বিন্তি রিন্তি দুই বোন

oputanvir
4.7
(46)

মোতাহের হোসেন তার যৌবন কালের বেশ কিছুটা সময় সৌদি আরবে কাটিয়েছিলেন । দেশে ফিরেছিলেন বেশ কিছু টাকা পয়সা নিয়ে । তারপর দেশে এসেই পাটের ব্যবসা শুরু করেন । বলা যায় ব্যবসা ফুটে ফেপে উঠে । বিয়ে করেন । দুই ছেলে হয় তার । তারপর এক সময় বার্ধক্য জনিত কারণে স্বাভবিক ভাবেই মারা যান । এরপর তার দুই ছেলে ব্যবসায় দায়িত্ব নেন । দুই ভাই মিলে ব্যবসাকে আরো সামনে দিকে নিয়ে যান । বড় ভাই মোমিন হোসেন আর ছোট ভাই জাইদুল হোসেন । পিঠাপিঠির দুই ভাই বিয়ে করেন প্রায় কাছাকাছি সময়ে। বড় ভাই মোমিন হোসেরন এক ছেলে জন্ম নেওয়ার পরে তার স্ত্রীর শারীরিক কারণে আর দ্বিতীয় সন্তান নেওয়া হয় নি । অন্য দিকে ছোট ভাইয়ের দুই মেয়ে । জীবন চলছিলো স্বাভাবিক সুন্দর ভাবেই । ঠিক সেই সময়ে জাইদুল হোসেন হঠাৎ মারা যান । তারপর থেকে মোমিন হোসেনই পুরো সংসারের দায়িত্ব নিয়েছেন । তার ভাইয়ের মেয়েদের কোন দিন পর ভাবেন নি । তিনজন বড় হয়েছে একই সাথে ।

বড় ছেলে রাশেদ এইচএসসির পরে বুয়েটে চান্স পরে চলে যায় ঢাকাতে পড়তে । দুই বছর পরে জাইদুল হোসেনের বড় মেয়ে বিন্তি ঢাকা মেডিক্যালে চান্স পায় । ছোট মেয়ে রিন্তি তার দুই বছর মেডিক্যালে চান্স পায় তবে সেটা ঢাকাতে নয় । নিজ জেলা যশোর মেডিক্যাল কলেজেই পড়তে থাকে । এভাবেই দিন চলে যাচ্ছে ।

রাশেদের পড়া প্রায় শেষ হয়ে গেছে । কেবল থিসিস পেপার জমা দিলেই তার পড়াশোনার পাট শেষ । অন্য দিকে বিন্তির এখনও কিছুটা সময় বাকি পড়াশোনা শেষ হতে । অন্য দিকে রিন্তির তো সবে মাত্র শুরু হল । ঠিক এই সময়ে মোমিন হোসের ইচ্ছে হল তিনি ছেলে বিয়ে দিবেন । এবং বিয়েটা দিবেন তার ছোট ভাইয়ের মেয়ে বিন্তির সাথে । এই প্রস্তাবে বাড়ির কারোই আপত্তি ছিল না । বরং রাশেদের বেশ ইচ্ছে ছিল বিন্তিকে বিয়ে করার ব্যাপারে । রাশেদ যে এই প্রাস্তাবে খুশিই হয়েছে সেটা রাশেদকে দেখেই বোঝা গেল । কিন্তু বিন্তি বেঁকে বসলো । সে কিছুতেই রাশেদকে বিয়ে করবে না ।

মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল, না আমি রাশেদকে বিয়ে করবো না ।
-কেন শুনি? ছেলেটা কোন দিক দিয়ে খারাপ ?
-খারাপের প্রশ্ন না । ছোট বেলা থেকে এক সাথে বড় হয়েছে । ওকে এভাবে কোন দিন আমি সেই নজরে দেখি নি ।

বিন্তির মা ওকে অনেক বার বোঝানোর চেষ্টা করলো বটে কিন্তু বিন্তি কিছুতে রাজি হল না । শেষে রাশেদের কাছে গিয়ে বলল, দেখ আমি এটা বলছি না যে তুই খারাপ বা অযোগ্য কিন্তু আমাদের মাঝে বিয়ে হবে না ।
রাশেদ কেবল একটু হাসলো । তারপর বলল, চিন্তা করিস না । আমি বাবাকে বুঝিয়ে বলবো ।
-বলবি প্লিজ । বড় আব্বু নয়তো আমাকে খুব খারাপ ভাববে !
-চিন্তা করিস না । সে কিছু মনে করবে না ।

মোমিন হোসেন যদিও একটু মনক্ষুন্ন হলেন ভাতিজির কথায় তবে সেটা মেনেও নিলেন । বিয়ের ব্যাপারে সবারই একটা নিজেস্ব ইচ্ছে থাকা জরূরী । তাই আর বেশি চাপাচাপি করলেন না। কিন্তু সেই দিনই একটা অবাক করা কান্ড ঘটলো । রিন্তি সবার সামনে গিয়ে বলল, আমি রাশেদ ভাইয়া কে বিয়ে করবো ।
ঘরের ভেতরে কেবল রাশেদ বাদ দিয়ে আর সবাই ছিল । সবাই অবাক হল। সব থেকে বেশি অবাক হল বিন্তি । রিন্তি আবারও বলল, আমি বিয়ে করতে রাজি !

বিন্তি বলল, এটা কী ধরনের অসভ্যতা !
রিন্তি বিন্দু মাত্র দমে না গিয়ে বলল, তুই বিয়ে করবি না । আমি করবো । সমস্যা কি ! আমি অন্য খারাপ কিছু বলি নি । কেবল বলেছি যে ভাইয়াকে আমি পছন্দ করি আমি করবো বিয়ে !

বিন্তি নিজের বোনের এই আচরণ দেখে বেশ অবাক হল । এবং সেই অবাক বিস্ময় ভাবটা রাগে পরিনত হল যখন দেখতে পেল বাসার অন্য সবাই রিন্তির কথায় রাজি হয়ে গেল । বিশেষ করে ওদের মা তো সাথে সাথে রাজি !
বিন্তি বিরক্ত হয়ে নিজের ঘরে ফিরে গেল । ওর মনে তখন অদ্ভুত একটা অনুভূতি হতে শুরু করেছে । চিন্তা করলে দেখা যায় যে সে রাশেদকে বিয়ে করতে চায় নি। অন্য কেউ যদি বিয়ে করতে চায় তাহলে তাতে তার কিছু যাওয়া আসার কথা না কিন্তু তার আসছে । কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না ।

রাতের বেলা রিন্তির সাথে আরেক দফা ঝগড়া হল বিন্তির । বিন্তি ওকে বারবার বলতে লাগলো রাশেদকে যেন বিয়ে না করে অন্য দিকে রিন্তি বলল যে ওর যাকে ইচ্ছে তাকেই বিয়ে করবো তার কিছুই বলার নেই । রাতে খাওয়া দাওয়া না করে নিজের ঘরে গিয়ে সে দরজা বন্ধ করে দিলো । তবে ঘুম কিছুতেই এল না ওর । শেষে আর থাকতে না পেরে সে রাশেদকে ফোন দিল ।

-কী হল আবার?
-তুই এখন ছাদে আয় !
-এখন?
-হ্যা । এখনই ।
-আচ্ছা ।

বিন্তি ছাদের গিয়ে দেখলো রাশেদ আগেই চলে এসেছে সেখানে । ওর সামনে গিয়ে দাড়াতেই রাশেদ বলল, কী ব্যাপার ! এতো রাতে কেন আসতে বললি?
-তুই রিন্তির কথা শুনেছিস?
-হ্যা শুনলাম ।
-তুই রাজি ?
-রাজি অরাজি আর কি ! বাবা মা রাজি । তোর মা রাজি । রিন্তি রাজিও ।
-না তুই ওকে বিয়ে করবি না ।
-কেন শুনি?
-করবি বলেছি করবি না । ব্যাস !
-আরে বাবা কারণ টা তো বলবি । তুই নিজে বিয়ে করলি না । অন্য কেউ করলে সমস্যা কি !
-অন্য কেউ করুক । রিন্তি না ।
-রিন্তিতে সমস্যা কি !
-জানি না সমস্যা কি ! কেবল করবি না ।
-না বলতে হবে । নয়তো আমি ওকেই বিয়ে করবো ।

বিন্তি তীব্র চোখে কিছু সময় তাকিয়ে রইলো রাশেদের দিকে । তবে অন্ধকারের জন্য রাশেদের চেহারা সে দেখতে পাচ্ছে না । তীব্র একটা কান্না চলে এল । এই অনুভূতিটা হচ্ছে সেই তখন থেকে যখন রিন্তির রাশেদকে বিয়ে করতে চেয়েছে । বারবার মনে হচ্ছে যে ওর সব থেকে প্রিয় জিনিসটা অন্যের হয়ে যাচ্ছে, হারিয়ে যাচ্ছে ওর কাছ থেকে ।

বিন্তি হঠাৎ অনুভব করলো যে রাশেদ ওর একদম কাছে চলে এসেছে । তারপর ওকে আলতো করে জড়িয়ে ধরলো সে । মাথাটা নিজের বিকের কাছে আলতো করে চেপে ধরে বলল, বল কেন চাস না আমি অন্য কাউকে বিয়ে করি ?
বিন্তি এতো সময়ে যে আবেগ ধরে রেখেছিলো সব যেন একবারে বের হয়ে গেল । তীব্র একটা কান্না বের হয়ে গেল ভেতর থেকে । বিন্তি সেটা আটকানোর চেষ্টা করলো না । রাশেদ মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলল, পাগল মেয়ে ! তাহলে কেন বিয়ে করতে চাসনি প্রথমে !
কান্নার ভেতরেই বিন্তি বলল, জানি না ।
এভাবেই অনেকটা সময় ওরা একে অন্যকে জড়িয়ে ধরেই রইলো । তারপর এক সময় রাশেদ বলল, এখন ঘরে যা । সকালে বাবাকে সব খুলে বলল ।
-আর রিন্তি !
-আরে গাধা তুই কি এখন বুঝিস নি যে আমিই রিন্তিকে এটা করতে বলেছি !
-কেন?
-কারণ আমি জানতাম তুই এমনই রিএকশন দিবি । তোকে তোর থেকেও ভাল করে চিনি আমি । যা এখন ।

বাসায় ফিরে নিজের ঘরে না গিয়ে বিন্তি ঢুকলো রিন্তির ঘরে । রিন্তি তখন নিজের বিছানাতে শুয়ে । বোনের পাশে শুয়ে পড়লো । তারপর আলতো করে জড়িয়ে ধরলো রিন্তিকে । ভেবেছিলো রিন্তি ঘুমিয়ে আছে । তবে ওকে অবাক করে দিয়ে রিন্তি বলল, কী গাধার ঘরে গাধা, বুদ্ধি খুলেছে !
বিন্তি এবার বোনকে আরো একটু জড়িয়ে ধরলো । তারপর বলল, তুই এতো ভাল কেন রে !
-ইস ঢং করিস না তো রাতের বেলা । সরে শো !

বিন্তি অবশ্য সরলো না । বরং আরো একটু শক্ত করে রিন্তিকে জড়িয়ে ধরলো । তারপর বলল, তুই যেমন আমাকে হেল্প করলি তুই যখন প্রেম করবি আমিও তোকে হেল্প করবো । মনে রাখিস !

রিন্তি বলল, তোর হেল্পের আমার দরকার নেই । নিজের টা নিজেই সামলাতে পারবো ! এখন ঘুমাতো । সকালে আমার ক্লাস আছে !

যদিও রিন্তি বলল ঘুমাতে । তবে মনের ভেতরে একটা দুঃখবোধ জেগে উঠলো । ছোট বেলা থেকেই ও দেখে এসেছে রাশেদ ভাই সব সময়ই বিন্তির প্রতি আলাদা আচরণ দেখাতো । ওর বড়বোনটা গাধা বলেই সেটা হয়তো বুঝতে পারে নি তবে রিন্তি ঠিকই বুঝেছিলো । এক সময় অনুভব করেছিলো সে নিজেও রাশেদ ভাইকে পছন্দ করে । কিন্তু নিজের বোনকেও ভালবাসে খুব বেশি । এই পুরো পরিবারটাকেই সে খুব বেশি ভাল্সেবা । সেখানে নিজের সুখের জন্য এতো গুলো মানুষের মনে অশান্তি জন্ম দেওয়াটা ওর পক্ষে সম্ভব না ।

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 4.7 / 5. Vote count: 46

No votes so far! Be the first to rate this post.


Discover more from অপু তানভীর

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

About অপু তানভীর

আমি অতি ভাল একজন ছেলে।

View all posts by অপু তানভীর →