দ্য গডফাদার (পর্ব ০২)

4.9
(18)

তিন

সন্ধ্যাবেলাটা কবীর চৌধুরীর সব সময় একা একাই কাটে । যখন তার স্ত্রী বেঁচে ছিল তখন এই সময়টা সে তার স্ত্রীর সাথেই কাটাতো সব সময় । হাজার কাজ থাকুক সব সময় সন্ধ্যার সময় টুকু সে নিলুফার সামনে গিয়ে হাজির হত । মাঝে মধ্যে যদি এমন হত যে সে কোন ভাবেই তার সামনে গিয়ে হাজির হতে পারছে না তখন আগে থেকেই গাড়ি পাঠিয়ে দিয়ে তাকে অফিসের লাগোয়া গেস্ট রুমে নিয়ে আসা হত । এই সময় টুকু সে তার সাথে গল্প গুজব হাসি ঠট্টা করেই কাটাতেন । এটা নিয়ে অবশ্য তাকে মাঝে মাঝে ছেলে মেয়েদের সামনে খানিকটা লজ্জায় পড়তে হত । ছেলে মেয়েরা তখন প্রায়ই তার কাছে অভিযোগ করতো যে বাবা তাদের থেকে তার মাকেই বেশি সময় দেন । তার আচরণ নাকি নতুন বিয়ে করা জামাইয়ের মত ।

তখন ছেলে মেয়েরা ছোট ছিল । জীবনটা অনেক সহজ আর সুন্দর ছিল । কিন্তু সময় যাওয়ার সাথে সাথে সেই সময় গুলো কঠিন হয়ে এসেছে । চার বছর আগে নিলুফার ইয়াসমিন তাকে ছেড়ে চলে গেছে । তারও বছর খানেক আগে তার ছোট ছেলে বাসা ছেলে চলে গেছে রাগ করে । নিলুফার বেঁচে থাকার সময় অপু মাঝে মাঝে মায়ের সাথে দেখা করতে আসতো কিন্তু গত চার বছরে একটা বারের জন্য সে বাসায় আসে নি । বড় ভাই আর বোন তার দিকে আছে বলে তাদের সাথেও সে ঠিক মত কথা বলে না । অথচ এই ছোট ছেলে একটা সময় বাবা ছাড়া কিছুই বুঝতো না !

-স্যার !

কবির চৌধুরী ফিরে তাকালেন । তার সেক্রেটারি হাসান দাড়িয়ে আছে । মুখ খানিকটা শঙ্কিত । ছেলেটা কাজ কর্মে এমনিতে বেশ চটপটে তবে তার সামনে আসলেই ছেলেটার নার্ভাস হয়ে যায় । তাকে কোন এক অদ্ভুত কারণে সে ভয় পায় অথচ হাসানের সাথে সে কোন দিন কড়া কন্ঠে একটা কথাও বলে নি । কবীর চৌধুরী বলল

-বল হাসান !

-স্যার আপনি রিপোর্ট দিতে বলেছিলেন !

-অপুর ব্যাপারে ?

-জি স্যার !

-বল কি খবর শুনি ?

-স্যার খবর আসলে বেশ জটিল ।

-জটিল বলতে ?

-মানে আমরা আসলে যেমন করে পরিকল্পনা করেছিলাম তেমন কিছুই হচ্ছে না ।

কবীর চৌধুরী এবার একটু নড়ে চড়ে বসলো । হাসানের দিকে তাকিয়ে তার মনে হচ্ছে যা ঘটেছে এটা আসলে তার ভুলের জন্য হয়েছে । এখন সে সব কিছুর দায় নিতে তার সামনে এসে হাজির হয়েছে । হাসান বলল

-স্যার আমরা যে শফিক নামের ছেলেটাকে ঠিক করেছিলো সে তার কথা বরখেলার করেছে ।

কবীর চৌধুরী খানিকটা ভুরু কুচকে তাকালো হাসানের দিকে । কথাটা তার পছন্দ হয় নি । কেউ তাকে কথা দিয়ে কথা না রাখলে তার খুব রাগ হয় । তখন তার পেছনে সে উঠে পড়ে লাগে । আর ঘটনা যখন তার ছোট ছেলে সম্পর্কে তখন তো শফিকে একটা শক্ত শাস্তি দিতে হবে ।

তার ছোট ছেলের প্রেমিকা সম্পর্কে সে খুব ভাল খোজ খবর রাখে । এও খবর রাখে যে কদিন আগেই মেয়েটা অপুর সাথে সব সম্পর্ক শেষ করে দিয়েছে । তার খুব ইচ্ছে হল মেয়েটাকে ধরে আচ্ছা মত একটা বকা দেয় । কিংবা নাদিয়ার বাসায় গিয়ে অপুর আসল পরিচয় দিলেই সুরসুর করেই মেয়েটা আবার অপুর কাছে ফেরৎ যাবে । তবে এই কথা যদি অপু জানতে পারে তাহলে ফলাফল উল্টো হতে পারে । তাই সেদিকে যায় নি । বরং উল্টো পথ বেঁছে নিয়েছে । নিজের কোম্পানীর এক ছেলেটাক লাগিয়েছে নাদিয়ার পেছনে । তাকে বলা হয়েছে পারিবারিক ভাবে নাদিয়ার বাসায় বিয়ের প্রস্তাব পাঠানোর জন্য । তারপর যখন সব কিছু একদম পাঁকাপাকি হয়ে যাবে তখন বিয়ে ভেঙ্গে দিতে ।

হাসান বলল

-শফিক আমার কাছে ফোন করে জানিয়েছে যে তার পক্ষে কোন ভাবেই বিয়ে ভাঙ্গা সম্ভব না । তার বাবা মা নাদিয়াকে এবং তার পরিবারকে খুবই পছন্দ করেছে এবং সে নিজেও নাদিয়াকে পছন্দ করে ফেলেছে ।

-তুমি বলেছো যে এই কাজটা করলে তার চাকরি থাকবে না ।

-স্যার সে গতকালই চাকরি ছেড়ে দিয়েছে ।

-আই সি !

কবীর চৌধুরী এবার খানিকটা চিন্তিত হলেন । তার ছোট ছেলেটা কতদিন ধরে একা একা থাকে । নাদিয়া চলে যাওয়াতে সে খুব কষ্ট পাবে । ছেলের ভাল করতে গিয়ে শেষে আরও বড় ক্ষতি করে ফেললেন । হাসান বলল

-তবে স্যার সমস্যাটা এটা না ।

-মানে ? এটা তোমার কাছে সমস্যা মনে হচ্ছে না ?

-আসলে স্যার আজকে নাদিয়া ম্যাডাম নিজেই বিয়েটা ভেঙ্গে দিয়েছে ।

-মানে ?

-জি মানে সে শফিকের সাথে কোন ভাবেই বিয়ে করবে না এটা তার বাবা মাকে জানিয়ে দিয়েছে সে । দরকার হলে সে পটাশিয়াম সায়ানাইড খেয়ে মারা যাবে তবুও অন্য কাউকে বিয়ে করবে না । আজকে যতদুর জানতে পেরেছি সে তার ক্যাম্পাসের ক্যামিস্ট্রি ল্যাবের দারোয়ানকে টাকা খাইয়ে খানিকটা পটাশিয়াম সায়ানাইড যোগার করেছে ।

-সেকি !

-জি স্যার । সে আবারও ছোট স্যারের জীবনে ফেরৎ যেতে ইচ্ছুক !

-দ্যাটস গ্রেইট ! তো তুমি কেন বলছো যে খবর আসলে বেশ জটিল ?

হাসানকে কিছুটা সময় দ্বিধাগ্রস্থ দেখা গেল । কাবীর চৌধুরী বলল

-আরও ঘটনা আছে ?

-জি স্যার !

-কি ?

হাসান আরও কিছুটা সময় চুপ করে থেকে বলল

-আসলে ছোট স্যার এখন আর নাদিয়ার দিকে তাকাচ্ছে না । ঐ লেডি ডিবি অফিসারের সাথে মনে হয় তার কিছু চলছে !

কাবীর চৌধুরী কিছু সময় কোন কথা বলতে পারলেন না । হাসানের কথা ঠিক যেন বিশ্বাস করতে পারছে না । তার পরেও আরেকবার নিশ্চিত হওয়ার জন্য বলল

-ডিবি অফিসার মানে ঐ নিকিতা আহমেদ ?

-জি স্যার !

পুরো দেশে কম করেও কোটি খানেক মেয়ে আছে যার সাথে তার ছোট ছেলে সম্পর্কে জড়াতে পারতো । আর সে কি না খুজে খুজে এই মেয়ের পেছন ঘুরছে ! হাসান বলল

-গত সপ্তাহে তাকে নিয়ে প্রথম মুভি দেখতে গিয়েছিলো । গত পরশু দিন বৃষ্টির মধ্যে ছোট স্যার হঠাৎ করে তার অফিসের সামনে গিয়ে হাজির হয় । তারপর তাকে বাইরে ডেকে আনে । দুজন অনেকটা সময় বৃষ্টির ভেতরেই মিন্টু রোডের এদিক ওদিক ঘোরাঘুরি করে । তারপর ….

-তারপর ?

-তারপর একটা সময় ছোট স্যার ……

হাসান কথাটা বলতে গিয়েও থেমে গেল । ঠিক যেমন মুখ দিয়ে বলতে পারছে না । স্যার সামনে বলতে দ্বিধা বোধ করছে । কবীর চৌধুরী হাসানের না বলা কথাটা বুঝে গেলেন সহজেই । তারপর বললেন

-আচ্ছা ঠিক আছে । আর কোন নতুন নিউজ ?

-ঐ ডিবি অফিসার আজ দুদিন ধরে বাসা থেকে বের হয় নি । এদিকে ছোট স্যারও বাসা থেকে বের হচ্ছে না ।

-আচ্ছা চোখ রাখো । এর পরে কি করতে হবে সেটা আমি বলে দিবো !

হাসান বলতে গেলে একেবারে দৌড়ে চলে গেল অফিস থেকে । কবীর চৌধুরী আবারও নিজের চিন্তার মাঝে হারিয়ে গেলে । তাকে আবারও নতুন কিছু ভাবতে হবে । যেভাবে ভেবেছিলেন নিকিতা আহমেকে এড়িয়ে যাবে ভেবেছিলো সেভাবে কাজটা আর করা যাবে না । নতুন করে কিছু করতে হবে । এমন কিছু যাতে নিকিতা মেয়েটা কিছু না করতে পারে আবার তার ছোট ছেলেরও যেন কোন ক্ষতি না হয় । তার ছেলে যদি নিকিতাকে পছন্দ করেই থাকে তাহলে মেয়েটার কোন ক্ষতি করা যাবে না । অন্য ভাবে সামাল দিতে হবে !

চার 

নিকিতা চোখ মেলে কিছু সময় সিলিংয়ের দিকে তাকিয়ে রইলো কিছুটা সময় । তারপর একটু কাত হয়ে জানালার দিকে তাকালো । সন্ধ্যা থেকে খুব বৃষ্টি হচ্ছিলো । কিন্তু এখন আকাশে চাঁদ দেখা যাচ্ছে । চাঁদের আলো এসে পরেছে ঘরের ভেতরে । চারিদিকটা অন্য রকম লাগছে ।

নিকিতার নিজের কাছে কেবল যেন অদ্ভুত লাগছে । ইদানিং এই ব্যাপারটা শুরু হয়েছে । কাজ কর্ম থেকে ফোকাস সরে যাচ্ছে । এমনটা তার সাথে এর আগে কোন দিন হয় নি । এই ছেলের সাথে পরিচয় হওয়ার পর থেকে সব কিছু এলোমেলো হয়ে গেছে । মানুষের জীবন কেন এমন হবে ? সে নিজের জীবনটা তো নষ্ট করছে সেই সাথে আশে পাশের মানুষ গুলোতে প্রভাবিত করে ফেলছে । খুব দ্রুতই অপুর কাছ থেকে দুরে চলে যাওয়া উচিৎ কিন্তু নিকিতা দুরে যেতে তো পারছেই না বরং আরও কাছে চলে আসছে ।

নিকিতা কি কোন দিন ভেবে ছিলো যে এমন ভাবে একজনের সাথে পরিচয় হবে । দুনিয়ার এতো ছেলে থাকতে সে কি না এমন একজনের সাথে তার ভাব হচ্ছে যার বাবা এদেশের সব বড় অর্গানাইজড ক্রাইমের হেড । দেশে যত রকমের অর্গানাইজড ক্রাইম হয় সেটার নিয়ন্ত্রক অপুর বাবা কবীর চৌধুরী । যতই অপু তার বাবার সাথে না থাকুক বা তার সাথে কোন সম্পর্ক না রাখুক অপু যে তার ছেলে এটা কোন ভাবেই অস্বীকার করার উপায় নেই ।

নিকিতা পাশ ফিরে শুলো । অপু ঠিক ওর পাশেই শুয়ে আছে । ঘুমন্ত চোখের উপর চাঁদের আলো এসে পরেছে । অদ্ভুত মায়ময় লাগছে মুখটা । নিকিতার মুখে আপনা আপনি একটা হাসি দেখা দিল । ছেলেটার চেহারার দিকে তাকিয়ে থাকতে ভাল লাগছে ওর !

কি অদ্ভুত এই মানুষের মন ! কদিন আগেও এই ছেলেটাকে চিনতো না । কোন দিন এই ছেলের সাথে তার ভাব হওয়ার কথাও ছিল না । কিন্তু হয়ে গেছে ।

পার্কিংয়ের ঐ ঘটনার পর থেকে অপুর প্রতি একটা আলাদা অনুভূতি তৈরি হয়েছিলো । কেন হয়েছিলো সেটা নিকিতার জানা নেই । ছোট বেলা থেকে সে কখনই অন্যের সাহায্য নিতে অভ্যস্ত নয় । যা করেছে জীবনে সব নিজে নিজেই । কারো সাহায্য নিলে সেটা সাথে সাথেই ফেরৎ দেওয়ার চেষ্টা করতো সব সময় । কিন্তু অপুর সাহায্যের ব্যাপারটা ছিল অন্য রকম । কোন ভাবেই সেটা ফেরৎ দিতে পারার কথা না ! মনের ভেতরে তাই একটা অস্বস্তিবোধ করছিলোই ।

তারপরই বসুন্ধরাতেই ছেলেটার সাথে আবার দেখা হয়ে গেল । অপু যখন বলল যে কিছু সময়ের জন্য তার প্রেমিকার ভূমিকাতে অভিনয় করতে তখন প্রথমে একটু মেজাজ গরম হয়েছিলো । তবে সেটা সামলে নিয়ে রাজি হয়ে গেল । ওর প্রাক্তন প্রেমিকার সাথে পরিচয় করিয়ে দিল । নিকিতার সত্যিই মজা লাগতে শুরু করলো তখন । এই মেয়েটা কেবল একটা ভাল চাকরিওয়ালা ছেলে দেখে অপুকে ছেড়ে গেছে !

নিকিতা এই ব্যাপারটা একদম সহ্য করতে পারে না । নিকিতার এই রকম মেয়েদেরকে কষে একটা চড় মারতে ইচ্ছে করে । যদি ভাল চাকরি আর ভবিষ্যতই তোদের প্রধান লক্ষ্য থাকে তাহলে বাপু তোমরা কেন প্রেম পিরিতের ভেতরে যাবা! একেবারে ভাল চাকরিওয়ালাকেই ধর ! না তা না ! তোমরা নিজেদের পছন্দমত ছেলেকে পছন্দ করবে, প্রেম করবে, তাকে স্বপ্ন দেখাবে তারপর নিজেও ভাল চাকরির বোঝা চাপিয়ে দিবে ! কেন ?

নিকিতা এই জন্যই রাজি হয়েছিলো । এবং নাদিয়ার নামের মেয়েটার মুখের ভাব দেখে নিকিতার সত্যিই ভাল লাগছিলো । অপু যে ওকে ছেড়ে নিকিতার সাথে নতুন সম্পর্ক করেছে এটা নাদিয়া কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছিলো না । মেনে নিতে পারছিলো না । নিকিতা এই ব্যাপারটা খুব ভাল করে জানে । ব্রেকআপের পরেও মেয়েটা আগের প্রেমিকার সাথে অন্য মেয়েকে ঠিক সহ্য করতে পারে না ।

সেদিন অপুর সাথে মজা করে মুভি দেখেছিলো । সময় তার ভাল কেটেছিলো !

নিকিতা ভেবেছিলো ওখানেই বুঝি সব শেষ হয়ে যাবে কিন্তু সেটা হল না । ঠিক তার পর দিনই অপুর সাথে আবার দেখা হল । এবার অবশ্য অপু নিজেই দেখা করতে এসেছিলো । ওর অফিসের গেস্ট রুমেই বসে ছিলো । অপুকে দেখে কিছু যে অবাক হয়েছিলো সেটা সে লুকানোর চেষ্টা করে নি ।

-আপনি এখানে ?

-দেখা করতে এলাম !

অপু হাসলো ।

কিছু সময় টুকটাক কথা বলার পরেই অপু বলল, আপনি কি সত্যিই কবীর চৌধুরীর পেছনে লেগেছেন ?

নিকিতা খানিকটা অবাক হয়েই দেখলো যে অপু নিজের বাবাকে নাম ধরে ডাকছে !

নিকিতা তীক্ষ্ণ চোখে কিছু সময় তাকিয়ে রইলো অপুর দিকে । তারপর বলল, হ্যা । তার শেষ আমি দেখে ছাড়বো !

অপু বলল, তাহলে আপনাকে বলে রাখি আপনার এই লড়াইয়ে কিন্তু একা ! আপনি কারো সাহায্য পাবেন না । এমন কি আপনার ডিপার্টমেন্ট থেকেও না । আপনার উপর আবারও হামলা হবে । ঐদিন ওরা ৫ জন যখন আমাকে দেখে দৌড় দেয় প্রথমে আমি খানিকটা অবাকই হয়েছিলাম । ওরা চাইলেই আমাকেও মেরে ফেলতে পারতো কিন্তু তার বিপরীতে পালিয়েছে । প্রথমে আমি ঠিক বুঝতে পারি নি । পরে আপনার মুখে কবীর চৌধুরীর নাম শুনে কারন টা বুঝতে পারলাম । আমাকে ওরা চিনতে পেরেছে । এই জন্য পালিয়েছে ।

নিকিতা বলল, আপনি আসলে কি বলতে চাচ্ছেন ?

-আমি বলতে চাচ্ছি যে আপনার উপর আবারও হামলা হবে । আমার যদি তাকে চিনতে ভুল না হয় তাহলে আপনার ২৪ ঘন্টার খবর তার কাছে আছে । হয়তো এর পরের বার যখন হামলা হবে তখন আমি থাকবো না । তখন ?

নিকিতা এবার সরু চোখ তাকালো অপুর দিকে । ছেলেটা কি ওকে হুমকি দেওয়ার চেষ্টা করছে । বাবার হয়ে নিজে এসেছে ওকে হুমকি দিতে । ওর মুখটা একটু শক্ত হয়ে এল । অপু সেদিকে না তাকিয়ে বলল, কেবল যে আপনার নিজের উপরে বিপদ আসবে সেটা না । আপনার ফ্যামিলর উপরেও আসবে । বিশ্বাস করুন তার মত ভয়ংকর মানুষ নেই !

-আপনি কেন এসেছেন আমাকে তাই বলুন ? আমার কাছে কি চান ?

-আমি আপনাকে সাহায্য করতে চাই ।

-সাহায্য ? কিভাবে ?

-আপনি আমার গার্লফ্রেন্ড হয়ে যান !

-মানে !!

নিকিতা সত্যিই অবাক হয়ে গেল । কি বলবে বুঝতে পারলো না ।

অপু বলল, আমার গার্লফ্রেন্ড হয়ে যান । তাহলে আপনার কিংবা আপনার ফ্যামিলির উপর কোন বিপদ আসবে না । আপনি আপনার কাজে ঝামেলা ছাড়া চালিয়ে যেতে পারবেন ।

-আপনি কিভাবে নিশ্চিত হচ্ছেন যে আপনার গার্লফ্রেন্ড হলেই আমার উপর আর হামলা হবে না ?

অপু এবার একটু হাসলো । তারপর বলল, আমি তাকে চিনি তাই বললাম । যাক সেটা আপনার নিজের ব্যাপার । আমি আমার কথা বললাম ! বাকিটা আপনার ব্যাপার ! আজকে আসি । আপনার উত্তরটা জানাবেন !

এই বলে অপু উঠে দাড়ালো । তারপর দরজার দিকে পা বাড়ালো । নিকিতা হঠাৎ পেছন থেকে বলল, আপনি কেন আমাকে সাহায্য করতে চাইছেন ?

অপু দাড়ালো একটু । তারপর পেছন ফিরে তাকালো । বলল, কারণ আমি ঐ মানুষটার জন্য আমার মা মারা গেছে ।

নিকিতা অপুর কন্ঠের তীব্রতা দেখে সত্যিই অবাক হয়ে গেল । আর কিছু জানতে চাইলো না ।

তারপর থেকেই তাদের দেখা হতে থাকলো । কিন্তু ঝামেলা পেঁকে গেল অন্য খানে । সপ্তাহখানেক পড়ে এক বৃষ্টির সময় অপু হাজির হল ওর অফিসের সামনে । ওকে ডেকে নিয়ে গেল বৃষ্টির ভেতরে । বৃষ্টির মাঝেই ওরা মিন্টুরোডের ভেতরে হাটাহাটি করলো দৌড় ঝাপ করলো । নিকিতা খানিকটা অবাকই হচ্ছিলো এটা দেখে এতো বড় হয়েও অপুর মাঝে কি পরিমান ছেলেমানুষী রয়ে গেছে । তীব্র বৃষ্টির মাঝে নিকিতার ভিজেও চমৎকার লাগছিলো অবশ্য । এই রকম ভাবে কবে শেস বৃষ্টিতে ভিজেছে সেটা নিকিতার মনেও নেই ।

হাটতে হাটতেই একটা রাস্তা দিয়ে একটা গাড়ি তীব্র গতিতে চলে গেল । রাস্তার পানিটা তখন ছিটকে আসছিলো নিকিতার দিকে । অপু তখনই ওর সামনে চলে এল । একেবারে ওর কাছাকাছি । নিজের শরীর দিয়েই ময়লা পানিটা আটকালো । নিকিতার এতো কাছে চলে এসেছিলো যে দুজন কেবল দুজনের দিকে তাকিয়ে ছিলো । তারপর কিভাবে দুজন দুজনকে চুমু খেলো সেটা ওরা কেউই বলতে পারবে না ।

পাতানো প্রেম কিভাবে সত্যিই হয়ে গেল সেটাও দুজনের কেউ বলতে পারলো না । এখন দিনের একটা সময় নিকিতা অপুর কথা ভাবে । ওর ভাবতে ভাল লাগে । এই বয়সে এসেও যে ও এভাবে প্রেমে পড়বে সেটা নিকিতা ভাবতেও পারে নি ।

নিকিতা অপুর ঘুমন্ত চেহারার দিকে তাকিয়ই রইলো কিছুটা সময় । এভাবে তাকিয়ে থাকতে থাকতেই আবার ঘুমিয়ে পড়লো ।

সকালে কারো চিৎকার চেঁচামিচিতে ঘুম ভাঙ্গলো । চোখ মেলে কিছু সময় বুঝতে পারলো না কোথায় আছে । তারপরই সব মনে পরে গেল । অপুর চিলেকোঠায় রয়েছে । অপুর এই চিলেকোঠাটা আট তলা বিল্ডিংয়ের উপরে । ছাদের এক পাশে দুইটা রুম । একটা একটু বড় আরেকটা একদম ছোট । একটা খাট আর টেবিল ধরে কোন মতে । নিকিতা বিছানা ছেড়ে উঠে পাশে ঘরে যেতে কিছু সময় ফ্রিজ হয়ে হয়ে গেল । অপুর এক পাশে দাড়িয়ে আছে । দরজারটা খোলা । তার ঠিক সামনেই ওর প্রাক্তন প্রেমিকা দাড়িয়ে আছে । ও ঘরে ঢুকতেই নাদিয়া বিস্ময় নিয়ে ওর দিকে তাকালো । ঠিক যেন বিশ্বাস করতে পারছে না যে নিকিতা এখানে থাকতে পারে !

নিকিতা এরকম অস্বস্তিকর পরিস্থিতে পরে নি এর আগে । কি বলবে আর কি বলা উচিৎ কিছুই বুঝতে পারলো না ।

নাদিয়া হাত তালি দিক একটা । তারপর অপুর দিকে তাকিয়ে বলল, এতো দুর ? বাহ ! আমার হাতও ঠিক মত ধরতে পারতে না আর এই মেয়ের সাথে …. এই মেয়ে দেখছি খুবই ফার্স্ট…

চলবে…

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 4.9 / 5. Vote count: 18

No votes so far! Be the first to rate this post.


Discover more from অপু তানভীর

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

About অপু তানভীর

আমি অতি ভাল একজন ছেলে।

View all posts by অপু তানভীর →

2 Comments on “দ্য গডফাদার (পর্ব ০২)”

  1. So far the story is progressing well; I hope you will post the next part soon.

  2. অনেক ভালো লাগলো ভাইয়া
    পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম❤️❤️

Comments are closed.