নীলার মনটা ভাল নেই । আজকে সারা দিন কেমন যেন বিষণ্ণতায় কেটেছে । সকালে সজিব অফিসের যাওয়ার পর থেকে মনের ভেতরটা এমন করছে । বেশ কয়েকবার সজিবের সাথে কথা বলেছে বটে কিন্তুটা মোটেও শান্ত হয় নি । ওকে কয়েকবার বলেছে যে অফিস থেকে যেন দ্রুত চলে আসে আজকে । সজিবও কথা দিয়েছে যে চলে আসবে । তবে কাজ শেষ না করে তো আর আসতে পারে না । কাজ শেষ করে যত দ্রুত সম্ভব বাসায় চলে আসবে ।
নীলার একটু অভিমান হয়েছে । স্বামীরা এমন কেন হবে ? স্বামীরা হবে বউ পাগল । বউ যখন অফিস থেকে বলবে তখনই চলে আসবে । বউকে শান্ত করাই স্বামীদের প্রধান কাজ অথচ সজিবটা এসবের কিছুই বোঝে না । আগে অফিস তারপর তার বউ । নীলা ঠিক করে রেখেছে যে আজকে সজিব বাসায় এলে ওর সাথে কথা বলবে না । ওকে বুঝিয়ে দিবে যে ও রাগ করেছে । এমন কি এর পরে ফোন করলেও ফোন ধরবে না ।
সন্ধ্যার দিকে নীলাদের বাড়িটা একেবারে শান্ত হয়ে যায় । শহরের একেবারে শেষ প্রান্তে বাড়িটা । সজিব আর নীলা মূলত শান্তিতে থাকতেই এতো দুরে বাড়িটা ভাড়া নিয়েছে । সজিবের নিজের গাড়ি রয়েছে । তাই অফিসে যাওয়ার আসার ব্যাপারে খুব একটা সমস্যা হয় না । আর নীলার জন্য আলাদা ভাবে একটা সাইকেল রাখা আছে । নীলা নিজে সাইকেল চালাতে বেশ পছন্দ করে । এই দুরে বাসা নেওয়ার একটা কারণ হচ্ছে নীলা যাতে শান্তিমত সাইকেল চালাতে পারে ।
আজেও বিকেল বেলা সাইকেল চালিয়ে এল । গ্রামের দুরে বাজারেও গিয়ে হাজির হল সে । কেনা করলো কিছু । তারপর চলে এল বাসায় । যখন বাসায় এল তখন প্রায় সন্ধ্যা হয়ে গেছে । সজিবের আসার সময় হয়ে গেছে । যদিও মনে মনে ভেবে রেখেছিলো সজিবের সাথে কথা বলবে না, অভিমান করে থাকবে তবে সজিব আসার আগেই নিজে নিজেই সেই অভিমানটা দুর হয়ে গেল । কেবলই মনে হতে লাগলো সজিব এলেই আজকে ওকে অনেক আদর করবে । দরজা থেকেই ওকে আদর করা শুরু করবে ।
রাত আটটা যখন বাজলো তখনও দেখা গল সজিবের কোন খোজ নেই । এতো দেরি কেন করছে কেন সজিব ?
অফিসে কি কাজের চাপ একটু বেশি?
সজিবকে ফোন দেওয়ার জন্য ফোনটা হাতে নিতেই ফোনটা বেজে উঠলো । সজিবের ফোন । ফোন আসার পরেই আবারও সেই অভিমান এসে জড় হল । একবার মনে হল ফোন ধরবে না সে । এতো দেরি করে সে কেন ফোন দিবে? আজকে ধরবে না সে ফোন !
তবে আবারও কাজ হল না । তিনবার রিং বাজার পরেই ফোনটা ধরলো নীলা । তারপর বলল, কী ব্যাপার কোথায় তুমি শুনি?
ওপাশ থেকে সজিবের একটু হাসির আওয়াজ শোনা গেল ! সে বলল, আরে আমার লক্ষী বউটা । রাগ করেছো !
-তো কী করবো শুনি? আমার বুঝি একা থাকতে ভয় করে না ।
-ভয় নেই শোনা । কোন ভয় নেই । আমি চলে আসবো এখনই ।
-দেরি কেন হচ্ছে?
-আরে বল না আর ! রাস্তায় একটা এক্সিডেন্ট হয়েছে । পুরো রাস্তা বন্ধ হয়ে আছে । আমি সেই যে জ্যামে পড়েছি এখনও ছুটতে পারি ।
এক্সিডেন্টের কথা শুনেই নীলা বলল, তুমি ঠিক আছো তো?
-হ্যা । কোন সমস্যা নেই । তুমি চিন্তা করো না । আমি জ্যাম ছুটলেই চলে আসবো । একটু অপেক্ষা কর হানি । কেমন !
নীলা ফোন রেখে দিল । কখন রাস্তার জ্যাম ছুটবে সেটা জানে না কেউ । এই সময়ে ওকে একাই থাকতে হবে আর সজিবের জন্য অপেক্ষা করতে হবে । সময় কাটানোর জন্যই নীলা টিভিটা চালু করলো । নানান চ্যানেল ঘুরতে ঘুরতেই দেখতে পেল সংবাদটা । একটু আগে সজিব যে এসিডেন্টের কথা বলল সেটারই লাইভ সংবাদ দেখাচ্ছে । সংবাদটা সরিয়ে ফেলতে যাবে তখনই লরির সাথে সংঘর্ষে দুমড়ে মুচড়ে যাওয়া গাড়িটার দিকে চোখ গেল ওর ।
লাল রংয়ের একটা সিডান ।
সজিবের গাড়িও লাল সিডান !
মনের ভেতর থেকে চিন্তাটা বের করে দিল একেবারে । কারণ একটু আগেই সজিবের সাথে কথা হয়েছে । সজিব নিশ্চিত ভাবেই জ্যামের ভেতরে আছে । এটা অন্য কারো গাড়ি । কিন্তু যখন নম্বর প্লেটটা দেখালো টিভি স্ক্রিনে তখন নীলা চমকে উঠলো । এটা সজিবের গাড়ি । কোন সন্দেহ নেই । তাহলে কি সজিব অন্য গাড়িটে ছিল । মাঝে মাঝেই সজিব ওর গাড়ি ওর অফিসের আরাফাত ভাইকে ধার দেয় । আজও নিশ্চিত ভাবেই দিয়েছে ।
তখনই সে ফোনটা হাতে নিল । সজীবকে ফোন দিল । ফোন তখনও রিসিভ হয় নি । রিং হয়ে যাচ্ছে । নীলার চোখ টিভির দিকে । সেখানেই দেখা যাচ্ছে গাড়ি থেকে একটা মৃত দেহ বের করছে লোকজন । স্পষ্ট সজিবের রক্তাক্ত মুখটা দেখতে পেল নীলা । চোখ দিয়ে পানি বের হয়ে এল । ঠিক সেই সময়ে ফোনটা রিসিভ হল । ওপাশ থেকে সজিবের কাঁপা কাঁপা কন্ঠ শোনা গেল ।
-ইয়েস হানি ! আমি এই তো চলে এসেছি ।
সজিবের কন্ঠে অপার্থিব ভাবটা নীলা ঠিকই টের পেল । এতো দিনের পরিচিত সজিবের কন্ঠস্বর শুনে তীব্র একটা ভয় এসে জড় হল !
ফোনটা কেটে দিল ও । এবং তার একটু পরেই দরজায় ধাক্কা পরলো । সাথে সাথেই যেন কেঁপে উঠলো নীলা ।
সজিব চলে এসেছে ! একটু পরেই সজীবনের আবার সেই অপার্থিব কাঁপা কাঁপা আওয়াজটা শোনা গেল দরজার ওপাশ থেকে ।
হানি, আমি চলে এসেছি । আজকে না আমাকে দরজার কাছ থেকেই আদর করবে বলেছিলে !
নীলা কেবল চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইলো দরজার দিকে । সেখানে ক্রমাগত ধাক্কার আওয়াজ হচ্ছে !
এই গল্পটা আসলে আমার থিমে না । গতদিন এআইকে বললাম আমার মন ভাল নেই । একটা ভুতের গল্প শোনাও । সে আমাকে এই গল্পটা শোনালো । সেটারই একটু পরিবর্তন করে বাংলায় লিখে দিলাম ।
????
????