বার্ধক্যকে জয় করা কি সম্ভব হবে ?

oputanvir
5
(4)

বার্ধক্য আমাদের জন্য অবশ্যম্ভাবী । আমাদের জন্মের শুরু থেকে আমরা দেখে এসেছি মানুষের জন্ম হয় সে শিশু থেকে যুবক হয় তারপর এক সময় বুড়ো হয়ে মারা যায় । এমনটা হয়ে আসছে বলা যায় সৃষ্টির শুরু থেকে । এর ব্যতিক্রম আসলে আজও দেখা যায় নি । ব্যায়াম খাদ্যাভ্যাস কিংবা আরও অন্যান্য পদ্ধতি প্রয়োগ করে অনেকে হয়তো এই বার্ধক্যের গতিটা খানিকটা কমিয়ে দিতে পারেন অল্প কিছু সময়ের জন্য তবে সেটা কখনই থেমে থাকে নি । আর সেটাকে উল্টো পথে চলনা করাটা তো সম্ভবনাও অলীক কল্পনাই রয়ে গেছে । ব্যাপারটা একবার ভাবুন তো আপনি যুবক থেকে বুড়ো হয়ে গেলেন তারপর একটা ল্যাবে গিয়ে হাজির হলেন । সেখানে আপনাকে আবার ৬০ বছরের বুড়ো থেকে ২৫ বছরের যুবকে পরিনত করে দিল । আপনি আবার নতুন করে জীবন শুরু করলেন !

না এই ব্যাপারটা এখনও সম্ভব হয় নি । তবে এমনটা যে সম্ভব হবে না এমনটা এখন আর জোর দিয়ে বলা যায় না। হাভার্ড মেডিকেল স্কুলের প্রফেসর ডেভিড সিনক্লায়ার এবং তার টিম এমনই এক আভাস দিয়েছেন । তারা সফল ভাবে ইদুরের বয়স কমাতে সক্ষম হয়েছেন । হত বারো জানুয়ারি এটা নিয়ে সেল পত্রিকাতে পেপার প্রকাশিত হয়েছে ।

মানুষের বয়স আসলে কেন বাড়ে? বিজ্ঞানী প্রাথমিক ভাবে মনে করতেন যে কোষের ডিএনএর মিউটেশন আসলে এই বয়স বৃদ্ধির প্রধান কারণ । সময়ের সাথে সাথে এই ডিএনএর মিউটেশনের ফলেই কোষে বার্ধক্য দেখা দেয় এবং এই মিউটেশনের ফলে কোষ তার স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলে এবং ফলশ্রুতিতে এক সময়ে কোষের মৃত্যু হয় । কিন্তু এই ডিএনএ মিউটেশনের থিউরী অনেকের কাছেই গ্রহনযোগ্য নয় কারণ পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে অনেক বৃদ্ধ মানুষের কোষে ডিএনএ মিউটেশনের অস্তিত্ব পাওয়া যায় নি । আবার এমন অনেক উদাহরন পাওয়া গেছে যে কোন প্রাণী কিংবা মানুষের কোষে প্রচুর পরিমান মিউটেশনের চিহ্ন পাওয়া যাওয়ার পরেও তাদের দ্রুত বার্থক্য আসে নি । অর্থ্যাৎ মিউটেশন হলেই যে বয়স বাড়বে, এমনটা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না ।

সিনক্লায়ার তাই এই মিউটেশন নয় অন্য কিছুর উপর ফোকাস দিলেন । সেটা হচ্ছে এপিজিনোম । মানুষের দেহের সকল ডিএনএর ব্লু প্রিন্ট আসলে একই । তাহলে প্রশ্ন আসতে পারে যে তাহলে আমাদের মস্তিষ্কের কোষ আর পায়ের কোষ তো এক রকম না । যদি সব ডিএনএ একই হয় তাহলে তো একই রকম হওয়ার কথা ! এখানেই আসলে এপিজিনমের কথা । এই এপিজিনোমই হচ্ছে সেই ফ্যাক্টর যা আমাদের প্রতিটি কোষ আলাদা আলাদা নির্দেশ দিয়ে আলাদা আলাদা কোষ তৈরিতে সাহায্য করে । এটাকে আরও খুব সহজ ভাষায় বুঝতে হলে আমরা সুতা আর কাপড়ের সাথে তুলনা করতে পারি । শুরুর দিকে সকল সুতা আসলে একই থাকে । সেই সুতা থেকেই নানান ধরনের কাপড় তৈরি হয়, সেই কাপড় থেকে নানান পোষাক তৈরি হয় সেটার বুননের ফলে । এখানেও ব্যাপারটা সেই রকম । সকল একজনের দেহের সকল ডিএনএ ব্লপ্রিন্ট আসলে একই রকম । কিন্তু এই এপিজিমন নানান রকম নির্দেশ নিয়ে নানান ধরনের কোষ গঠন করে ।

সিনক্লায়ার এবং তার টিম তাদের গবেষণা থেকে এই সিদ্ধান্তে পৌছিয়েছেন যে ডিএনএ মিউটেশন নয় বরং এই এপিজিনোমিক নির্দেশ দেওয়ার অভাবে কোষের বয়সের পরিবর্তন হয় । এপিজিনোমের এই নির্দিষ্ট এবং জটিল নির্দেশনার অভাবেই কোষ তার কাজের ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে এবং বার্ধক্যের দিকে এগিয়ে যায় । এখন যদি আবার সেই নির্দেশনা ফিরিয়ে আনা যায় তাহলে কোষও আগের অবস্থানে ফিরে যাবে । সিনক্লায়ারের মত সময়ের সাথে কোষের মিউটেশন কিংবা ড্যামেজের কারণে মানুষের বয়স বাড়ে না বরং এই এপিজিনমের জটিল নির্দেশনা হারিয়ে যাওয়ার ফলে বয়স বাড়ে । তার মতে যদি কোষের ড্যামেজের ফলে বয়স বাড়তো তাহলে কোন ভাবেই সেটাকে আর ফিরিয়ে আনা সম্ভব হত না । কিন্তু সে এবং তার টিম একদিকে যেমন ইদুরের বয়সে খুব দ্রুত বাড়িতে দিতে সক্ষম হয়েছে একই একই ভাবে সেই বয়সকে কমিয়ে দিতেই সক্ষম হয়েছে । বৃদ্ধ ইদুরের প্রায় অন্ধ চোখ আবার ঠিক করে ফেলা সম্ভব হয়েছে ।

এটা নিশ্চিত ভাবেই একটা যুগান্তকারী আবিস্কার । তবে এটা কেবল মাত্র প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে । সামনের বছর গুলোতে হয়তো আরও বিস্তারিত ভাবে এই সম্পর্কে গবেষণা শুরু হবে । এবং যদি সফল হয় তাহলে মানুষ হয়তো অন্য এক পর্যায়ে পৌছে যাবে । তখন হয়তো সত্যিই মানুষ বার্ধক্যকে জয় করে ফেলবে ।
লেটস ওয়েট এন্ড সি !

টাইম পত্রিকা সিএনএন হেলথ

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 5 / 5. Vote count: 4

No votes so far! Be the first to rate this post.

About অপু তানভীর

আমি অতি ভাল একজন ছেলে।

View all posts by অপু তানভীর →