নাইলা ও খেলোয়ার

oputanvir
4.6
(48)

ছোট ভাইয় নয়নের মলিন চেহারার দিকে নাইলার সমস্ত রাগটা গিয়ে পড়লো আদিবের উপর । নাইলার মা নয়নকে খাওয়ানোর চেষ্টা করছে তবে সে মুখ গোমড়া করে বসে রয়েছে । বসার ঘরে টিভি চলছে তবে নয়ন টিভি দেখছে না ।

নাইলার মনে হল এখনই সে হোটেলের সামনে গিয়ে হাজির হয় । চিৎকার করে বলে একবার তার ছোট ভাইয়ের সাথে দেখা করলে কী এমন ক্ষতি হয়ে যেত ! অসুস্থ একটা ছেলে হুইল চেয়ারে করে মাঠে গিয়েছিলো কেবল মাত্র তার সাথে একটু দেখা করতে । একবার যদি মাথায় একটু হাত রেখে একটু আদর করে দিতো তাহলে কী এমন ক্ষতি হয়ে যেত !

নাইলা জানে আসলে ওর কিছুই করার নেই । যে হোটেলে খেলোয়ার আদিব রয়েছে সেখানে হয়তো ওকে ঢুকতেও দেওয়া হবে না । গেটের কাছ থেকেই বের করে দেওয়া হবে । তারপরেও নাইলার খুব করে ইচ্ছে হল রাস্তার সামনে গিয়ে চিৎকার করে কথা গুলো বলতে ।

নাইলার ছোট ভাই নয়ন একজন লিউকোমিয়ার পেসেন্ট । প্রতিমাসের অনেকটা সময় ওকে হাসপাতালে দৌড়াদৌড়ি করতে হয় । যে টুকু সময় সে ভাল থাকে সে পড়ে থাকে তার ভিডিও গেম আর ফুটবল খেলা দেখা নিয়ে । আর এই ফটবলের জন্য আদিবকে সে পছন্দ করে । আদিব একটি ইউরোপিয়ান দলে খেলে । দেশ জোড়া তার খ্যাতি । কদিন আগে সে দেশে এসেছে । একটা প্রীতি ম্যাচ ছিল তাদের জেলার স্টেডিয়ামে । সখন থেকে নয়ন শুনেছে আদিব আসবে ওদের জেলাতে তখন থেকে বায়না ধরেছে আদিবের সাথে একবার দেখা করবে । একবার তার সাথে একটা ছবি তুলবে ।

কিন্তু চাইলেই তো এটা সম্ভব না । নাইলা তবুও অনেক চেষ্টা করেছিলো । আদিবের ম্যানেজারকে জানিয়েছিল যে একটু যেন দেখা করে । তবে দেখা করানো সম্ভব হয় নি । সবাই আদিবের সাথে দেখা করতে চায় সবাই ছবি তুলতে চায় । সেই সবার চাওয়ার নয়ন পিছিয়ে পড়েছে । পারে নি দেখা করতে ! শেষে বাধ্য হয়ে চলে আসতে হয়েছে ওদের । তারপর থেকেই নয়ন মন খারাপ করে আছে । নাইলা জানে এই মন খারাপের ব্যাপারটা ওর শরীরের উপর একটা বিরূপ প্রতিক্রিয়া ফেলতে পারে। কিন্তু নাইলার কিছুই করার নেই আসলে এখানে । নাইলার এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন না থাকার ব্যাপারটা কখনই ভাল লাগে না ।

এমন সময় কলিংবেল বেজে উঠলো । নাইলা ঘড়ির দিকে তাকালো । রাত প্রায় এগারোটা বাজে । ওর বাবা অফিসের কাজে গিয়েছে ঢাকাতে । আগামীকাল আসবে । তাহলে এতো রাতে আবার কে এল?

নাইলা একটু বিরক্ত হয়েই দরজা খুলতে গেল । দরজা খুলেই দেখতে পেল তাকে । প্রথমে নাইলার মনে হল যেন সে ভুল দেখছে । কয়েক পলক দাড়িয়ে রইলো সেখানেই । নিজের চোখকে ঠিক যেন বিশ্বাস করতে পারছে না । কারণ এটা সম্ভব না কোন ভাবেই । নাইলা ভাবলো ও বসে থাকা অবস্থায় হয়তো ঘুমিয়ে পড়েছিলো । সেখান থেকেই সে স্বপ্ন দেখছে । নয়তো ফুটবলার আদিব কিভাবে আসবে তার বাসায় !

আদিব বলল, হ্যালো । আমি কি নয়নদের বাসায় এসেছি?
নাইলা তখনও ঠিক বিশ্বাস করতে পারছে না । আদিব একটা ফুটবল নিয়ে এসেছে হাতে করে । নাইলা বলল, জ্বী !
-আমি কি ভেতরে আসতে পারি ?
-হ্যা হ্যা অবশ্যই ! আসলে আমি এখনও বিশ্বাস করতে পারছি না যে আপনি এসেছেন?
-আসলে আমার ম্যানেজার আমাকে বলেই নি নয়নের কথা । বললে আমি ওকে নিয়ে যেতাম আমাদের ড্রেসিং রুমেই । একটু আগে সে জানালো । ছোট শহর । ঠিকানা বের করতে তাই খুব একটা কষ্ট হয় নি । আপনাকে চিনতো স্টেডিয়ামের একজন কর্মী । সেই সাহায্য করলো । নয়ন কোথায়?

নাইলা কেবল নিজের ভাইয়ের আনন্দময় মুখটার দিকে তাকিয়ে রইলো কেবল । কতদিন সে নয়নকে এভাবে খুশি হতে দেখেছে সেটা মনেও নেই । চোখ পানি চলে এল আনন্দে ।

আদিব প্রায় ঘন্টা খানেক থাকলো । নয়নের সাথে ওর ঘরে গেল । আদিবের পোস্টার দেখলো দেওয়ালে । আদিব একটা ফুটবল নিয়ে এসেছিলো সাথে করে সেটাতে সাইন করে দিল । দেওয়ালের পোস্টারেও সাইণ করলো । অনেক গুলো ছবি তুলল ।

গেট দিয়ের বের হয়েও নাইলা রাস্তা পর্যন্ত এল আদিবের সাথে । ছোট শহরে রাত নামে বড় জলদি । এখানে রাত বারোটা মানে অনেক রাত । নির্জন রাস্তা নাইলা কিছু সময় দাড়িয়ে রইলো । আদিবের গাড়ি এখনও এসে পৌছায় নি । নাইলা হঠাৎ আদিবকে জড়িয়ে ধরলো । খানিকটা আকস্মিক ভাবেই আদিবকে জড়িয়ে ধরে রইলো কিছু সম । তারপর ছেড়ে দিলো একটু পরেও । চোখে তত সময় পানি চলে এসেছে ওর । সেটা আটকানোর চেষ্টা না করেই নাইলা বলল, আমার ভাইটা আর বেশি দিন বাঁচবে না । আপনি যখন আসলেন কী যে খুশি হয়েছে ও ! এমন আনন্দ ওকে দেওয়ার ক্ষমতা আমাদের ছিল না । আপনাকে কী যে ধন্যবাদ দিবো আমি বুঝতে পারছি না ।

আদিব একটু অপ্রস্তুত হয়ে গেলেও সামলে নিল । বিশেষ করে নাইলা যখন জড়িয়ে ধরেছিলো তখন । বলল, আরে কী যে বলেন । এটা আর এমন কি! নয়নের মত ফ্যানরা আছে বলেই তো আমরা আছি । ওদের ছাড়া আমরা কিছুই না ।

আদিব আরো কিছু বলতে যাচ্ছিলো কিন্তু তার আগেই আদিবের গাড়ি চলে এল । আদিব নিজের একটা কার্ড নাইলার হাতে দিয়ে বলল, এখানে আমার ব্যক্তিগত নম্বর রয়েছে । কোন দরকারে অবশ্যই আমাকে ফোন দিবেন ।

নাইলা আদিবের চলে যাওয়া দেখলো । আজকে অনেকটা দিন পরে নাইলার মনটাও অনেক বেশি ভাল হয়ে আছে ।

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 4.6 / 5. Vote count: 48

No votes so far! Be the first to rate this post.


Discover more from অপু তানভীর

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

About অপু তানভীর

আমি অতি ভাল একজন ছেলে।

View all posts by অপু তানভীর →