বিন্তি রিন্তি দুই বোন

oputanvir
4.7
(45)

মোতাহের হোসেন তার যৌবন কালের বেশ কিছুটা সময় সৌদি আরবে কাটিয়েছিলেন । দেশে ফিরেছিলেন বেশ কিছু টাকা পয়সা নিয়ে । তারপর দেশে এসেই পাটের ব্যবসা শুরু করেন । বলা যায় ব্যবসা ফুটে ফেপে উঠে । বিয়ে করেন । দুই ছেলে হয় তার । তারপর এক সময় বার্ধক্য জনিত কারণে স্বাভবিক ভাবেই মারা যান । এরপর তার দুই ছেলে ব্যবসায় দায়িত্ব নেন । দুই ভাই মিলে ব্যবসাকে আরো সামনে দিকে নিয়ে যান । বড় ভাই মোমিন হোসেন আর ছোট ভাই জাইদুল হোসেন । পিঠাপিঠির দুই ভাই বিয়ে করেন প্রায় কাছাকাছি সময়ে। বড় ভাই মোমিন হোসেরন এক ছেলে জন্ম নেওয়ার পরে তার স্ত্রীর শারীরিক কারণে আর দ্বিতীয় সন্তান নেওয়া হয় নি । অন্য দিকে ছোট ভাইয়ের দুই মেয়ে । জীবন চলছিলো স্বাভাবিক সুন্দর ভাবেই । ঠিক সেই সময়ে জাইদুল হোসেন হঠাৎ মারা যান । তারপর থেকে মোমিন হোসেনই পুরো সংসারের দায়িত্ব নিয়েছেন । তার ভাইয়ের মেয়েদের কোন দিন পর ভাবেন নি । তিনজন বড় হয়েছে একই সাথে ।

বড় ছেলে রাশেদ এইচএসসির পরে বুয়েটে চান্স পরে চলে যায় ঢাকাতে পড়তে । দুই বছর পরে জাইদুল হোসেনের বড় মেয়ে বিন্তি ঢাকা মেডিক্যালে চান্স পায় । ছোট মেয়ে রিন্তি তার দুই বছর মেডিক্যালে চান্স পায় তবে সেটা ঢাকাতে নয় । নিজ জেলা যশোর মেডিক্যাল কলেজেই পড়তে থাকে । এভাবেই দিন চলে যাচ্ছে ।

রাশেদের পড়া প্রায় শেষ হয়ে গেছে । কেবল থিসিস পেপার জমা দিলেই তার পড়াশোনার পাট শেষ । অন্য দিকে বিন্তির এখনও কিছুটা সময় বাকি পড়াশোনা শেষ হতে । অন্য দিকে রিন্তির তো সবে মাত্র শুরু হল । ঠিক এই সময়ে মোমিন হোসের ইচ্ছে হল তিনি ছেলে বিয়ে দিবেন । এবং বিয়েটা দিবেন তার ছোট ভাইয়ের মেয়ে বিন্তির সাথে । এই প্রস্তাবে বাড়ির কারোই আপত্তি ছিল না । বরং রাশেদের বেশ ইচ্ছে ছিল বিন্তিকে বিয়ে করার ব্যাপারে । রাশেদ যে এই প্রাস্তাবে খুশিই হয়েছে সেটা রাশেদকে দেখেই বোঝা গেল । কিন্তু বিন্তি বেঁকে বসলো । সে কিছুতেই রাশেদকে বিয়ে করবে না ।

মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল, না আমি রাশেদকে বিয়ে করবো না ।
-কেন শুনি? ছেলেটা কোন দিক দিয়ে খারাপ ?
-খারাপের প্রশ্ন না । ছোট বেলা থেকে এক সাথে বড় হয়েছে । ওকে এভাবে কোন দিন আমি সেই নজরে দেখি নি ।

বিন্তির মা ওকে অনেক বার বোঝানোর চেষ্টা করলো বটে কিন্তু বিন্তি কিছুতে রাজি হল না । শেষে রাশেদের কাছে গিয়ে বলল, দেখ আমি এটা বলছি না যে তুই খারাপ বা অযোগ্য কিন্তু আমাদের মাঝে বিয়ে হবে না ।
রাশেদ কেবল একটু হাসলো । তারপর বলল, চিন্তা করিস না । আমি বাবাকে বুঝিয়ে বলবো ।
-বলবি প্লিজ । বড় আব্বু নয়তো আমাকে খুব খারাপ ভাববে !
-চিন্তা করিস না । সে কিছু মনে করবে না ।

মোমিন হোসেন যদিও একটু মনক্ষুন্ন হলেন ভাতিজির কথায় তবে সেটা মেনেও নিলেন । বিয়ের ব্যাপারে সবারই একটা নিজেস্ব ইচ্ছে থাকা জরূরী । তাই আর বেশি চাপাচাপি করলেন না। কিন্তু সেই দিনই একটা অবাক করা কান্ড ঘটলো । রিন্তি সবার সামনে গিয়ে বলল, আমি রাশেদ ভাইয়া কে বিয়ে করবো ।
ঘরের ভেতরে কেবল রাশেদ বাদ দিয়ে আর সবাই ছিল । সবাই অবাক হল। সব থেকে বেশি অবাক হল বিন্তি । রিন্তি আবারও বলল, আমি বিয়ে করতে রাজি !

বিন্তি বলল, এটা কী ধরনের অসভ্যতা !
রিন্তি বিন্দু মাত্র দমে না গিয়ে বলল, তুই বিয়ে করবি না । আমি করবো । সমস্যা কি ! আমি অন্য খারাপ কিছু বলি নি । কেবল বলেছি যে ভাইয়াকে আমি পছন্দ করি আমি করবো বিয়ে !

বিন্তি নিজের বোনের এই আচরণ দেখে বেশ অবাক হল । এবং সেই অবাক বিস্ময় ভাবটা রাগে পরিনত হল যখন দেখতে পেল বাসার অন্য সবাই রিন্তির কথায় রাজি হয়ে গেল । বিশেষ করে ওদের মা তো সাথে সাথে রাজি !
বিন্তি বিরক্ত হয়ে নিজের ঘরে ফিরে গেল । ওর মনে তখন অদ্ভুত একটা অনুভূতি হতে শুরু করেছে । চিন্তা করলে দেখা যায় যে সে রাশেদকে বিয়ে করতে চায় নি। অন্য কেউ যদি বিয়ে করতে চায় তাহলে তাতে তার কিছু যাওয়া আসার কথা না কিন্তু তার আসছে । কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না ।

রাতের বেলা রিন্তির সাথে আরেক দফা ঝগড়া হল বিন্তির । বিন্তি ওকে বারবার বলতে লাগলো রাশেদকে যেন বিয়ে না করে অন্য দিকে রিন্তি বলল যে ওর যাকে ইচ্ছে তাকেই বিয়ে করবো তার কিছুই বলার নেই । রাতে খাওয়া দাওয়া না করে নিজের ঘরে গিয়ে সে দরজা বন্ধ করে দিলো । তবে ঘুম কিছুতেই এল না ওর । শেষে আর থাকতে না পেরে সে রাশেদকে ফোন দিল ।

-কী হল আবার?
-তুই এখন ছাদে আয় !
-এখন?
-হ্যা । এখনই ।
-আচ্ছা ।

বিন্তি ছাদের গিয়ে দেখলো রাশেদ আগেই চলে এসেছে সেখানে । ওর সামনে গিয়ে দাড়াতেই রাশেদ বলল, কী ব্যাপার ! এতো রাতে কেন আসতে বললি?
-তুই রিন্তির কথা শুনেছিস?
-হ্যা শুনলাম ।
-তুই রাজি ?
-রাজি অরাজি আর কি ! বাবা মা রাজি । তোর মা রাজি । রিন্তি রাজিও ।
-না তুই ওকে বিয়ে করবি না ।
-কেন শুনি?
-করবি বলেছি করবি না । ব্যাস !
-আরে বাবা কারণ টা তো বলবি । তুই নিজে বিয়ে করলি না । অন্য কেউ করলে সমস্যা কি !
-অন্য কেউ করুক । রিন্তি না ।
-রিন্তিতে সমস্যা কি !
-জানি না সমস্যা কি ! কেবল করবি না ।
-না বলতে হবে । নয়তো আমি ওকেই বিয়ে করবো ।

বিন্তি তীব্র চোখে কিছু সময় তাকিয়ে রইলো রাশেদের দিকে । তবে অন্ধকারের জন্য রাশেদের চেহারা সে দেখতে পাচ্ছে না । তীব্র একটা কান্না চলে এল । এই অনুভূতিটা হচ্ছে সেই তখন থেকে যখন রিন্তির রাশেদকে বিয়ে করতে চেয়েছে । বারবার মনে হচ্ছে যে ওর সব থেকে প্রিয় জিনিসটা অন্যের হয়ে যাচ্ছে, হারিয়ে যাচ্ছে ওর কাছ থেকে ।

বিন্তি হঠাৎ অনুভব করলো যে রাশেদ ওর একদম কাছে চলে এসেছে । তারপর ওকে আলতো করে জড়িয়ে ধরলো সে । মাথাটা নিজের বিকের কাছে আলতো করে চেপে ধরে বলল, বল কেন চাস না আমি অন্য কাউকে বিয়ে করি ?
বিন্তি এতো সময়ে যে আবেগ ধরে রেখেছিলো সব যেন একবারে বের হয়ে গেল । তীব্র একটা কান্না বের হয়ে গেল ভেতর থেকে । বিন্তি সেটা আটকানোর চেষ্টা করলো না । রাশেদ মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলল, পাগল মেয়ে ! তাহলে কেন বিয়ে করতে চাসনি প্রথমে !
কান্নার ভেতরেই বিন্তি বলল, জানি না ।
এভাবেই অনেকটা সময় ওরা একে অন্যকে জড়িয়ে ধরেই রইলো । তারপর এক সময় রাশেদ বলল, এখন ঘরে যা । সকালে বাবাকে সব খুলে বলল ।
-আর রিন্তি !
-আরে গাধা তুই কি এখন বুঝিস নি যে আমিই রিন্তিকে এটা করতে বলেছি !
-কেন?
-কারণ আমি জানতাম তুই এমনই রিএকশন দিবি । তোকে তোর থেকেও ভাল করে চিনি আমি । যা এখন ।

বাসায় ফিরে নিজের ঘরে না গিয়ে বিন্তি ঢুকলো রিন্তির ঘরে । রিন্তি তখন নিজের বিছানাতে শুয়ে । বোনের পাশে শুয়ে পড়লো । তারপর আলতো করে জড়িয়ে ধরলো রিন্তিকে । ভেবেছিলো রিন্তি ঘুমিয়ে আছে । তবে ওকে অবাক করে দিয়ে রিন্তি বলল, কী গাধার ঘরে গাধা, বুদ্ধি খুলেছে !
বিন্তি এবার বোনকে আরো একটু জড়িয়ে ধরলো । তারপর বলল, তুই এতো ভাল কেন রে !
-ইস ঢং করিস না তো রাতের বেলা । সরে শো !

বিন্তি অবশ্য সরলো না । বরং আরো একটু শক্ত করে রিন্তিকে জড়িয়ে ধরলো । তারপর বলল, তুই যেমন আমাকে হেল্প করলি তুই যখন প্রেম করবি আমিও তোকে হেল্প করবো । মনে রাখিস !

রিন্তি বলল, তোর হেল্পের আমার দরকার নেই । নিজের টা নিজেই সামলাতে পারবো ! এখন ঘুমাতো । সকালে আমার ক্লাস আছে !

যদিও রিন্তি বলল ঘুমাতে । তবে মনের ভেতরে একটা দুঃখবোধ জেগে উঠলো । ছোট বেলা থেকেই ও দেখে এসেছে রাশেদ ভাই সব সময়ই বিন্তির প্রতি আলাদা আচরণ দেখাতো । ওর বড়বোনটা গাধা বলেই সেটা হয়তো বুঝতে পারে নি তবে রিন্তি ঠিকই বুঝেছিলো । এক সময় অনুভব করেছিলো সে নিজেও রাশেদ ভাইকে পছন্দ করে । কিন্তু নিজের বোনকেও ভালবাসে খুব বেশি । এই পুরো পরিবারটাকেই সে খুব বেশি ভাল্সেবা । সেখানে নিজের সুখের জন্য এতো গুলো মানুষের মনে অশান্তি জন্ম দেওয়াটা ওর পক্ষে সম্ভব না ।

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 4.7 / 5. Vote count: 45

No votes so far! Be the first to rate this post.

About অপু তানভীর

আমি অতি ভাল একজন ছেলে।

View all posts by অপু তানভীর →