আরিবাহ

oputanvir
4.6
(69)

ক্লাসরুমের দরজায় আবিরাহকে দেখেই আমার চোখ কপাল উঠলো । কোন কারণ যদিও নেই তার পরেও আমার মনে হল যে মেয়েটা আমার খোজেই এখানে এসেছে । আমার ক্লাস রুমের দরজায় এসে আবিরাহ ক্লাসের ভেতরে কাউকে যেন খুজতে লাগলো । এবং কয়েক মুহুর্ত পরেই ওর চোখ পড়লো আমার দিকে । আমি তখনই টের পেয়ে গেলাম যে মেয়েটা আমাকেই খুজছে । তবে তখনই মেয়েটার কাছে যাওয়া হল না । স্যার ক্লাস রুমে ঢুকলো । আমার ক্লাস ফাঁকি দিয়ে বাইরে বের হওয়ার কোন উপায়ও ছিল না । কারণ মিডপরীক্ষা ছিল । সেটা দিতে হল । তবে আমার মন পড়েছিল আরিবাহর দিকে । মেয়েটা আমার খোজে কেন এল?
গতদিন ওভাবে মেয়েটাকে সরাসরি ঐ কথা বলা মোটেই ঠিক হয় নি সম্ভবত । আমি তো ভেবেছিলাম মেয়েটা হয়তো আর কোন দিন আমার মুখই দেখবে না । কিন্তু আজকে একেবারে এখানে চলে এল?
আমার আমাকে মাইর টাইর দিবে না তো ! শুনেছি সুন্দর মেয়েদের অনেক বড় ভাই থাকে ক্যাম্পাসে । ওদের যদি বলে যে আমি ওকে জ্বালাতন করছে তাহলেই হয়েছে । হয়তো আরিবাহ এখন এসেছে আমাকে চিনিয়ে দিতে । বাইরে বের হলেই মাইর শুরু হবে !

মিশ্র অনুভূতি নিয়ে পরীক্ষা শেষ করলাম । তারপরই ক্লাস রুম থেকে বের হতেই দেখতে পেলাম আরিবাহকে । আমাদের ডিপার্টমেন্টের বিল্ডিংয়ের সামনে বসায় জায়গা রয়েছে । সেখানে আরিবাহ চুপ করে বসে রয়েছে ।
আরিবাহকে বসে থাকতে দেখে কেন জানি মনে হল মেয়েটা আমাকে মাইর খাওয়ানোর জন্য এখানে অপেক্ষা করছে না । অন্য কোন ব্যাপার আছে । আমি সামনে গিয়ে দাড়াতেই আরিবাহ চোখ তুলে তাকালো । তারপর বলল, এতো সময় ধরে বসে আছি !
আমি খানিকটা কৈফিয়ৎ দেওয়ার মত করে বললাম, পরীক্ষা চলছিলো । ক্লাস হলে বের হয়ে আসতাম ।
-হয়েছে । আযুহাত দিতে হবে না । চল এখন!
-কোথায়?
-ভাল বয়ফ্রেন্ড হওয়ার প্রথম শর্ত হচ্ছে প্রশ্ন করতে হয় না । গার্লফ্রেন্ড যা বলবে শুনতে হবে !

আমি কিছু সময় খানিকটা অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম আবিরাহর দিকে । ব্যাপার কি এতোই সহজ ? বললাম আর হয়ে গেল !

অবশ্য গত সপ্তাহ আমি খানিকটা সাহস নিয়ে এগিয়ে গিয়ে আবিরাহর দিকে । মেয়েটাকে আমি চিনি আমি প্রায় দুই বছরের উপরে । যদিও আমাদের ডিপার্টমেন্ট আলাদা তবে ওকে আমি প্রায়ই দেখি । এতো ভাল লাগে যে বলার উপায় নেই । আমারই ক্লাসের কয়েকজনের সাহায্য মেয়েটার সব খোজ খবর নিয়েছিলাম । খোজ খবর নিয়েই খানিকটা দমে গিয়েছিলাম । খোজ নিয়ে জেনেছিলাম যে মেয়েটার বাবার বেশ টাকা পয়সা । একটা গার্মেন্ট ফ্যাক্টরি আছে নাকি । গাড়িতে করে ভার্সিটিতে আসে । তবে এই মেয়ের কোন বয়ফ্রেন্ড আছে কিনা সেটা কেউ জানে না । আমি আবিরাহ ফেসবুক ইনস্টাগ্রামে ঢুকে গেলাম । সেখানে চোখ রেখে চললাম সব সময় । আমারও মনে হল না যে আবিরাহর কোন বয়ফ্রেন্ড রয়েছে ।

তারপর প্রায় দুই বছর অপেক্ষা করার পরে গট সপ্তাহে বুকে সাহস নিয়ে আবিরাহকে মনের কথা বলে দিলাম । বলে দিলাম বলতে বলেই দৌড়ে পালিয়ে এলাম । কেন এমন করলাম সেটা আমি নিজেও জানি না । কেবল মনে হল যে বলা দরকার । মনের কথা না বললে আমি শান্তি পাবো না । কিন্তু বলেই মনে হল বলাটা মোটেও ঠিক হয় নি । আর পালিয়ে আসাটা তো মোটেও ঠিক হয় নি । মেয়েটা নিশ্চিত ওর বান্ধবীদের কাছে আমাকে নিয়ে হাসাহাসি করেছে অনেক । আর আজকে আবিরাহ একাহনে এসে হাজির !

আমি আর কোন প্রশ্ন না করে ওর পেছন পেছন হাটা শুরু করলাম । দেখলাম ও আমাকে নিয়ে ওর গাড়িতে উঠলো । এই গাড়ি আমার বড় পরিচিত । এমন কী এই গাড়ির নম্বর ড্রাইভার কে সেটাও খুব ভাল করেই জানি ।

গাড়ি চলল বেশ কিছু সময় । গাড়ির ভেতরে আমি খানিকটা সংকুচিত হয়েই ছিলাম । আসলে আমার তখনও ঠিক বিশ্বাস হচ্ছিলো না আরিবাহ আমার ঠিক পাশেই বসে আছে আর আমি ওর গাড়িতে বসে রয়েছি । এমন কিছু সত্যিই যে আমার সাথে ঘটবে সেটা আমি ভাবতেও পারি নি ।

গাড়ি থামলো ধানমণ্ডির একটা রেস্টরেন্টের সামনে । তবে এটা প্রধান রাস্তার কোন রেস্টুরেন্ট না । ভেতরের দিকে একটা ছোট ক্যাফে । আমি যখন ভেতরে ঢুকলাম আমার মনে হল যে আরিবাহ এখানে প্রায়ই আসে । ভেতরের সব কিছুই ওর চেনা !
প্রথম প্রশ্নটা যে মাথায় এল সেটা হচ্ছে কার সাথে আসে?
বন্ধু নাকি বয়ফ্রেন্ড !
এমন হতে পারে যে এখন ওর বন্ধুরা কিংবা বয়ফ্রেন্ড মিলে আমাকে এখানে প্যাঁদানী দিবে !
দেওয়াটা নতুন কিছু না !

তবে এমন কিছু হল না । আমাক কেউ ঘিরে ধরলো না । কোনার দিকের একটা টেবিলে আমরা বসলাম । কফির অর্ডার দেওয়া হল !

আমি চুপচাপ চুমুক দিতে লাগলাম। আরিবাহ এতো সময়ে কোন কথা বলছিলো না । সে আমার দিকে তাকিয়ে ছিল চুপচাপ । একটা সময়ে মুখ খুলল। বলল, তোমাকে আমার পছন্দ হয়েছে । তবে আমার বয়ফ্রেন্ড হওয়া কিন্তু প্যারার ব্যাপার!
-কী রকম?
-মানে আমি অনেক ডিমান্ডিং ! অনেক কথা শুনতে ।
-এটা স্বাভাবিক ব্যাপার !
-আচ্ছা খুব অভিজ্ঞতা আছে দেখছি । কটা প্রেম করেছো জীবনে?
আমি একটু চিন্তা করলাম । তারপর বললাম, তোমাকে নিয়ে নাকি তোমাকে ছাড়া?
-আমাকে ধরেই বল !
-তোমাকে ধরলো একটা হবে !

আমি এমন ভাবে মনে মনে হিসাব করার ভাব করছিলাম যেন আমি কতই না সংখ্যাটা বলব। আরিবাহ হেসে ফেলল । তারপরই বলা যায় আমাদের প্রেম শুরু হয়ে গেল । যদিও আরিবাহ বলেছিলো সে আমাকে খুব প্যারা দিবে তবে সে তেমন কিছুই করলো না । ক্যাম্পাসে নিয়মিত আমাদের দেখা হত । গল্প করতাম । ঘুরতাম । ক্যাম্পাস বন্ধ থাকলে ক্যাফে এসে গল্প করতাম । মাস ছয়েক যাওয়ার খেয়াল করলাম যে একটা দিনও এমন যায় নি যেদিন আরিবাহর সাথে আমার দেখা হয় নি । কিন্তু এরপর এমন একদিন এল !

আরিবাহ কয়েক দিন থেকে বলছিলো যে ওদের ক্লাস থেকে বান্দারবান যাওয়ার প্লান করছে । কদিন পরে সেটা ঠিক হয়ে গেল । আমার একবার মনে হল যে আমিও ওদের সাথে যাই । প্রায় চারদিনের একটা প্লান ওদের । তবে আমার কপাল আবারও খাপার । আমার সেমিস্টার ফাইনালের তারিখ পড়ে গেল । ওদের যাওয়ার একদিন পরে তাই আমার কোন ভাবেই যাওয়ার উপায় ছিল না । যাওয়ার দিন আমি বাস্টস্ট্যান্ড গিয়ে হাজির হলাম ওকে বিদায় দিতে ।
একেবারে বাসে ওঠার আগে আমার কী যেন হল আমি ওকে জড়িয়ে ধরলাম আলতো করে । ব্যাপারটা সম্ভবত আরিবাহ নিজেও আশা করে নি । তারপর ওর কপালে একটু ছোট করে চুমু খেলাম ।

আরিবাহ বাসে ওঠে গেলে ওর জানালার পাশে এসে দাড়ালাম । তারপর যখন বাসটা ছেড়ে দিলো আমি খানিকটা সেই বাসের সাথে সাথে দৌরানো শুরু করলম । কেন করলাম আমি নিজেই জানি না । বারবার কেবল মনে হচ্ছিলো যেন আরও একটু বেশি সময় ধরে যদি ওকে দেখা যায় ।
ও জানালার দিয়ে মুখ বের করে আমার দিকে তাকিয়ে ছিল খানিকটা অবাক চোখে । যত দুর পর্যন্ত একে অন্যকে দেখতে পারি তত সময় । একটা সময় অবশ্য গাড়িটা একেবারে চোখের আলাড়ে চলে গেল । আমি তখনই খানিকটা সময় ধরে দৌড়ে চললাম । কেন চললাম আমি জানি না । বুকের ভেতরে কেমন একটা শূন্যতা অনুভব করছিলাম সেটা আমি নিজেই বলতে পারবো না ।

বাসায় ফিরে এসে সারা রাত একফোটাও ঘুম এল ন. পরের দিন পরীক্ষা ছিল । তাই উঠে পড়াশোনা করতে শুরু করলাম যদিও কী পড়ছিলাম সেটা আমি নিজেই জানি না ।

পরের দিন সকালে শেষবারের মত আবিরাহর সাথে কথা হল ফোনে । আমাকে জানালো যে এরপরে নাকি আর নেটওয়ার্ক থাকবে না । তাই যেন আমি চিন্তা না করি । আর আমি ওভাবে কেন দৌড়ালাম যদি পড়ে যেতাম -এটা নিয়ে কিছু সময় বকাবকি করলো । বলল যে ঢাকায় ফিরে আমাকে মজা দেখাবে !

চারটা দিন যে কেমন করে গেল আমি জানি না । আমার পুরো পৃথিবী যেন বদলে গেল । আমি নিজেও বুঝতে পারি নি যে আরিবাহ আমার জীবনের এতো গুরুত্বপূর্ন কেউ হয়ে উঠেছে । আমি শুরু থেকেি ভেবেছিলাম যে ও আমার সাথে টাইমপাস মূলক কিছু করছে । কদিন পরে মন উঠে গেলে চলে যাবে !

চারদিন পরে আরিবাহ ফিরে এল । ক্যাম্পাসে দেখতে পেলাম ওকে । তাকিয়ে দেখি চোখ মুখে কেমন যেন হয়ে গেছে ।
আমি সামনে যেতেই কোন কথা বলল না । চুপচাপ বসে রইলো । আমি অনেক কথা বললাম । এই চারদিনের সব কথা যেন একবারে বলে ফেলতে চাইলাম । হঠাৎ আরিবাহ উঠে দাড়ালো । আমার হাত ধরে আমাকে ওর সাথে যাওয়ার জন্য বলল । আমি কোন কথা না বলে পেছন পেছন চললাম । আমাদের ডিপার্টমেন্টের চার তলাতে নিয়ে গেল আমাকে । সবার ক্লাস শেষ অনেক আগেই । এখন এগুলো একদম ফাঁকা । একটা ক্লাস রুমে ঢুকেই আরিবা আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো । এতো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো যে আমি ওর বুকের স্পন্দন পর্যন্ত অনুভব করতে পারছিলাম ।
কোন মতে বললাম, কী হল ?
আরিবাহ কোন জবাব দিল না । জড়িয়ে ধরেই রইলো । তারপর আমাকে সব থেকে অবাক করে দিয়ে আমাকে চুমু খেল ও । আলতো করে নয়, একেবারে যেন আমার ঠোঁট ছিড়ে খেয়ে ফেলবে এমন ভাবে ! যদি ক্লাস রুম না হয় ঘর হত তাহলে আজকে হয়তো আরও অন্য কিছু করে ফেলতো ।
অনেকটা সময় নিল আরিবাহ নিজেকে শান্ত করার জন্য । আরিবাহ একটু শান্ত হলে আমি বললাম, কী হয়েছে ? ট্যুরে কিছু হয়েছে?
-জানি না কী হয়েছে ।
-তাহলে ? এমন অস্থির কেন?
আরিবাহ একটু চুপ করে রইলো । তারপর বলল, ঐদিন ওভাবে জড়িয়ে ধরলে না, জানি না কী যে হল, তীব্র একটা অনুভূতি এসে জড় হল মনে ! এমনটা কোন দিন হয় নি এর আগে । তোমাকে পছন্দ করি কিন্তু ঐদিন আসলে আমি অনুভব করলাম যে তোমাকে ভালবাসি । তারপর তুমি যখন বাসের সাথে সাথে দৌড়াচ্ছিলে আমার মনে হচ্ছিলো যেন তখনই দরজা জানলা দিয়ে লাফ ফিয়ে নেমে যাই তোমার কাছে । আর কিছু সময় যদি তোমাকে দৌড়াতে দেখতাম তাহলে হয় নেমে যেতাম !
আমি কী বলব বুঝতে পারলাম না । আরিবাহ বলল, আমি পুরো ট্যুরে আমি অন্য কিছু দেখি নি কিছু করি কিচ্ছু না । কেবল তোমার কথা ভেবেছি । আমার চোখের সামনে কেবল তোমার ঐ চেহারাটা ভেসে ছিল !

আমরা একে অন্যের দিকে তাকিয়ে রইলাম কিছু সময় । বুঝতে পারছিলাম আমাদের দুজনের ভেতরেই একটা বড় পরিবর্তন হয়ে এসেছে । আমাদের দুজনের কেউ ই হয়তো এই সম্পর্কটা আমরা খুব বেশি গুরুত্ব দেই নি । কিন্তু এখন আমরা জানি যে আমরা একে অন্যের কত কাছে চলে এসেছি । একে অন্যের কাছে কত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছি ।

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 4.6 / 5. Vote count: 69

No votes so far! Be the first to rate this post.


Discover more from অপু তানভীর

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

About অপু তানভীর

আমি অতি ভাল একজন ছেলে।

View all posts by অপু তানভীর →