আদর্শ বাঙালি নারীর বৈশিষ্ট্য

oputanvir
4.2
(6)

আমাদের চোখে আদর্শ বাঙালি নারীর চেহারা আসলে কেমন? একেক জনের চোখে একেক রকম । তবে আদর্শ নারীকে সবাই শাড়িতে দেখতে পছন্দ করে । আদর্শ নারীর চুল থাকবে লম্বা, ঘন কালো চোখ হবে টানা টানা । শাড়িতে তাকে মানাবে চমৎকার । পায়ে দেওয়া থাকবে আলতা হাতে মেহেদি । আমরা যখনই আমাদের মনে আদর্শ বাঙালি নারীর চিত্র কল্পনা করি তখন অনেকের চোখেই এই চিত্রটা ফুটে ওঠে । গল্প উপন্যাসে লেখকগনও এমন চমৎকার ভাবে নারীদের চিত্র ফুটিয়ে তুলেছেন । আমরাও ছোট বেলা থেকে সেই সব গল্প উপন্যাস পড়ে পড়ে আমাদের মানসপটে তেমন ভাবেই আদর্শ বাঙালি নারীর চিত্র কল্পনা করেছি । এই রকম একজন আদর্শ নারীকেই নিজেদের প্রেমিকা কিংবা স্ত্রী রূপে কল্পনা করেছি । কিন্তু বাস্তবে আমরা আসলেই কি এমন নারীকেই আদর্শ রূপে চাই ?

কিন্তু আসল আদর্শ বাঙালি নারীর আসলে উপরের এই সবের কিছুই না । এটা বলা যায় অনেকটা বাহ্যিক রূপ । অনেকটা হাতির দাঁতের মত। হাতির দাঁত যেমন দেখানোর একটা আর খাওয়ার জন্য আরেকটা ঠিক তেমন আদর্শ বাঙালি নারী হওয়ার জন্য বৈশিষ্ট্য এই একই । মানুষ আপনাকে বলবে দেখানোরটা কিন্তু খাওয়ার দাঁত আলাদা ! আসুন দেখে নেওয়া যাক আদর্শ বাঙালি নারী হতে হলে কী কী বৈশিষ্ট্য থাকতে হবে !

১. আদর্শ বাঙালি নারী সব সময় তার স্বামীর কথা মত চলবে । এটা হচ্ছে সব থেকে বড় বৈশিষ্ট্য । যে নারীর তার স্বামীর কথা অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলে না সেই নারী কোন দিন আদর্শ বাঙালি নারী হতে পারবে না । কথা মেনে চলা মানে কিন্তু এটা না যে দুজন মিলে মিশে কোন কাজ করা । কথা মেনে চলা মানে হচ্চে স্বামীর মন মর্জি মত চলা । স্বামী যদি বসতে বলে তবে বসতে হবে দাড়িয়ে থাকতে বললে দাড়িয়ে থাকতে হবে – এমন ভাবে মেনে চলা !

২. আদর্শ বাঙালি নারী চাকরি করবে না । আর যদি কোন পরিস্থির কারণে চাকরি করতেই হয় তবে সেই চাকরিতে পাওয়া বেতনের পরিমান অবশ্যই তার স্বামীর থেকে কম হতে হবে । কোন ভাবেই বেশি হওয়া চলবে না । যদি স্বামীর বেতন থেকে স্ত্রীর বেতন একটু বেশি হয়ে যায় এমন কী সমান সমান হলেও তার নাম আদর্শ বাঙালি নারী খাতা থেকে কাটা যাবে !

৩. আদর্শ বাঙালি নারী বেশি ফটর ফটর করবে না । তার স্বামী যা বলবে তা মাথা পেতে নিবে । কেবল স্বামীই নয়, স্বামীর বাড়ির লোকজন যা বলবে সেটা কোন প্রকার প্রতিবাদ আলাপ আলোচনা না করেই সেটা কেউ সঠিক মনে করে নিয়ে জীবন যাপন করবে !

৪. স্বামী নিজের বাবা মায়ের সেবা যত্ন না করলেও আদর্শ বাঙালি নারী স্বামীর বাবা মাকে সেবা যত্ন করবে । করতেই হবে !

৫. আগেই বলেছি যে আদর্শ বাঙালি নারী চাকরি করবে না । তার জীবনের এক মাত্র লক্ষ্য হবে যে স্বামীর সংসারের সেবা করা । সন্তান লালন পালন করাই তার জীবনের এক মাত্র ব্রত হবে । যদি কোন কারণে সে চাকরি করেও তবে চাকরিতে যাওয়ার আগে স্বামী, শ্বাশুড়ির জন্য রান্নাবান্না করেই তবে যাবে অফিসে । অফিস থেকে ফিরে এসেও একই ভাবে পরিবারের সবার জন্য রান্না করবে । খাবার পরিবেশন করবে !

৬. একজন আদর্শ বাঙালি নারী কখনই পরিবারের অন্য সদস্যদের আগে খাবার গ্রহন করবে না । সবাইকে খাইয়েই তারপর নিজে খাবে । কোন কারণে যদি খাবার কম হয়, তাহলে সবাইকে পেট পুরে খাইয়ে নিজে আধপেট খাবে । তরাকরীর ভাল ভাল অংশ খাবে পরিবারের অন্য সদস্যরা । ভুলেও একজন আদর্শ নারী বড় ভাল মাংসের টুকরো কিংবা বড় মাছের পিচটা নিজের পাতে তুলে নিবে না । মাথের মাথা খাওয়ার কথা তো কল্পনাই করতে পারবে না !

৭. আদর্শ নারী হলে স্বামীর হাতে একটু আধটু মাইর খেতেই হবে । চড় থাপ্পড় অতি মামুলি বিষয় হিসাবে নিতে । আরও ভাল করে বললে স্বামীর ভালোবাসা হিসাবেই নিতে হবে । তবে সেটাকে কোন ভাবেই ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স হিসাবে দেখা যাবে না । এটাই নিয়তি ধরে নিতে হবে । আদর্শ বাঙালি নারী কখনই স্বামীর এই মাইর দেওয়ার প্রতিবাদ করবে না ।

৮. স্বামী যদি অন্য নারীর প্রতি আসক্ত হয়, তাহলে একজন আদর্শ নারী মনে করে নিবে যে এটা আসলে তার নিজেরই দোষ । সেই তার স্বামীকে ধরে রাখতে পারে নি । পুরুষ মানুষ তো এই রকম একটু আধটু করবেই ।

৯. একজন আদর্শ বাঙালি নারীর আসলে কোন উচ্চাকাঙ্খা থাকবে না । স্বামী সংসারের জন্য নিজের সকল সাধ আহ্লাদ বাদ দিয়ে দিতে হবে । সংসারের সব বড় বড় ত্যাগ তাকেই করতে হবে । তার উপরে যে যে সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া হয় সেটাকেই মেনে নিতে হবে !

১০. যদি সে বিবাহিত না হয় তাহলে একজন আদর্শ মেয়ে হতে হলে প্রথমেই মনের ভেতরে এই বিশ্বাস স্থাপন করে নিতে হবে যে জীবনে ভালভাবে বেঁচে থাকতে হলে তার একজন ভাল স্বামী দরকার । জীবনে ভাল একটা বিয়ে হওয়ার হবে তার জীবনের প্রধান লক্ষ্য । অন্য সকল লক্ষ্য যেমন চাকরি পাওয়া, নিজে প্রতিষ্ঠিত হওয়া, ভ্রমন এসব মোটেই কোন মেয়ের জীবনের লক্ষ্য হবে না !

১১. আদর্শ বাঙালি নারীর গলার আওয়াজ সব হবে নিচু । কোন ভাবেই কারো সাথেই উচু গলাতে কথা বলা যাবে না । যদি রাস্তায় কোন পুরুষ কর্তৃক কোন নারী মলেস্টারের শিকার হয়, কেউ যদি বাসে তার শরীরে অনৈতিক ভাবে স্পর্শ করে তাহলে উচু গলায় কোন প্রতিবাদ করা যাবে না । আদর্শ বাঙালী নারীরা এসব করে না ।

১২. আদর্শ বাঙালি নারীর কোন ছেলে বন্ধু থাকতে পারবে না । ছেলে বন্ধু থাকা মানেই হচ্ছে সেই ছেলের সাথে শুয়ে পড়া । সুতরাং সকল প্রকার ছেলে বন্ধু পরিহার করতে হবে । তবে হ্যা স্বামীর মেয়ে বন্ধু থাকাটা স্বাভাবিক মনে করতে হবে !

১৩. আদর্শ বাঙালি নারী সব সময়ই বাসায় থাকবে । একা একা বের হবে না । যদিও কোন কারণে বাইরে বের হতেই হয় তাহলে অবশ্যই সন্ধ্যার পরপরই ফেরৎ আসতে হবে । একটু রাত করে বাসার বাইরে থাকাই যাবে না ! কোন ভাবেই না ।

১৪. আদর্শ বাঙালি নারীদের কেউ পথে ঘাটে টিজ করে না । যদি টিজিংয়ের শিকার হয় তাহলে ধরেই নিতে হবে যে এটা আসলে তার নিজের দোষ । তার কোন আচরনে অবলা পুরুষ বাধ্য হয়ে তাকে টিজ করেছে । সুতরাং নিজের আচরণ ঠিক করতে হবে ।

১৫. আদর্শ বাঙালি নিজেকে সকল প্রকার খেলাধুলা বিনোদন থেকে দূরে রাখবে । এসব আদর্শ নারীরা করে না । এসব করলে এদের ভাল বিয়ে হবে না ।

মেয়েদের যাদের যাদের ভেতরে এই বৈশিষ্ট নেই তারা আসলে আদর্শ বাঙালি মেয়ে হতে পারেন নি । আজই তালিম নিন হয়ে উঠুন সমাজের চোখে আদর্শ বাঙালি নারী !

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 4.2 / 5. Vote count: 6

No votes so far! Be the first to rate this post.


Discover more from অপু তানভীর

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

About অপু তানভীর

আমি অতি ভাল একজন ছেলে।

View all posts by অপু তানভীর →