ভালোবাসার মানুষের প্রতি আর্ষকণ থাকাটা স্বাভাবিক একটা ব্যাপার আমরা প্রায়ই দেখি কারো কারো ভালোবাসা এডিকশন বা আসক্তির পর্যায়ে চলে যায় ! ড্রাগ এডিকশন বা আসক্তির মতই ভালোবাসার এই এডিকশনও হতে পারে ভয়ংকর । ভালোবাসার সম্পর্কে ভারসাম্য এবং সামঞ্জতা বজায় রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ । এটি সুস্থ এবং স্বাভাবিক জীবনযাপনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ । মনে রাখা দরকার যে কাউকে ভালোবাসার অর্থ নিজেকে হারিয়ে ফেলা নয় ।
নিচের দশটি লক্ষণ যদি আপনার ভেতরে দেখা যায় তাহলে বুঝতে হবে যে আপনি আপনার ভালোবাসার মানুষটির উপরে তীব্র ভাবে আসক্ত । সময় থাকতে নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আসা জরুরী । এই এডিকশন দূর করা জরুরী ।
- আপনার সব সময় মনে হয় যে আপনি আপনার ভালোবাসার মানুষটিকে ছাড়া একদমই বাঁচবেন না । এমন কি সেই সম্পর্কটা যদি কেবল অনলাইনেও হয় তারপরেও আপনার মনে হতে থাকে যে জীবনের সব থেকে গুরুত্বপূর্ন জিনিসটাই হচ্ছে আপনার ভালোবাসার মানুষটি ।
- আপনার সব সময়ই আপনার ভালোবাসার মানুষটির পেছনে টাকা পয়সা খরচ করতে ইচ্ছে করে এবং আপনি সেটা নিয়মিত করেও থাকেন । এমন কি দরকার হলে আপনি অন্যের কাছ থেকে ধার কর্য করেও হলেও তার পেছনে প্রচুর টাকা খরচ করেন । প্রিয়জনকে উপহার দেওয়া কিংবা তার জন্য টাকা খরচ করতে চাওয়াটা স্বাভাবিক একটা মনের ইচ্ছে । কিন্তু যখন এই ইচ্ছে টা এতোটাই তীব্র হয় যে কোন ভাবেই আপনি তাদের পেছনে টাকা খরচ করতে চান । এতে করে আপনাকে প্রায়ই আর্থিক সমস্যাতে পড়তে হয় ।
- যখনই আপনি অবসর পান কিংবা বোর ফিল করেন তখনই আপনার ইচ্ছে করে প্রিয় মানুষটির সাথে সময় কাটাতে । আপনার সময় কাটানোর একমাত্র মাধ্যমই হয়ে ওঠে আপনার ভালোবাসার মানুষটি । অন্য কারো সঙ্গ আপনার ভালো লাগে না ।
- আপনি এটা বিশ্বাস করেন যে জীবনে সুখী হতে আপনার অবশ্যই একটা ভালোবাসার সম্পর্কে থাকতেই হবে । যদি আপনার কারো সাথে প্রেমের সম্পর্কে না থাকেন তাহলে আপনার মনে হয় যেন আপনি আসলে দুঃখী একজন মানুষ ।
- আপনার নিঃসঙ্গ হয়ে যাওয়ার তীব্র একটা ভয় কাজ করে সব সময় । আপনি একা হতে চান না । সব সময় কাছের মানুষটির কাছাকাছি থাকতে চান ।
- যখনই আপনি আপনার ভালোবাসার মানুষটির কাছ থেকে দুরে যান তখনই মনে হয় যেন আপনি আপনার দেহের একটি অংশ হারিয়ে ফেলেছেন । আপনি যে কাজই করেন না সব সময় আপনার মনের ভেতরে এই অনুভূতিটি কাজ করে । ফলে যে কোন কাজে আপনি পূর্ণ মনোযোগ দিতে পারেন না ।
- আপনি সব সময় আপনার ভালোবাসার মানুষটির মতামতকেই প্রাধান্য দিয়ে থাকেন । সব সময় তার চিন্তা ভাবনা দিয়েই কাজ করে থাকেন । আপনার নিজের মত যাই হোক না কেন সব সময় মনে সেটাই করেন বা করতে চান যে আপনার ভালোবাসা মানুষটি কী চায় । এটা আপনার সম্পর্কের জন্য একটি খারাপ লক্ষণ । ভালোবাসার মানুষটির মতামতকে মূল্য দেওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার তবে সব সময় যদি কেবল একজনের মতামতই প্রাধান হয়ে থাকে তাহলে সেটা কোন সুস্থ স্বাভাবিক সম্পর্কের ভেতরে পড়ে না ।
- ব্রেকআপের চিন্তা আপনাকে অস্থির করে তোলে । এটা এমনই ভাবে আপনাকে দুশ্চিন্তায় ফেলে দেয় যে মাঝে মাঝে আপনার প্যানিক। এনজাইটি এটাক পর্যন্ত হয়ে যায় । এমন দুশ্চিন্তা আপনার সম্পর্কে ভারসাম্যহীন করে তোলে ।
- ভালোবাসার মানুসটির এটেনশন পাওয়ার জন্য আপনি সব করতে পারেন । যে কোন অন্যায় করতে পর্যন্ত পিছপা হন না । মাঝে মাঝে তার সাথেই অকারণ ঝগড়া শুরু করেন কেবল মাত্র তার মনযোগ আকর্ষণ করার জন্য ।
- আপনার ভালোবাসার মানুষের প্রতি আপনার তীব্র যৌন আকাঙ্খা সৃষ্টি হয় । সব সময় মাথার ভেতরে তার সাথে সেক্স করার চিন্তা কাজ করে । এমন কি যে সব স্থান সেক্সের জন্য উপযোপগী নয় সেই সব স্থানেও আপনি এই কাজটি করেন বা করতে চান !
ভালোবাসার মানুষের প্রতি ভালোবাসা প্রেমের অনুভূতি থাকবে এটাই স্বাভাবিক । তবে অতিরিক্ত কোন কিছুই যেমন ভাল নয় তেমনি অতিরিক্ত ভালোবাসাও ভাল নয় । একটি ভালোবাসার সম্পর্কে ভারসাম্য বজায় থাকা খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ । আপনার সব সময় এটা খেয়াল রাখতে হবে যে ভালোবাসার সম্পর্ক যাতে এডিকশন বা আসক্তির পর্যায়ে না চলে যায় । উপরের লক্ষণ গুলো যদি আপনার ভেতরে দেখা যায় তাহলে নিজের মনের উপরে নিয়ন্ত্রন নিয়ে আসার চেষ্টা করুণ কারণ আপনি অস্বাভাবিক একটা সম্পর্কে জড়িয়ে আছেন যা আপনার এবং আপনার ভালোবাসার মানুষট-উভয়ের জন্যই অস্বাস্থ্যকর এবং ক্ষতিকর ।
Source: Sindha News
অনিয়ন্ত্রিত কোনো ব্যাপারই ভালো না, ভালোবাসাও নয়। ড্রাগ অ্যাডিকশনে তবুও আশেপাশের মানুষ তার এই অ্যাডিকশন সম্পর্কে বুঝতে পারে, কিন্তু কারও ভালোবাসার এই অতি-আসক্তি আশেপাশের আর দশজন মানুষ বুঝে উঠতে পারে না। ফলে এটি ক্ষেত্রবিশেষে হয়ে উঠে কল্পনাতীত ভয়াবহ।
কিন্তু সমস্যা হলো যারা ইতোমধ্যে এই সমস্যায় আটকে গেছেন তারা আপনার এই লেখাটি পড়বে না। আর কেউ যদি কোন ভাবে পড়েও থাকে, তারা সে অবস্থা থেকে সহসাই নিজেকে বের করে নিয়ে আসতে পারবে না, বা বের হতে চাইবে না।
আমাদের আসলে এই টপিক সহ আরও নানা বিষয়ে যথেষ্ট কাউন্সেলিং প্রয়োজন। কিন্তু এই কাউন্সেলিং সিস্টেমটা আমাদের সমাজ এখনো অ্যাডাপ্ট করতে পারেনি। অধিকাংশ সময়ই গুটি কয়েক যারা কাউন্সেলিং সুবিধা নিতে যায়, আমাদের সমাজ তাদের দিকে একটা ‘বাঁকা’ দৃষ্টিভঙ্গি প্রদর্শন করে। আর এই কারণে যারা তার নিজের কাউন্সেলিং এর প্রয়োজন অনুভব করতে পারে তারাও এই সুবিধাটি নিতে পিছ-পা হয়ে যায়।
আশা করছি অদূর ভবিষ্যতে আমাদের মন-মানসিকতায় পরিবর্তন আসবে। আমাদের সমাজ ব্যবস্থা কাউন্সেলিংকে সাদরে গ্রহণ করবে। আর আমরাও এমন নিজেদের অতি-আসক্তি গুলো চিহ্নিত করে তা থেকে বের হয়ে আসবার পথ খুঁজে পাবো।
টপিক বেছে এমন একটা লেখার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। ????????