নিশা

oputanvir
4.6
(51)

নিশা ঘড়ির দিকে তাকালো । রাত প্রায় সাড়ে দশটা বাজে । রাতের খাবারের সময় হয়ে গেছে । রিভু একটু আগে খাবার ঘরের দিকে দিকে গেছে । ওকে ডাক দিয়েই গিয়েছে । তবে নিশার একটু অস্বস্তি লাগছে খাবার ঘরের দিকে যেতে । আজকে অফিস থেকে বাসায় ফিরতে ফিরতে একটু দেরি হয়েছে । অন্যান্য দিন সন্ধ্যার পরপরই সে বাসায় চলে আসে তবে আজকে বাসায় ফিরতে ফিরতে নয়টার বেশি বেজে গিয়েছিল । যখন বাসায় ভেতরে ঢোকে শাশুড়ির দিকে চোখ পড়তেই বুঝতে পারে যে তার মুখ অন্ধকার হয়ে গেছে । নিশার চাকরি করার ব্যাপারটা তার শাশুড়ি ঠিক পছন্দ করেন না । বেশ কয়েকবারই বলেছেন বাড়ির বউ বাইরে চাকরি করাটা ভাল দেখায় না ।

আজকে খাবার টেবিলে কথাটা উঠলো আবার । শাশুড়ি রাহেলা খাতুন আবারও কথাটা বললেন, নিশা তুমি এভাবে আর কত দিন চাকরি করবে? এভাবে রাত করে বাসায় ফিরলে পাড়ার লোকজন নানান কথা বলে !

নিশা কী বলবে খুজে পেল না । ঢাকা শহরে অফিস থেকে বের হতে আর রাস্তা ঘাটের অবস্থা নিয়ে একটু রাত হতেই পারে । নিশা কিছু বলতে যাচ্ছিলো তার আগেই রিভু বলল, কেন মা কী সমস্যা? পাড়ার লোকজন কী বলছে?
-তোরা আর থাকিস না । আমাকে পাড়া প্রতিবেশি নিয়ে চলতে হয় !
-মা চল না তাহলে । পাড়াপ্রতিবেশি আমাদের খাওয়ায় না পরায় না । তাদের কথা কান দেওয়ার কিছু নেই ।

শেষের লাইনটা রিভু বলল একটু বিরক্ত হয়েই । এতেই রাহেলা একটু রেগে উঠলো । বলল, কই আমরা তো চাকরি করি নি । তোর বড় ভাইয়ের বউও তো চাকরি করে না ।

নিশা এবার দেখতে পেল রিভু খাওয়া বন্ধ করে মায়ের দিকে তাকালো । তারপর ঠান্ডা গলাতে বলল, ভাবী চাকরি করে না কারণ তুমি তাকে চাকরি করতে দাও নি । তুমি যেমন সাড়া জীবন রান্না ঘরে কাটিয়েছো ভাবিকেও বাধ্য করেছো রান্না ঘরে থাকতে ।
-কী বললি তুই ?
-ঠিক বলেছি আমি মা । ভাবী সরকারি চাকরি পেয়েছি । কেবল মাত্র তুমি অশান্তি করবে বলে সে চাকরি করে নি । নয়তো আজকে সে তোমার ছেলেকে বেশি টাকা আয় করতো !

নিশা একদম চুপ করে তাকিয়ে রয়েছে রিভুর দিকে । সে ভাবে নি মায়ের সাথে এমন আচরণ করবে । একবার মনে হল যে রিভুকে সে থামতে বলে কিন্তু কেন জানি বলল না । নিশ্বার ভারুর রাশেদ এই কিছুদিন আগে পোস্টিং নিয়ে চট্টগ্রাম চলে গেছে । তার আগে এক সাথেই থাকতো এই বাড়িতে । ভাইয়ের বউ রিমি ভাল শান্ত শিষ্ট মেয়ে । নিশার সাথে বেশ ভাল ভাব হয়ে গিয়েছিলো । তার কাছ থেকেই শুনেছে সবটা । রিমি আসলেই সরকারি চাকরিই পেয়েছিলো । তবে তার শাশুড়ির কারণে চাকরিটা করতে পারে নি । খুব নাকি অশান্তি করতো । সেই সময়ে রিভু সিলেটে পড়াশোনা করতো । সে কিছুই জানতো না । চাকরিতে জয়েন না করার ব্যাপারটা রিভু জেনেছে অনেকদিন পরে । সেইদিন বাসায় অনেক গন্ডলোগ করেছিলো সে । রিমি অনেক কষ্ট করে শান্ত করেছে । বড় ভাইকেও আচ্ছা করে বকেছিল ।

রাহেলা বলল, হ্যা সব দোষ তো এখন আমারই ।
-মা ডং কর । রাতের বেলা খাওয়ার সময় কথা ভাল লাগছে না ।

নিশার শশুর মশাই চুপ করে খেয়ে যাচ্ছেন । তিনি বউয়ের মুখের উপর কোন কথা বলেন না খুব একটা । একবার ছেলের দিকে তাকিয়ে বললেন, আহ রিভু কী হচ্ছে এসব । চুপ করে খাও !

রিভু কিছু বলতে গিয়েও বলল না । তবে রাহেলা থামলো না । সে কথা বলতেই থাকলো । এই সংসারে এসে সে কোন সুখ পেল না । কোন শান্তি নেই । নিশা কী চুপ করে খেতে লাগলো । এখানে কথা বলা ঠিক হবে কিনা সেটা সে বুঝতে পারছে না । খাওয়ার শেষ পর্যায়ে রিভু বলল, শোন প্রতিদিন এই এক ব্যাপার নিয়ে কথা বলতে ভাল লাগে না । আজকেই শেষ কথা বলে দিই । নিশার চাকরি করা নিয়ে এর থেকে কোন অশান্তি শুনতে চাই না । একটা কথা মাথার ভেতরে পরিস্কার ভাবেই ঢুকিয়ে নাও, নিশা চাকরি করবে কী করবে না সেটা একান্তই নিশার সিদ্ধান্ত । এখানে তোমার আমার অন্য কারো কোন কথা নেই । এখন তোমার যদি মনে সংসারে নিশা তো কাজ করছে না তবে নিশার ভাগের কাজ করার জন্য আলাদা বুয়া রাখা হবে । কথাটা কি মাথার ভেতরে ঢুকেছে তোমার । সে অফিস থেকে সংসারের কাজ যত টুকু করার করবে যেমন আমি করি । এর পরেও যদি ঝামেলা তুমি কর তাহলে তুমি থাকো তোমার সংসার নিয়ে । আমি নিশাকে নিয়ে অন্য জায়গায় চলে যাবো । বুঝেছো !

এতো কঠিন ভাবে রিভুর কাছ থেকে উত্তর নিশাও আশা করে নি । রাহেলা খানিকটা অবাক হয়ে তাকালো ছেলের দিকে । তবে কোন কথা বলল না । চুপ করে তাকিয়ে রইলো ।

খাওয়া শেষ করে নিশা নিজ থেকে টেবিল পরিস্কার করলো । রাহেলা ততক্ষনে নিজের ঘরে চলে গেছেন । রান্না ঘরে প্লেট পরিস্কার করার সময় দেখলো রিভু ওর পাশে এসে দাড়িয়েছে । ওকে সাহায্য করতে ।
-তুমি যাও । আমি পরিস্কার করে আসছি ।
-দুজন মিলেই করি । তাহলে জলদি হবে ।

নিশার মনটা এতো ভাল হয়ে যায় যে বলে বোঝানো যাবে না । স্বামীকে যেন আরো একটু আপন মনে হয় । দ্রুত হাতের কাজ গুলো শেষ করে নিজেদের ঘরের দিকে পা বাড়ায় ওরা । আজকে রিভুকে নতুন করে আদর করতে ইচ্ছে করছে যেন ওর ।

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 4.6 / 5. Vote count: 51

No votes so far! Be the first to rate this post.


Discover more from অপু তানভীর

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

About অপু তানভীর

আমি অতি ভাল একজন ছেলে।

View all posts by অপু তানভীর →