নতুন জীবনে পদার্পণ

oputanvir
4.4
(36)

সুরেনা যখন বলল, আসো সেলফি তুলি এবং এই বলে আমার দিকে এগিয়ে এল, তখন আমার পুরো শরীর যেন কেঁপে উঠল। সত্যিই আমি এর আগে কোনদিন কোন মেয়ের এতো কাছে আসি নি। সুরেনার এতো কাছে আসার কথা তো কোন দিন ভাবিও নি। 

আজকের ঘটনা কিভাবে ঘটল সেটা আগে বর্ণনা করি। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে কিছুদিন ধরে প্লান করছিলাম সুন্দরবনে আসার । এখানে বেশ কিছু সুন্দর সুন্দর রিসোর্ট হয়েছে । প্রায় দেখা যায় সেই রিসোর্টের ছবি ঘুরে বেড়ায় ফেসবুকের পরিচিতদের প্রোফাইলে। আমরা কয়েকজন মিলে ঠিক করলাম যে সামনের সুযোগ পেলেই ঘুরে আসব । তবে যখন প্লান প্রায় তৈরি হয় তখন আমাদের ক্লাসের কয়েকজন মেয়ে আমাদের সাথে যোগাযোগ করল । তারাও আমাদের সাথে যেতে চায় । 

আমাদের এই ট্যুরের প্লানের কথা ওরা কিভাবে জানল ? তখনই আমাদের সবার চোখ গেল আবিরের দিকে । আবির সব সময়ই একটু মেয়েঘেঁষা। ক্লাসের অনেক মেয়ের সাথেই ওর খুব ভাব। আমরা সবাই নিশ্চিত হলাম যে আবিরই ওদের কাউকে বলেছে এই ট্যুরের কথা।

যাক, বলেই যখন ফেলেছে তখন আর কী করা । আবির বাদে আমরা সবাই একটু অ-রাজি ছিলাম। মেয়েদের সাথে ট্যুরে যাওয়া মানেই অনেক কিছু করা যাবে না । তবে তাদের সাথে ট্যুরে যাওয়ার আবার মজাও রয়েছে। হিসাব কিতাব করে দেখা গেল যে মেয়েদের সাথে নেওয়াটা খারাপ কিছু না । আর এটা যেহেতু একটা রিলাক্স ট্যুর হবে তাই তাদের সাথে নিলে আমাদের খুব একটা সমস্যায় পড়তে হবে না। 

আমরা চলে এলাম । চারজন মেয়ের সাথে আমরা চারজন ছেলে । আগে আমরা একটা রুম নিয়েছিলাম । এখন দুইটা রুম নেওয়া হল। আমরা আগে থাকতে চেয়েছিলাম একদিন সেখানে দুইদিন থাকার পরিকল্পনা করলাম। 

সময় কাটতে লাগল বেশ চমৎকার । আমরা সব সময় আড্ডা হইহুল্লর করে কাটাই । রিসোর্টের চারিদিকে ঘুরতে যাই । রিসোর্টের সামনে সময় নৌকা বাঁধা থাকে। সেটা নিয়ে বের হই সবাই। আজকেও তেমনই ভাবে ওরা গেল নৌকা ভ্রমনে। আমি অবশ্য ইচ্ছে করেই গেলাম না । আমি রুম থেকে বের হই নি । রুমেই শুয়ে ছিলাম । আমার ইচ্ছে ছিল বিকেলটা আমি রিসোর্টের সামনের খোলা জায়গাতে বসে বই পড়ে কাটাব । আমাকে রেখেই ওরা চলে গেল । 

আমি একটু পরে বাইরে বের হয়ে এসে বসলাম রিসোর্টের সামনের ফাঁকা স্থানে । সাথে করে নিয়ে আসা বইটা পাশে রেখে সামনের পশুর নদীর দিকে তাকিয়ে রইলাম । এখন জোয়ারের সময় । পানি বেড়েছে অনেক । একেবারে রিসোর্টের ফ্লোরের কাছে চলে এসেছে। আমি যদি পা ঝুলিয়ে বসি তাহলে আমার পায়ের একদম কাছেই পানি। আমি অবশ্য পা নামিয়ে বসলাম না। এখানে পানিতে কুমির আছে। পা নামানো বিপদ। সামনের নদীর দিকে তাকিয়ে রইলাম একভাবে। এমন সময় সুরেনাকে হেটে আসতে দেখলাম । ও আমার পাশে এসে বসল। দেখলাম আমার পাশে রাখা বইটা হাতে নিয়ে নেড়ে চেড়ে দেখল । 

আমার দিকে না তাকিয়েই বলল, কী ব্যাপার তুমি যাও নি?

-না । তুমিও তো যাও নি। 

-হুম । ঘুমিয়ে ছিলাম । কাল রাতে তো দেখলেই অনেক  রাত পর্যন্ত আড্ডা দিলাম। আমার আবার ঘুম পুরো হতে হয়।

-আমারও তাই। ঠিকমত ঘুম না হলে ভাল লাগে না।

-কাল চলে যেতে হবে। এতো চমৎকার সময় কাটবে, ভাবি নি। আমি তো প্রথমে আসতেই চাই নি। এখন মনে হচ্ছে যে যদি না আসতাম তাহলে অনেক কিছু মিস করতাম । অনেক দিন পরে খুব ভাল সময় কাটছে। 

আমিও কথাটা স্বীকার করলাম । আমরা প্রথমে মেয়েদের নিয়ে আসতে চায় নি। মেয়েরা সাথে না এলে হয়তো অন্য রকম আনন্দ হত তবে এই আনন্দটাও কিন্তু চমৎকার । 

দেখলাম সুরেনা আমার সাথে অনেক কিছু নিয়েই কথা বলতে শুরু করল । একটা পর্যায়ে আমার প্রেম জীবনের কথাও জানতে চাইল । আমি কারো সাথে প্রেম করি কিনা কিংবা অতীতে করেছি কিনা। এক পর্যায়ে নিজের মোবাইলটা আমার দিকে দিয়ে ওর কয়েকটা ছবি তুলে দিতে বলল। আমি তাই দিলাম । এবং তারপরই হঠাৎ করে আমার দিকে এগিয়ে এসে বলল, আসো সেলফি তুলি। 

সুরেনা একেবারে আমার শরীর ঘেঁষে এগিয়ে এল । খানিকটা আমার কাধের দিকে ওর শরীর এলিয়ে দিয়ে আমার মাথার একদম পাশেই ওর মাথাটা নিয়ে এল । এরপর বেশ কয়েকটা ছবি তুলল। আমি হাসলাম বটে ছবির জন্য কিন্তু বুকের ভেতরে তখন ধুকধুক করা শুরু হয়ে গেছে। 

ছবি তোলা শেষ হলে ও আবারো আগের স্থানে ফিরে গেল বটে তবে আমি নিজের ভেতরে নিজেকে ফিরে ফেতে একটু সময় নিলাম । সত্যি বলতে কি এমন ভাবে কোন মেয়ের এতো কাছে আমি এর আগে আসি নি । তাই ব্যাপারটা হজম করতে কিংবা মানিতে নিতে আমার একটু সময় লাগল । আমি সুরেনার মুখের ভাব দেখেই বুঝতে পারলাম যে আমার এই অস্বস্তি ভাবটা সে খুব ভাল করেই বুঝতে পেরেছে এবং এটাতে সে বেশ মজাও পাচ্ছে। আমার দিকে তাকিয়ে হাসি মুখেই বলল, তুমি দেখি একেবারে লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছো ! এর আগে কোন মেয়ের সাথে ছবি তোলো নি?

আমি মাথা নাড়ালাম । আমি সত্যিই ঐ ভাবে কোন মেয়ের সাথে কোন দিন ছবি তুলি নি। সুরেনা একটু অবাক হল । সেই সাথে একটু খুশিও হল যেন। 

ঐদিন রাতের বেলাও একই ভাবে আমরা হাটতে বের হলাম । রিসোর্টের সামনের দিকটা নদী থাকলেও পেছনের দিকটা গ্রাম ছিল। গ্রামের রাস্তায় আমরা হাটছিলাম । আমাদের অন্যান্য বন্ধুরাও ছিল তবে ওরা সামনে ছিল । আমি আর সুরেনা ইচ্ছে করে একটু পিছিয়ে গিয়েছিলাম। আস্তে আস্তে হাটছিলাম আর কথা বলছিলাম। সুরেনা এবার আমাকে তীব্র ভাবে অবাক করে দিয়ে আমার হাত ধরল । এতো নরম আর মোলায়েম হাত যেন আমি এর আগে কোন দিন ধরি নি । আমার পুরো শরীর যেন কেপে উঠল আবার । আমার হাত ধরার পরে আমাদের মাঝে আর কথা হল না । আমার কেন জানি মনে যে আমাদের মাঝে মুখ দিয়ে আর কোন কথা বলার দরকারই পড়ল না।

পরের দিন ফেরার সময়ই সুরেনা আমার পাশে পাশে থাকল। আমার সাথে আরও অনেক গুলো ছবি তুলল। কিছু ছবিতে আমার একেবারে কাছে ছিল ও । সেই ছবিগুলো দেখলে যে কেউ বলবে যে সুরেনা আমার প্রেমিকা। এমন কি রাতের বেলা বাসে আমার সিটের পাশেই সে বসল । একেবারে শরীরের সাথে শরীর ঘেষে । সুরেনার এই আচরণ আমাকে অবাক করছিল বটে তবে সেই সাথে আমাকে আনন্দও দিচ্ছিল।

ঢাকাতে ফেরার পরে প্রথম যে ব্যাপারটা আমি খেয়াল করলাম সেটা হচ্ছে সুরেনা ওর ফেসবুকের প্রোফাইল পিকচার এবং কাভার ফটো বদলেছে। কাভার ফটোতে আমাদের ট্যুরের একটা গ্রুপ ফটো সেট করেছে। কিন্তু প্রোফাইল পিকচারে যে ছবিটা সেট করল সেটা আমার সাথে তোলা একটা সেলফি ! ছবিটা দেখে আমার খাবি খাওয়ার মত অবস্থা হল । 

পরের দিন যখন আমি ক্লাসে গিয়ে হাজির হলাম দেখলাম সবাই আমার দিকে কেমন চোখে যেনে তাকাচ্ছে। এমকি আবিরও আমার দিকে মুচকি মুচকি হাসতে লাগল । সুরেনার ভেতরে অবশ্য এসব নিয়ে কোন ভ্রুক্ষেপ ছিল না । সে আমার সাথে স্বাভাবিক ভাবেই মেলামেশা শুরু করল । সত্যি বলতে কি ট্যুরের আগে আমি সুরেনার সাথে কথা বলেছিলাম বলে আমার মনেও নেই । অথচ এই ট্যুরের পরে সুরেনা আমার সাথে এমন ভাবে মেলামেশা শুরু করল যেন আমার মনে হতে লাগল যে সুরেনা যেন আমার প্রেমিকা। 

কিন্তু তারপরেই আমাদের জীবনে এমন একটা ঘটনা ঘটল যে সব কিছু বদলে গেল। দেশে কোটা বিরোরী আন্দোলন শুরু হল । সেটা শুরু হল আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই । একে একে সবগুলো বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এতে যোগ দিল । আমরা প্রতিদিন শান্তিপূর্ণ ভাবে আন্দোলন করতাম । সুরেনা প্রতিদিন আমার সাথেই থাকত । আমরা এক সাথেই আন্দোলনে যেতাম । এতোদিন সব শান্তিপূর্ণ ভাবেই হত । কিন্তু একদিন সরকারি দলের লোকজন আমাদের উপরে হামলা চালাল । 

সেইদিনই সম্ভবত আমাদের সম্পর্ক আরও একটু গাঢ় হয়ে উঠল। যখন আমরা হামলা থেকে বাঁচতে পালাচ্ছিলাম আমি সুরেনার হাত শক্ত করে ধরে ছিলাম । এক পর্যায়ে একদল আমাদের উপরে চড়াও হলে আমি নিজের শরীর দিয়েই সুরেনা রক্ষা করার চেষ্টা করতে লাগলাম। কয়েকটা আঘাত আমার শরীরে লাগল । তবে সুরেনার শরীরে লাগতে দিলাম না কোণ আঘাত। এক পর্যায়ে একটা বিল্ডিংয়ের গলিত ভেতরে ঢুকে পড়লাম দুজন । ওকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ছিলাম । বারবার ওর কানে বলছিলাম কিছু হবে না । চুপ করে থাকো । কিছু হবে না । সুরেনা খুব বেশি ভয় পেয়েছিল। 

সেই গলিতে আমি আর সুরেনা ছাড়া আর কেউ ছিল না । আমি ওকে অনেকটা সময় শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ছিলাম। একটা সময়ে মনে হল যে বাইরে সব শান্ত হয়ে এসেছে । আমার তখন মনে হল যে সুরেনাকে সবার আগে বাসায় পৌছে দিতে হবে। তারপর অন্য কথা। আমি খুব সাবধানে আগে গলি থেকে মাথা বের করে তাকালাম চারিদিকে । কাউকে দেখা গেল না । ওকে নিয়ে ধীর পায়ে বের হলাম । তবে মনের ভেতরে একটা ভয় কাজ করছিল খুব। তবে চারিদিকে মানুষজন ছিল না। রাস্তা ফাঁকা । আমরা দ্রুত নিউমার্কেটের দিকে হাটতে লাগলাম। পথে ভাগ্য গুণে একটা রিক্সাও পেয়ে গেলাম । 

রিক্সাতে উঠে আমার মনে হল যে আমার শার্টের এক কোণে বেশ খানিকটা অংশ ভিজে গিয়েছে । ব্যাপারটা সুরেনাও খেয়াল করল । ও যখন ভাল করে দেখল তখন দেখলাম আপনা আপনি ওর চোখ দিয়ে পানি বের হয়ে এল । আমারও তখন মনে পড়ল যে আক্রমনের সময়ে আমাদের দিকে যখন হামলা হল তখন সুরেনার দিকে একটা হামলা আমি আমার কাধ দিয়ে ঠেকিয়েছিলাম । সেটাতেই আমার শরীরে আঘাত লেগেছে। এতো সময় আমি সুরেনার নিরাপত্তা নিয়েই আমি চিন্তিত ছিলাম বেশি। তাই নিজের শরীরের ব্যাথাটা আমি খেয়াল করি নি । এখন যখন পরিস্থিতি যখন একটু শান্ত মনে হয়েছে তখন ব্যাপারটা আমি অনুভব করলাম । 

সুরেনা কিছুতেই আমাকে হলে ফিরতে দিল না । এক প্রকার জোর করে নিয়ে গেল ওদের বাসায়। আমি যখন ওদের বাসায় ঢুকলাম তখন দেখি ওর বাবা আর মা দুজনেই চিন্তিত মুখে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছেন। সুরেনা যে সুস্থ আর নিরাপদ আছে এটা দেখে যেন ওনাদের জানে পানি এল। 

সুরেনা ওকে মাকে বলল যে ফার্স্ট এইড কিট নিয়ে আসতে । ওকে রক্ষা করতে গিয়ে যে আমি আহত হয়েছি এটাও জানাল ওনাদের । কিট আসতেই আমাকে নিয়ে সুরেনা ওর ঘরের দিকে রওয়ানা দিল । বাবা মায়ের সামনে এভাবে হাত ধরে টেনে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারটা আমাকে খানিকটা অস্বস্তিতে ফেলে দিল বটে । আমি দেখলাম ওনারা নিজেরাও বেশ অস্বস্তিতেই পড়লেন । তবে কিছু বললেন না । 

সুরেনার ঘরে গিয়ে ওর বিছানার উপরে বসলাম। সুরেনা বলল, শার্ট খোল !

-কী ?

-বললাম শার্ট খোলো !

-আরে ……

আমার কথায় কান না দিয়েই দেখলাম সুরেনা নিজ থেকেই আমার শার্টের বোতাম খুলতে শুরু করল । আমি বাধা দিতে চাইলে আমার দিকে তীব্র চোখে তাকাল । আমি ওর চোখে এই দৃষ্টি কোন দিন আগে দেখি নি। আমি কেন জানি বাঁধা দিতে পারলাম না । সুরেনা খুব যত্ন নিয়ে আমার শরীর থেকে শার্ট খুলে নিল । কাধের কাছের ক্ষতটা বেশ ভালই দেখলাম । প্রথমে সুরেনা ক্ষতটা পরিস্কার করল । তারপর সেখানে ব্যন্ডেজ বেঁধে দিল । আমি আড়ষ্ঠ হয়ে বসেই রইলাম । এই পুরো সময় সে আবারও একেবারে কাছে বসে ছিল। 

কাজ শেষ হলে আমি একটু সরে বসতে যাবো কিন্তু আমাকে সেই সুযোগ সুরেনা দিল না । দেখলাম ওভাবেই আমাকে জড়িয়ে ধরল । একটা সময়ে আমি অনুভব করতে পারলাম যে ও কাঁদছে ! 

-আরে কী হল?

সুরেনা জবাব দিল না । আমি বললাম, আমি তো ঠিক আছি । কিছু হয় নি ।

-যদি কিছু হত ! আমাকে বাঁচাতে গিয়ে যদি তোমার কিছু হত ! আমি এটা কিভাবে সহ্য করতাম ?

আমি একটু চুপ থেকে বললাম, আমি সুস্থ আছি অথচ তোমার কিছু হয়েছে যদি এমন হত তাহলে ভাব আমি কিভাবে সহ্য করতাম?

দেখলাম সুরেনা কথা বলল না অনেকটা সময় । একভাবে আমাকে জড়িয়ে ধরেই রইল । তখনই আমার মনে হল যে সুরেনার মা অথবা বাবা যেকোন সময়ে ঘরে ঢুকে পড়তে পারে । আর ঘরে ঢুকে যদি এই অবস্থায় আমাদের দেখে তাহলে কী যে হবে ! 

ব্যাপারটা বুঝি সুরেনা নিজেও বুঝতে পারল । আমাকে ছেড়ে দিয়ে উঠে দাড়াল । ওর চোখে একটা লজ্জার আভা ফুটে উঠেছে । চোখ মুছে সে আমার দিকে তাকিয়ে বলল, তুমি ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে আসো । আমি খাবার ব্যবস্থা করছি। 

এই বলে এক প্রকার ছুটেই চলে গেল ঘর থেকে । আমি ওর ঘর থেকে চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে হাসলাম কেবল ।

রাতটা আমাকে ওদের বাসাতেই থাকতে হল। রাতে খাবার টেবিলে দেখলাম সুরেনার বাবা মা বেশ সহজ হয়ে উঠলেন । আমার সম্পর্কে নানান কথা জানতে চাইলেন। রাতে ওদের গেস্ট রুমে ঘুমালাম। যদিও ঘুমাতে খুব পারলাম সেটাও না। এক রাত হতেই অনুভব করলাম যে দরজা খুলে সুরেনা ঘরে এসেছে । 

দুই

তারপরের দিনগুলো যে কিভাবে কেটে গেল আমি নিজেও জানি না। অন্দোলন এতো তীব্র হয়ে উঠল যে এক সময় সরকার প্রধান পদত্যাগ করে দেশ থেকে পালিয়ে গেল। আমি আর সুরেনা দুইজনই রওয়ানা দিলাম গনভবনের দিকে। আজকে আমাদের মনে কোন ভয় নেই । চারিদিকে কেবল মানুষ আর মানুষ । সবাই আনন্দ করছে। 

আমি আর সুরেনা যখন গন ভবনে পৌছালাম, তখন সেখানে আমাদের বন্ধুরাও এসে পৌছিয়েছে। সবাই আমরা এদিক সেদিক ঘুরে বেড়াচ্ছি। এমন সময় আবির আমার কানের কাছে এসে বলল, তুই এখনও প্রোপোজ করিস নি?

আমি ওর দিকে তাকিয়ে বললাম, আরে না । এখনও করি নি। 

-আজকে করে ফেল । এই দেখানেই করে ফেল । এর থেকে ভাল জায়গা আর পাবিনা । এমন একটা বিখ্যাত দিন আর বিখ্যাত জায়গা আর পাবি ?

আবিরের কথা একেবারে ফেলে দেওয়ার মত না । এমন একটা দিন আর এমন একটা স্থান আর কখনো পাওয়া যাবে না এক সাথে । তবে রাফি আরও ভাল বুদ্ধি দিল । ও বলল, এখানে না সরাসরি সংসদে গিয়ে হাজির হই। সেখানেই হবে প্রোপোজ !

আমি রাজি হয়ে গেলাম । সুরেনাকে যখন সংসদ ভবনের দিকে যাওয়ার কথা বললাম তখন সে এক কথায় রাজি হয়ে গেল। যদিও সে এসবের কিছুই জানে না। 

আমরা সবাই মিলে সেদিকেই গিয়ে হাজির হলাম । রাফি হাতে করে বেশ কয়েকটা ফুল নিয়ে এসেছিল । 

আমরা একেবারে ঢুকে পড়লাম আইন সভা কক্ষের ভেতরে । তখনও বেশ কিছু মানুষ সেখানে ছিল । যেখানে সংসদ সদস্যরা বসতেন সেখানে বসে হইহুল্লর করছে। তবে আস্তে আস্তে সেই ভীড় কমে এল । আমরা সেই সময়ের অপেক্ষাতেই ছিলাম । কক্ষের একবারে মাঝের অংশটা একটু ফাঁকা হলেই আমি সুরেনাকে নিয়ে সেখানে গিয়ে হাজির হলাম । তারপর রাফির কাছ থেকে ফুল নিয়ে হাটু গেড়ে ওকে সবার সামনেই প্রোপোজ করলাম । সবার সামনেই বলল, সুরেনা আমি তোমাকে ভালোবাসি । আজকের এই দিনে আমার ভালোবাসা গ্রহন কর ।

পুর ঘটনাটা রাফি ফোনে রেকর্ড করছিল । সুরেনা আমার দিকে তাকিয়ে রইলো অবাক হয়ে । আমাদের ভেতরে যা হয়েছে তাতে আলাদা ভাবে আর কেউ কাউকে ভালোবাসি বলার দরকার ছিল না । দেখলাম সুরেনা খুশি হয়েছে। আমার হাত থেকে ফুল নিল । 

তারপর যে কাজটা করার কথা না সেটাও করে ফেলল। আমার দিকে এগিয়ে এসে সরাসরি আমার ফোটে চুমু খেল । আমি অনুভব করতে পারছিলাম যে পুরো কক্ষের সবাই আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে কারণ মুহুর্তের জন্য হইচই একেবারে থেকে গেছে। তবে কয়েক সেকেন্ড পরেই সেটা আবারও শুরু হল ! 

সুরেনা আমাকে ছেড়ে দিয়ে একটুও দাড়াল না । লজ্জা পেয়েছে সে । বের হওয়ার পথের দিকে দৌড় দিল । আমিও ওর পেছন পেছন দৌড় দিলাম । 

নতুন বাংলাদেশের সাথে আমাদের জীবনও যেন নতুন পর্বে পদার্পণ করল ।

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 4.4 / 5. Vote count: 36

No votes so far! Be the first to rate this post.

About অপু তানভীর

আমি অতি ভাল একজন ছেলে।

View all posts by অপু তানভীর →