যদি এখন কাউকে প্রশ্ন করা হয় দেশের সব থেকে জনপ্রিয় মেয়েকে?
না, কোন অভিনেত্রী কিংবা গায়িকা নয়, সেটা হচ্ছে নিকিতা আহমেদ৷ আমাদের দেশের ইতিহাসের সব থেকে কম বয়সী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। এর আগে কেউ এতো অল্প বয়সে এমপি পর্যন্ত হয় নি, সেখানে নিকিতা মন্ত্রী হয়ে গেছে। অবাক হওয়ার মত ব্যাপার৷ ইন্টারনেটে নিকিতাকে নিয়ে অনেক রকম গল্প প্রচলিত আছে। অনেক বড় বড় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের ছেলে, ব্যবসায়ীরা নিকিতাকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে বসে আছে কিন্তু নিকিতা কাউকে পাত্তা দেয় নি৷ তার একই বক্তব্য হচ্ছে আগে যে কাজে নেমেছে সেটা আগে ঠিক মত করে নিক, তারপর অন্য কিছু।
নিকিতা আহমেদের জীবনটা বড় বৈচিত্র্যময়। মাত্র ২২ বছরের অনার্স শেষ করে। তার পরের বছরই বিসিএস সিভিল সার্ভিসে যুক্ত হয় কিন্তু সেখানে গিয়ে লক্ষ্য করে চাইলেও আসলে সে কিছু করতে পারছে না৷ তার পথ বন্ধ। নানান দিক থেকে নানান বাঁধা। এতো বাঁধার মধ্যে নিকিতা নিজের কাজ ঠিক মত করতে পারছিলো না। অন্যদিজে নিকিতার বাবা আজাহার আহমেদ তখন বিরোধী দলের বড় নেতা। বাঁধাটা তাই একটু বেশিই ছিল ওর জন্য। একটা সময় সেটা অসহ্যকর হয়ে ওঠে ওর জন্য।
নিকিতা সিভিল সার্ভিস ছেড়ে দিয়ে পলিটিক্সে জয়েন করলো। বাপকে ছাড়িয়ে যেতে তার সময় লাগলো না। তার পার্টির প্রধান নিকিতার মধ্যকার পটেনশিয়ালিটিকে ধরতেও ভুল করলো না। সে তা প্রমানও করে দিল। যখন ক্ষমতাসীন দল তাদের উপর জোর জবরদস্তি করছিল নিকিতা সেগুলোর প্রতিবাদ করলো সবার সামনে থেকে। মাঠ পর্যায়ে নেমে কাজ করতে থাকে একটানা। টাইম লাইনে আসতেও সময় লাগলো না। পরের টার্মে যখন তারা ক্ষমতায় এল সবাইকে অবাক করে দিয়ে নিকিতা আহমেদ দায়িত্ব পেল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রনালয়ের। অনেকে ভেবেছিল নিকিতার মত কম বয়সী কেউ এই দায়িত্ব ঠিক ভাবে পালন করতে পারবে না। কিন্তু সেই ধারনাকেও ভুল প্রমাণিত করে শক্ত হাতে মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করে চলল৷ ধীরে ধীরে নিকিতা আহমেদের সুনাম ছড়িয়ে পড়তে লাগলো। যে বদনাম স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ছিল সেটা আস্তে আস্তে কমতে লাগলো । সে সবার পরিচিত মুখ হতে লাগলো। ধীরে ধীরে সে ওয়ান্ডারওম্যান হতে শুরু করলো। অবিবাহিতো পুরুষদের ক্রাশে পরিনত লাগলো সে!
আজকে সেই মেয়ে আমার চোখের সামনে বসে আছে। আমি প্রথমে নিকিতাকে চিনতে পারি নি তার কারন হচ্ছে আমার মাথার মধ্যে এই ধারনা আসেই নি যে নিকিতার মত আমার সামনে আসতে পারে। দ্বিতীয় কারন হচ্ছে নিকিতাকে যখনই টিভিতে দেখেছি, সব সময় দেখেছি পরিপাটি শাড়িতে এবং সব সময় ওর চোখে একটা কালো সানগ্লাস থাকে আর চুল থাকে খোলা।
নিকিতাকে এভাবে শক্ত করে চুল বাঁধা আর টিশার্ট জিন্সে আমি একদমই চিনতে পারি নি। আমি তাই অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম নিকিতার দিকে তাকিয়ে রইলাম। আমার মাথার ভেতরে কিছুই ঢুকছে না। আমি নিকিতার দিকে তাকিয়ে বললাম
-আমি আসলে ঠিক বুঝতে পারছি না। আমি কি কোন ভুল কিংবা অন্যায় করেছি যে আমাকে এভাবে ধরে আনা হল?
প্রশ্নটা করেই মনে হল, এটা কি বললাম! এমন প্রশ্ন করা কি ঠিক হল? নিকিতা বলল, অন্যায় তো করেছেনই!
-কি অন্যায়?
-আপনি কি জানেন না একজন সুন্দরী মেয়ের প্রতি প্রোপার এটেনশন না দেওয়া টা অন্যায়। আপনার কি মনে আছে গত মাসে আমি আপনাদের ইউনিভার্সিটিতে গিয়েছিলাম একটা ফাংসনে। মনে আছে?
আমি বললাম
-জি মনে আছে।
-আপনাদের ডিপার্টমেন্টের প্রোগ্রাম ছিল। মনে আছে?
-জি আছে।
-এটাও মনে আছে যে যখন আমি সেখানে হাজির হলাম সব অবিবাহিত শিক্ষকরা তো বটেই বিবাহিত প্রফেসরেরা পর্যন্ত আমার দিকে পূর্ন মনযোগ দিচ্ছিলো। মনে আছে?
আমি কি বলবো বুঝতে পারলাম না। নিকিতা বলল, কেবল একজন বাদে।
আর আমি জানি সেই একজন হচ্ছি আমি। আমি ঐদিন সত্যিই নিকিতার আশে পাশে যায় নি। কেন যাই নি, এটা অবশ্য আমি নিজেও জানি না। কেবল কাছে গিয়ে হ্যাংলামি করতে ইচ্ছে হয়নি। আরেকটা কারন অবশ্য আছে। আমি খুব ভাল করেই জানতাম যে এই মেয়ের আগে পিছে ঘুরে কোন লাভ হবে না৷ খামোখা সময় নষ্ট করার মানে নেই। এর থেকে ফিজিক্স ডিপার্টমেন্টের রিদি ম্যাডামের পিছনে ঘুরে লাভ আছে। আমার মনযোগ আপাতত সেই দিকেই।
নিকিতা বলল, কাজটা আপনি মোটেই ঠিক করেন নি৷ এর শাস্তি তো আপনাকে পেতেই হবে।
আমি খানিকটা ঢোক গিলে বললাম, কি শাস্তি?
সেটা রাতে বলবো। আপাতত আসুন বাইরে যাওয়া যাক। আকাশে মেঘ জমছে। বৃষ্টি আসবে সম্ভবত। এই বৃষ্টিতে ভিজে মজা আছে৷
আমি কেবল অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম৷ নিকিতা পুরো দেশের সামনে যে ইমেজ তৈরি করে রেখেছে সেটার সাথে এই নিকিতার কোন মিলই খুজে পাচ্ছি না।
কি হচ্ছে এসব?
Comments are closed.