স্বপ্ন জীবন

oputanvir
4.8
(78)

এনামুল কবির হাতের ফাইলটা এক পাশে সরিয়ে রেখে জানালা দিয়ে বাইরে তাকালেন । সকাল থেকে আজকে আকাশ মেঘলা ছিল । যখন অফিসে আসছিলেন তখনই মনে হচ্ছিলো যে আজকে খুব করে বৃষ্টি হবে । সেটা অফিসে ঢোকার পরপরই শুরু হয়েছে বেশ ভাল ভাবে । এখনও থামার নাম নেই । আজকে ঢাকা শহর ভেসে যাবে নিশ্চিত ।

-স্যার আসবো?
জানালা থেকে মনযোগ দরজার দিকে গেল । শাহেদ দাড়িয়ে রয়েছে সেখানে । শাহেদের চেহারা দেখেই এনামুল কবিরের ব্যাপারটা মনে পড়ে গেল । ছেলেটা একটা বড় পরিমানের লোনের জন্য এপ্লাই করেছিলো । ছেলেটাকে তিনি পছন্দ করেন । তবে তার পক্ষে এতো বড় লোন স্যাংশান করা সম্ভব না । তিনি তো আর কোম্পানির মালিক না । বোর্ড অব ডিরেক্টরস ব্যাপারটা মোটেই ভাল চোখে দেখবে না ।

-আসো শাহেদ ।

শাহেদ একটু চিন্তিত মুখ বসলো এনামুল কবিরের সামনে । তারপর বলল, স্যার আমার লোনের ব্যাপারটা!
একটু চুপ করে রইলেন এনামুল কবির । তারপর বললেন, তুমি এই অফিসে কাজ কর কত দিন?
-স্যার চার হতে চলল ।
-এই সময়ে কাজ করে যে ২০ লক্ষ্য টাকার লোন স্যাংশন হবে না সেটা তো তুমি জানো ! রাইট?
-জ্বী স্যার ।
-জানার পরেও এপ্লাই করেছো ! আর তোমার যা বেতন কাঠামো সেটা হিসাবে ২০ লক্ষ টাকার কিস্তি প্রতি মাসে যা কাটবে তাতে তোমার হাতে তো কিছুই আসবে না । চলবে কিভাবে?
-স্যার চলে যাবে কোন ভাবে!
-কোন ভাবে বললে তো আর হবে না । শোন এতো টাকা স্যাংশন হবে না । পরিমানটা আরো কমাতে হবে । তোমার বেতন যখন এক লাখ হবে তখন এটা হবে । এর আগে না । এখন ৫/৭ লাখের বেশি হবে না ।

শাহেদ কিছু সময় অসহায় চোখে তাকিয়ে রইলো এনামুল কবিরের দিকে । সে খুব ভাল করেই জানতো যে এতো টাকা কোন ভাবেই কোম্পানি তাকে লোন দিবে না । সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা হয়তো দিতে পারে । এখনও আরো ১০ লাখ লাগবে । বাড়ির যে জমি বিক্রির কথা চলছে সেটা আগেই নেওয়া হয়েছে । মোটা ৩০ লক্ষ টাকার জোগার করতে হবে । অফিস থেকে দশ লাখ দিলে আরও ১০ বাকি থাকে । এটা কিভাবে জোগার করবে সেটাই ভাবছে শাহেদ ।

এনামুল কবির বললেন, একটা কথা জিজ্ঞেস করি যদি কিছু মনে না কর !
-জ্বী স্যার করুন !
-এটা টাকা দিয়ে কী করবে? ব্যবসা করবে? নাকি কারো চিকিৎসা?
একটু সময় চুপ করে রইলো শাহেদ । তারপর বলল, স্যার ঋণ শোধ করবো !
-এতো টাকা ! ২০ লাখ টাকার ঋণ !
-আমার না স্যার । আমার বাবা ! উনি ব্যবসায় বড় রকমের একটা লস খেয়েছিলেন । ব্যাংক থেকে লোন নিয়েছেন । সেটা এখন প্রায় ২৯ লাখ টাকায় গিয়ে দাড়িয়েছে ।
-ও আচ্ছা ।
শাহেদ আবারও বলল, আসলে আবার বাবার বয়স হয়েছে । আর খুব বেশি দিন হয়তো বাঁচবেন না । তার জীবনের বড় আফসোস যে এতো বড় ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে সে মৃত্যু বরণ করবে । তাই আমার ইচ্ছে যে তার মৃত্যুর আগে সে যেন দেখে যেতে পারে তার ঋণ শোধ হয়েছে ।

এনামুল কবির কিছু সময় শাহেদের দিকে তাকিয়ে রইলেন । তিনি এটা আশা করেন নি । বললেন, তোমার তো আরো দুটো বড় ভাই আছে । তাই না?
-জ্বী স্যার আছে ।
-তারা কিছু করছে না ?
-তারা আসলে তাদের জীবন নিয়ে ব্যস্ত । বড় ছেলে মেয়ে আছে । তাদের তো দেখতে হবে । আমার কেউ নেই । বিয়ে শাদী করি নি ।
-করতে হবে না?
-বাবার জন্য না হয় নাই করলাম । আমি জানি এতো বড় ঋণ নিলে আমার পক্ষে হয়তো বিয়ে করা সম্ভব হবে না । কারণ বিয়ে মানেই আমার উপর আরেকটা দায়িত্ব এসে পরা । এটা আমি চাই না ।

এনামুল কবির এবার সত্যিই শাহেদের উপর বেশ প্রসন্ন হলেন । বিশেষ করে বাবার প্রতি এমন ভালোবাসা আজকালকার ছেলেমেয়েদের উপর দেখা যায় না । তখনই তার মাথায় একটা ভাবনা এল । এনামুল কবির বললেন, তুমি আজকে অফিসের পরে আমার সাথে একটু দেখা কর । এতো অফিস কোন ভাবেই দিবে না । তবে দেখা যাক আমি কী করতে পারি ! ঠিক আছে?
-জ্বী স্যার !

শাহেদ চলে যাওয়ার পরে একটা লম্বা সময় ভাবলেন তিনি । শেষে তার মনে হল কাজটা করাই ঠিক হবে । যদিও জেনির একটা মতামত রয়েছে । একবার নিজের ভুলের কারণে মেয়েটার উপর বেশ বড় একটা ঝড় বয়ে গেছে । সেই কারণে এনামুল কবির কখনো নিজেকে মাফ করতে পারেন নি । কীভাবে সেই ভুল ঠিক করবেন সেটা বারবার ভেবেছেন । শাহেদ কী সেই সমাধান হতে পারে?

অফিস টাইম শেষ হওয়ার পরে শাহেদ আবারও এনামুল কবিরের অফিস রুমে এসে হাজির হল । শাহেদের জন্যই এনামুল কবির অপেক্ষা করছিল। শাহেদ বসতেই বললে, সরাসরি কাজের কথা বলি । আমি চেষ্টা করেছি তোমার জন্য । ১০ লাখের বেশি আসলে ম্যানেজ করা সম্ভব না । এটা নিতে চাইলে কাল কিংবা পরশুর ভেতরে স্যাংশন হয়ে যাবে । সপ্তাহ খানেকের ভেতরে টাকা পেয়ে যাবে হাত । ঠিক আছে !
শাহেদের মুখটা একটু বিষণ্ণ হল । বাকি দশ লাখ কিভাবে জোগার করবে সেটাই ভাবছে । তবে তখনই তার মনে হল যে এনামুল কবির তাকে আরো কিছু বলার জন্য ডেকেছেন । কেবল এই সংবাদের জন্য আসতে বলার কথা না ।
-তবে তোমার জন্য আমার আলাদা একটা প্রস্তাব আছে । প্রস্তাবটা শোনার আগে তোমাকে বলি যে চাইলে তুমি এটা একবাক্যে নাকোচ করে দিতে পারো । না করলে এটার জন্য কোন প্রভাব আমাদের ভেতরে পরবে না । কেবল একটা অনুরোধ যে ব্যাপারটা কাউকে বলবে না । ওকে?
-জ্বী স্যার ।

একটু থেমে বড় একটা বদ নিয়ে এনামুল কবির বলা শুরু করলেন, আমি তোমাকে সম্পূর্ণ ২৯ লাখ টাকাই দিতে রাজি । আমার নিজের ফান্ড থেকে আমি দিবো তোমাকে ! তবে এর জন্য আমার মেয়েকে বিয়ে করতে হবে ।

শাহেদ বেশ বড় বড় চোখ করেই তাকিয়ে রইলো । এটা সে কোন ভাবেই আশা করে নি । এনামুল কবির বললেন, আমার মেয়ের আগে একবার বিয়ে হয়েছিলো তুমি জানো । জেনির বিয়েটা বছর চারেক টিকেছিল । তারপর ওর ডিভোর্স হয়ে যায় । ডিভোর্সের কারণ হচ্ছে আমার মেয়েটার কিছু শারীরিক সমস্যা রয়েছে । সে কোন দিন মা হতে পারবে না । চিকিৎসার চেষ্টা হয়েছিলো তবে কাজ হয় নি। তার স্বামী তার সাথে আর থাকতে রাজি হয় নি । এরপর থেকে আমার হাসিখুশি মেয়েটা একেবারে নিশ্চুপ হয়ে গেছে । আর বিয়ে করবে না ঠিক করেছে । কিন্তু বাবা হিসাবে আমি এটা কিভাবে মেনে নিই বল ! আমার মরার পরে ওকে কে দেখবে । তোমাকে আমি অনেক আগে থেকেই চিনি । তোমাকে যতখানি আমি চিনেছি আমার মনে হয়েছে যে তুমি আমার মেয়েকে দেখে রাখবে । যে ছেলে নিজের বাবার জন্য এতো বড় স্যাকরিফাইস করতে পারে সে কখনই নিজের দায়িত্ব অবহেলা করতে পারে না ।

একটু থামলেন এনামুল কবির । তারপর বললেন, তোমার সাথে বিয়ে হলে আমি মরেও শান্তি পাবো । আমি কেবল আমার মেয়েটাকে দেখে রেখো তুমি । আমি ছাড়া আর কেউ নেই ওর !

কথা শেষ করে কেউ কোন কথা বলল না । দীর্ঘক্ষণ চুপ করে রইলো দুজনই । এরপর এনামুল কবির বললেনম তোমাকে এখনই জবাব দিতে হবে না । ভাব । ভেবে তারপর বোলো । চাইলে অবশ্যই না করতে পারো । কোন সমস্যা নেই । ঠিক আছে? আমাকে জানিও তাহলে আমি অফিস থেকে ঐ টাকাটা স্যাংশন করার কথা বলে দিব ।

শাহেদ সালাম দিয়ে উঠে চলে গেল ।

দু
জেনি কোন দিন ভাবে নি আবারও যে বিয়ের পিড়িতে বসবে । কিন্তু শেষ পর্যন্ত আবারও বসতে হল। নিজের বাবাকে সে মানা করতে পারে নি কোন ভাবেই । শাহেদ নামের মানুষটার সাথে বিয়ে হয়েছে তার । একদমই ঘরোয়া ভাবে । শাদের পরিবার থেকে ওর বাবা আসতে পারেন নি । বড় দুই ভাবই ভাবী এসেছিলো । তবে ভিডিও কলে তাদের সাথে কথা হয়েছে ।

বাসর রাতে ঢুকেই শাহেদ একটু হাসলো । ওর খাটের উপরে বসতে বসতে বলল, বিয়ে তাহলে হয়ে গেল !
-হ্যা ।
-আমি কখনো ভাবি নি যে আমি কোন বিয়ে করতে পারবো ।
-আমিও ভাবি নি।
-কিন্তু দেখো তারপরেও ভাগ্য আমাদের এক সাথে নিয়ে এসেছে ।

জেনি কিছু বলল না । শাহেদ বলল, তুমি নিশ্চয়ই জানো আমি আসলে কেন বিয়ে করেছি । তোমার বাবা তোমাকে বলেছে?
-হ্যা ।
-আমি জানি না তুমি কী ভাবছো আমার সম্পর্কে । আমি আসলে …
-আমি আসলে কিছুই ভাবছি না ।
-তবে আমি একটা কথা তোমাকে এখনই বলে দিতে চাই । আমি নিশ্চিত করে বলছি না যে আমাদের পরবর্তি জীবনটা সুখই সুখ হবে । কোন দিন ঝগড়া হবে না কিংবা মন মালিন্য হবে না । তবে ঝগড়া যে কারণেই হোক না কেন তোমার ঐ ব্যাপারটা নিয়ে কখনো আমাদের মাঝে কথা হবে না । আই প্রোমিস ইউ দ্যাট । তুমি এটা কখন হীন্যমন্যতায় ভুগবে না । ঠিক আছে?

জেনির কেন জানি কথাটা খুব বেশি ভাল লাগবে । একভাবেই তাকিয়ে রইলো ও শাহেদের দিকে । শাহেদ যে সত্যি বলছে সেটা ও বুঝতে পারলো । মানুষের চোখ কখনো মিথ্যা বলে না । ওর আগের স্বামী যখন ওর এই ব্যাপারটা জানতে পেরেছিলো তখন তার পরিবর্তনটা সব থেকে বেশি নজরে এসেছিলো তার চোখে । কী ঘৃণা করুণার চোখেই না সে তখন তাকাতো জেনির দিকে । এটা কোন ভাবেই জেনি সহ্য করতে পারতো না । নিজেকে বড় ছোট মনে হত ।

দিন জেতে লাগলো । ওদের সংসার শুরু হল । জেনি প্রথমে একটু সংকুচিত হয়ে থাকতো শাহেদের সামনে, শাহেদও যে প্রথম প্রথম একটু লজ্জা পেত না সেটা না । তবে সময়ের সাথে দুজনেই স্বাভাবিক হয়ে গেল । বিয়ের প্রায় মাস খানেক পরে ওরা প্রথম একে অন্যের খুব কাছে এল । আদর করলো একে অন্যকে । তারপরই আরও একটু কাছাকাছি চলে এল ওরা !

জেনি আগে একটা চাকরি করতো তবে যখন ওর শারীরিক এই ব্যাপারটা সবাই জেনে যায় তখন সে চাকরিটা ছেড়ে দিয়ে ঘরেই থাকতো । মানুষের সাথে মিশতো না খুব একটা । এমন কি বন্ধু বান্ধবদের সাথেও না । তবে শাহেদের সাথে বাইরে যেতে শুরু করলো । অফিসের পরে মাঝে মাঝে বের হত কিংবা ছুটির দিনে দুজন এদিক ওদিক ঘুরতে যেত । হানি মুনে গেল নেপালে, বিয়ের দুই মাস পরে । জীবনটা আস্তে আস্তে অনেক সুন্দর লাগতে শুরু করলো জেনির কাছে ।

বছর খানেক পরে একবার ওরা গেল শাহেদদের বাসায় । সেখানে শাহেদের মা ওকে বেশ ভাল ভাবে গ্রহন করলো । সে জানে জেনির আগে একটা বিয়ে হয়েছিলো তবে জেনি যে শাহেদের বসে মেয়ে এই কারণে সে কিছু বলতে সাহস পায় নি । তবে জেনি খুব ভাল করেই জানে শাহেদ ওর মাকে খুব বুঝিয়ে শুনিয়ে নিয়েছে । জেনির সামনে যেন বেফাঁস কথা বলে না ফেলে । অবশ্য জেনি মানসিক ভাবে প্রস্তুতি নিয়েই রেখেছি সেটা শোনার জন্য । তবে জেনি নিজেও জানে যে শাহেদ ওর বাচ্চা না হওয়ার ব্যাপারটা নিশ্চিত ভাবেই ওর বাসায় বলে নি । বলবে না সে জানে । কিন্তু একদিন না একদিন ঠিকই জানবে তারা । তখন কী হবে ? তখন ওকে নিয়ে যে কথা গুলো তারা ভাববে কিংবা বলবে সেটা সহ্য করতে পারবে তো ! জেনি জানে না ।

শাহেদদের বাসায় থাকার সময়ই জেনির শরীর হঠাৎ খারাপ হল । ডাক্তার ডাকা হল । ডাক্তার লক্ষ্যন শুনে একটু হাসলেন । তারপর বললেন, আপনি সম্ভবত প্রেগনেন্ট !

কথা শুনে শাহেদের দিকে তাকালো জেনি ! চোখে একটা ভয় মিশ্রিত দৃষ্টি । ডাক্তার বলল, কিট নিয়ে এসে চেক করতে পারেন । অথবা আরো নিশ্চিত হতে ল্যাব টেস্ট করতে পারেন । তবে আমার ধারণা ভুল হবে না ।

বাসায় একটা আনন্দের ধারা বয়ে গেল । জেনির ব্যাপারটা এতো ভাল লাগলো । তার বড় বিশ্বাস করতে ইচ্ছে হল যেন ব্যাপারটা যেন সত্য । শাহেদের মা ফকির ডেকে খাওয়ালেন । বাসায় একটা উৎসব উৎসব ভাব চলে ।
রাতের বেলা শাহেদকে জড়িয়ে ধরে জেনি বলল, আসল সত্যটা মা জানতে পারলে কী হবে?
-মন খারাপ করবে একটু । ওটা নিয়ে চিন্তা করো না তো ।
-জানো মায়ের খুশি দেখে এতো ভাল লাগছিলো । বারবার মনে হচ্ছিলো ইস যদি সত্যি হত ব্যাপার !

বলতে বলতেই জেনি ফুঁপিয়ে কেঁদে উুঠলো । নিজের কান্না আটকানোর চেষ্টা করলো বটে কিন্তু কাজ হল না কিছুতেই । শাহেদ ওকে একটু শক্ত করেই জরিয়ে ধরলো । তারপর বলল, যা হবে আমরা দুজন মিলে সেটা মোকাবেলা করবো । ঠিক আছে !
-হুম !
-আমি সব সময় আছি তোমার পাশে !

দুদিন পরে যখন শাহেদরা যখন ঢাকায় ফিরবে তখন শাহেদেরমা বারবার করে বলল যে বউমা এখানেই থাকুক । ঢাকায় ওর দেখা শোনা কে করবে এই সময়ে ! শাহেদ যতই বোঝানোর চেষ্টা করলো কাজ হল না । শেষে মাস খানেক পরে হয় জেনি এখানে আসবে নয়তো তিনি ডাকা যাবে থাকতে এটাই ঠিক হল ।

তিন

শাহেদ অফিস থেকে ফিরে দেখতে পেল জেনি শোফার উপরে পা তুলে বসে আছে । একটু আগে যে কান্না করেছে সেটা ওর চোখ দেখেই বুঝতে পেরেছে । শাহেদ ওর সামনে বসতে বসতে বলল, কী হয়েছে ? শরীর খারাপ লাগছে ?
জেনি কোন কথা না বলে তাকালো শাহেদের দিকে । তারপর হু হু করে কেঁদে উঠলো ।
শাহেদ ওকে জড়িয়ে ধরতে ধরতে বলল, কী হয়েছে বলবে তো ! আমি কীভাবে বুঝবো ?
জড়িয়ে ধরেই জেনি বলল, তোমাদের ঐ গ্রামের ডাক্তার ঠিক বলেছিলো।
-মানে?
-আমি ঢাকাতে এসেছে কিট দিয়ে পরীক্ষা করেছিলাম কয়েকবার । তারপর নিজে ল্যাবে গিয়ে পরীক্ষা করেছিলাম । আজকে রিপোর্ট এসেছে । আমি সত্যিই মা হতে চলেছি
শাহেদের যেন বিশ্বাস হল না । নিজেই রিপোর্টটা দেখলো । কেবল সেদিকেই তাকিয়ে রইলো । এখনও যেন বিশ্বাস হচ্ছে না ওর । সত্যিই মিরাকেল ঘটেছে ওদের সাথে !

শাহেদ তখনই ওর মাকে ফোন করলো । বলল যেন পরদিনই চলে আসে । ওদের বাসার কাজের লোককে নিয়ে চলে আসতে বলল ।

পরিশিষ্টঃ

শাহেদ অস্থির হয়ে পায়চারি করতে হাসপাতালের করিডোরে । ওটিতে জেনিকে ঢোকানো হয়েছে । এখন পর্যন্ত সব কিছু স্বাভাবিক আছে । তবে যে কোন ইমারজেন্সির জন্য সব রকম প্রস্তুতি গ্রহন করা হয়েছে । রক্তের ডোনার ম্যানেজ করা হয়েছে । আরো যা যা দরকার সব ব্যবস্থা করা হয়েছে । করিডোরের বেঞ্চে শাহেদের মা বাবা আর জেনির বাবা মাও রয়েছে ।তারা বসে আছেন চিন্তিত মুখে ।

শাহেদের চিন্তা সব থেকে বেশি । জীবনে এমন অবস্থায় সে আসবে কোন দিন ভাবে নি । অথচ উপরওয়ালা তাকে সেখানেি এনে দাড় করিয়েছেন । বারবার কেবল উপরওয়ালাকে ডাকতে লাগলো শাহেদ । বারবার বলতে লাগলো তার বউ যেন সুস্থ থাকে ভাল থাকে ! বাচ্চাটা জীবিত আর সুস্থ ভাবে জন্মায় !

তখনই দরজা খুলে ডাক্তার বের হয়ে এল। শাহেদের যেন পা কাঁপতে শুরু করলো । সে ডাক্তারের কাছে যেতে সাহস পাচ্ছে না । তবে ডক্তার যখন নিজের মাস্ক খুলল তার হাসি মাখা মুখ দেখে বুঝতে পারলো সব কিছু ভাল হয়েছে । সব ভাল হয়েছে ।
তখনই শাহেদের মাথা ঘুরে উঠলো । এতো উত্তেজনা তারপর এই উত্তেজনা প্রশমন শাহেদের সহ্য হল না । সে মেঝেতে জ্ঞান হারিয়ে পড়লো ।

শাহেদের যখন জ্ঞান ফিরতো দেখতে ওর মা ওর মুখের দিকে তাকিয়ে আছে । ওর দিকে তাকিয়ে খানিকটা বিরক্ত কন্ঠে বলল, তোর মত গাধা আমি জীবনেও দেখি নি । কই নিজের মেয়েকে কোলে নিবে না, তোকে নিয়ে টানাটানি শুরু হয়ে গেছে !
শাহেদ কেবল বোকার মত হাসলো । বলল, ওরা ভাল আছে ?
-আছে । সবাই ভাল আছে । এখন ওঠ । তোর বাবা তো রেগে আগুন । এখন ওঠ জলদি ওঠ !

শাহেদ উঠে বসলো । জীবনটা ওর কাছে বড় মধুর লাগছে । স্বপ্নের মত মধুর এই জীবন যে সে পাশে কোন দিন ভাবেও নি ।

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 4.8 / 5. Vote count: 78

No votes so far! Be the first to rate this post.

About অপু তানভীর

আমি অতি ভাল একজন ছেলে।

View all posts by অপু তানভীর →

One Comment on “স্বপ্ন জীবন”

Comments are closed.