চারু

oputanvir
4.8
(24)

গল্পের শুরু 

বিকেলের কর্মব্যস্ত হাট । গাজীপুরের বিখ্যাত মনিপুরের হাট । পুরো হাট জুড়ে নানান মানুষ তাদের নানান জিনিসপত্র নিয়ে হাজির হয়েছে . কেউ বিক্রি করছে আবার কেউ কিনছে । কেউ বা কেবল ঘুরে বেড়াচ্ছে । চারিদিকে কোলাহলের শেষ নেই । তবে সব কোলাহলের মাঝে দিয়ে একটা অস্বাভাবিক চিৎকার চিনতে কারো কষ্ট হল না । কেউ তীব্র যন্ত্রণাকে চিৎকার করে উঠলো । মুহুর্তের ভেতরে সব কিছু যেন একেবারে শান্ত হয়ে গেল । তবে সেটা কেবল মাত্র দুই সেকেন্ডের জন্য । এবং তারপর আবারও তীব্র চিৎকার শুরু হল । এবারের চিৎকারটা অনেক গুলো মানুষের মুখ থেকে । তারপরই শুরু হল হুটওপুটি । সবাই যেভাবে পারলো যেদিকে পারলো দৌড়ে পালাতে লাগলো । কোন কিছুর থেকে তারা যেন পালিয়ে বেড়াতে চাচ্ছে ।

একটু পরেই সেটা বোঝা গেল হাটের মানুষ গুলো আসলে কিসের থেকে পালাতে চাচ্ছে । একটা কালো বিশাল আকারের ষাড় ছুটে গেছে দড়ি ছিড়ে । ষাড় গরু সাধারণত এভাবে পাগলা হয়ে ছুটে বেড়ায় না তবে এই ষাড়টার ভেতরে কোন একটা অস্বাভাবিকত্ব আছে । হাটের আনার সময়ই সবাই খেয়াল করে দেখেছিলো ষাড় । সবার চোখেই ছিল বিস্ময় । এতো বড় ষাড় গরু খুব একটা দেখা যায় না । সেই ষাড়টাই ছুটে গেছে । সামনে যাকে পাচ্ছে তাকেই নিজের বিশাল শিং দিয়ে গুতো দিচ্ছে । দুইজনকে গুরুতর ভাবে আহত করে এবার তার তৃতীয় শিকারের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে । সবাই যে যার মত ভয়ে পালিয়ে যাচ্ছে । সরে যাচ্ছে ষাড়ের আওয়ার বাইরে ।

ঠিক তখনই সবাই দেখতে পেল মেয়েটাকে । মেয়েটার বয়স হবে খুব বেশি হলে দশ বছর । হাটে এসেছিলো কারো সাথে সম্ভবত । মেয়েটা রাস্তার ঠিক মাঝে দাড়িয়ে রয়েছে । হাতে একটা ছোট পাটের ব্যাগ । কিছু ধরে রেখেছে হাতে । মেয়েটার দিকে ষাড়টা তীব্র বেগে এগিয়ে যাচ্ছে । মেয়েটার দিকে এতো তীব্র বেগে ছুটে যাওয়ার একটা প্রধান কারণ হচ্ছে মেয়েটার পরনে একটা লাল ফ্রক রয়েছে । ষাড় গরুরা লাল জিনিস একেবারে সহ্য করতে পারে না । এই গরুটাও পারছে না ।
মেয়েটাকে রক্ষা করতে কেউ এগিয়ে এল । কারো এতো সাহস হল না ষাড় আর মেয়েটার মাঝে দাড়ানোর । সবাই যেন একেবারে নিঃশ্বাস নিতে ভুলে গেছে । চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইলো । তারা কেবল অপেক্ষা করতে লাগলো সামনে কী হতে চলেছে । একজন বলিষ্ঠ মানুষ এ ষাড়ের আঘাত সহ্য করতে পারবে না । যেখানে এই মেয়েটির কী অবস্থা হবে সেটা কেউ ভাবতেও পারলো না । কেউ ভাবতে চাইলও না । তারা কেবল তাকিয়ে রইলো পথের দিকে । অপেক্ষা করতে লাগলো কখন ষাড়টা মেয়েটাকে ধাক্কা দিয়ে পিষে মেরে ফেলবে !

কিন্তু তখনই সবাই অস্বাভাবিক ব্যাপারটা খেয়াল করলো । অন্য সবার মত মেয়েটা কিন্তু মোটেই ভয় পাই নি । কিন্তু ভয়ে চিৎকার করে নি । একেবারে রাস্তার মাঝে শান্ত ভাবে দাড়িয়ে রয়েছে । আরও ভাল করে বললে মেয়েটা ঠিক ষাড়টার দিকে তীব্র চোখে তাকিয়ে রয়েছে । খুব স্বাভাবিক ভাবে দাঁড়িয়ে রয়েছে সে । তাকিয়ে রয়েছে তার দিকে ছুটে আসা ষাড়টার দিকে । শরীরের কোন তাড়াহুড়া নেই । চেহারাতে নেই কোণ ভয়ের চিহ্ন । এমন অনেক হয় যে তীব্র বিপদ কিংবা ভয়ের কোন কারণ হলে মানুষ ভয়ে একেবারে জমে যায় কিন্তু এই মেয়েটির বেলাতে তেম কোন কিছুই দেখা যাচ্ছে না । যে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে । তবে তার চেহারাতে ভয়ের কোন চিহ্ন নেই । সে শান্ত হয়ে তাকিয়ে রয়েছে । 

সবাই যখন মেয়েটির একটা গগন ফাঁটানো চিৎকার আশা করছিল তখনই ঘটলো সব থেকে আশ্চর্য্যের ঘটনা । মেয়েটির থেকে মাত্র দুই হাত দূরে এসে ষাড়তা থেমে গেল । ষাড়টা একেবারে স্থির হয়ে তাকিয়ে রয়েছে মেয়েটার ডিকে । ঠিক একই ভাবে মেয়েটা স্থির ভাবে তাকিয়ে রয়েছে ষাড়ের দিকে । 

মেয়েটা এবার এক পা একপা করে এগিয়ে গেল ষাড়টার দিকে । তারপর একেবারে ষাড়টার সামনে গিয়ে তার মাথায় হাত রাখলো । একটু যেন আদর করে দিল । ষাড়টার শরীর ততক্ষণে ঢিল হয়ে এসেছে । সে একবার চোখের পলক ফেললো । মেয়েটার মুখে এবার সবাই হাসি দেখতে পেল । যেন প্রিয় কোন বন্ধুর সাথে চোকে চোখে রেখে কথা হয়েছে তার । হাটের সবাই কেবল অবাক হয়ে তাকিয়ে রয়েছে মেয়েটির দিকে । তাদের চোখে বিস্ময়ের শেষ নেই । সবাই এখনও ঠিক বিশ্বাস করতে পারছে না যা তারা দেখছে । 

মেয়েটা ষাড়টাকে আরও একটু আদর করলো । তারপর ঘুরে নিজের পথে হাটা দিল । এমন ভাবে পথ দিয়ে এগিয়ে গেল যেন কিছুই হয় নি । চোখের আড়ালে চলে গেল তখন সবার হুশ ফিরে এল । তাকিয়ে দেখলো ষাড়টা একেবারে শান্ত হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে । তার ভেতরে কোন মারমুখী ভাব দেখা যাচ্ছে না । 

001

চারুর জ্ঞান ফিরে আসার পরে কিছু সময় সে বসে রইলো । চোখ খোলার পরেও কেন চোখের সামনে অন্ধকার হয়ে আছে সেটা বুঝতে চারুর কিছুটা সময় লাগলো । যখন বুঝতে পারলো জলদি করে নিচের চোখের উপরে বাঁধা কালো কাপড়টা সে সরিয়ে ফেলতে চাইলো । তখন সে আরও অবাক হয়ে লক্ষ্য করলো যে তার কেবল চোখই বাঁধা নয়, তার হাত দুটো কেউ পেছন দিক দিয়ে এক সাথে করে বেঁধে রেখেছে । ব্যাপারটা বুঝতে পারার সাথে সাথে চারুর মনের মনের ভেতরে একটা ভয় এসে চেপে বসলো । কেউ তাকে ধরে নিয়ে এসেছে । তার চোখ এবং হাত বেঁধে রেখেছে। ভয়ের ধারাটা পুরো শরীর জুড়ে একবার বয়ে গেল । মনটা খানিকটা অস্থির হয়ে উঠলো । তবে সেটা চারু সামলে নিলো একটু পরেই । আরও একবার চেষ্টা করলো নিজেকে ছাড়ানোর । যখন বুঝলো যে ওর নিজের পক্ষে নিজের হাতের বাঁধন খোলা সম্ভব না তখন সে চেষ্টা করা বন্ধ করে দিল । পা দুটো বাঁধা হয় নি । চাইলেই সে উঠে দাড়াতে পারবে । কিন্তু চোখ বাঁধা থাকার কারণে সেটা খুব উপকারে আসবে না । এই টুকু বুঝতে চারুর বুঝতে খুব বেশি কষ্ট হল না । 

মনটা আরও একটু শান্ত হলে চারুর এবার ভাবতে শুরু করলো । সবার আগে ও কোথায় আছে সেটা বুঝতে পারা দরকার । চারু চারিদিকে মুখ ঘুরিয়ে বোঝার চেষ্টা করলো । চারু একটা শোফায় বসে আছে । সোফাটা বেশ নরম । ঘরে এসি চলছে । তার মানে ওকে যারা ধরে নিয়ে এসেছে তারা ওকে কোন কয়েদ খানাতে নিয়ে যায় নি । কোন ঘরে নিয়েছে এবং সেই ঘরটাতে এসি আছে, নরম সোফা আছে । হয়তো আসে পাশে আরও অনেক ফার্নিচারও আছে । কোন ঘরে তাকে নিয়ে আসা হয়েছে । 

চারু আবারও চারিদিকে মনযোগ দেওয়ার চেষ্টা করলো । বুঝার চেষ্টা করলো যে ঘরে সে একা রয়েছে নাকি আরও কেউ আছে তার সাথে । মনযোগ দেওয়ার পরে বুঝতে পারলো সে রুমে একাই রয়েছে । এই কথাটা বুঝতে পারার পরে একটু স্থির হল । মনে মনে ভাবতে লাগলো যে এখন ও কী করবে? কিভাবে এখান থেকে বের হবে? 

এখানে ওকে কেন আনা হয়েছে ? 

অনেক গুলো প্রশ্ন মনের মাঝে এসে জড় হয়েছে । অনেক টা সময় চারু একেবারে নির্ঝঞ্ঝাট জীবন পার করেছে! বুদ্ধি হওয়ার পর থেকে চারু সব সময় সাবধানে থেকেছে যাতে ওর ভেতরের অস্বাভাবিক ব্যাপারটা যেন বাইরে বের হয় না হয় । কিন্তু তারপরেও কিভাবে যেন সব কিছু বের হয়ে যায় কারো কিছু কিছু মানুষের কাছে । তখনই ঝামেলার শুরু হয় । এই কদিন আগেই কয়েক জনের কাছে ওর আসল পরিচয়টা বের হয়ে পড়ে । আর আজকে এখানে ওকে কেউ ধরে নিয়ে এসেছে ! 

-মিস চারুলতা চৌধুরী ? ঘুম ভাঙ্গল তাহলে?

সাথে সাথে চারু সোজা হয়ে বসলো । কারণ সে কন্ঠস্বরটা চিনতে পেরেছে । 

আরিয়ান আহমেদ খান ! 

দ্য ডন । 

সাথে সাথেই সব কিছু চারুর কাছে পরিস্কার হয়ে গেল । এটাই তো স্বাভাবিক । ঢাকার এই ডন ছাড়া ওকে কেউ ধরে নিয়ে আসতেই পারে না । এই সহজ ব্যাপারটা চারুর আরও আগে বুঝতে পারার দরকার ছিল । নিজের নির্বুদ্ধিতার দেখে নিজেই খানিকটা বিরক্ত হল । তবে সামনে নিলো নিজেকে । চারু জানে যে ডন সাহেব তাকে কিছু করবে না । তবে যদি চারু তার কথা না শোনে তাহলে অনেক কিছু করতে পারে । 

চারু নিজেকে যথা সম্ভব শান্ত করে বলল, মিস্টার আরিয়ান আহমেদ খান ।

-চিনতে পেরেছো তাহলে?

-না চিনতে পারার কোণ কারণ আছে কি? আমাকে বলবেন যে এখানে কেন এভাবে নিয়ে আসা হয়েছে?

-কারণটা তুমি খুব ভাল করেই জানো যে তোমাকে কেন এভাবে এখানে আনা হয়েছে!

-আপনিও তাহলে জানেন যে আমি কোন ভাবেই কাজটা করবো না।

চারু আরিয়ান আহমেদের হাসার আওয়াজ শুনতে পেল। তারপর বলল, তুমি আসলে কোণ আর্গুমেন্টের পর্যায়ে নেই । 

চারু নিজেও জানে যে সে আসলেই কোন আর্গুমেন্টের পর্যায়ে নেই । আরিয়ান আহমেদ তাকে ধরে নিয়ে এসেছে । চারুর জন্য কেঊ অপেক্ষা করে নেই বাসায় । ও থাকে হলে । কয়েকদিন হলে ফিরে না গেলেও হয়ত খুব বেশি চিন্তা করবে না । চারুর কোন কাছের বন্ধু নেই যে ওর অনুপস্থিতি কেউ উপলব্ধি করবে । কয়েকদিন কেন, কয়েক সপ্তাহ কিংবা মাস পার হয়ে গেলেও হয়তো কারো কিছু যাবে আসবে না । এরই মাঝে আরিয়ান আহমেদ খান ওকে একেবারে গায়েব করে দিতে পারে । কেউ ওকে আর খুজে পাবে না । 

কিন্তু আরিয়ান আহমেদ চারুর কাছে যা চাচ্ছে সেটা চারু করতে চায় না । 

মনে মনে সে সিদ্ধান্ত নিলো আরেকবার । কোণ ভাবেই এই সন্ত্রাসীর কাছে সে মাথা নত করবে না । কেবল একটা বার চোখের বাধন টা খুলুক বেটা ! বেটাকে দেখে নেবে সে !

002

চারুর দিন গুলো অন্য সবার থেকে স্বাভাবিক আর নিরুত্তাপ কাটে । একটা বয়সের পর থেকে চারু জানে ঠিক কিভাবে জীবন যাপন করলে ঝামেলা এড়িয়ে চলা যায় । ওর কারণে যাতে অন্য কাউকে কোন প্রকার বিপদে না পড়তে হয় কিংবা ওর গোপন ব্যাপার গুলো যাতে মানুষ কোন ভাবেই জানতে না পারে সেই ব্যাপারে চারু সব সময়ই সাবধান থাকে । একটা সময়ে কাউকে খুব বলতে ইচ্ছে করতো নিজের এই অস্বাভাবিক ব্যাপার টা । কিন্তু সে দেখেছে যতবার মানুষ এই ব্যাপারটা জেনেছে ততই ওকে ভয় পেয়েছে, ওর কাছ থেকে দূরে চলে গেছে । এর থেকে ও নিজেই সবার থেকে একটা নির্দিষ্ট দুরুত্ব বজায় রেখে চলে । 

ঢাকায় আসার পর থেকে ওর জীবনটা অনেকটাই সহজ হয়ে এসেছে । গনরুমে থাকতে একটু কষ্ট হয়েছে কিছু দিন তবে এখন দুই জনের একটা রুমে সে থাকে। ওর রুম মেট একজন সিরিয়র আপু । ওর নিজের ডিপার্টমেন্টেই পড়ে । বেশ শান্ত স্বভাবের । কথা বার্তা কম বলে । নিজের ভেতরেই থাকে বেশির ভাগ সময়ে । এতে চারুর বেশ ভালই হয়েছে । 

চারু ক্লাস আর ল্যাব শেষ করে নিজের হলের দিকেই হেটে যাচ্ছিলো । তবে হলের ভেতরে প্রবেশের আগে ওর লক্ষ ফরিদ মামার চায়ের দোকান । প্রতিদিন এখান থেকে চা খাওয়াটা ওর একটা অভ্যাসের মত হয়ে গেছে । কিন্তু আজকে মাঝ পথেই ওকে থামতে হল । 

চারুর পথ আটকে দাড়িয়েছে এক বডিবিল্ডার উচু লম্বা মানুষ । চারু লোকটার দিকে তাকাল । এর আগে কোন দিন তাকে দেখেছে বলে মনে করতে পারলো না । দেখে থাকলে কিংবা পরিচয় হলে চারুর মনে থাকতো । কারণ এমন একজনকে কোন ভাবেই ভোলা সম্ভব না । চারু লোকটার দিকে তাকিয়ে বলল, পথ আটকে কেন দাড়িয়েছেন?

লোকটা চারুর কথার ভ্রুক্ষেপ না করে বলল, এই আমার বস তোমার সাথে কথা বলতে চায় ? আমার সাথে এসো ।

লোকটা কোন রীতিমত হুকুম করলো চারুকে । যা চারুর মোটেই পছন্দ হল না । চেনে না জানে একজন মানুষ এসে তাকে হুকুম করছে তার বসের সাথে দেখা করার জন্য আর চারু সেই হুকুম শুনে নাচতে নাচতে চলে যাবে । 

চারু শান্ত কন্ঠে বলল, আপনার বসকে আসতে বলুন আমার কাছে । দরকার তার আমার না ।

লোকটা এবার ধমক দিয়ে উঠলো । তারপর বলল, চুপচপা চল আমার সাথে ! নয়তো ফল ভাল হবে না ।

এবার চারুর সত্যিই মেজাজটা গরম হল । চারু যে কাজটা করতে চায় না, সেই কাজটাই ওকে মাঝে মাঝে করতে হয় কিছু মানুষকে শায়েস্তা করার জন্য । চারু সোজা হয়ে লোকটার চোখের দিকে তাকালো । মাত্র এক সেকেন্ড । লোকটার পুরো শরীর যেন নড়ে উঠলো । তারপরেই লোকটা একেবারে স্থির হয়ে গেল । একেবারে স্ট্রাচুর মত দাঁড়িয়ে রইলো কয়েকটা মুহুর্ত । চোখে একেবারে চারুর দিকে । যেন এই দুনিয়াতে চারু ছাড়া আর কেউ নেই যার দিকে সে তাকাতে পারে । চারু বলল, সোজা যেখান থেকে এসেছিলে সেখানে চলে যাও । যাও !

লোকটা একেবারে পুতুলের মত করেই ঘুরে দাড়ালো । তারপর বড় বড় পা ফেলে চলে গেল যেদিক থেকে এসেছিল । চারু আর সেদিকে তাকালো না । সোজা হাটতে লাগলো ফরিদ মামার চায়ের দোকানের দিকে । দোকানটা ওদের হলের গেটের থেকে একটু ডান দিকে । ভোর বেলা থেকে প্রায় মধ্যরাত পর্যন্ত এটা খোলা থাকে । মাঝে মাঝে চারু খুব ভোরে হাটতে বের হয় । তখন প্রথম চা সে এখান থেকেই খেয়ে নেয় । 

আজকে সারা দিন চারুর বেশ পরিশ্রম গেছে । ক্লাস ল্যাব ছিল বিকেল পর্যন্ত । আজে টিউশনিও ছিল । তবে সেটা বদলে নিয়েছে । আগামীকাল যাবে । আজকে এই এখন চা খাবে। হলে গিয়ে গোসল করবে । তারপর সোজা ঘুম । রাতে উঠবে কি উঠবে না সেটা পরে ভেবে দেখা যাবে । 

চায়ে সবে মাত্র চুমুক দিয়েছে তখনই দেখতে পেল একজন স্যুটটাই পরা একজন সুদর্শন যুবক ওর সামনে এসে দাড়িয়েছে । চারুর দিকে তাকিয়ে রয়েছে । চোখে কালো চশমা । 

চারুর বুঝতে খুব একটা কষ্ট হল না । সে বলল, আপনিই কি সেই বস?

যুবক হাসলো । তবে এই হাসি মেকি হাসি । 

যুবকের বয়স বোঝার চেষ্টা করছে চারু । ওর থেকে কয়েক বছরের বড় হবে । তবে টাকা পয়সার মালিক বেশ সেটা পরনের স্যুট দেখেই বোঝা যাচ্ছে । আর সেই সাথে আশে পাশে আরও চারজন কালো পোশাক পরা বডিগার্ড টাইম মানুষকে দেখতে পাচ্ছে চারু । তার মানে এই লোক যেই হোক না কেন সে গুরুত্বপূর্ন কেউ । কিন্তু চারু বুঝতে পারছে না যে এই লোক ওর কাছে কী চায়? 

003

কালো পোশাক পরা যুবক বলল, আমরা কি নিরিবিলি কোথাও গিয়ে কথা বলতে পারি?

চারু চায়ের আরেকটা চুমুক দিলো। তারপর যুবকের দিকে না তাকিয়েই বলল, জ্বী না । আপনার যা বলার আছে এখানেই বলুন ।

-দেখ চারুলতা, আমার এভাবে এখানে খোলা জায়গাতে বেশি সময় থাকাটা ঠিক নিরাপদ নয় !আর আমি কাউকে অনুরোধ করি না । 

চারু চায়ে শেষ চুমুক দিয়ে বলল, আমার নাম যেহেতু জানেন সম্ভবত আমার সম্পর্কেও জানেন আপনি। তাই না?

-হ্যা জানি ।

-গুড । আপনি আপনার নিরাপত্তার কথা ভাবছেন, আমিও তাই । আপনাকে আমি চিনি না জানি না, আপনার সাথে আমি কেন নিরিবিলি স্থানে যাবো বলুন ? কোন কারণ আছে কি? যা বলার বলুন এখানেই এবং জলদি । আমার আজকে সারাদিন অনেক পরিশ্রম গিয়েছে । আমি এখন ঘুমাবো । 

যুবক কী যেন ভাবলো । তারপর বলল, আমরা কি অন্য কোন সময় দেখা করতে পারি?

চারুর একবার মনে হল যে না পারি না, আপনার সাথে আমার কথা বলার কোন ইচ্ছে নেই । কিন্তু সেটা সে বলল না । একটু ভেবে বলল, আমার কাল টিউশনী আছে ২৭ নম্বরে । ওখানে থাইম নামে একটা রেস্টুরেন্ট আছে । ১৩ তলার উপরে । বেশ নিরিবিলি । কাল ওখানে দেখানে করতে পারেন । 

-কয়টায়?

-আমার টিউশনী  শেষ হবে এই ধরেন বিকেল চারটায় । যেহে ১০ মিনিত লাগবে । আপনি সাড়ে চারটা ধরে রাখুন । সময় মত চলে আসবেন । তখন আপনার কথা শুনবো । ঠিক আছে?

চারু যুবককে আর কোণ কথা বলার সুযোগ না দিয়ে সোজা গেটের দিকে হাটা দিল । এমন কি ফরিদ মামার টাকাও দিলো না । ফরিদ মামা অবশ্য সেটা নিয়ে কোন টেনশন করলো না । চারুকে সে চিনে অনেক দিন থেকেই । 

কিন্তু চারু কোন ভাবেই যুবকের কথা মন থেকে বের করতে পারলো না । কারণ যুবক তার নাম জানে । তার ব্যাপারে সকল খোজ খবর সে নিশ্চয়ই নিয়ে এসেছে । এই কদিন আগেই সে একটা ঝামেলায় জড়িয়েছে । কাজটা সে মোটেই করতে চায় নি কিন্তু ডিবির কমিশনার লতিফুল রহমানের কথা সে কোন ভাবেই ফেলতে পারে নি । সেই কথা রাখতে গিয়ে একটা মানুষকে সে কোমাতে পাঠিয়ে দিয়েছে । সে আদৌও ফিরে আসবে কিনা সেটা চারু জানে না । এই অপরাধের বোঝা চারু মোটেই বহন করতে চায় না ।  কিন্তু তারপরেও করতে হয় । বারবার কোন কোন সমস্যা তার সামনে এসে দাঁড়ায় । যতবার যে চায় নিজেকে সব কিছুর থেকে দূরে রেখে একটা শান্সত স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে ততবারই তার সামনে কোন না কোন ঝামেলা এসে দাঁড়ায় । এই যে লতিফুল রহমানের কথা যদি সে না শুনতো, তাহলে সে কোন ভাবেই চারুকে জোর করতে পারতো না । কেবল সে কেন দেশের প্রাইম মিনিস্টার এলেও চারুকে জোর করতে পারবো না । কিন্তু পরিস্থিতি এমন দাড়িয়েছিল যে যদি চারু সাহায্য না করতো তাহলে আরো বেশি মানুষ হয়তো মারা যেত । অনেক মানুষের মারা যাওয়ার চেয়ে একজনের কোমাতে যাওয়াটাই ভাল । এমন করেই সে নিজের মন কে বুঝিয়েছে । যদিও চারু জানে যে এই বুঝ খুব একটা কাজে আসবে না । এক সময় না এক সময় সেই মানুষ গুলো ওর স্বপ্নে এসে ধরা দিবে । তারপর দিনের পর দিন চারু শান্তিতে ঘুমাতে পারবে না । অনেক গুলো দিন ঝামেলা বিহীন ছিল সে । আবার নতুন করে ঝামেলা শুরু হবে । অবশ্য জন্মের পর থেকে ঝামেলা চারুর পেছনে লেগেছে আছে । এটা বুঝি আর কোন দিন ছাড়বে না । 

সন্ধ্যার সময় হালকা নাস্তা সেরে শুয়ে পড়লো সে । ভেবেছিল শোয়ার সাথে সাথেই ঘুম চলে আসবে কিন্তু ঘুম এলো না । ঘুরে ফিরে নানান রকম কথা মনে আসতে লাগলো । বিছানার এপাশ ওপাশ করতে লাগল । এমন সময় চারুর ফোনে ফোন এসে হাজির । 

নামটা দেখেই ভুরু কুঁচকে গেল ওর । এই লোক এখন কেন ফোন দিয়েছে ?

ফোনটা ধরতেই ওপাশ থেকে ডিবির এসি আকিব মুস্তাফিজ বলল, চারু তুমি কোথায়?

গলাতে একটু বিরক্তি নিয়েই চারু বলল, এই সময়ে আমি কোথায়  থাকি? 

-তুমি একটু তোমার হলের নিচে এসো তো । 

-কেন?

-তোমার সাথে জরুরী কথা আছে । 

চারুর খুব ইচ্ছে হল এখনই এই অফিসারকে কঠিন গলায় বলে যে এখন তার নিচে যাওয়ার কোন ইচ্ছে নেই । কিন্তু তখনই মনে পড়লো যে রাতে খাওয়া হয় নি এখনও । বিছানা ছেড়ে উঠতেই হবে । আর যদি এখন চারু না যায় তাহলে এমন হওয়াটা মোটেই বিচিত্র নয় যে এসি সাহেব সোজা প্রোভোস্ত ম্যাডামকে ফোন দিয়ে ওকে নিচে নামাবে । প্রথম দিন তাই করিয়েছিল । 

চারু বলল, আচ্ছা দাড়ান আমি আসছি । 

ফোন রেখে আরো কিছু সময় সে শুয়ে রইলো । তখনই মনে হল যে শান্তির দিন আসলে এখন থেকেই শেষ হতে চলেছে ।  

004

লতিফুল রহমান সবে মাত্র নিজের বিকেলের চায়ে চুমুক দিয়েছিল তখনই আকিবকে দরজা দিয়ে ভেতরে ঢুকতে দেখলো । ওর মুখ দেখেই লতিফুল রহমানের মনে কিছু একটা অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটেছে । 

-স্যার? 

-কী ব্যাপার আকিব? তোমাকে এমন কেন দেখাচ্ছে ?

-স্যার চারুকে কিডন্যাপ করা হয়েছে! 

-কী বলছো ! কখন ? কবে? 

-স্যার আজকে দুপুরে । দুপুরে ও টিউশনি যাওয়ার পথে ধানমন্ডি ২৮ নম্বর থেকে ওর কোন খোজ নেই ।

লতিফুল রহমান বলল, খোজ নেই মানে কী? তুমি কি ওকে ফলো করছিলে?

-আরিয়ান আহমেদ খান ওর সাথে দেখা করার পর থেকেই আমি ওর পেছনে লোক লাগিয়ে রেখেছিলাম। ও যেখানে যেখানে যায় ওকে ফলো করতে বলেছিলাম । কিন্তু আজকে ২৮ নম্বর থেকে ওর ট্রেস হারিয়ে ফেলেছে । কোন সন্দেহ নেই ওকে আরিয়ানই কিডন্যাপ করেছে । 

লতিফুল রহমান একটু কী যেন ভাবলো । তারপর বলল , তোমার কাছে কোণ সলিড প্রমান রয়েছে ?

-না স্যার সেটা নেই । 

-তাহলে আমরা কী করবো ? কোন ভাবেই আরিয়ান আহমেদের বাসায় পুলিশ নিয়ে ঢোকা যাবে না । এমন কী ওয়ারেন্টও ইস্যু হবে না । তুমি জানো এটা ?

-কিন্তু স্যার চারুকে আরিয়ান ছাড়া আর কেউ তুলে নিতে পারে না । এতো নিঁখুত কাজ আর কারো হতে পারে না ।

-তুমিই বলছো নিঁখুত ! এখানে আমরা কিছুই করতে পারি না । পারবো না ।

-কিন্তু স্যার ?

-দেখো আকিব আমি দেখছি কী করা যায় । তবে তুমি কিন্তু কোন পাগলামী কর না । আমি দেখছি । তুমি এখন নিজের কাজে যাও । আমি দেখছি ।

আকিব খানিকটা অবাক এবং রাগান্বিত ভাবেই লতিফুল রহমানের কেবিন থেকে বের হল । চারুর ব্যাপারে লতিফুল রহমানের উদাসীনতা দেখে একটু অবাক হল সে । চারুর ব্যাপারে উদাসীনতা নাকি এখানে আরিয়ান আহমেদ জড়িত বলে । আকিব খুব ভাল করেই জানে যে ডিপার্টমেন্টের অনেক অফিসারই আরিয়ানের পকেটে কিন্তু তাই বলে লতিফুল রহমানও সেই দলে হবে ? এটা আকিব ভাবতে পারে না । 

অথচ এই চারুর সাথে লতিফুল রহমানই ওর পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল । এই তো কদিন আগের কথা । এই কদিন আগেও চারুকে সে চিনতো না । চারু কী করতে পারে সেটাও তার ধারনার বাইরে ছিল । সেদিন তার সুপিরিয়রের কথা শুনে তীব্র অবাক হয়ে গিয়েছিল আকিব । তখন ঐ ক্রাইসিসের সময়ে এমন দায়িত্ববান মানুষের মুখ থেকে এমন কথা যে বের হতে পারে সেটা সে ভাবতেও পারে নি । তবে মুখে কিছু বলার সাহস পেল না । মনে মনে তীব্র অসন্তুষ্ট হল ।

লতিফুল রহমান বলল, মেয়েটাকে খুজে বের কর আকিব ।  একমাত্র ঐ মেয়েটাই আমাদেরকে রক্ষা করতে পারবে।

-কিন্তু স্যার …

-কোন কিন্তু না । তোমাকে তো আমি আগে সুযোগ দিয়েছি । দেই নি ? তুমি তোমার মত করে ব্যবস্থা নিয়েছো ! ওদের মুখ থেকে কোন কথা বের করতে পেরেছো কী? বল পেরেছো ? 

আকিব মাথা নীচু করলো । সত্যিই সে পারে নি ।

কোন মতে বলল, না স্যার । এখনও পারি নি । তবে …

-আর কত সময় চাও? কাল ২৬শে মার্চ । কালই ঘটবে ঘটনাটা । আমরা এখনও কোন ক্লুই বের করতে পারি নি যে বোমাটা কোথায় আছে ? কোন জায়গায় ফাটবে এবস কিছুই বের করতে পারো নি । আমি কি এখন তোমার ভরশায় বসে থাকবো? তারপর চেয়ে দেখবো দেখবো কত জন মারা গেল?

আকিব আবারও কোন কথা না বলে চুপ করে রইলো । লতিফুল রহমান বললেন, মেয়েটা ঢাবিতে পড়ে আমি জানি । নাম চারুলতা । এই টুকু আমি জানি । গাজিপুর থাকতো । এখানকার সরকারি স্কুলে পড়তো যখন মেয়েটাকে প্রথম দেখি এবং মেয়েটা আমাদের সাহায্য করে । বুঝতে পেরেছো কি ? কেবল মানুষের চোখের দিকে তাকিয়ে মেয়েটা সব কিছু বলে দিতে পারে । আমি জানি তুমি আমার কথা শুনে বিরক্ত হচ্ছো কিন্তু আমি নিজের চোখে না দেখলে তোমাকে বলতাম না । কেবল একবার নয় তারপরে বেশ কয়েকবার মেয়েটাকে আমি ডেকে নিয়ে সাহায্য নিয়েছি । বুঝেছো আমার কথা?

আকিব মাথা নীচু করেই বলল, জ্বী স্যার !

-যাও মেয়েটাকে খুজে বের কর । 

আকিব আর কোন কথা বলল না । তার বস যেহেতু তাকে বলেছে চারু নামের মেয়েটাকে খুজে বের করতে তখন তাকে খুজে বের করতেই হবে । এ ছাড়া আর কোন উপায় নেই । 

005

আকিব ঘর থেকে বের হয়ে গেল । একটু বিরক্ত হলেও চারুলতার খোজে সে বের হল । খুব বেশি কষ্ট হবে না । গাজিপুর সরকারী স্কুলে পড়েছে । যদি সেখান থেকে এসএসসি পাশ করে এবং পরে ঢাবিতে ভর্তি হয় তাহলে এই তথ্য নিয়ে মেয়েটাকে খুজে বের করা খুব বেশি জটিল হবে না । কিন্তু যদি অন্য স্কুলে চলে যায় এসএসসির আগে তাহলে অবশ্য একটু ঝামেলা হবে । 

তবে ঝামেলা হল না । মেয়েটার খোজ বের করতে ঘন্টা খানেক সময় লাগলো । ঢাবির এপ্লাইড ফিজিক্স পড়ে মেয়েটা, থাকে রোকেয়া হলে । এমন কী ফোন নম্বর পর্যন্ত পাওয়া গেল । সরকারি যোগাযোগ করা হল হলের প্রোভোস্টের কাছে । সব কিছু সমাধান হয়ে গেল খুব সহজ ভাবে। আকিব নিজে গেল হলের সামনে । প্রভোস্ট সহ মেয়েটি বের হয়ে এল একটু পরেই ।

মেয়েটার দিকে তাকিয়ে আকিবের কোণ অস্বাভাবিক কিছু মনে হল না । চোখে চশমা । ঘন চুল । একটু আগে ঘুমিয়ে ছিল সেটা চোখের দিকে তাকিয়েই আকিব বলে দিতে পারে । সেই সাথে মেয়েটা খানিকটা বিরক্তও হয়েছে বোঝা যাচ্ছে । এই ব্যাপারটাই আকিবের কাছে নতুন লাগলো । রাতের বেলা পুলিশ এসেছে তাকে নিয়ে যেতে অথচ মেয়েটার চোখে কোন ভয় নেই । বরং সেখানে রয়েছে বিরক্তি। এর অর্থ এই দাঁড়ায় যে মেয়েটা খুব ভাল করেই জানে যে তার সাথে কী হচ্ছে । এবং তার ভয় পাওয়ার কোন কারণ নেই । আর আরেকটা ব্যাপার আকিবের বেশ অবাক লাগলো । তা হল মেয়েটার চোখ । এই চোখে কিছু একটা অস্বাভাবিকত্ব রয়েছে । 

প্রভোস্ট ম্যাডাম চারুর দিকে তাকিয়ে বলল, চারু ইনাদের সাথে যাও একটু । কেবল তুমিই নাকি এদের সাহায্য করতে পারবে । লতিফুল রহমানকে চিনো তুমি ?

চারু চোখ তুলে তাকালো । তারপর বলল, জ্বী ম্যাম চিনি ।

-তাহলে তো আর নতুন করে কিছু বলতে হবে না ।

তারপর আকিবের দিকে তাকিয়ে প্রোভোস্ট ম্যাম বললেন, আপনি চারুকে এখান থেকে নিয়ে যাচ্ছেন কাজ শেষ করে আবার আপনিই এখানে দিয়ে যাবেন । এর অন্যথায় যেন না হয় । আমি আমার মেয়েদের কোন ভাবেই রাতের বেলা বাইরে যাওয়ার অনুমতি দেই না । কিন্তু এখন জানি জীবন মরন সমস্যা । তাই যেতে দিচ্ছি । কিন্তু ওকে যেমন নিয়ে যাচ্ছেন তেমন দিয়ে যাবেন। যদি এমন না হয় তাহলে আমি ওকে আপনার হাতে ছাড়বো না । 

আকিব আবারও একটু বিরক্ত হল বটে তবে বলল, জ্বী আমিই ওকে দিয়ে যাবো । কোন চিন্তা করবেন না।

চারু খুব শান্ত ভাবে গাড়িতে উঠলো । গাড়ি ছুতে চলল এটিওর অফিসের দিকে । আকিব শান্ত ভাবে বসে আছে চারুর পাশে । চারুও কোন কথা বলছে না । আপন মনে নিজের মোবাইল টিপছে । মেয়েটার ভেতরে যে কিছু আছে সেটা আকিব টের পাচ্ছে । 

চারুলতা কালো রংয়ের একটা টিশার্ট পরে আছে । নিচে একটা সাদা রংয়ের লেগিংস । একদম টাইট হয়ে শরীরের সাথে লেগেছে আছে লেগিংসটা । সম্ভবত রাতের পোশাক এটা পরেই সে ঘুমিয়েছিল । কেবল একটা ওড়না জড়িয়ে নিয়েছে গায়ে ।

এই পোশাকই বলে দিচ্ছে যে চারুর আসলে কোন প্রকার বিকার নেই । যে কোন মেয়ের পক্ষেই রাতের বেলা এই রকম পুলিশের গাড়িতে করে কোথায় যাওয়ার সময় এতো স্বাভাবিক থাকা সম্ভব না । কিন্তু এই মেয়ে এমন ভাবে বসে আছে যেন এটা ওর কাছে ডাল ভাতের মত একটা ব্যাপার ।

আকিব খানিকটা কৌতুহলী হয়ে জানতে চাইলো, লতিফ স্যার তোমার খুব প্রশংসা করলেন ? কী এমন করেছিলে তুমি ?

মোবাইল থেকে চোখ না তুলেই চারু বলল, তেমন কিছুই না । আসলে লতিফ আঙ্কেল আমার গলার গান খুব পছন্দ করেছিলেন । আমাদের স্কুলের এক বার্ষিক ক্রিয়া অনুষ্ঠানে তিনি এসেছিলেন প্রধান অতিথি হয়ে । সেখান থেকেই আমাকে চিনেন । 

আকিব খেয়াল করলো চারু তার প্রশ্নটা খানিকটা এড়িয়ে গেল । সে উত্তর দিতে চায় না । আকিবের মেজাজটা আরও একটু খারাপ হল । পুলিশ অফিসার হিসাবে আকিবের সুনাম আছে বেশ । তার তীক্ষ বুদ্ধির কারণে সে অনেক এগিয়ে গেছে সবার থেকে । কিন্তু সেই সাথে তার একটা বদনামও আছে। তার কথার জবাব না দিলে সে খুব জলদিই মেজাজ হারিয়ে ফেলে । এই কারণে ইন্টারোগেশন রুম থেকে সে নিজেকে একটু দুরেই রাখে সব সময় ।  এছাড়া সব সময় নিজেকে সে একটু সুরিয়র মনে করে অন্য সবার থেকে । ভাবে সবাই তাকে মান্য করে চলবে । পুলিশের চাকরিতে প্রবেশের পরে এই অভ্যাসটা তার বৃদ্ধি পেয়েছে অনেক মাত্রায় । তাই যখনই দেখে সামনের কেউ তাকে সমীহ করছে না, তখন তার উপর স্বভাবই বিরক্ত হয় সে । চারুর উপরে বিরক্তিটা তাই আসলো চট করেই ।

পরের পর্ব

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 4.8 / 5. Vote count: 24

No votes so far! Be the first to rate this post.


Discover more from অপু তানভীর

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

About অপু তানভীর

আমি অতি ভাল একজন ছেলে।

View all posts by অপু তানভীর →