জুই থেকে বউ

4.4
(68)

জুই আমার উপর রাগ করে আছে । অথচ যে কান্ডটা ঘটেছে সেটার জন্য সে নিজ থেকে আমার কাছে এসেছে । আমি ওর কাছে যাই নি মোটেও । ও নিজ থেকে এসেছে আমার কাছে । এখন এমন একটা ভাব করছে যেন সব দোষ আমার ! অবশ্য দোষ যে আমার নেই সেটা আমি বলছি না । কিন্তু দোষ তো জুইয়েরও আছে খুব ভাল ভাবেই । বরং তার দোষই বেশি ।

পুরো ক্যাম্পাসে আমি ওকে খুজে পেলাম না । শেষ লাইব্রেরিতে খুজে পেলাম । লাইব্রেরির এক কোনে চুপ করে বসে আছে । মাথা নিচু করে আছে । আমার কেন জানি মনে হল ও কাঁদছে । আমি সামনে গিয়ে বসতেই ওর আমার দিকে তাকালো । আমার যা ধারনা সেটা সঠিক । ও আসলেই কাঁদছিলো । আমি ওর পাশে গিয়ে বসলাম । ভেবেছিলাম ও হয়তো উঠে যাবে কিন্তু উঠলো না ।

আমি ওর হাতের উপরে হাত রাখলাম । ও হাতও সরিয়ে নিলো না । আমি বললাম, তুই এমন কেন করছিস? আমি কি তোর উপর জোর করেছিলাম ? তুই তো এগিয়ে এলি? তুই ই তো সব কিছু করছি?
জুই আমার দিকে তীব্র ভাবে তাকিয়ে বলল, আমি এলাম বলেই তুই রাজি হবি ?

আমি এখন কি বলবো ! জুই বলল, আমি কেবল বলছিলাম যে তুই যেন ঐ জঘন্য কাজটা না করতে যাস ! তোর ঐ বদ বন্ধুদের সাথে না যাস তাই । তাই বলেছিলাম ! কিন্তু তুই …..

আমি কি বলব কিছু বুঝতে পারলাম না । সত্যি জুই না থাকলে আজকে আমি খুব বড় বিপদে পড়ে যেতাম । হয়তো লজ্জাতে মাথা কাটা যেত আমার এবং আমার পরিবারের সবার ! আমি হয়তো কারো সামনে আর মুখ দেখাতে পারতাম না । আমার চার বন্ধুদের এখন যা অবস্থা । ওদের সবার কলেজ থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে । শুনেছি রাফিদকে বাসা থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে । বাকি তিন জনের কি হয়েছে কে জানে ! ওদের সাথে কোন যোগাযোগ হয় নি ।

ঘটনাটার শুরু সপ্তাহ দুই আগে । কলেজে আমরা পাঁচ বন্ধু এক সাথেই থাকতাম । ঘোরাঘুরি বদমাইশি বন্ধু সব এক সাথে । কলেজে উঠলে সবার সাহস একটু বেড়ে যায় আমাদেরও বেড়ে গিয়েছিলো । নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি আগ্রহ বেড়ে যার । রাফিদ একদিন প্রাস্তব করলো, সে নারী দেহের স্বাদ নিতে চায় । প্রস্তাব ওঠার সাথে সাথেই সবাই রাজি হয়ে গেল । আমার নিজের মনের ভেতরেও একটা অন্য রকম অনুভূতি হয় যে হয় নি, সেটা বলবো না । তবে সেই সাথে ভয়ও ছিল । কারণ আমার বাসায় যদি জানতে পারে আমাকে স্রেফ চিবিয়ে খেয়ে ফেলবে । আমার বাবা আর বড় ভাই আমাকে জ্যান্ত মাটির নিচে পুতে ফেলবে । তাই যদি শহরের কোন ব্রোথলে গেলে ঠিকই কারো না কারো চোখ পড়ে যাবে । আর সেই খবর বাসায় পৌছাতে দেরি হবে না। তবে রাফিদ আর জয় একটা বুদ্ধি বের করলো । জয়ের বাসার থেকে দুরে একটা ছোট পরিত্যাক্ত বাসা আছে । ঠিক হল যে মেয়ে ঠিক করে সেখানে নিয়ে যাওয়া হবে ।

জুই আমার অনেক দিনের বন্ধু । আমাদের বাসা পাশাপাশি । সেই ছোট বেলা থেকে আমরা এক সাথেই বড় হয়েছি একই সাথে পড়াশুনা করেছি । ও আমার সাথে সব কিছু শেয়ার করে । ঠিক তেমন ভাবে আমিও অনেক কিছুই বলি ওকে । তেমনি এই কথাটাও বলে দিলাম । শোনার পর থেকে সে কি রাগ করলো ! আমি যেন না যাই ওদের সাথে এটাই বলতে লাগলো বারবার । কিন্তু আমার মাথায় তখন নিষিদ্ধ চিন্তা ঢুকে গেছে । অন্য কিছু যেন কাজই করছে না । সব ভয়ও দুর হয়ে গেছে । আমি যাবোই ওদের সাথে । শেষ জুই এমনটা কথা বলল যে আমার চোখ কপালে উঠলো ।
অন্য দিকে তাকিয়ে বলল, ওরা যা করবে সেটা পেলেই তো হল । যাওয়া লাগবে না ওদের সাথে।
আমি বললাম, মানে ?
-মানে হচ্ছে আজকে তুই আমার বাসার সামনে আসবে । সবাই ঘুমিয়ে গেলে ।

আমি কোন কথাই বলতে পারলাম না । জুই যে এমন একটা কথা বলতে পারে সেটা আমি ভাবতেই পারি নি । সারাটা দিন উত্তেজনায় কাটলো । রাত একটার দিকে জুই আমাকে মেসেজ দিল । যেতে বলল ওদের বাসায় । আমি বাসা থেকে খুব সাবধানে বের হয়ে গেল । দেখলাম ওর ঘরের বারান্দায় গেট ও খুলে রেখেছে । সেই গেট দিয়ে ওর ঘরে ঢুকে পড়লাম ! জুইয়ের ঘরে আমি এর আগেও এসেছে তবে এমন ভাবে চোরের মত আসি নি । বুকের ভেতরে যে কি তীব্র একটা অনুভূতি হচ্ছিলো সেটা বলে বোঝাতে পারবো না ।
ঘরের আলো জ্বালানো হয় নি । তবে আবছায়া জুইকে ঠিকই দেখতে পাচ্ছিলাম । সেই সাথে ওর শরীরে কেবল অন্তর্বাস ছাড়া যে আর কোন পোশাক নেই সেটাও বুঝতে পারছিলাম । বারবার মনে হচ্ছিলো যা করতে যাচ্ছি সেটা ঠিক হচ্ছে না কিন্তু এই বয়সে নিজেকে নিয়ন্ত্রন করা অসম্ভব হয়ে পড়লো ।

ভোর রাত পর্যন্ত জুইয়ের ঘরেই ছিলাম আমি । এক সময় জুই শান্ত কন্ঠে বলল ঘর থেকে চলে যেতে । ওর বাবা এখনই জেগে উঠবে । গেট দিয়ে বের হওয়ার আগে আরেকবার জুইয়ের দিকে ফিরে তাকালাম । আবছায়া আলোতে ওর নগ্ন শরীরটা আমাকে একেবারে পাগল করে দিল । নিজের ঘরে এসেও সেটা আমি কোন ভাবেই ভুলে যেতে পারলাম না ।

সেদিনের পর থেকে জুই একদমই আমার সাথে দেখা সাক্ষাত করা বন্ধ করে দিল । আমাকে এড়িয়ে চলতে শুরু করলো ।
এদিকে আমার বন্ধুরা পড়লো বিপদে । তারা চারজন ঠিকই একটা মেয়েকে ঠিক করে নিয়ে এসেছিলো । তবে তারা ধরা পড়ে গেল । জয়দের বাড়ির পাশে সেই পরিত্যাক্ত বাড়িতে মেয়েটাকে নিয়ে যাওয়ার সময় আমাদের কলেজের দপ্তরি দেখে ফেলে তাদের । দপ্তরির বাসা জয়দের বাসার পাশেই ছিল । সে তখনই কলেজের কাইয়ুম স্যারকে ফোন করে জানায় । কাইয়ুম স্যার খুব কড়া । তখনই আরও দুজন স্যার কে নিয়ে সে হাজির হয় সেই বাড়িতে । ব্যাস আর যাবে কোথায় !
ওরা হাতে নাতে ধরে পড়ে যায় ! পুরো এলাকাতে খবর ছড়িয়ে পড়ে । ভাগ্য ভাল যে আমি ছিলাম না ওদের সাথে । থাকলে কি হত সেটা ভাবতেই পুরো শরীর কেঁপে উঠে আমার !

ঐদিন রাতে বাবা আর ভাইয়া ডাকে ড্রয়িং রুমে গিয়ে হাজির হলাম । ভাইয়া নানা রকম প্রশ্ন করলো আমাকে । তবে আমি তাদের প্রশ্নের সন্তোষজনক জবাব দিতে পারলাম । তারা সাবধান করে দিলো যেন ঐ চারজনের সাথে আমাকে আর মিশতে না দেখে । আমি হাপ ছেড়ে বাঁচলাম ! জুই যদি না থাকতো তাহলে আমার যে কি হত সেটা আমি ভাবতেই পারছিলাম না ! তারপর থেকে জুইয়ের সাথে আরও ভাল করে দেখা করতে চাইলাম কিন্তু ও কিছুতেই আমার মুখোমুখি হচ্ছিলো না । বারবার আমাকে এড়িয়ে যাচ্ছিলো ! এতোদিন পরে ওকে লাইব্রেরিতে পেলাম !

জুইয়ের কান্না জড়িতো চোখের দিকে তাকিয়ে আমার নিজেকে বড় অপরাধি মনে হল । সত্যিই কি কাজটাই না আমি করেছি !
নিজের এই জঘন্য ইচ্ছেটাকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার জন্য কি করে ফেলেছি । অন্য দিকে জুই আমার কোন ক্ষতি হোক চাই বলেই নিজের এতো বড় ক্ষতি মেনে নিলো । আমার কি তখন উচিৎ ছিল না নিজেকে সংযত করা ! কিন্তু আমি কি করলাম তার বদলে ! কিভাবে করলাম !
কিভাবে এই খারাপ কাজটা আমি ঠিক করবো ?
কিভাবে ?
কি করলে কিছুটা লাঘব হবে !

হঠাৎ মনে হল কথাটা !
আমি জুইয়ের হাত ধরলাম আবার । তারপর বলল, চল বিয়ে করে ফেলি !
জুই চট করে আমার চোখের দিকে তাকালো ! আমি বললাম, দেখ আমি ভুল করেছি । করে ফেলেছি । তখন আমার মাথায় অন্য কিছু ছিল না ! এখন যেটা করে ফেলেছি সেটা ঠিক করার কোন উপায় নেই । তবে কিছুটা তো ঠিক করা যাবে । করবি বিয়ে আমাকে ?

জুই এবার মাথা নিচ করে রইলো । তারপর বলল, কিভাবে সব ম্যানেজ করবি ?
-করে ফেলবো, তুই চিন্তা করিস না !
আরও বেশ কিছু সময় চুপ করে থাকার পরে জুই বলল, আচ্ছা ব্যবস্থা কর ।

একটু যে ঝামেলা হয় নি, সেটা বলবো না তবে পরের সপ্তাহেই বিয়ের ব্যবস্থা করে ফেললাম । শহর থেকে অনেক দুরের একটা কাজী অফিসে গিয়ে আর জুই বিয়ে করে ফেললাম । কাজীকে কিছু টাকা অবশ্য দিতে হল । সেই সাক্ষি ম্যানেজ করে দিল । বিয়ে করে যখন বাসায় ফিরে এলাম তখন মনের ভেতরে কি যেন চলছিলো । কি সব এলোমেলো চিন্তা । তবে মনের ভেতরে আনন্দও কাজ করছিলো ।

জুই আমার খেলার সাথী ছিল সেই ছোট বেলা থেকেই । আমার খারাপ লাগা মন্দ লাগা সব ব্যাপারে ওর নাক গলানো ছিল স্বাভবিক ব্যাপার । তেমনি আমার ভাল দিক খারাপ দিক নিয়েও ও চিন্তা করতো খুব । আমার ঐ বন্ধুদের গ্রুপ নিয়ে ওর সমস্যা ছিল । আমাকে ওদের সাথে মিশতে মানা করতো । এই জন্য যখন ঐ জঘন্য কাজটা করতে যাচ্ছিলাম তখন জুই আমাকে বাঁধা দিয়েছিলো । এবার থেকে মনে মনে একদম ঠিক করে নিলাম যে কোন কাজ করার আগে জুইয়ের কাছ থেকে পরামর্শ করতে হবে । ওর কথা শুনতে হবে । ও আমার ভাল চাইবে সব সময় । অবশ্য এখন ও আমার বউ হয়ে গেছে । বউয়ের কথা না শুনে তো উপায়ও নেই ।

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 4.4 / 5. Vote count: 68

No votes so far! Be the first to rate this post.

About অপু তানভীর

ব্লগে লেখালেখি সেই ২০১১ সাল থেকে

View all posts by অপু তানভীর →