এই সব মিথ্যে গল্প ০৮

oputanvir
4.4
(74)

মিমি রান্না ডাইনিং রুমে এসে অবাক হয়ে খেয়াল করে দেখলো সেখানে নাস্তা সাজানো রয়েছে । বিয়ের পর আদনানের বাসায় আজকে তার প্রথম সকাল । নতুন স্থানে তার ঘুম আসে না । আর বিয়ের তো ঠিক ঠাক মত ঘুম আসে না রাতে এখনও । নতুন পরিবেশে মানিয়ে নিতে একটু সময় লাগছে । কাল সন্ধ্যায় সে ঢাকাতে এসেছে আদনানের সাথে । আদনানের বাসায় এখন তার নতুন জীবন শুরু হয়েছে। কাল রাতে শোয়ার সময়ই ভেবেছিলো যে সকালে উঠে আদনানের অফিস যাওয়ার আগে সে নাস্তা বানিয়ে দিবে । রান্নাঘর পরিদর্শন করে সব কিছু ঠিকঠাক করেও নিয়েছিলো কিন্তু আজকে সকালে উঠতে একটু দেরি হয়ে গেছে । সকাল আটটায় আদনান অফিসে যায় । এখন বাজে সাতে সাতটা । নিজের উপরে একটু মেজাজ গরম হল কিছু সময় । তারপর দ্রুত রান্না ঘরের দিকে রওয়া দিল হাত মুখ না ধুয়েই । যদি চট জলদি কিছু তৈরি করে দেওয়া যায় ! কিন্তু ডায়নিংয়ে আসতেই টেবিলের উপরে সাজানো নাস্তার দিকে তাকিয়ে থেমে গেল । কাছে গিয়ে খেয়াল করে দেখলো পরোটা আর ভাজি বাসায় বানানো । বাইরে থেকে কিনে আনা নয় ।
কে বানালো এই নাস্তা ?
আদনান?

নিজের চোখকে যেন বিশ্বাস করতে পারলো না সে । ঘুম থেকে উঠে মিমি শুনতে পেয়েছিল ওয়াশরুম থেকে শব্দ আসছে । আদনান গোসল করছে । গোসলে যাওয়ার আগে নাস্তা বানিয়ে গেছে । কিছু সময় সে চেয়ারে বসে রইলো নাস্তার দিকে তাকিয়ে । এখনও তার ঠিক ব্যাপারটা হজম হচ্ছে না । স্বামীর বাসায় এসে প্রথম সকালে স্বামী নিজের হাতে তার জন্য নাস্তা বানিয়েছে । এটা কি বাস্তবে ঘটছে নাকি সে এখনও ঘুমিয়ে আছে । স্বপ্নের ভেতরে এসব হচ্ছে ।

আরও কিছু সময় আদনান ডায়নিংয়ে এসে হাজির হল । অফিসের জন্য রেডি হয়ে গেছে । ওকে বসে থাকতে দেখে বলল, উঠে পড়েছো দেখছি । ঘুম ভাল হয়েছে ?
মিমি সেই প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে বলল, এই নাস্তা তুমি বানিয়েছো ?
-হ্যা । কেন?
-প্রতিদিন বানাও ?
-হ্যা । বুয়া রুটি গুলো বানিয়ে দিয়ে যায় । ফ্রিজে থাকে । সকালে উঠে আমি ভেজে নিই ।
-আর এই ভাজি ?
-এটা আমার বানানো !
-ডিম ভাজি তোমার করা !
-হ্যা বাবা । এতে অবাক হওয়ার কী আছে ? আমি সেই ইন্টারমিডিয়েট থেকে ঢাকায় থাকি । তখন থেকেই রান্না করে খাওয়ার অভ্যাস আমার !
-সব রান্না পারো তুমি !
-হ্যা । কেন পারবো না ?

মিমি এবার বলল, তাহলে কিন্তু আমি রান্না বান্না কিছু করবো না । একদম করবো না !
আদনান হেসে বলল, ভয় নেই রান্না করতে হবে না । আপাতত তুমি পড়াশোনায় মন দাও । পড়া শেষ হোক তারপর রুটিন করে রান্না করা যাবে । এগারোটার দিকে বুয়া আসবে । তার হাতের রান্না বেশ ভাল । তাকে দিয়ে রান্না করিয়ে নিতে পারো । যদিও আমি বিকেলে অফিস থেকে নিজের রান্না করতাম প্রতিদিন ।

মিমি যখন আদনানের সাথে বসে সকালের নাস্তা করছিলো তখনও ঠিক বিশ্বাস হচ্ছিলো না যে ওর সাথে এই ঘটনাটা ঘটছে । বাংলাদেশের কোন পুরুষ সকালে নাস্তা বানিয়ে তারপর অফিসে যাচ্ছে, এমনটা তো কল্পনাতেই আনা সম্ভব না । আদনানের প্রতি ভালোবাসা তৈরি হল আরও কিছুদিন পরে । তখন মিমির জীবন যাত্রা স্বাভাবিক রুটিনে ফিরে এসেছে । ক্লাস শুরু হয়েছে । নিজের জীবনের সাথে খাপ খাইয়ে নিয়েছে মোটামুটি ।

সপ্তাহের অন্যান্য দিন আদনান আর মিমি দুজনেই ব্যস্ত থাকে সারাটা দিন । ক্লাস শেষ করে বিকেলের দিকে মিমি আর সন্ধ্যায় ফিরে আসে আদনান । তারপর দুজন এক সাথে গল্প গুজব করে । রান্না করে একসাথে । কোন কোন দিন দুজনেই বাইরে যায় ।

ছুটির দিন ছিল । সকালের নাস্তার পরে মিমি টিভির সামনে বসেছে । এমন সময় আদনান এসে হাজির হল ওর সামনে । হাতে একটা ঔষধের পাতা । সেটার দিকে ইঙ্গিত করে মিমিকে বলল, এটা কী ?
মিমি বলল, তুমি জানো না এটা কী ?
-জানি কিন্তু এটা তোমার কাছে কী করছে ?
-বাহ রে ! এটা কেমন কথা ! আমি এটা কেন খাই সেটা জানো না ? আমি এখন কোন ভাবেই বাচ্চা নিতে চাই না । আগে আমার মাস্টার্স শেষ হোক । তারপর !
-বাচ্চা এখন নিতে চাও না সেটা বুঝলাম । সেটা নিয়ে আমি কিছু বলছি না । কিন্তু এই পিল খেলে মেয়েদের কত রকম সমস্যা হয় তুমি জানো না !
মিমি বলল, জানি কিন্তু কী করবো ! সবাই তো খায় !
-সবাই আগুণে ঝাপ দিবে বলে তুমিও দিবে? আজ থেকে এই জিনিস খাওয়া একদম বন্ধ । এবার থেকে আমরা কন্ডম ব্যবহার করবো । দরকার হলে আমি গিয়ে অন্য ব্যবস্থা করবো । তারপরেও পিল খাবে না । এটা আমাদের দেশের মেয়েদের উপর চাপিয়ে দেওয়া একটা অন্যায় । এই পিল খেলে মেয়েদের কত রকমের সমস্যা সৃষ্টি হয় তার কোন ঠিক নেই ।

মিমি দেখলো আদনান ওর সামনেই ঔষধের প্যাকেটটা ডাস্টবিনে ফেলে দিলো । মিমি কিছু সময় সেদিকে তাকিয়ে রইলো । একভাবে বসেই রইলো । একটা সময়ে কেবল অনুভব করতে শুরু করলো যে আদনানের প্রতি একটা আলাদা ভালোলাগা কাজ করছে । এই ভাললাগাটা সে কোন ভাবেই ভাষায় প্রকাশ করতে পারবে না ।

টিভি বন্ধ করে সে শোবার ঘরের দিকে এগিয়ে গেল । আদনানকে দেখতে পেল নিজের ল্যাপটপ বের করে কি যেন করছে । এক প্রকার জোর করেই সেই ল্যাপটপের ঢাকটা বন্ধ করে দিল !
-কী হল !
আদনান বুঝতে পারলো না । মিমি বলল, লাভ মি !
-অ্যা? কী বললে?
-আরও পরিস্কার ভাষায় বলতে হবে এখন ? এতো গাধা কেন ?
আদনান বলল, হঠাৎ !! কী এমন হল ?
-তুমি বুঝবে না । এতো কিছু বুঝতে হবে না । লাভ মি !

তারপর ….. তারপরের গল্প থাকুক তারপরের জন্য …..

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 4.4 / 5. Vote count: 74

No votes so far! Be the first to rate this post.


Discover more from অপু তানভীর

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

About অপু তানভীর

আমি অতি ভাল একজন ছেলে।

View all posts by অপু তানভীর →