মাই ডিয়ার হোম মিনিস্টার (পর্ব ০৩)

4.5
(11)

আমার খুব ইচ্ছে করছে পকেট থেকে মোবাইল বের করে নিকিতার ছবি তুলে ফেসবুকে পোস্ট করে দিতে ৷ তার পর ক্যাপশনে লিখি, দেখো তোমাদের গুরুগম্ভীর মন্ত্রী আমার সামনে কিভাবে নাচানাচি করছে।

আমরা বারান্দায় এসে দাড়ানোর প্রায় সাথে সাথেই বৃষ্টি নেমে গেল। একেবারে ঝুম বৃষ্টি। নিকিতা আমাকে বারান্দায় রেখেই সামনের লনে নেমে পড়লো।

আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে পুরো জায়গাটা আরও ভাল করে দেখতে লাগলো৷ পুরো বাড়িট উচু দেওয়াল দিয়ে ঘেরা। দুই তলা ফার্ম হাউজের সামনে বেশ খানিকটা ফাঁকা জায়গা৷ সেখানে সবুজ ঘাস দেখা যাচ্ছে। দেওয়ালের কাছে অনেক গাছ লাগানো লাইন ধরে৷

আমি নিকিতার দিকে তাকিয়েই রইলাম। আমার সামনে নিকিতাকে দেখে আমার এখনো ঠিক বিশ্বাস হচ্ছে না। নিকিতা হঠাৎ আমার সামনে এসে বলল, কি ব্যাপার এসো!

তুমি!

একটু আগেই না এই মেয়ে আমাকে আপনি করে বলছিল। এখন তুমি করে বলছে। আমি কি বলবো বুঝতে পারলাম না। কি বলা উচিৎ সেটাও বুঝতে পারলাম না৷ আমাকে অবাক করে দিয়ে নিকিতা আমার হাত ধরে টান দিলো৷ আমাকে বৃষ্টির ভেতরে টেনে নিয়ে গেল৷ বৃষ্টির পানি শরীরে পড়তেই আমার মধ্যে অদ্ভুত আনন্দ অনুভূতি হল। ছোট বেলাতে বৃষ্টি হলেই আমি ভিজতাম। তারপর একদিন একটা ঘটনার পর থেকে আমি বৃষ্টিতে ভেজা বন্ধ করে দিয়েছি। এখন বৃষ্টি দেখলেই আমার বিরক্তি আসে। কিন্তু আজকে এল না। বরং ভাল লাগলো৷

নিকিতা জিজ্ঞেস করলো, কেমন লাগছে?

বললাম, ভাল লাগছে। আসলে বহুদিন আমি বৃষ্টিতে ভিজি নি।

নিকিতা বলল, আইরিনের চলে যাওয়ার পরে একদম বৃষ্টি পছন্দ কর না, তাই না?

আমি সত্যিই অবাক হয়ে গেলাম৷ আইরিনের কথাও জেনে গিয়েছে এই মেয়ে! তারমানে আমার ব্যাপারে আর কিছুই জানতে বাকি নেই। সেই ইন্টারমিডিয়েট পড়ার সময় আমার কার সাথে প্রেম ছিল, সেটা ভেঙ্গে যাওয়ার পর আমার কোন জিনিসের উপর থেকে মন উঠে গেছে, এই সব যখন জেনে গেছে তখন সত্যি বলতে কি এই মেয়ের আর কিছুই জানতে বাকি নেই। আমার ব্যাপারে সব কিছুই জানে এই মেয়ে। আমি নিকিতার দিকে তাকিয়ে রইলাম। ওকে দেখে মনে হচ্ছে এসএসসি দেওয়া কোন কিশোরী মেয়ে সে। আমার হঠাৎ করেই নিকিতাকে ভাল লেগে গেল।

একেবারে অন্ধকার পর্যন্ত বৃষ্টিতে ভিজলাম আমরা৷ যখন বৃষ্টি থেকে আবার বারান্দায় উঠলাম তখন আমরা দুইজনই শীতে কাঁপছি একটু একটু করে৷ আমার জন্য বাথরুমে নতুন ট্রাউজার আর টিশার্ট রাখা ছিল। আমার শরীরের মাপেরই। আমার সব কিছু সে আগে থেকেই খোজ নিয়েই রেখেছে। এটা জানা তার পক্ষে অসম্ভব কিছু না ।

রাতে খাবার সময় নিকিতা নিজেই খাবার এগিয়ে দিচ্ছিলো। যখন কথা বলছিল মনে হচ্ছিলো আমাকে সে কতদিন থেকে চেনে।

নিকিতা বলল, শুনো আজকে রাতে আর বাসায় গিয়ে লাভ নেই। কালকে আমার এখানে একটা প্রোগ্রাম আছে। সেখানে যেতে হবে। তুমি তারপর এখান থেকে বের হয়ে যেও।

আমি বললাম, আমি বাসায় একটা ফোন দিই। নয়তো আম্মু চিন্তা করবে।

-হু। ফোন দেও। তবে বলো না যে তুমি কার সাথে আছো।

-মাথা খারাপ!

রাতেও নিকিতা বেশ রাত পর্যন্তই গল্প করলো আমার সাথে। আমি এখনো নিকিতার মনভাব ঠিক বুঝতে পারছি না। কেবল একটা ব্যাপার বুঝতে পারছি যে নিকিতা আমার প্রতি আগ্রহবোধ করছে। সম্ভবত ঐদিন আমি অন্য সবার মত ওর প্রতি আগ্রহবোধ করি নি এই জন্য। শুনেছি মেয়েরা সেই সব ছেলেদের প্রতি আগ্রহবোধ করে যারা তাদের প্রতি আগ্রহ দেখায় না। হয়তো এই কারনেই নিকিতা আমার প্রতি আগ্রহ বোধ করছে।

সকালবেলা একটু বেলা করে ঘুম ভাঙ্গলো। বাইরে বের হয়ে দেখি নিকিতা বের হয়ে গেছে। খানসামার কাছে আমার জন্য একটা চিরকুট রেখে গেছে।

চিরকুট খুললাম। সেখানে লেখা

অপু সাহেব,

সকাল বেলা ঘুমিয়েছিলেন বলে আর ডাক দেয়নি৷ সকাল সকালই বের হয়ে হচ্ছে। দেখা হল না। তবে আমাদের দেখা আর কথা হতেই থাকবে। আমি যখন একবার তোমার জীবনে ঢুকেছি তখন তোমার জীবনের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সহ সকল মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব আমি নিয়ে নিবো।

ইতি

তোমার ব্যক্তিগত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

বিঃদ্রঃ তোমার জন্য গাড়ি রেড়ি থাকবে। তোমাকে ঢাকায় পৌছে দিবে।

চিরকুট পড়ে কিছু সময় চুপ করে বসে রইলাম। বুঝতে পারছি আমার জীবনে সত্যি সত্যিই বড় রকমের পরিবর্তন আসতে যাচ্ছে৷

পরের পর্ব

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 4.5 / 5. Vote count: 11

No votes so far! Be the first to rate this post.

About অপু তানভীর

আমি অতি ভাল একজন ছেলে।

View all posts by অপু তানভীর →