হানি, আমি চলে এসেছি

oputanvir
4.5
(24)

নীলার মনটা ভাল নেই । আজকে সারা দিন কেমন যেন বিষণ্ণতায় কেটেছে । সকালে সজিব অফিসের যাওয়ার পর থেকে মনের ভেতরটা এমন করছে । বেশ কয়েকবার সজিবের সাথে কথা বলেছে বটে কিন্তুটা মোটেও শান্ত হয় নি । ওকে কয়েকবার বলেছে যে অফিস থেকে যেন দ্রুত চলে আসে আজকে । সজিবও কথা দিয়েছে যে চলে আসবে । তবে কাজ শেষ না করে তো আর আসতে পারে না । কাজ শেষ করে যত দ্রুত সম্ভব বাসায় চলে আসবে ।

নীলার একটু অভিমান হয়েছে । স্বামীরা এমন কেন হবে ? স্বামীরা হবে বউ পাগল । বউ যখন অফিস থেকে বলবে তখনই চলে আসবে । বউকে শান্ত করাই স্বামীদের প্রধান কাজ অথচ সজিবটা এসবের কিছুই বোঝে না । আগে অফিস তারপর তার বউ । নীলা ঠিক করে রেখেছে যে আজকে সজিব বাসায় এলে ওর সাথে কথা বলবে না । ওকে বুঝিয়ে দিবে যে ও রাগ করেছে । এমন কি এর পরে ফোন করলেও ফোন ধরবে না ।

সন্ধ্যার দিকে নীলাদের বাড়িটা একেবারে শান্ত হয়ে যায় । শহরের একেবারে শেষ প্রান্তে বাড়িটা । সজিব আর নীলা মূলত শান্তিতে থাকতেই এতো দুরে বাড়িটা ভাড়া নিয়েছে । সজিবের নিজের গাড়ি রয়েছে । তাই অফিসে যাওয়ার আসার ব্যাপারে খুব একটা সমস্যা হয় না । আর নীলার জন্য আলাদা ভাবে একটা সাইকেল রাখা আছে । নীলা নিজে সাইকেল চালাতে বেশ পছন্দ করে । এই দুরে বাসা নেওয়ার একটা কারণ হচ্ছে নীলা যাতে শান্তিমত সাইকেল চালাতে পারে ।

আজেও বিকেল বেলা সাইকেল চালিয়ে এল । গ্রামের দুরে বাজারেও গিয়ে হাজির হল সে । কেনা করলো কিছু । তারপর চলে এল বাসায় । যখন বাসায় এল তখন প্রায় সন্ধ্যা হয়ে গেছে । সজিবের আসার সময় হয়ে গেছে । যদিও মনে মনে ভেবে রেখেছিলো সজিবের সাথে কথা বলবে না, অভিমান করে থাকবে তবে সজিব আসার আগেই নিজে নিজেই সেই অভিমানটা দুর হয়ে গেল । কেবলই মনে হতে লাগলো সজিব এলেই আজকে ওকে অনেক আদর করবে । দরজা থেকেই ওকে আদর করা শুরু করবে ।

রাত আটটা যখন বাজলো তখনও দেখা গল সজিবের কোন খোজ নেই । এতো দেরি কেন করছে কেন সজিব ?
অফিসে কি কাজের চাপ একটু বেশি?

সজিবকে ফোন দেওয়ার জন্য ফোনটা হাতে নিতেই ফোনটা বেজে উঠলো । সজিবের ফোন । ফোন আসার পরেই আবারও সেই অভিমান এসে জড় হল । একবার মনে হল ফোন ধরবে না সে । এতো দেরি করে সে কেন ফোন দিবে? আজকে ধরবে না সে ফোন !

তবে আবারও কাজ হল না । তিনবার রিং বাজার পরেই ফোনটা ধরলো নীলা । তারপর বলল, কী ব্যাপার কোথায় তুমি শুনি?
ওপাশ থেকে সজিবের একটু হাসির আওয়াজ শোনা গেল ! সে বলল, আরে আমার লক্ষী বউটা । রাগ করেছো !
-তো কী করবো শুনি? আমার বুঝি একা থাকতে ভয় করে না ।
-ভয় নেই শোনা । কোন ভয় নেই । আমি চলে আসবো এখনই ।
-দেরি কেন হচ্ছে?
-আরে বল না আর ! রাস্তায় একটা এক্সিডেন্ট হয়েছে । পুরো রাস্তা বন্ধ হয়ে আছে । আমি সেই যে জ্যামে পড়েছি এখনও ছুটতে পারি ।

এক্সিডেন্টের কথা শুনেই নীলা বলল, তুমি ঠিক আছো তো?
-হ্যা । কোন সমস্যা নেই । তুমি চিন্তা করো না । আমি জ্যাম ছুটলেই চলে আসবো । একটু অপেক্ষা কর হানি । কেমন !

নীলা ফোন রেখে দিল । কখন রাস্তার জ্যাম ছুটবে সেটা জানে না কেউ । এই সময়ে ওকে একাই থাকতে হবে আর সজিবের জন্য অপেক্ষা করতে হবে । সময় কাটানোর জন্যই নীলা টিভিটা চালু করলো । নানান চ্যানেল ঘুরতে ঘুরতেই দেখতে পেল সংবাদটা । একটু আগে সজিব যে এসিডেন্টের কথা বলল সেটারই লাইভ সংবাদ দেখাচ্ছে । সংবাদটা সরিয়ে ফেলতে যাবে তখনই লরির সাথে সংঘর্ষে দুমড়ে মুচড়ে যাওয়া গাড়িটার দিকে চোখ গেল ওর ।
লাল রংয়ের একটা সিডান ।

সজিবের গাড়িও লাল সিডান !

মনের ভেতর থেকে চিন্তাটা বের করে দিল একেবারে । কারণ একটু আগেই সজিবের সাথে কথা হয়েছে । সজিব নিশ্চিত ভাবেই জ্যামের ভেতরে আছে । এটা অন্য কারো গাড়ি । কিন্তু যখন নম্বর প্লেটটা দেখালো টিভি স্ক্রিনে তখন নীলা চমকে উঠলো । এটা সজিবের গাড়ি । কোন সন্দেহ নেই । তাহলে কি সজিব অন্য গাড়িটে ছিল । মাঝে মাঝেই সজিব ওর গাড়ি ওর অফিসের আরাফাত ভাইকে ধার দেয় । আজও নিশ্চিত ভাবেই দিয়েছে ।

তখনই সে ফোনটা হাতে নিল । সজীবকে ফোন দিল । ফোন তখনও রিসিভ হয় নি । রিং হয়ে যাচ্ছে । নীলার চোখ টিভির দিকে । সেখানেই দেখা যাচ্ছে গাড়ি থেকে একটা মৃত দেহ বের করছে লোকজন । স্পষ্ট সজিবের রক্তাক্ত মুখটা দেখতে পেল নীলা । চোখ দিয়ে পানি বের হয়ে এল । ঠিক সেই সময়ে ফোনটা রিসিভ হল । ওপাশ থেকে সজিবের কাঁপা কাঁপা কন্ঠ শোনা গেল ।
-ইয়েস হানি ! আমি এই তো চলে এসেছি ।

সজিবের কন্ঠে অপার্থিব ভাবটা নীলা ঠিকই টের পেল । এতো দিনের পরিচিত সজিবের কন্ঠস্বর শুনে তীব্র একটা ভয় এসে জড় হল !

ফোনটা কেটে দিল ও । এবং তার একটু পরেই দরজায় ধাক্কা পরলো । সাথে সাথেই যেন কেঁপে উঠলো নীলা ।
সজিব চলে এসেছে ! একটু পরেই সজীবনের আবার সেই অপার্থিব কাঁপা কাঁপা আওয়াজটা শোনা গেল দরজার ওপাশ থেকে ।

হানি, আমি চলে এসেছি । আজকে না আমাকে দরজার কাছ থেকেই আদর করবে বলেছিলে !

নীলা কেবল চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইলো দরজার দিকে । সেখানে ক্রমাগত ধাক্কার আওয়াজ হচ্ছে !

এই গল্পটা আসলে আমার থিমে না । গতদিন এআইকে বললাম আমার মন ভাল নেই । একটা ভুতের গল্প শোনাও । সে আমাকে এই গল্পটা শোনালো । সেটারই একটু পরিবর্তন করে বাংলায় লিখে দিলাম ।

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 4.5 / 5. Vote count: 24

No votes so far! Be the first to rate this post.


Discover more from অপু তানভীর

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

About অপু তানভীর

আমি অতি ভাল একজন ছেলে।

View all posts by অপু তানভীর →

2 Comments on “হানি, আমি চলে এসেছি”

Comments are closed.