018
পরের কয়েকটা দিন চারুর জীবন আবারও আগের ট্রেকে ফিরে এল । ডনের ডেরা থেকে ফিরে প্রথম দুই এক দিন চারুর মনে এই ভয় ছিল যে ডন বুঝি এখনই তাকে আবার ধরে নিয়ে যাবে । তার ডেরা থেকে এভাবে তাকেই অপদ্বস্ত করে বের হয়ে আসাটা সে সম্ভবত এতো সহজে ভুলে যাবে না । কিন্তু এক সপ্তাহ পার হয়ে যাওয়ার পরেও যখন কিছুই হল না তক্ষন চারুর মনের ভয় কেটে গেল । সে আবার আগের মত স্বাভাবিক ভাবেই চলাফেরা শুরু করলো ।
চারু ফেরার পরদিনই আকিব এসেছিল ওর সাথে দেখা করার জন্য । চারু তার সাথে দেখা করে নি । কেবল একটা বাক্যই বলে ফোন রেখে দিয়েছে যে চারুর এখন আর কারো সাথে কোন প্রকার কথা বলার ইচ্ছে নেই । সে এখন আর কোণ ঝামেলা কাঁধে নিবে না । এরপর আকিবকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই সে ফোন কেটে দেয় এবং ফোন বন্ধ করে দেয় । তারপর আকিব আর ওর সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে নি । কয়েকটা দিন চারু আছে শান্তিমত । নিজের জগতে যেমন কয়েকদিন আগেও ছিল । ক্লাস, হল, টিউশনি আর ফরিদ মামার চায়ের দোকান । কিন্তু চারু যতই চাক না কেন ঝামেলা ওর থেকে খুব বেশি দিন দূরে থাকে না । সব সময় কিছু না কিছু ঝামেলা বেঁধেই যায় । এই ঝামেলা এমন দিক দিয়ে এসে হাজির হল সেটা চারু কোন দিন চিন্তাও করে নি ।
ক্লাস শেষ করে চারু প্রতিদিনের মত টিউশনিতে গিয়ে হাজির হল চারুর টিউশনিটা ধানমন্ডি ২৭ নম্বরে অবস্থিত । প্রতিদিনের মত আজকেও হাজির হল পড়াতে । কিন্তু যখনই ঘরে প্রবেশের জন্য যখন কলিংবেল বাজাতে যাবে তখনই দেখলো যে দরজাটা খোলা । একটু অবাক না হয়ে পারলো না চারু । পিউয়ের মা অর্থাৎ চারুর ছাত্রীর মা খুবই সাবধানী নারী। সব দিকে তার কড়া নজর । তিনি কখনই এইভাবে দরজা খোলা রাখেন না । এমন কী চারু পড়ানোর সময়েও অনেক বার দেখেছে যে তিনি রুম থেকে বের হয়ে দেখেছেন দরজা খোলা নাকি বন্ধ । কোন কারণ নেই কিন্তু তারপরেও মনে হল যে কোন কিছু যেন ঠিক নেই ।
দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকলো চারু । তারপর দরজা টা বন্ধ করলো । ড্রয়িং রুমে কেউ নেই । পিউয়ের নাম ধরে ডাক দিতে যাবে তখনই মনে হল শোবার ঘর থেকে কান্নার আওয়াজ ভেসে আসছে । মৃদু পায়ে এগিয়ে গেল সেদিকে । দরজার কাছে আসতেই দেখতে পেল পিউয়ের মা আফসানাকে । বিছানার উপর উপুর হয়ে শুয়ে আছে । শরীর কাঁপছে একটু একটু । চারু বুঝতে পারলো আফসানা কাঁদছে । নিজের কাছে খানিকটা দ্বিধান্বিত বোধ করলো । এভাবে সামনে গিয়ে কিছু জিজ্ঞেস করা ঠিক হবে কিনা সে বুঝতে পারছে না । কিন্তু আশে পাশে আর কাউকে সে দেখতে পাচ্ছে না । এমন কি পিউকেও কোথাও দেখা যাচ্ছে না । এই সময়ে পিউয়ের বাবা বাসায় থাকে না । আফসানা আর পিউ থাকে বাসায় । চারু ঠিক বুঝতে পারলো না যে সে কী করবে । চলেও যেতে পারছে না এভাবে আফসানাকে একা রেখে । একটু আওয়াজ শুনে আফসানা চোখ তুলে তাকালো । চারুকে দরজার কাছে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে উঠে বসল । চারু একটু এগিয়ে গেল ঘরের ভেতরে । তারপর বলল, কী হয়েছে আপু?
এই কথাতে যেন আফসানার কান্নার বাঁধ ভাঙ্গলো । সে উঠে এসে সরাসরি চারুকে জড়িয়ে ধরলো । তারপর একভাবে কাঁদতে লাগলো । কান্না যেন আর থামছেই না । কাঁদতে কাঁদতেই যা বলল তার সারমর্ম হচ্ছে পিউকে স্কুল নিয়ে আসতে ড্রাইভার গিয়েছিল । ড্রাইভারের সাথে পিউ বের হয়েছিল স্কুল থেকে । কিন্তু ঠিক যখন পিউ গাড়িতে উঠতে যাবে তখনই কেউ ড্রাইভারের মাথায় আঘাত করে পিউকে নিয়ে গাড়ি করে পালিয়ে গেছে । তখন থেকে পিউ নিখোজ । পিউয়ের বাবা গেছে থানাতে । আফসানা কী করবে সে বুঝতে পারছে না ।
আফসানা কথাটা যেন ঠিক মত হজম করতে পারলো না । পিউ মাত্র ক্লাস থ্রিতে পড়ে । এই টুকু বয়স মেয়েটার । এইভাবে কেউ ওকে ধরে নিয়ে যাবে ভাবতেই পারছে না ।
-আমার মেয়েটা চারু ! আমার এতোটুকু মেয়েটা !
-আপু আপনি চিন্তা করবেন না । পুলিশ ঠিক ঠিক খুজে বের করবে পিউকে !
কথা টা চারুর নিজেরই কেন জানি ঠিক বিশ্বাস হল না । এভাবে পুলিশ কি আসলেই খুজে বের করতে পারবে চারুকে ? যদি না পরে ?
মুক্তিপনের টাকা দেওয়ার ক্ষমতা পিউয়ের বাবার আছে সেটা চারু জানে কিন্তু মুক্তি নিয়েও যে পিউকে ঠিক ঠাক ভাবে ফেরত দিবে এর কোন নিশ্চয়তা কি আছে? পিউ যদি না ফিরে আসে ?
কথাটা চারু ভাবতেই পারলো না । কোণ ভাবেই ভাবতে পারলো না ।
চারু বলল, আপু আপনি চিন্তা করবেন না । পিউয়ের কিছু হবে না । আমি ওর কিছু হতে দিবো না ।
শেষ লাইনটা এতো জোর দিয়ে ও কিভাবে বলল সেটা ও নিজেই জানে না । আফসানার পাশে এখন কারো থাকার দরকার তবে চারু জানে এর থেকে গুরুত্বপূর্ণ কাজ ওকে করতে হবে ।
019
সিএনজিটা যখন বিশাল বিল্ডিংটার সামনে থামলো তখন ঘড়িতে সন্ধ্যা সাতটা বাজে । ঢাকা শহরের জ্যামের কারণে এই পথ টুকু আসতে প্রায় ঘন্টা দুয়েক লেগে গেল । পুরো রাস্তায় সে আকিবকে বেশ কয়েকবার ফোন করার চেষ্টা করেছে কিন্তু আকিব ফোনটা ধরে নি । এক সময়ে একটা মেসেজ এসে পৌছালো যে ও জরূরী মিটিংয়ে উপস্থিত । এখন ফোন ধরতে পারবে না । মিটিং থেকে বের হয়ে ফোন দিবে ।
এই সময়ই চারুর হাতে নেই । ওর চোখের সামনে কেবল পিউয়ের চেহারাটা ভেসে বেড়াচ্ছে । অন্য কিছু কাজ করছে না । কেবল মনে হচ্ছে পিউ এখন কেমন আছে? নিশ্চয়ই ভয় পেয়ে আছে !
মুল গেটের কাছে আসতেই দেখতে পেল গার্ডকে । বন্দুক হাতে দাঁড়িয়ে আছে সামনে । চারু জানে এর ভেতরে আরও অন্তত ২০ জন্য লোক একই ভাবে বন্দুক হাতে দাঁড়িয়ে আছে । অবশ্য চারুর কাছে এই লোক গুলোকে এড়িয়ে ভেতরে ঢোকাটা খুব বেশি কষ্টের না । কিন্তু সেটা সে করলো না । সরাসরি বন্ধুক ধারীর কাছে গিয়ে বলল, কল ইয়োর বস । বল যে চারুলতা চৌধুরী এসেছে ।
লোকটা কিছু সময় সরু চোখে তাকিয়ে রইলো । চোখে একটা অবজ্ঞার দৃষ্টি । চারুর এখন এসবের সময় নেই । সে সোজা তাকালো লোকটার চোখ বরাবর । সাথে আথেই লোকটা টলে উঠলো ।
চারু আর কিছু না বলে নিজেই দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করলো । ওকে এভাবে গেট খুলে ঢুকতে দেখেই পাঁচজন গার্ড উঠে দাড়ালো । ওদের হাতে আপনা আপনি উঠে এসেছে অটোমেটিক রাইফেল ।
চারু সোজা রয়ে দাঁড়িয়ে রইলো কিছু সময় । এক সাথে পাঁচজনকে নিয়ন্ত্রন করা চারুর পক্ষে সম্ভব না কোণ ভাবেই । কী করবে সে মাথায় এল না । কারো মুখে কোন কথা নেই । ওরা কেবল বন্দুক তাক করে তাকিয়ে রয়েছে ওর দিকে । এমন সময় কারো ফোন বেজে উঠলো । পাঁচ জনের একজন নিজের পকেট থেকে ফোন বের করে কানে দিল । এবং তার একটু পরেই সবাই বন্দুক নামিয়ে নিল । চারুর দিকে তাকিয়ে বলল, ইউ মে পাস !
চারু আর কথা বাড়ালো না । মুল ফটক থেকে মূল বিল্ডিংয়ের দিকে পা বাড়ালো । ওকে এখন দ্রুত যেতে হবে । পিউকে রক্ষা করতে হবে যে কোন ভাবে ।
লিফটের কাছে এসে বোতাম চাপতে যাবে তখনই জেরিনকে দেখতে এল । মেয়েটা নিচে নেমে এসেছে । ওর দিকে তাকিয়ে বলল, আমার সাথে আসুন ।
চারু আর কথা বাড়ালো না । জেরিনের পেছন পেছন অন্য আরেকটা লিফটে উঠলো । আরিয়ান আহমেদের কেবিন একেবারে টপ ফ্লোরে !
-মিস চারুলতা চৌধুরী ! আমাদের আবার দেখা হল !
-জ্বী আবার দেখা হল !
-আমি তো বলেছিলাম যে আমার তরফ থেকে কোন ভাবে তোমাকে আর ডিস্টার্ব করা হবে না ।
-আমি সেটার জন্য আসি নি।
-আচ্ছা তাহলে তুমি তোমার দরকারে এসেছ ?
-হ্যা ।
-আমি কেন তোমাকে সাহায্য করবো শুনি? তুমি তো আমাকে সাহায্য করো নি ।
-কারণ আপনি যা চাচ্ছেন তা আমার পক্ষে করা সম্ভব ছিল না । আমি আপনাকে আগেই বলেছি । দেখুন আমার হাতে একদম সময় নেই । আমার ছাত্রীর বয়স মাত্র আট । মেয়েটাকে কেউ কিডন্যাপ করেছে । স্কুল থেকে নিয়ে গেছে ।
-আমি কেন তোমাকে সাহায্য করবো বল। প্রতিদিন কত মানুষ কিডন্যাপ হচ্ছে । এসব দেখার দায়িত্ব আমার তো না । পুলিশ আছে । তোমার ঐ পুলিশ বন্ধুর কাছে যাও ।
-সে আমার বন্ধু না ।
-একই ব্যাপার । পুলিশ জনগনের বন্ধু । জানো না? আর তোমার সাথে তো তার আলাদা সম্পর্কে ! তোমাকে উদ্ধার করতে দরকার পরলে সে আমার এখানে জোর করে প্রবেশ করতে যাচ্ছিলো !
চারুর এই সব কথা বার্তা মোটেই ভাল লাগছে না । নিজের ভেতরে একটা তীব্র রাগ অনুভব করছে । এখনই ইচ্ছে করছে এই বেটা ডনকে একটা চরম শিক্ষা দিতে । চারুর মনের কথা যেন পড়ে ফেলল আরিয়ান । বলল, চাইলে কন্তু তুমি নিজের ক্ষ্মমতা ব্যবহার করে আমাকে দিয়ে কাজ করিয়ে নিতে পারো । পারো না?
-দেখুন আমি নিজের এই অভিশাপ যখন তখন ব্যবহার করি না ।
-একটু আগেই তো করলে । আমার গার্ডকে স্টোন করে দিয়ে গেট দিয়ে ভেতরে ঢুকলে ।
চারু কিছু বলতে গিয়েও বলল না । এটা চারুর ক্ষমতার কানাকড়িও না । চারু বুঝলো যে এখন মোটেই মাথা গরম করার সময় না । সামনে বসা এই মানুষটা এই দেশের সব থেকে ক্ষমতাধর মানুষদের একজন । তার সাথে রাগ দেখিয়ে লাভ নেই । গতবার এই মানুষটাকে রাগিয়ে দিয়েই সে তার হাত থেকে মুক্তি পেয়েছিল কিন্তু এখন পরিস্থিত ভিন্ন । এখন দরকার ওর নিজের । চারু খুব ভাল করেই জানে যে এই সময়ে পিউকে রক্ষা করতে গেলে এই মানুষটার সাহায্য তার লাগবেই । পুলিশ কোন ভাবেই এই লোকটার মত এতো দ্রুত পিউকে খুজে বের করতে পারবে না ।
020
মানুষের জীবনে এমন অনেক সময় আসে যখন চোখের সামনে সব কিছু ঘটে যায় অথচ সেই সব ঘটনার উপর মানুষের কোন নিয়ন্ত্রন থাকে না । চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া তাদের আর কোন কিছু করার থাকে না । বর্তমান সময়েও চারুর ঠিক একই কথা মনে হচ্ছে । সময় অতিবাহিত হওয়ার সাথে সাথে চারুর চিন্তার পরিমান বাড়ছে । ওর কেবল মনে হচ্ছে পিউয়ের সাথে খারাপ কিছু হয়ে যাবে ।
সে আরিয়ান আহমেদের দিকে তাকিয়ে মিনতির সুরে বলল, প্লিজ আমাকে সাহায্য করুন । আপনি ছাড়া আর কেউ আমাকে সাহায্য করতে পারবে না ।
আরিয়ান আহমেদ কিছু সময় তাকিয়ে রইলো চারুর দিকে । তারপর গতদিন তো খুব টিটকারি করছিলে? আমাকে খুব উপহাস করলে ? আমি তোমার সামনে খুব ক্ষুদ্র একজন মানুষ । আর আজকে সেই ক্ষুদ্র মানুষের সামনেই হাত পাতছো?
-প্লিজ আমাকে সাহায্য করুন । প্লিজ !
আরিয়ান কিছু যেন বলতে গেল । কিন্তু বলল না । টেবিলের উপরে রাখা একটা বেলে চাপ দিল । জেরিন ঘরে ঢুকলো সাথে সাথেই ।
-জ্বী স্যার ।
-আজগরকে ডাক দাও ।
-জ্বী স্যার ।
জেরিন বের হয়ে গেল সাথে সাথে । আরিয়ান আহমেদ চারুর দিকে তাকিয়ে বলল, বস । আমি কিছু প্রোমিজ করছি না । তবে খুজে দেখা যায় কে তুলেছে মেয়েটাকে !
চারুর চোখ দিয়ে পানি বের হয়ে গিয়েছিলো । ক্রমেই চারু অস্তির হয়ে উঠছে । কিছুতেই মনকে শান্ত করতে পারছে না সে । চারুর দিকে একটা টিস্যু পেপার এগিয়ে দিল আরিয়ান । তারপর বলল, এটা দিয়ে চোখ মুখে নাও । তুমি আমার প্রাণ বাঁচিয়েছিলো মনে আছে, সেটার ফেভার আমি ফেরৎ দিচ্ছি । কিন্তু এরপর কিছু হলে কিন্তু ফ্রি কিছু করবো না । আমার কাছ থেকে কিছু চাইলে তার বিনিময়ে কিছু আদাই করে নিবো। এখন শান্ত হয়ে বস ।
মিনিট দুয়েক পরেই একজন লোক এসে ঢুকলো ঘরের ভেতরে । প্রথমে আরিয়ান তারপর চারুর দিকে তাকালো । আরিয়ান বলল, আমাদের ধানমণ্ডি এক কার এলাকার ভেতরে পড়ে?
-স্যার জসিমের।
-আজকে ঐ এলাকা থেকে একটা নয় বছরের মেয়েকে তুলে নেওয়া হয়েছে ? কে তুলেছে খোজ লাগাও ।
-জ্বী ।
-আমাদের কেউ কি কাজটা করেছে?
-আমার জানা মতে না । আমি খোজ নিচ্ছি ।
লোকটা যেভাবে এসেছিলো সেভাবেই চলে গেল । জেরিনের দিকে তাকিয়ে আরিয়ান বলল, মিস চারুর জন্য কফি নিয়ে এসো । তাকে দেখে খুব স্ট্রেসড মনে হচ্ছে ।
চারু সাথে সাথেই বলল, না ধন্যবাদ । আমার কিছু লাগবে না ।
-আরে খাও খাও । আমার বাসায় এসেছো নিজ থেকে । কিছু তো খেতেই হবে । আর এখানে বসে থাকা ছাড়া আর কোন কাজ নেই । আছে কি?
কয়েক মিনিট পরে কফি চলে এল । চারু যদিও চায়ের ভক্ত তবে এখন কফি খেলে হয়তো খানিকটা মাথা ঠান্ডা হবে । কফিতে চুমুক দিল সে । সাথে সাথেই একটা স্বাদ ওকে আচ্ছন্ন করে ফেলল । যদি এখন এই টেনশন কাজ না করতো তাহলে হয়তো কফিটা সে খুব ভাল করে উপভোগ করতে পারতো । তবে কফি চারুর মন থেকে চিন্তার পরিমানটা কমিয়ে দিল একটু ।
আরও ঘন্টা দুয়েক পরে আজগর নামের লোকটাকে আবার দেখা গেল । ঘরে ঢুকতেই চারু লোকটার দিকে জিজ্ঞাসু চোখে তাকিয়ে রইলো । আরিয়ান নিজের কাজে ব্যস্ত ছিল । আজগর বলল, স্যার মেয়েটার খোজ পাওয়া গেছে ।
আরিয়ান নিজের ল্যাপটপ থেকে চোখ না তুলেই বলল, পাওয়া গেছে?
-হ্যা । তবে সে আমাদের কেউ না । এমন কি অন্য কোন দলের লোকও না ।
-তাহলে কে লোকটা?
-তা আমরা এখনও জানতে পারি নি । সে ড্রাইভারকে ঠিক আঘাতও করে নি । কেবল মাথায় হাত রেখেছে । তাতেই সে মাথা ঘুরে পরে গেছে । তারপর গাড়ি চালিয়ে সে বসিলা মোহাম্মাদপুর পর্যন্ত এসেছে । তারপর গাড়িটা রাস্তার পাশে রেখে মেয়েটাকে নিয়ে বের হয়েছে । আমাদের সিসিটিভি ফুটেজ চেক করে আমরা দেখেছি যে মেয়েটা খুব শান্ত ভাবে লোকটা সাথে হেটেছে । মেয়েটা যত ছোটই হোক এভাবে একজন অপরিচিত মানুষের সাথে এতো শান্ত ভাবে হাটার কথা না ।
-তারপর?
-এটাই সব থেকে অবাক করা ব্যাপার। লোকটা মেয়েটাকে নিয়ে একটা অটো রিক্সাতে উঠেছে । এবং বসিলা ব্রিজ করেছে । ব্রিজ পার হয়ে নেমে গেছে অটোরিক্সা থেকে । এরপরের সিসিটিভিতে তদের আর দেখা যায় নি ।
-তারমানে এই দুই সিসিটিভির ভেতরেই মেয়েটাকে কোথায় লুকিয়ে রেখেছিল?
-হ্যা । একটা পুরানো কার গ্যারাজ । সেখানেই মেয়েটাকে চুপচাপ বসিয়ে রেখেছিল। মেয়েটাও একদম চুপ করে বসে ছিল । আমাদের লোক মেয়েটাকে স্পর্শ করতেই মেয়েটা অজ্ঞান হয়ে পড়ে যায় । এখনও অজ্ঞানই আছে । আমরা তাকে এখানে নিয়ে আসছি । তবে…
আরিয়ান এবার নিজের ল্যাপটপ থেকে মাথা তুলে তাকালো । অবশ্য চারু অন্য কিছু ভাবছে না । পিউকে পাওয়া গেছে এটা সব থেকে আনন্দের ব্যাপার । আরিয়ান বলল, তবে…।
আজগর বলল, স্যার আমরা গ্যারাজের দেয়ালে একটা লেখা পেয়েছি । ছবি এসেছে আমাদের হাতে । ছবিটা আপনাকে পাঠিয়েছি । দেখুন ।
চারু দেখতে পেল আরিয়ানের চোখ কেমন কুচকে গেল । আরিয়ান পিসির স্ক্রিন থেকে চোখ তুলে চারুর দিকে তাকালো । চারুকে কিছু বলতে হল না । চারু নিজেই এগিয়ে গেল আরিয়ানের দিকে । স্ক্রিনের দিকে তাকাতেই চোখ বড় হয়ে গেল । গ্যারেজের দেয়ালেীকটা লাইন লেখা ।
চারুলতা, অবশেষে তোমাকে খুজে পেয়েছি ।
021
চারু দৌড়াচ্ছে । খালি পায়ে শক্ত মাটিতে সে দৌড়ে চলেছে । সামনের পথটা অন্ধকার । কোন সময় এটা চারু সেটা জানে না । রাতের যে কোন সময় হতে পারে । পথে কোন আলো নেই তবে পথ দেখতে তার কোন কষ্ট হচ্ছে না । চারিদিকে সুনশান নিরবতা । কেবল চারুর নিঃশ্বাসের আওয়াজ শোনা যাচ্ছে আর চারুর দৌড়ানোর আওয়াজ । আর কোন আওয়াজ নেই । চারু কেন দৌড়াচ্ছে সেটা চারু মনে করতে পারলো না । তবে সে নিজের দৌড়ানো থামাতে সাহস পেল না । কেবল তার মনে হল যে খুব ভয়ংকর কিছু তার পেছনে আসছে । তার এখন দৌড়াতে হবে ।
কিন্তু একটা সময়ে চারুর মনে হল যে সে আর দৌড়াতে পারছে না । তাকে থামতে হবে । তবে চারু থামতে পারছে না । চারু দৌড়ে চলেছে । দৌড়াতে দৌড়াতেই চারু কিছু একটাতে পা উল্টে পড়ে গেল । আর সাথে সাথে ঘুম ভেঙ্গে জেগে উঠলো । নিজের বিছানাতে উঠে বসলো সে । ঘুম থেকে উঠেই জোরে জোরে দম নিতে থাকলো । এতো সময় ধরে স্বপ্নের ভেতরে যে সে দৌড়াচ্ছিলো সেটা এখন বাস্তবে অনুভব করছে । শরীর কেমন যেন ক্লান্ত মনে হচ্ছে । সত্যিই মনে হচ্ছে অনেক দৌড়াচ্ছে । স্বপ্নটা খুব বেশি বাস্তব ছিল ওর কাছে । এমন কি সেই ভয়টাও সে অনুভব করতে পারছে ।
এরকম স্বপ্ন সে আগেও দেখেছে । তবে আজকে স্বপ্নটা চারুর কাছে খুব বেশি বাস্তব মনে হল ! এতো বাস্তব এর আগে কোন দিন মনে হয় নি ।
বিছানা ছেড়ে উঠে বসলো সে । টেবিলের উপরে রাখা বোতল থেকে পানি ঢেলে খেল সে । ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো প্রায় তিনটা বেজে গেছে । এই সময়ে সাধারনত চারুর ঘুম ভাঙ্গে না । এক ঘুমে সব সম রাত পার হয়ে যায় । অবশ্য চারুর সাথে খারাপ কিছু ঘটতে যাচ্ছে সেটা চারু বুঝতে পারছে খুব ভাল করে । বিশেষ করে দেয়ালে ঐ লাইনটার কথা চারু কিছুতেই ভুলতে পারছে না ।
আজকে পুরো রুমে চারু একা । ওর রুমমেট কদিনের জন্য গ্রামের বাড়িতে গিয়েছে । ঘরের ভেতরে কিছু সময় পায়চারি করে সে দরজা খুলে হলের বারান্দায় বের হয়ে এল । এমনিতে হলের সারা রাতই আলো জ্বলে । কেউ কেউ সব সময় জেগে থাকেই । তবে আজকে কেন জানি চারুর মনে হল পুরো হলে সবাই ঘুমিয়ে আছে । সব ঘরের আলো নেভানো ।
চারু বারান্দায় দাড়িয়ে জোরে করে একটা নিঃশ্বাস নিল । আজকে হলে ফিরতে ফিরতে প্রায় এগারোটা বেজে গেছে । সন্ধ্যা থেকেই সে আরিয়ানের ওখানেই ছিল, পিওকে খুজে পাওয়ার পরে আগে আরিয়ানের বাসতেই নিয়ে আনা হয় । ঐ বিল্ডিংয়েই একটা হাসপাতাল রয়েছে । সেখানে ট্রিটমেন্ট করে দেখা হয় যে পিউ কেবল অজ্ঞান হয়ে আছে । এছাড়া আর কোন ক্ষতি হয় নি । পিউয়ের মাকে ফোন করে বলা হয় যে পিউকে পাওয়া গেছে । তারপর দ্রুত পিউকে ওর বাবা মায়ের কাছে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়।
তবে আরিয়ান খানিকটা চিন্তিত ছিল । চারুর দিকে তাকিয়ে বলল, আমার কেন জানি মনে হচ্ছে এই কাজটা যে করেছে সে আসলে তোমার কাছে একটা বার্তা দিতে চাইছে ।
-আমারও তাই মনে হচ্ছে ।
-সাবধানে থেকো ।
-ধন্যবাদ ।
অন্য সময় হলে চারু এমন কিছু গা করতো না । তবে এখন মনের ভেতরে সুক্ষ একটা অস্বস্তি জন্ম নিয়েছে । বিশেষ করে পিউকে যেভাবে সে লোকটার সাথে হেটে যেতে দেখেছে তাতে কোন ভাবেই মনে হয় নি পিউকে ড্রাগ দেওয়া হয়েছে কিংবা জোর জবরদস্তি করা হয়েছে । তাহলে পিউ কিভাবে অপরিচিত একটা মানুষের সাথে অপরিচিত জায়গাতে গিয়ে হাজির হল ! এই প্রশ্নের উত্তর জানতে হবে ! তখনই চারুর মনে হল আরিয়ানের ওখান থেকে চলে আসার সময় চারুর করা কাজটার কথা । আরিয়ান ওর একদম কাছেই ছিল । হঠাৎ চলে আসার আগে চারু আরিয়ানকে জড়িয়ে ধরলো । কাজটা সে কেন করলো নিজেই জানে না ।
আরিয়ানও সম্ভবত একটু অবাক হয়ে গিয়েছিলো । বিশেষ করে জড়িয়ে ধরার সময় আরিয়ান খানিকটা ফ্রিজ হয়ে গিয়েছিলো । এই ছেলেটা সম্ভবত এখনও ঠিক নারী সঙ্গ পায় নি । আরিয়ানকে জড়িয়ে ধরেই চারু বলল, আপনাকে অনেক ধন্যবাদ । পিউয়ের কিছু হয়ে গেলে আমি নিজেকে কোন দিন ক্ষমা করতে পারতাম না ।
আরিয়ান বলল, ইটস ওকে !
চারু যখন আরিয়ানকে ছেড়ে দিয়েছিলো তখন নিজেই খানিকটা লজ্জা পেয়ে গেল । তারপর দ্রুত আরিয়ানের কেবিন থেকে বের হয়ে গেল ।
এখন এই বারান্দায় দাঁড়িয়ে চারু নিজের কাছে প্রশ্ন করলো যে আরিয়ানকে ওভাবে জড়িয়ে ধরার কারণ কী ছিল? এমন একটা কাজ সে আগে কোন দিন করে নি । অন্য কোন ছেলের প্রতি ওর কখন বিন্দু মাত্র দুর্বলতা তৈরি হয় নি কখন । এমন কোন আচরণ করে সেখানে সামনের মানুষটার মনে অন্য রকম কিছু মনে হতে পারে । তাহলে আরিয়ানের সাথে এমন কাজ কেন করলো?
চারু জানে না । হয়তো মানসিক ভাবে খুব বিপর্যস্ত ছিল এই কারণে !
নিজের বুঝানো তত্ত্ব নিজের কাছেই ঠিক বিশ্ব্বাস হল না । চারু আরও কিছু ভাবতে যাবো তখন বারান্দার সব আলো নিভে গেল । পুরো হলটা একেবারে নিস্তব্ধ হয়ে আছে । অস্বাভাবিক সব ঘরের আলো বন্ধ না থাকলেও বারান্দায় আলো ছিল । সেই আলো নিভে যাওয়ার সাথে সাথে সব কিছু কেমন অন্ধকার হয়ে গেল ।
তখনই চারু দেখতে পেল জিনিসটাকে ! মানুষের মত কিন্তু মানুষ নয় … নিচে লনে দাঁড়িয়ে রয়েছে । ওর দিকেই তাকিয়ে আছে ।
022
চারু কিছু সময় একভাবে তাকিয়ে রইলো নিচের লনের দাড়িয়ে থাকা মানুষ কিংবা মানুষের মত প্রাণীটার দিকে । হাত পা সব মানুষের মত হলেও মুখের স্থানে কোন কিছু নেই । চারিদিকে অন্ধকার হয়ে আছে অথচ চারু সব কিছু যেন পরিস্কার দেখা যাচ্ছে । চারু সব কিছু দেখতে পাচ্ছে । সেই প্রাণীটা যে ওর দিকেই তাকিয়ে রয়েছে সেই বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই । ঠিক তখনই চারুর মনে পড়লো একটু আগে দেখা স্বপ্নের কথাটা । স্বপ্নে সে কিছু দেখে ভয় পেয়েছিলো। ভয় পেয়ে সেটার থেকে দুরে পালাচ্ছিলো । চারুর মনে হল যে এই জিনিসটার কাছ থেকেই সে পালাচ্ছিল । এই জিনিসটা এখন এখানে এসে হাজির হয়েছে ।
এখন কী হয়ে?
এমন একটা চিন্তা আসতেই চারু দেখতে পেল সেই প্রাণীটা এক লাফে দুই তলার বারান্দার রেলিংয়ের বরাবর লাফ দিল । এবং সেটা এক হাতে ধরেও ফেলল । সেখানে ঝুলে রইলো কিছু সময় । তারপর আরেক লাফে একই ভাবে তিন তলার রেলিং ধরে ফেলল । চারুর রুম চার তলায় । চারু কেবল চেয়ে চেয়ে তাকিয়ে রইলো। ঠিক ঠিক বুঝতে পারলো যে কী হতে চলেছে । ওর এখনই কিছু করা দরকার । অন্তত পক্ষে পালানো দরকার !
কিন্তু কোথায় পালাবে?
ওর ঘরের দিকে যাবে ?
নিজের ঘরটা কি নিরাপদ হবে?
দেখতে দেখতে সেটা উঠে চলে এল চার তলায় । তারপর রেলিং থেকে বারান্দায় নেমে এল নিঃশব্দে । এখন প্রাণীটা আর চারুর ভেতরে দুইশ গজের মতে দুরত্ব । অন্ধকার বারান্দায় দুজন মুখোমুখি দাড়িয়ে রয়েছে । চারু একভাবে তাকিয়ে আছে চোখ নাম মুখ বিনীন চেহারার দিকে । লম্বায় চারুর মতই হবে । তবে সেটার শরীরে কোন পোশাক নেই । ধূসর লোম জাতীয় কিছু রয়েছে । চারুর পা দুটো যেন অবস হয়ে আছে । একদম নড়তে পারছে না । নিজের মনকে বোঝানোর চেষ্টা করছে যে এখন ওর এখান থেকে চলে যাওয়া উচিৎ । কিন্তু ওর মনের কথা ওর পুরো শরীর সায় দিচ্ছে না । হঠাৎই চারু নিজের শরীরের ভর আর রাখতে পারলো না । পায়ের হাটু দুটো যেন বড় দুর্বল মনে হল ওর কাছে । মাটিতে শুয়ে পড়লো চারু । তখনই অনুভব করলো পায়ের আওয়াজ । প্রাণীটা ওর দিকে এগিয়ে আসছে । একেবারে ওর কাছে এসে দাড়ালো সেটা । তারপর সেই চোখ নাম মুখ বিহীন চেহারা একেবারে চারুর মুখের কাছে নিচে এল । চারুর তখনই মনে হল যে সে এখনই মারা যাবে । এখনই ওটা চারুকে মেরে ফেলবে ।
ঠিক এই সময়ে চারুর কানে এল কাছেই কেউ দরজা খুলল । সাথে সাথেই চেহারার উপর থেকে ওটা সরে গেল । একটু পরে চারুর বুঝতে পারলো যে কেউ ওর দিকে দৌড়ে আসছে !
তারপরেই পরিচিত একটা চেহারা চোখের সামনে ভেসে উঠলো । এতো সময়ের উত্তেজনা আর চারু ধরে রাখতে পারলো না । তখনই জ্ঞান হারালো সে ।
চারুর ঘুম ভাঙ্গলো পরদিন সকালে বেশ বেলা করে । ঘুম ভেঙ্গে দেখলো ও নিজের বিছানায় শুয়ে আছে । পাশ ফিরতেই দেখতে পেল অনামিকা শুয়ে আছে ওর রুমমেটের বিছানাতে । তবে ঘুমিয়ে নেই । মোবাইল টিপছে । অনামিকাকেই গতকাল রাতে দেখেছিলো জ্ঞান হারানোর আগে । মেয়েটা ওর সাথেই পড়ে । ওর চোখ মেলে থাকাতেই অনামিকা ওর দিকে তাকালো । তারপর উঠে বসতে বসতে বলল, তোমার কী হয়েছিলো বল তো দেখি ? আমরা তো ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম ।
-কিছু না । ঘুম আসছিলো না দেখে বারান্দায় হাটছিলাম । তারপর হঠাৎ মাথা ঘুরে উঠলো ।
অনামিকা ওর বিছানার কাছে এসে ওর কপালে হাত রাখলো । তারপর বলল, এখন জ্বর নেই । রাতে হঠাৎ করে খুব জ্বর এসেছিলো। এখন ঠিক আছে। তবুও এখন বিশ্রাম নাও । আজকে ক্লাসে গিয়ে কাজ নেই । আমি তোমার প্রক্সি দিয়ে দিবো ।
-না না । ঠিক আছে । আমি উঠতে পারবো !
এই বলে বিছানা ছেড়ে উঠতে গিয়ে চারু টের পেল যে ওর শরীর বেশ দুর্বল হয়ে আছে । এমন কী হল রাতে যে শরীরে এতো দুর্বল লাগছে ! চারু কিছু বুঝতে পারছে না । এর আগে এমন কোন দিন হয় নি ।
চারু আর উঠলো না বিছানা থেকে । শুয়েই রইলো । মনে তার নানান সব চিন্তা ভাবনা আসতে শুরু করলো ।
023
পরের একটা সপ্তাহের প্রতিদিন রাতে চারু অনুভব করতে শুরু করলো যে রাতে ওর ঘরের সামনে দিয়ে কেউ হেটে বেড়াচ্ছে। অবশ্য রাতে চারু একা ছিল না। প্রথম দুইদিন অনামিকা ছিল। পরে তার রুমমেট ফিরে আসার পরে সেই থাকতো। চারুর প্রতিরাতে ভয় করতে শুরু করে। এমন টা চারুর সাথে আগে কখনো হয় নি। সে নিজের অস্বাভাবিক শক্তি সম্পর্কে খুব ভাল করেই জানতো। তবে চারু কখনই এই শক্তির ব্যাপারে অস্বাভাবিক কিছু মনে হয় নি। মনে হয়েছে হয়তো তার মাথার ভেতরে অস্বাভাবিক কোন অঙ্গ রয়েছে। যার কারণে হয়তো এই ক্ষমতা তার ভেতরে এসেছে।
কিন্তু সেইদিন রাতের বেলা ঐ প্রাণীটাকে দেখার পরে চারুর মনে অদ্ভুত একটা ভয় এসে জড় হয়েছে। পিউকে নিয়ে যাওয়া ঐ লোকটার কথাও বারবার মনে হতে লাগলো। সে যে কোন ভাবে চারুকে চেনে।
পুরো একটা সপ্তাহ পরে চারু নিজের হল থেকে বের হল। গেট দিয়ে বের হতেই গাড়িটা চোখে পড়লো। ওর গেট দিয়ে বের হতেই গাড়ির সামনে থাকা দুজন লোক একটু সচকিত হয়ে উঠলো। এতো দূর থেকেও তাদের পরিবর্তনটা চারুর চোখ এড়িয়ে গেল না। অন্য সময় হলে চারু বিরক্ত হত কিন্তু এখন চারুর বিরক্তিবোধ হল না। চারুর মনে হল আরিয়ান ওর উপর চোখ রাখার জন্য এই লোকগুলোকে এখানে রেখেছে। তবে সেটা ওর নিরাপত্তার জন্য। কেন জানি একটা ভাল লাগা কাজ করলো। পুলিশ অফিসার আকিব যদি এই তথ্য জানতে পারে তাহলে খুব রাগ করবে। তবে সেটা নিয়ে চিন্তা করার কোন কারণ নেই। সেই সাথে সাথে চারুর মন থেকে ভয়টা একটু কমে এল।
চারু পিউদের বাসায় গিয়ে হাজির হল ক্লাস শেষ করে। পিউয়ের বাসায় তখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। পিউকে আলাদা করে কোন কথা জানতে চাইলো না। এতোটুকু ছোট্ট বাচ্চাটার পক্ষে আসলে কোন কিছুই বলা সম্ভব না। তাই সেদিনের ব্যাপারে আর কোন কথা বলল না সে।
সন্ধ্যা বেলা হলের দিকে আসতে গিয়েই বাঁধলো বিপত্তি। পিউদের বাসা থেকে বের হতেই কিছুদুর হাটতে হয় রিক্সার জন্য। এই রাস্তা কখনই নির্জন থাকে না। কিন্তু আজকে রাস্তায় বের হতেই অবাক হয়ে দেখলো পুরো রাস্তায় আসলে কোন মানুষজন নেই। আর সময় মাত্র সন্ধ্যা অথচ মনে হচ্ছে গভীর রাত। রাস্তায় লোকজন নেই একদম। এমন টা তো স্বাভাবিক নয়।
চারু কিছু সময় রাস্তার উপরে দাঁড়িয়ে রইলো। কোনদিকে যাবে ঠিক বুঝে উঠতে পারলো না। সব কিছু তার কাছে কেমন যেন অপরিচিত মনে হল। কিছু সময় দাঁড়িয়ে থাকার পরে চারু সামনের দিকে পা বাড়ালো। ঠিক তখনই মানুষটাকে সে দেখতে পেল। সাথে সাথেই ভয়টা এসে জড় হল। সেদিনের সেই প্রাণীটা কি এখানে এসে হাজির হল?
তবে আরও কয়েক মুহুর্ত পার হওয়ার পরে যখন সেই অয়বয়টা আরো একটু এগিয়ে এলে চারু বুঝতে পারলো যে সেটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। একজন স্বাভাবিক মানুষ। আরও একটু কাছে আসতেই লোকটাকে চিনতে পারলো চারু।
পিউকে যে লোকটা নিয়ে গিয়েছিল। সিসিটিভিতে মানুষটাকে সে দেখেছিল পরিস্কার। এই রাতে তাকে সরাসরি চিনতে চারুর কষ্ট হল না মোটেও। সাথে সাথেই মুখটা শক্ত হয়ে গেল। চারু কিছু বলতে যাবো, তার আগেই লোকটা বলল, চারুলতা! তোমাকে পেলাম তবে!
-পেলাম মানে? কে আপনি?
-আমি? আমাকে চিনতে পারছো না?
-না। কে আপনি?
লোকটা হাসলো। তারপর বলল, না চিনলেও সমস্যা নেই। সময় মত ঠিকই চিনে নিবে। তবে আজকে খুব বেশি সময় দিতে পারছি না। এখনই ও চলে আসবে।
চারু ভুরু কুঁচকে বলল, কে চলে আসবে?
-কেন তুমি জানো না? তোমার সাথে দেখা হয় নি?
সাথে সাথেই চারুর শিরদাঁড়া দিয়ে সবার সেই ভয়টা বয়ে গেল। লোকটা কার কথা বলছে। এখনই চলে আসবে বলতে লোকটা কী বলতে চাইছে? এখানে চলে আসবে?
লোকটার কথা শেষ হল না তার আগেই চারু চারিদিকের পরিবেশে একটা পরিবর্তন লক্ষ্য করলো। তখনই চারু খেয়াল করলো লোকটার চেহারায় একটা ভয়ের রেখা ফুটে উঠেছে। লোকটা একটু পেছনে সরে গেল।
স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়ায় চারু পেছনে ফিরে তাকালো। এবং তখনই দেখতে পেল সেটাকে। সেই মুখ বিহিন চেহারা! সোজা ওদের দিকে এগিয়ে আসছে।
চারুর মনে আবার সেই ভয় এসে জড় হল। চারু কাঠ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। তবে আজকে সেটা আর কাছে আসলো না। চারু ঠিক যেমন ভাবে নির্জন রাস্তায় প্রবেশ করেছিল হঠাৎ করে, ঠিক তেমন হঠাৎ করেই কোলাহলপূর্ন সেই পরিচিত রাস্তায় প্রবেশ করলো। চারুর তন্ময় ভাঙ্গলো একটা গাড়ির হর্ণ শুনে। গাড়িটা অকে পথ ছেড়ে দেওয়ার জন্য হর্ণ দিচ্ছে। চারু কিছুটা ধাতস্থ হয়ে খেয়াল করলো যে সে সত্যিই রাস্তার উপরেই দাঁড়িয়ে আছে। সরে গিয়ে ফুটপাথের উপরে গিয়ে দাঁড়াল। তার কিছুই মাথায় ঢুকছে না। একটু আগে সব কিছু কেমন ছিল আর এখন সব কেমন হয়ে গেল!
চারুর মনে ভয়টা আবার ফিরে এল!
024
খায়রুল বাসার শান্ত চোখে তাকিয়ে রয়েছে সামনে বসা মানুষটার দিকে । মানুষটাকে ঠিক তার পছন্দ হচ্ছে না । আবার তাকে সে চলে যেতেও বলতে পারছে না । সামনে বসা মানুষটা যে একজন অস্বাভাবিক মানুষ সেটা তার দিকে তাকিয়েই খায়রুল বাসার বলে দিতে পারে । তার ভেতরে কোন অস্বাভাবিক ব্যাপারটা আছে সেটা খায়রুল বাসারের অভিজ্ঞ চোখ এড়িয়ে যায় নি । আর একটু আগে লোকটা যেভাবে ওর অফিসে এসে ঢুকলো সেটা কোন সাধারণ মানুষের পক্ষে কোন ভাবে সম্ভব না ।
খায়রুল বাসায় বলল, আপনি যা বলছেন তা যে একেবারেই গাজাখুড়ি একটা একটা ব্যাপার সেটা আপনি নিজে বুঝতে পারছে না ?
লোকটা হাসলো । তারপর চায়ের কাপটা টেবিলের উপর বিছিয়ে রেখে বলল, তাহলে আপনি আপনি এখনও আমাকে বের করে দিচ্ছেন না কেন?
এই প্রশ্নের জবাব খায়রুল বাসার চট করে দিতে পারলো না । সত্যিই তো সে কেন এই প্রশ্নের জবাবটা দিতে পারছে না । লোকটা বলল, দেখুন আমি জানি আপনি আরিয়ান আহমেদকে পথ থেকে সরিয়ে ফেলতে চান । তবে সেটা আপনার পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না । এমন কি কদিন আগে খুব ফুলপ্রুফ প্লানও নষ্ট হয়ে গেছে । তাই না?
খায়রুল বাসায় চুপ করে রইলো । কদিন আগে সত্যিই তার প্লানটা মাঠে মারা গিয়েছিলো । এমন ভাবে সে প্লানটা করেছিলো যে কয়েকজন ধরা পরে গেলেও যাতে প্লান কাজ করে কিন্তু সেটা সম্ভব হয় নি । কিভাবে জানি বোমাটা উদ্ধার হয়ে গেছে ।
লোকটা বলল, দেখুন আমি আরিয়ান আহমেদকে নিয়ে আসতে পারি । তাকে মেরেও ফেলতে পারি তবে এটা করার জন্য আমার একটু সাহায্য লাগবে । আমার কাজের জন্য একটা নির্দিষ্ট জায়গা দরকার যা এখন আমার কাছে নেই । ওটা আপনার আমাকে জোগার করে দিতে পারবেন ।
-আমি ? কিভাবে?
-কারণ বর্তমানে জায়গাটা যেখানে আছে সেটার মালিক আপনার খুব কাছের একজন মানুষ। আপনি বললে কাজটা করা সম্ভব ।
-আপনি সরাসরি তার কাছে না গিয়ে আমার কাছে কেন আসলেন তাহলে ?
-কারণ জায়গাটা তার হলেও সেটা বর্তমানে একটা সুপার মার্কেট । তার একার পক্ষে সেটা বন্ধ করা কোন ভাবেইসম্ভব না । কিন্তু আপনি পারবেন । আর এছাড়া এই আরিয়ান আহমেদ আমার কাজে বেশ কয়েকবার বাঁধা সৃষ্টি করেছে । এক কাজে দুই কাজ হয়ে যাবে । বুঝতে পারছেন কি?
খায়রুল বাসায় কিছু চুপ করে রইলো । সে এখনও ঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না । আরিয়ান এবং তার বাবা তার জীবনে অনেক বড় বড় ক্ষতি করেছে । কেবল শক্তি আর ক্ষমতার কারণে প্রতিবার সে পার পেয়ে গেছে । কোন কিছুতেই খায়রুল বাসার তাদের সমকক্ষ নয়। কোন ভাবে যদি আরিয়ান জানতে পারে যে ঐ বোমাহামলার পরিকল্পনার পেছনে সে ছিল তাহলে তাকে আর জীবিত রাখবে না । সেই হিসাবে এই বিপদ মাথার উপরে বাঁধিয়ে রেখে লাভ নেই ।
খায়রুল বাসায় বলল, আমি আপনার চাহিদার ব্যবস্থা করতে পারি তবে আমার নাম যাতে কোন ভাবেই এটার সাথে না আসে । মানে হচ্ছে আপনি যদি ব্যর্থও হন তাতেও যেন আমি কোন ভাবেই আপনার সাথে যুক্ত না থাকি !
লোকটা হাসলো । তারপর বলল, কোন ভয় নেই । আমি কোন ভাবেই ব্যর্থ হব না । এটা নিয়ে আপনি কোন চিন্তা করবেন না ।
খায়রুল বাসার বলল, আচ্ছা আপনি একা কাজটা কিভাবে করবেন? মানে কিভাবে আপনি আরিয়ানকে ধরবেন?
-আরিয়ানকে ধরা আমার জন্য খুব বেশি বড় ব্যাপার না । বলা চলে যে ওটা আমার প্লানের সব থেকে সহজ পাঠ ।
খায়রুল বাসার খানিকটা অবিশ্বাস নিয়ে বলল, তাই নাকি?
-হ্যা তাই । কেবল মাত্র সে সে নয়, দেশের প্রাইমমিনিস্টারকেও আমি পাকড়াও করতে পারি । আপনি হয়তো ভাবছেন আমি হয়তো আপনার সামনে বড় বড় কথা বলছি কিন্তু আপনি নিজে খোজ নিয়ে দেখবেন যে একটু আগে আমি আপনার অফিসে ঢুকেছি কেউ টের পায় নি । এখন যে আমি বের হয়ে যাবে সেটাও কেউ টের পাবে না ।
খায়রুল বাসায় চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইলো সামনে বসা লোকটার দিকে । নিজের কৌতুহল দমাতে না পেরে বলল, আপনার প্লানের পরের পার্ট কী?
-আরিয়ান আহমেদকে টোপ হিসাবে ব্যবহার করা?
-কী বললেন?
-হ্যা । ওকে দিয়ে আমার আরেকজনকে নিয়ে ধরতে হবে ।
-আপনার কথার আগা মাথা আমি কিছুই বুঝতে পারছি না । আপনি এই বলছেন যে চাইলে আপনি পিএমকেও ধরতে পারেন অথচ কাউকে ধরতে আপনার টোপ লাগবে । আপনি তো সরাসরি তাকেই ধরতে পারেন । মাঝে আরিয়ানকে টোপ হিসাবে হিসাবে কেন লাগবে?
লোকটা আবারও হাসলো । তারপর বলল, এখানেই কিন্তু । যাকে আমার দরকার তাকে আমি অস্বাভাবিক শক্তি প্রয়োগ করে ধরতে পারবো না । তাকে আসতে হবে স্ব ইচ্ছেতে । নয়তো হবে না ।
-আপনার মনে হয় আরিয়ানকে টোপ হিসাবে ব্যবহার করলে সে আসবে?
-আমার মনে হয় । আরিয়ান আহমেদ ঐ মেয়েকে প্রোটেক্ট করছে । তার হলের সামনে ক্যাম্পাসে টিউশনিতে এমনি তার বাবা মায়ের কাছেও আরিয়ান লোক লাগিয়ে রেখেছে । এই মেয়ের সাথে আরিয়ানের কোন কিছু চলছে নিশ্চিত ।
খায়রুল বাসার খুব কৌতুহল বোধ করলেন এই মেয়ের ব্যাপারে । তবে আর কিছু জিজ্ঞেস করার সুযোগ পেলেন না । তার আগেই লোকটা উঠে দাড়ালো । দরজার দিকে পা বাড়ালো । দরজার কাছে গিয়ে আবার পেছন ফিরে তাকালো । খায়রুল বাসারের দিকে তাকিয়ে বলল, আরিয়ান চলে যাওয়ার পরে আপনিই আসা করি ঢাকা শহরের উপরে কর্তৃত্ব বসাবেন । আপনার সাথে সামনে আরও কাজ করার সুযোগ পাবো আশা করি ।
তারপর দরজা খুলে বের হয়ে গেল ।
025
জেরিনের মেজাজটা সকাল থেকে খারাপ হয়ে আছে । পরিকল্পনা মোতাবেক যখন কোন কাজ হয় না তখন এর পরের কোন কাজই জেরিনের ঠিক মত হতে চায় না । সব কাজেই কোন না কোন ঝামেলা বাঁধে । সকালে আজকে একটু দেরি করে অফিসে আসবে সেটা আরিয়ান স্যারকে সে জানিয়েছিল। দুদিন আগে ওর হাত থেকে ফোনটা পড়ে গিয়ে অফ হয়ে গিয়েছিলো । সেটা আর কোন ভাবেই সে চালু করতে পারে নি । সেদিনই ফোনটা বসুন্ধরতা দিয়ে এসেছিলো । গতকাল রাতে ওরা মেসেজ দিয়ে জানায় যে ফোন ঠিক হয়ে গেছে । সকালে যেন গিয়ে নিয়ে আসে । আজকে তাই সকালে বসুন্ধরাতে গিয়ে হাজির হয়েছিলো । কিন্তু গিয়ে অবাক হয়ে যায় । দেখে বসুন্ধরা বন্ধ ।
আজকে মঙ্গলবার নয় মোটেই । সপ্তাহে ছয়দিন বসুন্ধরা খোলা থাকে সেটা সে খুব ভাল করেই জানে । আজকে বৃহস্পতিবার । তাহলে আজকে কেন বন্ধ । গার্ড জবাব দিলো না । কেবল বলল যে জরূরী দরকারে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে । জেরিন দেখলো ওর মত অনেকেই গেটের কাছে গিয়ে দাড়িয়েছে । সবাইকে চলে যেতে বলা হচ্ছে । আজকে সারা দিনে এই শপিং মল খুলবে না বলে জানিয়ে দিলো ওরা জেরিন অবাক না হয়ে পারলো না । এমনটা তো কোন দিন হয় না !
বিরক্তি নিয়ে আবার অফিসের দিকে পা বাড়ালো । আজকে কাজ হল না মানে হচ্ছে আবারও আরেকদিন আসতে হবে এখানে । অফিসে ফিরে আসার পরে প্রথমেই কফির কাপ হাত থেকে পড়ে গেল । মেঝেতে পড়ে একেবারে খান খান হয়ে গেল।
কিছু সময় বসে মাথা ঠান্ডা করে তারপর আবার কফির কাপ হাতে নিয়ে আরিয়ান আহমেদের কেবিনের দিকে রওয়ানা দিল । ঘরের ভেতরে ঢুকেই দেখতে আরিয়ান নিজের ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে কাজ করছে । কোন কিছু যেন মনযোগ দিয়ে দেখছে ।
-স্যার আপনার কফি !
কফির দিকে মুখ তুলে তাকালো না আরিয়ান ।
জেরিন জানে যে আরিয়ান যখন মনযোগ দিয়ে কোন কাজ করে তখন অন্য কিছুর দিকে তার খেয়াল থাকে না । এই সময়ে সে বিরক্ত হওয়া একদম পছন্দ করে না । কফির কাপটা টেবিলে উপরে রেখে জেরিন দরজার দিকে পা বাড়াতে যাবে তখনই মনে হল যে কিছু যেন একটা স্বাভাবিক নেই । হঠাৎ করেই ঘরের টাপমাত্রা বদলে গেলে । ঘরের আলো কমে এলো সাথে সাথে । সেই সাথে ঠান্ডা বেড়ে গেল । কেউ যেন এসির তাপমাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে ।
জেরিন ঘুরে দাড়াতেই খেয়াল করলো যে আরিয়ান নিজেও ব্যাপারটা খেয়াল করেছে । ওর দিকে খানিকটা অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো । বোঝার চেষ্টা করলো যে জেরিন কিছু জানে কিনা । কিন্তু জেরিনের চোখ দেখেই বুঝতে পারলো যে সেও অবাকই হয়েছে । এমন ঘটনা ঘটে না স্বাধারনত । তাহলে এখানে কেন হচ্ছে ?
আরিয়ান উঠে দাড়ালো । তারপর জেরিনের দিকে তাকিয়ে বলল, ঘরের বাইরে চল । জলদি । কিছু একটা …..
কিন্তু তার কথা শেষ হল না । তার আগেই ঘরের আলো দপ করে ফেটে গেল । পুরো ঘর একেবারে অন্ধকার হয়ে গেল !
জেরিন এতো অবাক হল যে ভয় পাওয়ার কথা ভুলে গেল যেন । দুপুর বেলা । ঘরের আলো বন্ধ হয়ে গেলেও একেবারে নিকষ কালো অন্ধকারে ঘর ছেয়ে যাওয়ার কথা না অথচ ঘরটা তেমন করেই অন্ধকার হয়ে আছে । এমনটা কিভাবে হল সেটা সেটা জারিন বুঝতে পারলো না কিছুতেই । ফোনটা জ্বালবে সেটার উপায়ও নেই । হাত দিয়ে দরজা খোজার চেষ্টা করলো কিন্তু ধারে কাছে কিছুই পেল না । এমন কি সে যে টেবিলের পাশে দাড়িয়ে ছিল সেটাও যেন নেই ।
-স্যার ।
-বল।
-কী হচ্ছে এসব ? আমি ঘরের দরজা খুজে পাচ্ছি না ।
জেরিনের মনে হল আরিয়ান আহমেদ খুব দুর থেকে কথা বলছে । অথচ আলো বন্ধ হওয়ার আগে আরিয়ান আহনেদ জেরিন থেকে দুই তিন হাত দুরে ছিল । জেরিনের হঠাৎ খুব ভয় করতে শুরু করলো ।
-স্যার !
কোন সাড়া শব্দ পাওয়া গেল না ।
-স্যার স্যার !
আরো কয়েকবার ডাক দিল জেরিন কিন্তু কেউ কোন জবাব দিলো না । কয়েক মুহুর্ত কেটে গেল এভাবেই । জেরিনের মনে হল যেন সে কোন অতল গহব্বরে আটকা পড়ে আছে । চারিদিকে কেবল অন্ধকার আর অন্ধকার । যখন জেরিনের মনে হল যে সে আর এই অন্ধকার থেকে বের হতে পারবে না তখনই আবার ঘরের আলো ফিরে এল ।
অন্ধকার থেকে আলোতে ফিরে এসে যে জানে পানি এল । কিন্তু যখন ফিরে তাকালো সে আরিয়ানের দিকে তাকালো তখন তার বুকের ভেতরে একটা শীতল স্রোত বয়ে গেল ভয়ের । কারণ ও ছাড়া ঘরের ভেতরে আর কেউ নেই । পুরো ঘর ফাঁকা ।