স্বপ্ন জীবন

oputanvir
4.8
(81)

এনামুল কবির হাতের ফাইলটা এক পাশে সরিয়ে রেখে জানালা দিয়ে বাইরে তাকালেন । সকাল থেকে আজকে আকাশ মেঘলা ছিল । যখন অফিসে আসছিলেন তখনই মনে হচ্ছিলো যে আজকে খুব করে বৃষ্টি হবে । সেটা অফিসে ঢোকার পরপরই শুরু হয়েছে বেশ ভাল ভাবে । এখনও থামার নাম নেই । আজকে ঢাকা শহর ভেসে যাবে নিশ্চিত ।

-স্যার আসবো?
জানালা থেকে মনযোগ দরজার দিকে গেল । শাহেদ দাড়িয়ে রয়েছে সেখানে । শাহেদের চেহারা দেখেই এনামুল কবিরের ব্যাপারটা মনে পড়ে গেল । ছেলেটা একটা বড় পরিমানের লোনের জন্য এপ্লাই করেছিলো । ছেলেটাকে তিনি পছন্দ করেন । তবে তার পক্ষে এতো বড় লোন স্যাংশান করা সম্ভব না । তিনি তো আর কোম্পানির মালিক না । বোর্ড অব ডিরেক্টরস ব্যাপারটা মোটেই ভাল চোখে দেখবে না ।

-আসো শাহেদ ।

শাহেদ একটু চিন্তিত মুখ বসলো এনামুল কবিরের সামনে । তারপর বলল, স্যার আমার লোনের ব্যাপারটা!
একটু চুপ করে রইলেন এনামুল কবির । তারপর বললেন, তুমি এই অফিসে কাজ কর কত দিন?
-স্যার চার হতে চলল ।
-এই সময়ে কাজ করে যে ২০ লক্ষ্য টাকার লোন স্যাংশন হবে না সেটা তো তুমি জানো ! রাইট?
-জ্বী স্যার ।
-জানার পরেও এপ্লাই করেছো ! আর তোমার যা বেতন কাঠামো সেটা হিসাবে ২০ লক্ষ টাকার কিস্তি প্রতি মাসে যা কাটবে তাতে তোমার হাতে তো কিছুই আসবে না । চলবে কিভাবে?
-স্যার চলে যাবে কোন ভাবে!
-কোন ভাবে বললে তো আর হবে না । শোন এতো টাকা স্যাংশন হবে না । পরিমানটা আরো কমাতে হবে । তোমার বেতন যখন এক লাখ হবে তখন এটা হবে । এর আগে না । এখন ৫/৭ লাখের বেশি হবে না ।

শাহেদ কিছু সময় অসহায় চোখে তাকিয়ে রইলো এনামুল কবিরের দিকে । সে খুব ভাল করেই জানতো যে এতো টাকা কোন ভাবেই কোম্পানি তাকে লোন দিবে না । সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা হয়তো দিতে পারে । এখনও আরো ১০ লাখ লাগবে । বাড়ির যে জমি বিক্রির কথা চলছে সেটা আগেই নেওয়া হয়েছে । মোটা ৩০ লক্ষ টাকার জোগার করতে হবে । অফিস থেকে দশ লাখ দিলে আরও ১০ বাকি থাকে । এটা কিভাবে জোগার করবে সেটাই ভাবছে শাহেদ ।

এনামুল কবির বললেন, একটা কথা জিজ্ঞেস করি যদি কিছু মনে না কর !
-জ্বী স্যার করুন !
-এটা টাকা দিয়ে কী করবে? ব্যবসা করবে? নাকি কারো চিকিৎসা?
একটু সময় চুপ করে রইলো শাহেদ । তারপর বলল, স্যার ঋণ শোধ করবো !
-এতো টাকা ! ২০ লাখ টাকার ঋণ !
-আমার না স্যার । আমার বাবা ! উনি ব্যবসায় বড় রকমের একটা লস খেয়েছিলেন । ব্যাংক থেকে লোন নিয়েছেন । সেটা এখন প্রায় ২৯ লাখ টাকায় গিয়ে দাড়িয়েছে ।
-ও আচ্ছা ।
শাহেদ আবারও বলল, আসলে আবার বাবার বয়স হয়েছে । আর খুব বেশি দিন হয়তো বাঁচবেন না । তার জীবনের বড় আফসোস যে এতো বড় ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে সে মৃত্যু বরণ করবে । তাই আমার ইচ্ছে যে তার মৃত্যুর আগে সে যেন দেখে যেতে পারে তার ঋণ শোধ হয়েছে ।

এনামুল কবির কিছু সময় শাহেদের দিকে তাকিয়ে রইলেন । তিনি এটা আশা করেন নি । বললেন, তোমার তো আরো দুটো বড় ভাই আছে । তাই না?
-জ্বী স্যার আছে ।
-তারা কিছু করছে না ?
-তারা আসলে তাদের জীবন নিয়ে ব্যস্ত । বড় ছেলে মেয়ে আছে । তাদের তো দেখতে হবে । আমার কেউ নেই । বিয়ে শাদী করি নি ।
-করতে হবে না?
-বাবার জন্য না হয় নাই করলাম । আমি জানি এতো বড় ঋণ নিলে আমার পক্ষে হয়তো বিয়ে করা সম্ভব হবে না । কারণ বিয়ে মানেই আমার উপর আরেকটা দায়িত্ব এসে পরা । এটা আমি চাই না ।

এনামুল কবির এবার সত্যিই শাহেদের উপর বেশ প্রসন্ন হলেন । বিশেষ করে বাবার প্রতি এমন ভালোবাসা আজকালকার ছেলেমেয়েদের উপর দেখা যায় না । তখনই তার মাথায় একটা ভাবনা এল । এনামুল কবির বললেন, তুমি আজকে অফিসের পরে আমার সাথে একটু দেখা কর । এতো অফিস কোন ভাবেই দিবে না । তবে দেখা যাক আমি কী করতে পারি ! ঠিক আছে?
-জ্বী স্যার !

শাহেদ চলে যাওয়ার পরে একটা লম্বা সময় ভাবলেন তিনি । শেষে তার মনে হল কাজটা করাই ঠিক হবে । যদিও জেনির একটা মতামত রয়েছে । একবার নিজের ভুলের কারণে মেয়েটার উপর বেশ বড় একটা ঝড় বয়ে গেছে । সেই কারণে এনামুল কবির কখনো নিজেকে মাফ করতে পারেন নি । কীভাবে সেই ভুল ঠিক করবেন সেটা বারবার ভেবেছেন । শাহেদ কী সেই সমাধান হতে পারে?

অফিস টাইম শেষ হওয়ার পরে শাহেদ আবারও এনামুল কবিরের অফিস রুমে এসে হাজির হল । শাহেদের জন্যই এনামুল কবির অপেক্ষা করছিল। শাহেদ বসতেই বললে, সরাসরি কাজের কথা বলি । আমি চেষ্টা করেছি তোমার জন্য । ১০ লাখের বেশি আসলে ম্যানেজ করা সম্ভব না । এটা নিতে চাইলে কাল কিংবা পরশুর ভেতরে স্যাংশন হয়ে যাবে । সপ্তাহ খানেকের ভেতরে টাকা পেয়ে যাবে হাত । ঠিক আছে !
শাহেদের মুখটা একটু বিষণ্ণ হল । বাকি দশ লাখ কিভাবে জোগার করবে সেটাই ভাবছে । তবে তখনই তার মনে হল যে এনামুল কবির তাকে আরো কিছু বলার জন্য ডেকেছেন । কেবল এই সংবাদের জন্য আসতে বলার কথা না ।
-তবে তোমার জন্য আমার আলাদা একটা প্রস্তাব আছে । প্রস্তাবটা শোনার আগে তোমাকে বলি যে চাইলে তুমি এটা একবাক্যে নাকোচ করে দিতে পারো । না করলে এটার জন্য কোন প্রভাব আমাদের ভেতরে পরবে না । কেবল একটা অনুরোধ যে ব্যাপারটা কাউকে বলবে না । ওকে?
-জ্বী স্যার ।

একটু থেমে বড় একটা বদ নিয়ে এনামুল কবির বলা শুরু করলেন, আমি তোমাকে সম্পূর্ণ ২৯ লাখ টাকাই দিতে রাজি । আমার নিজের ফান্ড থেকে আমি দিবো তোমাকে ! তবে এর জন্য আমার মেয়েকে বিয়ে করতে হবে ।

শাহেদ বেশ বড় বড় চোখ করেই তাকিয়ে রইলো । এটা সে কোন ভাবেই আশা করে নি । এনামুল কবির বললেন, আমার মেয়ের আগে একবার বিয়ে হয়েছিলো তুমি জানো । জেনির বিয়েটা বছর চারেক টিকেছিল । তারপর ওর ডিভোর্স হয়ে যায় । ডিভোর্সের কারণ হচ্ছে আমার মেয়েটার কিছু শারীরিক সমস্যা রয়েছে । সে কোন দিন মা হতে পারবে না । চিকিৎসার চেষ্টা হয়েছিলো তবে কাজ হয় নি। তার স্বামী তার সাথে আর থাকতে রাজি হয় নি । এরপর থেকে আমার হাসিখুশি মেয়েটা একেবারে নিশ্চুপ হয়ে গেছে । আর বিয়ে করবে না ঠিক করেছে । কিন্তু বাবা হিসাবে আমি এটা কিভাবে মেনে নিই বল ! আমার মরার পরে ওকে কে দেখবে । তোমাকে আমি অনেক আগে থেকেই চিনি । তোমাকে যতখানি আমি চিনেছি আমার মনে হয়েছে যে তুমি আমার মেয়েকে দেখে রাখবে । যে ছেলে নিজের বাবার জন্য এতো বড় স্যাকরিফাইস করতে পারে সে কখনই নিজের দায়িত্ব অবহেলা করতে পারে না ।

একটু থামলেন এনামুল কবির । তারপর বললেন, তোমার সাথে বিয়ে হলে আমি মরেও শান্তি পাবো । আমি কেবল আমার মেয়েটাকে দেখে রেখো তুমি । আমি ছাড়া আর কেউ নেই ওর !

কথা শেষ করে কেউ কোন কথা বলল না । দীর্ঘক্ষণ চুপ করে রইলো দুজনই । এরপর এনামুল কবির বললেনম তোমাকে এখনই জবাব দিতে হবে না । ভাব । ভেবে তারপর বোলো । চাইলে অবশ্যই না করতে পারো । কোন সমস্যা নেই । ঠিক আছে? আমাকে জানিও তাহলে আমি অফিস থেকে ঐ টাকাটা স্যাংশন করার কথা বলে দিব ।

শাহেদ সালাম দিয়ে উঠে চলে গেল ।

দু
জেনি কোন দিন ভাবে নি আবারও যে বিয়ের পিড়িতে বসবে । কিন্তু শেষ পর্যন্ত আবারও বসতে হল। নিজের বাবাকে সে মানা করতে পারে নি কোন ভাবেই । শাহেদ নামের মানুষটার সাথে বিয়ে হয়েছে তার । একদমই ঘরোয়া ভাবে । শাদের পরিবার থেকে ওর বাবা আসতে পারেন নি । বড় দুই ভাবই ভাবী এসেছিলো । তবে ভিডিও কলে তাদের সাথে কথা হয়েছে ।

বাসর রাতে ঢুকেই শাহেদ একটু হাসলো । ওর খাটের উপরে বসতে বসতে বলল, বিয়ে তাহলে হয়ে গেল !
-হ্যা ।
-আমি কখনো ভাবি নি যে আমি কোন বিয়ে করতে পারবো ।
-আমিও ভাবি নি।
-কিন্তু দেখো তারপরেও ভাগ্য আমাদের এক সাথে নিয়ে এসেছে ।

জেনি কিছু বলল না । শাহেদ বলল, তুমি নিশ্চয়ই জানো আমি আসলে কেন বিয়ে করেছি । তোমার বাবা তোমাকে বলেছে?
-হ্যা ।
-আমি জানি না তুমি কী ভাবছো আমার সম্পর্কে । আমি আসলে …
-আমি আসলে কিছুই ভাবছি না ।
-তবে আমি একটা কথা তোমাকে এখনই বলে দিতে চাই । আমি নিশ্চিত করে বলছি না যে আমাদের পরবর্তি জীবনটা সুখই সুখ হবে । কোন দিন ঝগড়া হবে না কিংবা মন মালিন্য হবে না । তবে ঝগড়া যে কারণেই হোক না কেন তোমার ঐ ব্যাপারটা নিয়ে কখনো আমাদের মাঝে কথা হবে না । আই প্রোমিস ইউ দ্যাট । তুমি এটা কখন হীন্যমন্যতায় ভুগবে না । ঠিক আছে?

জেনির কেন জানি কথাটা খুব বেশি ভাল লাগবে । একভাবেই তাকিয়ে রইলো ও শাহেদের দিকে । শাহেদ যে সত্যি বলছে সেটা ও বুঝতে পারলো । মানুষের চোখ কখনো মিথ্যা বলে না । ওর আগের স্বামী যখন ওর এই ব্যাপারটা জানতে পেরেছিলো তখন তার পরিবর্তনটা সব থেকে বেশি নজরে এসেছিলো তার চোখে । কী ঘৃণা করুণার চোখেই না সে তখন তাকাতো জেনির দিকে । এটা কোন ভাবেই জেনি সহ্য করতে পারতো না । নিজেকে বড় ছোট মনে হত ।

দিন জেতে লাগলো । ওদের সংসার শুরু হল । জেনি প্রথমে একটু সংকুচিত হয়ে থাকতো শাহেদের সামনে, শাহেদও যে প্রথম প্রথম একটু লজ্জা পেত না সেটা না । তবে সময়ের সাথে দুজনেই স্বাভাবিক হয়ে গেল । বিয়ের প্রায় মাস খানেক পরে ওরা প্রথম একে অন্যের খুব কাছে এল । আদর করলো একে অন্যকে । তারপরই আরও একটু কাছাকাছি চলে এল ওরা !

জেনি আগে একটা চাকরি করতো তবে যখন ওর শারীরিক এই ব্যাপারটা সবাই জেনে যায় তখন সে চাকরিটা ছেড়ে দিয়ে ঘরেই থাকতো । মানুষের সাথে মিশতো না খুব একটা । এমন কি বন্ধু বান্ধবদের সাথেও না । তবে শাহেদের সাথে বাইরে যেতে শুরু করলো । অফিসের পরে মাঝে মাঝে বের হত কিংবা ছুটির দিনে দুজন এদিক ওদিক ঘুরতে যেত । হানি মুনে গেল নেপালে, বিয়ের দুই মাস পরে । জীবনটা আস্তে আস্তে অনেক সুন্দর লাগতে শুরু করলো জেনির কাছে ।

বছর খানেক পরে একবার ওরা গেল শাহেদদের বাসায় । সেখানে শাহেদের মা ওকে বেশ ভাল ভাবে গ্রহন করলো । সে জানে জেনির আগে একটা বিয়ে হয়েছিলো তবে জেনি যে শাহেদের বসে মেয়ে এই কারণে সে কিছু বলতে সাহস পায় নি । তবে জেনি খুব ভাল করেই জানে শাহেদ ওর মাকে খুব বুঝিয়ে শুনিয়ে নিয়েছে । জেনির সামনে যেন বেফাঁস কথা বলে না ফেলে । অবশ্য জেনি মানসিক ভাবে প্রস্তুতি নিয়েই রেখেছি সেটা শোনার জন্য । তবে জেনি নিজেও জানে যে শাহেদ ওর বাচ্চা না হওয়ার ব্যাপারটা নিশ্চিত ভাবেই ওর বাসায় বলে নি । বলবে না সে জানে । কিন্তু একদিন না একদিন ঠিকই জানবে তারা । তখন কী হবে ? তখন ওকে নিয়ে যে কথা গুলো তারা ভাববে কিংবা বলবে সেটা সহ্য করতে পারবে তো ! জেনি জানে না ।

শাহেদদের বাসায় থাকার সময়ই জেনির শরীর হঠাৎ খারাপ হল । ডাক্তার ডাকা হল । ডাক্তার লক্ষ্যন শুনে একটু হাসলেন । তারপর বললেন, আপনি সম্ভবত প্রেগনেন্ট !

কথা শুনে শাহেদের দিকে তাকালো জেনি ! চোখে একটা ভয় মিশ্রিত দৃষ্টি । ডাক্তার বলল, কিট নিয়ে এসে চেক করতে পারেন । অথবা আরো নিশ্চিত হতে ল্যাব টেস্ট করতে পারেন । তবে আমার ধারণা ভুল হবে না ।

বাসায় একটা আনন্দের ধারা বয়ে গেল । জেনির ব্যাপারটা এতো ভাল লাগলো । তার বড় বিশ্বাস করতে ইচ্ছে হল যেন ব্যাপারটা যেন সত্য । শাহেদের মা ফকির ডেকে খাওয়ালেন । বাসায় একটা উৎসব উৎসব ভাব চলে ।
রাতের বেলা শাহেদকে জড়িয়ে ধরে জেনি বলল, আসল সত্যটা মা জানতে পারলে কী হবে?
-মন খারাপ করবে একটু । ওটা নিয়ে চিন্তা করো না তো ।
-জানো মায়ের খুশি দেখে এতো ভাল লাগছিলো । বারবার মনে হচ্ছিলো ইস যদি সত্যি হত ব্যাপার !

বলতে বলতেই জেনি ফুঁপিয়ে কেঁদে উুঠলো । নিজের কান্না আটকানোর চেষ্টা করলো বটে কিন্তু কাজ হল না কিছুতেই । শাহেদ ওকে একটু শক্ত করেই জরিয়ে ধরলো । তারপর বলল, যা হবে আমরা দুজন মিলে সেটা মোকাবেলা করবো । ঠিক আছে !
-হুম !
-আমি সব সময় আছি তোমার পাশে !

দুদিন পরে যখন শাহেদরা যখন ঢাকায় ফিরবে তখন শাহেদেরমা বারবার করে বলল যে বউমা এখানেই থাকুক । ঢাকায় ওর দেখা শোনা কে করবে এই সময়ে ! শাহেদ যতই বোঝানোর চেষ্টা করলো কাজ হল না । শেষে মাস খানেক পরে হয় জেনি এখানে আসবে নয়তো তিনি ডাকা যাবে থাকতে এটাই ঠিক হল ।

তিন

শাহেদ অফিস থেকে ফিরে দেখতে পেল জেনি শোফার উপরে পা তুলে বসে আছে । একটু আগে যে কান্না করেছে সেটা ওর চোখ দেখেই বুঝতে পেরেছে । শাহেদ ওর সামনে বসতে বসতে বলল, কী হয়েছে ? শরীর খারাপ লাগছে ?
জেনি কোন কথা না বলে তাকালো শাহেদের দিকে । তারপর হু হু করে কেঁদে উঠলো ।
শাহেদ ওকে জড়িয়ে ধরতে ধরতে বলল, কী হয়েছে বলবে তো ! আমি কীভাবে বুঝবো ?
জড়িয়ে ধরেই জেনি বলল, তোমাদের ঐ গ্রামের ডাক্তার ঠিক বলেছিলো।
-মানে?
-আমি ঢাকাতে এসেছে কিট দিয়ে পরীক্ষা করেছিলাম কয়েকবার । তারপর নিজে ল্যাবে গিয়ে পরীক্ষা করেছিলাম । আজকে রিপোর্ট এসেছে । আমি সত্যিই মা হতে চলেছি
শাহেদের যেন বিশ্বাস হল না । নিজেই রিপোর্টটা দেখলো । কেবল সেদিকেই তাকিয়ে রইলো । এখনও যেন বিশ্বাস হচ্ছে না ওর । সত্যিই মিরাকেল ঘটেছে ওদের সাথে !

শাহেদ তখনই ওর মাকে ফোন করলো । বলল যেন পরদিনই চলে আসে । ওদের বাসার কাজের লোককে নিয়ে চলে আসতে বলল ।

পরিশিষ্টঃ

শাহেদ অস্থির হয়ে পায়চারি করতে হাসপাতালের করিডোরে । ওটিতে জেনিকে ঢোকানো হয়েছে । এখন পর্যন্ত সব কিছু স্বাভাবিক আছে । তবে যে কোন ইমারজেন্সির জন্য সব রকম প্রস্তুতি গ্রহন করা হয়েছে । রক্তের ডোনার ম্যানেজ করা হয়েছে । আরো যা যা দরকার সব ব্যবস্থা করা হয়েছে । করিডোরের বেঞ্চে শাহেদের মা বাবা আর জেনির বাবা মাও রয়েছে ।তারা বসে আছেন চিন্তিত মুখে ।

শাহেদের চিন্তা সব থেকে বেশি । জীবনে এমন অবস্থায় সে আসবে কোন দিন ভাবে নি । অথচ উপরওয়ালা তাকে সেখানেি এনে দাড় করিয়েছেন । বারবার কেবল উপরওয়ালাকে ডাকতে লাগলো শাহেদ । বারবার বলতে লাগলো তার বউ যেন সুস্থ থাকে ভাল থাকে ! বাচ্চাটা জীবিত আর সুস্থ ভাবে জন্মায় !

তখনই দরজা খুলে ডাক্তার বের হয়ে এল। শাহেদের যেন পা কাঁপতে শুরু করলো । সে ডাক্তারের কাছে যেতে সাহস পাচ্ছে না । তবে ডক্তার যখন নিজের মাস্ক খুলল তার হাসি মাখা মুখ দেখে বুঝতে পারলো সব কিছু ভাল হয়েছে । সব ভাল হয়েছে ।
তখনই শাহেদের মাথা ঘুরে উঠলো । এতো উত্তেজনা তারপর এই উত্তেজনা প্রশমন শাহেদের সহ্য হল না । সে মেঝেতে জ্ঞান হারিয়ে পড়লো ।

শাহেদের যখন জ্ঞান ফিরতো দেখতে ওর মা ওর মুখের দিকে তাকিয়ে আছে । ওর দিকে তাকিয়ে খানিকটা বিরক্ত কন্ঠে বলল, তোর মত গাধা আমি জীবনেও দেখি নি । কই নিজের মেয়েকে কোলে নিবে না, তোকে নিয়ে টানাটানি শুরু হয়ে গেছে !
শাহেদ কেবল বোকার মত হাসলো । বলল, ওরা ভাল আছে ?
-আছে । সবাই ভাল আছে । এখন ওঠ । তোর বাবা তো রেগে আগুন । এখন ওঠ জলদি ওঠ !

শাহেদ উঠে বসলো । জীবনটা ওর কাছে বড় মধুর লাগছে । স্বপ্নের মত মধুর এই জীবন যে সে পাশে কোন দিন ভাবেও নি ।

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 4.8 / 5. Vote count: 81

No votes so far! Be the first to rate this post.


Discover more from অপু তানভীর

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

About অপু তানভীর

আমি অতি ভাল একজন ছেলে।

View all posts by অপু তানভীর →

One Comment on “স্বপ্ন জীবন”

Comments are closed.