আমি আমার পুরো জীবনে কোন সিরিজ কিংবা মুভি দেখে এতো ইমোশনলান হয়েছি বলে আমার মনে পড়ে না যতটা না আমি এই টিভি সিরিজটা দেখে হয়েছি । এতো তীব্র ভাবে এটা আমাকে নাড়া দিয়েছে আমি সেটা লিখে প্রকাশ করতে পারবো না । প্রায় প্রতিটি পর্বে আমার চোখ ভিজে উঠেছে ।
ভায়োলেট এভারগার্ডেন শিরোনামে একটা টিভি সিরিজ আর দুইটা মুভি তৈরি হয়েছে । প্রথম কাহিনী সিরিজটা কে নিয়ে । গল্পের কাহিনী শুরু হয় ভায়োলেট কে নিয়ে । সে একজন ওর্ফেন । তাকে মেজর গিলবার্ড কে উপহার হিসাবে দেওয়া হয় । গিলবার্ডের বড় ভাই গিলবার্ডকে এই মেয়েটিকে দেয় । তাকে বলে যে মেয়েটিকে একজন টুল হিসাবে ব্যবহার করতে যুদ্ধ ক্ষেত্রে । গিলবার্ড তাই করতে শুরু করে । যুদ্ধে, অস্ত্র চালনায় ভায়োলেট ভয়ানক পারদর্শী তবে তার ভেতরে কোন ইমোশন নেই । সে কেবল হুকুম শুনতে জানে । একেবারে রোবটের মত । তার মনে কোন ভয় কাজ করে, সে কোন ব্যাথাও অনুভব করে না । যুদ্ধ যখন শেষ পর্যায়ে চলে এসেছে তখন এক যুদ্ধ গিলবার্ডের বাহিনী আক্রান্ত হয় । গিলবার্ডের চোখে গুলি লাগে এক হাত ছিড়ে যায় । এদিকে ভায়োলেটেরও দুই হাত গুলিতে শরীর থেকে ছিন্ন হয়ে পড়ে । তারপরেও ভায়োলেট গিলবার্ডকে বাঁচাতে চায় । নিজের মুখ দিয়ে গিলবার্ডের কাপড় টেনে তাকে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যেতে চায় । কিন্তু গিলবার্ডের ভারী শরীর সে টেনে নিয়ে যেতে পারে না । তখন গিলবার্ড তাকে চলে যেতে বলে, নিজেকে রক্ষা করতে বলে । এবং শেষে বলে যে সে অন্তরের গভীর থেকে তাকে ভালোবাসে ।
যুদ্ধ শেষে ভায়োলেটকে হাসপাতালে দেখতে আসে গিলবার্ডের বন্ধু । ভায়োলেটের হাত আগেই কাটা পড়েছে । তবে তাকে তাকে মেটাল হাত লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে । সেই মেটাল হাতে অভ্যস্ত হতে একটু সময় লাগে ভায়োলেটের । মিলিটারিতে সেই বন্ধুটি গিলবার্ডের হায়ারর পোস্টের অফিসার ছিল । দুজন বেশ কাছের বন্ধু ছিল । গিলবার্ডই তাকে বলেছিলো যে যদি গিলবার্ডের কিছু হয়ে যায় তাহলে সে যেন ভায়োলেটের দেখা শুনা করে । যুদ্ধ করে করে আর্মি ছেড়ে দেয় এবং নিজের একটা পোস্টাল কোম্পানী গড়ে তোলে । তখন চিঠি লেখার প্রচলন ছিল বেশ । সবারই লিখতে পড়তে পারতো না । তাই তাদের হয়ে একজন মেয়ে চিঠি লিখে দিতো । তাদেরকে বলা হত অটোমেমোরী ডল । তারা মানুষে অনুভূতি ভাল করে বুঝতে পারতো ।
এদিকে ভায়োলেট গিলবার্ডের শেষ বলা লাইন গুলোর অর্থ কোন ভাবেই বুঝতে পারে না । আই লাভ ইউ এর অর্থ কি সেটা জানে না । এটা বোঝার জন্যই ভায়োলেট অটোমেমোরি ডল হিসাবে কাজ শুরু করে । প্রথম প্রথম ভায়োলেট কাজ করতে অসুবিধা হলেও আস্তে আস্তে সে এক সময়ে বুঝতে সক্ষম হয় যে আসলেই আই লাভ ইউ বলতে কি বোঝায় । পুরো সিরিজটা মূলত ভায়োলেটের ট্রান্সফর হওয়ার গল্প । ভিবিন্ন অভিজ্ঞতা থেকে সে টুল থেকে অনুভূতি সম্পন্ন মানুষ হতে ওঠে । নিজেকে মুক্ত করে তোলে ।
সিরিজের প্রতিটি পর্বই এতো এতো ইমোশনাল যে না দেখলে বলে বোঝানো যাবে । যেমন এক পর্বে দেখা যায় ভায়োলেটকে যেতে একজন অসুস্থ মানুষের জন্য চিঠি লিখতে । প্রায় সাত দিন ধরে সে তার জন্য অনেক গুলো চিঠি লিখে । এই সময়ে তার মেয়ে খুব মিস করে মাকে । অসুস্থ মায়ের আশে পাশে থাকতে চায় সে । ছোট মেয়েটি বুঝতে পারে না কেন তার মা তার সাথে কথা না বলে অন্য কাজ করছে । পরে দেখা যায় মা টি তার মেয়ের জন্যই চিঠি লিখছে । এমন একটা ব্যবস্থা করে রাখছে যাতে মেয়েটি পরের ২০ বছর প্রতি জন্ম দিনে মায়ের লেখা চিঠি পেতে থাকে । অন্য একটা পর্বে ভায়োলেট হাজির হয় এক যুদ্ধ ক্ষেত্রে । এক সোলজারের জন্য চিঠি লেখে সে । সোলজারের শেষ বলা কথা গুলো ভায়োয়েল তার পরিবার আর ভালোবাসার মানুষের কাছে পৌছে দেয় ।
প্রথম মুভির নাম Eternity and the Auto Memory Doll। এই মুভির কাহিনী এমি নামের একটা মেয়েকে কেন্দ্র করে । মেয়েটি একজন সম্ভ্রান্ত লোকের অবৈধ সন্তান । জীবনের প্রথম দিকে খুজ কষ্ট করে বড় হয়েছে । তখন এমি আরও একটা বাচ্চা মেয়েকে খুজে পায় । তার নাম টেইলর । মেয়েটাকে সে নিজের বোন বানিয়ে নেয় । তারপর তার দেখা শোনা করতে থাকে । এক সময়ে সেই সম্ভ্রান্ত লোকটা এমিকে নিজের কাছে নিয়ে যায় তবে শর্ত দেয় যে তার ছোটবোনের কোন যোগাযোগ করতে পারবে না সে । এও বলে যে টেইলর যাতে ভাল ভাবে বেড়ে ওঠতে পারে সেই ব্যবস্থা সে করবে । এমি দেখে যে সে নিজে ভালোভাবে টেইলরকে দেখা শোনা করতে পারে না । এটাই সবার জন্য ভাল হবে । বাবার সাথে চলে যায় অন্য দিকে টেইরলকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় একটা ভালো অর্ফানেজে ।
এমিকে আদম কায়দা শেখানোর জন্যই ভায়োলেটের ডাক পড়ে । ভায়োয়েল তখন খুবই পরিচিত একজন অটোমেমোরী ডল । এছাড়াও কিভাবে চল চলক কথা বার্তা বলতে হবে সব কিছুতেই সে পারোদর্শী । এক সময়ে এমিকে শিখিয়ে ফেলে সব কিছু । এমি ভায়োলেটকে তার ছোট বোনের গল্প বলে । এমির হয়ে ভায়োয়েল তার সেই ছোটবোনকে একটা চিঠি লেখে । চিঠিতে ভায়োলেট টেইলরকে জানায় যে যদি কখন টেইলরের দরকার পরে তাহলে সে যেন ভায়োলেটের সাথে যোগাযোগ করে ।
মুভির দ্বিতীয় পর্যায়ে টেইলর গিয়ে ভায়োলেটের কাছে গিয়ে হাজির হয় । সেখানে কাজ নেয় । তারপর এক সময় পোস্টাল কোম্পনীর অন্য কর্মচারির সাহায্য নিয়ে তার বোনের খোজ বের করে । একটা চিঠি লিখতে ভায়োলেট তাকে সাহায্য করে । টেরলর সেই চিঠি পৌছে দিতে চায় ডেলিভারি ম্যানের সাথে কিন্তু বোনের সামনে যায় না । দুর থেকে দেখে । এমি এতোদিন পরে বোনের চিঠি পেয়ে খুব বেশি খুশী হয় । যখন ভেলিভারিম্যানের সাথে টেইলর ফিরে আসে তখন সে টেইলরকে বলে যে কেন দেখা করলে না ? তখন টেইলর বলে যে আগে সে নিজে একজন ভালো ডেলিভারিম্যান হবে তখন সে নিজের চিঠি নিয়ে নিজেই হাজির হবে ।
১৩ তারিখে আরেকটা মুভি বের হয়েছে । নাম Violet Evergarden: The Movie এতোদিন ভায়োলেটের জন্য আমার বড় মন খারাপ ছিল । এতো তীব্র ভাবে সে মেজর গিলবার্ডকে ভালোবাসে কিন্তু কোন ভাবেই সে তার ভালোবাসার মানুষকে পাবে না । কিছু কিছু মানুষের জীবন বুঝি এমনই । ভায়োলেটের এই অনুভূতি দেখে মেজর গিলবার্ডের বড় ভাই যে কিনা সব সময় ভায়োলেটকে তুচ্ছ তাছিল্য করতো সেও নরম হয়ে ওঠে । ভায়োলেটের প্রতি তার আচরন বদলে যায় এক সময় । তখনই আসল টুইস্টটা আসে ।
পোস্টাল কোম্পানিতে যে চিঠি গুলো সঠিক ঠিকানা দেওয়া থাকে না সেই চিটি গুলো আবার প্রেরকের ঠিকানাতে ফেরৎ যায় । একদিন এমন একটা ঠিচি এসে হাজির হয় প্রেসিডেন্টের হাতে । প্রেসিডেন্ট মানে হচ্ছে মেজর গিলবার্ডের বন্ধুটি । পোস্টাল কোম্পানির মালিক । সে গিলবার্ডের হাতের লেখা চিনে ফেলে । সেই চিঠি নিয়ে সে যায় গিলবার্ডের বড় ভাইয়ের কাছে । খোজ নিতে বলে এবং সত্যিই খোজ পাওয়া যায় । ভায়োলেট যখন জানতে পারে যে মেজরের বেঁচে থাকার একটা সম্ভবনা আছে তখন তার আচরন কেমন এলোমলো হয়ে যায় । পুরো সিরিজ আর মুভি জুড়ে ভায়োলেট ছিল একেবারে ধীর স্থির শান্ত স্বভাবের। তার আচরনের ভেতরে সব সময় থাকতো একটা সুস্থির ভাব কিন্তু যখনই মেজরের বেঁচে থাকার সম্ভবনা দেখা যায় তখন নিজেকে সে কোন ভাবেই ধরে রাখতে পারে না । কেমন উদ্ভট আর এলোমেলো আচরন করে । আমরা যেমনটা নিজের ভালোবাসার মানুষদের বেলাতে করি তেমন ।
সেই আইল্যান্ডে গিয়ে সত্যিই দেখা যায় গিলবার্ড বেঁচে আছে । তার এক হাত নেই আর একটা চোখ নেই । প্রথমে সে ভায়োলেটের সাথে দেখা করতে চায় না । কারণ তার কাছে মনে হয় যে আজকে ভায়োলেটের যা অবস্থা তার জন্য সে নিজেই দায়ী । যতবার সে ভয়োলেটে সামনে যাবে ততবার কেবল এই কথাই মনে হবে । ভায়োলেট প্রথমে খুব বেশি ইমোশনলান হয়ে গেলেও মেজর তার সাথে দেখা করতে চায় এটা সে মেনে নেয় । এবং যাওয়ার আগে তাকে একটা চিঠি লিখে যায় । সেই চিঠি পড়ে গিলবার্ড বুঝতে পারে ভায়োলেট তাকে কতখানি ভালোবাসে । ফেরি তখন ছেড়ে দিয়েছিলো । অনেকটা পথ চলেও গিয়েছিলো কিন্তু যখন গিলবার্ডে নদী তীরে এসে ভায়োলেটের নাম ধরে ডাক দেয়, ভায়োলেট ঠিক ঠিক সেই ফেরি থেকে ঝাপ দিয়ে সাঁততে চলে আসে মেজরের কাছে । এতোদিন পরে আমার মনে একটা শান্তির অনুভূতি ফিরে আসে । আমি সত্যিই কোন এনিমেশন চরিত্রের জন্য এতোটা মন খারাপ করে থাকি নি কোন দিন । বারবার ভায়োলেটের জন্য আমার মন খারাপ লাগতো । নিজের কাছে মনে হয় যেন কোন ভাবে যদি ভায়োলেট তার ভালোবাসার মানুষটিকে পেত । মুভির শেষে এসে তাই হয় । যদিও বানানো একটা গল্প তবুও এতো আনন্দময় একটা অনূভূতি হল সেটা আমি কিছুতেই বলে বোঝাতে পারবো না ।
ভাই আপনিও আমার মতো এনিমে ফ্যান তাহলে
আমি সারাজীবন এনিমেশনের ভক্ত । তবে এনিমে দেখা হয় না খুব একটা ভাষার কারণে । যেগুল ইংরেজিতে ডাবিং করা সেগুলো দেখা হয় অবশ্য ।