানভীর

আমি অতি ভাল একজন ছেলে।

View all posts by অপু তানভীর →