আইমুন বুড়ি

4.6
(26)

নিতং সামনের খাদটার দিকে একভাবে তাকিয়ে রয়েছে। শহর থেকে একটু হাটলেই এই পাহাড়ে এসে পৌছানো যায় । ওদের পাড়া থেকে স্কুলে আসার পথে সোজা না গিয়ে একটু ডান দিকে মোড় নিলেই এখানে আসা যায়। এই রাস্তায় কেবল পাহাড়িরাই আসতে পারে । এমন অনেক পাহাড়ি ছেলে মেয়েরাই আছে যারা শহরে থেকে পড়াশোনা করতে পারে না আবার অনেকের সুযোগ থাকলেও তারা সেটা করে না । নিজেদের বাসা থেকে স্কুলে যাওয়া আসা করে। এতে করে প্রতিদিন বেশ বড় একটা সময় তাদের যাওয়া আসায় চলে যায় তারপরেও তারা নিয়মিত যাওয়া আসা করে। নিতংও তাদেরই দলের । নিতং এবার এসএসসি পরীক্ষা দিবে। ওদের পাড়ার ভেতরে কেবল নিতং একমাত্র মেয়ে যে কিনা এতো দূর পর্যন্ত পড়তে পেরেছে । যদিও ওর মায়ের এতো পড়াশোনাতে মত নেই তবে নিতংয়ের বাবার খুব ইচ্ছে পড়াশোনায় নিতং অনেক দুরে যাক।
বেশ কয়েকদিন ধরেই নিতংয়ের পড়াশোনাতে মন নেই একদম । এর প্রধান কারণ হচ্ছে ওদের নতুন আসা অংকের শিক্ষক সোহেল মিয়া। মাত্র মাস দুয়েক এসেছে ওদের স্কুলে কিন্তু অনেক মেয়েদের মন বিষিয়ে তুলেছে। সোহেল মিয়ার স্বভাব খারাপ । সুযোগ পেলেই সে মেয়েদের গায়ে হাত দেয় । এই ব্যাপারটা ক্লাসের কেউ ঠিক পছন্দ করে না । কিন্তু কিছু বলতে পারে না । একে তো সে স্যার আরেক দিকে সে নাকি এই থানার এক ওসির আত্মীয় হয়। সেই হিসাবে সবাই একটু অস্বস্তিতে আছে। তবে সব থেকে বড় অস্বস্তিতে আছে নিতং নিজে।
এছাড়া নিতং আরও শুনতে পেয়েছে সে তাকে এই পাহাড়ি অঞ্চলে পাঠানো হয়েছে শাস্তি স্বরূপ। আগের স্কুল গুলোতেও এই স্বভাব খারাপের কারণেই নাকি তাকে বদলি করা হয়েছিল । বেশ কয়েকবার অভিযোগ করা হয়েছে কিন্তু তার একজন শক্তিশালী মামা থাকার কারণে চাকরি না গিয়ে কেবল বদলি করা হয়েছে । এই দেশে অবশ্য এই ব্যাপারটা অস্বাভাবিক না । যদি ক্ষমতাবান কেউ থাকে তাহলে বড় অপরাধ করে নাম মাত্র শাস্তি পেয়ে পার পাওয়া যায়। পুলিশ ছাড়াও রাজনৈতিক অনেকের সাথেই নাকি তার চেনাজানা রয়েছে।
কয়েক দিন ধরে তার চোখ নিতংয়ের উপরে । নানান সুতোয় সে নিতংয়ের কাছে ঘেষার চেষ্টা করছে। নিতং প্রথম দিনেই সেটা টের পেয়েছে। যথা সম্ভব এড়িয়ে চলেছে। কিন্তু দুদিন আগে ক্লাসে নিতংয়ের অংক বইটা সে নিল দরকার বলে। ক্লাস শেষ করে যখন বইটা চাইতে গেল তখন সোহেল বলল যে স্কুলের ছুটির পরে যেন ও দেখা করে। বইটা একটু লাগবে। নিতং খুব ভাল করে জানে যে স্কুলের পরে দেখা করলে তার সাথে সে কী করার চেষ্টা করবে। ওদের ক্লাসের আরেকটা মেয়ের সাথে ঠিক একই কাজ করার চেষ্টা করেছে সে। সে কোন মতে দৌড়ে পালিয়ে আসার চেষ্টা করেছে।
নিতং কী করবে ঠিক বুঝতে পারছে না । যদি সে এই কথা বাসায় বলে তাহলে তার মা সোজা তাকে স্কুল যাওয়া বন্ধ করে দিবে। তখন কী হবে? খাদের দিকে একভাবে তাকিয়েই রইলো । নিতং জানে এতো সময়ে স্কুল শুরু হয়ে গিয়েছে। আজকেও যখন তাকে খুজে পাবে না তখন সে কী ভাববে?
নিতং মনে মনে কেবল চিন্তা করল যে ওর কথা যেন ভুলে যায় সে। ওর দিকে যেন আর চোখ না দেয়।
-এই ছুড়ি কী করিস এখানে? (নিজেস্ব ভাষায়)
নিতং নিজের ভাবনাতে এতোটাই নিমগ্ন ছিল যে কেউ যে পেছনে আসতে পারে সেটা সে দেখতেই পায় নি। এই রাস্তাটা সাধারণ চলাচল রাস্তা থেকে একটু দুরে । সামনের একটা বাক দিয়ে মূল রাস্তার দিকে চলে গেছে । এই রাস্তা নিয়ে সামনে কেবল খাদের দিকে গেছে। নিচে কিছু বন্য পথ ছাড়া আর কিছু নেই । নিতং কয়েকবার গেছে এই রাস্তায়। তাই পেছন থেকে বৃদ্ধার কথা শুনে একটু চমকে উঠল । সরে দাড়াল রাস্তা থেকে।
বৃদ্ধ মহিলাটাকে প্রথম দর্শনে চিনতে না পারলেও পাশ দিয়ে যাওয়ার পরে চিনতে পারল । আইমুন বুড়ি। এই এলাকাতে সবাই চেনে তাকে । ঠিক কোন পাড়াতে থাকে না সে। একা একা পাহাড়ে থাকে । তার থাকার কোন নির্দিষ্ট জায়গা নেই। শোনা যায় যে পাহাড়ের নানা স্থানে সে ঘুরে বেড়ায় একা একা । কী যে করে সেটা নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারে না। তবে লোক মুখে শোনা যায় যে বুড়ি নাকি কালো জাদু জানে । এই কারণে কোনো পাড়ার কেউ বুড়ির পেছনে লাগে না । আর বুড়িও কারো সাথে পাঁচে থাকে না । নিজের মত করে থাকে।
আইমুন বুড়ি নিতংয়ের দিকে ফিরে না তাকিয়েই আবার বলল, স্কুলে ফাঁকি দিয়ে এখানে কী করিস তুই?
নিতংয়ের মনে কী হল সেটা নিতং নিজেও জানে না সে বুড়ির পেছন পেছন হাটা শুরু করে দিল। স্কুল চলবে দুপুর দুইটা পর্যন্ত । এখনও অনেকটা সময় ওকে এদিক ওদিক ঘুরে বেড়াতে হবে । গতদিনও ঠিক এই কাজটাই করেছিল সে। কতদিন স্কুল ফাঁকি দিয়ে বেড়াবে সেটা সে জানে না। আজকে সে বুড়ির পেছন পেছন হাটতে লাগল। প্রথমে নিতংয়ের মনে হয়েছিল যে পেছন পেছন যাচ্ছে যে বুড়ি হয়তো ওকে বকা দিবে। তবে বুড়ি কিছু বলল না । বুড়ির দুই হাতে দুইটা চটের বস্তা । তার ভেতরে কী রয়েছে সেটা নিতং জানে না । দেখার কৌতুহল হচ্ছে অবশ্য।
-ও বুড়ি !
-কী হল?
-তোমার বস্তায় কী?
-সেইটা দিয়ে তোর কাম কী? তুই স্কুলে যাস না ক্যান?
-স্কুলে যাইত ভাল লাগে না।
যদিও কথাটা ঠিক না । স্কুলে যেতে, পড়তে নিতংয়ের ভাল লাগে । পড়ালেখা শেষ করে ভাল একটা চাকরি করার ইচ্ছে । তবে চাকরি করার ইচ্ছে মানে এই না যে সে তার জন্মভূমিকে ভুলে যাবে। এই পাহাড়ের কঠিন জীবনও তার ভাল লাগে।

বুড়ি একটু থামল । তারপর হাতের একটা বস্তা নিতংয়ের দিকে বাড়িয়ে দিল । বলল, এইটা ধর !
নিতং কোন প্রতিবাদ না করেই বস্তাটা হাতে নিল। ওর কাধে ব্যাগ রয়েছে। আজকে স্কুলে যাবে না ঠিক করেছিল বলে বই নিয়ে আসে নি খুব একটা। তাই বস্তাটা নিতে কোন সমস্যা হল না । মায়ের সাথে জুমে যেতে হয় ওকে প্রায়ই । সেখান থেকে ফসল বয়ে নিয়ে আসতে হয়। তাই বোঝা বইতে তার কোন কষ্ট নেই। আর বস্তাটা খুব ভারীও নয় । নিতংয়ের কাছে মনে হল পাতা জাতীয় কিছু রয়েছে ভেতরে । হয়তো বুড়ি বন থেকে কোন গাছের বাকল বা পাতা নিয়ে আসছে । কী করবী কে জানে !
প্রায় ঘন্টা খানেক চলার পরে খাদের একেবারে নিচে নেমে এল । নিতং একটু অবাক হয়ে গেল একটা ঝর্ণা দেখে। এখানে যে কোন ঝর্ণা আছে সেটা নিতংয়ের জানা ছিল না। এমন কি কোন আওয়াজও শোনা যায় না উপর থেকে । এইদিকে কেউ খুব একটা আসে না বলেই হয়তো কারো কোন খোজ নেই। তবে ঝর্ণাটা খুব বেশি বড় নয় । পাহাড়ের একটা দেয়াল থেকে যেন হঠাৎ করেই বের হয়েছে । ঝর্ণা থেকে বের হওয়া পানি দিয়ে একটা জলাশয়ের মত তৈরি হয়েছে। এক পাশ দিয়ে সেই বয়ে চলেছে। নিতং জানে সেটা চলে যাবে একেবারে নিচে নদীতে । এতোদিন কারো এটা চোখে পড়ে নি কেন সেটাই নিতংয়ের কাছে অবাক লাগছে ।
ছোট সেই জলাশয়ের পাশেই একটা কুড়ে ঘর। এটাই যে বুড়ির ঘর সেটা বুঝতে অসুবিধা হল না । তাহলে বুড়ি এখানেই তার আস্তানা গেড়েছে ! কুড়ে ঘরটার দিকে তাকিয়ে নিতংয়ের মনে হল খুব বেশি হল মাস তিনচার মাস হয়েছে বড়জোর । এর আগে সে কোথায় ছিল কে জানে !
বুড়ি কুড়ের কাছে এসে নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে গেল । নিতং যে ওর সাথে এসেছে এটা যেন সে একেবারে ভুলেই গেছে। নিতং কিছু সময় বোকার মত দাঁড়িয়ে রইলো বস্তাটা হাতে নিয়ে । তারপর সেটা কুড়ে ঘরের দরজার কাছে নামিয়ে রাখল । নিজের কাধের ব্যাগটাও সে সেখানেই নামিয়ে রাখল । তারপর পায়ের স্যান্ডেলটা খুলে ধীরে পায়ে এগিয়ে গেল ঝর্ণাটার দিকে । ছোট জলাশয়ের কাছে বসে পরল ।
এভাবে কখন যে সময় কেটে গেল সেটা নিতং নিজেও জানে না । বুড়ির ডাকে তন্ময় ভাঙ্গল । পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখল বুড়ি ওকে খেতে ডাকছে। রান্না হয়ে গেছে । নিতং কোনো কথা না বলে ঘরের ভেতরে গিয়ে বসল। আয়োজন একেবারে সাধারণ । আলু ভর্তার সাথে লাল চালের ভাত । সাথে একটা ডিম ভাজি । একটা ডিম ভাজিই করা হয়েছে । অর্ধেকটা বুড়ি নিতংকে দিল ।

ওদের পাহাড়ের সবারই স্বভাব এই একই রকম । সবাই যেন সবার আত্মীয়, সবাই যেন সবার কাছের মানুষ ।
-ও বুড়ি ডিম লাগবে না । তুমি খাও ।
-ঢং করিস না। যা দিছি খা।
নিতং একটু হাসল । বুড়িকে সে আগেও দেখেছে অনেকবার। তবে এতো কাছ থেকে এই প্রথম । বুড় বলল, তোর বাপে কেমন আছে?
-তুমি আমার বাবাকে চেনো?
-তোর বাপ কেন তোর চৌদ্দগুষ্টিকে চিনি। তোর বাপে ভালা মানুষ ।
নিতং আর কিছু বলল না । চুপ করে খেতে লাগল । খাওয়া যখন শেষ পর্যায়ে তখন হঠাৎ বুড়ি বলল, ঐ মাস্টর কি খুব জ্বালাইতেছে !
এবার নিতং চমকে উঠল । খাওয়া বন্ধ করে তাকাল বুড়ির দিকে তাকাল । তাকিয়ে আরেকবার চমকে উঠল । বুড়ির চোখের রং কেমন যেন নীল মনে হচ্ছে । নাকি আগে থেকেই সেটা নীলই ছিল, নিতং খেয়াল করে নি । বুড়ির চোখে দেখে নিতং কেমন যেন ভয় পেয়ে উঠল । এ ভয় পাওয়ার ব্যাপারটা বুড়ি নিজেও যেন বুঝতে পারল । একটু মুচকি হেসে বলল, ভয় পাইস না । মানুষ ভাল হইলে তার কোন ক্ষতি হয় না। খাইয়া বাড়িত যা। আর তোর স্কুলের ব্যাগটা রাইখা যা । কাইল যাওয়ার সময় নিয়া যাইস !
নিতং কী করবে ঠিক বুঝল না । তবে কেন জানি ওর মনে হল যে বুড়ির হুকুম অমান্য করার সাহস ওর নেই । খাওয়া শেষ করে ব্যাগটা রেখেই সে বাড়ির দিকে রওয়ানা দিল । মনের ভেতরে একটা অস্বস্তি ঠিকই কাজ করল। বুড়ি ওর ব্যাগ দিয়ে কী করবে? আর বুড়ি কিভাবে স্কুলের স্যারের কথা জানল । এই কথা তো ও কাউকে বলে নি। এমন কী ওর বন্ধুবান্ধবের সাথেও আলোচনা করে নি। তাহলে বুড়ি কিভাবে জানল ?
পরের দিন একটু আগে আগেই বাসা থেকে বের হল স্কুলে যাওয়ার জন্য । পথের মধ্যে তাকে আগে বুড়ির বাড়ি যেতে হবে। সেখান থেকে ব্যাগটা নিয়ে তারপর স্কুলে । নিতং আজকে ঠিক করেছে যে, সে আজকে আর পালাবে না। স্কুলের পরে ওর শহুরে বন্ধু বরিনকে নিয়ে যাবে বই নিয়ে আসতে । বরিন চেয়ারম্যানের ছেলে । ও সাথে থাকলে ব্যাটা কিছু বলার সাহস পাবে না ।
নির্দিষ্ট জায়গায় এসে সে বুড়ির কুড়েতে যাওয়ার পথ ধরল । তবে খুব বেশিদুর যেতে হল না । মিনিত দশেক রাস্তা দিয়ে নামার পরেই দেখল যে ওর ব্যাগটা একটা কলা পাতার উপরে রাখা। ব্যাগের ঠিক পাশেই দুটো বড় পেয়ারা । বুড়ির কাণ্ড । কিন্তু যদি অন্য কেউ নিয়ে যেত ! এভাবে রাস্তার পাশে কেউ ব্যাগ রাখে ? তবে কেন জানি বুড়ির উপরে রাগ হল না । পেয়ারা নিতংয়ের খুব পছন্দ। একটা পেয়ারা ব্যাগে রেখে অন্যটা খেতে খেতে সে স্কুলের দিকে হাটা দিল । আজকে একটু আগে আগেই স্কুলে পৌছাবে সে। তবে সেটা নিয়ে ভাবল না ।
তবে যখন স্কুলের প্রাঙ্গনে পৌছাল তখন অবাক হয়ে খেয়াল করল যে স্কুলটা মোটেই নিরব নয়। স্কুলের মাঠে একটা পুলিশ আর একটা আর্মির গাড়ি দাঁড়িয়ে রয়েছে । এছাড়া আরও অনেক মানুষ সেখানে রয়েছে । স্কুলের স্যারদের সে চিনতে পারল । সেই সাথে আর্মি ও পুলিশের পোষাকেও অনেক জন দাঁড়িয়ে রয়েছে। সবার মুখ গম্ভীর হয়ে আছে ।
নিতং কী করবে ঠিক বুঝতে পারল না। তবে ভয়ংকর কোন কাণ্ড যে হয়েছে সেটা বুঝতে কষ্ট হল না । কিছু সময় বোকার মত স্কুলের গেটের কাছে দাঁড়িয়ে রইল । ভেতরে ঢুকবে কিনা বুঝতে পারছে না । ঠিক এমন সময় নিতং বরিনকে দেখতে পেল। বরিনের বাবাকেও দেখতে পেল সে । বরিন ওকে দেখতে পেয়েই এগিয়ে এল । বরিনের পরণে স্কুল ড্রেস নেই আজকে । ওর কাছে আসতে বরিন বলল, আজকে স্কুল হবে না । ছুটি।
-কেন রে কী হয়েছে?
-সোহেল স্যার মারা গেছে!
নিতংয়ের মনে হল ও যেন ভুল শুনল । চোখ বড় বড় করে বলল, কী বললি?
-হ্যা। সোহেল স্যার মারা গেছে? স্কুলের পেছনে টয়লেটের পাশে লাশ পড়ে আছে।
-কীভাবে?
-কিভাবে এখনও বোঝা যাচ্ছে না । তবে কোন মানুষ মারে নি । দেখে মনে হচ্ছে কোন হিংস্র জন্তু কামড়ে খেয়েছে তার শরীরের কিছু অংশ । গলার দিকটা একেবারে ছিড়ে নিয়েছে । তারপর …
নিতং খেয়াল করে দেখল বরিন কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেল। যেন ওর সামনে ঠিক মত বলতে পারছে না। নিতং যেন খানিকটা শূন্য অনুভব করল। ঠিক যেন বিশ্বাস হচ্ছে না। তবে তার মৃত্যুতে সে কোন ভাবে দুঃখিতবোধ করছে না।
বেশি দেরি করলো না সে। স্কুল যেহেতু হবে না তাই সোজা বাড়ির দিকে যাওয়াই ভাল । ফেরার পথ ধরল আবার। তবে সেই খাদের কাছে এসে মনে হল আইমুন বুড়ির বাড়িতে আরেকবার ঘুরে যাওয়া যাক । সে চিন্তা থেকেই খাদের নিচের দিকে নামতে শুরু করল । কিন্তু আজকে অবাক হয়েই খেয়াল যে পথটা সে খুজে পাচ্ছে না । অথচ গতকালকেই সে পথ দিয়ে গেছে। পাহাড়ের লোকেরা একবার যে পথে যায় সেটা সহজে ভোলে না। কিন্তু গতদিনের যাওয়া পথ নিতং চিনতে পারছে না। আবারও ফিরে এসে কয়েকবার ঘোরাফেরা করল কিন্তু সেই নিচে নামার কোন রাস্তাই খুজে পেল না। শেষে বাধ্য হবে এবার বাড়ির পথই ধরল সে ।
কিন্তু তখনও একটা বিস্ময়ের ঘটনা ঘটা বাকি ছিল । নিতং যখন বাসায় পৌছে নিজের বইখাতাগুলো বাইরে বের করতে গেল ঠিক সেই সময়ে অংক বইটাকে দেখতে পেল । সাথে সাথেই তীব্র একটা বিস্ময় এসে ধাক্কা খেল ওর মনে । এ বইটা তো অংক স্যার অর্থ্যাৎ সোহেল মিয়ার কাছে ছিল। তার সাথে তো আর দেখাই হয় নি তাহলে এই বইটা এই ব্যাগের ভেতরে এল কিভাবে?

পরিশিষ্টঃ
সোহেল মিয়ার মেজাজটা খারাপ হয়ে আছে। আজকেও মেয়েটা স্কুলে আসে নি। গত কয়েকদিন ধরেই মেয়েটার উপরে চোখ ছিল তার। প্রতিবারই কোন না কোন ভাবে ফসকে গিয়েছে সে। এবারও ফসকে গেল । স্কুলের পুরোটা সময় তার মেজাজটা একটু খিটমিটে ছিল। স্কুল শেষ করে ঘরে ফিরেও মেজাজ ঠিক হয় নি। মনে মনে আরও একটা পরিকল্পনা আটলো সোহেল। এবার আরেকটু চাপ দিতে হবে। কেবল বই নিয়ে আসলে হবে না । খুব জলদি ওদের টেস্ট পরীক্ষা শুরু হবে । সোহেল এবার ঠিক করল যে মেয়েটাকে ইচ্ছে করে ফেল করাবে যাতে বাধ্য হয়ে ওর কাছে আসতে হয়। আসতেই হবে সে! কথাটা ভাবতেই চোখ চকচক করে উঠল তার।
নিজের ঘরে বসে বসে যখন সোহেল ফন্দী আটছে যে কিভাবে নিতং নামের মেয়েটাকে নিজের জালে আটকানো যায় ঠিক সেই সময় একটা আওয়াজে ওর মনযোগ কেড়ে নিল। সময়টা সন্ধ্যা পার হয়েছে। পাহাড়ে খুব দ্রুত রাত নামে । তাই সন্ধ্যার পরপরই খেয়ে দেয়ে সবাই ঘুমিয়ে পড়ে । শহরের কিছুটা অংশ একটু জেগে থাকলেও এই দিকটার মানুষ খুব বেশি রাত জাগে না ।
স্কুলের ঠিক পাশেই সোহেলের বাসা । স্কুলটা শহর থেকে কিছুটা দূরে । বিশেষ পাহাড়ি এবং শহরের ছাত্রছাত্রীদের আসা যাওয়ার যেন সুবিধা হয় এমন স্থানে স্কুলটা তৈরি । এখানে কিছু দোকান পাট আছে বটে সেগুলো কেবল স্কুলের কারণেই চলে । স্কুল বন্ধ হওয়ার পরপরই সেগুলো বন্ধ হয়ে যায় ।
বাড়ির গেটের দিকে চোখ যেতেই সোহেলের চোখ কপালে উঠল । বাড়ির সামনে একটা ছোট চল্লিশ পাওয়ারের আলো জ্বলছে। সে আলোতেই মেয়েটাকে পরিস্কার দেখতে পেল । স্কুলের ব্যাগ কাধে সে দাঁড়িয়ে রয়েছে । ওর দিকে তাকিয়ে আছে।
সোহেল কোন কিছু চিন্তা না করেই দরজার কাছে চলে এল । সোহেলকে বের হতে দেখে মেয়েটি সামনের রাস্তার দিকে পা বাড়াল ! স্কুলের দিকে যাচ্ছে !
সোহেল আর দেরি করল না । কোন মতে দরজাটা বন্ধ করেই ছুট লাগাল । আজকে মেয়েটাকে পাওয়া গেছে হাতের মুঠোর । তবে সে চিন্তাও করল না যে এই রাতের বেলা মেয়েটা ওর বাসার সামনে কেন আসবে! স্বাভাবিক ভাবে চিন্তা করলেই সে অসঙ্গতিটা ধরতে পারতো । তবে সোহেলের মাথায় অন্য কোন চিন্তা আসছে না।
সোহেল দ্রুত পা চালাল । সে হয়তো ঘুরাক্ষণেও ভাবল না যে ওর জন্য কী অপেক্ষা করে আছে …

ফেসবুকের অর্গানিক রিচ কমে যাওয়ার কারনে অনেক পোস্ট সবার হোম পেইজে যাচ্ছে না। সরাসরি গল্পের লিংক পেতে আমার হোয়াটসএপ বা টেলিগ্রামে যুক্ত হতে পারেন। এছাড়া যাদের এসব নেই তারা ফেসবুক ব্রডকাস্ট চ্যানেলেও জয়েন হতে পারেন।

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 4.6 / 5. Vote count: 26

No votes so far! Be the first to rate this post.


Discover more from অপু তানভীর

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

About অপু তানভীর

আমি অতি ভাল একজন ছেলে।

View all posts by অপু তানভীর →