পাঁচ
নিকিতা এরকম অস্বস্তিকর পরিস্থিতে পরে নি এর আগে । কি বলবে আর কি বলা উচিৎ কিছুই বুঝতে পারলো না । যদিও কোন ভাবেই তাকে দোষ দেওয়া যায় না । এখানে কেউ যদি অস্বাভাবিক এসে হাজির হয়েছে সেটা হচ্ছে অপুর আগের প্রেমিকা ! নিকিতা কিছু না বলে চুপ করে দাড়িয়ে রইলো কেবল ।
নাদিয়া হাত তালি দিক একটা । তারপর অপুর দিকে তাকিয়ে বলল, এতো দুর ?
অপু কিছু বলতে গিয়েও বলল না । নাদিয়া আবার বলল
-বাহ ! আমার হাতও ঠিক মত ধরতে পারতে না আর এই মেয়ের সাথে …. এই মেয়ে দেখছি খুবই ফার্স্ট !
কথাটা শোনার পরপরই নিকিতার কান গরম হয়ে উঠলো । তার এখন আর চুপ করে থাকাটা মানায় না । সে একটু এগিয়ে এসে বলল, এক্সকিউজ মি ? কথা বার্তা সাবধানে !
নাদিয়া বলল, ওহ প্লিজ ! আমি তোমার সাথে কথা বলছি না !
নিকিতা অপুর দিকে তাকিয়ে বলল, আচ্ছা তোমরা কথা বলি আমি চলে যাই !
নিকিতা ঘরের ভেতরে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতে যাবে তখন অপু বলল, দাড়াও । তুমি কেন যাবে ?
তারপর নাদিয়ার দিকে তাকিয়ে বলল, তুমি কেন এসেছো এখানে এসেছো ?
নাদিয়া বলল, মানে ? তুমি কি বলছো ?
অপু খুব শান্ত কন্ঠে বলল, তুমি কেন এসেছো ? তুমি খুব পরিস্কার কন্ঠে আমাকে নিজের জীবন থেকে চলে যেতে বলেছো । আমি চলে এসেছি । সম্পর্ক তুমি শেষ করেছো ! নতুন একজন নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছো বিয়ে করার জন্য আর আমি যদি মুভ করি তাহলে সমস্যা কোথায় ?
নাদিয়া যেন ঠিক বিশ্বাস করতে পারছে না যে অপু এই কথা বলছে । এই ছেলে ওকে ছাড়া কিছু বুঝতো না আজকে মাত্র কটা দিনেই সব কিছু ভুলে গেলো । নতুন আরেক জনের সাথে যুক্ত হয়ে গেল ! এতো সহজে ?
অপু বলল, তুমি চলে যাও প্লিজ !
নাদিয়া আর কোন কথা বলতে পারলো না । ঘুরে সিড়ির দিকে পা বাড়ালো ।
নিকিতা তখনও দাড়িয়ে আছে । অপু ওর দিকে তাকিয়ে একটু হাসার চেষ্টা করলো । তারপর বলল, নাস্তা করবে না ?
নিকিতা ধীরে ধীরে অপুর দিকে এগিয়ে এলো । অপু বলল, সরি । সকালটা এভাবে শুরু হবে ভাবি নি ।
-আমিও না । তবে বেশ ভালই হয়েছে ।
-ভাল ?
-হ্যা । আমি আরও পরিস্কার ধারনা পেলাম তোমার ব্যাপার ?
-কি ধারনা ?
-সেটা থাকুক । আমার যা বুঝে নেওয়ার নিয়েছি ।
নিকিতা আরও একটু কাছে এল । অপুর চেহারার দিকে তাকিয়ে রইলো কিছুটা সময় । রাতের বেলা বেশ কিছুটা সময় সে অপুর এই ঘুমন্ত চেহারার দিকেই তাকিয়ে ছিল । সেই অনুভূতিটা আবার ফিরে এল ।
####
কবীর চৌধুরী তার বড় ছেলে দিপুর সাথে ব্যবসার কিছু ব্যাপার নিয়ে আলোচনা করছিলো । এমন সময় হাসান দরজা থেকে মাথা তুলে ভেতরে তাকালো ।
কবীর চৌধুরী বলল, কি ব্যাপার হাসান ?
-স্যার সময়ে সময়ে রিপোর্ট দিয়ে বলেছিলেন ছোট স্যারের ব্যাপারে !
দিপু তখন তার বাবার দিকে তাকিয়ে বলল, বাবা তুমি এখনও অপুর পেছনে চর লাগিয়ে রেখেছো ? কেন ? সে নিজের ইচ্ছেতে নিজের ইচ্ছে চলে আসবে !
কবীর চৌধুরী বলল, আমি তাকে চিনি । সে কোন দিন আসবে না ।
দিপু খানিকটা বিরক্ত কন্ঠে বলল, সেটা তো তার নিজের চয়েজ ! এখানে আমাদের কি বলার আছে ? তুমি কেন কষ্ট পাচ্ছো?
কবীর চৌধুরী কিছু বলতে গিয়েও বলল না । সে হাসান কে ভেতরে আসতে বলল । হাসান টেবিলের সামনে এসে দাড়ালো । কবীর চৌধুরী বলল, নতুন কিছু ?
-জি স্যার ?
-কি নতুন খবর ?
-স্যার আমার মনে হচ্ছে ঐ লেডি অফিসারের সাথে ছোট স্যারের সিরিয়াস কিছু শুরু হয়েছে ।
-মনে হওয়ার কারণ ?
দিপু মাঝ খান থেকে বলল, কোন লেডি অফিসার ?
হাসান বলল, নিকিতা আহমেদ !
দিপুর চোখে এবার তীব্র বিস্ময় দেখা গেল । সে নিকিতা আহমেদকে ভাল করেই চেনে । নিকিতা আহমেদই সেই অফিসার যে ওর পেছনে লেগেছে বেশ কিছুদিন ধরে । কবীর চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে বলল, এসব কি ? দুনিয়াতে আর মেয়ে পেল না সে !
কবীর চৌধুরী বলল, ব্যাপারটা ঘটে গেছে । তাকে সরানোর হুকুম দিয়েছিলাম । কিন্তু মাঝে খান দিয়ে অপু এসে হাজির হয় । তারপর অপুর নিজ থেকে এই নিকিতা আহমেদের কাছে গিয়ে হাজির হয়েছে । আমার কাছে প্রথমে মনে হয়েছিলো সে অপু এইটা ইচ্ছে করে করছে । মেয়েটাকে রক্ষা করার জন্য । কিন্তু এখন দেখি ব্যাপার সব অন্য রকম হয়ে যাচ্ছে ।
-তো কি হয়েছে ? এই মেয়ে আমাদের জন্য হুমকি স্বরূপ ! তুমি খুব ভাল করেই জানো । তাহলে তাকে সরিয়ে দিচ্ছো না কেন ?
কবীর চৌধুরী কিছু সময় চুপ করে রইলো । তারপর বলল, শোন তোমাকে একটা কথা আমি ভাল করে বলে দেই । আমরা যাই করি যেমনই করি না কেন আমাদের লড়াই সব সময় সামনের মানুষটার সাথে হবে, সরাসরি । কখনই তার ফ্যামিলির-বন্ধ বান্ধবের সাথে নয়! তুমি জানো এই নিয়মের ব্যতিক্রম হলে কি হবে ? এই কারণে তোমার মা কে আমি হারিয়েছি । আমি চাই না এমন কিছু আর ঘটুক ! সে তোমার ছোট ভাইয়ের বন্ধু । সে এখন আমাদের ফ্যামিলি । তার ক্ষতি কোন ভাবেই করা যাবে না । পরিস্কার বুঝতে পেরেছো ? এই কথার যেন নড়চড় না হয় । আমি অন্য ভাবে তার সাথে মোকাবেলা করবো কিন্তু ক্ষতি না । পরিস্কার হয়েছে কথা ?
দিপু কথা বলল না । কবীর চৌধুরী তখন ঠান্ডা কন্ঠে বলল, কথা পরিস্কার হয়েছে ?
দিপু এবার একটু ভয় পেল যেন । তারপর বলল, জি বাবা !
-হ্যা যাও তুমি । যা করতে বললাম সেটা কর ! আমি তোমার সাথে পরে কথা বলব ।
দিপু খানিকটা অসন্তুষ্ট ভাবেই উঠে দাড়ালো । তবে কিছু বলল না আর । বাবার হুকুমের বিপরীতে যাওয়ার সাহস তার নেই।
দিপু চলে যেতেই কবীর চৌধুরী হাসানের দিকে তাকালো আবার ! তারপর বলল, তোমার এই রকম মনে হওয়ার কারণ ?
-গত দিন আগে নিকিতা আহমেদ অফিস থেকে ছুটি নিয়েছে । এবং এই পুরোটা সময় সে ছোট স্যারের সাথেই থাকছে । একেবারে পুরোটা সময় ।
-ইউ মিন ওর বাসায় ?
-হ্যা । কখনও স্যারের ঐ চিলেকোঠায় আবার কখনও নিকিতা ম্যাডামের কোয়াটারে !
-ঐ মেয়ের সাথে কেউ থাকে না ।
-থাকে স্যার । বাবা মা আছে ! এক ছোট ভাই আছে । ছোট ভাইয়ের পরীক্ষা শেষ হওয়ার কারণে তারা গ্রামের বাড়িতে গিয়েছে ।
কবীর চৌধুরী কিছু সময় চিন্তিত হলেন । এই মেয়ের ব্যাপারে তিনি কি করবেন ঠিক বুঝতে পারছেন না । প্রথম থেকেই এর দিকে আরও ভাল করে নজর দেওয়া দরজার ছিল । যদিও এখনও বিপদের কিছু নেই কিন্তু অস্বস্তি লাগছে তার । হাসান বলল, স্যার আরেকটা ঘটনা ?
-কি ঘটনা !
-ঐ যে নাদিয়ে ম্যাডাম ছিল না ? ছোট স্যারের আগের বন্ধু ?
-হ্যা তার আবার কি হল ?
-সে বারবার স্যারের বাসায় গিয়ে হাজির হচ্ছে । মনে হয় সে আবার স্যারের কাছে ফিরে আসতে চাচ্ছে । গতকাল সে নিজের হাতের রগ কেটে ফেলেছে । এখন হাসপাতালে আছে !
কবীর চৌধুরী খানিকটা দ্বিধান্বিত বোধ করলেন ! আজ কালকার ছেলে মেয়েদের কে সে আসলেই বুঝতে পারেন না । এদের মাথার ভেতরে কি চলে কে জানে ! হাসানের দিকে তাকিয়ে বলল, এই মেয়ের সাথে আমার দেখা হওয়ার একটা ব্যবস্থা কর । সুস্থ হলে নিয়ে আসবে আমার কাছে । ঠিক আছে ?
-জি স্যার !
হাসান বেরিয়ে গেলে আবারও গভীর চিন্তায় হারিয়ে গেল সে ! কিছু একটা করতেই হবে । কিন্তু কি করবে !
নিকিতার মন ইদানিং কোন কারন ছাড়াই ভাল থাকে । এর পেছনে যে অপুর হাত আছে সেটা কাউকে বলে দিয়ে হয় না । ছেলেটার মাঝে অন্য রকম কিছু একটা আছে । নিকিতা সেটা পরিস্কার বুঝতে পারছে । কিন্তু তার ভেতরে যে কি আছে সেটা কিছুতেই বুঝতে পারছে না । আর সব চেয়ে বড় কথা হচ্ছে অপু কোন ভাবেই তার বাবা মত নয় । তার বাবাকে সে ঘৃণা করে । নিকিতা এই ব্যাপারটা এখনও পরিস্কার ভাবে জানতে পারে নি । অপুর কাছে জিজ্ঞেস করতেও পারে নি । কেবল সে জানে বছর চারেক আগে একবার কবীর চৌধুরীর উপরে হামলা হয়েছিলো । কবীর চৌধুরী তখন গাড়িতে করে তার বাসার দিকে যাচ্ছিলো । সাথে তার স্ত্রী ছিল । হামলাতে কবীর চৌধুরীর কিছু না হলেও তার স্ত্রী অর্থ্যাৎ অপু মা মারা যায় ।
যদিও তার বছর খানেক আগেই অপু বাসা ছেড়ে চলে গিয়েছিলো । তবে তখনও মাঝে মাঝেই মায়ের কাছে আসতো । মা মারা যাওয়ার পরে আর আসে নি সে । অপু নিজের মায়ের মারা যাওয়ার পেছনে কবীর চৌধুরীকে দায়ী করেন ।
নিকিতা চুপচাপ হাটছিলো রাস্তা দিয়ে । অফিসের গাড়িটা আজকে সে আনে নি । একটা রিক্সা নিয়ে অপুর ওখানেই যাবে । ওদের ব্যাপারটা এখনও অফিসে জানে না । নিকিতা এখনই সেটা মানুষকে জানাতে চায় না । পরে এসব নিয়ে ভাবা যাবে ।
অফিস থেকে একটু দুরে এসে দাড়ালো রিক্সার জন্য । এখান গাড়ি গুলো খুব দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে । নিকিতা নিজের মোবাইল অপুকে ফোন দিতে গেল । ফোনটা বের করে কল দিতে যাবে তখনই ওর চোখের কোণে একটা কিছু ধরা পরলো । একটা মাইক্রবাস ঠিক ওর সামনে এসে থামলো । মাইক্রবাসের দরজা খুলে গেল । নিকিতা নিজের কোমরে গোজা পিস্তালটা বের করার সুযোগ পেল না । তার আগেই একটা ঠান্ডা কিছুর স্পর্শ পেল ওর কোমরে । কানের কাছে এসে কেউ বলল, কোন চালাকি নয় ! চুপচাপ গাড়িতে উঠুন !
নিকিতার দুই হাত দুইজন ধরে ফেলেছে । মুখ দিয়ে কিছু বলতে যাবে তার আগেই কেউ একটা রুমাল চেপে ধরলো ওর মুখে ! ওকে ঠেলে দিলো গাড়ির ভেতরে । গাড়ির দরজা বন্ধ হয়ে গেল । পুরো ঘটনা ঘটতে আধা মিনিটের কম সময় লাগলো । কেউ লক্ষ্যও করলো না !
ছয়
নিকিতার সামনে রাখা জুসের গ্লাসের দিকে তাকিয়ে আছে । জুসের গ্লাসের ঠিক পাশেই একটা ট্রেতে একটা স্যন্ডউইচ রাখা । সবার শেষ একটা মিনারেল ওয়াটার । নিকিতা অন্য কিছুতে না হাত দিয়ে কেবল পানির বোতলটা হাতে নিল । বোতল খুলে একটু পানি খেল ।
ওকে কোথায় আনা হয়েছে সেটা ও বলতে পারবে না । তবে ওকে যে ঘরে রাখা হয়েছে সেটা মোটেও বন্দীশালা মনে হচ্ছে না । সাদা পেইন্টা করা চমৎকার দেওয়াল । খুব বেশি আসবার পত্র নেই । একটা সেমি ডাবল খাট রয়েছে । তার পাশে একটা সোফা সেট । সামনে একটা ছোট রিডিং টেবিল । আর টেবিলের ওপাশে একটা চেয়ার । ব্যাস আর কিছু নেই ।
একটা জানলা রয়েছে । তবে সেটাতে ভারী আর দামী পর্দা দেওয়া । ঘরে মৃদু এসি চলছে ।
নিকিতা চারিদিকে তাকিয়ে দেখতে লাগলো । রুমের অবস্থা দেখে নিকিতার মনে খানিকটা দ্বিধা জন্ম নিয়েছে । রুম দেখে মনে হচ্ছে ওকে কোন হোটেল রুমে রাখা হয়েছে । এবং হোটেলটা বেশ দামী হোটেল সেটাও বুঝতে পারছে । এখানে কেন আনা হয়েছে ওকে ?
পকেটে হাত দিয়ে দেখলো ওর মোবাইল ফোনটা সাথে নেই । তবে পিস্তলটা সাথেই রয়েছে । ওরা এটাকে নিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে নি ।
নিকিতার মনে হল এখনই সামনের দরজা দিয়ে বের যায় । সামনে যাকে পাবে তাকেই গুলি করে দেয় । ওকে জোর করে নিয়ে আসা হয়েছে এখানে । নিজেকে রক্ষার জন্য এই কাজটা সে করতেই পারে ।
কিন্তু তারপরেই মনে হল ওরা ওকে অজ্ঞান করেই নিয়ে এসেছে । ওর কাছে যে পিস্তল আছে সেটা ওরা জানে । ওকে তুলে নেওয়ার সময়ই নিকিতা সেটা বুঝতে পেরেছিলো । পকেট থেকে মোবাইল ফোন নিয়ে গেছে অথচ পিস্তল নেয় নি । এই কারনটা ও কিছুতেই বুঝতে পারছে না ।
নিকিতা কি করবে সত্যিই বুঝতে পারলো না । ওকে এখানে কেন আনা হয়েছে সেটা ও বুঝতে পারছে না । পালিয়ে যেতে মন চাইলেও এখানে এভাবে আনার পেছনের কারনটা জানতে ইচ্ছে করছে । এই জন্যই ও চুপচাপ বসে আছে । অবশ্য খুব বেশি সময় অপেক্ষা করতে হল না । কিছু সময় পরেই দরজাটা খুলে গেল ।
দরজার দিকে তাকিয়ে নিকিতা খানিকটা চমকে গেল !
স্বয়ং কবীর চৌধুরী সামনে দাড়িয়ে আছে ! শান্ত সৌম্য চোখে তাকিয়ে আছে ওর দিে !
ধীরে ধীরে এগিয়ে এসে সামনে রাখা চেয়ারে বসলো সে । তারপর নিকিতার দিকে ওর মোবাইলফোনটা বাড়িয়ে দিল ।
নিকিতা ততক্ষনে নিজেকে সামলে নিয়েছে । মনে মনে ঠিক করে নিচ্ছে কবীর চৌধুরীকে কি বলবে !
কবীর চৌধুরী বলল, আশা করি কষ্ট হয় নি এখানে আসতে !
নিকিতা খানিকটা চিবিয়ে চিবিয়ে বলল, এখানে আসতে ?
কবীর চৌধুরী হাসলো । তারপর বলল, যাই হোক এসব কথা বাদ দেই । আসল কথায় আসি ! আমি তোমার কাছ থেকে কিছু সিরিয়াসলি জানতে চাই ! আশা করি সত্যি উত্তর দিবে !
নিকিতা দেখলো কবীর চৌধুরী ওকে খুব স্বাভাবিক ভাবেই তুমি করে বলছে । অবশ্য এটা বলতেই পারে সে । তার ছোট ছেলের গার্লফ্রেন্ড সে । এই তথ্য তার কাছে নিশ্চিত ভাবেই অজানা নয় !
নিকিতা বলল, আমি আপনার কোন কথার জবাব দিবো না । আর এখান থেকে বের হয়ে আপনার নামে কেস ফাইল করবো !
কবীর চৌধুরী খুব জোরে হেসে ফেলল । তারপর বলল, তা অভিযোগ কি ? আমি তোমাকে কিডন্যাপে করেছি ?
কবীর চৌধুরী কিছু সময় হাসলো । তারপর বলল, আমাকে তুমি এতো কাঁচা লোক মনে কর ? যাই হোক তোমাকে কেবল একটা কথা বলি । আমি যে এখানে আছি তুমি কোন ভাবেই সেটা প্রমান করতে পারবে না । আর মানুষ তোমার কথা বিশ্বাসও করবে না এমন কি তোমার সুপিরিয়রও না । তুমি যেখানে আছো এটা একটা ফাইভ স্টার হোটেল । এখানে তোমার এন্টি করা করা ! তোমার ফেসবুকে যদি দেখা যায় দেখবে সেখানে তুমি নিজে চেক ইন দিয়েছো ! আর তুমি অফিস থেকে বের হয়েছো দুই ঘন্টাও হয় নি ।
নিকিতা খানিকটা দমে গেল । সত্যি সে প্রমান করতে পারবে না যে কবীর চৌধুরী এখানে আছে । আর কবীর চৌধুরী যা বলছে সেটা যদি সত্যি হয় তাহলে কোন ভাবেই তাকে আটকানো যাবে না । কবীর চৌধুরী বলল, কাজের কথায় আসি । তুমি কি সত্যিই আমার ছেলের ব্যাপারে সিরিয়াস ? নাকি তাকে আমার বিরুদ্ধে দাড় করানোর জন্যই তুমি ওর সাথে যুক্ত হয়েছো ?
নিকিতা এবার একটু সহজ বোধ করলো । অপু সত্যিই বলেছিলো । অপুর ব্যাপারে সে আসলেই চিন্তিত । নিকিতা বলল, আপনার কি মনে হয় ? সিরিয়াস আমি ? নাকি তাকে ব্যবহার করছি?
কবীর চৌধুরী ঠান্ডা চোখে তাকিয়ে রইলো নিকিতার দিকে । নিকিতাও একই ভাবে তাকিয়ে রইলো তার দিকে । এই খেলাতে নিকিতা খানিকটা মজা পেতে শুরু করেছে । নিকিতা বলল, আমার সাথে অপুর কি সম্পর্ক সেটা সাথে আপনার কিংবা আপনার কেসে কোন সম্পর্ক নেই । আমি আপনার শেষ দেখে ছাড়বো ?
কবীর চৌধুররী এবার খানিকটা শান্ত হয়ে গেল । তারপর বলল, তোমার রক্ত গরম । তুমি কিছু জানো না কিভাবে এই সিস্টেম চলে !
-আমি খুব ভাল করে জানি !
-তোমার কি মনে হয় আমি চলে গেলেই সব কিছু ঠান্ডা হয়ে যাবে ? কোন দিনও না । একটা পেছনে তাকিয়ে দেখ । আমি টেক ওভার করার আগে পরিস্থিতি কেমন ছিল ? তখন দিনে কটা খুন হত কটা রেপ আর কটা চাঁদাবাজি হত আর এখন কতগুলো হয় !
-তো আপনি মাছিহা হিসাবে হাজির হয়েছেন ?
-তুমি স্বীকার কর কিংবা না কর, হয়েছি । শুনো মেয়ে আমি কারো সাথে এতো কথা বলি না । বলার দরকারও নেই আমার নেই । আমার পথের বাঁধা আমি খুব সহজেই উপড়ে ফেলতে পারি ।
-তাহলে আমাকে ফেলছে না কেন ? নাকি পারছেন না ? হা হা হা ! কেন পারছেন না শুনি ?
কবীর চৌধুরী কোন জবাব দিল না । কিছু সময় তাকিয়ে রইলো নিকিতার দিকে । তারপর উঠে দাড়ালো ।
-তুমি যদিও হেল্পফুল না তবুও তোমার সাথে কথা বলে ভাল লাগলো । অপুর সাথে তোমাকে মানাবে ভাল । এন্ড কন্গ্রাচুলেশন ইন এডভ্যান্স !
এই বলেই কবীর চৌধুরী দরজা খুলে বের হয়ে গেল ।
কন্গ্রাচুলেশন ইন এডভ্যান্স । নিকিতা ঠিক বুঝতে পারলো না কবীর চৌধুরী তাকে কন্গ্রাচুলেশন জানালো কেন ! মাথা থেকে দুর করে দিলো চিন্তাটা !
নিকিতা আরও কিছু সময় অপেক্ষা করলো । তারপর নিজেও দরজা খুলে বের হয়ে এল । যখন করিডোর দিয়ে হল রুমে বের হয়ে এল অবাক হয়ে গেল । ওকে ইন্টার কন্টিনেন্টালে আনা হয়েছে । ওর অফিসের ঠিক পাশেই ।
মেজাজটা খারাপ হয়ে গেল । নিজেকে খানিকটা অসহায় মনে হল । ক্ষমতাবান মানুষের কাছে নিজের অসহায় হওয়ার ক্ষোভ ! নিকিতা যখন সামনে দিকে পা বাড়াতে যাবে তখনই পেছন থেকে কেউ দাড়ালো !
-ম্যাম !
নিকিতা পেছন ফিরে দেখলো একজন কোর্ট টাই পরা লোক দাড়িয়ে আছে ।
নিকিতা কিছু বলল না । লোকটা বলল, আপনার জন্য টেবিল ১৭তে একজন অপেক্ষা করছে !
-আমার জন্য ?
-জি ! আসুন !
নিকিতা কি করবে বুঝতে পারলো না । ততক্ষনে সামনের মানুষটা হাটতে শুরু করেছে । নিকিতা তার পেছনে হাটতে শুরু করলো । যখন টেবিল নাম্বার ১৭ নাম্বারের সামনে গিয়ে দাড়ালো দেখতে পেল অপু ওকে বসে আছে । ওকে দেখেই উঠে দাড়ালো । তারপর এগিয়ে এসে বলল, কন্গ্রাস !
নিকিতা বলল, মানে ?
অপু বলল, আরে মানে কি করছো ? তুমি না মেসেজ পাঠিয়ে জানালে যে তোমার প্রমোশোন হয়েছে । এখানে আসতে বললে ! এসিস্ট্যান্ড ডেপুটি কমিশনার হয়ে গেছ ! ওয়্যাও ! আমি তো ভাবতেই পারছি না !
নিকিতার তখনই মনে পড়লো কবীর চৌধুরীর কথা । সে তাকে কন্গ্রচুলেশন জানিয়েছিলো !
-ম্যাম !
পেছনে তাকিয়ে দেখলো আবার সেই কোর্ট টাই পরা লোকটা এসে দাড়িয়েছে । ওর দিকে একটা খাম বাড়িয়ে দিয়ে বলল, আপনার রুমে এই খামটা ফেলে এসেছেন আপনি !
খামটা হাত বাড়িয়ে নিল সে ! খুলতে ইচ্ছে হল না । ও জানে কি আছে এর ভেতরে । অপু ওর হাত থেকে খাম টা নিয়ে নিল । তারপর সেটা খুলে জোড়ে জোড়ে পড়তে শুরু করলো ওর সামনেই ।
নিকিতার মাথার ভেতরে তখন আগুন ধরে গেছে । আবারও নিজেকে বড় বেশি অসহায় লাগছে ওর ! ক্ষমতাবানের কাছে নিজেকে ক্ষুদ্র মনে হচ্ছে খুব !
ড্রয়িং রুমে মেয়েটাকে বসে থাকতে দেখে দিপু দাড়িয়ে গেল । মেয়েটা চুপচাপ বসে সোফার উপরে । দিপু কিছু সময় মেয়েটাকে চেনার চেষ্টা করলো কিন্তু চিনতে পারলো না । আগে দিপুর বড় বোন যখন পড়াশুনা করতো তখন তাদের বাসাতে মাঝে মধ্য তার বান্ধুবীরা আসতো কিন্তু সেটা এখন একদমই বন্ধ হয়ে গেছে ।
অফিসের কেও সাধারনত এই বাসায় আসে না । তাহলে এই মেয়ে কে ?
এই সময়ে এখানে কেন বসে আছে !
দিপু এগিয়ে গেল । মেয়েটা ওকে দেখতেই উঠে দাড়িয়ে সালাম দিল । চেহারা দেখেই বোঝা যাচ্ছে যে একটু ভয় পেয়েছে । চেহারাতে একটা ভীতভাব দেখা যাচ্ছে ।
দিপু এগিয়ে গিয়ে বলল, আপনি কে ? এখানে কার সাথে দেখা করতে এসেছেন ?
মেয়েটা একটা বড় ঢোক গিলে বলল, আসলে আমি জানি না আমি কার সাথে দেখা করতে এসেছি । আমাকে এখানে আসতে বলা হয়েছিলো !
-কে আসতে বলেছে ?
-শিল্পপতি কবীর চৌধুরী নাকি আমার সাথে দেখা করতে চান । কিন্তু আমি কোন ভাবেই বুঝতে পারছি না আমার সাথে দেখা করতে কেন চান !
দিপু খানিকটা সময় ভাবলো । ওর বাবা এই মেয়েটার সাথে কেন দেখা করতে চাইছে সেটাই তো বুঝতে পারছে না । ওর এখনই উচিৎ এখান থেক চলে যাওয়া । বাবার ব্যাপারে নাক গলানো ওর কাজ নয় ।
দিপু চলে যেতে পা বাড়াবে তখনই মেয়েটা বলল, আপনার চেহারাটা আমার কাছে খুব পরিচিত মনে হচ্ছে । যদি কিছু মনে না করে তাহলে একটা প্রশ্ন করবো ?
-করুন !
-আপনি কি অপু নামের কাউকে চিনেন ! না মানে অপুর চেহারার সাথে আপনার চেহারার বেশ মিল আছে !
তাহলে মেয়েটা অপুকে চিনে ।
অপুর বন্ধু নাকি গার্লফ্রেন্ড !
দিপু বলল, আমি অপুর বড় ভাই !
মেয়েটার চোখে এবার একটা তীব্র বিস্ময় দেখতে পেল ! দিপু বলল, আর কবীর চৌধুরী আমার বাবা !
মেয়েটার বিস্ময় আরও বেড়ে গেল । দাড়ানো অবস্থা থেকে সে এবার বসে পড়লো । দিপুর মনে হল যে মেয়েটা যেন তথ্যটা ঠিক মত নিতে পারছে না ।
-আপনি ঠিক আছেন ?
-এ্যা !
মেয়েটা ওর চেহারার দিকে তাকালো । দিপুর মেয়েটার চোখে এক ধরনের দিশেহারানোর দৃষ্টি দেখতে পেল । মেয়েটা বলল, অপু কোন দিন আপনাদের কথা বলে নি ।
-আসলে ও আমাদের সাথে থাকে না । একা একা থাকে ! তুমি কি অপুর পরিচিত ?
মেয়েটা কোন কথা না বলে দিপুর দিকে কেবল তাকিয়ে রইলো । দিপু আরও কিছু বলতে যাবে তখনই দেখতে পেল তার বাবা বেরিয়ে এল রুম থেকে । দিপু আর কিছু বলার সুযোগ পেল না । মেয়েটা সাথে বাবার কি কথা থাকতে পারে সেটা ভাবতে ভাবতেই সে ঘর থেকে বের হয়ে এল । চিন্তাটা মাথা থেকে দুর করতে পারলো না !
সাত
নিকিতার পুরো শরীর রাগে জ্বলে পুড়ে যাচ্ছ । একটু আগে সে তার বসের রুম থেকে বের হয়ে এসেছে । বসের কথা গুলো শুনে ওর কান লাল হয়ে গেছে । মাটির সাথে মিশে যেতে ইচ্ছে করছে । ওর বস ওর নামে যা যা বলেছে তার কোনটাই সত্য নয় কিন্তু সে বসের কথার কোন জবাব দিতে পারে নি । কারণ জবাব দেওয়ার মত কিছু ছিল না তার কাছে ।
কবীর চৌধুরীর সাথে তার দেখা হয়েছে সপ্তাহখানেক পার হয়ে গেছে । নতুন পোস্টে সে যোগদান করেছে । তাকে প্রোমশন দিয়ে ডিবি থেকে কলাবাগান থানা ট্রান্সফার করা হয়েছে । অপু কলাবাগানে থাকে । বলতে গেলে থাকার একেবারে কাছেই । সব কিছু যে কবীর চৌধুরীর পরিকল্পনা সেটা নিকিতার বুঝতে মোটেই কষ্ট হয় নি । সব থেকে বড় কথা হচ্ছে ওকে ডিবি থেকে সরিয়ে দিয়েছে ।
যদিও এই ব্যাপারটা কবীর চৌধুরীর সাথে একদমই যায় না । অন্যান্য গড ফাদারদের ক্ষেত্রে নিকিতা যেটা দেখেছে যে তারা কোন অফিসারকে প্রথমে টাকা দিয়ে কেনার চেষ্টা করছে । বেশির ক্ষেত্রেই তারা সফল হয়ে যায় । অল্প কিছু অফিসারকে যখন কিনতে পারে না তখন তাদের কে দুরে কোথাও বদলি করে দেয় । কিন্তু কবীর চৌধুরী সেই সবের ভেতরে নেই । সে যদি কাউকে নিজের জন্য সমস্যা মনে করে প্রথমে তাকে ওয়ার্নিং দেয় । পরিস্কার ভাবে বুঝিয়ে দেয় যে তার সাথে লাগতে যাওয়াটা মোটেই ভাল কিছু বয়ে আনবে না । তার পরেও সেই অফিসার সোজা না হয় তাহলে তাকে গুম করে ফেলা হয় । কবীর চৌধুরীর হাত এতোটা লম্বা আর তার কাজ এতো নিখূত যে কেউ কোন প্রমানই খুজে পায় না । নিকিতাকে প্রথমে ওয়ার্নিং তারপর ওর হামলাও করা হয়েছিলো । হয়তো আরেকবার হামলা করা হত কিন্তু অপুর কারনে সেটা আর হয় নি ।
আজকে নিকিতা গিয়েছিলো তার বসের কাছে । সে আগের কেসটাতে কাজ চালিয়ে যেতে চায় ! তখনই তার বস তাকে বেশ কিছু কথা শুনিয়ে দেয় । সেটা নিকিতার মোটেই সহ্য হয় নি কিন্তু সে কিছু বলতেও পারে নি । বস যখন বলল, তুমি ঐ কেস থেকে সরিয়ে দিয়েছি আমি । আর সেখানে কাজ করার কোন মানে হয় না ।
নিকিতা খানিকটা অবাক হয়ে বলল, মানে হয় না কেন বলছেন স্যার ?
নিকিতার রাফিক আরমান বলল, তুমি কি মনে কর যে ডিপার্টমেন্টে এসব নিয়ে কথা হয় না ? ভেবো না যে তোমার পেছনে শক্ত কেউ আছে বলেই তুমি সব সময় পার পেয়ে যাবে । এটা নিয়ে ইনকোয়ারি হবে !
নিকিতা আগের থেকেও বেশি অবাক হয়ে বলল, আমার পেছনে শক্ত কেউ আছে বলতে কি বোঝাতে চাইছেন ? আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না ।
রফিক আরমান বলল, ওহ কামান ! এতো অবুঝ হওয়ার ভান কর না । তোমার এখন কোন ভাবেই প্রমোশন হওয়ার কথা না । সেটা হতে আরও মাস খানেক বাকি ছিল । এতো জলদি এতো তাড়াহুড়ো করে সেটা করা হয়েছে । তাও আবার এক পোস্টে টপকে ! কে এটার পেছনে আছে সেটা তুমি বুঝি জানো না ? শোনো তোমার আগে অন্তত ১১ জন অফিসার ছিল প্রোমোশনের জন্য । তাদের কে টপকে তোমাকে প্রমোশন দেওয়া হয়েছে । এটা স্বাভাবিক না ।
নিকিতা কিছু বলতে গেল কিন্তু বলতে পারলো না । ও যাই বলতে যাক না কেন সেটা মোটেই বিশ্বাসযোগ্য হবে না ।
রফিক আরমান আবার বলল, তারপর কবীর চৌধুরীর ছোট ছেলের সাথে তোমার গভীর বন্ধুত্বের কথা তো নাই বললাম ।
নিকিতা আবারও চুপ করে রইলো ।
রাফিক আরমান বলল, তোমাকে আর কবীর চৌধুরী কেস রাখা যাবে না । আম বড় আশা করে তোমাকে এটাতে সংযুক্ত করেছিলাম । কিন্তু আমার সেটা ভুল ছিল । যাই হোক সিস্টেমের সাথে যুক্ত হয়ে গেছ মানিয়ে চল । এখন আসো তুমি !
রুম থেকে বের হওয়ার সময় নিকিতা অনুভব করলো ওর মুখ কান সব লাল হয়ে গেছে লজ্জা আর অপমানে । তার বস পরিস্কার মনে করছে যে সে কবীর চৌধুরীর সাথে যুক্ত হয়েছে । তার ছোট ছেলের সাথে বন্ধুত্ব হয়েছে । সব কিছু সেই দিকেই ইঙ্গিত করছে । কিন্তু আসল কথা কেউ জানে না । নিকিতা বললেও কেউ সেটা বিশ্বাস করবে না । নিকিতা যখন বের হয়ে যাচ্ছিলো তখন ওর কাছে মনে হল সবাই ওর দিকে যেন অন্য চোখে তাকাচ্ছে । ওকেও একজন অসৎ অফিসার হিসাবে দেখছে ।
নিকিতার মাথায় কেবল আগুন জ্বলছিলো । অন্য কিছু তার মাথায় কাজ করছে না । মনে হচ্ছে সব কিছু জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছাড়খার করে দেয় । এখনই ইচ্ছে করছে চাকরি ছেড়ে দিতে ! কিন্তু চাকরি ছেড়ে দেওয়া মানেই হচ্ছে কবীর চৌধুরীর কাছে একেবারে পরাজয় স্বীকার করে নেওয়া !
নিকিতা মনে মনে ঠিক করে নিল । যদি তাকে ডিপার্টমেন্ট থেকে এই কেস থেকে দুরেও সরিয়ে দেওয়া হয় তবুও সে নিজ থেকে এই কাজ করে যাবে । যেভাবেই হোক কবীর চৌধুরীকে সে দেখে নেবেই । সবার আগে এখন তাকে অপুর কাছেই যেতে হবে । এক মাত্র সেই পারবে তাকে সাহায্য করতে ।
##
নাদিয়া আরেকবার চিন্তা করলো দরজাতে টোকা দিবে কি না । নাকি এখান থেকেই চলে যাবে । এর আগেও এই বাসায় সে বেশ কয়েকবার এসেছে । শেষবার তো অপমানিত হয়েই চলে গেছে । তখনই ভেবেছিলো আর কোন দিন সে আর এখানে আসবে না । কিন্তু অপুর বাবার সাথে কথা বলার পরে সে আবারও আসতে বাধ্য হয়েছে ।
নাদিয়া সব সময় জিততে পছন্দ করে । ছোট থেকে সে সব সময় সব থেকে ভাল জিনিসটাই পেয়ে এসেছে । এর জন্য যদি মাঝে মধ্য তাকে কিছু আনফেয়ার কাজ করতে হত সেটাও সে করতো নির্ধিধায় ।
একবারের ঘটনা তার এখনও মনে আছে । তখন সবে মাত্র কলেজে পড়তো । তার সব থেকে কাছের বন্ধু আইরিনের সিনিয়ার ক্লাসেরই একটা ছেলের সাথে গভীর প্রেম শুরু হয় । নাদিয়ার ব্যাপারটা পছন্দ হল না কারণ সিনিয়ার সেই ছেলেটা পুরো কলেজের ক্রাশ ছিল । এমন একটা ছেলে তার বয়ফ্রেন্ড হওয়ার কথা ! তারপরেই নাদিয়া সেই অনফেয়ার কাজটা করলো । ভাল বন্ধু হওয়ার কারনে আইরিন এবং আইরিনের ফ্যামিলি সম্পর্কে সে বেশ কিছু কথা জানতো । সেটাই সে সেই ছেলেকে জানিয়ে দিল । ব্যাস ! ব্রেক আপ !
পরে বেশ কিছু সেই ছেলের সাথে নাদিয়ার প্রেম চলেছিলো ।
ভার্সিটিতেও সে এমন কাজ করেছিলো কয়েকবার । বেশ কয়েকবার সে নিজের বয়ফ্রেন্ড বদছিল কেবল আরও একটু ভাল কিছুর জন্য । বেস্ট কিছুর জন্য ! তবে অপুর সাথে সে কেন যুক্ত হয়েছিলো সেটা সে নিজেও জানে না । অপুকে সে যেভাবে চিনতো তাতে ওর কিছুই সব থেকে সেরা ছিল না । হয়তো নাদিয়া সব থেকে ভাল জিনিসটা পেয়ে পেয়ে খানিকটা ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিলো ।
কিন্তু ব্রেকআপের পর অপুর যখন ওকে সহজেই ছেড়ে চলে গেল তখন নাদিয়ার সেটা সহ্যই হয় নি । এর আগে যতবার সে ব্রেক আপ করেছে ততবারই সেই বয়ফ্রেন্ড গুলো তার আগে পিছে কুকুরের মত ঘুড়ে বেড়িয়েছে । তাকে ফিরে পাওয়ার জন্য হাত জোর করেছে । কিন্তু অপু সে সবের কিছুই করে নি । হয়তো এই জন্যই নাদিয়ার সেটা সহ্য হয় নি । তারপর যখন অপুর সাথে নতুন কাউকে দেখেছে তখন সেই ব্যাপারটা আরও অসহ্যের কারণ হয়ে উঠেছে । ওর যেকোন ভাবেই আবার অপুকে চাই ওর জীবনে ।
তারপর যখন সে অপুর আসল পরিচয় টা জানতে পারলো তখন সে আরও একটু মরিয়া হয়ে উঠলো । অপুকে তার এখন চাই ই চাই । যে কোন ভাবেই হোক ! তার উপর সে কবীর চৌধুরীর আশ্বাস পেয়েছে । এর থেকে বড় সুযোগ আর কিছু হতেই পারে না । এই জন্যই সে আবার এসে হাজির হয়েছে অপুর বাসার সামনে ।
দরজায় কড়া নাড়তে যাবে তার আগেই দরজা খুলে গেল । নাদিয়া অবাক হয়ে লক্ষ্য করলো দরজার ওপাশে সেদিনের সেই মেয়েটা দাড়িয়ে আছে । ওর মেজাজটা আবারও একটু খারাপ হতে শুরু করলো কিন্ত সেটা সামলে নিল সাথে সাথেই। মনে মনে কবীর চৌধুরী কথা গুলো মনে করে নিল । রাগ করলে চলবে না । সামনের এই মেয়ে যে কোন ভাবেই অপুর জীবন থেকে সরিয়ে দিতে হবে ।
নিকিতা বলল, কি চাই ?
-আমি অপুর সাথে দেখা করতে এসেছি ।
নাদিয়ার একবার মনে হল যে মেয়েটা সম্ভব ওকে ঘরের ভেতরে ঢুকতেই দিবে না । কিন্তু সেটা করলো না । দরজা ছেড়ে সরে দাড়ালো । নাদিয়া ঘরে ঢুকতেই দরজা বন্ধ করে দিয়ে ভেতরের ঘরে চলে গেল । নাদিয়া সোফার উপর বসতে বসতে ঠিক করে নিল আসলে কি বলবে অপুকে । সম্পর্কের দিন গুলোতে অপুর দিকে তাকিয়ে সে ভাল করেই বুঝতে পারতো যে ছেলেটা ওকে দারুন পছন্দ করে । ঠিক ঠাক মত বুঝিয়ে বলতেই হবে । নয়তো মনে শান্তি পাবে না ও ! ওর চোখের সামনে অপু অন্য কাউকে নিয়ে ঘুরবে সেটা ওর সহ্যই হবে না ।
###
হাসানের দিকে তাকিয়ে কবীর চৌধুরী বুঝতে পারলো আবারও কোন অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটেছে । হাসানের মুখটা সে রকমই মনে হচ্ছে !
-কি হয়েছে হাসান ? তোমাকে এমন দেখাচ্ছে কেন ?
-স্যার একটা সু সংবাদ আছে!
-সু সংবাদ তা এমন চেহারা নিয়ে বলছো কেন ?
হাসান একটু ঢোক গিললো । তাররপ বলল, স্যার আজকে বিকালে ছোট স্যার বাসায় ফিরে এসেছে।
কবীর চৌধুরী এবার একটু চমকে গেল । এটা সে কোন ভাবেই আশা করে নি ।
-এটা তো সুংবাদ । এর জন্য মুখ এমন করে রেখেছো কেন ?
হাসান আরও একটু ঢোক গিলল । তারপর বলল, ছোট স্যারের সাথে ঐ লেডি পুলিশও বাসার ভেতরে ঢুকেছে ।
কবীর চৌধুরী এবার খানিকটা চিন্তিত চোখে তাকালো হাসানের দিকে । তার বাসা অনেকটাই দুর্গের মত । তার সব কাজ কর্ম মূলত এই বাসা থেকেই পরিচালিত হয় । বাসার নিচ তলাতে বিশাল বড় গুদাম রয়েছে । যদিও সেটা আজ পর্যন্ত কেউ খুজে পায় নি । সব থেকে বড় কথা আজ পর্যন্ত তার বাড়ির ভেতরে কোন পুলিশ ঢুকতে পারে নি । ঢুকতে দেওয়া হয় নি । আর এই মেয়ে কত সহজেই না ঢুকে পড়েছে ! মেয়েটাকে যেভাবে শায়েস্তা করবেন ভেবেছিলেন সেভাবে করতে পারছেন না দেখে খানিকটা অস্বস্তি লাগা শুরুখল তার ! মেয়েটা আসলে কি চাইছে ! বুঝতে পারছে কোন ভাবেই তার পিছু ছাড়বে না এই মেয়ে !
কবীর চৌধুরী আবার চিন্তায় পড়ে গেল । আবারও পরিকল্পনা বদলাতে হবে ! নতুন করে ভাবতে হব । তবে অপু যে বাসায় ফিরে এসে এতোদিন পরে সেটা জেনে খুশি লাগছে তার ।
চলবে…
Discover more from অপু তানভীর
Subscribe to get the latest posts sent to your email.
There’s a twist to the story so far, but that’s a bit predictable. I’m reading the story a little late, but it’s nice to see that the next part of the story has already been published!