প্রতিটা মানুষের কিছু নিজেস্ব দৃষ্টিভগ্নি থাকে, নিজেস্ব কিছু চিন্তা ভাবনা আর জীবন চলার নিয়ম থাকে । এই নিয়ম নীতি গুলো সে আস্তে ধীরে জীবন থেকে শেখে। আরও ভাল করে বললে জীবন তাকে এই নিয়ম গুলো শিক্ষা দিয়ে বড় করে । তবে এই নিয়ম গুলো বেশির ভাগই আমরা শিখি আমাদের আশে পাশের মানুষের কাছ থেকে । শুরুটা হয় পরিবার থেকে । তারপর আশে পাশের সমাজ স্কুল কলেজ কর্মক্ষেত্রে সব মিলিয়ে মানুষের এই নিয়ম গুলো তার নিজের মাঝে তৈরি হয় । তবে একটা ব্যাপার এই যে আমরা ছোট বেলাতে যা শিখি যা মেনে চলি তা একই ভাবে সারা জীবন যে মেনে চলবো এমনও না । আমাদের জীবনের এই দৃষ্টি ভঙ্গিতে পরিবর্তন আসে যখন আমরা জীবনের পথে সামনের দিকে এগিয়ে যাই । আগে এক সময়ে আমাদের কাছে যা অতি গুরুত্বপূর্ন ছিল, পরে এসে দেখা যায় তার কোন গুরুত্বই আমরা অনুভব করছি না । সেই ভাবে এক সময়ে আমরা যে নিয়ম গুলো এক সময়ে খুব করে মেনে চলতাম, পরে সেই নিয়ম গুলোই আমরা আর মানি না কিংবা পরিবর্তন করি । এভাবে অনেক কিছুই পরিবর্তন হয়েছে সময়ের ব্যবধানে । এমন কিছু সামাজিক নিয়ম আমিও মেনে চলি নিজের মত । আপনাদের অনেকের সাথেই সেটা মিলে যেতে পারে আবার নাও মিলতে পারে ।
১. সবার সাথে ভাল ব্যবহার করতে হবে
বোধকরি আমাদের সবাই ছোট বেলা থেকে পরিবার থেকে এই শিক্ষাটা পেয়ে এসেছি । সবার সাথে ভাল ব্যবহার কর । একটা বয়স পর্যন্ত আমি নিজে সব সময় এই নিয়মটা মেনে চলেছি । আমার জীবনে খারাপ ব্যবহার কিংবা মারামারির জন্য আমার বাসায় রিপোর্ট আসে নি । একটা লম্বা সময় এই নিয়মটা মেনে চলার পরে এবং নিজের বাস্তব অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে আমি নিজে এই নিয়মটার একটু পরিবর্তন করে এনেছি । সবার সাথে ভাল ব্যবহারের স্থানে নিয়মটা এখন হয়েছে যে আমার সাথে ভাল ব্যবহার করবে কেবল তার সাথে তার থেকে ভাল ব্যবহার করবো । পক্ষান্তরে যে আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করবে তার সাথে তার থেকেও খারাপ আচরণ । আমাদের ব্লগে কয়েকজন ব্লগার আছেন যাদের ধৈর্য্য দেখে আমি খানিকটা অবাক হই । এদের সাথে অন্যেরা যতই খারাপ কথা বৈরী ব্যবহার করুক না কেন এরা সব সময় তাদের ভাল ব্যবহার করে এসেছে ।
আমাদের মাঝে একটা বিশ্বাস আছে কেউ যদি তোমার সাথে খারাপ ব্যবহার করে এবং বিপরীতে তুমি যদি তার সাথে ভাল ব্যবহার কর তাহলে সেই ব্যক্তি লজ্জা পাবে এবং তোমার সাথে ভাল ব্যবহার করবে । এমন ভাবনা আমারও ছিল এক সময়ে । কিন্তু এখানে বাস্তবতা আসলে অনেক ভিন্ন । খারাপ ব্যবহারের বিপরীতে যদি ভাল ব্যবহার করা হয় তাহলে সেই ব্যক্তি লজ্জা তো পায়ই না বরং সেটা দুর্বলতা মনে করে । এবং খারাপ ব্যবহার চালিয়ে যায় । বার বার কেবল এই উদাহরণ দেখে এসেছি । তাই নিজের নিয়মে খানিকটা পরিবর্তণ নিয়ে এসেছি । এখন নিয়মটা হচ্ছে যে আমার সাথে ভাল ব্যবহার করবে তার সাথে তার থেকেও ভাল ব্যবহার কবো । এবং বিপরীতে যে খারাপ আচরণ করবে তার সাথে তার থেকেও খারাপ আচরণ করবো ।
২. বড়দের সম্মান কর
এটাও আরেকটা শেখানো সামাজিক নিয়ম হচ্ছে বড়দের সম্মান কর সব সময় । আমাদের শেখানো হয়েছে বড়দের কথা মেনে চল । তারা যা বলে শোনো, তাদের সম্মান কর । এটাও জীবনের একটা লম্বা সময় ধরে মেনেই চলে এসেছি । তারপর নিজে যখন একটা বয়সে এসে পৌছেছি তখন এটা বুঝতে পেরেছি যে সম্মানের সাথে আসলে বয়সের কোন সম্পর্ক নেই । কেবল বয়সই নয়, কউকে সম্মান করার জন্য তার পেশা, তার লিঙ্গ, তার জাতি, বয়স, বর্ণ বিচার করা ঠিক না । যে সম্মান পাওয়ার যোগ্য তাকে সম্মান কর । বয়সে বড় হয়েছে কেবল এই বৈশিষ্ট্য নিয়ে কাউকে সম্মান করতে হবে এই নীতি থেকে আমি বের হয়ে এসেছি । যেমন ধরেন একজন আমার থেকে ২০ বছরের বড় । কিন্তু সে নিয়মিত তার বউকে পেটায় । একজন আমার থেকে ৩০ বছরের বড় কিন্তু ঘুষ খায় চুরি করে তাকে আমি কোন ভাবেই সম্মান করি না । করবো না এবং তার প্রতি যে আমার কোন সম্মান নেই এটা আমি তার সামনে লুকাবোও না । আমার আচরণেই সেটা প্রকাশ পাবে । মানুষজন এই আচরন দেখে আমাকে বেয়াদব বলবে । এটা নিয়ে আমার খুব একটা আপত্তিও নেই অবশ্য ।
৩. সমাজের প্রচলিত নিময়ের ভঙ্গ
মানুষের আচরণ নিয়ম নীতিতে সব সময় পরিবর্তণ আসছেই । অনেকেই এই পরিবর্তণ মেনে নেয় না । এক সময় আমিও মনে করতাম সমাজে এই কাজ গুলো করা যাবে না । ওট করতেই হবে কারণ এটাই সমাজের নিয়ম । এভাবেই বড় হয়েছি । এভাবেই মেনে নিয়েছি সব সময় । কিন্তু এখন সেই নিয়মটা নিজের কাছেই বদলে ফেলেছি । এখন মনভাব হয়েছে সমাজে যে কেউ যা কিছু করতে পারে যত সময় সেটা অন্য কারোর ক্ষতির কারণ না হচ্ছে ততক্ষণ সেটা নিয়ে আমার কোন কিছু বলার নেই । এমন কি সেই ব্যাপারটা যদি আমার পছন্দ নাও হয়, আমি যদি পছন্দ নাও করি তবুও আমি সেটা নিয়ে কোন অবজেকশন দিবো না । আমাদের সমাজে এই প্র্যাক্টিস খুব আছে যে যে জিনিস আমি পছন্দ করি না, তার মানেই হচ্ছে সেটা খারাপ । দুনিয়াতে এমন অনেক কিছুই আছে যে যা আমি পছন্দ করি না তার মানে সেটা খারাপ নয় মোটেও ।
৪. বুড়ো মানুষকে আমি পছন্দ করি না
যদিও এই ব্যাপারটা অনেকের কাছেই সঠিক মনে হবে না তবে এটা আমার মাঝে অনেক ছোট বেলা থেকেই আছে । পছন্দ করি না তার মানে এই না যে তাদেরকে আমি অসম্মান করি । তবে তাদের আচরণ আমাকে সব সময় বিরক্ত করি । সম্ভবত এই মনভাব আমার মাঝে অনেক ছোট বেলা থেকেই গড়ে উঠেছে । ঘটনাটা বলি । আমি তখন অনেক ছোট । কেজিতে পড়ি সম্ভবত । থামতাম যশোরের ঝুমঝুমপুরে । আমরা যেখানে ভাড়া থাকতাম সেই বিল্ডিংয়ের পাশেই এক বৃদ্ধ থাকতেন । একই বাড়িতে । এই বৃদ্ধের মুখে শক্ত দাড়ি ছিল । আমরা বাচ্চারা যখন খেলতে যেতাম তখন সে আমাদের জোর করে ধরে চুমু দিতো । তার মুখের সেই দাড়ি আমার মুখে গালে লাগতো । কেবল যে আমাকে তাই না, আমরা ৬/৭টা বাচ্চা যারা খেলতাম সবাই । এই ব্যাপারটা আমরা কেউ পছন্দ করতাম না । আমাদের মায়েদের কাছে বললে প্রথম প্রথম তারা বলতো বুড়ো মানুষ তোমাদের আদর করে । সমস্যা কি ! অথচ জিনিস টা আমরা কেউ পছন্দ করছি না । পরে এই জ্বালাতন যখন চরমে উঠলো আমাদের পাশে এক ভাড়াটিয়া আন্টি খুব করে বকলো সেই বুড়োকে । পরিস্কার করে বলে দিলো যে তার মেয়েকে যেন একজন না ধরে । তারপর থেকে এই জ্বালাতন বন্ধ হয়েছিলো । তবে সেই যে একটা বিরূপ মনভাব সৃষ্টি হয়েছে সেটা আজও রয়ে গেছে । তবে এখন বৃদ্ধদের পছন্দ না করার আরেকটা কারণ হচ্ছে বয়সে যারা বড় (সবাই না তবে আমার দেখা বেশির ভাগ) তারা সব সময় নিজেকে বেশি পন্ডিট মনে করে । নিজেকে অন্য সবার থেকে বেশি বড় কিছু মনে করে । সম্মান করে না । নিজের যে ভুল হতে পারে এটা মানতেই চায় না । এই ধরনের মনভাবের জন্য এদের থেকে সব সময় আমি দুরে থাকি ।