নিশা ঘড়ির দিকে তাকালো । রাত প্রায় সাড়ে দশটা বাজে । রাতের খাবারের সময় হয়ে গেছে । রিভু একটু আগে খাবার ঘরের দিকে দিকে গেছে । ওকে ডাক দিয়েই গিয়েছে । তবে নিশার একটু অস্বস্তি লাগছে খাবার ঘরের দিকে যেতে । আজকে অফিস থেকে বাসায় ফিরতে ফিরতে একটু দেরি হয়েছে । অন্যান্য দিন সন্ধ্যার পরপরই সে বাসায় চলে আসে তবে আজকে বাসায় ফিরতে ফিরতে নয়টার বেশি বেজে গিয়েছিল । যখন বাসায় ভেতরে ঢোকে শাশুড়ির দিকে চোখ পড়তেই বুঝতে পারে যে তার মুখ অন্ধকার হয়ে গেছে । নিশার চাকরি করার ব্যাপারটা তার শাশুড়ি ঠিক পছন্দ করেন না । বেশ কয়েকবারই বলেছেন বাড়ির বউ বাইরে চাকরি করাটা ভাল দেখায় না ।
আজকে খাবার টেবিলে কথাটা উঠলো আবার । শাশুড়ি রাহেলা খাতুন আবারও কথাটা বললেন, নিশা তুমি এভাবে আর কত দিন চাকরি করবে? এভাবে রাত করে বাসায় ফিরলে পাড়ার লোকজন নানান কথা বলে !
নিশা কী বলবে খুজে পেল না । ঢাকা শহরে অফিস থেকে বের হতে আর রাস্তা ঘাটের অবস্থা নিয়ে একটু রাত হতেই পারে । নিশা কিছু বলতে যাচ্ছিলো তার আগেই রিভু বলল, কেন মা কী সমস্যা? পাড়ার লোকজন কী বলছে?
-তোরা আর থাকিস না । আমাকে পাড়া প্রতিবেশি নিয়ে চলতে হয় !
-মা চল না তাহলে । পাড়াপ্রতিবেশি আমাদের খাওয়ায় না পরায় না । তাদের কথা কান দেওয়ার কিছু নেই ।
শেষের লাইনটা রিভু বলল একটু বিরক্ত হয়েই । এতেই রাহেলা একটু রেগে উঠলো । বলল, কই আমরা তো চাকরি করি নি । তোর বড় ভাইয়ের বউও তো চাকরি করে না ।
নিশা এবার দেখতে পেল রিভু খাওয়া বন্ধ করে মায়ের দিকে তাকালো । তারপর ঠান্ডা গলাতে বলল, ভাবী চাকরি করে না কারণ তুমি তাকে চাকরি করতে দাও নি । তুমি যেমন সাড়া জীবন রান্না ঘরে কাটিয়েছো ভাবিকেও বাধ্য করেছো রান্না ঘরে থাকতে ।
-কী বললি তুই ?
-ঠিক বলেছি আমি মা । ভাবী সরকারি চাকরি পেয়েছি । কেবল মাত্র তুমি অশান্তি করবে বলে সে চাকরি করে নি । নয়তো আজকে সে তোমার ছেলেকে বেশি টাকা আয় করতো !
নিশা একদম চুপ করে তাকিয়ে রয়েছে রিভুর দিকে । সে ভাবে নি মায়ের সাথে এমন আচরণ করবে । একবার মনে হল যে রিভুকে সে থামতে বলে কিন্তু কেন জানি বলল না । নিশ্বার ভারুর রাশেদ এই কিছুদিন আগে পোস্টিং নিয়ে চট্টগ্রাম চলে গেছে । তার আগে এক সাথেই থাকতো এই বাড়িতে । ভাইয়ের বউ রিমি ভাল শান্ত শিষ্ট মেয়ে । নিশার সাথে বেশ ভাল ভাব হয়ে গিয়েছিলো । তার কাছ থেকেই শুনেছে সবটা । রিমি আসলেই সরকারি চাকরিই পেয়েছিলো । তবে তার শাশুড়ির কারণে চাকরিটা করতে পারে নি । খুব নাকি অশান্তি করতো । সেই সময়ে রিভু সিলেটে পড়াশোনা করতো । সে কিছুই জানতো না । চাকরিতে জয়েন না করার ব্যাপারটা রিভু জেনেছে অনেকদিন পরে । সেইদিন বাসায় অনেক গন্ডলোগ করেছিলো সে । রিমি অনেক কষ্ট করে শান্ত করেছে । বড় ভাইকেও আচ্ছা করে বকেছিল ।
রাহেলা বলল, হ্যা সব দোষ তো এখন আমারই ।
-মা ডং কর । রাতের বেলা খাওয়ার সময় কথা ভাল লাগছে না ।
নিশার শশুর মশাই চুপ করে খেয়ে যাচ্ছেন । তিনি বউয়ের মুখের উপর কোন কথা বলেন না খুব একটা । একবার ছেলের দিকে তাকিয়ে বললেন, আহ রিভু কী হচ্ছে এসব । চুপ করে খাও !
রিভু কিছু বলতে গিয়েও বলল না । তবে রাহেলা থামলো না । সে কথা বলতেই থাকলো । এই সংসারে এসে সে কোন সুখ পেল না । কোন শান্তি নেই । নিশা কী চুপ করে খেতে লাগলো । এখানে কথা বলা ঠিক হবে কিনা সেটা সে বুঝতে পারছে না । খাওয়ার শেষ পর্যায়ে রিভু বলল, শোন প্রতিদিন এই এক ব্যাপার নিয়ে কথা বলতে ভাল লাগে না । আজকেই শেষ কথা বলে দিই । নিশার চাকরি করা নিয়ে এর থেকে কোন অশান্তি শুনতে চাই না । একটা কথা মাথার ভেতরে পরিস্কার ভাবেই ঢুকিয়ে নাও, নিশা চাকরি করবে কী করবে না সেটা একান্তই নিশার সিদ্ধান্ত । এখানে তোমার আমার অন্য কারো কোন কথা নেই । এখন তোমার যদি মনে সংসারে নিশা তো কাজ করছে না তবে নিশার ভাগের কাজ করার জন্য আলাদা বুয়া রাখা হবে । কথাটা কি মাথার ভেতরে ঢুকেছে তোমার । সে অফিস থেকে সংসারের কাজ যত টুকু করার করবে যেমন আমি করি । এর পরেও যদি ঝামেলা তুমি কর তাহলে তুমি থাকো তোমার সংসার নিয়ে । আমি নিশাকে নিয়ে অন্য জায়গায় চলে যাবো । বুঝেছো !
এতো কঠিন ভাবে রিভুর কাছ থেকে উত্তর নিশাও আশা করে নি । রাহেলা খানিকটা অবাক হয়ে তাকালো ছেলের দিকে । তবে কোন কথা বলল না । চুপ করে তাকিয়ে রইলো ।
খাওয়া শেষ করে নিশা নিজ থেকে টেবিল পরিস্কার করলো । রাহেলা ততক্ষনে নিজের ঘরে চলে গেছেন । রান্না ঘরে প্লেট পরিস্কার করার সময় দেখলো রিভু ওর পাশে এসে দাড়িয়েছে । ওকে সাহায্য করতে ।
-তুমি যাও । আমি পরিস্কার করে আসছি ।
-দুজন মিলেই করি । তাহলে জলদি হবে ।
নিশার মনটা এতো ভাল হয়ে যায় যে বলে বোঝানো যাবে না । স্বামীকে যেন আরো একটু আপন মনে হয় । দ্রুত হাতের কাজ গুলো শেষ করে নিজেদের ঘরের দিকে পা বাড়ায় ওরা । আজকে রিভুকে নতুন করে আদর করতে ইচ্ছে করছে যেন ওর ।
Discover more from অপু তানভীর
Subscribe to get the latest posts sent to your email.