নকল বউ

4.6
(31)

-আপনাকে খানিকটা বিরক্ত মনে হচ্ছে?
আমি বুশরার দিকে ফিরে তাকালাম । আজকে সকাল থেকেই কাজের বেশ চাপ । তবে আমার মেজাজ আসলে এই কারণে খারাপ না । মেজাজ খারাপের কারণ ভিন্ন।
আমি ওর দিকে তাকিয়ে বলল, দেখছেন না কাজের কত চাপ !
বুশরা বলল, সেটা তো সব সময়ই থাকে । বিশেষ করে বছরের এই সময়ে। আপনাকে তো কখনও এমন বিরক্ত মনে হয় নি । কিছু কি হয়েছে?
আমি হাতের ফাইলটা বন্ধ করে বুশরার দিকে তাকালাম। বুশরার চোখে যে ব্যাপারটা ধরা পড়বে সেটা জেনে একটু অবাকই হলাম । অবশ্য অনেক দিন এক সাথে চাকরি করার সুবাদে এই ব্যাপারগুলো ধরা পড়াটা স্বাভাবিক ব্যাপার। আমি বললাম, লম্বা কাহিনী !
বুশরা একটু হাসল । তারপর এদিক ওদিক তাকিয়ে বলল, চলেন অফিস বাঙ্ক মারি !
-কী বলেন ! নাইম ভাই জানতে পারলে খবর আছে !
-আরে কোন খবর নেই । ব্যবস্থা আছে । আমার একটা সাইট ভিজিটে যাওয়ার কথা । আমি কাজটা কালই করে রেখেছি । আজকে অফিস থেকে আগে আগে বের হব বলে । আপনাকে সাথে করে নিয়ে যাই। যাবেন?
এমন সুযোগ তো হাত ছাড়া করার উপায় নেই । আমি এক বাক্যে রাজি হয়ে গেলাম সাথে সাথেই ।
-তবে একটা শর্ত আছে!
-কী শর্ত ?
-লাঞ্চ করাতে হবে কিন্তু !
আমি হাসি কেবল ।

আমরা বসুন্ধরাতে এসে হাজির হলাম । বুশরার কী মনে হল মাঝ পথেই সে ঠিক করল যে আজকে সে মুভি দেখবে । আমার অবশ্য কোন কিছুতেই আপত্তি নেই । আমিও রাজি হয়ে গেলাম । খেয়াল করে দেখলাম যে মনের বিরক্তি ভাবটা ধীরে ধীরে কমতে শুরু করেছে। বুশরার সাথে থাকলে অবশ্য এমনই হয় প্রতিবার । এটা আমি নিজেও খেয়াল করেছি আগেও ।
লাঞ্চের অর্ডার দিয়ে অপেক্ষা করতে থাকলাম । ওরা জানাল যে মিনিট বিশেক দেরি হবে ।
-এবার বলুন দেখি সমস্যা কী?
-সমস্যা আসলে …
একটু থামলাম। ব্যাপারটা কিভাবে বলব আর কতটুকু বলব সেটা নিজের মনেই গুছিয়ে নিলাম । তারপর বললাম, আমার বাবারা দুই ভাই । আমার বাবা বড় । আমার বাবা শহরে আমার ছোট চাচা গ্রামে থাকে । সাধারনত ব্যাপারটা উল্টো হয় । বড় ছেলেরা গ্রামে থাকে আর ছোটরা পড়ালেখা করে শহরে চলে আসে । তবে আমার বাবা চাচার বেলাতে তেমন হয় নি । আমার বাবার পড়ালেখার প্রতি আগ্রহ ছিল । আর ছোট চাচার সেসবের দিকে মন ছিল কম ।
যাই হোক, তেমন ভাবেই হয়ে এসেছে । পড়াশোনা করে শহরে চাকরি শুরু করেন । বিয়ে করেন । অন্য দিকে ছোট চাচা ছিলেন গ্রামেই । সেখানেই বিয়ে করে সংসার পেতেছেন । সমস্যাটা হচ্ছে দাদার মৃত্যুর পরে ছোট চাচার সাথে বাবার জমিজমা নিয়ে একটু ঝামেলা হয় । যেমন টা সব পরিবারেই হয় ! এটার কারণে আমাদের গ্রামে যাওয়া হতই না বললে চলে । কিন্তু সম্প্রতি আমার বাবা আর চাচার ভেতরে আবার সম্পর্ক ভাল হয়ে গেছে ।
আমার চাচার শরীরে কদিন ধরে কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছে । তার মনে মৃত্যু ভয় এসে জড় হয়েছে । সে যে জমিজমার নিয়ে ঝামেলা করছিল সেগুলো সব বাবাকে ফেরত দিতে চায় । এটা নিয়ে দুই ভাইয়ের ভেতরে সব মিটমাট হয়ে গেছে । বা মিটমাটের পথে !
বুশরা একটা কোকের বোতল নিয়ে বসেছিল । সেটা থেকে একটা ছিপ নিয়ে খুব স্বাভাবিক ভাবে সে আমার দিকে বাড়িয়ে দিল । তারপর বলল, এতে সমস্যার কী আছে । সব কিছু তো ভাল হচ্ছে ! আপনি এতে বিরক্ত কেন?
আমি বললাম, বিরক্তির কারণ হচ্ছে, ঐ যে বললাম না যে আমার চাচার মৃত্যু ভয় এসে জড় হয়েছে ।
-হ্যা !
-তাই এখন অনার মেয়ে ভবিষ্যৎ নিয়ে উনি খানিকটা চিন্তিত । ওনার কিছু হয়ে গেলে তার মেয়ের কী হবে কে তাকে দেখে রাখবে ! এটা নিয়ে চিন্তিত সে । এবং এটা নিয়ে আমার বাবাও চিন্তিত !
-এটাই তো স্বাভাবিক ! বাবারা তো চিন্তিত হবেই তার মেয়েদেরকে নিয়ে । কিন্তু আমি যেটা বুঝতে পারছি না সেটা হচ্ছে আপনি কেন …
বুশরা লাইনটা শেষ করল না । আমার চোখের দিকে কিছু সময় তাকিয়ে রইল । সম্ভবত সে বুঝতে পেরেছে আমার বিরক্তির কারণ । আমি বললাম আশা করি বুঝতে পেরেছেন !
-জ্বী ! তা আপনি রাজি না কেন ? আপনার ঐ কাজিন কি দেখতে সুন্দর না?
-বিশ্বসুন্দরী না হলেও দেখতে খারাপ না ।
-তাহলে সমস্যা কী?
-বিয়ের সময় কি কেবল মানুষ সুন্দরীই দেখে?
-আপনারা মানে ছেলেরা তো তাই দেখে । সুন্দর হলেই চলে ! আর কিছু লাগে না!
আমি বললাম, জ্বী না । সবাই এমনটা দেখে না । আমি আমার ঐ কাজিনকে বিয়ে করতে চাই না । ওকে আমি দুই চোখে দেখতে পারি না । ছোট বেলা মানে বাবা চাচার ভেতরে সম্পর্ক ভাল ছিল তখন থেকেই দেখে এসেছি খুবই কুটিল বুদ্ধিওয়ালা মেয়ে । ঠিক আমার ছোট চাচীর মত। আমি ওকে কোন ভাবেই বিয়ে করতে চাই না । কিন্তু এই ব্যাপারটা আমার বাবা কিছুতেই বুঝতে পারছে না । তার এক কথা। তার ভাইয়ের দুঃসময়ে তার পাশে দাড়াতে হবে । আমাকে তার মেয়েকে বিয়ে করতেই হবে ! এটা না করলে আমি নাকি তার অবাধ্য সন্তান । এতোদিন তারা আমার জন্য যা করে তাতে আমার নাকি এই বিয়ে করা দায়িত্ব ! এই ভাবে চলছে ব্লাকমেইলিং !
বুশরা একটু হাসল । তারপর বলল, আহা! ব্লাকমেইলিং বাজে শব্দ !
-মোটেই বাজে শব্দ না। এখানে এর থেকে পার্ফেক্ট শব্দ আর হয় না ।
আরও কিছু বলতে যাচ্ছিলাম তবে দেখলাম আমাদের খাবারের ডাক চলে এল । আমি উঠে গিয়ে খাবার নিয়ে এলাম । খাওয়ার এক পর্যায়ে বুশরা বলল, তো কী করবেন ভেবেছেন ? বিয়ে করে ফেলবেন?
-জ্বী না । আমি আর এক দুই দিনের ভেতরেই পালাব । অফিসে লম্বা ছুটির একটা এপ্লিকেশন দিয়েছি । যদি মঞ্জুর করে তো ভাল নয়তো চাকরি ছেড়ে দিব । তারপর যতদিন না আমার ঐ কাজিনের বিয়ে না হয় ততদিন একেবারে গুম হয়ে যাব। কারো সাথে কোন যোগাযোগ রাখব না ।
বুশরা আমার চোখের দিকে তাকিয়ে রইল কিছু সময় । যেন বোঝার চেষ্টা করছে যে আমি সত্যিই সিরিয়াস কিনা ! আমার দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারল যে ব্যাপারটা নিয়ে আমি একটু সিরিয়াসই । কিছু সময় বুশরা কী যেন ভাবল। তারপর বলল, আরও একটা সমাধান আছে ।
-কী সমাধান ? আপনি যদি ভেবে থাকেন যে আমি আবার বাবাকে বোঝাতে পারব তাহলে সেটা ভুল ভেবেছেন । আবার বাবাওকে কেউ বোঝাতে পারবে না কিছু । সে একবার যা কিছু ভাববে সেটার আর কোন পরিবর্তন হবে না ।
-আমি অন্য কিছু বলছি ! অন্য কিছু করলে যাতে বিয়ের কথা আর মুখে না আনে !
-কী এমন করব যে তারা বিয়ের কথা আর মুখে আনবে না !
-একটা বিয়ে করে ফেলুন !
-মানে ! বিয়ে করব ? কাকে?
-যে কাউকে ! বিয়ে করে ফেলুন ।
-আরে মাথা খারাপ নাকি ! এখন আমি এই ইনস্ট্যান্ট বউ পাব কোথায়?
বুশরা এবার বলল, সত্যি বউ যে হতে হবে এমনও না । কেবল এমন কাউকে খুজে বের করুন যে আপনার নকল বউ হতে রাজি হবে । তার সাথে একটা ছবি তুলুন । বাসার পাঠিয়ে বলুন যে আপনার বউ ।
-বাসায় যখন বিয়ের প্রমান চাইবে তখন?
-নকল কাবিন নামা তৈরি করা কী কোন ব্যাপার বলুন? সেটা তৈরি করে ফেলুন । তাদের জাস্ট বিশ্বাস করান যে আপনি বিয়ে করেছেন ।
আমি আইডিয়াটা বাতিলই করে দিচ্ছিলাম তখনই মনে হল এটা মোটেই খারাপ কোন আইডিয়া না। অন্ততঃ আমি যে নিজ থেকে গুম হয়ে যাওয়ার কথা ভাবছিলাম, সেটার থেকে এটা ভাল আইডিয়া । কিন্তু সমস্যা হচ্ছে এই নকল বউ আমি পাব কোথায়?

চলবে….

ইদানীং ফেসবুক পেইজের রিচ কমে গেছে অনেক তাই অনেকের কাছেই গল্পের খবর পৌছাচ্ছে না । এই জন্য হোয়াটসএপ গ্রুপ বা টেলিগ্রামে জয়েন করুন সরাসরি গল্পের লিংক পেতে। লিংক পাবেন এই সাইটের একদম নিচে।

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 4.6 / 5. Vote count: 31

No votes so far! Be the first to rate this post.

About অপু তানভীর

আমি অতি ভাল একজন ছেলে।

View all posts by অপু তানভীর →