মিমি রান্না ডাইনিং রুমে এসে অবাক হয়ে খেয়াল করে দেখলো সেখানে নাস্তা সাজানো রয়েছে । বিয়ের পর আদনানের বাসায় আজকে তার প্রথম সকাল । নতুন স্থানে তার ঘুম আসে না । আর বিয়ের তো ঠিক ঠাক মত ঘুম আসে না রাতে এখনও । নতুন পরিবেশে মানিয়ে নিতে একটু সময় লাগছে । কাল সন্ধ্যায় সে ঢাকাতে এসেছে আদনানের সাথে । আদনানের বাসায় এখন তার নতুন জীবন শুরু হয়েছে। কাল রাতে শোয়ার সময়ই ভেবেছিলো যে সকালে উঠে আদনানের অফিস যাওয়ার আগে সে নাস্তা বানিয়ে দিবে । রান্নাঘর পরিদর্শন করে সব কিছু ঠিকঠাক করেও নিয়েছিলো কিন্তু আজকে সকালে উঠতে একটু দেরি হয়ে গেছে । সকাল আটটায় আদনান অফিসে যায় । এখন বাজে সাতে সাতটা । নিজের উপরে একটু মেজাজ গরম হল কিছু সময় । তারপর দ্রুত রান্না ঘরের দিকে রওয়া দিল হাত মুখ না ধুয়েই । যদি চট জলদি কিছু তৈরি করে দেওয়া যায় ! কিন্তু ডায়নিংয়ে আসতেই টেবিলের উপরে সাজানো নাস্তার দিকে তাকিয়ে থেমে গেল । কাছে গিয়ে খেয়াল করে দেখলো পরোটা আর ভাজি বাসায় বানানো । বাইরে থেকে কিনে আনা নয় ।
কে বানালো এই নাস্তা ?
আদনান?
নিজের চোখকে যেন বিশ্বাস করতে পারলো না সে । ঘুম থেকে উঠে মিমি শুনতে পেয়েছিল ওয়াশরুম থেকে শব্দ আসছে । আদনান গোসল করছে । গোসলে যাওয়ার আগে নাস্তা বানিয়ে গেছে । কিছু সময় সে চেয়ারে বসে রইলো নাস্তার দিকে তাকিয়ে । এখনও তার ঠিক ব্যাপারটা হজম হচ্ছে না । স্বামীর বাসায় এসে প্রথম সকালে স্বামী নিজের হাতে তার জন্য নাস্তা বানিয়েছে । এটা কি বাস্তবে ঘটছে নাকি সে এখনও ঘুমিয়ে আছে । স্বপ্নের ভেতরে এসব হচ্ছে ।
আরও কিছু সময় আদনান ডায়নিংয়ে এসে হাজির হল । অফিসের জন্য রেডি হয়ে গেছে । ওকে বসে থাকতে দেখে বলল, উঠে পড়েছো দেখছি । ঘুম ভাল হয়েছে ?
মিমি সেই প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে বলল, এই নাস্তা তুমি বানিয়েছো ?
-হ্যা । কেন?
-প্রতিদিন বানাও ?
-হ্যা । বুয়া রুটি গুলো বানিয়ে দিয়ে যায় । ফ্রিজে থাকে । সকালে উঠে আমি ভেজে নিই ।
-আর এই ভাজি ?
-এটা আমার বানানো !
-ডিম ভাজি তোমার করা !
-হ্যা বাবা । এতে অবাক হওয়ার কী আছে ? আমি সেই ইন্টারমিডিয়েট থেকে ঢাকায় থাকি । তখন থেকেই রান্না করে খাওয়ার অভ্যাস আমার !
-সব রান্না পারো তুমি !
-হ্যা । কেন পারবো না ?
মিমি এবার বলল, তাহলে কিন্তু আমি রান্না বান্না কিছু করবো না । একদম করবো না !
আদনান হেসে বলল, ভয় নেই রান্না করতে হবে না । আপাতত তুমি পড়াশোনায় মন দাও । পড়া শেষ হোক তারপর রুটিন করে রান্না করা যাবে । এগারোটার দিকে বুয়া আসবে । তার হাতের রান্না বেশ ভাল । তাকে দিয়ে রান্না করিয়ে নিতে পারো । যদিও আমি বিকেলে অফিস থেকে নিজের রান্না করতাম প্রতিদিন ।
মিমি যখন আদনানের সাথে বসে সকালের নাস্তা করছিলো তখনও ঠিক বিশ্বাস হচ্ছিলো না যে ওর সাথে এই ঘটনাটা ঘটছে । বাংলাদেশের কোন পুরুষ সকালে নাস্তা বানিয়ে তারপর অফিসে যাচ্ছে, এমনটা তো কল্পনাতেই আনা সম্ভব না । আদনানের প্রতি ভালোবাসা তৈরি হল আরও কিছুদিন পরে । তখন মিমির জীবন যাত্রা স্বাভাবিক রুটিনে ফিরে এসেছে । ক্লাস শুরু হয়েছে । নিজের জীবনের সাথে খাপ খাইয়ে নিয়েছে মোটামুটি ।
সপ্তাহের অন্যান্য দিন আদনান আর মিমি দুজনেই ব্যস্ত থাকে সারাটা দিন । ক্লাস শেষ করে বিকেলের দিকে মিমি আর সন্ধ্যায় ফিরে আসে আদনান । তারপর দুজন এক সাথে গল্প গুজব করে । রান্না করে একসাথে । কোন কোন দিন দুজনেই বাইরে যায় ।
ছুটির দিন ছিল । সকালের নাস্তার পরে মিমি টিভির সামনে বসেছে । এমন সময় আদনান এসে হাজির হল ওর সামনে । হাতে একটা ঔষধের পাতা । সেটার দিকে ইঙ্গিত করে মিমিকে বলল, এটা কী ?
মিমি বলল, তুমি জানো না এটা কী ?
-জানি কিন্তু এটা তোমার কাছে কী করছে ?
-বাহ রে ! এটা কেমন কথা ! আমি এটা কেন খাই সেটা জানো না ? আমি এখন কোন ভাবেই বাচ্চা নিতে চাই না । আগে আমার মাস্টার্স শেষ হোক । তারপর !
-বাচ্চা এখন নিতে চাও না সেটা বুঝলাম । সেটা নিয়ে আমি কিছু বলছি না । কিন্তু এই পিল খেলে মেয়েদের কত রকম সমস্যা হয় তুমি জানো না !
মিমি বলল, জানি কিন্তু কী করবো ! সবাই তো খায় !
-সবাই আগুণে ঝাপ দিবে বলে তুমিও দিবে? আজ থেকে এই জিনিস খাওয়া একদম বন্ধ । এবার থেকে আমরা কন্ডম ব্যবহার করবো । দরকার হলে আমি গিয়ে অন্য ব্যবস্থা করবো । তারপরেও পিল খাবে না । এটা আমাদের দেশের মেয়েদের উপর চাপিয়ে দেওয়া একটা অন্যায় । এই পিল খেলে মেয়েদের কত রকমের সমস্যা সৃষ্টি হয় তার কোন ঠিক নেই ।
মিমি দেখলো আদনান ওর সামনেই ঔষধের প্যাকেটটা ডাস্টবিনে ফেলে দিলো । মিমি কিছু সময় সেদিকে তাকিয়ে রইলো । একভাবে বসেই রইলো । একটা সময়ে কেবল অনুভব করতে শুরু করলো যে আদনানের প্রতি একটা আলাদা ভালোলাগা কাজ করছে । এই ভাললাগাটা সে কোন ভাবেই ভাষায় প্রকাশ করতে পারবে না ।
টিভি বন্ধ করে সে শোবার ঘরের দিকে এগিয়ে গেল । আদনানকে দেখতে পেল নিজের ল্যাপটপ বের করে কি যেন করছে । এক প্রকার জোর করেই সেই ল্যাপটপের ঢাকটা বন্ধ করে দিল !
-কী হল !
আদনান বুঝতে পারলো না । মিমি বলল, লাভ মি !
-অ্যা? কী বললে?
-আরও পরিস্কার ভাষায় বলতে হবে এখন ? এতো গাধা কেন ?
আদনান বলল, হঠাৎ !! কী এমন হল ?
-তুমি বুঝবে না । এতো কিছু বুঝতে হবে না । লাভ মি !
তারপর ….. তারপরের গল্প থাকুক তারপরের জন্য …..