মুভিঃ দ্য ব্যাটম্যান

4.3
(10)

অবশেষে এতো প্রতীক্ষিত ব্যাটম্যান মুভিটা দেখেই ফেললাম ।

ডিসি তার কমিক এবং এনিমেশনে যতখানি এগিয়ে মুভির বেলায় আসলে কেন জানি সেই ব্যাপারটা ধরে রাখতে পারে না । কয়েক বছর একের পর এক ডিসি ইউনিভার্সের মুভি আমাকে হতাশই করেছে । অন্তত মার্ভেলের মুভি গুলোতে যে পরিমান গতি থাকে ডিসির মুভি গুলোর তার ধারে কাছ দিয়েও যায় না কিংবা যাচ্ছে না । এবং সত্যি বলতে কী নতুন ব্যাট মুভিও তার ব্যতিক্রম না । আপনি যদি সত্যি একজন ব্যাটম্যান ফ্যান না হয়ে থাকেন তাহলে রবার্ট প্যাটনশনের নতুন দ্য ব্যাটম্যান মুভি দেখে আপনি হতাশ হবেন ।

আমার এতো জলদি মুভি দেখতে যাওয়ার কোন ইচ্ছে ছিল না । ভেবেছিলাম যে হয়তো দ্য ব্যাটম্যান মুভি দেখার জন্য মানুষের ভেতরে খুব হাইপ থাকবে কিন্তু বসুন্ধরায় গিয়ে দেখি চিত্র একেবারে উল্টো । যদিও মর্নিং শোতে এমনিতেও লোকজন কম থাকে । কিন্তু এতো কম থাকবে সেটা ভাবি নি । যাই হোক আপনার যদি হলে গিয়ে মুভি দেখার ইচ্ছে থাকে তাহলে এরপর আর না পড়ার অনুরোধ রইলো । পোস্ট পড়ার পরের হয়তো আপনার আর ইচ্ছে করবে না মুভিটা দেখতে । খানিকটা স্পয়েলারও পেয়ে যাবেন । আর যদি পিসিতে দেখতে চান তাহলে পড়তে পারেন ।

মুভি শুরু হয় খুন দিয়ে । একজন মাস্ক পরা খুনি শহরের মেয়রকে খুন করে তার নিজ বাসায় । লাশ ডক টেপ দিয়ে পেঁচিয়ে রেখে যায় সাথে নতুন ক্লু রেখে যায় । এবং একটা নোট রেখে যায় ব্যাটম্যানের জন্য ।
গোথাম সিটির অবস্থা খারাপ । গত দুই বছর ধরে ক্রাইম রেট বেড়েই চলেছে । তার উপরে এসে হাজির হয় এই সিরিয়াল কিলার । একের পর এক সে শহরের গন্যমান্য ব্যক্তিকে খুন করেই চলেছে । এবং প্রতিটি খুনের শেষে একটা নতুন রিডল বা ধাঁধা রেখে যাচ্ছে ব্যাটম্যানের জন্য । নিজেকে সে পরিচয় দিচ্ছে রিডলার হিসাবে ।
প্রথম খুন হওয়ার পরে রিডলার যে ধাঁধা দিয়েছিলো সেই ধাঁধার সমাধান করে খোজ পাওয়া যায় এক পেন ড্রাইভের । ব্যাটম্যান এবং কমিশনার গর্ডন সেই পেন ড্রাইভের ভেতরে কিছু ছবি খুজে পায় । ছবি দেখা যায় সদ্য মৃত মেয়র শহরের প্রশিদ্ধ ক্রিমিনালদের সাথে । একটা মেয়েকেও দেখা যায় । মেয়র কেন পেঙ্গুইনের ক্লাবে গিয়ে হাজির হয়েছিলো । এবং তার সাথের মেয়েটিই বা কে !
এদিকে আরও একজনের খুন হয় । সেইখুনের কাছ পাওয়া ধাঁধা থেকে ব্যাটম্যান আর গর্ডন জানতে পারে যে খুব বড় একটা কন্সপেরি হয়েছিলো এবং সেটার পেছনে একটা র‌্যাট রয়েছে । এই র‌্যাট কে খুজে বের করতে বলা হয়েছে ক্লুতে । নয়তো অন্য আরেকটা খুন হবে । ব্যাটম্যান তখন সেই মেয়েটিকে খুজে পেতে চায় ।

গর্ডন জানায় যে পেঙ্গুইনের ক্লাবে ওয়ারন্ট ছাড়া যাওয়া যাবে না । কিন্তু ব্যাটম্যান সেখানে গিয়ে হাজির হয় । খানিকটা ফাইট করেই সে ভেতরে প্রবেশ করে । এক সময়ে পেঙ্গুইন নিজেই হাজির হয় ব্যাটম্যানের সামনে । মৃত মেয়রের সাথের মেয়েটির ব্যাপারে জানতে চায় । তখনই ঘরে সেলিনার প্রবেশ । সেও টেবিলে রাখা ছবিটার দিকে তাকায় । ব্যাটম্যান সেলিনার মুখের দিকে তাকিয়েই বুঝতে পারে যে সেলিা মেয়েটিকে ঠিকই চিনে । পরে সে সেলিনার পিছু নেয় । এবং সেই মেয়রের সাথে সেই মেয়েটির খোজ পেয়েও যায় । মেয়েটি আসলে সেলিনার কাছের বন্ধু । তারা একই ক্লাবে কাজ করে । মেয়রের খুনে সে খুব ভয় পেয়েছে কিন্তু দেশ ছেড়ে চলে যেতে পারছে না কারণ তার পাসপোর্ট মেয়র নিজের কাছে রেখে দিয়েছে । সেলিনা মেয়রের বাসায় গিয়ে হাজির হয় সেই পাসপোর্ট নিয়ে আসতে । সেখানেই ব্যাটম্যানের সাথে দেখা হয় । মানে ব্যাটম্যান এতো সময় তার পিছনের ছিল ।

একটা সময়ে সেলিনা ব্যাটম্যানকে সাহায্য করতে রাজি হয় । ঠিক হয় যে ব্যাটম্যানের চোখ হিসাবে কাজ করবে সে । পেঙ্গুইনের ক্লাবের ভেতরে আরেকটা ক্লাব আছে যেখানে শহরের গন্যমান্য ব্যক্তিরা গিয়ে হাজির হয় । মেয়র সাবেওও যেতেন যেখানে । সেলিনার চোখে বিশেষ ধরের কন্ট্যাক্ট লেন্স পরানো হয় তারপর তাকে ক্লাবের ভেতরে । সেলিনা যখন ভেতরে ঢোকে তখন দেখা যায় সে শহরের কত গন্যমান্য ব্যক্তি সেখানে রয়েছে । ডিএ অফিসের একজন অফিসকে কেমন নার্ভাস হয়ে সেই র‌্যাটের কথা মুখ দিয়ে বলে দেয় সেলিনার কাছে । এদিকে আরও একজনের সাথে সেলিনার দেখা হয়ে যায় । শহরের প্রসিদ্ধ ডন কারমাইন ফ্যালকন ! সেলিনার সাথে সে এমন ভাবে কথা বলে তাতে স্পষ্ট হয় সেলিনাকে সে খুব ভাল করেই চিনে । এই কথা ব্যাটম্যান সেলিনাকে জিজ্ঞেস করতেই সেলিনা রাগ করে লেন্স খুলে ফেলে । সকল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায় ।
অন্য দিকে ডিএ অফিসের সেই অফিসারকে এবার রিডলার কিডন্যাপ করে নিয়ে যায় । পরে তাকে গলায় বোমা ফিট করে পাঠানো হয় মেয়রের ফিউনালের অনুষ্ঠানে । লাইভে ফোন করে তার কাছে জানতে চাওয়া হয় যে সেই র‌্যাটটা আসলে কে । যদি বলে তাহলে তার গলার যে কোডেড বোম সেট করা আছে সেটা খোলার কোড বলে দেওয়া হবে । কিন্তু তবুও সে বলে না । ব্যাটম্যা যখন তার কাছে সব কিছু জানতে চায় তখন অফিসারটি বলে যে এখন তো কেবল আমি মরবো কিন্তু যদি মুখ খুলি তাহলে আমার পরিবার আছে ।

অনেক খানি কাহিনী বলে দিলাম । আর সামনে না যাওয়াই ভাল । তাহলে হয়তো যারা পড়বে তাদের সব আগ্রহই হারিয়ে যাবে । তবে এই টুকু বলে রাখি যে কন্সপেরেসি রিডলার সামনে আনতে চাইছে সেটার সাথে জড়িত রয়েছে ব্রুস অর্থ্যা ব্যাটম্যানের বাবা টমাস ওয়েন এবং তার মৃত্যু রহস্য । এই কারণে ব্যাটম্যান আরও যেন মরিয়া হয়ে ওঠে সত্যটা জানার জন্য । এর পেছনে আসলে কে, কী সেই সত্য যা রিডলার জানতে চায় সব কিছু জানতে চায় !

এই মুভিটা একটু স্লো । সুপার মুভি মানেই আমরা বুঝি যে মার কাট কাট একশন । দারুন সব ভিজ্যুয়াল ইফেক্ট সাথে উজ্জল গ্রাফিক্স । তবে ব্যাটম্যান মুভিতে এসব কম দেখতে পাওয়া যাবে । একশন সব সিন একেবারে বাস্তবই ভাবেই করা হয়েছে । ব্যাটম্যানের সব স্ক্রিনেই অন্ধকার থাকে, এটাও তার ব্যতিক্রম না । সারাদিন রাত গোথাম সিটিতে কেবল বৃষ্টিই হয় । ওখানে সারা বছর বর্ষাকাল চলে সম্ভব ।

ব্যক্তিগত ভাবে আমার ব্যাটম্যান সব সময়ই পছন্দ । আমার কাছে এই মুভিটা বেশ ভালই লেগেছে । তবে আমার পরিচিত বেশির ভাগ মানুষের কাছেই মুভিটা একেবারে স্লো একটা মুভি । দেখতে গিয়ে ঘুম চলে আসবে এমন পরিস্থিতি ।
এটা ঠিক সুপার হিরো মুভি না । এই আশা নিয়ে যদি আপনি মুভিটা দেখতে যান তাহলে আপনাকে খানিকটা হতাশ হতে হবে । এটাকে বলা যায় একটা ক্রাইম এবং ডিটেক্টিভ মুভি । যেখানে শহরে ক্রাইম হচ্ছে, সেই ক্রাইমের পেছনের কারণ এবং কেন হচ্ছে সেটা খুজে বের করছে একজন ডিটেক্টিভ । পার্থক্য একটাই যে এই ডিটেক্টিভ বাদুরের মত মাস্ক পরে ঘুরে বেড়ায় ! যদি ক্রাইম ডিটেক্টিভ মুভি দেখা মান মানসিকতা নিয়ে মুভি দেখতে বসেন তাহলে মুভিটা দেখে আপনার ভাল লাগবে আশা করি ।
শেষ কথা যে ব্যাটম্যান সিরিজের সব মুভিই আমি দেখেছি । এখনও পর্যন্ত ক্রিস্টেন বেলের ব্যাটম্যান ট্রিলজি বেস্ট । এই সিরিজটাকে সম্ভবত আর কেউ বিট করতে পারবে না কেউ ।

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 4.3 / 5. Vote count: 10

No votes so far! Be the first to rate this post.


Discover more from অপু তানভীর

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

About অপু তানভীর

আমি অতি ভাল একজন ছেলে।

View all posts by অপু তানভীর →