মুভিঃ দ্য ব্যাটম্যান

4.2
(9)

অবশেষে এতো প্রতীক্ষিত ব্যাটম্যান মুভিটা দেখেই ফেললাম ।

ডিসি তার কমিক এবং এনিমেশনে যতখানি এগিয়ে মুভির বেলায় আসলে কেন জানি সেই ব্যাপারটা ধরে রাখতে পারে না । কয়েক বছর একের পর এক ডিসি ইউনিভার্সের মুভি আমাকে হতাশই করেছে । অন্তত মার্ভেলের মুভি গুলোতে যে পরিমান গতি থাকে ডিসির মুভি গুলোর তার ধারে কাছ দিয়েও যায় না কিংবা যাচ্ছে না । এবং সত্যি বলতে কী নতুন ব্যাট মুভিও তার ব্যতিক্রম না । আপনি যদি সত্যি একজন ব্যাটম্যান ফ্যান না হয়ে থাকেন তাহলে রবার্ট প্যাটনশনের নতুন দ্য ব্যাটম্যান মুভি দেখে আপনি হতাশ হবেন ।

আমার এতো জলদি মুভি দেখতে যাওয়ার কোন ইচ্ছে ছিল না । ভেবেছিলাম যে হয়তো দ্য ব্যাটম্যান মুভি দেখার জন্য মানুষের ভেতরে খুব হাইপ থাকবে কিন্তু বসুন্ধরায় গিয়ে দেখি চিত্র একেবারে উল্টো । যদিও মর্নিং শোতে এমনিতেও লোকজন কম থাকে । কিন্তু এতো কম থাকবে সেটা ভাবি নি । যাই হোক আপনার যদি হলে গিয়ে মুভি দেখার ইচ্ছে থাকে তাহলে এরপর আর না পড়ার অনুরোধ রইলো । পোস্ট পড়ার পরের হয়তো আপনার আর ইচ্ছে করবে না মুভিটা দেখতে । খানিকটা স্পয়েলারও পেয়ে যাবেন । আর যদি পিসিতে দেখতে চান তাহলে পড়তে পারেন ।

মুভি শুরু হয় খুন দিয়ে । একজন মাস্ক পরা খুনি শহরের মেয়রকে খুন করে তার নিজ বাসায় । লাশ ডক টেপ দিয়ে পেঁচিয়ে রেখে যায় সাথে নতুন ক্লু রেখে যায় । এবং একটা নোট রেখে যায় ব্যাটম্যানের জন্য ।
গোথাম সিটির অবস্থা খারাপ । গত দুই বছর ধরে ক্রাইম রেট বেড়েই চলেছে । তার উপরে এসে হাজির হয় এই সিরিয়াল কিলার । একের পর এক সে শহরের গন্যমান্য ব্যক্তিকে খুন করেই চলেছে । এবং প্রতিটি খুনের শেষে একটা নতুন রিডল বা ধাঁধা রেখে যাচ্ছে ব্যাটম্যানের জন্য । নিজেকে সে পরিচয় দিচ্ছে রিডলার হিসাবে ।
প্রথম খুন হওয়ার পরে রিডলার যে ধাঁধা দিয়েছিলো সেই ধাঁধার সমাধান করে খোজ পাওয়া যায় এক পেন ড্রাইভের । ব্যাটম্যান এবং কমিশনার গর্ডন সেই পেন ড্রাইভের ভেতরে কিছু ছবি খুজে পায় । ছবি দেখা যায় সদ্য মৃত মেয়র শহরের প্রশিদ্ধ ক্রিমিনালদের সাথে । একটা মেয়েকেও দেখা যায় । মেয়র কেন পেঙ্গুইনের ক্লাবে গিয়ে হাজির হয়েছিলো । এবং তার সাথের মেয়েটিই বা কে !
এদিকে আরও একজনের খুন হয় । সেইখুনের কাছ পাওয়া ধাঁধা থেকে ব্যাটম্যান আর গর্ডন জানতে পারে যে খুব বড় একটা কন্সপেরি হয়েছিলো এবং সেটার পেছনে একটা র‌্যাট রয়েছে । এই র‌্যাট কে খুজে বের করতে বলা হয়েছে ক্লুতে । নয়তো অন্য আরেকটা খুন হবে । ব্যাটম্যান তখন সেই মেয়েটিকে খুজে পেতে চায় ।

গর্ডন জানায় যে পেঙ্গুইনের ক্লাবে ওয়ারন্ট ছাড়া যাওয়া যাবে না । কিন্তু ব্যাটম্যান সেখানে গিয়ে হাজির হয় । খানিকটা ফাইট করেই সে ভেতরে প্রবেশ করে । এক সময়ে পেঙ্গুইন নিজেই হাজির হয় ব্যাটম্যানের সামনে । মৃত মেয়রের সাথের মেয়েটির ব্যাপারে জানতে চায় । তখনই ঘরে সেলিনার প্রবেশ । সেও টেবিলে রাখা ছবিটার দিকে তাকায় । ব্যাটম্যান সেলিনার মুখের দিকে তাকিয়েই বুঝতে পারে যে সেলিা মেয়েটিকে ঠিকই চিনে । পরে সে সেলিনার পিছু নেয় । এবং সেই মেয়রের সাথে সেই মেয়েটির খোজ পেয়েও যায় । মেয়েটি আসলে সেলিনার কাছের বন্ধু । তারা একই ক্লাবে কাজ করে । মেয়রের খুনে সে খুব ভয় পেয়েছে কিন্তু দেশ ছেড়ে চলে যেতে পারছে না কারণ তার পাসপোর্ট মেয়র নিজের কাছে রেখে দিয়েছে । সেলিনা মেয়রের বাসায় গিয়ে হাজির হয় সেই পাসপোর্ট নিয়ে আসতে । সেখানেই ব্যাটম্যানের সাথে দেখা হয় । মানে ব্যাটম্যান এতো সময় তার পিছনের ছিল ।

একটা সময়ে সেলিনা ব্যাটম্যানকে সাহায্য করতে রাজি হয় । ঠিক হয় যে ব্যাটম্যানের চোখ হিসাবে কাজ করবে সে । পেঙ্গুইনের ক্লাবের ভেতরে আরেকটা ক্লাব আছে যেখানে শহরের গন্যমান্য ব্যক্তিরা গিয়ে হাজির হয় । মেয়র সাবেওও যেতেন যেখানে । সেলিনার চোখে বিশেষ ধরের কন্ট্যাক্ট লেন্স পরানো হয় তারপর তাকে ক্লাবের ভেতরে । সেলিনা যখন ভেতরে ঢোকে তখন দেখা যায় সে শহরের কত গন্যমান্য ব্যক্তি সেখানে রয়েছে । ডিএ অফিসের একজন অফিসকে কেমন নার্ভাস হয়ে সেই র‌্যাটের কথা মুখ দিয়ে বলে দেয় সেলিনার কাছে । এদিকে আরও একজনের সাথে সেলিনার দেখা হয়ে যায় । শহরের প্রসিদ্ধ ডন কারমাইন ফ্যালকন ! সেলিনার সাথে সে এমন ভাবে কথা বলে তাতে স্পষ্ট হয় সেলিনাকে সে খুব ভাল করেই চিনে । এই কথা ব্যাটম্যান সেলিনাকে জিজ্ঞেস করতেই সেলিনা রাগ করে লেন্স খুলে ফেলে । সকল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায় ।
অন্য দিকে ডিএ অফিসের সেই অফিসারকে এবার রিডলার কিডন্যাপ করে নিয়ে যায় । পরে তাকে গলায় বোমা ফিট করে পাঠানো হয় মেয়রের ফিউনালের অনুষ্ঠানে । লাইভে ফোন করে তার কাছে জানতে চাওয়া হয় যে সেই র‌্যাটটা আসলে কে । যদি বলে তাহলে তার গলার যে কোডেড বোম সেট করা আছে সেটা খোলার কোড বলে দেওয়া হবে । কিন্তু তবুও সে বলে না । ব্যাটম্যা যখন তার কাছে সব কিছু জানতে চায় তখন অফিসারটি বলে যে এখন তো কেবল আমি মরবো কিন্তু যদি মুখ খুলি তাহলে আমার পরিবার আছে ।

অনেক খানি কাহিনী বলে দিলাম । আর সামনে না যাওয়াই ভাল । তাহলে হয়তো যারা পড়বে তাদের সব আগ্রহই হারিয়ে যাবে । তবে এই টুকু বলে রাখি যে কন্সপেরেসি রিডলার সামনে আনতে চাইছে সেটার সাথে জড়িত রয়েছে ব্রুস অর্থ্যা ব্যাটম্যানের বাবা টমাস ওয়েন এবং তার মৃত্যু রহস্য । এই কারণে ব্যাটম্যান আরও যেন মরিয়া হয়ে ওঠে সত্যটা জানার জন্য । এর পেছনে আসলে কে, কী সেই সত্য যা রিডলার জানতে চায় সব কিছু জানতে চায় !

এই মুভিটা একটু স্লো । সুপার মুভি মানেই আমরা বুঝি যে মার কাট কাট একশন । দারুন সব ভিজ্যুয়াল ইফেক্ট সাথে উজ্জল গ্রাফিক্স । তবে ব্যাটম্যান মুভিতে এসব কম দেখতে পাওয়া যাবে । একশন সব সিন একেবারে বাস্তবই ভাবেই করা হয়েছে । ব্যাটম্যানের সব স্ক্রিনেই অন্ধকার থাকে, এটাও তার ব্যতিক্রম না । সারাদিন রাত গোথাম সিটিতে কেবল বৃষ্টিই হয় । ওখানে সারা বছর বর্ষাকাল চলে সম্ভব ।

ব্যক্তিগত ভাবে আমার ব্যাটম্যান সব সময়ই পছন্দ । আমার কাছে এই মুভিটা বেশ ভালই লেগেছে । তবে আমার পরিচিত বেশির ভাগ মানুষের কাছেই মুভিটা একেবারে স্লো একটা মুভি । দেখতে গিয়ে ঘুম চলে আসবে এমন পরিস্থিতি ।
এটা ঠিক সুপার হিরো মুভি না । এই আশা নিয়ে যদি আপনি মুভিটা দেখতে যান তাহলে আপনাকে খানিকটা হতাশ হতে হবে । এটাকে বলা যায় একটা ক্রাইম এবং ডিটেক্টিভ মুভি । যেখানে শহরে ক্রাইম হচ্ছে, সেই ক্রাইমের পেছনের কারণ এবং কেন হচ্ছে সেটা খুজে বের করছে একজন ডিটেক্টিভ । পার্থক্য একটাই যে এই ডিটেক্টিভ বাদুরের মত মাস্ক পরে ঘুরে বেড়ায় ! যদি ক্রাইম ডিটেক্টিভ মুভি দেখা মান মানসিকতা নিয়ে মুভি দেখতে বসেন তাহলে মুভিটা দেখে আপনার ভাল লাগবে আশা করি ।
শেষ কথা যে ব্যাটম্যান সিরিজের সব মুভিই আমি দেখেছি । এখনও পর্যন্ত ক্রিস্টেন বেলের ব্যাটম্যান ট্রিলজি বেস্ট । এই সিরিজটাকে সম্ভবত আর কেউ বিট করতে পারবে না কেউ ।

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 4.2 / 5. Vote count: 9

No votes so far! Be the first to rate this post.

About অপু তানভীর

আমি অতি ভাল একজন ছেলে।

View all posts by অপু তানভীর →