আমার মনের ভেতরে একটা কু ডেকে উঠল । লরি ড্রাইভারের ট্রাকটা দিন ভর ফিলিং স্টেশনের মাঠের দাঁড়িয়ে রইল। সেই সাথে আমার বস এনায়েত করিম পুরোটা সময় স্টেশনেই রইলেন । এই কদিনে আমি ওনাকে যেমন দেখেছি আজকে তার থেকেও খুব বেশি গম্ভীর মনে হল। অনেক বেশি চিন্তিত মনে হল । অনেকবার সে নিজের ফোন বের করে কাকে যেন ফোন করল। অবশ্য বিকেলের একটু আগে লরিটাকে অন্য একজন ড্রাইভার এসে নিয়ে গেল। সন্ধ্যার পরে আবার সেই রকম শিডিউল শুরু হয়ে গেল। তবে আজকে এনায়েত করিম দোকান ছেড়ে চলে গেলেন না। আমার পাশেই বসে রইলেন।
আজকে একটা অতিরিক্ত ব্যাপারও ঘটল । আজকে দুইজন পুলিশ অফিসার এসে হাজির হল। তারা আমার কাউন্টারে এসে কিছু প্রশ্ন করল আমাকে। আমার তো তখন ভয় করছিল যে আমার পার্মিটের ব্যাপারে না আবার কিছু জানতে চায়! তবে আশার কথা হচ্ছে তেমন কোন প্রশ্ন তারা করল না। সিসিটিভি ক্যামেরা আছে আমাদের দোকানে । সেখান থেকে ফুটেজটুকু কপি করে নিয়ে চলে গেল । যদিও পুরো সময়ে এনায়েত করিম নিজে ছিলেন । আর আমার কেন জানি মনে যে এই পুলিশ দুজনের সাথে এনায়েত করিমের ভাল পরিচয় আছে। দোকান থেকে তারা যখন বের হল, দেখলাম যে এনায়েত করিমও তাদের সাথে বাইরে বের হলেন। কিছু সময় কথা বললেন। কথা শেষ হলে তারা চলে গেলেন । আমার বস ফিরে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, তাহলে থাকো। আমি গেলাম ।
আমি আবার একা হয়ে গেলাম । কাউন্টের ওপাশে বসে আবার আগের মত নিজের মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গেলাম। ঠিক সাড়ে এগারোটার দিকে সেই মেয়েটি এসে হাজির হল। সেই মেয়েটি বলতে গতদিন যে মেয়েটির পেছনে লরি ড্রাইভার গিয়েছিল । আমি মেয়েটার দিকে কেবল তাকিয়ে রইলাম । এই মেয়েটা অন্য সবার মত না। অন্য সবাই যেখানে বেশ ভাল মানের পোশাক পরে আসে, এবং সে পোশাকের বেশির ভাগই হচ্ছে কালো রংয়ের সেখানে এই মেয়ের পোশাক একেবারেই স্বাভাবিক । টিশার্ট আর জিন্স পরেই আসে বেশির ভাগ দিন।
আজকেও মেয়েটা এল । তবে প্রতিদিনকার মত কেবল ফ্রিজ থেকে প্যাকেট নিয়ে চলে গেল না। আজকে সে একটা কিচেন নাইফ কিনল এবং টাকা দিতে আমার কাউন্টারে এসে হাজির হল। টাকা দিতে দিতে মেয়েটা আমার দিকে তাকিয়ে বলল, তোমাকে এখানে নতুন দেখছি।
আমি একটু হাসলাম । তারপর বললাম, হ্যা এই কয়েকদিন হয়েছে এখানে এসেছি।
-কদিন টিকবে? এর আগের জন কিন্তু এক সপ্তাহও টিকতে পারে নি।
-কেন? মানে কেন থাকতে পারে নি ?
-তুমি এখনও কিছু টের পাও নি? কোন অস্বাভাবিক কিছু?
-কই না তো ! মানে হ্যা এই স্টেশনটা অবশ্যই একটু আলাদা । আমি এর আগেও এমন ফুয়েল স্টেশনে কাজ করেছি বটে । এটা আসলেই ওগুলোর মত না । তবে এমনও না যে একেবারে চাকর ছেড়ে দিয়ে চলে যেতে হবে।
মেয়েটা আমার দিকে তাকাল কিছু সময় । তারপর একটা অদ্ভুত কাজ করল । সে আবার ঘুরে গেল কালো ফ্রিজের দিকে। তারপর ফ্রিজ থেকে আরেকটা প্যাকেট বের করে নিয়ে এসে আমার সামনে দাড়াল । আমার দিকে প্যাকেটটা বাড়িয়ে দিয়ে বলল, আমার একটা উপকার করতে পারবে?
আমি বললাম, কী উপকার?
-এই প্যাকেটটা কাল দুপুরের দিকে আমার বাসায় দিয়ে আসতে পারবে? আমি কাল এদিকে আসতে চাচ্ছি না । আমি ঠিকানা লিখে দিচ্ছি। তুমি কেবল দুপুরের দিক এই ঠিকানাতে গিয়ে দিয়ে আসবে। পারবে না?
কোন কারণ নেই তবে আমার কেন জানি মনে হল এই ঝামেলা আমার নেওয়ার কোন দরকারই নেই। আমি এখনই মেয়েটাকে মানা করে দিই । তাকে বলি যে তুমি নিজে এসে এখান থেকে প্রতিদিন তোমাদের এই প্যাকেট নিয়ে যাবে। এর ভেতরে আমি নাই। কিন্তু অদ্ভুত একটা কৌতুহল হল আমার । কেন যে এমন একটা কৌতুহল হল সেটা আমি নিজেও জানি না। আমি বললাম, হ্যা কোন সমস্যা নেই । তুমি রেখে যাও ।
মেয়েটা এবার হাসল । তারপর আমার দিকে হ্যান্ড শেইক করার জন্য হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল, হ্যালো । আমি জেনি। তোমার নাম কি?
-আমি রাফাত।
এই বলে আমি জেনির হাত ধরলাম এবং ধরার সাথে আথে অদ্ভুত একটা অনুভূতি হল আমার । কারণ জেনির হাত আমার কাছে বেশ ঠান্ডা মনে হল। যদিও এই দেশে ঠান্ডারই দেশ। তারপরেও শরীরের যে স্বাভাবিক তাপমাত্রা থাকে, জেনির হাত ধরে আমার সেটা মোটেও মনে হল না।
আমি বললাম, আচ্ছা একটা কথা বল তো ।
-কী কথা?
-এই কালো ফ্রিজটা আমি নিজেও কেন খুলতে পারি না।
আমার কথা শুনে জেনি একটু হাসল। তারপর বলল, ওটা তুমি পারবে না । এই ফ্রিজটা আলাদা ভাবে তৈরি করা। ফ্রিজের হাতলের নিচে একটা ফিংগারপ্রিন্ট সেন্সর আছে । ওটা নির্দিষ্ট কিছু হাতের স্পর্শ ছাড়া খুলবে না।
জেনি আরও কিছু বলতে গিয়েও যেন বলল না । কিছু যেন ভাবল । তারপর বলল, তুমি এই প্যাকেটটা অন্য ফ্রিজে রেখে দাও। কাল নিয়ে এসো কেমন !
এই বলে জেনি হাসল । আমি রাজি হয়ে গেলাম। আসলে মনের ভেতরে একটা কু যে ডেকে উঠল না সেটা বলব না । তবে জেনির হাসি বেশ চমৎকার । মেয়েটির কথা টানও ঠিক ইংরেজদের মত না। সম্ভবত মেয়েটির মা/বাবা অন্য কোন দেশের হবে।
সকালবেলা ডিউটি শেষ করে ঘুমাতে গেলাম। আমার ঘুম ভাঙ্গল দুপুরে। দুপুরের খাওয়া দাওয়া শেষ করে আরো কিছু সময় আমি গড়াগড়ি খেলাম। এই সময়টা আমার করার তেমন কোন কাজ থাকে না । এই সময়ে আমি সময়ে আমি সাধারণত বই পড়ি নয়তো টিভি দেখার চেষ্টা করি। আজকে অবশ্য আমার মনের ভেতরে একটা অন্য রকম উত্তেজনা কাজ করা শুরু করল। আমি জেনির বাসায় যাব। মেয়েটির জন্য প্যাকেটটা নিয়ে যাব।
বিকেলের কিছু আগে আমি সাইকেল নিয়ে বের হয়ে গেলাম। গুগল ম্যাপে ঠিকানা দিয়ে সার্চ দিতেই পেয়ে গেলাম । ডাইরেশন অনুযায়ী চলতে শুরু করলাম। বিশ মিনিট সাইকেলটা চালানোর পরেই অনুভব করলাম যে আশপাশটা একেবারে বদলে গেছে। ফিলিং স্টেশনটা হাইওয়ের পাশে, শহর থেকে বেশ খানিকটাই দুরে। এই এলাকাতে বাড়িঘর বলতে কিছুই নেই। বেশির ভাগটাই বনজঙ্গল । তবে আমি এখন যে এলাকাতে এসে পৌছেছি এই এলাকাতে কিছু বাড়িঘর রয়েছে। তবে বাড়িগুলো অনেক আগের আমলের মনে হল । আমার মনে হল আমি যেন পঞ্চদশ কিংবা ষোড়শ শতাব্দিতে চলে এসেছ। ইট বিছানো রাস্তা দিয়ে আমি এগিয়ে চলেছি সামনের দিকে । একটা সময়ে আমার কেবল মনে হল যেন এই পুরো এলাকাতে আমিই একমাত্র জীবিত মানুষ । এছাড়া আর কেউ কোথাও নেই। তবে সেই একই সাথে আরেকটা তীব্র অনুভূতি আমার মনে এসে বাসা বাঁধল । সেটা হচ্ছে আমার মনে হতে লাগল যে কেউ যেন আমার দিকে তাকিয়ে রয়েছে। একজন দুইজন না, অনেকগুলো চোখ আমার উপরে নিবদ্ধ। এই অনুভূতিটা কেন হল সেটা আমি জানি না তবে আমার মনে হল যে অনেকগুলো আমাকে দেখছে। অথচ আশে পাশে দূর দুরান্তে আমি কাউকে দেখতে পেলাম না । যে বাড়িগুলো আমি দেখছি সেগুলোতে কেউ আসলে থাকে বলেও আমার মনে হল না । সব বাড়িগুলো পরিত্যাক্ত মনে হল।
আরও মিনিট দশেক চলার পরে আমি জেনির বাড়িটা খুজে পেলাম। বাড়িটার সামনে দাঁড়িয়ে রইলাম কিছু সময় । এটাকে ঠিক বাড়ি না বলে কোন কুড়েঘর বলা চলে। এই এতোটা পথ আসতে আসতে যে বাড়িগুলো আমার চোখে পড়েছে সেই বাড়িগুলো পুরানো হলেও সব গুলোই ছিল উচ্চ শ্রেণীর । দেখলেই বোঝা যায় ওগুলো সব বড়লোক এবং সম্ভ্রান্ত পরিবারের বাড়ি। কিন্তু এই বাড়িটা একেবারেই সাধারণ মনে হল। আমি বাড়ির দরজায় গিয়ে কলিংবেল বাজালাম। একবার, দুইবার, তিনবার !
একটা সময়ে এসে মনে হল যে বাসায় আসলে কেউ নেই। আমি প্যাকেটটা নিয়ে কী করব সেটা ভাবতে লাগলাম। আমাকে আসতে বলে এভাবে বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়ার কোন অর্থ আমি খুজে পেলাম না। মেজাজটা একটু খারাপ হল। নিজের উপরেই খানিকটা বিরক্ত হলাম। মনে হল কী দরকার ছিল মেয়েটার কথায় রাজি হওয়ার! যদি রাজি না হতাম তাহলে এই সময়ে আমি হয়তো শহরের কোন দোকানে ঘুড়ে বেড়াতাম কিংবা পার্কে বসে হাওয়া খেতাম । সেটা না করে আমি এই প্রাচীন শহরে একটা ভাঙ্গাচোড়া এই এলাকাতে ঘুরে বেড়াচ্ছি।
আমি যখন ঠিক করেছি প্যাকেটটা আমি দরজার সামনে রেখে চলে যাব ঠিক সেই সময়েই দরজার খুলে গেল। আমি দরজা দিয়ে ভেতরে তাকালাম বটে তবে আমার কাছে মনে হল যে ঘরের ভেতরটা যেনে একটু বেশি অন্ধকার মনে হল আমার কাছে। সেই অন্ধকারের ভেতরেই আমি জেনিকে দেখতে পেলাম । সেদিকে তাকিয়েই আমার চোখ বড় বড় হয়ে গেল।
আমি নিজের চোখ সরাতে পারলাম না মোটেও। এর প্রধান কারণ হচ্ছে জেনির শরীরে কোন কাপড় নেই। একেবারে নগ্ন হয়ে সে দাঁড়িয়ে রয়েছে। আমার চোখের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। আমি যেন একেবারে নড়তে পারছি না। আমার মনে হল যেন জেনি আমাকে একেবারে আটকে ফেলেছে।
আমার এখন কী করা উচিৎ আমি বুঝতে পারছি না । আমার মনে হচ্ছে আমি যেন নিজ থেকে কিছু চিন্তা ভাবনা করতে পারছি না। আমার চিন্তার উপরে কে যেন প্রভাব ফেলছে। সেই কে টা যে কে সেটাও আমার বুঝতে কষ্ট হল না। জেনির চোখটাকে আমার কাছে মোটেই স্বাভাবিক মনে হল না। ঐ গভীর চোখের ভেতরে কিছু একটা ব্যাপার রয়েছে। অস্বাভাবিক ব্যাপার। আমার মনের ভেতর থেকেই এটা বলে উঠল যে আমার এখন এখান থেকে যত দ্রুত সম্ভব চলে যাওয়া উচিৎ। কিন্তু কেন জানি আমি চলে যেতে পারছি না। একটা তীব্র আকর্ষণ আমাকে যেন পেয়ে বসেছে। আমি অনুভব করতে শুরু করলাম যে আমাকে এখন জেনির এই অন্ধকার ঘরের ভেতরে ঢুকতে হবে। আমার ঘরের ভেতরে যেতেই হবে । আমি পা বাড়িয়ে দিলাম সামনে।
আমাকে ঘরের ভেতরে যেতেই হবে। এই অনুভূতিটা যে ঠিক না সেটা আমি ঠিক বুঝতে পারছি কিন্তু আমি নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছি না। কেন পারছি না সেটা আমি নিজেও জানি না।
আরেকটা পা যখন বাড়াব ঠিক সেই সময়ে আমি একটা গাড়ির হর্ণ শুনতে পেলাম । আর তখনই আমার তন্ময় ভাবটা ভেঙ্গে গেল। আমি থেমে গেলাম । ঠিক সেই সময়েই আমার মনের ভেতরের ভয়টা আমাকে পেয়ে বসল। আমি হাতের প্যাকেটটা ফেলে দিয়ে পেছনে ঘুরে দৌড় দিলাম । সাইকেলটা নিয়ে কিভাবে যে প্যাডেল চালালাম সেটা আমি নিজেও জানি না। কিভাবে ফিরে এলাম আর কিভাবে নিজের ঘরের দরজা বন্ধ করে শুয়ে পড়লাম সেটা আমি নিজেও জানি না। কেবল মনে হচ্ছিল যে ভয়ংকর কিছুর হাত থেকে আমি পালিয়ে এসেছি।
ঐদিন সন্ধ্যায় যখন আমি ফিলিংস্টেশনে বসলাম তখনও মনের ভেতরে সেই ভয়টা কাজ করছিল । বারবার মনে হচ্ছিল যে জেনি এখনই চলে আসবে। তাকে আমি কেন ভয় পাচ্ছিলাম সেটা আমি নিজেই জানি না। তবে সেদিন জেনি এল না । কিন্তু পরের দিন আমার বস আমার মুখোমুখি হল ঠিকই। আমার দিকে তাকিয়ে কঠিন কন্ঠে বলল, তুমি কেন গিয়েছিল ঐ এলাকাতে?
এনায়েত করিম যে এটা জানতে পারবে সেটা আমি বুঝতে পারি নি। আমি বললাম, আপনি কিভাবে জানলেন?
-আমি কিভাবে জানলাম সেটা প্রশ্ন না, গিয়েছিলে কেন?
আমি সবটুকু খুলে বললাম। আমার বস খানিকটা সময় চুপ করে রইলেন। তারপর সে কিছু না বলে হেটে গিয়ে সেই কালোফ্রিজের কাছে গেল। ফ্রিজ খুলে একটা প্যাকেট বের করে নিয়ে এল । আমার দিকে তাকিয়ে বলল, যাও একটা বাটি নিয়ে এসো ।
আমি তার কথা মত একটা বাটি নিয়ে এলাম। আমি দেখলাম এনায়েত করিম প্যাকেটটার একটা মুখ কেটে জুসের মত তরলটা বাটিতে ঢালতে লাগলেন। ব্যাপারটা ধরতে আমার কিছুটা সময় লাগল। তরলটা অন্য কিছু নয়, তাজা রক্ত !
আমি চোখ বড় বড় করে সেদিকে তাকিয়ে রইলাম কেবল । এই প্যাকেটে রক্ত রয়েছে । রক্ত ! আমি যেন নিজের চোখকে ঠিক মত বিশ্বাস করাতে পারছিলাম না। এই প্যাকেট ভর্তি রক্ত।
এনায়েত করিম বললেন, এগুলো রক্ত। তবে ভয় পেও না, মানুষকে মেরে এই রক্ত জোগার করা নয়! ব্লাডব্যাংক থেকে কেনা । তারপর এভাবে প্যাকেট করা । এর জন্য আলাদা ওয়ার্কশপ আছে।
আমি বিস্ময় নিয়ে কেবল তাকিয়ে রইলাম আমার বসের দিকে ।
এনায়েত করিম বলতে লাগলেন, আমাদের এই ফিলিংস্টেশনে রাতে যারা আসে তারা কেউ মানুষ নয় ।
আমি বড় একটা ঢোক গিলে বললাম, মানুষ না বলতে?
-মানুষ না বলতে এরা সবাই ভ্যাম্পায়ার। ভ্যাম্পায়ার তো চেনো ! রক্ত খেয়ে বাঁচে ।
এই কথা যদি এনায়েত করিম না বলে অন্য কেউ বলত তাহলে আমি হেসেই উড়িয়ে দিতাম । নিশ্চিত ভাবেই বলতাম যে আমার সাথে সামনের জন ইয়ার্কী মারছে। কিন্তু এনায়েত করিমের সাথে আমার ইয়ার্কীর সম্পর্ক না। সে আমার বস। এনায়েত করিম বলে চললেন, এদের পছন্দের খাবার এই রক্ত । এরা এক সময়ে মানুষ মেরেই তাদের রক্ত খেত তবে এই আধুনিক যুগে এসে তারা বুঝতে পেরেছে মানুষের সাথে শত্রুতা করে টিকে থাকা আসলে সম্ভব না। তাই তারা মানিয়ে নিয়ে চলার চেষ্টা করেছে। আমার সাথে ওদের একটা ডিল হয়েছে। আমি ওদের রক্ত এনে দিব, বিনিময়ে ওরা আমাকে টাকা দিবে এবং সেই একই সাথে আশে পাশের কাউকে না মারার জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ থাকবে। প্রাচীন যুগ থেকে এই এলাকাতে সব বড়লোক আর সম্ভ্রান্ত ঘরের সবাই ছিল ভ্যাম্প্যায়ার। এরা সাধারাণ মানুষের উপরে অত্যাচার করত। তবে এক সময়ে সাধারণ মানুষ একজোট হয় । দিনের বেলাতে বাড়িতে হামলা করে এদের মেরে ফেলতে থাকে । এক সময়ে প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় এরা। তবে এদের একটা বড় সুবিধা হচ্ছে এরা বয়সের ভারে মারা যায় না । মাথা কেটে ফেলা কিংবা সূর্যের আলোতে পরে ভষ্ম না হলে এরা মরে না । সেই হিসাবে কিছু টিকে রইল। তবে এখন তারা নিজেদের অনেকটাই সামলে নিয়েছে। তারা এটা বুঝতে পেরেছে যে জগতের নিয়ম বদলে গেছে। কাউকে মেরে তার শরীরের শক্ত খেয়ে ফেলার ব্যাপারটা এখন আর এতো সহজ না। যত এই কাজ করবে তত মানুষের নজরে আসবে।
-তাই ওরা এখন ব্লাড ব্যাংক থেকে রক্ত কিনে খায়?
-হ্যা । আমি ওদের সাহায্য করি।
তবে মাঝে মাঝে ঝামেলা হয়ে যায়। এই যে কদিন আগে লরি ড্রাইভারের ঘটনাই ধর ! এই লোক সেদিন এই মেয়ের পেছনে গিয়েছিল । রাতের আধারে এই মেয়েকে আক্রমন করে সেই প্যাকেট ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে মেয়েটার নখ লেগে লোকটার হাতের একটা অংশ ছিলে গিয়ে রক্ত বের হয়ে যায় এবং আর রক্ত দেখলে এরা নিজেদের আর নিয়ন্ত্রন করতে পারে না!
আমার মুখ দিয়ে আপনা আপনি বের হয়ে এল, এরপরে?
-এরপরে আর কী হল সেটা নাই শুনো ! তবে ভাগ্য ভাল যে পুরো রক্ত সে শুষে নেয় নি। লোকটা বেঁচে আছে। তবে শরীর থেকে রক্ত বের হয়ে যাওয়ার কারণে খুব বেশি দূর্বল এখন হাসপাতালে আছে।
এরপর এনায়েত করিম চুপ করে গেলেন। আমিও কী বলব ঠিক যেন বুঝতে পারলাম না। এক সময়ে এনায়েত করিম বললেন, এমনটা আর করবে না। আর ওদের এলাকাতে যাবে না। ওদের বাড়িতে যাওয়া মানে একেবারে বাঘের মুখে পড়া। এই কাজ করা যাবে না মোটেও । একবার ওদের হাতে পড়লে সেখান থেকে বের হওয়া বেশ মুস্কিল। ওদের যে প্রধান তার সাথে আমার এই চুক্তি হয়েছিল যে এই শহর দোকান বা রাস্তার কোন মানুষকে ওরা মারবে না । তবে ওদের এলাকার ভেতরে কেউ ঢুকে গেলে, বাসার ভেতরে কেউ গেলে ওরা যে কিছু করবে না সেটার কোন নিশ্চয়তা দেওয়া যায় না। বুঝতে পেরেছো? এমন কাজ যেন আগে আর কখনই করবে না?
আমার মুখের ভাবে একটা ভয় ফুটে উঠল। বিশেষ করে যখন আমার মনে হল যে একদল রক্তচোষা ভ্যাম্পায়ার প্রতিদিন এই দোকানে আসে এবং রক্ত কিনে নিয়ে যায়। আমার মনের ভাব যেন এনায়েত ভাই বুঝতে পারলেন। বললেন, ভয় নেই। এই দোকানের ভেতরে ওরা তোমার কিছু করবে না । তবে রাতের বেলা বের হবে না । ঠিক আছে?
আমি মাথা ঝাকালাম । আমার ইচ্ছে হল এখনই এই জায়গা থেকে পালিয়ে যাই । তবে পালিয়ে আমি যাব কোথায়? আমার তো যাওয়ার কোন জায়গা নেই। এখানে থাকা খাওয়ার একটা নিশ্চয়তা আছে!
তবুও একটা ভয় এসে ভর করল আমার উপরে। ভ্যাম্পায়ারের সাথে বসবাস করাটা মোটেও সহজ কোন ব্যাপার না।
ফেসবুকের অর্গানিক রিচ কমে যাওয়ার কারনে অনেক পোস্ট সবার হোম পেইজে যাচ্ছে না। সরাসরি গল্পের লিংক পেতে আমার হোয়াটসএপ বা টেলিগ্রামে যুক্ত হতে পারেন। এছাড়া যাদের এসব নেই তারা ফেসবুক ব্রডকাস্ট চ্যানেলেও জয়েন হতে পারেন।
সরাসরি মেসেজ পাঠাতে চিঠি.মি এপ ব্যবহার করুন।
Discover more from অপু তানভীর
Subscribe to get the latest posts sent to your email.