তিহার গল্প

oputanvir
4.8
(66)

তিহা যখন আমাকে বলল যে ওর সাথে সুন্দরবন যেতে আমি একটু বেশ খানিকটা অবাক হয়েছিলাম । মেয়েটাকে আমি সব সময় খুব গম্ভীর দেখেছি । নিজের কাজ কর্ম ছাড়া অন্য কিছু যেন সে বুঝে না, কাজের বাইরে কাউকে চিনে না । সেই মেয়ে আমাকে পরশুদিন দুপুরে এসে বলল, আসিফ একটা কথা বলবো?

আমি তখন লাঞ্চে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছি । হাতের কাজটা শেষ করে পিসিটা বন্ধ করে দিয়েছি । তখনও পুরোপুরি বন্ধ হয় নি । আমি বললাম, অফিসের কিছু? পিসি তো বন্ধ করে দিলাম ।
-না অফিসের নয়।
-ওকে বলুন ।

আমি একটু অবাক হয়ে দেখলাম ও পাশের ডেস্কের দিকে তাকালো । ইতিমধ্যে আশে পাশের সবাই লাঞ্চে চলে গেছে। আমার মনে হল তিহা আমাকে এমন কিছু বলতে যাচ্ছে যা ও চায় না অন্য কেউ শুনুক । আমি একটু অবাক না হয়ে পারলাম না । তিহাকে আমি পছন্দ করি এটা অফিসের সবাই জানে । তিহা যদিও এই ব্যাপারে কোন আগ্রহ দেখায় নি । সব সময় গম্ভীর আর শীতল থেকেছে । তবে আমাকে সে এড়িয়েও যায় নি । অফিসের ভেতরে একমাত্র আমিই একজন যার সাথে অফিসের বাইরের কোন কথা সে বলে । মাঝে মাঝে আমরা একসাথে দুপুরের খাবারও খাই ।

তিহা আমাকে বলল, আসিফ সুন্দরবন যাবেন? সামনের ছুটিতে?

আমি সত্যিই একটু অবাক হলাম তিহার প্রস্তাব শুনে । বিশেষ করে ওর মত গম্ভীর একটা মেয়ে আমাকে এমন একটা প্রস্তাব দিবে সেটা আমি ভাবি নি । আমি বললাম, আমি আর আপনি । আর কেউ যাবে ?
-না আর কেউ । আমরা দুজন । যাবেন ?
আমি দুই সেকেন্ড সময় নিলাম । তারপর বলল, চলুন ।
-ওকে । আমি তাহলে ব্যবস্থা করি !

তিহা আমাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে নিজের ডেস্কের দিকে চলে গেল । আমি আরো কিছু সময় বসে রইলাম । আমি যদিও খুবএকটা আশাবাদী হলাম না । আমার কেন জানি মনে হতে লাগলো তিহা হয়তো কালই বলবে যে ওর যাওয়া হবে না । পরদিন তিহা আমাকে মেসেজ দিয়ে জানালো যে শুক্রবার সকালে বাস ছাড়বে সায়দাবাদ থেকে । আমি যেন ঠিক সাতটার ভেতরে পৌছে যাই সেখানে ।

তারপর আমার সাথে আর কোন কথা নেই । সত্যি বলতে বাকি দুইদিন তিহার সাথে আমার একটা বারও কথা হল না । আমরা যে ট্যুরে যাচ্ছি এটা যেন ও ভুলেই গেল । আমার বৃহস্পতিবার রাতে উত্তেজনায় ঠিক ঘুম এল না । বারবার কেবল মনে হচ্ছিলো যে সকালে ঘুম থেকে উঠেই দেখবো তিহা আমাকে মেসেজ পাঠিয়েছে যে ওর যাওয়া হবে না । এই ভয়টাই আমি পাচ্ছিলাম সব থেকে বেশি
তবে আশার কথা হচ্ছে সকালে ঘুম থেকে উঠে এমন কোন মেসেজ আমি দেখলাম না । ব্যাগ রাতেই গুছিয়ে রেখেছিলাম । গোসল করে বাসস্ট্যান্ডের দিকে রওনা দিলাম । পৌছে দেখি তিহা আমার আগেই পোছে গেছে । আমি ওকে দেখেই একটু খাবি খেলাম ।

তিহাকে আজকে আমি প্রথমবারের মত জিন্সে দেখলাম । অফিসে সব সময় ও শাড়ি পরেই আসতো । মাঝে মধ্যে ওকে সেলোয়ার কামিজ পরতে দেখলাম । কিন্তু কখনই ওকে জিন্সে দেখি নি । একটা সাদা রংয়ের টপের সাথে কালো টাইট জিন্স। পায়ে স্নিকার্সটা কালো । চুল গুলো পনি টেইল করে বেঁধেছে । মুখে হালকা মেকাপ দিয়েছে । ওকে একেবারে যেন অন্য রকম লাগছে । আমার দিকে চোখ পড়তেই হাসলো একটু ।

ঢাকা থেকে মংলা পৌছালাম । তারপর সেখান থেকে রিসোর্টের বোটে করে পৌছালাম রিসোর্টে । আমাদের সাথে আরো একটা গ্রুপ ছিল আট জনের । ওরা বোটের ছাদে বসে আড্ডা দিচ্ছিলো । আমি আর তিহা বসে ছিলাম এককোন । তিহা আমার সাথে টুকটাক গল্প করেই যাচ্ছিলো । আমি আসলে ওকে দেখছিলাম । আমার তখনও ঠিক বিশ্বাস হচ্ছিলো না যে আমি তিহার সাথে ট্যুরে বের হয়েছি ।

একটা সময়ে তিহা আমার কাছ থেকে ফোনটা নিয়ে নিল । তারপর সেটা নিয়ে এরোপ্লেন মুডে দিয়ে দিল । আমার দিকে তাকিয়ে বলল, এই দুইদিন বাইরের সাথে কোন যোগাযোগ না । যদিও রিসোর্টে নেটওয়ার্ক থাকবে তবুও না ।
-আরে এভাবে একেবারে যোগাযোগ বন্ধ করে দিলে হয় নাকি?
তিহা বলল, অবশ্যই হয় । আমাদের অনেকের মাঝেই একটা ধারণা আছে যে আমাদের ছাড়া বুঝি দুনিয়া চলবে না । কিন্তু বিশ্বাস কত তুমি যদি না থাকো তবুও বাইরের পৃথিবী ঠিকই চলবে । ভাল ভাবেই চলবে।

সেই সময়েই আমি খেয়াল করলাম যে তিহা আমাকে তুমি করে বলছে । তবে সব থেকে বেশি অবাক হওয়ার ব্যাপারটা তখনও বাকি ছিল । আমরা যখন রিসোর্টে পৌছালাম তখন ঘটলো ব্যাপারটা । আমাদের ওয়েলকাম ড্রিংক দেওয়া হল । তারপর আমাদের গেস্ট বুকে নাম সই করতে হল । আমার আগেই তিহা সেখানে নাম সই করলো । এবং আমাকে অবাক করে দিয়ে সেখানে সে লিখলো মিস্টার এন্ড মিসেস ইকবাল । আমাদের জন্য একটা কাপল রুম সে বুক করেছে ।

আমার কাছে ব্যাপারটা হজম করা একটু কঠিন ছিল । তিহা যে কাপল রুম করবে সেটা আমি কল্পনাও করি নি । কিন্তু কিছু আমি বলতেও পারছি না । ও রুমের চাবি নিয়ে হাটা দিলো আমি বাধ্য হয়ে ওর পেছন পেছনে হাটতে লাগলো । সত্যি বলতে কি বেশ অস্বস্তি লাগছিলো আমার কাছে । আমি ওকে যতই পছন্দ করি এভাবে একই রুমে থাকার ব্যাপারটা একটু অস্বস্তি দিল আমাকে ।

রুমে ঢুকতেই দেখলাম তিহা বিছানার উপরে বসে রয়েছে । আমার দিকে তাকিয়ে বলল, শক খেয়েছো?
-একটু !
-তোমার চেহারা দেখে মনে হচ্ছে ভাল রকমের শক খেয়েছো ।
-হ্যা আসলে ….। আমি আসলে….।
-এতো চিন্তা করো না তো প্লিজ ।

একটু পরেই অবশ্য স্বাভাবিক হয়ে এলাম । বিশেষ করে ব্যাপারটা ভাবতেই কেমন যেন লাগছিলো । আনন্দময় অনুভূতি হচ্ছিলো নিজের কাছে । দুপুরের খাওয়ার সময় তিহার আচরণ এমন ছিল সবার সামনে যে সত্যিই মনে হল যে ও আমার বিয়ে করা স্ত্রী । আমি বুঝতে পারছিলাম যে ওর ভেতরে সবাইকে দেখানোর একটা স্পিহা ছিল । আমি সেই স্পিহাতেও যোগ দিচ্ছিলাম আপন আনন্দেই । পুরো বিকেলটা আমরা রিসোর্টের সামনে ডেকে বসে গল্প করছিলাম । রিসোর্টটা এতো দুরে তবুও বেশ মানুষ জন এসেছে । আগে থেকেই দেখলাম চারটা ফ্যামিলি রয়েছে । এছাড়া দুইটা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রুপ দেখলাম যাদের একটা আমাদের সাথেই এসেছে । একটা দেখলাম আমাদের মত কাপল গ্রুপ । ওরাও আমাদের মত একে অন্যের সাথে আঠার মত লেগেছিলো সব সময় ।

রাতের খাওয়া দাওয়ার পরে যখন ঘুমানোর সময় এল তখন সব থেকে বড় ঝামেলা হল । বিছানা তো একটা । আমি বললাম আমি নিচে শুই ।
-কেন বিছানাতো যথেষ্ট বড় ।
-না মানে!
-আমি যখন এসেছি সব জেনেই এসেছি । নাকি ? তবে তোমার অস্বস্তি লাগলে আমি কিছু বলবো না ।

আলো বন্ধ হয়ে গেল । একই বিছানায় তিহা শুয়ে রয়েছে আমার পাশে । যদিও একটা কোল বালিশ দেওয়া আমাদের মাঝে । কিছু সময় চুপ করে রইলাম আমি । আসলে কী যে বলবো সেটা খুজে পাচ্ছিলাম না । তিহাই আগে কথা বলল, আমার আচরণ খুব বেশি অস্বাভাবিক লাগছে কি?

আমি অনুভব করলাম যে তিহা আমার দিকে পাশ ফিরেছে । যদিও ঘরের আলো বন্ধ হয়েছে তারপরেও বাইরের আলো এসে ঘরের ভেতরে । আমিও ওর দিকে পাশ ফিরলাম । তারপর বলল, না । আমার কেবল মনে হচ্ছে যে তুমি খুব অস্থির হয়ে আছো ! কী হয়েছে আমাকে বলবে?

বেশ কিছু সময় তিহা চুপ করে রইলো । তারপর বলল, দায়িত্ব পালন করতে করতে আমি ক্লান্ত হয়ে গেছি আসিফ । সব কিছু থেকে আমার একটু ছুটি দরকার ছিল খুব । ছোট বেলা থেকেই সব কিছু করেছি অন্যের জন্য । যখন বুঝতে শিখেছি তখন অনুভব একদিন অনুভব করলাম যে আমার বাবা আসলে অন্য বাবাদের মত না । অন্য বাবারা যেমন ছেলে মেয়েদের প্রয়োজনটা মেটায় অন্তত সেটা পূরণ করার চেষ্টা করে আমার বাবা আসলে তেমন ছিল না । তাই আমাদের সব কিছু আমাদের নিজেদের করতে হত । একটা সময় বাবা আমাদের রেখে চলে গেলেন একেবারে । আমার মা যেন মহা সমুদ্রে পড়লেন । আমরা তখন তিনতে ভাইবোন । কোন মতে টিকে ছিলাম । একটু বড় হয়ে আমি ছাত্র পড়াতে শুরু করলাম । আমি অংকে বেশ ভাল ছিলাম । সেটাই একটু একটু করে আমাদের টিকিয়ে রেখেছিলো । একটা সময়ে আমার মায়ের মনে আমার উপরে আস্তা জন্মালো যে আমি ঠিক ঠিক আমাদের দেখে রাখতে পারবো । সেই যে আমার কাধে দায়িত্ব এল । আজও আমি মুক্ত হতে পারি নি । আমার সব কিছু এখন আমার এই দায়িত্ব কেন্দ্রিক । আমার স্কুল কলেজ বিস্ববিদ্যালয় জীবন অন্যদের মত ছিল না কখনই । এমন কি এই চাকরিতে ঢুকেও আমি অস্বাভাবিক একটা জীবন যাপন করছি ।

একটানে কথা গুলো বলে তিহা থামলো । তারপর আবার বলল, আমি জানি আপনি আমাকে পছন্দ করেন । আমার আচরণে বুঝতে পেরেছেন আমিও আপনাকে পছন্দ করি । কিন্তু ঐ যে দায়িত্ব । এটার জন্য আমি সাহস করে আপনার দিকে এগিয়ে যেতে পারি নি কখনই । স্বপ্ন যে দেখি না সেটা না কিন্তু সেই স্বপ্ন সত্য করতে সামনে যে এগুতে হবে সেই আগানোর সাহস পাই না । ভাবি যে আমি চলে গেলে আমার দায়িত্বের কী হবে ! ওদের কে দেখবে ?

আমি তিহার কথা গুলো এক মনে কেবল শুনে যাচ্ছিলাম । আমি জানতাম যে ও বাবা মারা গেছে তবে এমন যে ঘটনা সেটার ব্যাপারে কোন ধারণা ছিল না । তিহা আবারও কথা শুরু করলো, যেদিন তোমাকে বলেছিলাম এখানে আসার কথা, আমি আগে রিসোর্ট বুক করেই নক দিয়েছিলাম । পুরোটাকাটা আগে দিয়েছিলাম ।
আমি বললাম, যদি আমি না আসতে চাইলাম ! কিংবা আমার যদি অন্য প্রোগ্রাম থাকতো । আমি তো প্রায়ই এদিক সেদিক চলে যাই। এমন কোন ট্যুর প্লান যদি আগেই করে ফেললাম ?
-এমন হতে পারতো । তবে আমার কেন জানি মনে হয়েছিলো যে তুমি আসবেই । এমন কি ট্যুর প্লান যদি আগে করতে তবুও আমার সাথেই আসতে । এই বিশ্বাসটা বিশ্বাস করতে খুব ইচ্ছে করছিলো । তুমি আসতে না?

আমি একটু চুপ থেকে বললাম, যদি আগে কোন প্লান থাকতো তবুও আসতাম

দুইটা দিন চোখের পলকে যে কিভাবে কেটে গেল আমি টের পেলাম না । দেখতে দেখতে আমাদের ফেরার সময় চলে এল । এই দুইদিনে তিহার এতো কাছাকাছি চলে এসেছি যে এমনটা যে কোন দিন হবে সেটা ভাবতেও পারি নি । ফেরার পথে তিহা সারাটা সময়ে আমার হাত ধরেছিলো । আমরা একসাথে কত গুলো ছবি যে তুললাম তার কোন হিসাব নেই । বিশ্ববিদ্যালয়ের যে গ্রুপটা আমাদের সাথে গিয়েছিলো ওরাও আমাদের সাথেই ফিরে এসেছিলো । ওদের ভেতরে মেয়ে গুলোর সাথে তিহার ভাব হল। আমাদের ব্যাপারে জানতে চাইলো । আমরা কোথায় থাকি কী করি এই সব । ওদেরই একজন জানালো যে আমাদের কাপলটা ওদের খুব বেশি পছন্দ হয়েছে ।

রাত এগারোটার সময় ওকে ওর বাসার সামনে নামিয়ে দিলাম । যাওয়ার সময় খুব ইচ্ছে হচ্ছিলো ওকে খানিকটা জড়িয়ে ধরি । হয়তো কাল থেকেই আমাদের আচরণ আবার আগের মত হয়ে যাবে । তিহার আচরণ হয়তো আবারও আগের মত শীতল হয়ে যাবে। আর হয়তো ওর হাত ধরার সুযোগ আসবে না
পরদিন অফিসে এসে সত্যিই ব্যাপারটা তেমনই হল । তিহা নিজের কাজে ব্যস্ত । আমি আমার কাজে । তবে আমার মন খারাপ হল একটু । কী এমন ক্ষতি হত যদি একটু কথা বলতো আমার সাথে । পুরো একটা সপ্তাহ পার হল একই ভাবে ।
আমি এআগে থেকেই তিহাকে পছন্দ করতাম । আর এক সাথে ট্যুরে যাওয়ার পরে ওর প্রতি আমার টানটা তীব্র হল খুব বেশি । কিন্তু তিহার আচরণ সেই শান্ত আচরণ । এভাবে কয়েকটা তিন কেটে যাওয়ার পরে যখন আমি আর নিজেকে শান্ত রাখতে পারলাম না তখন নিজেই ওকে কথাটা বললাম ।
-চল বিয়ে করে ফেলি !
তিহা কেন জানি অবাক হল না । কিছু সময় শান্ত চোখে তাকিয়ে থেকে বলল, তুমি জানো আমার সমস্যাটা কোথায়? ঐ দিন দুটো আমার জীবনের সব থেকে আনন্দময় দুটো দিন । কিন্তু ওটা কেবলই স্বপ্ন । বাস্তব নয় ।
-চাইলেই ওটা বাস্তব হতে পারে !
-পারে না আফিস । বাস্তব খুব কঠিন ।
-আমরা চাইলেই হতে পারে !
-আফিস আমি নতুন করে আর কোন দায়িত্ব নিতে চাই না । একটু বোঝার চেষ্টা কর প্লিজ ।
-আচ্ছা এমন হতে পারে যে বিয়ে করি । তারপর যতদিন না তোমার দুই ভাইবোন নিজের দায়িত্ব নিজে না নিচ্ছে ততদিন আমরা নিজেদের সংসার শুরু করবো না । তুমি থাকবে ওখানেই ।
-তুমি পাগল হয়ে গেছো ।

তিহা আর কিছু বলল না । উঠে চলে গেল । আমি মন খারাপ করে বসে রইলাম। সব আগের মত চলতে লাগলো । কিন্তু এক সপ্তাহ পরেই একটা অন্য রকম ঘটনা ঘটলো । অফিসে এসেই খেয়াল করতে শুরু করলাম যে অফিসের সবাই আমার দিকে কেমন চোখে তাকিয়ে রয়েছে । সবার মুখে একটা হাসিহাসি ভাব। আমি ব্যাপারটা বুঝতেই পারলাম না । পাশের ডেস্কের রফিক ভাই আমার কাছে এসে টিটকারির সুরে বলল, খুব তো ঘুরলে !
-মানে ! কী বলছেন?
-তাই না ! এখন নাজার ভাব করছো !
এই বলে সে আবারও হাসি দিল । আমি বুঝতে পারলাম না প্রথমে । কিন্তু তারপরই মনে হল তিহার সাথে ঘুরতে যাওয়ার ব্যাপারটা এরা জেনে গেছে কোন ভাবে !
কিভাবে জানলো !

আমি দ্রুত নিজের ফোন বের করলাম । তারপর ফেসবুকে তিহাকে মেসেজ দিতে যাবো তখনই চোখ আমার কপালে উঠলো । তিহা ওর ফেসবুকের প্রোফাইল পিকচার বদল করেছে । সেখানে আমার সাথে তোলা একটা ছবি দেওয়া । ও শাড়ি পরেছে । আর আমি পাঞ্জাবি । পাঞ্জাবিটা ও নিজেই নিয়ে গিয়েছিলো আমাকে দেওয়ার জন্য । এই পাঞ্জাবি শাড়ি পরা ছবি আছে আমাদের অনেক গুলো । আমার ফোনে ওর ফোনে, দুজনের ফোনেই ছবি আছে ।

ও কি তাহলে নিজেই ছবিটা আপলোড দিল ছবিটা?

আমি নক দিলাম । ছবিটা কি তুমি নিজে আপলোড দিয়েছো?
উত্তর এল সাথে সাথেই । তিহা লিখলো, তুমি রাগ করেছো?
আমি একটু শান্তি পেলাম কেন জানি । আমার কাছে মনে হয়েছিলো কোন ভাবে হয়তো ঐ ছবি লিক হয়ে গেছে । তিহা হয়তো রাগ করবে । কিন্তু ছবিটা যখন তিহা নিজেই আপলোড দিয়েছে তখন আর ভয়ের কোন কারণ নেই । আমি লিখলাম, তুমি যখন নিজেই আপলোড দিয়েছো তাহলে আর কোন সমস্যা নেই ।

আমি আসলে তিহার ব্যাপারটা বুঝতে পারছিলাম না কিছুতেই । মেয়েটা আসলে কী চাচ্ছে ?

অবশ্য কারণটা জানতে পারলাম একটু পরেই । লাঞ্চে ও নিজেই এল আমার ডেস্কে । আমি ওর দিকে কৌতুহলী চোখে তাকিয়ে রইলাম । তিহা বলল, সব দোষ তোমার !
-মানে কী ? আমার দোষ কিভাবে শুনি?
-তুমি আমাকে স্বপ্ন দেখতে সাহস দিয়েছো । ঐদিন যখন কথাটা বলল তখন কী যে তীব্র ভাবে রাজি হয়ে যেতে ইচ্ছে করছিলো তখনই কিন্তু ঐ যে দায়িত্বের ভয় ! কিন্তু এই কটা দিন আমি কিছুতেই নিয়ন্ত্রন করতে পারি নি । গতকাল রাতে এক বান্ধবীর বিয়ের ছবি দেখলাম ফেসবুকে । এতো হাসিমাখা ছবি গুলো । এতো লোভ হল জানো ! তখনই সিদ্ধান্ত নিলাম যে রাজি হয়ে যাবো । সকালে যাতে আমার মন পরিবর্তন না হয় তাই তখনই ছবি আপলোড দিলাম । যাতে সবাই দেখতে পারে ।
আমি হেসে বললাম, যাতে আর ফেরার পথ না থাকে ?
-হ্যা । মাঝে মাঝে আমাদের নিজেদের মনের সাথেই যুদ্ধ করতে হয় সব থেকে বেশি !

উপসংহারঃ

আমাদের বিয়ে হল ঐদিনই । অফিসের কলিগদের নিয়েই হাজির হলাম মগবাজার কাজী অফিসে । আমিও চাচ্ছিলাম তিহা যাতে আমার কাছ থেকে আর দুরে যেতে না পরে ।

ঠিক এই গল্পের মত আরেকটা গল্প কিছুটা লিখে রেখেছি । সেটাও একই ভাবে মেয়েটি যায় ট্যুরে তবে পাহাড়ে । লেখাটা শেষ করবো কিনা কে জানে ।

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 4.8 / 5. Vote count: 66

No votes so far! Be the first to rate this post.


Discover more from অপু তানভীর

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

About অপু তানভীর

আমি অতি ভাল একজন ছেলে।

View all posts by অপু তানভীর →