চারটি এনিমে মুভি

oputanvir
3
(5)

গত কয়েকদিনে আসলে লেখালেখি কিছু হচ্ছে না। সত্যি বলতে কী লেখায় মন বসছে না । মুভি দেখছি এনিমে দেখছি। সময় এভাবেই কাটছে। কোন কাজই হচ্ছে না । আজকে গতদিনের দেখা কয়েকটা এনিমে মুভির গল্প নিয়ে এলাম । আপনারা নিজেরাও দেখতে পারেন সময় করে। আশা করি ভাল লাগবে ।
Hotarubi no mori e (To the Forest of Firefly Lights)
এই মুভির কাহিনীটা শুরু হয় অনেক ছোট বেলায় । ছোট একটা মেয়ে হতারু (Hotaru) । সে গরমের ছুটি কাটাত যায় গ্রামে মামার কাছে। সেখানেই পাশের জঙ্গলে খেলতে গিয়ে হারিয়ে যায়। যখন বনের ভেতরে সে কান্না করতে থাকে তখন একটা ভুত এসে তাকে রক্ষা করে। বনের বাইরে বের হওয়ার পথে দেখিয়ে দেয়। পরের দিন হতারু আবারও সেই বনে এসে হাজির হয়। সাথে করে একটা উপকার নিয়ে আসে। গতদিন ভুতটা যে তাকে সাহায্য করেছিল সেটার কৃতজ্ঞতা স্বরূপ। এভাবে প্রতিদিন সে আসতেই থাকে। ভুতটাও হতারুর সাথে পুরো বনের ভেতরে ঘুরে বেড়াতে থাকে । কেবল শর্ত একটাই ভুতকে মোটেই স্পর্শ করা যাবে না । কারণ যখনই কোন মানুষের স্পর্শ পাবে তখনই তাকে এই পৃথিবী থেকে চলে যেতে হবে । ছোট বেলায় যখন তাকে তার বাবা মা এই বনে রেখে গিয়েছিল তখন ফরেস্ট গড তার উপরে মন্ত্র দিয়ে তাকে বাঁচায় । নয়তো সে তখনই মারা যেত।
এভাবেই প্রতি গরমের ছুটিতেই হরারু তার মামার কাছে আসে । তারপর পুরো ছুটিটা সে বনে কাটায় । এভাবে এক সময়ে হতারু অনুভব করে যে বনের সেই ভুতের সাথেই সে থাকতে চায় । কেবল গ্রীষ্ম নয়, সারা বছর। তাই সে ঠিক করে পড়াশোনা শেষ করে সে এই মামার শহরেই চলে আসবে, এখানেই একটা চাকরি জোগার করবে। ভুতটার সাথে তার মনের সম্পর্ক গড়ে ওঠে । ওরা দুজনই দুজনকে কাছে পেতে চায় । একে অন্যকে জড়িয়ে ধরতে চায় । কিন্তু পারে না।
তবে সেটা আর হয়ে ওঠে না । এক গরমে যখন হতারু ভুতটার সাথে একটা ভুতের অনুষ্ঠান থেকে ফিরে আসছিল তখন একটা ছোট্ট বাচ্চাকে হোচট খাওয়া থেকে রক্ষা করতে গিয়ে তাকে ধরে ফেলে। তখন সে ফেলেছিল যে ওটাও হয়ত কোন ভুতই হবে । কিন্তু পরে বুঝতে পারে যে ওটা সলে মানুষের বাচ্চাই ছিল । যখন বুঝতে পারল তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে। শেষ বারের মত হতারু ভুতটাকে জড়িয়ে ধরে।
ভালবাসার মানুষটিকে স্পর্শ করার একটা তীব্র আকাঙ্খা এই মুভিতে ফুটে উঠেছে বেশ ভাল ভাবেই।

Koe no katachi (A Silent Voice)
এই মুভিটা বুঝি অনেকেই দেখেছেন। এই মুভির গল্প শুরু হয় একজন বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী মেয়ে সোকো এবং এক বুলি বা র‍্যাগিং করা ছেলে সোয়াইয়া। এলিমেন্টারি স্কুলে সোকো আসে পড়তে । মেয়েটিকে পুরো ক্লাসই নানান ভাবে টিজিং করতে থাকে। তার তার ভেতরে সবার থেকে বেশি করে ছেলেটি । এক সময়ে শিক্ষকরা এই ব্যাপারটা নিয়ে সবাইকে ধমকায়। এবং সব থেকে বেশি বকাবকি করে ছেলেটাকে । তখনই ছেলেটা অবাক হয়ে খেয়াল করে যে অন্য যারাই মেয়েটিকে বুলি করেছিল তারা সবাই অস্বীকার করে সব দোষ ছেলেটির মাথায় চাপিয়ে দেয়। এক সময়ে সোকো স্কুল বদলিয়ে অন্য স্কুলে চলে যায়।
এক সময়ে ছেলেটি সবার কাছ থেকে দুরে সরে যায়। কারো দিকেই তাকিয়ে আর কথা বলতে পারে না। মাথা নিচ করে থাকে। সোয়াইয়ার ভেতরে তখন আত্মহত্যার প্রবণতা দেখা দেয়। হাই স্কুলে এসে সোকোর সাথে আবারও সোয়াইয়ার দেখা হয়। তখন সোয়াইয়া সোকার কাছে আসার চেষ্টা করে । নিজের কৃতকর্মের জন্য অপরাধবোধে ভোগে। সে জোর চেষ্টা চালাতে থাকে সোকোর কাছাকাছি আসতে । সোকো নিজেও সেই চেষ্টা করে।
এভাবেই গল্প এগিয়ে যায়। এই মুভিটা যখন আপনি দেখে শেষ করবেন তখন এক অদ্ভুত অনুভূতি এসে আপনাকে ঘিরে ধরবে। একই সাথে প্রেম ভালবাসা বন্ধুত্ব সব কিছু আপনি খুজে পাবেন এই মুভিতে । যারা দেখেন নি একই দেখে ফেলেন।

Natsu e no Tonneru, Sayonara no Deguchi (The Tunnel to Summer, the Exit of Goodbyes)
এই গল্পটাও বেশ চমৎকার । হাই স্কুলে পড়া একটা ছেলে আর একটা মেয়ের গল্প। ছেলেটির জীবনে বড় একটা দূর্ঘটনা ঘটে গেছে অনেক আগে। ছোট বেলায় তার বোন গাছ থেকে পড়ে মারা যাওয়ার পরেই তার মা তাদের ছেড়ে চলে যায় তার বাবা মদ খেতে শুরু করে। অন্য দিকে মেয়েটি একজন সফল মাঙ্গা আর্টিস্ট হতে চায় তার দাদার মত । তবে তার বাবা মা এতে রাজী ছিল না । তাই মেয়েটি চলে আসে তার দাদার বাসায় । এখানে একলা থাকতে শুরু করে।
উরাসিমা টানেল নামে এক মিথ শহরে প্রচলিত ছিল । এই মিথ অনুসারে যে কেউ এই টানেলের ভেতরে ঢুকবে সে যা চাইবে তাই পাবে। তবে এরই সাথে একটা বিপদও আছে। সে যখন টানেলের অন্য দিক থেকে বের হবে তখন সেটা ভবিষ্যতের কোন সময়ে যাবে সেটা কেউ বলতে পারে না। একদিন ছেলেটি খানিকটা দুর্ঘটনায় পড়েই সেই টানেলটা আবিস্কার করে ফেলে । সেখানে সে ঢোকে কিন্তু ফিরে আসে কিছু সময় পরেই । কিন্তু তখন অবাক হয়ে আবিস্কার করে যে তখন প্রায় সাতদিন পার হয়ে গেছে । অথচ ও খুব বেশি হলে কিছু মিনিট সেখানে ছিল।

ছেলেটি এবং মেয়েটি মিলে এবার একটা এডভেঞ্চার শুরু করে। টানেলের ভেতরে কিভাবে সময় অতিবাহিত হয় সেটার খোজ করতে থাকে। ওদের ভেতরে এই কথা হয় যে দুইজন এক সাথে টানেলে ঢুকবে এবং নিজেদের ইচ্ছে পূরণ করবে। কিন্তু এক সময়ে ছেলেটি নিজেই একা একা ভেতরে ঢোকে। এবং মেয়েটিকে একটা মেসেজ দিয়ে জানায় যে এই টানেল ইচ্ছে পূরণ করে না। কেবল আগের হারিয়ে যাওয়া কোন জিনিস ফেরত দেয়। ছেলেটি তার বোনকে ফেরত চায় । কিন্তু মেয়েটির কোন কিছু হারায় নি। তাই সে টানেলে ঢুকে কিছুই পাবে না ।
ছেলেটা টানেলের উল্টোদিকে গিয়ে তার বোনকে ফেরত পায় বটে কিন্তু সে মেয়েটিকেও মিস করে । এক সময়ে সে টানেল দিয়ে আবার ফিরে এই পাশে। ততদিনে পনের বছর পার হয়ে গেছে । মেয়েটি নিজের যোগ্যতা দিয়েই বেশ জনপ্রিয় একজন মাঙ্গা আর্টিস্ট হয়ে গেছে।
এটাও খুব চমৎকার একটা মুভি ।

Kimi no Suizō o Tabetai (I Want to Eat Your Pancreas)
ছেলেটি ক্লাসের সব থেকে অজনপ্রিয় ছেলে । কারো সাথেই সে মেশে না। প্রতিদিন ক্লাসে যায় ক্লাস করে বাসায় ফিরে। লাইব্রেরিতে কাজ করে। সেই লাইব্রেরিতে তারই ক্লাসের এক মেয়ে কাজ নেয় তার সাথে। এই মেয়েটির কঠিন একটা অসুখ হয় । সে আর খুব বেশিদিন বাঁচবে না । ঘটনাক্রমে ছেলেটা এই অসুখের কথা জেনে ফেলে। মেয়েটি এবার ছেলেটির সাথে মিশতে শুরু করে। ক্যাফেতে খাওয়া দাওয়া করে, ঘুরতে যায়। অনেকে ওদের এক সাথে ঘুরতে দেখে। ক্লাসে ওদের নিয়ে গসিপ হয়। তবে মেয়েটি এসব নিয়ে খুব একটা মাথা ঘামায় না। সে তার শেষ দিন গুলো চমৎকার ভাবে কাটাতে চায় । কী কী ইচ্ছে আছে সেগুলো পূরণ করতে চায়। ছেলেটিও অদ্ভুত ভাবে মেয়েটির সাথে সাথে সব স্থানে যায়। ছেলেটির নিজেরও ভাল লাগে । এক সময়ে ছেলেটি নিজেও অনুভব করে যে মেয়েটির ব্যাপারে একটা তীব্র অনুভূতি সে অনুভব করছে।

এই চারটা এনিমে মুভি দেখতে পারেন । প্রেম ভালবাসা বন্ধুত্ব হতাশা প্রিয় মানুষের কাছে থাকার আকুতি সব কিছু অনুভব করতে পারবেন।

ফেসবুকের অর্গানিক রিচ কমে যাওয়ার কারনে অনেক পোস্ট সবার হোম পেইজে যাচ্ছে না। সরাসরি গল্পের লিংক পেতে আমার হোয়াটসএপ বা টেলিগ্রামে যুক্ত হতে পারেন। এছাড়া যাদের এসব নেই তারা ফেসবুক ব্রডকাস্ট চ্যানেলেও জয়েন হতে পারেন।

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 3 / 5. Vote count: 5

No votes so far! Be the first to rate this post.

About অপু তানভীর

আমি অতি ভাল একজন ছেলে।

View all posts by অপু তানভীর →