তিহার গল্প

oputanvir
4.8
(62)

তিহা যখন আমাকে বলল যে ওর সাথে সুন্দরবন যেতে আমি একটু বেশ খানিকটা অবাক হয়েছিলাম । মেয়েটাকে আমি সব সময় খুব গম্ভীর দেখেছি । নিজের কাজ কর্ম ছাড়া অন্য কিছু যেন সে বুঝে না, কাজের বাইরে কাউকে চিনে না । সেই মেয়ে আমাকে পরশুদিন দুপুরে এসে বলল, আসিফ একটা কথা বলবো?

আমি তখন লাঞ্চে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছি । হাতের কাজটা শেষ করে পিসিটা বন্ধ করে দিয়েছি । তখনও পুরোপুরি বন্ধ হয় নি । আমি বললাম, অফিসের কিছু? পিসি তো বন্ধ করে দিলাম ।
-না অফিসের নয়।
-ওকে বলুন ।

আমি একটু অবাক হয়ে দেখলাম ও পাশের ডেস্কের দিকে তাকালো । ইতিমধ্যে আশে পাশের সবাই লাঞ্চে চলে গেছে। আমার মনে হল তিহা আমাকে এমন কিছু বলতে যাচ্ছে যা ও চায় না অন্য কেউ শুনুক । আমি একটু অবাক না হয়ে পারলাম না । তিহাকে আমি পছন্দ করি এটা অফিসের সবাই জানে । তিহা যদিও এই ব্যাপারে কোন আগ্রহ দেখায় নি । সব সময় গম্ভীর আর শীতল থেকেছে । তবে আমাকে সে এড়িয়েও যায় নি । অফিসের ভেতরে একমাত্র আমিই একজন যার সাথে অফিসের বাইরের কোন কথা সে বলে । মাঝে মাঝে আমরা একসাথে দুপুরের খাবারও খাই ।

তিহা আমাকে বলল, আসিফ সুন্দরবন যাবেন? সামনের ছুটিতে?

আমি সত্যিই একটু অবাক হলাম তিহার প্রস্তাব শুনে । বিশেষ করে ওর মত গম্ভীর একটা মেয়ে আমাকে এমন একটা প্রস্তাব দিবে সেটা আমি ভাবি নি । আমি বললাম, আমি আর আপনি । আর কেউ যাবে ?
-না আর কেউ । আমরা দুজন । যাবেন ?
আমি দুই সেকেন্ড সময় নিলাম । তারপর বলল, চলুন ।
-ওকে । আমি তাহলে ব্যবস্থা করি !

তিহা আমাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে নিজের ডেস্কের দিকে চলে গেল । আমি আরো কিছু সময় বসে রইলাম । আমি যদিও খুবএকটা আশাবাদী হলাম না । আমার কেন জানি মনে হতে লাগলো তিহা হয়তো কালই বলবে যে ওর যাওয়া হবে না । পরদিন তিহা আমাকে মেসেজ দিয়ে জানালো যে শুক্রবার সকালে বাস ছাড়বে সায়দাবাদ থেকে । আমি যেন ঠিক সাতটার ভেতরে পৌছে যাই সেখানে ।

তারপর আমার সাথে আর কোন কথা নেই । সত্যি বলতে বাকি দুইদিন তিহার সাথে আমার একটা বারও কথা হল না । আমরা যে ট্যুরে যাচ্ছি এটা যেন ও ভুলেই গেল । আমার বৃহস্পতিবার রাতে উত্তেজনায় ঠিক ঘুম এল না । বারবার কেবল মনে হচ্ছিলো যে সকালে ঘুম থেকে উঠেই দেখবো তিহা আমাকে মেসেজ পাঠিয়েছে যে ওর যাওয়া হবে না । এই ভয়টাই আমি পাচ্ছিলাম সব থেকে বেশি
তবে আশার কথা হচ্ছে সকালে ঘুম থেকে উঠে এমন কোন মেসেজ আমি দেখলাম না । ব্যাগ রাতেই গুছিয়ে রেখেছিলাম । গোসল করে বাসস্ট্যান্ডের দিকে রওনা দিলাম । পৌছে দেখি তিহা আমার আগেই পোছে গেছে । আমি ওকে দেখেই একটু খাবি খেলাম ।

তিহাকে আজকে আমি প্রথমবারের মত জিন্সে দেখলাম । অফিসে সব সময় ও শাড়ি পরেই আসতো । মাঝে মধ্যে ওকে সেলোয়ার কামিজ পরতে দেখলাম । কিন্তু কখনই ওকে জিন্সে দেখি নি । একটা সাদা রংয়ের টপের সাথে কালো টাইট জিন্স। পায়ে স্নিকার্সটা কালো । চুল গুলো পনি টেইল করে বেঁধেছে । মুখে হালকা মেকাপ দিয়েছে । ওকে একেবারে যেন অন্য রকম লাগছে । আমার দিকে চোখ পড়তেই হাসলো একটু ।

ঢাকা থেকে মংলা পৌছালাম । তারপর সেখান থেকে রিসোর্টের বোটে করে পৌছালাম রিসোর্টে । আমাদের সাথে আরো একটা গ্রুপ ছিল আট জনের । ওরা বোটের ছাদে বসে আড্ডা দিচ্ছিলো । আমি আর তিহা বসে ছিলাম এককোন । তিহা আমার সাথে টুকটাক গল্প করেই যাচ্ছিলো । আমি আসলে ওকে দেখছিলাম । আমার তখনও ঠিক বিশ্বাস হচ্ছিলো না যে আমি তিহার সাথে ট্যুরে বের হয়েছি ।

একটা সময়ে তিহা আমার কাছ থেকে ফোনটা নিয়ে নিল । তারপর সেটা নিয়ে এরোপ্লেন মুডে দিয়ে দিল । আমার দিকে তাকিয়ে বলল, এই দুইদিন বাইরের সাথে কোন যোগাযোগ না । যদিও রিসোর্টে নেটওয়ার্ক থাকবে তবুও না ।
-আরে এভাবে একেবারে যোগাযোগ বন্ধ করে দিলে হয় নাকি?
তিহা বলল, অবশ্যই হয় । আমাদের অনেকের মাঝেই একটা ধারণা আছে যে আমাদের ছাড়া বুঝি দুনিয়া চলবে না । কিন্তু বিশ্বাস কত তুমি যদি না থাকো তবুও বাইরের পৃথিবী ঠিকই চলবে । ভাল ভাবেই চলবে।

সেই সময়েই আমি খেয়াল করলাম যে তিহা আমাকে তুমি করে বলছে । তবে সব থেকে বেশি অবাক হওয়ার ব্যাপারটা তখনও বাকি ছিল । আমরা যখন রিসোর্টে পৌছালাম তখন ঘটলো ব্যাপারটা । আমাদের ওয়েলকাম ড্রিংক দেওয়া হল । তারপর আমাদের গেস্ট বুকে নাম সই করতে হল । আমার আগেই তিহা সেখানে নাম সই করলো । এবং আমাকে অবাক করে দিয়ে সেখানে সে লিখলো মিস্টার এন্ড মিসেস ইকবাল । আমাদের জন্য একটা কাপল রুম সে বুক করেছে ।

আমার কাছে ব্যাপারটা হজম করা একটু কঠিন ছিল । তিহা যে কাপল রুম করবে সেটা আমি কল্পনাও করি নি । কিন্তু কিছু আমি বলতেও পারছি না । ও রুমের চাবি নিয়ে হাটা দিলো আমি বাধ্য হয়ে ওর পেছন পেছনে হাটতে লাগলো । সত্যি বলতে কি বেশ অস্বস্তি লাগছিলো আমার কাছে । আমি ওকে যতই পছন্দ করি এভাবে একই রুমে থাকার ব্যাপারটা একটু অস্বস্তি দিল আমাকে ।

রুমে ঢুকতেই দেখলাম তিহা বিছানার উপরে বসে রয়েছে । আমার দিকে তাকিয়ে বলল, শক খেয়েছো?
-একটু !
-তোমার চেহারা দেখে মনে হচ্ছে ভাল রকমের শক খেয়েছো ।
-হ্যা আসলে ….। আমি আসলে….।
-এতো চিন্তা করো না তো প্লিজ ।

একটু পরেই অবশ্য স্বাভাবিক হয়ে এলাম । বিশেষ করে ব্যাপারটা ভাবতেই কেমন যেন লাগছিলো । আনন্দময় অনুভূতি হচ্ছিলো নিজের কাছে । দুপুরের খাওয়ার সময় তিহার আচরণ এমন ছিল সবার সামনে যে সত্যিই মনে হল যে ও আমার বিয়ে করা স্ত্রী । আমি বুঝতে পারছিলাম যে ওর ভেতরে সবাইকে দেখানোর একটা স্পিহা ছিল । আমি সেই স্পিহাতেও যোগ দিচ্ছিলাম আপন আনন্দেই । পুরো বিকেলটা আমরা রিসোর্টের সামনে ডেকে বসে গল্প করছিলাম । রিসোর্টটা এতো দুরে তবুও বেশ মানুষ জন এসেছে । আগে থেকেই দেখলাম চারটা ফ্যামিলি রয়েছে । এছাড়া দুইটা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রুপ দেখলাম যাদের একটা আমাদের সাথেই এসেছে । একটা দেখলাম আমাদের মত কাপল গ্রুপ । ওরাও আমাদের মত একে অন্যের সাথে আঠার মত লেগেছিলো সব সময় ।

রাতের খাওয়া দাওয়ার পরে যখন ঘুমানোর সময় এল তখন সব থেকে বড় ঝামেলা হল । বিছানা তো একটা । আমি বললাম আমি নিচে শুই ।
-কেন বিছানাতো যথেষ্ট বড় ।
-না মানে!
-আমি যখন এসেছি সব জেনেই এসেছি । নাকি ? তবে তোমার অস্বস্তি লাগলে আমি কিছু বলবো না ।

আলো বন্ধ হয়ে গেল । একই বিছানায় তিহা শুয়ে রয়েছে আমার পাশে । যদিও একটা কোল বালিশ দেওয়া আমাদের মাঝে । কিছু সময় চুপ করে রইলাম আমি । আসলে কী যে বলবো সেটা খুজে পাচ্ছিলাম না । তিহাই আগে কথা বলল, আমার আচরণ খুব বেশি অস্বাভাবিক লাগছে কি?

আমি অনুভব করলাম যে তিহা আমার দিকে পাশ ফিরেছে । যদিও ঘরের আলো বন্ধ হয়েছে তারপরেও বাইরের আলো এসে ঘরের ভেতরে । আমিও ওর দিকে পাশ ফিরলাম । তারপর বলল, না । আমার কেবল মনে হচ্ছে যে তুমি খুব অস্থির হয়ে আছো ! কী হয়েছে আমাকে বলবে?

বেশ কিছু সময় তিহা চুপ করে রইলো । তারপর বলল, দায়িত্ব পালন করতে করতে আমি ক্লান্ত হয়ে গেছি আসিফ । সব কিছু থেকে আমার একটু ছুটি দরকার ছিল খুব । ছোট বেলা থেকেই সব কিছু করেছি অন্যের জন্য । যখন বুঝতে শিখেছি তখন অনুভব একদিন অনুভব করলাম যে আমার বাবা আসলে অন্য বাবাদের মত না । অন্য বাবারা যেমন ছেলে মেয়েদের প্রয়োজনটা মেটায় অন্তত সেটা পূরণ করার চেষ্টা করে আমার বাবা আসলে তেমন ছিল না । তাই আমাদের সব কিছু আমাদের নিজেদের করতে হত । একটা সময় বাবা আমাদের রেখে চলে গেলেন একেবারে । আমার মা যেন মহা সমুদ্রে পড়লেন । আমরা তখন তিনতে ভাইবোন । কোন মতে টিকে ছিলাম । একটু বড় হয়ে আমি ছাত্র পড়াতে শুরু করলাম । আমি অংকে বেশ ভাল ছিলাম । সেটাই একটু একটু করে আমাদের টিকিয়ে রেখেছিলো । একটা সময়ে আমার মায়ের মনে আমার উপরে আস্তা জন্মালো যে আমি ঠিক ঠিক আমাদের দেখে রাখতে পারবো । সেই যে আমার কাধে দায়িত্ব এল । আজও আমি মুক্ত হতে পারি নি । আমার সব কিছু এখন আমার এই দায়িত্ব কেন্দ্রিক । আমার স্কুল কলেজ বিস্ববিদ্যালয় জীবন অন্যদের মত ছিল না কখনই । এমন কি এই চাকরিতে ঢুকেও আমি অস্বাভাবিক একটা জীবন যাপন করছি ।

একটানে কথা গুলো বলে তিহা থামলো । তারপর আবার বলল, আমি জানি আপনি আমাকে পছন্দ করেন । আমার আচরণে বুঝতে পেরেছেন আমিও আপনাকে পছন্দ করি । কিন্তু ঐ যে দায়িত্ব । এটার জন্য আমি সাহস করে আপনার দিকে এগিয়ে যেতে পারি নি কখনই । স্বপ্ন যে দেখি না সেটা না কিন্তু সেই স্বপ্ন সত্য করতে সামনে যে এগুতে হবে সেই আগানোর সাহস পাই না । ভাবি যে আমি চলে গেলে আমার দায়িত্বের কী হবে ! ওদের কে দেখবে ?

আমি তিহার কথা গুলো এক মনে কেবল শুনে যাচ্ছিলাম । আমি জানতাম যে ও বাবা মারা গেছে তবে এমন যে ঘটনা সেটার ব্যাপারে কোন ধারণা ছিল না । তিহা আবারও কথা শুরু করলো, যেদিন তোমাকে বলেছিলাম এখানে আসার কথা, আমি আগে রিসোর্ট বুক করেই নক দিয়েছিলাম । পুরোটাকাটা আগে দিয়েছিলাম ।
আমি বললাম, যদি আমি না আসতে চাইলাম ! কিংবা আমার যদি অন্য প্রোগ্রাম থাকতো । আমি তো প্রায়ই এদিক সেদিক চলে যাই। এমন কোন ট্যুর প্লান যদি আগেই করে ফেললাম ?
-এমন হতে পারতো । তবে আমার কেন জানি মনে হয়েছিলো যে তুমি আসবেই । এমন কি ট্যুর প্লান যদি আগে করতে তবুও আমার সাথেই আসতে । এই বিশ্বাসটা বিশ্বাস করতে খুব ইচ্ছে করছিলো । তুমি আসতে না?

আমি একটু চুপ থেকে বললাম, যদি আগে কোন প্লান থাকতো তবুও আসতাম

দুইটা দিন চোখের পলকে যে কিভাবে কেটে গেল আমি টের পেলাম না । দেখতে দেখতে আমাদের ফেরার সময় চলে এল । এই দুইদিনে তিহার এতো কাছাকাছি চলে এসেছি যে এমনটা যে কোন দিন হবে সেটা ভাবতেও পারি নি । ফেরার পথে তিহা সারাটা সময়ে আমার হাত ধরেছিলো । আমরা একসাথে কত গুলো ছবি যে তুললাম তার কোন হিসাব নেই । বিশ্ববিদ্যালয়ের যে গ্রুপটা আমাদের সাথে গিয়েছিলো ওরাও আমাদের সাথেই ফিরে এসেছিলো । ওদের ভেতরে মেয়ে গুলোর সাথে তিহার ভাব হল। আমাদের ব্যাপারে জানতে চাইলো । আমরা কোথায় থাকি কী করি এই সব । ওদেরই একজন জানালো যে আমাদের কাপলটা ওদের খুব বেশি পছন্দ হয়েছে ।

রাত এগারোটার সময় ওকে ওর বাসার সামনে নামিয়ে দিলাম । যাওয়ার সময় খুব ইচ্ছে হচ্ছিলো ওকে খানিকটা জড়িয়ে ধরি । হয়তো কাল থেকেই আমাদের আচরণ আবার আগের মত হয়ে যাবে । তিহার আচরণ হয়তো আবারও আগের মত শীতল হয়ে যাবে। আর হয়তো ওর হাত ধরার সুযোগ আসবে না
পরদিন অফিসে এসে সত্যিই ব্যাপারটা তেমনই হল । তিহা নিজের কাজে ব্যস্ত । আমি আমার কাজে । তবে আমার মন খারাপ হল একটু । কী এমন ক্ষতি হত যদি একটু কথা বলতো আমার সাথে । পুরো একটা সপ্তাহ পার হল একই ভাবে ।
আমি এআগে থেকেই তিহাকে পছন্দ করতাম । আর এক সাথে ট্যুরে যাওয়ার পরে ওর প্রতি আমার টানটা তীব্র হল খুব বেশি । কিন্তু তিহার আচরণ সেই শান্ত আচরণ । এভাবে কয়েকটা তিন কেটে যাওয়ার পরে যখন আমি আর নিজেকে শান্ত রাখতে পারলাম না তখন নিজেই ওকে কথাটা বললাম ।
-চল বিয়ে করে ফেলি !
তিহা কেন জানি অবাক হল না । কিছু সময় শান্ত চোখে তাকিয়ে থেকে বলল, তুমি জানো আমার সমস্যাটা কোথায়? ঐ দিন দুটো আমার জীবনের সব থেকে আনন্দময় দুটো দিন । কিন্তু ওটা কেবলই স্বপ্ন । বাস্তব নয় ।
-চাইলেই ওটা বাস্তব হতে পারে !
-পারে না আফিস । বাস্তব খুব কঠিন ।
-আমরা চাইলেই হতে পারে !
-আফিস আমি নতুন করে আর কোন দায়িত্ব নিতে চাই না । একটু বোঝার চেষ্টা কর প্লিজ ।
-আচ্ছা এমন হতে পারে যে বিয়ে করি । তারপর যতদিন না তোমার দুই ভাইবোন নিজের দায়িত্ব নিজে না নিচ্ছে ততদিন আমরা নিজেদের সংসার শুরু করবো না । তুমি থাকবে ওখানেই ।
-তুমি পাগল হয়ে গেছো ।

তিহা আর কিছু বলল না । উঠে চলে গেল । আমি মন খারাপ করে বসে রইলাম। সব আগের মত চলতে লাগলো । কিন্তু এক সপ্তাহ পরেই একটা অন্য রকম ঘটনা ঘটলো । অফিসে এসেই খেয়াল করতে শুরু করলাম যে অফিসের সবাই আমার দিকে কেমন চোখে তাকিয়ে রয়েছে । সবার মুখে একটা হাসিহাসি ভাব। আমি ব্যাপারটা বুঝতেই পারলাম না । পাশের ডেস্কের রফিক ভাই আমার কাছে এসে টিটকারির সুরে বলল, খুব তো ঘুরলে !
-মানে ! কী বলছেন?
-তাই না ! এখন নাজার ভাব করছো !
এই বলে সে আবারও হাসি দিল । আমি বুঝতে পারলাম না প্রথমে । কিন্তু তারপরই মনে হল তিহার সাথে ঘুরতে যাওয়ার ব্যাপারটা এরা জেনে গেছে কোন ভাবে !
কিভাবে জানলো !

আমি দ্রুত নিজের ফোন বের করলাম । তারপর ফেসবুকে তিহাকে মেসেজ দিতে যাবো তখনই চোখ আমার কপালে উঠলো । তিহা ওর ফেসবুকের প্রোফাইল পিকচার বদল করেছে । সেখানে আমার সাথে তোলা একটা ছবি দেওয়া । ও শাড়ি পরেছে । আর আমি পাঞ্জাবি । পাঞ্জাবিটা ও নিজেই নিয়ে গিয়েছিলো আমাকে দেওয়ার জন্য । এই পাঞ্জাবি শাড়ি পরা ছবি আছে আমাদের অনেক গুলো । আমার ফোনে ওর ফোনে, দুজনের ফোনেই ছবি আছে ।

ও কি তাহলে নিজেই ছবিটা আপলোড দিল ছবিটা?

আমি নক দিলাম । ছবিটা কি তুমি নিজে আপলোড দিয়েছো?
উত্তর এল সাথে সাথেই । তিহা লিখলো, তুমি রাগ করেছো?
আমি একটু শান্তি পেলাম কেন জানি । আমার কাছে মনে হয়েছিলো কোন ভাবে হয়তো ঐ ছবি লিক হয়ে গেছে । তিহা হয়তো রাগ করবে । কিন্তু ছবিটা যখন তিহা নিজেই আপলোড দিয়েছে তখন আর ভয়ের কোন কারণ নেই । আমি লিখলাম, তুমি যখন নিজেই আপলোড দিয়েছো তাহলে আর কোন সমস্যা নেই ।

আমি আসলে তিহার ব্যাপারটা বুঝতে পারছিলাম না কিছুতেই । মেয়েটা আসলে কী চাচ্ছে ?

অবশ্য কারণটা জানতে পারলাম একটু পরেই । লাঞ্চে ও নিজেই এল আমার ডেস্কে । আমি ওর দিকে কৌতুহলী চোখে তাকিয়ে রইলাম । তিহা বলল, সব দোষ তোমার !
-মানে কী ? আমার দোষ কিভাবে শুনি?
-তুমি আমাকে স্বপ্ন দেখতে সাহস দিয়েছো । ঐদিন যখন কথাটা বলল তখন কী যে তীব্র ভাবে রাজি হয়ে যেতে ইচ্ছে করছিলো তখনই কিন্তু ঐ যে দায়িত্বের ভয় ! কিন্তু এই কটা দিন আমি কিছুতেই নিয়ন্ত্রন করতে পারি নি । গতকাল রাতে এক বান্ধবীর বিয়ের ছবি দেখলাম ফেসবুকে । এতো হাসিমাখা ছবি গুলো । এতো লোভ হল জানো ! তখনই সিদ্ধান্ত নিলাম যে রাজি হয়ে যাবো । সকালে যাতে আমার মন পরিবর্তন না হয় তাই তখনই ছবি আপলোড দিলাম । যাতে সবাই দেখতে পারে ।
আমি হেসে বললাম, যাতে আর ফেরার পথ না থাকে ?
-হ্যা । মাঝে মাঝে আমাদের নিজেদের মনের সাথেই যুদ্ধ করতে হয় সব থেকে বেশি !

উপসংহারঃ

আমাদের বিয়ে হল ঐদিনই । অফিসের কলিগদের নিয়েই হাজির হলাম মগবাজার কাজী অফিসে । আমিও চাচ্ছিলাম তিহা যাতে আমার কাছ থেকে আর দুরে যেতে না পরে ।

ঠিক এই গল্পের মত আরেকটা গল্প কিছুটা লিখে রেখেছি । সেটাও একই ভাবে মেয়েটি যায় ট্যুরে তবে পাহাড়ে । লেখাটা শেষ করবো কিনা কে জানে ।

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 4.8 / 5. Vote count: 62

No votes so far! Be the first to rate this post.

About অপু তানভীর

আমি অতি ভাল একজন ছেলে।

View all posts by অপু তানভীর →