ছাত্র নেতা হাবিব ভাই

oputanvir
4.7
(40)

ঘড়ির দিকে আরেকবার তাকাল হাবিব । এই নিে মোট সাতবার তাকালো সে । মনের ভেতরে একটা অস্থিরতা অনুভব করছে সে । অবশ্য এই ব্যাপারটা এই প্রথম নয় আগেও হয়েছে । যখনই সে এই রকম একটা কাজের জন্য তার এই নির্দিষ্ট ঘরে এসেছে তখনই সে নিজের ভেতরে একটা অস্থির বোধ করেছে ।
অথচ অন্যান্য সব কাজে তার মত সুস্থির মানুষ খুজে পাওয়া কঠিন । এমনি এমনি তো সে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নেতা না । সবাই তাকে বড় ভাই বলে ডাকে । তার বয়স এখন প্রায় পয়তাল্লিশ । এই বয়সে এসেও সে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রনেতার আসনটি ঠিক ঠিক ধরে রেখেছেন । হালকা পাতলা গরনের হাবিবুল্লাহর কথাই পুরো বিশ্ববিদ্যালয় চলে । তার ইচ্ছের বিরুদ্ধে এখানে কেউ কিছু করতে পারে না ।

তবে একটা ব্যাপারে এখনও সে খানিকটা অস্থিরবোধ করে । যখন কোন মেয়েকে তার ঘরে আসতে বলা হয়, সেই মেয়ে আসার আগ পর্যন্ত একটা অস্থির বোধ করে সে । তবে একবার যখন তার এই ঘরের ভেতরে ঢুকে পড়ে তখন অবশ্য হাবিব আবারও তার আগের ফর্মে ফিরে যায় । তখন আবার সব কিছু তার নিয়ন্ত্রনে ।

হাবির ঘড়ির দিকে অষ্টম বারের মত তাকালো । মেয়েটাকে এই ঠিকানাতে আসতে বলা হয়েছে ঠিক রাত দশটার সময় । আজকে রাতের পুরো সময়টা এখানেই থাকার ইচ্ছে ওর । হাবিবের বউ সুমনা অবশ্য একটু রাগ করছিলো । তবে পার্টির কাজ আছে বলে সুমানাকে ম্যানেজ করে নিয়েছে । সুমানা অবশ্য খুবই ডেডিকেটেড বউ । স্বামীর ক্যারিয়ার সম্পর্কে সে খুবই সচেতন । তাই পার্টির কোন কাজে সে মানা করে না ।

আজকে প্রায় এক মাস পরে হাবিব তার এই বাড়িতে আসছে । এই বাড়িটা শহর থেকে একটু দুরে । বসিলার দিকে । এখনও এই এলাকাটা অতোটা উন্নত হয় নি । বাড়িঘরে গিজগিজ করে নি । তাই শান্তিমত এখানে অনেক কিছু করা যায় । এখানে যে সে আসে এটা খুব কাছের আর বিশ্বাসী লোক ছাড়া জানে না । বাড়ির সামনে দুইজন দলের কর্মী রয়েছে । আর কেউ নেই বাড়িতে । ওরা পুরো সমটা পাহারা দিবে । ওদের কাছে অটোমেটিক অস্ত্র রয়েছে । যে কোন ঝামেলা সামাল দিতে পারবে । হাবির টিটেবিলের উপরে রাখা স্কচের বোতল থেকে একটু মদিরা ঢেলে নিলো । হাবিবের অবশ্য মাতাল অবস্থায় মেয়েদের সাথে বিছানাতে যাওয়া একদম পছন্দ না । ওর মতে এসব কাজ করতে হবে পূর্ণ সজাক থেকে । কাজ শেষ করে তারপর একটু মদ পেতে চালান দেওয়া যায় ।

অস্থিরতা দুর করতে হাবিব এবারের মেয়েটার কথা চিন্তা করতে লাগলো । মেয়েটাকে সে দেখেছে বেশ কদিন আগেই । কাটা কাটা সুন্দরী মেয়েটা । সবে মাত্র সেকেন্ড ইয়ারে পড়ে । সব থেকে বড় কথা হচ্ছে মেয়েটা ওরই দলের এক কর্মীর গার্লফ্রেন্ড । এই ব্যাপারটাই সহজ করে দিলো সব কিছু । ছেলেটাকে ডেকে সোজা বলে দিলো যে মেয়েটাকে নিয়ে যাতে হাজির হয় এখানে । হাবিব জানে তার হুকুমের বাইরে যাওয়ার সাহস কারো নেই । নয়তো এই ক্যাম্পাসেই আর থাকা হবে না । আজ সকালেই ছেলেটা মেসেজ করে জানিয়েছে যে সে আজকে আসবে রাত দশটায় ।

আরেক গ্লাস ঢালতে যাবে তখনই দরজায় টোকা পরলো । হাবিবের অস্থিরতা চরমে পৌছালো সাথে সাথে । অনুভব করলো পুরো শরীরে একটা টান টান উত্তেজনা বোধ করছে । একটু নিজেকে শান্ত করে বলল, দরজা খোলা । ভেতরে এসো ।

তখনই দরজা খুলে গেল । হাবিব চোখ বড় বড় দেখতে পেল মেয়েটাকে । নাম সম্ভবত আইরিন । মেয়েটার পোশাকের দিকে তাকিয়ে চোখ একটু বড় বড় হয়ে গেল । আইরিন আজকে বেশ আটোসাটো পোশাক পরেছে । শরীরের সাথে আস্টেপিস্টে রয়েছে । প্রতিটি ভাজ যেন বের হয়ে গেছে ।

আইরিন একটু হাসলো । তারপর দরজাটা ভেজিয়ে দিয়ে সোজা হেটে এসে বসলো তার সামনের সোফাতে । হাবিবের একটু ইচ্ছে বলে যে ওর পাশে এসে বসে । কিন্তু বলল না । মেয়েটার চোখে কোন ভয় কিংবা দ্বিধা নেই । যখনই কোন মেয়েকে সে এখানে নিয়ে আসে সবার চোখেই কেমন একটা ভয় কিংবা দ্বিধা থাকে । কেউ কেউ কাঁদতে থাকে । তবে তারা জানে যে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে হলে এখানে তাকে আসতেই হবে । এছাড়া অন্য আর কোন উপায় নেই । নিরুপায় অসহায় মেয়েদের চেহারা দেখতে হাবিবের ভাল লাগে । কিন্তু এই মেয়েটার ভেতরে সেসব কিছুই নেই ।

কিছু কিছু মেয়ে অবশ্য নিজ থেকে এসে সব কিছু বিলিয়ে দেয় একটা পদ পাওয়ার জন্য । সেই মেয়েদের চেহারাতেও একটা অসহায়ত্বের ভাব থাকে । তবে এই মেয়ের চেহারে তেমন কিছুই নেই । হাবির কিছু জিজ্ঞেস করতে যাবে তার আগেই আইরিন বলল, আপনার বয়স কত?
একটু যেন থতমত খেল হাবিব । তারপর বলল, মানে?
-মানে আপনার বয়স কত?
হাবির সরু চোখে তাকালো আইরিনের দিকে । মেয়েটার চোখে একটা কৌতুকের হাসি । হাবির একটু অবাক হল । বলল, কেন বয়স জেনে কী করবে?
-না আমি শুনেছি যে আপনার দম বেশি না । বেশি সময় ধরে রাখতে পারেন না ।
হাবিব অনুভব করলো ওর কান গরম হয়ে গেছে । এমন কথা ওকে কোন মেয়ে বলেছে বলে ওর মনে পড়ে না । এমন কথা বলার সাহস কারো নেই । আর এই মেয়ের এতো সাহস এল কোথা থেকে !
-কী বললি তুই ?
-এই তুই তোকারি না । ভাল ভাবে কথা বলুন ।
এবার রাগ ধরে রাখতে পারলো না হাবিব । আজকে সে এই মেয়েটাকে আচ্ছা একটা শিক্ষা দিবে ।

উঠে দাড়াতেই ধুক করে একটা আওয়াজ শুনতে পেল বাইরে থেকে । তারপর আরেকটা । স্পষ্টই কেউ মাটিতে পরে গেছে । দুইজন । আইরিনের দিকে তাকিয়ে সে দেখতে পেল মেয়েটা এবার এক পায়ের উপর আরেক পা দিয়ে বসেছে । যেন কিছু একটা দেখার অপেক্ষায় । তখনি দরজা খুলে গেল । হাবিব দেখতে পেল । একটা ছেলে ঘরে ঢুকেছে । এবং এই ছেলেটা আর কেউ নয়, তার দলের কর্মী । এই মেয়েটার বয়ফ্রেন্ড । তার উপর হুকুম ছিল যে মেয়েটাকে পৌছে দিয়েই সে চলে যাবে। অথচ এখানে আবার ঢুকেছে !

-তুই এখানে কী করছিস? তোকে না চলে যেতে বলা হয়েছে ।
ছেলেটা সেদিকে খেয়াল না দিয়ে তাকালো তার গার্লফ্রেন্ডের দিকে । চোখে চোখে তারা কী যেন বলল ।
হাবিব আবারও চিৎকার করে বলল, তোর সাহস তো কম না ? তোকে ….

কথাটা সে শেষ করতে পারলো না । ছেলেটা দুই লাফে একেবারে তার সামনে চলে এল । তারপর হাবিবকে তীব্র বিস্ময়ের ভেতরে ফেলে দিয়ে কষে একটা চড় লাগালো তার বাম গাল আর কান বরাবর ।

যখন হাবিব প্রথম প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়য়ে ভর্তি হয়েছিলো তখন সরাসরি মারামারিতে যোগদান করতো । তবে নেতা হয়ে যাওয়ার পরে এসবের থেকে দুরে থেকেছে । সব সময় কেবল নির্দেশ দিয়েছে । সেই হিসাবে ২ো/২৫ বছর পরে কেউ তার শরীরে প্রথম বারের মত আঘাত করলো । তাই এই আঘাতের ব্যাথার চেয়েও বিস্ময়টা ছিল বেশি । তবে যখন দ্বিতীয়বার একই ভাবে চড়টা এসে লাগলো তখন সে অনুভব করতে পারলো যে ছেলেটার শরীরে অসুরে শক্তি । তার মাথার পুরোটা যেন একেবারে নড়ে উঠেছে । ঝিমঝিম করছে ।
তিননম্বর চড়ে সে সোফার উপর বসে পড়লো । এবং চার নম্বর চড়ে সোফার উপর শুয়ে পড়লো ।

মাথার ভেতরে সব কিছু কেমন ভোঁভোঁ করছে । ঠিক মত যেন চিন্তা করতে পারছে না । এমন তো হওয়ার কথা না । এতো সাহস তো হওয়ার কথা না কারো ।
যখন সে সোফা থেকে মাথা তুলতে চাইলো তখন বুঝতে পালরো সে ঠিক শক্তি পাচ্ছেনা । তবে এই সমস্যার সমাধান হয়ে গেল সাথে সাথেই । ছেলেটা নিজেই তাকে তুলে ধরে বসালো । এবং আবারও ঠিক একই স্থানে চড় এসে লাগলো । পড়ে যাচ্ছিলো আবার তবে আগেই তাকে ধরে ফেলল ছেলেটা । আবারও চড় ।

এক সময়ে হাবিব চড়ের সংখ্যা গোনা বাদ দিয়ে দিল । তার আর হিসাব নেই কিছু । একের পর এক চড় কেবল আসতেই । হাবিবের ছোট খাটো গালটা কেবল সেই চড় খেয়েই চলেছে । একটা সময়ে হাবিবের আর কিছুই মনে হল না ।

চড় থামলে সে আবারও কোন মতে শোফাতে উঠার চেষ্টা করলো । মাথার ভেতরে তীব্র ভার হয়ে জড় হয়েছে । কিছু যেন চিন্তা করতে পারছে না । অনুভব করতে পারছে তার বাম গাল ফুলে উঠেছে । বাম সাইডের দাঁত মুখে তীব্র একটা ব্যাথা অনুভব করছে সে । তখনই চোখ মেয়েটার দিকে । মেয়েটার হাতে মোবাইল । এবং বলে দেওয়ার অপেক্ষা রাখে না যে মেয়েটা সব টুকু ভিডিও করেছে ।

হাবিব কিছু যেন বলতে চাইলো তবে বলতে পারলো না । মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না ।

আইরিন বলল, শখ মিটেছে ?

বলেই খিলখিল করে হেসে উঠলো । হাবিব ডান কান দিয়ে সেই শব্দ খুব নিষ্ঠুর শোনালো । বাম কান দিয়ে সে কোন আওয়াজ শুনতে পাচ্ছে না । এই কান সম্ভত আর কখনই ঠিক অনুভব হবে । তবে একটা জিনিস সে কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছে না । সামনে দাড়ালো এই ছেলেটার শরীর স্বাস্থ্য ভাল কোন সন্দেহ নেই । তবে সে যেভাবে তাকে চড় মারছে এবং এ চড়ের যে ওজন সেটা মেলাতে পারছে না । এই মানুষের শরীরে এতো শক্তি এলো কোথা থেকে । এতো শক্তি তো আসার কথা না । কোন স্বাভাবিক মানুষের শরীরে এতো শক্তি থাকে না ।

ছেলেটা আবারও কাছে আসতে গেলে আইরিন পেছন থেকে বলল, আহ অভ্র ! থাকুক । যথেষ্ঠ হয়েছে । নিজের খাদ্য নিয়ে এতো খেলা করতে আছে !

হাবিরের মনে যে ঠিক শুনলো না । নাকি ভুল শুনলো !
খাদ্য বলেছে মেয়েটা !
ওকে খাদ্য বলছে ।

হাবির কিছু সময় কিছুই চিন্তা করতে পারলো না । কিছুই তার মাথায় ঢুকছে না । হাবিব দেখতে পেল দরজা খুলে ছেলেটি বাইরে চলে গেল । এবং ফিরে এল একটু পরেই । তবে একা আসে নি । সাথে করে তার বিশ্বস্ত দুই কর্মীকে নিয়ে এসেছে টানতে টানতে । তাদের ঠিক তার সামনেই রাখা হল । দুইজনই চোখ বন্ধ করে আছে । জ্ঞান নেই কারো !

হাবিব কিছু চিন্তা করতে পারছে না । বারবার মনে হচ্ছে ও দুঃস্বপ্ন দেখছে । এমনই হবে । নয়তো এটা কোন ভাবেই সত্য হওয়ার কথা না । ওর সাথে এমন ঘটনা ঘটার কথা না ।

পরিশিষ্টঃ
দুইদিন পর ।
পুরো বিশ্ববিদ্যালে তীব্র আন্দোলন শুরু হয়েছে । তাদের সবার প্রিয় ছাত্রনেতাকে কে বা কারা নৃৃশংস ভাবে খুন করেছে । তবে কেবল নৃশংস বলল কম বলা হবে । পুরো শরীরের অর্ধেক মাংস কোন পশুকে দিয়ে খাইয়ে দিয়েছে । পোস্টমোর্টাম রিপোর্ট বলছে যখন মাংস খাওয়া হয়েছে তখনও তাদের ছাত্র নেতা জীবিত ছিল । এতো নৃশংহ কেউ হতে পারে ভাবতেও পারছে না ওরা ।

বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ব্যাপক ধর পাকড় চলছে । কেউ শান্তিতে নেই । নীরিহ ছাত্ররা ভয়ে ভয়ে ক্যাম্পাসে ঘুরে বেড়াচ্ছে ।

এমন একটা আন্দোলনের সময় দেখা গেল বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্জন এক পুকুর পাড়ে এক যুগল আপন মনে বসে আছে । তাদের চোখে মুখে একটা তৃপ্তির ছায়া । অনেক দিন পরে তাজা মাংস তাদের পেটে পড়েছে । যদিও তারা প্রতিজ্ঞা করেছিলো নর মাংস তারা আর খাবে না । বাজার থেকে গরু খাসী মাংস খেয়েই দিন কাটাবে । কিন্তু সেই প্রতিজ্ঞা আর রাখতে পারলো কই । অবশ্য এই প্রতিজ্ঞা ভঙ্গের কারণে দুজনের কেউই ঠিক দুঃখিত নয় ।

নতুন গল্পের লিংক সরাসরি পেতে হোয়াটসএপ গ্রুপে জনেন করুন । গ্রুপ জয়েন লিংক পাবেন এই ওয়েব সাইটের একেবারে নিচে ডান দিকে ।

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 4.7 / 5. Vote count: 40

No votes so far! Be the first to rate this post.

About অপু তানভীর

আমি অতি ভাল একজন ছেলে।

View all posts by অপু তানভীর →