রিমি জানালা দিয়ে কিছু সময় তাকিয়ে রইলো লেকটার দিকে । বিছানা থেকেই এমন একটা দৃশ্য দেখতে পাওয়া সত্যিই ভাগ্যের ব্যাপার । সবার কপালে এমন সৌভাগ্য হয় না । কাপ্তাই লেকে সে এর আগে কোন দিন আসে নি । তার জন্ম আর বেড়ে ওঠা সবই একেবারে দেশের অন্য প্রান্তে । সেখানে না আছে পাহাড়, আর না আছে বড় কোন লেক ।
খুব সাবধানে বিছানা থেকে নামলে সে । শিহাব এখনও ঘুমিয়ে আছে । বাসায় থাকলে এই সময়ে প্রতিদিন ঘুম ভাঙ্গে ওর । বিছানা ছেড়ে নিরবে সে নেমে এসে ওয়াশরুমের দিকে যায় । ফ্রেশ হয়ে রান্না ঘরে দিকে যেতে হয় । শিহাবের অফিস থাকে সকালে । একেবারে কাটায় কাটায় আটটায় ঢুকতে হয় ওকে । নয়টার ভেতরে যেতে হয় সাইটে । এই জন্য খুব সকালেই রিমিকে ঘুম থেকে উঠতে হয় । আজ অবশ্য তেমন কোন তাড়া নেই । আজকে ওকে মোটেই রান্না ঘরের দিকে যেতে হবে না।
রিমি ঘর ছেড়ে বারান্দায় নেমে এল । তাকিয়ে রইলো সামনের জলরাশির দিকে । ওর এখনও ঠিক বিশ্বাস হচ্ছে না যে এমন একটা চমৎকার স্থান এই দেশে থাকতে পারে । কটেজটা একেবারে লেক ঘেষে । এই কটেজে আসার একমাত্র পথ হচ্ছে বোট । কটেজ থেকে একটু দুরেই বোট জন্য ছোট একটা জেটি তৈরি করা আছে । সেখানে কটেজের নিজেস্ব দুইটা বোট রাখা থাকে সব সময় । এছাড়া কেউ এখানে যখন আসে তখন বোট ভাড়া করেই আসে ।
এই কটেজটা মূলত শিহাবের বর্তমান অফিসের বসের নিজেস্ব কটেজ । এখানে সাধারণ মানুষ আসার কোন উপায় নেই । মূলত এটা তৈরি করা হয়েছে ব্যক্তিগত কাজের কারণে । বন্ধু বান্ধব নিয়ে এখানে শিহাবের বস আসেন । মাঝে মধ্যে বসে ছেলে মেয়েরা আসে এখানে অবসর কাটাতে । এখানে শিহাবের আসার কোন কথা ছিল না । কদিন পরে রাঙ্গামাটিতে বেশ কয়েকটা প্রজেক্টের কাজ শুরু হবে । শিহাবকে যখন সাইট গুলো পরিদর্শনের দায়িত্ব দিয়ে পাঠানোর কথা বার্তা হচ্ছিলো এবং দুই দিনের ভেতরেই রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছিল তখন শিহাব এখানে আসতে অনাগ্রহ প্রকাশ করে । এটা শুনে শিহাবের বস একটু অবাকই হয়েছিলো । কারণ শিহাব সব সময়ই নিজের কাজের প্রতি খুবই ডেডিকেটেড । সব সময় মন দিয়ে কাজ করে । বস জানতে চাইলো, দুই দিনের ব্যাপার তো! সমস্যা কোথায়?
-সমস্যা দুই দিন না । আপনি আমাকে চিনেন । আমি দুই কেন সাত এক মাস হলেও আপত্তি করি না।
-হ্যা সেটাই তো ! এখন তাহলে কেন করছো?
-আসলে স্যার ১৯ তারিখ রিমি মানে আমার স্ত্রীর জন্মদিন । ছুটি না হলেও ঐ দিনে অন্তত রাত টুকু আমি ওর সাথে থাকতে চাই । এমনিতেও ওকে কাজের কারণে সময় দিতে পারি না । কোথাও ঘুরতে নিয়ে যেতে পারি না । ওর জন্ম দিনের দিনও যদি ওকে ছেড়ে দুরে থাকি তাহলে বেচারি কষ্ট পাবে খুব।
শিহাবের বস কিছু সময় যেন ভাবলো । তারপর বলল, এটার সমাধান যদি করে দিই তাহলে যাবে?
-কী রকম?
-আমার একটা কটেজ আছে । সাইট থেকে বোট করে এই ধর ঘন্টা খানেক লাগবে । তুমি তোমার ওয়াইফকে নিয়ে ওখানে গেলে । কাজ করলে তারপর বিকেল থেকে রাত সব সময় তোমাদের । রান্না বান্নার কোন ঝামেলা নেই । কেয়ারটেকার আর তার স্ত্রী সব সময় থাকে ওখানে । নিজেস্ব বোট আছে। যত সময় চাও ঘুরতে পারবে। কী বল?
এই রকম একটা লোভনীয় অফার যে আসবে শিহাব সেটা ভাবতে পারে নি । রিমিকে বলতেই রিমি সাথে রাজি হয়ে গেল । তারপরই গত রাতে এসে পৌছিয়েছে এখানে । রাতের বেলা কিছু দেখা না গেলেও জায়গাটা যে খুব চমৎকার হবে সকালে সেটা রিমির বুঝতে মোটেও কষ্ট হয় নি । এই সকালে সেটাই অনুভব করছে । এতো চমৎকার একটা সকালে অনেক দিন পায় নি রিমি ।
সকালে নাস্তা তৈরি করতে হল না রিমিকে । টেয়ারটেকার আর তার বউ থাকে কটেজের পাশে ছোট একটা ঘরে । তারাই এই এই কটেজকে দেখা শোনা করে । রিমি শুনেছে যে শিহাবের বসরা মাসে দুই তিনবার করে এখানে আসে । ড্রিংঙ্কস এলকোহল ড্রাগস সহ নারীও নাকি এখানে নিয়ে আসা হয় । একেবারে লোক চক্ষুর আরালে এখানে যা ইচ্ছে তা করা যায় । যদিও রিমি ঘরে এসবের কোন চিহ্নই পায় নি। সব কিছু একেবারে পরিস্কার পরিছন্ন ।
সকালের নাস্তা খেয়ে শিহাব চলে গেল নিজের কাজে । বলে গেল যে দুপুরের পরপরই ফিরে আসার চেষ্টা করবে । এই সময় টুকু ও যেন ঘুমিয়ে কিংবা বই পড়ে কাটায় । রিমি সাথে করে একটা বই নিয়ে এসেছে । তবে সেটা না নিয়ে আসলেও চলতো । বসার ঘরে একটা সেলফ ভর্তি কেবল বই আর বই । সেখান থেকে একটা বই টেনে নিয়ে আবারও শোবার ঘরে চলে গেল । জানালার পাশে বালিশে হেলান দিয়ে বই পড়তে শুরু করলো । এতো আরাম লাগছিলো সেটা বলে বোঝানোর উপায় নেই । শিহাব কাছে থাকলে আরো ভাল লাগতো সত্য তবে এখনও খারাপ লাগছে না । একেবারে নিজের মত করে সময় কাটানো ।
বই পড়তে পড়তে সময় কেটে গেল একেবারে । কেয়ারটেকার এসে খবর দিয়ে গেল যে খাওয়া তৈরি হয়ে গেছে । যখন ইচ্ছে খেতে পারে । আরো কিছু সময় বিছানায় শরীর এলিয়ে দিয়ে পড়ে রইলো রিমি । তারপর ওয়াশরুমে গিয়ে গোসল সেরে নিয়ে বের হল । দুপুরের খাবার খেতে আরও একটু সময় নিল । খাওয়া দাওয়া শেষ করে আবারও বই নিয়ে বসলো তার পছন্দের জানালার পাশে । এরই ভেতরে জায়গাটা ও পছন্দ হয়ে গেছে । আবারো বই পড়তে শুরু করলো ও । তবে এবার ভর পেটের কারণে রিমির আরামে ঘুম চলে এল জলদিই ।
ঘুম ভেঙ্গে কিছু সময় নিজের বিছানার পড়ে রইলো । ঠিক যেন বুঝতে পারছে না যে কোথায় রয়েছে । ঘরটা একেবারে ঘুরঘুরটে অন্ধকার হয়ে আছে । একটু অবাক না হয়ে পারলো না । এতো লম্বা ঘুম যে ঘুমিয়েছে ? একেবারে দুপুর থেকে সন্ধ্যা হয়ে গেছে ! এমনটা তো হওয়ার কথা না । তবে আরেকটা ব্যাপার অবাক না হয়ে পারলো না ।
ঘর কেন অন্ধকার ?
কাল রাতে যখন এসেছিলো তখনই দেখেছিলো পুরো কটেজটা আলোকিত । সোলার ছাড়াও এখানে নিজেস্ব জেনারেটর আছে । গেস্ট এলে জেনারেটর চলে, নয়তো সোলার চলে । তাহলে সন্ধ্যা হয়ে যাওয়ার পরেও কেন আলো জ্বললো না ?
রিমি বিছানা ছেড়ে উঠে দাড়ালো । হাতের কাছে ফোনটা খুজে পেয়ে সেটার ফ্ল্যাশ আলো জ্বেলে এগিয়ে চলল । ঘর পেরিয়ে যখন বাইরে এল কাউকেই আশে পাশে দেখতে পেল না । একটু অবাক না হয়ে পারলো না । এমন টা তো হওয়ার কথা নয় মোটেও । কয়েকবার কেয়ার টেকারের নাম ধরে ডাক দিল । অথচ কারো কোন সাড়া নেই । এমন কেন হচ্ছে?
সবাই ওকে রেখে কোথায় চলে গেল ? আর শিহাব কেন এখনও আসে নি ? বলেছিলো যে বিকেলের ভেতরেই চলে আসবে অথচ এখন সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত হয়ে গেছে তার কোন দেখা নেই । রিমি খুব মেজাজ গরম হল । একটা সময় শিহাবকে কাছে পাওয়া যায় না । কেবল কাজ আর কাজ ! রিমির মন খারাপ হল একটু । এতো কাজ আসলে কার জন্য ? সব তো প্রিয় মানুষের জন্যই নাকি! এখন সেই মানুষটাই যদি খুশি না হয় তাহলে এতো এতো কাজ করে লাভ কী?
রিমি ফোনের ফ্ল্যাশ লাইটটা হাতে নিয়ে বাইরে বের হয়ে এল । বাইরে কেমন যেন ঘুরঘুটে অন্ধকার মনে হতে লাগলো বেশি । সব কিছু খুবই অপরিচিত মনে হল রিমির কাছে । যদিও কাল রাতেই ওরা এখানে এসেছে তারপরেও জায়গাটা তো এতো অপরিচিত মনে হওয়ার কথা না । রিমির মনে হচ্ছে এই স্থানে সে যে একেবারে প্রথমবার এসেছে । রিমির হঠাৎই কেমন যে ভয় করতে শুরু করলো । বিশেষ করে আশে পাশে যখন কেউ নেই এই অনুভূতিটা ওকে খানিকটা অসহায় করে তুলল । রিমি এদিক আরেকবার ভাল করে তাকালো । কী করবে ভাবছে !
মোবাইলে যে কাউকে ফোন দিবে তার কোন উপায় নেই । এইখানে কোন নেটওয়ার্ক নেই । লেকের অর্ধেকটা পার হওয়ার পরে সকল ধরনের নেটওয়ার্ক চলে গিয়েছিলো । পুরো সময় কাউকেই ফোন দেওয়ার উপায় নেই এখান থেকে । তবে রিমি শুনেছে যে কটেজ থেকে পেছনের যাওয়ার একটা রাস্তা আছে । পাহাড়ি রাস্তা । সেখানে দিয়ে পাহাড়ে উঠলে নাকি কোন একটা নির্দিষ্ট সময়ে নেটওয়ার্ক পাওয়া যায় । তখন ফোন করা যায় ।
রিমি ভাবছে কী করবে ! একবার মনে হচ্ছে ঘরের ভেতরে ঢুকে শুয়ে থাকে । শিহাব দেরি করলেও ঠিকই চলে আসবে । এটা ছাড়া এখন আর তেমন কিছু করার নেই । ফ্ল্যাশ লাইটের আলোতে কিছু সময় এদিক ওদিক ঘুরে বেড়ানো যায় অবশ্য । এখানে যে জেটিটা আছে সেখানে গিয়ে পানিতে পা ডুবিয়ে বসে থাকা যায় । তবে রিমির মনে হল ঘরের ভেতরে গিয়ে শুয়ে থাকাই ভাল ।
ঘরের দিকে আবার যখন পা বাড়াতে যাবে তখনই চোখ পড়লো মেয়েটার দিকে । ক্ষীণ আলোতে মেয়েটার সাদা ড্রেসটা চোখ পড়লো রিমি । মেয়েটা ঘরের পেছনের দিকে দেওয়ার পাশে দাড়িয়ে রয়েছে । প্রথম দেখায় রিমি চমকে উঠেছিলো । একটু ভয়ও পেয়ে গিয়েছিলো তবে সামলে নিল । ওর অবশ্য মনে এই প্রশ্ন টা ঠিকই জাগলো যে এই নির্জন আর ব্যক্তিগত সম্পত্তিতে মেয়েটা কিভাবে এল ?
মেয়েটা কি শিহাবের বসের পরিচিত কেউ ?
এমন হতে পারে !
ওদের মতই এখানে থাকতে এসেছে । ও যখন ঘুমিয়ে ছিল তখন এসেছে ?
রিমি একটু এগিয়ে গেল । মেয়েটা তখনও ওর দিকে একভাবে তাকিয়ে রয়েছে । এবার মেয়েটার চেহারা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে । পরনে সাদানীল মিলিয়ে একটা সেলিয়ার কামিজ । মেয়েটা একভাবে তাকিয়ে রয়েছে রিমির দিকে ।
মেয়েটার চাহনী রিমির কেন জানি ভাল লাগলো না । মেয়েটা তখনই ওর চোখের দিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে সরাসরি তাকালো ওর পেটের দিকে । সেদিকে একভাবে তাকিয়ে রইলো । আর তখনই রিমির মনের ভেতরে একটা তীব্র বিস্ময়য় জেগে উঠলো। মেয়েটা যখন আবার চোখ তুলে ওর দিকে তাকালো তখনই রিমির মনে হল মেয়েটা স্বাভাবিক কেউ নয় ।
মেয়েটা যে কোন ভাবে ব্যাপারটা জানতে পেরেছে !
রিমি যে প্রেগনেন্ট এটা সে কাউকে বলে নি । এখনও সময় আসে নি । কেউ জানে না । রিমি কাউকে বলে নি । বাইরে থেকে দেখে কোন ভাবেই বোঝার উপায় নেই । কোন একটা বিশেষ মুহর্তে শিহাবকে বলবে ভেবেছিল । তাহলে এই মেয়েটা কিভাবে টের পেয়ে গেল ।
রিমি আরও কিছু বলতে যাবো তখনই মেয়েটা তীব্র একটা চিৎকার দিয়ে উঠলো। ব্যাপারটা এতোই আকস্মিক যে রিমি বুকের ভেতরে একটা তীব্র ভয় জেগে উঠলো । রিমির মনে হল এখনই ঘরের ভেতরে ঢুকে পড়া উচিৎ । সে দ্রুত কটেজের ঘরের দিকে যেতে গিয়ে কাঠে পা বেঁধে উল্টে পড়ে গেল । আর তখনই ওর ঘুম ভেঙ্গে গেল।
চোখ মেলে রিমি নিজের পরিচিত বিছানায় দেখতে পেল । এই বিছানাতেই সে দুপুরের খাওয়ার পরে শুয়ে শুয়ে বই পড়ছিলো । বইটা এখনও তার বুকের উপরে রয়েছে । সব থেকে বড় কথা এখন কোন এখন সন্ধ্যা কিংবা রাত নয় মোটেও । জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে বুঝলো যে এখন বিকেল । বিকেলের এই সময়ে সে এমন একটা স্বপ্ন সে কেন দেখলো ! নিশ্চিত অপু তানভীর গল্প পড়ার ফল । বেটার গল্পে সব সময় এমন কিছু ঘটে !
জানালা দিয়ে বাইরে তাকাতেই অবশ্য সব চিন্তা মাথার ভেতর থেকে দুর হয়ে গেল । শিহাবকে দেখা যাচ্ছে । সে লেকের পানিতে পা ডুবিয়ে বসে রয়েছে । ও বলেছিলো যে দুপুরের পরপরই চলে আসবে । তাই সম্ভবত চলে এসেছে ।
রিমি দ্রুত উঠে শিহাবের কাছেই গিয়ে হাজির হল । শিহাবের পাশে বসতে বসতে বলল, কখন এসেছো?
-এই ঘন্টা খানেক ।
-ওমা আমাকে ডাকো নি কেন?
-তুমি এতো আরাম করে ঘুমাচ্ছিলে যে ডাকতে ইচ্ছে হয় নি ।
বিকেল আর সন্ধ্যাটা ওদের খুবই চমৎকার কাটলো একসাথে । কত গুলো দিনের পরে এমন করে দুজন দুজনকে কাছে পেল সেটা ঠিক নেই । রাতে রিমির জন্য একটা বড় সারপ্রাইজ ছিল । শিহাব ওর জন্য একটা কেক নিয়ে এসেছিলো । এটা রিমি আশা করে নি কোন ভাবেই । এই এখানে কেক পাওয়া যাবে ভাবে নি । এমন ওর জন্য একটা শাড়িও এনেছে উপহার হিসাবে । এবং রিমিও তখন শিহাবকে সুসংবাদটা দিল । শিহাব কিছু সময় কেবল অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো রিমির দিকে । সম্ভবত জীবনের সব থেকে আনন্দের সংবাদটাই রিমি তাকে দিয়েছে । রিমি সেটা শিহাবের চোখ মুখ দেখেই বুঝতে পারছিলো । রিমি কিছুটা সময় শিহাবকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রইলো । অনুভব করলো মানুষটার প্রতি ভালোবাসা সেই আগের মতই রয়েছে । কমে তো নিই বরং বেড়েছে অনেক ।
পরের দিন শিহাব কাজে চলে যাওয়ার পরে একই ভাবে দিনটা কাটলো রিমির । তবে সব থেকে অবাক করে দেওয়ার ব্যাপার হচ্ছে ঐদিনও রিমি দুপুরে খাওয়ার পরে ঘুমালো এবং একই স্বপ্ন দেখে ঘুম ভাঙ্গলো । ব্যাপারটা রিমিকে বেশ চিন্তিত হল । বিকেলে কিছু সময় রিমি কটেজে ঘোরাঘুরি করলো । শিহাব বলে গিয়েছে যে আজকে ওর ফিরতে দেরি হবে একটু । তবে সন্ধ্যার ভেতরেই ফিরে আসবে ।
রিমি কটেজের পেছনে হাটা দিল । কটেজের পেছন দিক দিয়ে একটা সরু রাস্তা চলে গেছে । এখানে গাছের বদে বাশ গাছ রয়েছে বেশি। তবে রাস্তাটা দেখা যাচ্ছে ঠিকই । সে ডান দিকে গিয়ে উপরে উঠেছে একটু । রিমির কী মনে হল সে ধীর পায়ে আস্তে আস্তে উপটে উঠলো । পুরো এলাকাটায় কেমন একটা অন্ধকার অন্ধকার ভাব নেমে এসেছে । রিমি এমন একটা জায়গায় পৌছালো যেখানে ডান দিকে গভীর খাত আর বাঁ দিকে পাহাড় উঠে গেছে । রিমির খুব ইচ্ছে হল যে এখন দিয়ে আরও সামনে এগিয়ে যায় কিন্তু তখনই পেছন থেকে ডাক এল । দেখতে পেল ওদের কেয়ারটেকার দাড়িয়ে আছে পেছনে । ওকে সামনে যেতে মানা করছে । সামনের রাস্তা বিপদজনক ।
রিমি আর সামনে না গিয়ে পেছনে ফিরে এল ।
শিহাব ফিরে এল সন্ধ্যা বেলা । এখানে ওর কাজ আপাতত শেষ । কালকে ওরা যাবে ঝর্ণা দেখতে । তারপর সেখান থেকেই চট্রগ্রামে ফিরে যাবে । রিমি স্বপ্নের ব্যাপারটা শিহাবের কাছ থেকে লুকিয়ে গেল ।
দুই
রিমি নিজের জীবন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লো । কটেজের ঘটনা ভুলেই গিয়েছিল । ভুলে গিয়েছিলো পরপর দুইদিন স্বপ্নে দেখা সেই মেয়েটার মুকখও। কিন্তু সেই মুখটা আবারও ফিরে এল ওর জীবনে । এমন ভাবে যে ফিরে আসবে সেটা সে বুঝতেও পারে নি ।
শরীরের নিয়মিত রুটিন চেকাপের জন্য রিমি একজন মহিলা ডাক্তারের কাছে যেত। ডাক্তার মাহিলা জামান । সেই ডাক্তারের চেম্বারেই একটা ফটোফ্রেমের দিকে চোখ যেতেই রিমি কিছু সময় ফ্রিজ হয়ে তাকিয়ে রইলো । প্রথমে মনে না করতে পারলেও কয়েকবার তাকিয়ে থাকার পরে চেহারাটা তার মনে পড়ে গেল । ডাক্তারও ব্যাপারটা খেয়াল করলেন । তিনি জানালেন যে ফটোর মেয়েটি তার বোন । বছর খানেক ঘরে নিখোজ ।
নিখোজ শব্দটি শুনে রিমি কেমন ভুরু কুচকে তাকালো । সেদিন অবশ্য কিছুই বলল না সে ডাক্তারকে । তবে ব্যাপারটা শান্তি দিল না রিমিকে । পরের বার যখন আবারও তার চেম্বারে গেল তখন পুরো ট্যুর আর স্বপ্নের ব্যাপারটা ডাক্তার জামানকে খুলে বলল। এটার কী ব্যাখ্যা হতে পারে সেটা রিমির জানা নেই । রিমি তার বোনকে যে আগে কোন দিন দেখে সেটার ব্যাপারে সে শতভাগ নিশ্চিত । তাহলে স্বপ্নে এটো স্পষ্ট বর্ণনা কিভাবে দিল।
মালিহা জামান রিমির কথা অবিশ্বাস করলেন না । কারণ হিসাবে বললেন যে সে পোশাকের বর্ণনা রিমি দিয়েছে সেটা পরেই সে নিখোজ হয়েছিলো ।
মাহিলা জামান আরও কিছু প্রশ্ন করে জেনে নিলেন ।
সপ্তাহ দুই পরে শিহাবের কাছ থেকে এমন একটা ঘটনা রিমি শুনলো যা শুনে রিমির চোখ কপালে উঠলো । শিহাব জানালো যে ওরা যে কটেজে উঠেছিলো সেই কটেজে পুলিশ গিয়ে সার্চ করেছে । কটেজের পেছনে পাহাড়ের উপরে একটা মেয়ের লাশ পাওয়া গেছে । মেয়েটা প্রায় বছর খানেক ধরে নিখোজ ছিল । মেয়েটার সাথে পাওয়া যায় একটা মোবাইল ফোন । সেটা নষ্ট হলেও মেমোরি কার্ডটা উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে । সেখান থেকে বেশ কিছু ছবি পাওয়া গেছে । ছবিতে দেখা গেছে যে মেয়েটার শেষ কিছু ছবি ওখানেই ছিল এবং সেটা ছিল ওর বসের মামার সাথে । সে মেয়েটাকে নিয়ে ওখানে গিয়েছিলো। তারপর সেখানেই ওকে মেরে ফেলেছে । কেন মেরে ফেলেছে সেটা অবশ্য এখনও জানা যায় নি তবে সেই মামাকে এখন পুলিশ খুজছে । খুব শিঘ্রই ধরে ফেলবে । তখন জানা যাবে ।
বিস্ময়ের তোড়ে রিমি আসলে কোন কথাই বলতে পারলো না । তবে সে এটা জানে যে এই ধরা পড়ার পেছনে তার অবদান সব থেকে বেশি । কিন্তু সব থেকে বড় প্রশ্ন যে রিমি ঐ স্বপ্নটা কেন দেখলো । মেয়েটা কেন রিমিকেই স্বপ্নে ধরা দিল ?
হয়তো এই প্রশ্নের জবাব কোন দিন পাওয়া যাবে না । তবে রিমি অন্তত এই টুকুতেই খুশি যে মেয়েটা এখন শান্তি পাবে ।
Discover more from অপু তানভীর
Subscribe to get the latest posts sent to your email.