মা আমার দিকে তাকিয়ে একটু মন খারাপ করে বলল, তোর মামার সাথে ঐ রকম আচরণ না করলেও পারতি !
বড় মামাকে আমার কোন কালেই পছন্দ ছিল না । বিশেষ করে তার আগ বাড়িয়ে সব স্থানে মাতব্বারি করাটা আমার একেবারে পছন্দ না । আমি বললাম, শোন মা, তার সাথে আমি এমন কোন খারাপ আচরণ করি নি । সে একটা বেঠিক কথা বলেছে সেটার জবাব দিয়েছি কেবল ।
মা একটু মিনমিন করে বলল, সে তো ঠিক কথাই বলেছে । মেয়ে হয়ে সিগারেট !
আমি বললাম, তোমার ভাই ছাগলামী করবে বলে তুমিও করবে ?
আমি একটু থেমে বললাম, শোন মা যদি রিনির অন্য কোন দিক নিয়ে সে কথা বলতো তাহলে আমি মেনে নিতাম কিন্তু সে রিনি সম্পর্কে কিছু জানে না । কিচ্ছু না । কেবল রিনি সিগারেট খায় এটা শুনে মন্তব্য করে ফেলল যে রিনি মেয়ে ভাল না ! তোমার ভাই নিজে চেইন স্মোকার। বাবা সিগারেট খায়, আমি খা,ই রিয়াদ পর্যন্ত খায় ! তার মানে কি আমারও চরিত্র খারাপ ? তোমার স্বামীর ? তোমার ভাইয়ের চরিত্র নিয়ে আমি কিছু বলতে পারছি না । তুমি জানো তোমার ভাই কেমন !
-কিন্তু একটা মেয়ে হয়ে ….
-এই তো লাইনে এসেছো ! বিড়ি খাওয়া আসলে সমস্যা না । সমস্যা হচ্ছে একটা মেয়ে হয়ে কেন বিড়ি খাবে । তাইতো?
মা কোন কথা বলল না । আমি আবার বললাম, সিগারেট একটা খারাপ জিনিস সবাই জানি । এটা অস্বীকার করছি না । একটা ছেলে যখন তোমার সামনে দিয়ে সিগারেট খেতে খেতে যায় কই তখন তোমার মনে হয় না ছেলেটা খারাপ তখন তো ছেলেটার চরিত্র নিয়ে তোমার মনে কোন প্রশ্ন জানে না । কিন্তু যখনই একটা মেয়েকে সিগারেট খেতে দেখো ওমনি মনে হল যে মেয়েটা খারাপ, মেয়ের চরিত্রে সমস্যা আছে! বাহ কি চমৎকার ! এরপর জানি কি বলবা, আমাদের সমাজ সমাজে রীতি নীতি ব্লা ব্লা ব্লা । তোমার তো মনে থাকার কথা, দাদী মানে তোমার শ্বাশুড়িও তো বিড়ি টানতো । মনে নেই ? তাদের গ্রামের প্রতিটি বৃদ্ধ নারী বিড়ি তামাক খাওয়ার অভ্যাস । এটা তো যুগযুগ ধরে এদেশের সংস্কৃতিতে চলে আসছে ।
-কিন্তু একটা খারাপ অভ্যাস…..
-খারাপ অভ্যাস আমি নিজেও মেনে নিলাম । যখন একটা ছেলেকে সিগারেট খেতে দেখে মনে হবে এই ছেলে খুব খারাপ তখন একটা মেয়ের সিগারেট খাওয়া দেখে মনে করতে পারো এই মেয়েও খারাপ । কিন্তু একটা ছেলের সিগারেট খাওয়া দেখে তোমার কিছু মনে হবে অথচ একটা মেয়ের সিগারেট খাওয়া দেখলেই জাত জাত গেল বে উঠবা তা হবে না ! যখন তুমি তোমার স্বামীকে সিগারেট খেতে নিষেধ করবা, তোমার ছেলেকে নিষেধ করবা তখন তুমি তোমার ছেলের বউকে নিষেধ করবা ।
মা বলল, তুই কি ঐ মেয়েকেই বিয়ে করবি ঠিক করেছিস?
-হ্যা ।
আমার বিয়ের জন্য মেয়ে দেখা হচ্ছিলো । রিনিও ছিল তার ভেতরে । মেয়েটার সব কিছু আমার জন্য মানান সই । মেয়েটার সাথে আমি কয়েকদিন কথাও বলেছি । ভালই লেগেছে । তবে নিশ্চিত কিছুই ছিল না । কিন্তু এখন আমি মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে গেলাম । রিনিকেই বিয়ে করবো । মাকে বলল, রিনিকেই বিয়ে করবো আমি । এবং তোমার বড় ভাইকে বাসায় দাওয়াত দিয়ে তার সামনে দুজন মিলে সিগারেট খাবো । বুঝেছো !
মা মুখ কালো করে আমার সামনে থেকে চলে গেল । রাতের বেলা শেষ সিগারেট টা আমি ছাদে উঠে খাই । মাঝে মাঝে বাবা ছাদে আসে । সেও সিগারেট খাওয়ার জন্যই আসে । তবে আমার কাছে আসে না । দুজনই একে অন্যকে না দেখার ভান করে দাড়িয়ে থাকি । তবে আজকে দেখলাম সে এগিয়ে এল নিজ থেকেই । আমি তখন সিগারেটটা পেছনে লুকিয়েছি । বাবা বলল, দিয়াশলাই আছে তোর কাছে ?
আমি পকেট থেকে লাইটার বের করে দিলাম । সে সেটা হাতে নিয়ে সিগারেট টা ধরাতে গিয়েও ধরালো না । কি যেন তার মনে পড়ে গেল । তারপর বলল, শুনলাম রিনিকেই নাকি বিয়ে করবো ঠিক করেছিস !
-হ্যা ।
-ভাল মেয়েটা । কথা বার্তা বলে আমারও পছন্দ হয়েছে । আর তোদের বিয়ে হলে একটা ভাল কাজ হবে ।
-কি ভাল কাজ?
-বউয়ের সাথে সিগারেট ভাগাভাগি করে খেতে পারবি !
এই বাবা হেসে উঠলো । আমিও হাসলাম । সত্যিই তাই । দুজন এক সাথে সিগারেট খাওয়ার ব্যাপারটা কিন্তু বেশ চমৎকার হবে ।
পরিশিষ্টঃ
রিনির সাথেই বিয়ে হয়ে গেল । বাবা যে বলেছিলো এক সাথে রিগারেট খাওয়ার ব্যাপারটা মজার হবে সত্যিই বেশ মজাই লাগতো । রাতে আমরা ছাদে উঠতাম এক সাথে । একটা সিগারেটই ভাগাভাগি করে খেতাম । তবে বাবাকে ছাদে উঠতে দেখলেই রিমি সিগারেট ধরাতো না । আর মাঝখানে বাবা চলে আসতো তাহলে সিগারেট ফেলে দিতো ।
মাস দুয়েক পরে মা মানতে বাধ্য হলেন যে রিনি মেয়ে হিসাবে চমৎকার । তার বড় ভাই রিনির ব্যাপারে যে কথা বলেছিলো সেটা মোটেও সত্য নয় । একদিন রাতের খাওয়ার সময় মা হঠাৎ বলল, ভাবছি আমিও সিগারেট খাওয়া শুরু করবো ।
রিয়াদ বলল, কেন মা ? হঠাৎ এই সিদ্ধান্ত
-না খেয়ে আর যাবো কই । স্বামী খায়, ছেলেরা খায়, শাশুড়িও খেত এখন ছেলের বউও খাচ্ছে । আমি আর বাদ থাকবো কেন !
বাবা বলল, খুবই ভাল হবে । আসো আজ থেকে শুরু কর ।
রিনি বলল মা আপনি সিগারেট খাওয়া পছন্দ করেন না আমি জানি । কিন্তু অভ্যাস তো তাই ছাড়তে একটু কষ্ট হচ্ছে । তবে মা আপনাকে কথা দিচ্ছি বাবু নেওয়ার আগেই একেবারে ছেড়ে দিবো । আর আপনার ছেলেও যেন ছেড়ে দেয় সেই ব্যবস্থা করবো !
বাবা বলে উঠলো, সে কি বউমা, তোমাকে নিজেদের দলের ভেবেছিলাম । তুমি দেখি দল বদলাচ্ছো !
রিনি বলল, বাবা আপনারও খাওয়া বন্ধ করতে হবে । এখন কাজের চাপ নিচ্ছেন বলে কিছু বলছি না । তবে অভ্যাস কমাতে হবে ।
কথা চলতে থাকে খাওয়ার টেবিলে । আমি মনে মনে হাসি । আর ভাবি যে রিনিকে বিয়ে করা মোটেও ভুল সিদ্ধান্ত ছিল না ।
গল্প পড়ে অনেকের মনে হতে পারে আমি হয়তো সিগারেট খাওয়ার পক্ষে । না আমি নিজে যেমন সিগারেট খাই না তেমনি পাবলিক প্লেসে অন্যের সিগারেট খাওয়াটা পছন্দ করি না। তবে একদম যদি খায় সেটা নিয়ে আমার কোন আপত্তি নেই । কেবল তার সিগারেটের জন্য যেন অন্য কারো অসুবিধা না হয় এটাই চাই । কেউ যদি নিজেই নিজেকে বাঁশ দিতে চায় তাহলে এখানে আমার কিছু বলার নেই। যে কারণে এইটা লেখা তা হচ্ছে আপনার চিন্তা ধারাকে বদলানোর চেষ্টা । যদি একটা পুরুষকে সিগারেট খেতে দেখে আপনার কাছে স্বাভাবিক মনে হয়, তার চরিত্র ভাল খারাপ নিয়ে কোন কথা মনে না আসে কিন্তু একটা মেয়েকে সিগারেট খেতে দেখলেই আপনার কাছে অস্বাভাবিক মনে হয়, আপনার মনে হয় মেয়েটা ভাল না, তাহলে আপনার চিন্তাধারা বদলানোর সময় এসেছে । সিগারেটকে যদি খারাপ ভাবেন তাহলে একটা পুরুষকে যেমন সিগারেট খেতে দেখলে খারাপ ভাবতে হবে তেমনি একটা মেয়েকে সিগারেট খেতে দেখলেও খারাপ ভাবতে হবে ঠিক তেমনি ভাবে একটা পুরুষের বেলাতে যদি সেটা স্বাভাবিক ভাবেন মেয়ের বেলাতেও স্বাভাবিক ভাবতে হবে। যেমন পাব্লিক প্লেসে কাউকে সিগারেট খেতে দেখলে এবং সেই সিগারেটের ধোয়া যদি আমার নাকে আসে তাহলে সে ছেলে হোক আর মেয়ে হোক উভয়কেই আমার ছাপড়াইতে ইচ্ছে করে ।