নকল বউ

4.6
(35)

-তোমাকে খানিকটা বিরক্ত মনে হচ্ছে?
আমি বুশরার দিকে ফিরে তাকালাম । আজকে সকাল থেকেই কাজের বেশ চাপ । তবে আমার মেজাজ আসলে এই কারণে খারাপ না । মেজাজ খারাপের কারণ ভিন্ন।
আমি ওর দিকে তাকিয়ে বলল, দেখছ না কাজের কত চাপ !
বুশরা বলল, সেটা তো সব সময়ই থাকে । বিশেষ করে বছরের এই সময়ে। তোমাকে তো কখনও এমন বিরক্ত মনে হয় নি । কিছু কি হয়েছে?
আমি হাতের ফাইলটা বন্ধ করে বুশরার দিকে তাকালাম। বুশরার চোখে যে ব্যাপারটা ধরা পড়বে সেটা জেনে একটু অবাকই হলাম । অবশ্য অনেক দিন এক সাথে চাকরি করার সুবাদে এই ব্যাপারগুলো ধরা পড়াটা স্বাভাবিক ব্যাপার। আমি বললাম, লম্বা কাহিনী !
বুশরা একটু হাসল । তারপর এদিক ওদিক তাকিয়ে বলল, চল অফিস বাঙ্ক মারি !
-কী বল ! নাইম ভাই জানতে পারলে খবর আছে !
-আরে কোন খবর নেই । ব্যবস্থা আছে । আমার একটা সাইট ভিজিটে যাওয়ার কথা । আমি কাজটা কালই করে রেখেছি । আজকে অফিস থেকে আগে আগে বের হব বলে । তোমাকে সাথে করে নিয়ে যাই। যাবে?
এমন সুযোগ তো হাত ছাড়া করার উপায় নেই । আমি এক বাক্যে রাজি হয়ে গেলাম সাথে সাথেই ।
-তবে একটা শর্ত আছে!
-কী শর্ত ?
-লাঞ্চ করাতে হবে কিন্তু !
আমি হাসি কেবল ।

আমরা বসুন্ধরাতে এসে হাজির হলাম । বুশরার কী মনে হল মাঝ পথেই সে ঠিক করল যে আজকে সে মুভি দেখবে । আমার অবশ্য কোন কিছুতেই আপত্তি নেই । আমিও রাজি হয়ে গেলাম । খেয়াল করে দেখলাম যে মনের বিরক্তি ভাবটা ধীরে ধীরে কমতে শুরু করেছে।
লাঞ্চের অর্ডার দিয়ে অপেক্ষা করতে থাকলাম । ওরা জানাল যে মিনিট বিশেক দেরি হবে ।
-এবার বল দেখি সমস্যা কী?
-সমস্যা আসলে …
একটু থামলাম। ব্যাপারটা কিভাবে বলব আর কতটুকু বলব সেটা নিজের মনেই গুছিয়ে নিলাম । তারপর বললাম, আমার বাবারা দুই ভাই । আমার বাবা বড় । আমার বাবা শহরে আমার ছোট চাচা গ্রামে থাকে । সাধারনত ব্যাপারটা উল্টো হয় । বড় ছেলেরা গ্রামে থাকে আর ছোটরা পড়ালেখা করে শহরে চলে আসে । তবে আমার বাবা চাচার বেলাতে তেমন হয় নি । আমার বাবার পড়ালেখার প্রতি আগ্রহ ছিল । আর ছোট চাচার সেসবের দিকে মন ছিল কম ।
যাই হোক, তেমন ভাবেই হয়ে এসেছে । পড়াশোনা করে শহরে চাকরি শুরু করেন । বিয়ে করেন । অন্য দিকে ছোট চাচা ছিলেন গ্রামেই । সেখানেই বিয়ে করে সংসার পেতেছেন । সমস্যাটা হচ্ছে দাদার মৃত্যুর পরে ছোট চাচার সাথে বাবার জমিজমা নিয়ে একটু ঝামেলা হয় । যেমন টা সব পরিবারেই হয় ! এটার কারণে আমাদের গ্রামে যাওয়া হতই না বললে চলে । কিন্তু সম্প্রতি আমার বাবা আর চাচার ভেতরে আবার সম্পর্ক ভাল হয়ে গেছে ।
আমার চাচার শরীরে কদিন ধরে কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছে । তার মনে মৃত্যু ভয় এসে জড় হয়েছে । সে যে জমিজমার নিয়ে ঝামেলা করছিল সেগুলো সব বাবাকে ফেরত দিতে চায় । এটা নিয়ে দুই ভাইয়ের ভেতরে সব মিটমাট হয়ে গেছে । বা মিটমাটের পথে !
বুশরা একটা কোকের বোতল নিয়ে বসেছিল । সেটা থেকে একটা ছিপ নিয়ে খুব স্বাভাবিক ভাবে সে আমার দিকে বাড়িয়ে দিল । তারপর বলল, এতে সমস্যার কী আছে । সব কিছু তো ভাল হচ্ছে !এতে বিরক্ত কেন?
আমি বললাম, বিরক্তির কারণ হচ্ছে, ঐ যে বললাম না যে আমার চাচার মৃত্যু ভয় এসে জড় হয়েছে ।
-হ্যা !
-তাই এখন অনার মেয়ে ভবিষ্যৎ নিয়ে উনি খানিকটা চিন্তিত । ওনার কিছু হয়ে গেলে তার মেয়ের কী হবে কে তাকে দেখে রাখবে ! এটা নিয়ে চিন্তিত সে । এবং এটা নিয়ে আমার বাবাও চিন্তিত !
-এটাই তো স্বাভাবিক ! বাবারা তো চিন্তিত হবেই তার মেয়েদেরকে নিয়ে । কিন্তু আমি যেটা বুঝতে পারছি না সেটা হচ্ছে তুমি কেন …
বুশরা লাইনটা শেষ করল না । আমার চোখের দিকে কিছু সময় তাকিয়ে রইল । সম্ভবত সে বুঝতে পেরেছে আমার বিরক্তির কারণ । আমি বললাম আশা করি বুঝতে পেরেছ !
-বুঝলাম ! তা তুমি রাজি না কেন ? তোমার ঐ কাজিন কি দেখতে সুন্দর না?
-বিশ্বসুন্দরী না হলেও দেখতে খারাপ না ।
-তাহলে সমস্যা কী?
-বিয়ের সময় কি কেবল মানুষ সুন্দরীই দেখে?
-তোমরা মানে ছেলেরা তো তাই দেখে । সুন্দর হলেই চলে ! আর কিছু লাগে না!
আমি বললাম, জ্বী না । সবাই এমনটা দেখে না । আমি আমার ঐ কাজিনকে বিয়ে করতে চাই না । ওকে আমি দুই চোখে দেখতে পারি না । ছোট বেলা মানে বাবা চাচার ভেতরে সম্পর্ক ভাল ছিল তখন থেকেই দেখে এসেছি খুবই কুটিল বুদ্ধিওয়ালা মেয়ে । ঠিক আমার ছোট চাচীর মত। আমি ওকে কোন ভাবেই বিয়ে করতে চাই না । কিন্তু এই ব্যাপারটা আমার বাবা কিছুতেই বুঝতে পারছে না । তার এক কথা। তার ভাইয়ের দুঃসময়ে তার পাশে দাড়াতে হবে । আমাকে তার মেয়েকে বিয়ে করতেই হবে ! এটা না করলে আমি নাকি তার অবাধ্য সন্তান । এতোদিন তারা আমার জন্য যা করে তাতে আমার নাকি এই বিয়ে করা দায়িত্ব ! এই ভাবে চলছে ব্লাকমেইলিং !
বুশরা একটু হাসল । তারপর বলল, আহা! ব্লাকমেইলিং বাজে শব্দ !
-মোটেই বাজে শব্দ না। এখানে এর থেকে পার্ফেক্ট শব্দ আর হয় না ।
আরও কিছু বলতে যাচ্ছিলাম তবে দেখলাম আমাদের খাবারের ডাক চলে এল । আমি উঠে গিয়ে খাবার নিয়ে এলাম । খাওয়ার এক পর্যায়ে বুশরা বলল, তো কী করবে ভেবেছ ? বিয়ে করে ফেলবে?
-জ্বী না । আমি আর এক দুই দিনের ভেতরেই পালাব । অফিসে লম্বা ছুটির একটা এপ্লিকেশন দিয়েছি । যদি মঞ্জুর করে তো ভাল নয়তো চাকরি ছেড়ে দিব । তারপর যতদিন না আমার ঐ কাজিনের বিয়ে না হয় ততদিন একেবারে গুম হয়ে যাব। কারো সাথে কোন যোগাযোগ রাখব না ।
বুশরা আমার চোখের দিকে তাকিয়ে রইল কিছু সময় । যেন বোঝার চেষ্টা করছে যে আমি সত্যিই সিরিয়াস কিনা ! আমার দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারল যে ব্যাপারটা নিয়ে আমি একটু সিরিয়াসই । কিছু সময় বুশরা কী যেন ভাবল। তারপর বলল, আরও একটা সমাধান আছে ।
-কী সমাধান ? যদি ভেবে থাক যে আমি আবার বাবাকে বোঝাতে পারব তাহলে সেটা ভুল ভেবেছ । আবার বাবাকে কেউ বোঝাতে পারবে না কিছু । সে একবার যা কিছু ভাববে সেটার আর কোন পরিবর্তন হবে না ।
-আমি অন্য কিছু বলছি ! অন্য কিছু করলে যাতে বিয়ের কথা আর মুখে না আনে !
-কী এমন করব যে তারা বিয়ের কথা আর মুখে আনবে না !
-একটা বিয়ে করে ফেলুন !
-মানে ! বিয়ে করব ? কাকে?
-যে কাউকে ! বিয়ে করে ফেলুন ।
-আরে মাথা খারাপ নাকি ! এখন আমি এই ইনস্ট্যান্ট বউ পাব কোথায়?
বুশরা এবার বলল, সত্যি বউ যে হতে হবে এমনও না । কেবল এমন কাউকে খুজে বের কর যে আপনার নকল বউ হতে রাজি হবে । তার সাথে একটা ছবি তোল । বাসার পাঠিয়ে বল যে এটা তোমার বউ ।
-বাসায় যখন বিয়ের প্রমান চাইবে তখন?
-নকল কাবিন নামা তৈরি করা কী কোন ব্যাপার বল? তাদের জাস্ট বিশ্বাস করাও যে তুমি বিয়ে করেছ ।
আমি আইডিয়াটা বাতিলই করে দিচ্ছিলাম তখনই মনে হল এটা মোটেই খারাপ কোন আইডিয়া না। অন্ততঃ আমি যে নিজ থেকে গুম হয়ে যাওয়ার কথা ভাবছিলাম, সেটার থেকে এটা ভাল আইডিয়া । কিন্তু সমস্যা হচ্ছে এই নকল বউ আমি পাব কোথায়?

পরের পর্ব

ফেসবুকের অর্গানিক রিচ কমে যাওয়ার কারনে অনেক পোস্ট সবার হোম পেইজে যাচ্ছে না। সরাসরি গল্পের লিংক পেতে আমার হোয়াটসএপ বা টেলিগ্রামে যুক্ত হতে পারেন। এছাড়া যাদের এসব নেই তারা ফেসবুক ব্রডকাস্ট চ্যানেলেও জয়েন হতে পারেন।

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 4.6 / 5. Vote count: 35

No votes so far! Be the first to rate this post.

About অপু তানভীর

আমি অতি ভাল একজন ছেলে।

View all posts by অপু তানভীর →