মাছের মাথা

oputanvir
4.5
(32)

-মা আজকে মাছের মাথাটা আমি খাই !

রাহেলা বেগম ছেলের দিকে তাকালেন । তারপর খানিকটা বিরক্তি নিয়ে বললেন, আজকে তোর খাওয়ার দিন ?
রূপম চুপ করে থেকে বলল, না ।
-তাহলে কেন খেতে চাচ্ছিস?

নওরিন কিছুই বুঝতে পারলো না । খাবার টেবিলে চুপ করে খাবার সাজাতে লাগলো । নওরিনের বিয়ে হয়েছে সপ্তাহ খানেক হয়েছে । এই বাসার নিয়ম কানুন এখনও সে ঠিক মত বুঝতে পারে নি । তবে এটা পরিস্কার বুঝতে পেরেছে যে তার শাশুড়ি খুব কড়া একজন মহিলা । কলেজের প্রিন্সিপাল সে । বেশির ভাগ দিনেই কলেজে থাকেন । দুপুরের খাওয়া এক সাথে খাওয়া হয় না কারোই । তার স্বামী আর নওরিনের স্বামী সুমন দুজনেই অফিসে থাকে । কেবল ছুটির দিন গুলোতে দুপুরের খাওয়াটা এক সাথে খাওয়া হয় ।

নওরিন বসতে বসতে পাশে বসে সুমনকে মৃদু স্বরে বলল, খাওয়ার সিরিয়াল মানে?
সুমন তখন একটা বড় মাছের পিচ নিজের পাতে নিতে ব্যস্ত । নওরিন নিজ হাতে তুলে দিলে গেলে তার শাশুড়ি বলল, ওকে নিতে দাও । এই বাড়িতে খাবার তুলে দেয় না কেউ । যার যা দরকার নিজেই নিয়ে নিবে । সুমন যদি তোমাকে পানি আনতে নিজে বিছানায় শুয়ে থেকে খবরদার নিয়ে আসবে না ।

নওরিন একটু অবাক হয়ে তাকালো । রাহেলা বললেন, বওমা মাছের মাথাটা তুলে নাও ।
-আমি!
-হ্যা আজকে তোমার সিরিয়াল !
-সিরিয়াল মানে?

পাশ থেকে সুমন বলল, সিরিয়াল মানে হচ্ছে এই বাড়িতে যখন বড় মাছ রান্না হয় তখন সেটার মাথা সিরিয়াল অনুযায়ী খাওয়া হয় । বয়সের ভিত্তিতে । আব্বাকে দিয়ে শুরু হয় । তার মা তারপর আমি তারপর তুমি এরপর রূপম ।
-না না আমি মাথা খাবো না ।
-এসব বলে লাভ নেই । খেতেই হবে ।

এবার নওরিন দেখলো রাহেলা নিজেই মাথাটা তুলে দিল রওরিনের পাতে । বলল, নাও ।

নওরিন কিছুটা সময় মাছের মাথাটার দিকে তাকিয়ে রইলো । নওরিন এমন একটা পরিবার থেকে এসেছে যেখানে মেয়েদের মাছের মাথা খাওয়ার নিয়ম নেই। কে এই নিয়ম বানিয়েছে সেটা নওরিন জানে না তবে সে কোন দিন দেখে নি তার বড় বোন কিংবা তার মা মাছের বড় কোন পিচ কিংবা মাথা খেয়েছে । যখন ছোট ছিল তখন খেয়েছিলো তবে একটু বড় হওয়ার পরেই খেয়াল করে দেখতো যে মাছের পিচটা সব সময় তার বাবাকে দেওয়া হত । মুরগির রান দেওয়া হত তার ছোট ভাইকে । সবার খাওয়া শেষ হলে তারপর তার মা খেতে বসতো । এটাই ছিল অলিখিত নিয়ম । বড় ভাইয়ের বিয়ের পরে ভাবীর বেলাতেও এই নিয়ম চালু হল । ভাবী খেতে বসতো সবাইকে খাইয়ে । এটা অবশ্য আমাদের দেশের বেশির ভাগ পরিবারের চিত্র ।

নওরিন এতো গুলো বছরের মাছের এতো বড় মাথা কোন দিন খেয়েছে কিনা মনে করতে পারলো না । আরেকবার রূপমকে দেওয়ার চেষ্টা করলে এবার রাহেলা একটা ধমক দিলেন । নওরিনের কেন জানি এই ধকমটা বেশ ভাল লাগলো ।
রাহেলা খেতে খেতেই বলল, এই বাসায় ছেলে মেয়ের ভেতরে কোন পার্থক্য নেই । সবাই সবার কাজ করে নিজে নিজে । তুমিও তোমার কাজ করবে এবং মনে রাখবে কারো হুকুম শুনবে না । এমন কি তোমার শ্বশুর মশাইয়ের না । নিজেরা শুয়ে বসে থাকবে আর আমাদের হুকুম করে বলবে যে এটা নিয়ে আসো ওটা নিয়ে আসো এটা হবে না । বুঝেছো ?

নওরিন কেবল মাথা ঝাকালো । নওরিনের তখন ওর নিজের বাসার কথা মনে পড়লো । ছোট বেলা থেকেই দেখে এসেছে বাবার প্রতিটা কাজ তার মাকে করতে হত । ঘুম থেকে উঠতে হত বাবার আগেই । সকালে সে গরম পানি দিয়ে গোসল করে সেটা চুলায় চাপিয়ে তারপর সকালের নাস্তা বানানো । পানি গরম হলে সেটা ওয়াশরুমে বালতিতে দিয়ে আসা । এমন কি অফিসে যাওয়ার সময় তার বাবার সু টাও মুছে দিতো তার মা।
ভাইয়ের বিয়ে পরে ভাবীকেও দেখতো এই কাজ গুলো করতে । নওরিন তো ধরেই নিয়েছিল যে এসবই স্বাভাবিক। তাকেও বিয়ের পরে আসলে এই কাজই করতে হবে । কিন্তু এই বাড়িতে এসে অবাক হয়ে গেল সে । এই বাড়ির সব কিছুই কেমন যে নতুন নতুন মনে হচ্ছে । ঠিক যেন একেবারে স্বপ্নের মত ।

এসব অবশ্য বাস্তবে খুব একটা হয় না । গল্পেই হয় কেবল ।

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 4.5 / 5. Vote count: 32

No votes so far! Be the first to rate this post.

About অপু তানভীর

আমি অতি ভাল একজন ছেলে।

View all posts by অপু তানভীর →