বুশরার বুদ্ধিটা আমার মনে ধরল । সত্যিই যদি একবার আমার বিয়ের আমার ছোট চাচার কাছে পৌছায় তাহলে তার মেয়ের সাথে সে আর আমার বিয়ে দিতে চাইবে না । এটা স্বাভাবিক। আমি একা একা বিয়ে করেছি এই কথা আমার বাবা জানতে পারলে খুবই রাগ করবেন । এমন হতে পারে যে তিনি আমার সাথে সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ করে দিবেন । তবে আমাকে কেবল মাত্র ছোট চাচার মেয়ের বিয়ে পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে । যেহেতু চাচার শরীর খারাপ তিনি চাইবেন খুব জলদিই মেয়ের বিয়ে দিতে । আমার কাছে না দিতে পারলে অন্য কোন ছেলে খুজবেন নিশ্চিত । আমাকে কেবল এই সময় পর্যন্ত বাসা থেকে দুরে থাকতে হবে ।
অবশ্যই সারা জীবন বিপদ আর অশান্তিতে থাকার চেয়ে কয়েকটা মাস বাসা থেকে দুরে থাকা ভাল । পরে বাবাকে ব্যাপারটা বুঝিয়ে বললে তিনি রাগ করে থাকতে পারবেন না বলেই আমার বিশ্বাস । এখন প্রধান সমস্যা হচ্ছে আমি বউ পাবো কই? মানে হচ্ছে নকল বউ আমি পাবো কই !
সমাধান বুশরা নিজেই এনে দিল । দুইদিন পরে অফিসের লাঞ্চ আওয়ারে বুশরা আমাকে টেনে নিয়ে গেল বিল্ডিং রুফটপ রেস্টুরেন্টে । সময়টা দুপুর হওয়াতে এখন এখানে একদম মানুষ নেই । এখানে সন্ধ্যার পরে ভীড় হয়। তবে রুফটপ হলেও এখানে ছাদে ঘেরা স্থানও আছে । আমাকে বুশরা সেদিকেই নিয়ে গেল । দেখলাম একেবারে কোনার দিকে টেবিলে এক মেয়ে বসে রয়েছে । মেয়েটাকে দেখেই বুশরা হাত নাড়ল। মেয়েটিও হাত নাড়ল । তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বুশরা বলল, এই তোমার বউ !
আমি একটু থতমত খেলাম । দেখলাম মেয়েটিও একটু বিব্রতবোধ করল । বুশরা হাসতে হাসতে বলল, আরে বাবা এতো সিরিয়াস কেন হয়ে গেলে ! তোমরা হচ্ছ নকল জামাই বউ আর আমি হচ্ছি নকল ঘটক ।
এবার দেখলাম মেয়েটা একটু সোজা হল । আমার দিকে একটু তাকাল । আমিও মেয়েটাকে ভাল করে দেখলাম । বুশরা বলল, এই হচ্ছে রিমি । আমার বন্ধু । আর রিমি তোকে যার কথা বলেছিলাম । আমার মনে হল যে তোরা একে অন্যকে সাহায্য করে দেখতে পারিস । দেখ আলোচনা করে কাজ হয় কিনা !
কথা বার্তা যা হল তাতে বুঝলাম যে রিমির সমস্যা আমার মত না হলেও বিয়ে করে ওর সমস্যা দুর হবে। বিয়ে বলতে নকল বিয়ে করলে ওর আর আমার দুজনের সমস্যা একেবারে সমাধান হবে।
রিমি এই দেশে থাকতে একেবারেই ইচ্ছুক না । বর্তমানে ওয়াল্টন গ্রুপের মার্কেটিং ডিপার্টমেন্টে রয়েছে । তবে ওর বাইরে পড়তে যাওয়ার প্রস্তুতি একেবারে শেষ পর্যায়ে । কিন্তু সমস্যা হয়ে দাড়িয়েছে ওর বাবা মা । ওকে কিছুতেই একা ছাড়বে না । তাদের একই কথা যে যদি এভাবে অবিবাহিত অবস্থায় সে বিদেশ যায় তাহলে রিমি আর ফিরে আসবে না । তাকে তারা বাইরে যেতে দিবে না । একমাত্র তখনই তারা রাজি হবে যদি রিমি বিয়ে করে যায় । রিমির এমনিতে বিয়েতে কোন সমস্যা নেই। কিন্তু যে কয়টা বিয়ের জন্য ছেলে দেখা হয়েছে তাদের কেউ ই রিমির এই বাইরে যাওয়া একেবারেই পছন্দ করে নি । তাদের বক্তব্য হচ্ছে বিয়ে করে যদি বউ দেশের বাইরেই চলে যায় তাহলে বিয়ে করে লাভ কি ! আর যারা রাজি তারা মূলত তার সাথে দেশের বাইরে যেতে চায় এবং তাদের দাবী রিমি যেন তাদের সাথে করেই নিয়ে যায় । এটা আপাতত রিমির পক্ষে সম্ভব না।
আমরা দুজনের সমস্যা দুই রকম হলেও এ বিয়েতেই আমাদের সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে । রিমি মোটামুটি মাস ছয়েকের ভেতরেই আমেরিকা চলে যাবে । এদিকে আমারও মনে হয় ছোট চাচা ছয় মাসের আগেই তার মেয়েকে বিয়ে দিয়ে দিবে । একেবারে চমৎকার ভাবে সব কিছু মিলে যাচ্ছে ।
আমরা বিয়ে করতে রাজি হলাম ।
বিয়ে বলতে কিছুই না । রিমি বেশ চমৎকার ভাবে বউ সাজল । আমি শেরওয়ানি পরলাম। এরপর দুজন বেশ কিছু ছবি তুললাম।
এই তো বিয়ে শেষ ।
বাসায় যখন আমি জানালাম যে আমি বিয়ে করেছি আব্বা রাগে ফেটে পড়লেন । আমার মুখ তিনি আর দেখবেন না এটা তিনি পরিস্কার ভাবে আমাকে জানিয়ে দিলেন । অবশ্য মায়ের রিএকশন এতো কঠিন হল না । সে রিমির সাথে কথা বলতে চাইলেন । আমি ফোনটা রিমিকে দিলাম । অবশ্য আমি শুনলাম না রিমিকে তিনি কী বললেন । আপাতত একটা দিক সামলানো গেছে । এবারর রিমির পরিবারকে আমাদের ব্যাপারে জানানোর পালা ।
অবশ্য রিমি এতো ঝামেলা করল না । সে কেবল তার ফেসবুকের প্রোফাইল পিকচার বদল করল । আমার সাথে তোলা বিয়ের একটা ছবি পোস্ট করল সেখানে । সে জানে সবাই এটা দেখে যা বোঝার বুঝে যাবে।
আমি অবশ্য আমিও ডিপি বদল করলাম না । আমি তো আর দেশের বাইরে যাব না । আর একেবারে বিয়ে না কোন ইচ্ছে নেই । আমার কেবল আমার কাজিনকে বিয়ে করার কোন ইচ্ছে নেই । আশা করি কদিন পরে আমার পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করলে বাবা মা আর রাগ করে থাকবে না । অবশ্য মা সম্ভবত একটু মনে কষ্ট পেলেও রাগ করে নি । রিমির সাথে দেখলাম অনেক সময়ই কথা বলল ।
রিমির বাবার সাথে আমার দেখা হল ঠিক দুইদিন পরে । আমাদের সে অফিসের রুফটপ রেস্টুরেন্টে । রিমি ফোন পেয়ে আমি সেখানে হাজির হলাম । দেখলাম সেই একই জায়গাতে রিমি বসে রয়েছে । তবে আজকে রিমির পাশে এক মাঝ বয়সী ভদ্রলোক বসে আছেন গম্ভীর মুখে । আমি যেতেই আমাকে আপদমস্তক দেখলেন একবার। তবে কেন জানি না, আমার মনে হল যে আমাকে তার খুব একটা অপছন্দ হয় নি । অন্তত মুখ দেখে তো তাই মনে হল ।
রিমি আমার দিকে তাকিয়ে বলল, আমার বাবা !
আমি খানিকটা কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে রইলাম। রিমির বাবা মানে হচ্ছে আমার শ্বশুর ! প্রথমবারের মত দেখা । আমার তো তাকে সালাম করা উচিৎ ।
দ্বিধা দ্বন্দ্ব এক পাশে সরিয়ে রেখে আমি তাকে সালাম করলাম । দেখলাম রিমি একটু অবাকই হল আমার কান্ড দেখে তবে খুশিও হল !
রিমি বাবা আমাকে বলল, থাক থাক । এসবের দরকার নে । তা বিয়ে করবে আমাদের জানালে কী এমন ক্ষতি হত ! আমরা কি মানা করতাম ?
-না মানে বাবা, ওর পরিবার রাজি না ।
-আমাকে কেন বললি না?
-বাবা একটু তাড়াহুড়ার ভেতরে ছিলাম । নয়তো ওর বাবা ওকে ওর কাজিনের সাথে বিয়ে দিয়ে দিত । বললাম না তোমাকে !
-এই ছেলে কথা তো আগে আমাকে বলিস নি !
-বাবা তোমাকে না সব খুলে বললাম। আমি তো নিজেও কিছু জানতাম না। ওর বাবা ওকে জোর করে বিয়ে দিতে চাচ্ছিল। তখন ও আমার কাছে এসে কনফেস করল যে আমাকে পছন্দ করে । ওকে চিনতাম অনেক দিন ধরেই । আমারও যে ওকে অপছন্দ ছিল সেটাও না । ওকে শর্ত দিলাম। ও মেনেও নিল । ব্যস । আর দেরি করি নি । কারণ দেরি করলে ওর বাবা হয়তো ওকে বিয়ে দিয়েই দিত ।
রিমির বাবা আরও কিছু দ্বিধান্বিত ভাবে আমার আর রিমির দিকে তাকিয়ে রইল বটে তবে দেখলাম উনি আর কিছু বললেন না । আমি রিমির গল্প বানানো ক্ষমতা দেখে বেশ অবাক হলাম । ও এমন ভাবে গল্পটা তৈরি করেছে যে নতুন করে আমাদের কোন প্রস্তুতিই নিতে হল না । মানে যখন আমরা কোন মিথ্যা বলি সেই মিথ্যাকে ঢাকতে আরও কত যে মিথ্যা বলতে হয় সেটার কোন ঠিকানা নেই । তবে এখানে আমাদের নতুন করে আর কোন গল্প বানাতে হচ্ছে না । রিমির গল্প একেবারে খাপে খাপে মিলে গেছে আমাদের জীবনের সাথে ।
রিমি বাবা মানে আমার নকল শ্বশুর মশাই আরও কিছু সময় থাকলেন । আমার সম্পর্কে আরও নানান কথা জিজ্ঞেস করলেন তারপর যাওয়ার সময়ে আমাকে অবাক করে আমার হাতে একটা খাম ধরিয়ে দিলেন । মেয়ের জামাইয়ের সাথে প্রথম দেখা । কিছু তো দিতেই হবে ।
উনি চলে যাওয়ার পরে আমার কেন জানি খারাপ লাগল । আমার বাবা না হয় রাগ করে আমার মুখ দেখা বন্ধ করেছেন । কিন্তু এই ভদ্রলোক আমাকে মেয়ের জামাই বলে মেনেই নিয়েছেন । যখন উনি জানতে পারবেন যে এই সব কিছুই ছিল বানানো তখন উনার মনের ভাব কেমন হবে? এটা তো আমি কোন ভাবেই ভাবি নি । মেয়ের বাবাদের কাছে তাদের মেয়ের জামাই খুব গুরুত্বপূর্ণ একজন মানুষ ।
আমি খামটা রিমির দিকে বাড়িয়ে দিতেই রিমি বলল, ওটা তোমার আমাকে কেন দিচ্ছো?
-আরে তোমার বাবা তো আমাকে তার জামাই মনে করে দিয়েছে । যা আমি নই । এটা নেওয়া ঠিক হবে না মোটেই ।
-আমারও নেওয়া ঠিক হবে না । তোমার টা তোমার কাছেই রেখে দাও ।
আমি অফিসে এসে দেখলাম । এক হাজার টাকার দশটা নোট ! উপহার হিসাবে বেশ বড় একটা পরিমান । ঠিক করলাম যে এই টাকা দিয়ে ভাল কিছু কিনে রিমিকে উপহার দিব । যতই সে আমার নলক বউ হোক, বউ তো !
এদিকে মায়ের সাথে আমার নিয়মিত যোগাযোগ হত সেটা খানিকটা কমে এল । আমি প্রথমে ভেবেছিলাম যে মাও হয়তো বাবার মত আমার সাথে রাগ করেছে কিন্তু কয়েকদিন পরে আমি আবিস্কার করলাম যে মা এখন থেকে আমাকে ফোন না দিয়ে নিয়মিত রিমিকে ফোন দেয়। তার সাথে তার নানান ব্যাপার নিয়ে কথা হয় । আমি এটা জানার পরে বেশ অবাকই হলাম । আর রিমিও যে মায়ের সাথে একটা ভাল সম্পর্কে গড়ে তুলেছে এটা আমাকে একটু বিস্মিত করল।
দেখতে দেখতে রিমির বাইরে যাওয়ার দিন ঘনিয়ে এল । তবে রিমি যাওয়া হল না ।
সেদিন আমি রিমিকে নিয়ে শপিংএ গিয়েছি। ইদানীং মাঝে মাঝেই আমি অফিসের পরে ওকে নিয়ে বের হই । ওর নানান জিনিস পত্র কিনতে হয় । আর মাত্র দুই সপ্তাহ পরেই ও চলে যাবে । সেদিনও গিয়েছি । মার্কেটে ঘুরছি এমন সময় দেখলাম রিমির ফোনে ফোন এসে হাজির । ফোন রিসিভ করতেই করার কিছু সময়ের ভেতরেই দেখলাম ওর মুখের ভাব বদলে গেল । ফোন রেখে বলল, আমার সাথে একটু আস প্লিজ ।
-কী হয়েছে ?
-বাবাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে । হঠাৎ করে নাকি শরীর খারাপ করেছে।
আমরা দুজন হাসপালে ছুটলাম । সেখানেই রাত কেটে গেল বলা যায় । মধ্য রাতে রিপোর্ট এল । রিমির বাবার হার্টের অবস্থা মোটেও ভাল নয় । খুবই দ্রুত অপারেশন করতে হবে । এবং একটা বড় পরিমান অর্থ খরচ হবে । প্রায় বিশ লক্ষ টাকা !
আমাদের কয়েকটা দিন দৌড়াদৌড়ি হল খুব । আমার থাকার কথা ছিল না । রিমি আমাকে বারবার করে বলল যে আমাকে এতো কষ্ট করতে হবে না তবে আমি সেসব কানে নিলাম না । যদিও আমি নকল জামাই তারপরেও নকল শ্বশুরের সেবায় কমতি করলাম না। তবে টাকার ব্যাপারটা একটু সমস্যা সৃষ্টি করল । মধ্যবিত্ত পরিবার গুলোর জন্য এক মোটে বিশ লক্ষ টাকা বের করাটা একটু কঠিনই বটে । রিমিদের কিছু জায়গা সম্পত্তি ছিল গ্রামে । ঠিক হল সেগুলোর কিছুটা বিক্রি করে দেওয়া হবে । সেই জন্য আমরা রিমির গ্রামে গেলাম । রিমি অবশ্য একা যেতে চাইছিল কিন্তু ওর বাবা আমাকে আলাদা ভাবে যেতে বলল ।
তবে গ্রামে গিয়ে আমাদের খুব একটা সুবিধা হল না । সুযোগ পেলে যা হয় । জমির যা দাম সেই দাম কেউই দিতে চাইল না । আর কোন পথ না পেয়ে সেই কম দামেই যখন আমরা জমি বিক্রির কথা ভাবছি তখনই রিমির মা আমাদের ঢাকাতে ফিরে যেতে বললেন । আমাকে অবাক করে দিয়ে জানালেন যে টাকার ব্যবস্থা হয়ে গেছে। কিভাবে হল সেটা অবশ্য বললেন না । কেবল বললেন যেন আমরা ঢাকাতে ফিরে আসি । আমরা এলেই অপারেশন শুরু হবে !
পরদিন যখন ঢাকাতে গিয়ে হাজির হলাম আমি এবং রিমি দুজনেই তীব্র বিস্ময় নিয়ে দেখতে পেলাম যে আমার বাবা আর মা সেখানে হাজির হয়েছেন। মা জানাল যে ছোট চাচার সাথে মিট মাট হওয়াতে বেশ কিছু জমি হাতে এসেছিল । সেগুলো কয়েকটা বাবা বিক্রি করে দিয়েছিলেন । কারণ গ্রামে থাকলে আবার না জানি হাছাড়া হয়ে যায় । সেই টাকা ছিল ব্যাংকে । সেই টাকা থেকেই শ্বশুর মশাইয়ের চিকিৎসার জন্য টাকার ব্যবস্থা হল ।
রিমি তো কিছুতেই এই টাকা নিবে না । কিন্তু আমার বাবার এক ধমকেই চুপ করে গেলেন । বাবা অবশ্য সব সময়ই একই রাগী একটু । আর কেউ না জানুক আমি তো জানি যে রিমি কেন টাকা নিতে চাইছে না । কিন্তু রিমির কোন আপত্তি চলল না । ঐদিন সন্ধ্যা বেলা রিমির বাবাকে অপারেশন থিয়েটারে ঢোকানো হল। তার আগে রিমির বাবার আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, আমার যদি কিছু হয়ে যায় রিমিকে দেখে রেখো বাবা !
আমার মনের ভেতরে একটা তীব্র অপরাধবোধ জন্মালো । এই মানুষটা যখন সত্যিটা জানবে তখন তার মনের ভাব কেমন হবে?
আমার বাবার মনের ভাবটাই বা কেমন হবে?
আমি রিমির দিকে তাকিয়ে দেখি সেও আমার দিকে তাকিয়ে রয়েছে অদ্ভুত এক চোখে । সেও হয়তো বুঝতে পারে নি অসবস্থাটা এমন ভাবে এই দিকে চলে আসবে।
অপরাশেষ শেষ করে ডাক্তার জানাল যে সব কিছু ঠিক আছে। তবে ৪৮ ঘন্টা না গেলে কিছু বলা যাচ্ছে না । রাত অনেক হয়েছিল রিমি আমার বাবা আর মা ওর মায়ের সাথে ওদের বাসায় পাঠিয়ে দিল । আমাকেও চলে যেতে বলল বটে বাবা অবশ্য আরেকটা ধমক লাগালেন । বললেন আমি আর রিমি এখানেই থাকুক । সকালে ওনারা আসবেন।
আইসিইউর বাইরে আমি রিমি বসে রইলাম । এক সময়ে রিমি আমার একেবারে কাছে এসে বসল। তখন পুরো করিডরে আর কেউ নেই । পুরো হাসপাতালটা যেন একেবারে নিরব হয়ে গেছে । রিমি আমাকে কিছু বলতে চাইছে কিন্তু বলতে পারছে না । আমি ওর হাত ধরলাম । দেখলাম হঠাৎ করেই হুহু করে কেঁদে উঠল । এতোটা সময় ও নিজেকে শক্ত করে ধরে রেখেছিল । আমি বলল, তোমার বাবার কিছুই হবে না । কোন চিন্তা নেই ।
নিজেকে কিছুটা সামলে নিয়ে রিমি বলল, আমি কখন বুঝতে পারি নি যে বাবাকে এতো ভালবাসি । বাবাকে ছেড়ে কিভাবে চলে যাচ্ছিলাম ! কিভাবে পারলাম আমি ! এতো খারাপ আমি ! দেখো তোমাকেও ব্যবহার করলাম নিজের স্বার্থে ।
আমি বললাম, আমিও তো একই কাজ করেছি । এখানে কেউ কাউকে ব্যবহার করে নি ।
-তবুও ! আর দেখ তোমার বাবা কতটা নিঃশ্বাস স্বার্থ ভাবে এতো গুলো টাকা দিয়ে দিলেন । একবার ভাবলেনও না । অথচ আমরাই তাদের সাথে কী বিশ্বাস ভঙ্গের কাজ করেছি । নিজেকে এতোটা ছোট আর কখনই আমার মনে হয় নি । এতোটা খারাপ আমি !
আমি তখনও রিমির হাত ধরেই রেখেছি । আমি বললাম, কাল সকালে আমরা সবার আগে কাজী অফিসে যাব। যেটা একটা মিথ্যে দিয়ে শুরু হয়েছিল সেটা সত্যি করব ।
রিমি যেন এই কথাটাই আমার মুখ থেকে শুনতে চাচ্ছিল । আমি বললাম, তোমারবাবা যখন বললেন যে আমার মেয়েকে দেখে রেখ আমি …… আমার মনের ভেতরে যে কী হচ্ছিল সেটা আমি তোমাকে বলে বোঝাতে পারব না । তখনই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে তোমাকে সত্যি সত্যিই বিয়ে করব ।
রিমি আমার কাধে মাথা রাখল । আমি তখনও ওর হাত ধরেই রেখেছি।
সকালে যখন বাবা-মা রা আসল তখন তাদের রেখে আমি রিমিকে নিয়ে ছুটলাম কাজী অফিসে । আগে নকল বউজামাই থেকে আসল বউ জামাই হই । রিমির বাবার জ্ঞান ফেরার আগেই এটা করতে হবে । যাতে পরের বার যখন তাদের মুখোমুখি হই আমাদের ভেতরে যেন কোন অপরাধবোধ না থাকে ।
রিমির অবশ্য সেই সময়ই যাওয়া হল না । শ্বশুর মশাই…… হ্যা এখন নকল শ্বশুর নন আসল শ্বশুরই । রিমি জানাল যে এই সেমিস্টার থেকে নয়, পরের সেমিস্টারেই সে যাবে । তবে আগে যেমন ইচ্ছে ছিল পড়ালেখা শেষ করে ওখানেই থেকে যাবে এখন সেটা নয় । পড়া শেষ করে সোজা বাবা মায়ের কাছে ফিরে আসবে । আর এখন কেবল তো বাবা মা নয় আরও একজন আছে যার কাছে রিমিকে ফিরে আসতেই হবে ।
জ্বী ঠিকই ধরেছেন, আমার কাছে তাকে তো ফিরে আসতেই হবে ! তাই না ?