একটি সত্যি স্বপ্নের বর্ণনা

oputanvir
4.5
(20)

প্রতিদিন বিকেল বেলা আমাকে পড়াতে যেতে হয় । আমার অবশ্য পড়াতে খারাপ লাগে না । বরং যেদিন পড়ানো থাকে না সেদিন আমার কেন জানি সব ফাঁকা ফাঁকা লাগে । মনে হয় কিছু যেন করি নি আজকে সারা দিনে । আজকেও আমি আমার নতুন কেনা সেকেন্ড হ্যান্ড সাইকেলটা নিয়ে পড়ানোর উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলাম । আড়ং মোড়ের কাছে আসতেই দেখতে পেলাম রাস্তার ঠিক এক পাশে একটা বড় গর্ত । গর্তটা এতো বড় যে এখানে একটা ট্রাক পর্যন্ত ঢুকে যাবে অনায়াসে । গর্তের ভেতরে পানি রয়েছে । রাস্তার কাজ চালানোর জন্য এতো বড় গর্ত কেন করতে হবে সেটা আমার মাথায় ঢুকলো না । যাইহোক সেদিকে আর না তাকিয়ে আমি সাইকেল নিয়ে সেটার পাশ দিয়েই যাওয়া শুরু করলো । কিন্তু তারপরেই দেখতে পেলাম কার গাড়িটা আমার চোখের সামনে দিয়ে গর্তে পড়ে গেল । তারপর টুপ করে পানির ভেতরে ডুবে গেল। যখন গাড়িটার দিকে তাকিয়েছিলাম তখনই দেখেছিলাম গাড়ির পেছনে এক মহিলা বসেছিলাম । তার সাথে ছিল দুটো বাচ্চা । একটা বাচ্চা ছয় সাত বছরের অন্য জন মহিলার কোলে ছিল । তারা সব ডুবে গেল পানিতে ।

তবে যখন সাইকেলটা থেকে নেমে আমি গর্তটার কাছে গেলাম দেখতে পেলাম যে ড্রাইভার একজনকে কোলে তুলে গর্তের মুখে দাড়ানো একজনের হাত তুলে দিয়েছে । আর অন্য জন মহিলার কোলে তখনও । যাক যে ভয়টা পেয়েছিলাম সেটা হয় নি । সবাই গর্তের মুখেি দাড়িয়ে ছিল । আমি আর সেদিকে দাড়ালাম না । আমি আবারও টিউশনির পথে রওয়ানা দিলাম । মানিক মিয়া এভিনিউয়ের পথে আসতেই খেয়াল হল যে আমি সাইকেল থেকে যে নেমেছিলাম আমি তারপর আর সাইকেলে উঠি নি । সাইকেলটা সেখানে রেখেই চলে এসেছি । আবারও সাইকেল নিতে দৌড়ালাম । মনে হচ্ছিলো যে আমার সাইকেলটা বুঝি হারিয়েই গেল এবার ।

গর্তের কাছে পৌছে দেখি সেখানে কোন সাইকেল নেই । মানে যেখানে সাইকেলটা আমি রেখেছিলাম সেখানে সাইকেল নেই । তার নামে সাইকেলটা চুরি হয়ে গেছে এর ভেতরেই । মনটা খারাপ হল খুব । কী করবো কিছুই বুঝতে পারছিলাম না । তারপর কী মনে হল আমি এবার আসাদগেটের দিকে হাটা দিলাম । আসাদগেটের এই দিকটা একটু পেঁচানো রাস্তা আর অনেক গাছ পালা রয়েছে । একটু দুরে গিয়ে উপরের দিকে উঠে গেছে । সেই দুরে যাওয়ার পরেই দেখতে পেলাম একটা বড় গাছের নিচে আমার সাইকেলটা দাড় করানো রয়েছে । আমি দ্রুত সাইকেলটার কাছে গিয়ে হাজির হল । যে সাইকেলটা নিয়েছিলো সে এখানে সাইকেলটা দাড় করিয়ে রেখে গেছে ।

তবে একটু পরেই আমি বুঝতে পারলাম যে এই সাইকেল দেখতে আমার মত হলেও আসলে আমার সাইকেল নয় । আমার সাইকেলটা গিয়ারওয়ালা আর এটা নন-গিয়ার । আর আমার সাইকেলের হ্যান্ডেলটা কালো আর এইটার হ্যান্ডেল সাদা । এছাড়া আর সব কিছুই আমার সাইকেলের মত । আমার মনে হল যে চোর নিজের সাইকেলটা রেখে দিয়ে আমার সাইকেলটা নিয়ে গেছে ।
আমার এখন কী করা উচিৎ ?
সাইকেল নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম । তবে তখনই দেখতে পেলাম যে দুজন মানুষ দাড়িয়ে রয়েছে সাইকেলের কাছে । তাদের কাছে বলতেই বলল যে যার সাইকেল সে চলে আসবে । সেই আমার সাইকেল নিয়ে গেছে আর তারটা রেখে গেছে । আমি চাইলে এই সাইকেল নিয়ে যেতে পারি । তবে শর্ত হচ্ছে সাইকেলের সাথে আমার ছবি দেখাতে হবে তাদের । নয়তো তারা আমাকে সাইকেল নিয়ে যেতে দিবে না । আমি মোবাইলে সাইকেলের সাথে ছবি খুজতে লাগলাম এবং অবাক হয়ে দেখলাম যে এই সাইকেলটার সাথে আসলে আমার কোন ছবিই নেই । সব ছবিই আমার অন্য সাইকেলটার সাথে । তখন লোকটা বলল যে কোন ভাবেই সে এই সাইকেল নিয়ে যেতে দিবে না । সেই লোক আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে ।

ভাগ্যক্রমে অপেক্ষা করতে হল না । একটু পরেই সে চলে এল । এবং সে আমার পরিচিত । আমি যে লোকের কাছ থেকে সাইকেল সার্ভিসিং করি এই লোক হচ্ছে সেই লোক । সে আমাকে দেখে হাসলো । এবং জানালো যে সাইকেল তার বাসায় আছে । তার সাথে গেলেই সাইকেল দিয়ে দিবে ।

আমি তার সাথে রওয়ানা দিলাম । একটু সময় পরেও আমরা একটা উচু টিলার সামনে এসে হাজির হলাম । এই টিলার উপরেই তার বাড়ি । সে উঠতে শুরু করলো । আমিও তার পেছন পেছন উঠতে শুরু করলো । এবং সাথে সাইকেলটা নিয়েই উঠতে বেশ কষ্ট হচ্ছিলো তবে এক পর্যায়ে সে আমার সাইকেলটা নিয়েই উঠে গেল । আমি পেছন পেছন উঠলাম । উঠেই দেখতে পেলাম তার ঘরটা । অনেকটা টিনের ঘরের মত । উচু বারান্দা । আমি উঠে দাড়ালাম কিছু সময় । সে জানালো যে দুপুরের খাওয়া যেন খেয়ে যাই । আমিও কেন জানি রাজি হয়ে গেলাম । তবে বারান্দায় উঠে বসার আগে আমার চোখ গেল পাশের গেটের দিকে । আমি যেদিক দিয়ে উঠেছি সেটা একটা রাস্তা । এবং এটাই এই এলাকার শেষ বাড়ি । ঐদিকে আরো অনেকের বাড়ি রয়েছে । আমি গেটের কাছে একটু এগিয়ে গেলাম । দেখতে পেলাম যে আর্মি কিংবা বিজিবির গাড়ি দাড়িয়ে । তারা কয়েকটা মাদ্রাসার ছেলেদের মারধোর করছে । এবং আমার চোখেই সামনেই দেখলাম কয়েকজনকে ধরে নিয়ে গাড়িতে তুলে নিয়ে চলে গেল ।

আমি এবার ফিরে এলাম সাইকেল ওয়ালার বাড়িতে । উচু বারান্দায় উঠে এলাম। ভেতরের দিকে তাকিয়ে বুঝলাম সেখানে ঘর রয়েছে তিনটা । একটা ঘরে আমি বসলাম । ভেতরের ঘরে রান্না হচ্ছে যদিও সেটা রান্না ঘর না । পাশে আরেকটা ঘর রয়েছে সেকাহনে দুজন ইয়াং মেয়ে বসে রয়েছে । গল্প করছে । আমার সাথে একজনের চোখাচোখি হল । একটু হাসলো ।

একটু পরে সাইকেলওয়ালার তিন বাচ্চা এল ঘরে । এক ছেলে দুই মেয়ে । ছেলে মেঝ । তার নাম ”হিদ্র” । ছোট মেয়েটা আমার দিকে এগিয়ে এল । তারপর আমার হাতে একটু কামড় বসিয়ে দিল । বাচ্চারা যেমন হয় আর কি ! আমি বেশি গা করলাম না । তারপরেই পাশের ঘরের দুজন মেয়ের ভেতরে একজন এসে হাজির হল ঘরে । সে নানান বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে লাগলো । সাহিত্যিক আলোচনা । সাইকেলওয়ালার ঘরে বসে সাহিত্য আলোচনা চলছে ব্যাপারটা আমার কাছে কেমন যেন লাগলো । একটা আলোচনা এমন হল যে মেয়েটা ফেলো সোলজার মানে জানালো হচ্ছে ভিলেন । কেন জানালো আমি জানি না ।

এরপর খাওয়া এল । খাওয়া শেষ করতে করতে বেজে গেল ছয়টা । আমি খাওয়া শেষ করে সাইকেলওয়ালাকে বললাম একদিন তাকে বিরিয়ানি খাওয়াবো । এমন হতে পারে তাকে নিয়ে বিরিয়ানির দোকানে যাবো অথবা অর্ডার দিয়ে খাবার নিয়ে আসবো বাসায় । তিন প্যাকেট অর্ডার দিবো এটাও জানালাম !

তারপর আমি আবার সাইকেল নিয়ে সেই টিলার রাস্তা দিয়েই নেমে এলাম । সাইকেল চালিয়ে যখন একটু দুরে গিয়েছি তখনই খেয়াল হল যে সাইকেলের হ্যান্ডেল তো সাদা । আমার সাইকেলের হ্যান্ডেল তো কালো । তার মানে আমি আবারও ভুল করে আমার সাইকেল রেখে তারটা নিয়ে এসেছি । মেজাজটা গরম হল । চিৎকার দিলাম একটা । এবং তখনই আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল ।

এটা একটা স্বপ্ন ছিল !

এতো সময় যা বর্ণনা দিলাম তার পুরোটাই স্বপ্ন ছিল , সাধারণত স্বপ্নের কথা আমার মনে থাকে না । তবে মাঝে মাঝে কিছু স্বপ্ন এমন থাকে যে স্পষ্ট মনে থাকে ঘুম ভাঙ্গার পরে । গত পরশু দিন ভোরে আমার ঘুম ভাঙ্গলো এই স্বপ্নটা দেখে । স্বপ্নটা এতো স্পষ্ট যে আমি যে আমি প্রতিটি ঘটনা চোখের সামনে মনে রইলো । কিন্তু আমি জানি এই স্পষ্ট ভাবটা বেশি সময় থাকবে না । যত সময় যাবে স্বপ্নটা ততই অপস্পষ্ট হয়ে যাবে । তখনই মোবাইলের নোটপ্যাড বের করলাম এবং স্বপ্নটা লিখে রাখলাম । তবে স্বপ্ন লিখতে লিখতে সাইকেলওয়ালার দুই মেয়ের নাম ভুল গেলাম । কেবল ছেলের নামটা মনে রইলো ।

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 4.5 / 5. Vote count: 20

No votes so far! Be the first to rate this post.


Discover more from অপু তানভীর

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

About অপু তানভীর

আমি অতি ভাল একজন ছেলে।

View all posts by অপু তানভীর →