ছাত্র নেতা হাবিব ভাই

oputanvir
4.7
(44)

ঘড়ির দিকে আরেকবার তাকাল হাবিব । এই নিে মোট সাতবার তাকালো সে । মনের ভেতরে একটা অস্থিরতা অনুভব করছে সে । অবশ্য এই ব্যাপারটা এই প্রথম নয় আগেও হয়েছে । যখনই সে এই রকম একটা কাজের জন্য তার এই নির্দিষ্ট ঘরে এসেছে তখনই সে নিজের ভেতরে একটা অস্থির বোধ করেছে ।
অথচ অন্যান্য সব কাজে তার মত সুস্থির মানুষ খুজে পাওয়া কঠিন । এমনি এমনি তো সে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নেতা না । সবাই তাকে বড় ভাই বলে ডাকে । তার বয়স এখন প্রায় পয়তাল্লিশ । এই বয়সে এসেও সে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রনেতার আসনটি ঠিক ঠিক ধরে রেখেছেন । হালকা পাতলা গরনের হাবিবুল্লাহর কথাই পুরো বিশ্ববিদ্যালয় চলে । তার ইচ্ছের বিরুদ্ধে এখানে কেউ কিছু করতে পারে না ।

তবে একটা ব্যাপারে এখনও সে খানিকটা অস্থিরবোধ করে । যখন কোন মেয়েকে তার ঘরে আসতে বলা হয়, সেই মেয়ে আসার আগ পর্যন্ত একটা অস্থির বোধ করে সে । তবে একবার যখন তার এই ঘরের ভেতরে ঢুকে পড়ে তখন অবশ্য হাবিব আবারও তার আগের ফর্মে ফিরে যায় । তখন আবার সব কিছু তার নিয়ন্ত্রনে ।

হাবির ঘড়ির দিকে অষ্টম বারের মত তাকালো । মেয়েটাকে এই ঠিকানাতে আসতে বলা হয়েছে ঠিক রাত দশটার সময় । আজকে রাতের পুরো সময়টা এখানেই থাকার ইচ্ছে ওর । হাবিবের বউ সুমনা অবশ্য একটু রাগ করছিলো । তবে পার্টির কাজ আছে বলে সুমানাকে ম্যানেজ করে নিয়েছে । সুমানা অবশ্য খুবই ডেডিকেটেড বউ । স্বামীর ক্যারিয়ার সম্পর্কে সে খুবই সচেতন । তাই পার্টির কোন কাজে সে মানা করে না ।

আজকে প্রায় এক মাস পরে হাবিব তার এই বাড়িতে আসছে । এই বাড়িটা শহর থেকে একটু দুরে । বসিলার দিকে । এখনও এই এলাকাটা অতোটা উন্নত হয় নি । বাড়িঘরে গিজগিজ করে নি । তাই শান্তিমত এখানে অনেক কিছু করা যায় । এখানে যে সে আসে এটা খুব কাছের আর বিশ্বাসী লোক ছাড়া জানে না । বাড়ির সামনে দুইজন দলের কর্মী রয়েছে । আর কেউ নেই বাড়িতে । ওরা পুরো সমটা পাহারা দিবে । ওদের কাছে অটোমেটিক অস্ত্র রয়েছে । যে কোন ঝামেলা সামাল দিতে পারবে । হাবির টিটেবিলের উপরে রাখা স্কচের বোতল থেকে একটু মদিরা ঢেলে নিলো । হাবিবের অবশ্য মাতাল অবস্থায় মেয়েদের সাথে বিছানাতে যাওয়া একদম পছন্দ না । ওর মতে এসব কাজ করতে হবে পূর্ণ সজাক থেকে । কাজ শেষ করে তারপর একটু মদ পেতে চালান দেওয়া যায় ।

অস্থিরতা দুর করতে হাবিব এবারের মেয়েটার কথা চিন্তা করতে লাগলো । মেয়েটাকে সে দেখেছে বেশ কদিন আগেই । কাটা কাটা সুন্দরী মেয়েটা । সবে মাত্র সেকেন্ড ইয়ারে পড়ে । সব থেকে বড় কথা হচ্ছে মেয়েটা ওরই দলের এক কর্মীর গার্লফ্রেন্ড । এই ব্যাপারটাই সহজ করে দিলো সব কিছু । ছেলেটাকে ডেকে সোজা বলে দিলো যে মেয়েটাকে নিয়ে যাতে হাজির হয় এখানে । হাবিব জানে তার হুকুমের বাইরে যাওয়ার সাহস কারো নেই । নয়তো এই ক্যাম্পাসেই আর থাকা হবে না । আজ সকালেই ছেলেটা মেসেজ করে জানিয়েছে যে সে আজকে আসবে রাত দশটায় ।

আরেক গ্লাস ঢালতে যাবে তখনই দরজায় টোকা পরলো । হাবিবের অস্থিরতা চরমে পৌছালো সাথে সাথে । অনুভব করলো পুরো শরীরে একটা টান টান উত্তেজনা বোধ করছে । একটু নিজেকে শান্ত করে বলল, দরজা খোলা । ভেতরে এসো ।

তখনই দরজা খুলে গেল । হাবিব চোখ বড় বড় দেখতে পেল মেয়েটাকে । নাম সম্ভবত আইরিন । মেয়েটার পোশাকের দিকে তাকিয়ে চোখ একটু বড় বড় হয়ে গেল । আইরিন আজকে বেশ আটোসাটো পোশাক পরেছে । শরীরের সাথে আস্টেপিস্টে রয়েছে । প্রতিটি ভাজ যেন বের হয়ে গেছে ।

আইরিন একটু হাসলো । তারপর দরজাটা ভেজিয়ে দিয়ে সোজা হেটে এসে বসলো তার সামনের সোফাতে । হাবিবের একটু ইচ্ছে বলে যে ওর পাশে এসে বসে । কিন্তু বলল না । মেয়েটার চোখে কোন ভয় কিংবা দ্বিধা নেই । যখনই কোন মেয়েকে সে এখানে নিয়ে আসে সবার চোখেই কেমন একটা ভয় কিংবা দ্বিধা থাকে । কেউ কেউ কাঁদতে থাকে । তবে তারা জানে যে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে হলে এখানে তাকে আসতেই হবে । এছাড়া অন্য আর কোন উপায় নেই । নিরুপায় অসহায় মেয়েদের চেহারা দেখতে হাবিবের ভাল লাগে । কিন্তু এই মেয়েটার ভেতরে সেসব কিছুই নেই ।

কিছু কিছু মেয়ে অবশ্য নিজ থেকে এসে সব কিছু বিলিয়ে দেয় একটা পদ পাওয়ার জন্য । সেই মেয়েদের চেহারাতেও একটা অসহায়ত্বের ভাব থাকে । তবে এই মেয়ের চেহারে তেমন কিছুই নেই । হাবির কিছু জিজ্ঞেস করতে যাবে তার আগেই আইরিন বলল, আপনার বয়স কত?
একটু যেন থতমত খেল হাবিব । তারপর বলল, মানে?
-মানে আপনার বয়স কত?
হাবির সরু চোখে তাকালো আইরিনের দিকে । মেয়েটার চোখে একটা কৌতুকের হাসি । হাবির একটু অবাক হল । বলল, কেন বয়স জেনে কী করবে?
-না আমি শুনেছি যে আপনার দম বেশি না । বেশি সময় ধরে রাখতে পারেন না ।
হাবিব অনুভব করলো ওর কান গরম হয়ে গেছে । এমন কথা ওকে কোন মেয়ে বলেছে বলে ওর মনে পড়ে না । এমন কথা বলার সাহস কারো নেই । আর এই মেয়ের এতো সাহস এল কোথা থেকে !
-কী বললি তুই ?
-এই তুই তোকারি না । ভাল ভাবে কথা বলুন ।
এবার রাগ ধরে রাখতে পারলো না হাবিব । আজকে সে এই মেয়েটাকে আচ্ছা একটা শিক্ষা দিবে ।

উঠে দাড়াতেই ধুক করে একটা আওয়াজ শুনতে পেল বাইরে থেকে । তারপর আরেকটা । স্পষ্টই কেউ মাটিতে পরে গেছে । দুইজন । আইরিনের দিকে তাকিয়ে সে দেখতে পেল মেয়েটা এবার এক পায়ের উপর আরেক পা দিয়ে বসেছে । যেন কিছু একটা দেখার অপেক্ষায় । তখনি দরজা খুলে গেল । হাবিব দেখতে পেল । একটা ছেলে ঘরে ঢুকেছে । এবং এই ছেলেটা আর কেউ নয়, তার দলের কর্মী । এই মেয়েটার বয়ফ্রেন্ড । তার উপর হুকুম ছিল যে মেয়েটাকে পৌছে দিয়েই সে চলে যাবে। অথচ এখানে আবার ঢুকেছে !

-তুই এখানে কী করছিস? তোকে না চলে যেতে বলা হয়েছে ।
ছেলেটা সেদিকে খেয়াল না দিয়ে তাকালো তার গার্লফ্রেন্ডের দিকে । চোখে চোখে তারা কী যেন বলল ।
হাবিব আবারও চিৎকার করে বলল, তোর সাহস তো কম না ? তোকে ….

কথাটা সে শেষ করতে পারলো না । ছেলেটা দুই লাফে একেবারে তার সামনে চলে এল । তারপর হাবিবকে তীব্র বিস্ময়ের ভেতরে ফেলে দিয়ে কষে একটা চড় লাগালো তার বাম গাল আর কান বরাবর ।

যখন হাবিব প্রথম প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়য়ে ভর্তি হয়েছিলো তখন সরাসরি মারামারিতে যোগদান করতো । তবে নেতা হয়ে যাওয়ার পরে এসবের থেকে দুরে থেকেছে । সব সময় কেবল নির্দেশ দিয়েছে । সেই হিসাবে ২ো/২৫ বছর পরে কেউ তার শরীরে প্রথম বারের মত আঘাত করলো । তাই এই আঘাতের ব্যাথার চেয়েও বিস্ময়টা ছিল বেশি । তবে যখন দ্বিতীয়বার একই ভাবে চড়টা এসে লাগলো তখন সে অনুভব করতে পারলো যে ছেলেটার শরীরে অসুরে শক্তি । তার মাথার পুরোটা যেন একেবারে নড়ে উঠেছে । ঝিমঝিম করছে ।
তিননম্বর চড়ে সে সোফার উপর বসে পড়লো । এবং চার নম্বর চড়ে সোফার উপর শুয়ে পড়লো ।

মাথার ভেতরে সব কিছু কেমন ভোঁভোঁ করছে । ঠিক মত যেন চিন্তা করতে পারছে না । এমন তো হওয়ার কথা না । এতো সাহস তো হওয়ার কথা না কারো ।
যখন সে সোফা থেকে মাথা তুলতে চাইলো তখন বুঝতে পালরো সে ঠিক শক্তি পাচ্ছেনা । তবে এই সমস্যার সমাধান হয়ে গেল সাথে সাথেই । ছেলেটা নিজেই তাকে তুলে ধরে বসালো । এবং আবারও ঠিক একই স্থানে চড় এসে লাগলো । পড়ে যাচ্ছিলো আবার তবে আগেই তাকে ধরে ফেলল ছেলেটা । আবারও চড় ।

এক সময়ে হাবিব চড়ের সংখ্যা গোনা বাদ দিয়ে দিল । তার আর হিসাব নেই কিছু । একের পর এক চড় কেবল আসতেই । হাবিবের ছোট খাটো গালটা কেবল সেই চড় খেয়েই চলেছে । একটা সময়ে হাবিবের আর কিছুই মনে হল না ।

চড় থামলে সে আবারও কোন মতে শোফাতে উঠার চেষ্টা করলো । মাথার ভেতরে তীব্র ভার হয়ে জড় হয়েছে । কিছু যেন চিন্তা করতে পারছে না । অনুভব করতে পারছে তার বাম গাল ফুলে উঠেছে । বাম সাইডের দাঁত মুখে তীব্র একটা ব্যাথা অনুভব করছে সে । তখনই চোখ মেয়েটার দিকে । মেয়েটার হাতে মোবাইল । এবং বলে দেওয়ার অপেক্ষা রাখে না যে মেয়েটা সব টুকু ভিডিও করেছে ।

হাবিব কিছু যেন বলতে চাইলো তবে বলতে পারলো না । মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না ।

আইরিন বলল, শখ মিটেছে ?

বলেই খিলখিল করে হেসে উঠলো । হাবিব ডান কান দিয়ে সেই শব্দ খুব নিষ্ঠুর শোনালো । বাম কান দিয়ে সে কোন আওয়াজ শুনতে পাচ্ছে না । এই কান সম্ভত আর কখনই ঠিক অনুভব হবে । তবে একটা জিনিস সে কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছে না । সামনে দাড়ালো এই ছেলেটার শরীর স্বাস্থ্য ভাল কোন সন্দেহ নেই । তবে সে যেভাবে তাকে চড় মারছে এবং এ চড়ের যে ওজন সেটা মেলাতে পারছে না । এই মানুষের শরীরে এতো শক্তি এলো কোথা থেকে । এতো শক্তি তো আসার কথা না । কোন স্বাভাবিক মানুষের শরীরে এতো শক্তি থাকে না ।

ছেলেটা আবারও কাছে আসতে গেলে আইরিন পেছন থেকে বলল, আহ অভ্র ! থাকুক । যথেষ্ঠ হয়েছে । নিজের খাদ্য নিয়ে এতো খেলা করতে আছে !

হাবিরের মনে যে ঠিক শুনলো না । নাকি ভুল শুনলো !
খাদ্য বলেছে মেয়েটা !
ওকে খাদ্য বলছে ।

হাবির কিছু সময় কিছুই চিন্তা করতে পারলো না । কিছুই তার মাথায় ঢুকছে না । হাবিব দেখতে পেল দরজা খুলে ছেলেটি বাইরে চলে গেল । এবং ফিরে এল একটু পরেই । তবে একা আসে নি । সাথে করে তার বিশ্বস্ত দুই কর্মীকে নিয়ে এসেছে টানতে টানতে । তাদের ঠিক তার সামনেই রাখা হল । দুইজনই চোখ বন্ধ করে আছে । জ্ঞান নেই কারো !

হাবিব কিছু চিন্তা করতে পারছে না । বারবার মনে হচ্ছে ও দুঃস্বপ্ন দেখছে । এমনই হবে । নয়তো এটা কোন ভাবেই সত্য হওয়ার কথা না । ওর সাথে এমন ঘটনা ঘটার কথা না ।

পরিশিষ্টঃ
দুইদিন পর ।
পুরো বিশ্ববিদ্যালে তীব্র আন্দোলন শুরু হয়েছে । তাদের সবার প্রিয় ছাত্রনেতাকে কে বা কারা নৃৃশংস ভাবে খুন করেছে । তবে কেবল নৃশংস বলল কম বলা হবে । পুরো শরীরের অর্ধেক মাংস কোন পশুকে দিয়ে খাইয়ে দিয়েছে । পোস্টমোর্টাম রিপোর্ট বলছে যখন মাংস খাওয়া হয়েছে তখনও তাদের ছাত্র নেতা জীবিত ছিল । এতো নৃশংহ কেউ হতে পারে ভাবতেও পারছে না ওরা ।

বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ব্যাপক ধর পাকড় চলছে । কেউ শান্তিতে নেই । নীরিহ ছাত্ররা ভয়ে ভয়ে ক্যাম্পাসে ঘুরে বেড়াচ্ছে ।

এমন একটা আন্দোলনের সময় দেখা গেল বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্জন এক পুকুর পাড়ে এক যুগল আপন মনে বসে আছে । তাদের চোখে মুখে একটা তৃপ্তির ছায়া । অনেক দিন পরে তাজা মাংস তাদের পেটে পড়েছে । যদিও তারা প্রতিজ্ঞা করেছিলো নর মাংস তারা আর খাবে না । বাজার থেকে গরু খাসী মাংস খেয়েই দিন কাটাবে । কিন্তু সেই প্রতিজ্ঞা আর রাখতে পারলো কই । অবশ্য এই প্রতিজ্ঞা ভঙ্গের কারণে দুজনের কেউই ঠিক দুঃখিত নয় ।

নতুন গল্পের লিংক সরাসরি পেতে হোয়াটসএপ গ্রুপে জনেন করুন । গ্রুপ জয়েন লিংক পাবেন এই ওয়েব সাইটের একেবারে নিচে ডান দিকে ।

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 4.7 / 5. Vote count: 44

No votes so far! Be the first to rate this post.


Discover more from অপু তানভীর

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

About অপু তানভীর

আমি অতি ভাল একজন ছেলে।

View all posts by অপু তানভীর →