কটেজ বাড়ির মেয়েটি

oputanvir
4.8
(60)

রিমি জানালা দিয়ে কিছু সময় তাকিয়ে রইলো লেকটার দিকে । বিছানা থেকেই এমন একটা দৃশ্য দেখতে পাওয়া সত্যিই ভাগ্যের ব্যাপার । সবার কপালে এমন সৌভাগ্য হয় না । কাপ্তাই লেকে সে এর আগে কোন দিন আসে নি । তার জন্ম আর বেড়ে ওঠা সবই একেবারে দেশের অন্য প্রান্তে । সেখানে না আছে পাহাড়, আর না আছে বড় কোন লেক ।
খুব সাবধানে বিছানা থেকে নামলে সে । শিহাব এখনও ঘুমিয়ে আছে । বাসায় থাকলে এই সময়ে প্রতিদিন ঘুম ভাঙ্গে ওর । বিছানা ছেড়ে নিরবে সে নেমে এসে ওয়াশরুমের দিকে যায় । ফ্রেশ হয়ে রান্না ঘরে দিকে যেতে হয় । শিহাবের অফিস থাকে সকালে । একেবারে কাটায় কাটায় আটটায় ঢুকতে হয় ওকে । নয়টার ভেতরে যেতে হয় সাইটে । এই জন্য খুব সকালেই রিমিকে ঘুম থেকে উঠতে হয় । আজ অবশ্য তেমন কোন তাড়া নেই । আজকে ওকে মোটেই রান্না ঘরের দিকে যেতে হবে না।
রিমি ঘর ছেড়ে বারান্দায় নেমে এল । তাকিয়ে রইলো সামনের জলরাশির দিকে । ওর এখনও ঠিক বিশ্বাস হচ্ছে না যে এমন একটা চমৎকার স্থান এই দেশে থাকতে পারে । কটেজটা একেবারে লেক ঘেষে । এই কটেজে আসার একমাত্র পথ হচ্ছে বোট । কটেজ থেকে একটু দুরেই বোট জন্য ছোট একটা জেটি তৈরি করা আছে । সেখানে কটেজের নিজেস্ব দুইটা বোট রাখা থাকে সব সময় । এছাড়া কেউ এখানে যখন আসে তখন বোট ভাড়া করেই আসে ।

এই কটেজটা মূলত শিহাবের বর্তমান অফিসের বসের নিজেস্ব কটেজ । এখানে সাধারণ মানুষ আসার কোন উপায় নেই । মূলত এটা তৈরি করা হয়েছে ব্যক্তিগত কাজের কারণে । বন্ধু বান্ধব নিয়ে এখানে শিহাবের বস আসেন । মাঝে মধ্যে বসে ছেলে মেয়েরা আসে এখানে অবসর কাটাতে । এখানে শিহাবের আসার কোন কথা ছিল না । কদিন পরে রাঙ্গামাটিতে বেশ কয়েকটা প্রজেক্টের কাজ শুরু হবে । শিহাবকে যখন সাইট গুলো পরিদর্শনের দায়িত্ব দিয়ে পাঠানোর কথা বার্তা হচ্ছিলো এবং দুই দিনের ভেতরেই রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছিল তখন শিহাব এখানে আসতে অনাগ্রহ প্রকাশ করে । এটা শুনে শিহাবের বস একটু অবাকই হয়েছিলো । কারণ শিহাব সব সময়ই নিজের কাজের প্রতি খুবই ডেডিকেটেড । সব সময় মন দিয়ে কাজ করে । বস জানতে চাইলো, দুই দিনের ব্যাপার তো! সমস্যা কোথায়?
-সমস্যা দুই দিন না । আপনি আমাকে চিনেন । আমি দুই কেন সাত এক মাস হলেও আপত্তি করি না।
-হ্যা সেটাই তো ! এখন তাহলে কেন করছো?
-আসলে স্যার ১৯ তারিখ রিমি মানে আমার স্ত্রীর জন্মদিন । ছুটি না হলেও ঐ দিনে অন্তত রাত টুকু আমি ওর সাথে থাকতে চাই । এমনিতেও ওকে কাজের কারণে সময় দিতে পারি না । কোথাও ঘুরতে নিয়ে যেতে পারি না । ওর জন্ম দিনের দিনও যদি ওকে ছেড়ে দুরে থাকি তাহলে বেচারি কষ্ট পাবে খুব।

শিহাবের বস কিছু সময় যেন ভাবলো । তারপর বলল, এটার সমাধান যদি করে দিই তাহলে যাবে?
-কী রকম?
-আমার একটা কটেজ আছে । সাইট থেকে বোট করে এই ধর ঘন্টা খানেক লাগবে । তুমি তোমার ওয়াইফকে নিয়ে ওখানে গেলে । কাজ করলে তারপর বিকেল থেকে রাত সব সময় তোমাদের । রান্না বান্নার কোন ঝামেলা নেই । কেয়ারটেকার আর তার স্ত্রী সব সময় থাকে ওখানে । নিজেস্ব বোট আছে। যত সময় চাও ঘুরতে পারবে। কী বল?

এই রকম একটা লোভনীয় অফার যে আসবে শিহাব সেটা ভাবতে পারে নি । রিমিকে বলতেই রিমি সাথে রাজি হয়ে গেল । তারপরই গত রাতে এসে পৌছিয়েছে এখানে । রাতের বেলা কিছু দেখা না গেলেও জায়গাটা যে খুব চমৎকার হবে সকালে সেটা রিমির বুঝতে মোটেও কষ্ট হয় নি । এই সকালে সেটাই অনুভব করছে । এতো চমৎকার একটা সকালে অনেক দিন পায় নি রিমি ।

সকালে নাস্তা তৈরি করতে হল না রিমিকে । টেয়ারটেকার আর তার বউ থাকে কটেজের পাশে ছোট একটা ঘরে । তারাই এই এই কটেজকে দেখা শোনা করে । রিমি শুনেছে যে শিহাবের বসরা মাসে দুই তিনবার করে এখানে আসে । ড্রিংঙ্কস এলকোহল ড্রাগস সহ নারীও নাকি এখানে নিয়ে আসা হয় । একেবারে লোক চক্ষুর আরালে এখানে যা ইচ্ছে তা করা যায় । যদিও রিমি ঘরে এসবের কোন চিহ্নই পায় নি। সব কিছু একেবারে পরিস্কার পরিছন্ন ।

সকালের নাস্তা খেয়ে শিহাব চলে গেল নিজের কাজে । বলে গেল যে দুপুরের পরপরই ফিরে আসার চেষ্টা করবে । এই সময় টুকু ও যেন ঘুমিয়ে কিংবা বই পড়ে কাটায় । রিমি সাথে করে একটা বই নিয়ে এসেছে । তবে সেটা না নিয়ে আসলেও চলতো । বসার ঘরে একটা সেলফ ভর্তি কেবল বই আর বই । সেখান থেকে একটা বই টেনে নিয়ে আবারও শোবার ঘরে চলে গেল । জানালার পাশে বালিশে হেলান দিয়ে বই পড়তে শুরু করলো । এতো আরাম লাগছিলো সেটা বলে বোঝানোর উপায় নেই । শিহাব কাছে থাকলে আরো ভাল লাগতো সত্য তবে এখনও খারাপ লাগছে না । একেবারে নিজের মত করে সময় কাটানো ।

বই পড়তে পড়তে সময় কেটে গেল একেবারে । কেয়ারটেকার এসে খবর দিয়ে গেল যে খাওয়া তৈরি হয়ে গেছে । যখন ইচ্ছে খেতে পারে । আরো কিছু সময় বিছানায় শরীর এলিয়ে দিয়ে পড়ে রইলো রিমি । তারপর ওয়াশরুমে গিয়ে গোসল সেরে নিয়ে বের হল । দুপুরের খাবার খেতে আরও একটু সময় নিল । খাওয়া দাওয়া শেষ করে আবারও বই নিয়ে বসলো তার পছন্দের জানালার পাশে । এরই ভেতরে জায়গাটা ও পছন্দ হয়ে গেছে । আবারো বই পড়তে শুরু করলো ও । তবে এবার ভর পেটের কারণে রিমির আরামে ঘুম চলে এল জলদিই ।
ঘুম ভেঙ্গে কিছু সময় নিজের বিছানার পড়ে রইলো । ঠিক যেন বুঝতে পারছে না যে কোথায় রয়েছে । ঘরটা একেবারে ঘুরঘুরটে অন্ধকার হয়ে আছে । একটু অবাক না হয়ে পারলো না । এতো লম্বা ঘুম যে ঘুমিয়েছে ? একেবারে দুপুর থেকে সন্ধ্যা হয়ে গেছে ! এমনটা তো হওয়ার কথা না । তবে আরেকটা ব্যাপার অবাক না হয়ে পারলো না ।
ঘর কেন অন্ধকার ?
কাল রাতে যখন এসেছিলো তখনই দেখেছিলো পুরো কটেজটা আলোকিত । সোলার ছাড়াও এখানে নিজেস্ব জেনারেটর আছে । গেস্ট এলে জেনারেটর চলে, নয়তো সোলার চলে । তাহলে সন্ধ্যা হয়ে যাওয়ার পরেও কেন আলো জ্বললো না ?

রিমি বিছানা ছেড়ে উঠে দাড়ালো । হাতের কাছে ফোনটা খুজে পেয়ে সেটার ফ্ল্যাশ আলো জ্বেলে এগিয়ে চলল । ঘর পেরিয়ে যখন বাইরে এল কাউকেই আশে পাশে দেখতে পেল না । একটু অবাক না হয়ে পারলো না । এমন টা তো হওয়ার কথা নয় মোটেও । কয়েকবার কেয়ার টেকারের নাম ধরে ডাক দিল । অথচ কারো কোন সাড়া নেই । এমন কেন হচ্ছে?
সবাই ওকে রেখে কোথায় চলে গেল ? আর শিহাব কেন এখনও আসে নি ? বলেছিলো যে বিকেলের ভেতরেই চলে আসবে অথচ এখন সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত হয়ে গেছে তার কোন দেখা নেই । রিমি খুব মেজাজ গরম হল । একটা সময় শিহাবকে কাছে পাওয়া যায় না । কেবল কাজ আর কাজ ! রিমির মন খারাপ হল একটু । এতো কাজ আসলে কার জন্য ? সব তো প্রিয় মানুষের জন্যই নাকি! এখন সেই মানুষটাই যদি খুশি না হয় তাহলে এতো এতো কাজ করে লাভ কী?

রিমি ফোনের ফ্ল্যাশ লাইটটা হাতে নিয়ে বাইরে বের হয়ে এল । বাইরে কেমন যেন ঘুরঘুটে অন্ধকার মনে হতে লাগলো বেশি । সব কিছু খুবই অপরিচিত মনে হল রিমির কাছে । যদিও কাল রাতেই ওরা এখানে এসেছে তারপরেও জায়গাটা তো এতো অপরিচিত মনে হওয়ার কথা না । রিমির মনে হচ্ছে এই স্থানে সে যে একেবারে প্রথমবার এসেছে । রিমির হঠাৎই কেমন যে ভয় করতে শুরু করলো । বিশেষ করে আশে পাশে যখন কেউ নেই এই অনুভূতিটা ওকে খানিকটা অসহায় করে তুলল । রিমি এদিক আরেকবার ভাল করে তাকালো । কী করবে ভাবছে !
মোবাইলে যে কাউকে ফোন দিবে তার কোন উপায় নেই । এইখানে কোন নেটওয়ার্ক নেই । লেকের অর্ধেকটা পার হওয়ার পরে সকল ধরনের নেটওয়ার্ক চলে গিয়েছিলো । পুরো সময় কাউকেই ফোন দেওয়ার উপায় নেই এখান থেকে । তবে রিমি শুনেছে যে কটেজ থেকে পেছনের যাওয়ার একটা রাস্তা আছে । পাহাড়ি রাস্তা । সেখানে দিয়ে পাহাড়ে উঠলে নাকি কোন একটা নির্দিষ্ট সময়ে নেটওয়ার্ক পাওয়া যায় । তখন ফোন করা যায় ।

রিমি ভাবছে কী করবে ! একবার মনে হচ্ছে ঘরের ভেতরে ঢুকে শুয়ে থাকে । শিহাব দেরি করলেও ঠিকই চলে আসবে । এটা ছাড়া এখন আর তেমন কিছু করার নেই । ফ্ল্যাশ লাইটের আলোতে কিছু সময় এদিক ওদিক ঘুরে বেড়ানো যায় অবশ্য । এখানে যে জেটিটা আছে সেখানে গিয়ে পানিতে পা ডুবিয়ে বসে থাকা যায় । তবে রিমির মনে হল ঘরের ভেতরে গিয়ে শুয়ে থাকাই ভাল ।

ঘরের দিকে আবার যখন পা বাড়াতে যাবে তখনই চোখ পড়লো মেয়েটার দিকে । ক্ষীণ আলোতে মেয়েটার সাদা ড্রেসটা চোখ পড়লো রিমি । মেয়েটা ঘরের পেছনের দিকে দেওয়ার পাশে দাড়িয়ে রয়েছে । প্রথম দেখায় রিমি চমকে উঠেছিলো । একটু ভয়ও পেয়ে গিয়েছিলো তবে সামলে নিল । ওর অবশ্য মনে এই প্রশ্ন টা ঠিকই জাগলো যে এই নির্জন আর ব্যক্তিগত সম্পত্তিতে মেয়েটা কিভাবে এল ?
মেয়েটা কি শিহাবের বসের পরিচিত কেউ ?
এমন হতে পারে !
ওদের মতই এখানে থাকতে এসেছে । ও যখন ঘুমিয়ে ছিল তখন এসেছে ?

রিমি একটু এগিয়ে গেল । মেয়েটা তখনও ওর দিকে একভাবে তাকিয়ে রয়েছে । এবার মেয়েটার চেহারা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে । পরনে সাদানীল মিলিয়ে একটা সেলিয়ার কামিজ । মেয়েটা একভাবে তাকিয়ে রয়েছে রিমির দিকে ।
মেয়েটার চাহনী রিমির কেন জানি ভাল লাগলো না । মেয়েটা তখনই ওর চোখের দিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে সরাসরি তাকালো ওর পেটের দিকে । সেদিকে একভাবে তাকিয়ে রইলো । আর তখনই রিমির মনের ভেতরে একটা তীব্র বিস্ময়য় জেগে উঠলো। মেয়েটা যখন আবার চোখ তুলে ওর দিকে তাকালো তখনই রিমির মনে হল মেয়েটা স্বাভাবিক কেউ নয় ।

মেয়েটা যে কোন ভাবে ব্যাপারটা জানতে পেরেছে !

রিমি যে প্রেগনেন্ট এটা সে কাউকে বলে নি । এখনও সময় আসে নি । কেউ জানে না । রিমি কাউকে বলে নি । বাইরে থেকে দেখে কোন ভাবেই বোঝার উপায় নেই । কোন একটা বিশেষ মুহর্তে শিহাবকে বলবে ভেবেছিল । তাহলে এই মেয়েটা কিভাবে টের পেয়ে গেল ।
রিমি আরও কিছু বলতে যাবো তখনই মেয়েটা তীব্র একটা চিৎকার দিয়ে উঠলো। ব্যাপারটা এতোই আকস্মিক যে রিমি বুকের ভেতরে একটা তীব্র ভয় জেগে উঠলো । রিমির মনে হল এখনই ঘরের ভেতরে ঢুকে পড়া উচিৎ । সে দ্রুত কটেজের ঘরের দিকে যেতে গিয়ে কাঠে পা বেঁধে উল্টে পড়ে গেল । আর তখনই ওর ঘুম ভেঙ্গে গেল।
চোখ মেলে রিমি নিজের পরিচিত বিছানায় দেখতে পেল । এই বিছানাতেই সে দুপুরের খাওয়ার পরে শুয়ে শুয়ে বই পড়ছিলো । বইটা এখনও তার বুকের উপরে রয়েছে । সব থেকে বড় কথা এখন কোন এখন সন্ধ্যা কিংবা রাত নয় মোটেও । জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে বুঝলো যে এখন বিকেল । বিকেলের এই সময়ে সে এমন একটা স্বপ্ন সে কেন দেখলো ! নিশ্চিত অপু তানভীর গল্প পড়ার ফল । বেটার গল্পে সব সময় এমন কিছু ঘটে !

জানালা দিয়ে বাইরে তাকাতেই অবশ্য সব চিন্তা মাথার ভেতর থেকে দুর হয়ে গেল । শিহাবকে দেখা যাচ্ছে । সে লেকের পানিতে পা ডুবিয়ে বসে রয়েছে । ও বলেছিলো যে দুপুরের পরপরই চলে আসবে । তাই সম্ভবত চলে এসেছে ।

রিমি দ্রুত উঠে শিহাবের কাছেই গিয়ে হাজির হল । শিহাবের পাশে বসতে বসতে বলল, কখন এসেছো?
-এই ঘন্টা খানেক ।
-ওমা আমাকে ডাকো নি কেন?
-তুমি এতো আরাম করে ঘুমাচ্ছিলে যে ডাকতে ইচ্ছে হয় নি ।

বিকেল আর সন্ধ্যাটা ওদের খুবই চমৎকার কাটলো একসাথে । কত গুলো দিনের পরে এমন করে দুজন দুজনকে কাছে পেল সেটা ঠিক নেই । রাতে রিমির জন্য একটা বড় সারপ্রাইজ ছিল । শিহাব ওর জন্য একটা কেক নিয়ে এসেছিলো । এটা রিমি আশা করে নি কোন ভাবেই । এই এখানে কেক পাওয়া যাবে ভাবে নি । এমন ওর জন্য একটা শাড়িও এনেছে উপহার হিসাবে । এবং রিমিও তখন শিহাবকে সুসংবাদটা দিল । শিহাব কিছু সময় কেবল অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো রিমির দিকে । সম্ভবত জীবনের সব থেকে আনন্দের সংবাদটাই রিমি তাকে দিয়েছে । রিমি সেটা শিহাবের চোখ মুখ দেখেই বুঝতে পারছিলো । রিমি কিছুটা সময় শিহাবকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রইলো । অনুভব করলো মানুষটার প্রতি ভালোবাসা সেই আগের মতই রয়েছে । কমে তো নিই বরং বেড়েছে অনেক ।

পরের দিন শিহাব কাজে চলে যাওয়ার পরে একই ভাবে দিনটা কাটলো রিমির । তবে সব থেকে অবাক করে দেওয়ার ব্যাপার হচ্ছে ঐদিনও রিমি দুপুরে খাওয়ার পরে ঘুমালো এবং একই স্বপ্ন দেখে ঘুম ভাঙ্গলো । ব্যাপারটা রিমিকে বেশ চিন্তিত হল । বিকেলে কিছু সময় রিমি কটেজে ঘোরাঘুরি করলো । শিহাব বলে গিয়েছে যে আজকে ওর ফিরতে দেরি হবে একটু । তবে সন্ধ্যার ভেতরেই ফিরে আসবে ।

রিমি কটেজের পেছনে হাটা দিল । কটেজের পেছন দিক দিয়ে একটা সরু রাস্তা চলে গেছে । এখানে গাছের বদে বাশ গাছ রয়েছে বেশি। তবে রাস্তাটা দেখা যাচ্ছে ঠিকই । সে ডান দিকে গিয়ে উপরে উঠেছে একটু । রিমির কী মনে হল সে ধীর পায়ে আস্তে আস্তে উপটে উঠলো । পুরো এলাকাটায় কেমন একটা অন্ধকার অন্ধকার ভাব নেমে এসেছে । রিমি এমন একটা জায়গায় পৌছালো যেখানে ডান দিকে গভীর খাত আর বাঁ দিকে পাহাড় উঠে গেছে । রিমির খুব ইচ্ছে হল যে এখন দিয়ে আরও সামনে এগিয়ে যায় কিন্তু তখনই পেছন থেকে ডাক এল । দেখতে পেল ওদের কেয়ারটেকার দাড়িয়ে আছে পেছনে । ওকে সামনে যেতে মানা করছে । সামনের রাস্তা বিপদজনক ।
রিমি আর সামনে না গিয়ে পেছনে ফিরে এল ।

শিহাব ফিরে এল সন্ধ্যা বেলা । এখানে ওর কাজ আপাতত শেষ । কালকে ওরা যাবে ঝর্ণা দেখতে । তারপর সেখান থেকেই চট্রগ্রামে ফিরে যাবে । রিমি স্বপ্নের ব্যাপারটা শিহাবের কাছ থেকে লুকিয়ে গেল ।

দুই
রিমি নিজের জীবন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লো । কটেজের ঘটনা ভুলেই গিয়েছিল । ভুলে গিয়েছিলো পরপর দুইদিন স্বপ্নে দেখা সেই মেয়েটার মুকখও। কিন্তু সেই মুখটা আবারও ফিরে এল ওর জীবনে । এমন ভাবে যে ফিরে আসবে সেটা সে বুঝতেও পারে নি ।

শরীরের নিয়মিত রুটিন চেকাপের জন্য রিমি একজন মহিলা ডাক্তারের কাছে যেত। ডাক্তার মাহিলা জামান । সেই ডাক্তারের চেম্বারেই একটা ফটোফ্রেমের দিকে চোখ যেতেই রিমি কিছু সময় ফ্রিজ হয়ে তাকিয়ে রইলো । প্রথমে মনে না করতে পারলেও কয়েকবার তাকিয়ে থাকার পরে চেহারাটা তার মনে পড়ে গেল । ডাক্তারও ব্যাপারটা খেয়াল করলেন । তিনি জানালেন যে ফটোর মেয়েটি তার বোন । বছর খানেক ঘরে নিখোজ ।

নিখোজ শব্দটি শুনে রিমি কেমন ভুরু কুচকে তাকালো । সেদিন অবশ্য কিছুই বলল না সে ডাক্তারকে । তবে ব্যাপারটা শান্তি দিল না রিমিকে । পরের বার যখন আবারও তার চেম্বারে গেল তখন পুরো ট্যুর আর স্বপ্নের ব্যাপারটা ডাক্তার জামানকে খুলে বলল। এটার কী ব্যাখ্যা হতে পারে সেটা রিমির জানা নেই । রিমি তার বোনকে যে আগে কোন দিন দেখে সেটার ব্যাপারে সে শতভাগ নিশ্চিত । তাহলে স্বপ্নে এটো স্পষ্ট বর্ণনা কিভাবে দিল।
মালিহা জামান রিমির কথা অবিশ্বাস করলেন না । কারণ হিসাবে বললেন যে সে পোশাকের বর্ণনা রিমি দিয়েছে সেটা পরেই সে নিখোজ হয়েছিলো ।
মাহিলা জামান আরও কিছু প্রশ্ন করে জেনে নিলেন ।

সপ্তাহ দুই পরে শিহাবের কাছ থেকে এমন একটা ঘটনা রিমি শুনলো যা শুনে রিমির চোখ কপালে উঠলো । শিহাব জানালো যে ওরা যে কটেজে উঠেছিলো সেই কটেজে পুলিশ গিয়ে সার্চ করেছে । কটেজের পেছনে পাহাড়ের উপরে একটা মেয়ের লাশ পাওয়া গেছে । মেয়েটা প্রায় বছর খানেক ধরে নিখোজ ছিল । মেয়েটার সাথে পাওয়া যায় একটা মোবাইল ফোন । সেটা নষ্ট হলেও মেমোরি কার্ডটা উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে । সেখান থেকে বেশ কিছু ছবি পাওয়া গেছে । ছবিতে দেখা গেছে যে মেয়েটার শেষ কিছু ছবি ওখানেই ছিল এবং সেটা ছিল ওর বসের মামার সাথে । সে মেয়েটাকে নিয়ে ওখানে গিয়েছিলো। তারপর সেখানেই ওকে মেরে ফেলেছে । কেন মেরে ফেলেছে সেটা অবশ্য এখনও জানা যায় নি তবে সেই মামাকে এখন পুলিশ খুজছে । খুব শিঘ্রই ধরে ফেলবে । তখন জানা যাবে ।

বিস্ময়ের তোড়ে রিমি আসলে কোন কথাই বলতে পারলো না । তবে সে এটা জানে যে এই ধরা পড়ার পেছনে তার অবদান সব থেকে বেশি । কিন্তু সব থেকে বড় প্রশ্ন যে রিমি ঐ স্বপ্নটা কেন দেখলো । মেয়েটা কেন রিমিকেই স্বপ্নে ধরা দিল ?
হয়তো এই প্রশ্নের জবাব কোন দিন পাওয়া যাবে না । তবে রিমি অন্তত এই টুকুতেই খুশি যে মেয়েটা এখন শান্তি পাবে ।

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 4.8 / 5. Vote count: 60

No votes so far! Be the first to rate this post.


Discover more from অপু তানভীর

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

About অপু তানভীর

আমি অতি ভাল একজন ছেলে।

View all posts by অপু তানভীর →