বার্ধক্য আমাদের জন্য অবশ্যম্ভাবী । আমাদের জন্মের শুরু থেকে আমরা দেখে এসেছি মানুষের জন্ম হয় সে শিশু থেকে যুবক হয় তারপর এক সময় বুড়ো হয়ে মারা যায় । এমনটা হয়ে আসছে বলা যায় সৃষ্টির শুরু থেকে । এর ব্যতিক্রম আসলে আজও দেখা যায় নি । ব্যায়াম খাদ্যাভ্যাস কিংবা আরও অন্যান্য পদ্ধতি প্রয়োগ করে অনেকে হয়তো এই বার্ধক্যের গতিটা খানিকটা কমিয়ে দিতে পারেন অল্প কিছু সময়ের জন্য তবে সেটা কখনই থেমে থাকে নি । আর সেটাকে উল্টো পথে চলনা করাটা তো সম্ভবনাও অলীক কল্পনাই রয়ে গেছে । ব্যাপারটা একবার ভাবুন তো আপনি যুবক থেকে বুড়ো হয়ে গেলেন তারপর একটা ল্যাবে গিয়ে হাজির হলেন । সেখানে আপনাকে আবার ৬০ বছরের বুড়ো থেকে ২৫ বছরের যুবকে পরিনত করে দিল । আপনি আবার নতুন করে জীবন শুরু করলেন !
না এই ব্যাপারটা এখনও সম্ভব হয় নি । তবে এমনটা যে সম্ভব হবে না এমনটা এখন আর জোর দিয়ে বলা যায় না। Harvard Medical School এর প্রফেসর ডেভিড সিনক্লায়ার (David Sinclair উচ্চারন ঠিক লিখলাম তো) এবং তার টিম এমনই এক আভাস দিয়েছেন । তারা সফল ভাবে ইদুরের বয়স কমাতে সক্ষম হয়েছেন । হত বারো জানুয়ারি এটা নিয়ে সেল পত্রিকাতে পেপার প্রকাশিত হয়েছে ।
মানুষের বয়স আসলে কেন বাড়ে? বিজ্ঞানী প্রাথমিক ভাবে মনে করতেন যে কোষের ডিএনএর মিউটেশন আসলে এই বয়স বৃদ্ধির প্রধান কারণ । সময়ের সাথে সাথে এই ডিএনএর মিউটেশনের ফলেই কোষে বার্ধক্য দেখা দেয় এবং এই মিউটেশনের ফলে কোষ তার স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলে এবং ফলশ্রুতিতে এক সময়ে কোষের মৃত্যু হয় । কিন্তু এই ডিএনএ মিউটেশনের থিউরী অনেকের কাছেই গ্রহনযোগ্য নয় কারণ পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে অনেক বৃদ্ধ মানুষের কোষে ডিএনএ মিউটেশনের অস্তিত্ব পাওয়া যায় নি । আবার এমন অনেক উদাহরন পাওয়া গেছে যে কোন প্রাণী কিংবা মানুষের কোষে প্রচুর পরিমান মিউটেশনের চিহ্ন পাওয়া যাওয়ার পরেও তাদের দ্রুত বার্থক্য আসে নি । অর্থ্যাৎ মিউটেশন হলেই যে বয়স বাড়বে, এমনটা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না ।
সিনক্লায়ার তাই এই মিউটেশন নয় অন্য কিছুর উপর ফোকাস দিলেন । সেটা হচ্ছে এপিজিনোম । মানুষের দেহের সকল ডিএনএর ব্লু প্রিন্ট আসলে একই । তাহলে প্রশ্ন আসতে পারে যে তাহলে আমাদের মস্তিষ্কের কোষ আর পায়ের কোষ তো এক রকম না । যদি সব ডিএনএ একই হয় তাহলে তো একই রকম হওয়ার কথা ! এখানেই আসলে এপিজিনমের কথা । এই এপিজিনোমই হচ্ছে সেই ফ্যাক্টর যা আমাদের প্রতিটি কোষ আলাদা আলাদা নির্দেশ দিয়ে আলাদা আলাদা কোষ তৈরিতে সাহায্য করে । এটাকে আরও খুব সহজ ভাষায় বুঝতে হলে আমরা সুতা আর কাপড়ের সাথে তুলনা করতে পারি । শুরুর দিকে সকল সুতা আসলে একই থাকে । সেই সুতা থেকেই নানান ধরনের কাপড় তৈরি হয়, সেই কাপড় থেকে নানান পোষাক তৈরি হয় সেটার বুননের ফলে । এখানেও ব্যাপারটা সেই রকম । সকল একজনের দেহের সকল ডিএনএ ব্লপ্রিন্ট আসলে একই রকম । কিন্তু এই এপিজিমন নানান রকম নির্দেশ নিয়ে নানান ধরনের কোষ গঠন করে ।
সিনক্লায়ার এবং তার টিম তাদের গবেষণা থেকে এই সিদ্ধান্তে পৌছিয়েছেন যে ডিএনএ মিউটেশন নয় বরং এই এপিজিনোমিক নির্দেশ দেওয়ার অভাবে কোষের বয়সের পরিবর্তন হয় । এপিজিনোমের এই নির্দিষ্ট এবং জটিল নির্দেশনার অভাবেই কোষ তার কাজের ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে এবং বার্ধক্যের দিকে এগিয়ে যায় । এখন যদি আবার সেই নির্দেশনা ফিরিয়ে আনা যায় তাহলে কোষও আগের অবস্থানে ফিরে যাবে । সিনক্লায়ারের মত সময়ের সাথে কোষের মিউটেশন কিংবা ড্যামেজের কারণে মানুষের বয়স বাড়ে না বরং এই এপিজিনমের জটিল নির্দেশনা হারিয়ে যাওয়ার ফলে বয়স বাড়ে । তার মতে যদি কোষের জ্যামেজের ফলে বয়স বাড়তো তাহলে কোন ভাবেই সেটাকে আর ফিরিয়ে আনা সম্ভব হত না । কিন্তু সে এবং তার টিম একদিকে যেমন ইদুরের বয়সে খুব দ্রুত বাড়িতে দিতে সক্ষম হয়েছে একই একই ভাবে সেই বয়সকে কমিয়ে দিতেই সক্ষম হয়েছে । বৃদ্ধ ইদুরের প্রায় অন্ধ চোখ আবার ঠিক করে ফেলা সম্ভব হয়েছে ।
এটা নিশ্চিত ভাবেই একটা যুগান্তকারী আবিস্কার । তবে এটা কেবল মাত্র প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে । সামনের বছর গুলোতে হয়তো আরও বিস্তারিত ভাবে এই সম্পর্কে গবেষণা শুরু হবে । এবং যদি সফল হয় তাহলে মানুষ হয়তো অন্য এক পর্যায়ে পৌছে যাবে । তখন হয়তো সত্যিই মানুষ বার্ধক্যকে জয় করে ফেলবে ।
লেটস ওয়েট এন্ড সি !
আরও বিস্তারিত পড়তে