একটি সত্যি স্বপ্নের বর্ণনা

oputanvir
4.4
(19)

প্রতিদিন বিকেল বেলা আমাকে পড়াতে যেতে হয় । আমার অবশ্য পড়াতে খারাপ লাগে না । বরং যেদিন পড়ানো থাকে না সেদিন আমার কেন জানি সব ফাঁকা ফাঁকা লাগে । মনে হয় কিছু যেন করি নি আজকে সারা দিনে । আজকেও আমি আমার নতুন কেনা সেকেন্ড হ্যান্ড সাইকেলটা নিয়ে পড়ানোর উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলাম । আড়ং মোড়ের কাছে আসতেই দেখতে পেলাম রাস্তার ঠিক এক পাশে একটা বড় গর্ত । গর্তটা এতো বড় যে এখানে একটা ট্রাক পর্যন্ত ঢুকে যাবে অনায়াসে । গর্তের ভেতরে পানি রয়েছে । রাস্তার কাজ চালানোর জন্য এতো বড় গর্ত কেন করতে হবে সেটা আমার মাথায় ঢুকলো না । যাইহোক সেদিকে আর না তাকিয়ে আমি সাইকেল নিয়ে সেটার পাশ দিয়েই যাওয়া শুরু করলো । কিন্তু তারপরেই দেখতে পেলাম কার গাড়িটা আমার চোখের সামনে দিয়ে গর্তে পড়ে গেল । তারপর টুপ করে পানির ভেতরে ডুবে গেল। যখন গাড়িটার দিকে তাকিয়েছিলাম তখনই দেখেছিলাম গাড়ির পেছনে এক মহিলা বসেছিলাম । তার সাথে ছিল দুটো বাচ্চা । একটা বাচ্চা ছয় সাত বছরের অন্য জন মহিলার কোলে ছিল । তারা সব ডুবে গেল পানিতে ।

তবে যখন সাইকেলটা থেকে নেমে আমি গর্তটার কাছে গেলাম দেখতে পেলাম যে ড্রাইভার একজনকে কোলে তুলে গর্তের মুখে দাড়ানো একজনের হাত তুলে দিয়েছে । আর অন্য জন মহিলার কোলে তখনও । যাক যে ভয়টা পেয়েছিলাম সেটা হয় নি । সবাই গর্তের মুখেি দাড়িয়ে ছিল । আমি আর সেদিকে দাড়ালাম না । আমি আবারও টিউশনির পথে রওয়ানা দিলাম । মানিক মিয়া এভিনিউয়ের পথে আসতেই খেয়াল হল যে আমি সাইকেল থেকে যে নেমেছিলাম আমি তারপর আর সাইকেলে উঠি নি । সাইকেলটা সেখানে রেখেই চলে এসেছি । আবারও সাইকেল নিতে দৌড়ালাম । মনে হচ্ছিলো যে আমার সাইকেলটা বুঝি হারিয়েই গেল এবার ।

গর্তের কাছে পৌছে দেখি সেখানে কোন সাইকেল নেই । মানে যেখানে সাইকেলটা আমি রেখেছিলাম সেখানে সাইকেল নেই । তার নামে সাইকেলটা চুরি হয়ে গেছে এর ভেতরেই । মনটা খারাপ হল খুব । কী করবো কিছুই বুঝতে পারছিলাম না । তারপর কী মনে হল আমি এবার আসাদগেটের দিকে হাটা দিলাম । আসাদগেটের এই দিকটা একটু পেঁচানো রাস্তা আর অনেক গাছ পালা রয়েছে । একটু দুরে গিয়ে উপরের দিকে উঠে গেছে । সেই দুরে যাওয়ার পরেই দেখতে পেলাম একটা বড় গাছের নিচে আমার সাইকেলটা দাড় করানো রয়েছে । আমি দ্রুত সাইকেলটার কাছে গিয়ে হাজির হল । যে সাইকেলটা নিয়েছিলো সে এখানে সাইকেলটা দাড় করিয়ে রেখে গেছে ।

তবে একটু পরেই আমি বুঝতে পারলাম যে এই সাইকেল দেখতে আমার মত হলেও আসলে আমার সাইকেল নয় । আমার সাইকেলটা গিয়ারওয়ালা আর এটা নন-গিয়ার । আর আমার সাইকেলের হ্যান্ডেলটা কালো আর এইটার হ্যান্ডেল সাদা । এছাড়া আর সব কিছুই আমার সাইকেলের মত । আমার মনে হল যে চোর নিজের সাইকেলটা রেখে দিয়ে আমার সাইকেলটা নিয়ে গেছে ।
আমার এখন কী করা উচিৎ ?
সাইকেল নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম । তবে তখনই দেখতে পেলাম যে দুজন মানুষ দাড়িয়ে রয়েছে সাইকেলের কাছে । তাদের কাছে বলতেই বলল যে যার সাইকেল সে চলে আসবে । সেই আমার সাইকেল নিয়ে গেছে আর তারটা রেখে গেছে । আমি চাইলে এই সাইকেল নিয়ে যেতে পারি । তবে শর্ত হচ্ছে সাইকেলের সাথে আমার ছবি দেখাতে হবে তাদের । নয়তো তারা আমাকে সাইকেল নিয়ে যেতে দিবে না । আমি মোবাইলে সাইকেলের সাথে ছবি খুজতে লাগলাম এবং অবাক হয়ে দেখলাম যে এই সাইকেলটার সাথে আসলে আমার কোন ছবিই নেই । সব ছবিই আমার অন্য সাইকেলটার সাথে । তখন লোকটা বলল যে কোন ভাবেই সে এই সাইকেল নিয়ে যেতে দিবে না । সেই লোক আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে ।

ভাগ্যক্রমে অপেক্ষা করতে হল না । একটু পরেই সে চলে এল । এবং সে আমার পরিচিত । আমি যে লোকের কাছ থেকে সাইকেল সার্ভিসিং করি এই লোক হচ্ছে সেই লোক । সে আমাকে দেখে হাসলো । এবং জানালো যে সাইকেল তার বাসায় আছে । তার সাথে গেলেই সাইকেল দিয়ে দিবে ।

আমি তার সাথে রওয়ানা দিলাম । একটু সময় পরেও আমরা একটা উচু টিলার সামনে এসে হাজির হলাম । এই টিলার উপরেই তার বাড়ি । সে উঠতে শুরু করলো । আমিও তার পেছন পেছন উঠতে শুরু করলো । এবং সাথে সাইকেলটা নিয়েই উঠতে বেশ কষ্ট হচ্ছিলো তবে এক পর্যায়ে সে আমার সাইকেলটা নিয়েই উঠে গেল । আমি পেছন পেছন উঠলাম । উঠেই দেখতে পেলাম তার ঘরটা । অনেকটা টিনের ঘরের মত । উচু বারান্দা । আমি উঠে দাড়ালাম কিছু সময় । সে জানালো যে দুপুরের খাওয়া যেন খেয়ে যাই । আমিও কেন জানি রাজি হয়ে গেলাম । তবে বারান্দায় উঠে বসার আগে আমার চোখ গেল পাশের গেটের দিকে । আমি যেদিক দিয়ে উঠেছি সেটা একটা রাস্তা । এবং এটাই এই এলাকার শেষ বাড়ি । ঐদিকে আরো অনেকের বাড়ি রয়েছে । আমি গেটের কাছে একটু এগিয়ে গেলাম । দেখতে পেলাম যে আর্মি কিংবা বিজিবির গাড়ি দাড়িয়ে । তারা কয়েকটা মাদ্রাসার ছেলেদের মারধোর করছে । এবং আমার চোখেই সামনেই দেখলাম কয়েকজনকে ধরে নিয়ে গাড়িতে তুলে নিয়ে চলে গেল ।

আমি এবার ফিরে এলাম সাইকেল ওয়ালার বাড়িতে । উচু বারান্দায় উঠে এলাম। ভেতরের দিকে তাকিয়ে বুঝলাম সেখানে ঘর রয়েছে তিনটা । একটা ঘরে আমি বসলাম । ভেতরের ঘরে রান্না হচ্ছে যদিও সেটা রান্না ঘর না । পাশে আরেকটা ঘর রয়েছে সেকাহনে দুজন ইয়াং মেয়ে বসে রয়েছে । গল্প করছে । আমার সাথে একজনের চোখাচোখি হল । একটু হাসলো ।

একটু পরে সাইকেলওয়ালার তিন বাচ্চা এল ঘরে । এক ছেলে দুই মেয়ে । ছেলে মেঝ । তার নাম ”হিদ্র” । ছোট মেয়েটা আমার দিকে এগিয়ে এল । তারপর আমার হাতে একটু কামড় বসিয়ে দিল । বাচ্চারা যেমন হয় আর কি ! আমি বেশি গা করলাম না । তারপরেই পাশের ঘরের দুজন মেয়ের ভেতরে একজন এসে হাজির হল ঘরে । সে নানান বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে লাগলো । সাহিত্যিক আলোচনা । সাইকেলওয়ালার ঘরে বসে সাহিত্য আলোচনা চলছে ব্যাপারটা আমার কাছে কেমন যেন লাগলো । একটা আলোচনা এমন হল যে মেয়েটা ফেলো সোলজার মানে জানালো হচ্ছে ভিলেন । কেন জানালো আমি জানি না ।

এরপর খাওয়া এল । খাওয়া শেষ করতে করতে বেজে গেল ছয়টা । আমি খাওয়া শেষ করে সাইকেলওয়ালাকে বললাম একদিন তাকে বিরিয়ানি খাওয়াবো । এমন হতে পারে তাকে নিয়ে বিরিয়ানির দোকানে যাবো অথবা অর্ডার দিয়ে খাবার নিয়ে আসবো বাসায় । তিন প্যাকেট অর্ডার দিবো এটাও জানালাম !

তারপর আমি আবার সাইকেল নিয়ে সেই টিলার রাস্তা দিয়েই নেমে এলাম । সাইকেল চালিয়ে যখন একটু দুরে গিয়েছি তখনই খেয়াল হল যে সাইকেলের হ্যান্ডেল তো সাদা । আমার সাইকেলের হ্যান্ডেল তো কালো । তার মানে আমি আবারও ভুল করে আমার সাইকেল রেখে তারটা নিয়ে এসেছি । মেজাজটা গরম হল । চিৎকার দিলাম একটা । এবং তখনই আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল ।

এটা একটা স্বপ্ন ছিল !

এতো সময় যা বর্ণনা দিলাম তার পুরোটাই স্বপ্ন ছিল , সাধারণত স্বপ্নের কথা আমার মনে থাকে না । তবে মাঝে মাঝে কিছু স্বপ্ন এমন থাকে যে স্পষ্ট মনে থাকে ঘুম ভাঙ্গার পরে । গত পরশু দিন ভোরে আমার ঘুম ভাঙ্গলো এই স্বপ্নটা দেখে । স্বপ্নটা এতো স্পষ্ট যে আমি যে আমি প্রতিটি ঘটনা চোখের সামনে মনে রইলো । কিন্তু আমি জানি এই স্পষ্ট ভাবটা বেশি সময় থাকবে না । যত সময় যাবে স্বপ্নটা ততই অপস্পষ্ট হয়ে যাবে । তখনই মোবাইলের নোটপ্যাড বের করলাম এবং স্বপ্নটা লিখে রাখলাম । তবে স্বপ্ন লিখতে লিখতে সাইকেলওয়ালার দুই মেয়ের নাম ভুল গেলাম । কেবল ছেলের নামটা মনে রইলো ।

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 4.4 / 5. Vote count: 19

No votes so far! Be the first to rate this post.

About অপু তানভীর

আমি অতি ভাল একজন ছেলে।

View all posts by অপু তানভীর →