আমি চায়ের কাপটা হাতে নিয়ে বের হতে যাবো তখনই মাহিকে দেখতে পেলাম পথ আটকে দাড়িয়ে রয়েছে । মেয়েটার চোখের দিকে তাকিয়ে আমি খানিকটা যেন কেঁপে উঠলাম । এমন ঘোর লাগা চোখে মেয়েটা কেন তাকিয়ে রয়েছে আমার দিকে । পাশ কাটিয়ে বের চলে আসতে চাইলাম কিন্তু মাহি আমাকে সেটা করতে দিল না ।
মেয়েটার এতো সাহস কিভাবে হল ?
এতোদিন তো আমার সামনেই আসতো না । আজকে এভাবে পথ আটকে দাড়িয়েছে ! সমস্যা কি হল !
আমি কি করবো ঠিক বুঝতে পারলাম না । আজকে মাহি লাল রংয়ের সর্ট একটা কামিজ পরেছে । সাথে লাল লেগিংস । এই মেয়েটা প্রতিদিনই এমন পোশাক পরে আছে । আর পোশাকগুলো এমন যেন দেখলে মনে হয় এইটা কেবল ওর জন্যই বানানো হয়েছে । এমন কেন মনে হয় আমার ! নিজেকে ধরে রাখতে কষ্ট হয় বেশ । এই মেয়েটা কি বুঝে না সেইটা !
-কিছু বলবে?
-হ্যা ।
এই প্রথম আমি মাহির সাথে কথা বললাম । দুটো মাত্র শব্দ । অনুভব করলাম যে আমার বুকের মাঝে এরই মধ্যে কেমন যেন ড্রিমড্রাম করা শুরু করে দিয়েছে । মেয়েটার মাঝে যে কী আছে আমি সত্যিই কোন দিন বুঝতে পারলাম না । তবে যাই থাকুক না কেন সেটা আমাকে একটু বেশি বিচলিত করে তোলে । আমার জীবনে কোন মেয়ে আমাকে এতোটা বিচলিত করে তুলতে পারে নি । কিন্তু এই মেয়েটা পেরেছে ।
স্কুল কলেজ আর বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবনে আমি কখনই কোন মেয়ের প্রতি আকৃষ্ট হইনি । মেয়েদের সাথে বন্ধুত্ব হয়েছে অনেক কিন্তু কোন মেয়েকে ভালোবাসার চোখে আমি দেখি নি কোন দিন । দেখতে পারিনি । আমার ভেতর থেকে সেই অনুভূতিটাই কোন দিন আসে নি। কেন আসে নি সেটা আমি জানি না । কয়েকবার আমি চেষ্টাও করেছি কিন্তু পারি নি আগ্রহ আনতে । একটা সময়ে আমার নিজের প্রতি কেমন যেন সন্দেহ হতে শুরু করে । বারবার মনে হয়েছে যে আমি স্বাভাবিক তো ! মানে, এই যে মেয়েদের ভাল লাগছে না । তাহলে কি?
ভাবনাটা আসতেই নিজের গা গুলিয়ে উঠতো ! জোর করে চিন্তাটা দুর করে দিতাম ।
তারপর মাহির সাথে দেখা হল । আমাদের অফিসেই মেয়েটা জয়েন করলো । প্রথম দিনের কথা আমার পরিস্কার মনে আছে । মাহি সেদিন সাদা রংয়ের একটা থ্রিপিচ পরেছিল । সেলোয়ারের বদলে ছিল সাদা লেগিংস আর সাদা ওড়না । কপালে একটা কালো টিপ । ঠোঁটে হালকা রংয়ের লিপস্টিপ । আমি কেবল অনুভব করলাম যে আমার বুকের ভেতরটা কেমন যেন করছে । একটু একটু কাঁপছে । সেই কাঁপাকাঁপি আস্তে আস্তে বাড়তেই লাগলো ।
যতই দিন যেতে লাগলো তত বেশি । একটা সময়ে অনুভব করলাম যে মাহির প্রতি তীব্র আকর্ষণ অনুভব করছি । এবং এই আকর্ষণ খুব ভাল আকর্ষণ না । ঘুরে ফিরে ওর ঠোঁটে চুমু খাওয়া, সেই সাথে ওর সাথে … । বুঝতে পারছিলাম না ওর প্রতি এমন তীব্র আকর্ষণ সৃষ্টির কারণ কি ? কিন্তু সেটা দিনকে দিন এতো তীব্র ভাবে বাড়ছিলো যে আমার মনে হল যে হয়তো আমি নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলবো । একটা সময়ে আমি ওকে এড়িয়ে চলতে শুরু করলাম।
মেয়েদের চোখে সব কিছুই ধরা পড়ে । কেউ পছন্দ করলে যেমন মেয়েরা টের পেয়ে যায় ঠিক তেমনি কেউ এড়িয়ে চললেও মেয়েরা সেটা বুঝতে পারে । তারপর থেকে মাহি যেদিকে যেত আমি সেদিকে যেতাম না । ওর চোখের সামনেই পড়তাম না । আরও ভাল করে বললে নিজের চোখের সামনে মাহিকে পড়তে দিতাম না । চোখের আড়াল হলে মনের আড়াল বলে একটা কথা আছে । খুব কাজ না হলেও একটু কাজ হল ।
কিন্তু আজকে এই মেয়ে আবার আমার চোখের সামনে এসে হাজির কেন হল ! এতো দিনের নিয়ন্ত্রণের দেয়াল বুঝি ভেঙ্গে গুড়িয়ে গেল ।
আমি আবারও মাহির দিকে তাকিয়ে বলল, কী বলবে?
-এখানে না । ছাদে আসো !
এই বলে মেয়েটা আমার হাত ধরলো। তারপর এক প্রকার টেনে লিফটের ভেতরে নিয়ে গেল । ভাগ্য ভাল কেউ দেখলো না । ছোট্ট কিচেনের পাশেই লিফট । লিফট একেবারে টপ ফ্লোরে থামলো । ছাদটা স্মোকিং জোন হিসাবে ব্যবহৃত হয়। তবে লাঞ্চ আওয়ার শেষ হয়েছে একটু আগে তাই এখন কেউ নেই এখানে ।
মাহি আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলল, আমার কি অপরাধ বলবে?
-কিসের কী অপরাধ? আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না ।
মাহির চোখে এবার আমি পানি দেখতে পেলাম । সাথে সাথে বুকের ভেতরে একটা তীব্র আন্দোলন শুরু হল আমার । মনে হল যেন এতো চমৎকার চোখ এতো গভীর চোখ আমি কোন দিন দেখি নি । মাহি বলল, মানলাম আমি অন্য মেয়ের মত দেখতে সুন্দর না । গায়ের রং কালো তাই বলে এভাবে অবহেলা করতে হবে ? চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখাতে হবে ?
আমি আমতা আমতা করে বললাম, না, তুমি যা ভাবছো তা না । আসলে …।
-আসলে কি ? কি বুঝবো আমি ? আমি যেখানে যাই তুমি সেখানে যাও না, কলিগদের আড্ডায় আমি থাকলে তুমি থাকো না এমন কি আমার সামনে উঠে চলে আসো । সবার দাওয়াতে যাও, আমার টাতে যাও না । …. আমি বলছি না আমার সাথে বন্ধুত্ব করতেই হবে কিন্তু কলিগ হিসাবে এই ভাবে অপমান না করলেই কি না?
আমার মনে হল এবার মেয়েটাকে সত্য বলা দরকার । নয়তো মেয়েটা ভুল বুঝবে আমাকে । আমি মাহির হাত ধরলাম । দুটো হাতই । তারপর ওর ছলছল চোখের উপর ছোট্ট করে চুমু খেয়ে ফেললাম । কেন আর কিভাবে করলাম সেটা আমি জানি না কিন্তু বুঝতে পারলাম এটা আমার করার দরকার ছিল । হাত ধরা ছিল বলে মাহি বাঁধা দিতে পারলো না । সম্ভবত ও নিজেও অবাক হয়েছে খুব । বাঁধা দিতে ভুলে গেল । আমি বললাম, তুমি যেটা ভাবছো সেটা ঠিক না মাহি । তুমি হয়তো ভাবছো আমি তোমাকে এড়িয়ে চলছি তোমার চেহারা আামর পছন্দ না বলে কিন্তু বিশ্বাস কর এই জগতে তোমার চেহারা আমি যত পরিমান পছন্দ করি আর কারো চেহারা এতো পছন্দ করি না । তোমার ঠোঁট তোমার চোখ, এসব দেখলে আমার রাতে ঘুম আসে না । সেই প্রথম দিন থেকে । নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা মুশকিল হয়ে যায় আমার জন্য । আমার কেবল মনে হয় তোমার সাথে মিশলে আমি এক সময়ে নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলবে, হয়তো তোমার উপর হামলা করেও ফেলতে পারি ….. অথবা এমন কিছু করে ফেলতে পারি ….।
-কি করতে পারো?
-তুমি বুঝতে পারছো না আমি কি বলতে চাইছি?
আমি জানি মাহি ঠিক ঠিক বুঝতে পারছি আমি কি বলতে চাইছি । আমি বললাম, আমি কেবল তোমাকে একটা কথাই বলতে পারি যে আমার জীবনে আমি অন্য কোন মেয়ের প্রতি কোন আকর্ষণবোধ করি নি কেবল তুমি ছাড়া । এবং এটা তীব্র ভাবে মানসিক এবং শারীরিক আকর্ষণ যা পক্ষে নিয়ন্ত্রন করা মুশকিল । তাই আমি দুরে দুরে থাকার চেষ্টা করেছি । কিন্তু তুমি বুঝেছো উল্টো !
ঠিক এর পরেই ঘটলো আসল ঘটনা । মাহি অনেকটা আমার উপর ঝাপিয়ে পড়লো । কিভাবে যে মেয়েটা আমাকে চুমু খেতে লাগলো সেটা আমি ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না । যখন আমরা একটু সামলে নিয়েছি তখন খেয়লার করে দেখলাম আমাদের দুজনের কাপড় আর চুল এলেমোলে হয়ে গেছে । খোলা ছাদে এই ভাবে জড়িয়ে ধরে চুমু খাওয়া ঠিক হয় নি মোটেও । কারণ যে কেউ চলে আসতে পারতো । আর আমাদের এভাবে দেখে ফেললে মান ইজ্জত সব যেত ।
নিজেদের সামলে নিতে মিনিট পাঁচেক সময় লাগলো । কাপড় চুল ঠিক করে নিচে নামতে যাবো তখন মাহি বলল, ঠোঁট মুছে নাও।
-কি?
-লিপস্টিকের দাগ লেগে রয়েছে ।
-ও ।
হাত দিয়ে কয়েকবার মুছলাম । তবে কাজ হল না । দেখলাম মাহি নিজে টিস্যু দিয়ে মুছে দিল। ওর মুখটা লাল হয়ে আছে । তবে মুখে একটা আনন্দের ছাপও রয়েছে । নিশ্চয়ই আমার মুখেও সেই আনন্দের ছাপ রয়েছে ।
ফিরে এসে অনুভব করতে পারছিলাম যে নিজের ভেতরে একটা উত্তেজনা কাজ করছে । বারবার ঘুরে ফিরে মাহিকে চুমু খাওয়ার মুহুর্তটা আমার চোখের সামনে ভেসে উঠছে । কিছুতেই সেটা মন থেকে বের করতে পারছি না । চোখ ঘুরে ফিরে কেবল মাহিকে দেখতে চাইছে । এবং দেখলাম মাহি বেশ কয়েকবার আমার ডেস্ক ক্রস করে গেল । যাওয়ার সময়ে আমার দিকে তাকিয়ে একটু হাসলও বটে । বুঝতে পারছিলাম যে ও নিজেও এমনটাই অনুভব করছে ।
অফিস ছুটির পরে আমরা আবার দেখা করলাম বাইরে । কিছু সময় এদিক ওদিক হাটাহাটি করলাম দুজন এক সাথে । এদিক ওদিক । এক সাথে রাতের খাবার খেলাম দুজনে । বারবার মনে হচ্ছিলো এভাবে সারাটা রাত ওর সাথে থাকতে পারলে ভাল হত। সময়টা খুব বেশি ভাল যেত । এতোদিন পরে ওকে কাছে পেয়ে কিছুতেই হাত ছাড়া করতে ইচ্ছে হচ্ছিলো না ।
ওকে ওর বাসার সামনে নামিয়ে দিয়ে আমি যখন ফেরার পথ ধরতে যাবো তখন ও আমার হাত ধরলো । তারপর বলল, বাসায় যেও না ।
-মানে?
-মানে আমার বাসায় চল । আমি জানি আজকে তোমার ঘুম আসবে না আমাকে ছাড়া ! আমারও তাই ।
-তুমি নিশ্চিত?
-হ্যা ।
-তোমার বাসায় কেউ নেই ?
-আপাতত কেউ নেই । আমি একাই আছি ।
ওর ঘরে ঢুকে বেশ কিছুটা সময় আমরা গল্প করলাম । ও নিজের ঘর দেখালো । নিজের গল্পের বইয়ের তাক । রাতে আরেক দফা আমরা হালকা খাওয়া দাওয়া করলাম । তারপর রাতে ঘুমানোর সময় আমি অস্বস্তি নিয়ে তাকিয়ে রইলাম ওর দিকে । আমার মনে যে কি ইচ্ছে করছে সেটা আমি ওকে কিভাবে বুঝাবো কিন্তু আমি জানি এটা মোটেও ঠিক কাজ হবে না । এই জন্যই আমি ওর কাছ থেকে দুরে দুরে থাকতাম এতোদিন । কিন্তু এখন বুঝি সেই দুরে থাকাটা আমার পক্ষে সম্ভব না, একই ভাবে মাহির পক্ষেও সম্ভব না ।
এটা আমি বুঝতে পারলো যখন মাহি আমার সাথে রাতে ঘুমাতে এল । বিশেষ করে ওর শরীরের পোশাক দেখে আমার খাবি খাওয়ার মত অবস্থা হল । মাহির পরনে একটা পাতলা নাইটি । নাইটিটা অনেকটা গাউনের মত । ভেতরে ও কি পরেছে সেটা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে । একটা ক্রপব্রাউজ পরা আর নিচে পরা একটা টাইট থাই প্যান্ট । ওর শরীরের সব টুকু পরিস্কার বুঝতে পারছি আমি ।
মাহি একপা দুপা করে এগিয়ে এল আমার কাছে । ও কিছু বলতে যাবে তার আগেই ওকে জড়িয়ে ধরলাম শক্ত করে । তারপর ঠোঁটে চুমু খেলাম । চুমু খেল মাহিও । তবে একটা সময়ে সে নিজেকে আমার কাছ থেকে ছাড়িয়ে নিল । তারপর বলল, তোমার সামনে দুইটা পথ খোলা আছে।
-কী পথ?
-তুমি দুপুরে বললে না যে আমাকে দেখে তুমি নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারো না। কিন্তু আমি চাই আমাদের সম্পর্কটা শারীরিক থেকেও মানসিক হোক। মানে, তুমি আমাকে আগে মন থেকে ভালোবাসো। দেহ থেকে নয় । আজকে তুমি যদি আমার সাথে সেক্স করতে তাহলে আমি তোমাকে বাঁধা দিবো না । বরং তোমাকে সাহায্য করবো । কিন্তু এরপর আমাকে আর তুমি পাবে না । কিন্তু যদি নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে নাও, তাহলে পরে আমি সারা জীবন তোমার হয়ে থাকবো।
আমি কি করবো খুজে পেলাম না । মাহি আবারও আমার কাছে এল। তারপর বলল, চল ঘুমানো যাক ।
মাহি আমাকে জড়িয়েই ধরে ঘুমালো । কয়েকবার মাহিকে চুমু খেলাম । ওর ঠোঁটে ওর নাকে চোখে কিন্তু একেবারে শেষ মুহুর্তে গিয়ে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে নিলাম । বারবার কেবল মনে হতে লাগলো এই মেয়েটাকে আমার কেবল একদিনের জন্য না, সারা জীবনের জন্য চাই । এই ঠোঁট এই মুখ চোখ সব কিছু । ভেবেছিলাম হয়তো শেষ পর্যন্ত নিজেকে নিয়ন্ত্রন করতে পারবো না তবে শেষ কক্ষা হয়ে গেল । বিশেষ করে ওর ঠোঁটে চুমুটা বেশ কাজে দিল ।
সকাল বেলা যখন ঘুম ভাঙ্গলো দেখি তখনও আমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে রয়েছে । জীবন বড় বেশি সুন্দর মনে হল । তবে সাথে সাথে এও সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলাম যে মাহিকে খুব দ্রুত বিয়ে করতে হবে । ওকে ছাড়া আর একটা দিন থাকা মুশকিল আমার জন্য ।