সেহরি টেলস ০১

oputanvir
4.8
(54)

হঠাৎ নীতুর অনেক কান্না আসতে লাগলো । নিজের হলের বিছানায় বালিশে মুখ লুকিয়ে কয়েক ফোটা চোখের পানিও পড়ে গেল । ফোনের ওপাশে রিয়াদ তখন কথা বলে চলেছে । নীতুর যে কান্না পাচ্ছে সেটা রিয়াদ বুঝতেও পারে নি ।
-নীতু শুনছো?
কান্না আটকে কোন মতে নীতু বলল, হুম ।
-ঘুম পাচ্ছে কি?
-হুম ।
-আচ্ছা তাহলে তুমি ঘুমাও । কেমন !
-আপনি ঘুমাবেন না?
-উহু । আমি ঘুমালে আমার আর ঘুম ভাঙ্গবে না । তখন সেহরী খেতে পারবো না ।
-তাই বলে এভাবে রাত জেগে থাকবেন? সকালে আবার অফিস আছে না ?
-তা আছে ! একটু সমস্যা হয় বটে । তবে কোন ব্যাপার না !
-আপনি ঘুমিয়ে নিন । আমি আপনাকে ডেকে দিবো ।

ওপাশ থেকে প্রথমে কোন কথা শোনা গেল না । নীতু এবার খানিকটা জোর দিয়ে বলল, আপনি ঘুমিয়ে পড়ুন । আমি আপনাকে ডেকে দিবো । চিন্তা করবেন না ।
-সিওর তুমি ?
-হ্যা । আমার সময় মত ঘুম ভেঙ্গে যাবে ।
-আচ্ছা তাহলে একটু ঘুমাই আমি । ডেকে দিও কিন্তু !
-দিব !

নীতুর খুব ইচ্ছে করলো রিয়াদকে বলে যে একটু ভিডিও কল দিতে । সে ভিডিও কল দিয়েই ঘুমাবে । নীতুর খুব রিয়াদের ঘুমন্ত চেহারাটা দেখতে ইচ্ছে করলো কিন্তু লজ্জার কারণে বলতে পারলো না । ফোনটা কেটে যাওয়ার পরেও সে কানে চেপে ধরে রাখলো । মনে হল যেন এখনও সে ফোনের ওপাশ থেকে রিয়াদের নিঃশ্বাসের শব্দ শুনতে পাবে ।

নীতু নিজের বিছানায় শুয়ে শুয়ে নিজের আচরণ নিয়ে খানিকটা সময় ভাবলো । রিয়াদের প্রতি এই অল্প দিনের ভেতরেই এতোটা আবেগ যে সৃষ্টি হবে নীতু নিজেও ভাবতে পারে নি । রিয়াদের প্রতি অদ্ভুত একটা মায়া জন্ম নিচ্ছে নীতুর ভেতরে । অবশ্য নীতু একটা আটকানোর চেষ্টা করছে না । যে মানুষটার সাথে ওর বিয়ে হয়েছে তার প্রতি যদি ভালোবাসা জন্ম নেয় তাহলে সেটা মোটেো খারাপ কিছু নয় ।

বিয়েতে নীতুর প্রথমে একদম মত ছিল না । কিন্তু বাসা থেকে সবার খুব ইচ্ছে যে রিয়াদের সাথেই নীতুর বিয়েটা হোক । নীতুকে নাকি তাদের অনেক বেশি পছন্দ হয়েছে । তারা যে কোন শর্তেই বিয়েতে রাজি । শেষ পর্যন্ত সবার ইচ্ছের কাছে নীতু হার স্বীকার করলো । তবে এই শর্ত জুড়ে দিল যে এখন কেবল বিয়ে হবে । কোন বড় অনুষ্ঠান না । এবং বিয়ের পরেও নীতুর পড়াশোনা শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোন প্রকার সংসার শুরু হবে না । পড়াশোনা শেষ করেই তবে ঐদিকে যাওয়া যাবে । রিয়াদরা তাতেই রাজি হয়ে গেল ।

কিন্তু বিয়ের পর থেকে রিয়াদের প্রতি আলাদা একটা মায়া জন্মেছে নীতুর । এই যে প্রথম রমাজের সেহরী খাওয়ার কথা শুনে নীতুর মন কত খারাপ লাগছে । মানুষটার হোটেল থেকে খাবার কিনে এনে ফ্রিজে রেখেছে। সেটাই খাবে শেষ রাতে এটা শোনার পর থেকে কেমন মন খারাপ হয়ে আছে । অথচ এতে কি খুব বেশি মন খারাপের কোন কারণ আছে ! প্রতিটি ব্যাচেলরের জীবন তো এমনই হয়ে থাকে ।

দুই
রিয়াদ একেবারে সঠিক সময়ে নীতুর হলের সামনে এসে দাড়ালো । নীতুর দিকে তাকিয়ে বলল, কোথায় ইফতারি করবে বল? এদিকে না একটা হোটেল ছিল !
নীতু বলল, না কোন হোটেলে ইফতারি করবো না ।
-তাহলে?
-ঐ যে দোকানটা দেখছেন ওখান থেকে ইফতারি কিনে আনুন । আমরা মাঠে বসবো !

রিয়াদ কিছু বলতে গিয়েও বলল না । সোজা ইফতারি কিনে নিয়ে এল । নীতু সাথে করে খবরের কাগজ নিয়ে এসেছিলো । সেটা বিছিয়ে বসলো । তারপর আস্তে আস্তে ইফতারি সাজাতে শুরু করলো । অন্যান্য বার নীতু ওর হলেই ইফতারি করে । আজকেও প্রথম রমজান উপলক্ষে তেমন আয়োজন করা হয়েছিলো । নীতুর ইচ্ছেও ছিল যে সেখানেই করবে ইফতারি । কিন্তু রিয়াদ যখন বলল যে প্রথম ইফতারিটা ওর সাথে করা যায় কিনা তখন নীতুর অন্য সব কিছু চোখের সামনে থকেে গায়েব হয়ে গেল । কেবল মনে হল যে রিয়াদের সাথেই ওর ইফতারি করতে হবে ।

-জানো অনেক দিন পরে আমি প্রথম রমজান কারো সাথে ইফতার করছি । কাজের জন্য সব সময় বাইরে । বাড়িতে ঈদের আগে । দুই তিন সময় থাকে । পুরোটা সময়ই একা একাই ইফতার করতে হয় ।
-মন খারাপ লাগতো?
-অভ্যাস হয়ে গেছে ।
নীতুর আবারও এতো মায়া লাগলো । খুব কষ্টে চোখের পানি আটকালো . তারপর বলল, এইবার বাসায় যাওয়ার আগে প্রতিদিন আমরা একসাথে ইফতার করবো ।
নীতু দেখলো রিয়াদের চোখ মুখ সাথে সাথে উজ্জ্বল হয়ে গেল । তারপর বলল, তোমার কষ্ট হবে না?
-না হবে না । আর আজকে ইফতারির পরে আমি আপনার সাথে আপনার বাসায় যাবো !

এবার রিয়াদ একটা বিস্ময় ভাব নিয়ে তাকালো নীতুর দিকে । নীতু খুব স্বাভাবিক কন্ঠে বলল, এভাবে অবাক হয়ে তাকাবেন না তো ! বউ তার স্বামীর বাসায় যাবে এতে অবাক হওার কী আছে শুনি ?
-সত্যি যাবে?
-হ্যা । আজ থেকে বাইরের খাবার বন্ধ । ঠিক আছে । বাসায় রান্না করার জিনিস পত্র আছে তো ?
-হ্যা আছে ।
-গুড । আগে ইফতার করি । তারপর চলুন একসাথে !

ইফতারির পর নীতু সোজা গিয়ে হাজির হল রিয়াদের বাসায় । ছোট দুই কামড়ার একটা বাসা । নিত্য দিনের সব জিনিসই সেখানে রয়েছে । পুরো রান্নাঘর পরিদর্শন শেষ করে নীতু একটা লম্বা লিস্ট ধরিয়ে দিল । সেগুলো তখনই কিনে নিয়ে আসতে বলল। রিয়াদ বিনা বাক্য ব্যয়ে সেগুলো কিনে নিয়ে এল । তারপর দুজন মিলে রান্না শুরু করলো । মুরগির মাংস, ডাল আর ভাত হবে আজকে । কাল অন্য কিছু রান্না করা যাবে ।

নীতু একেবারে হুট করেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো এখানে আসার । এমন কি যখন ইফতার করতে আসলো তখনও নীতুর কো ইচ্ছে ছিল না । কিন্তু কেন যে আসতে চাইলো সেটা সে নিজেই জানে না । কিন্তু এই যে একসাথে রান্না করা, রান্না করতে করতে কথা বলা এটা নীতুর কাছে অমূল্য এক আনন্দ দিতে শুরু করলো । আর সব থেকে বড় কথা হল আজকে সে রিয়াদকে ঘুমন্ত অবস্থা ঠিক ঠিক দেখতে পাবে । কালকের রাতের মত আজকে আর মন খারাপ করে ঘুমাতে হবে ।

জীবনে সুখী হতে আসলে খুব বেশি কিছুর দরকার নেই । এই রিয়াদের মুখের দিকে তাকিয়ে নীতুর মনে হচ্ছে এই দুনিয়াতে ওর থেকে সুখী আর আনন্দিত মানুষ আর দ্বিতীয়টি নেই । নীতুর নিজের মনকেও যদি জিজ্ঞেস করে তাহলে সেও উত্তর পাবে যে ওর নিজেকে বর্তমানে অসম্ভব সুখী একটা মেয়ে মনে হচ্ছে ।

গল্পের নোটিফিকশন পেতে হোয়াটস এপ গ্রুপ কিংবা টেলগ্রাম চ্যানেলে জয়েন করুন । সরাসরি পেয়ে যাবেন নোটিফিকেশন আকারে ।

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 4.8 / 5. Vote count: 54

No votes so far! Be the first to rate this post.


Discover more from অপু তানভীর

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

About অপু তানভীর

আমি অতি ভাল একজন ছেলে।

View all posts by অপু তানভীর →