চোখ

oputanvir
4.5
(26)

-বসবো এখানে ?

মেয়েটি আমার দিকে মুখ তুলে তাকালো । কিছু বলতে চেয়েও যেন বলল না । তবে তার চোখে আমি কোন প্রকার রাগ কিংবা বিরক্তি দেখলাম না । বরং সেখানে অন্য কিছু একটা দেখতে পেলাম । যে জিনিসটার আকর্ষনে আমি মেয়েটার দিকে এগিয়ে এসেছি । আমি এতো কিছু চিন্তা না করে বসেই পড়লাম মেয়েটির পাশে।

বিকেলবেলায় সংসদ ভবন এলাকায় মানুষের ভীড়টা লক্ষ্যনীয় । বিশেষ করে ছুটির দিন গুলোতে তো এখানে লোকের অভাব নেই । আমার মানুষজন দেখতে ভালই লাগে । বাসায় একা একা থাকলে সময় কাটতে চায় না । এর থেকে চারিপাশে মানুষের ভিতরে থাকলে তাদেরকে দেখে সময় কেটে যায় । প্রতিদিনই যে আসি এমন না । তবে এমন বিশেষ বিশেষ দিন গুলোতে আমার সময় কিছুতেই কাটতে চায় না । তাই বাইরে আসি ।

তবুও আজকে প্রথমে ভেবেছিলাম সময়টা বাসাতেই কাটাবো পরে ভাবলাম থাক, একটু হেটে আসি । সংসদ ভবন এলাকায় বসে মানুষজন দেখছি তখনই মেয়েটির দিকে চোখ গেল । সম্ভবত আমার আগেই এসেছে । আমার ঠিক ডান দিকে বসে আছে । মুখটা দুর থেকে এতো বেশি মলিন মনে হল যে দেখলেই বোঝা যায় যে এই মেয়ে কারো জন্য অপেক্ষা করছে না । একা একাই এখানে এসেছে । কারো জন্য অপেক্ষারত মানুষের মুখের ভাব অন্য রকম থাকে ।

আমি মেয়েটার দিকে থেকে চোখ সরিয়ে নিতেই কেন জানি আমার আবারও মেয়েটার দিকে তাকাতে মনে হল । কোন কারণ নেই, তবুও আমার মনটা যেন বলছে মেয়েটার দিকে আমার তাকাতেই হবে ।
আমি চোখ ঘুরিয়ে যখনই মেয়েটার দিকে তাকালাম তখনই মেয়েটার সাথে আমার চোখাচোখি হল ।
বুকের মাঝে কেমন একটা ধক করে উঠলো । মেয়েটার চোখের ভিতর অদ্ভুত কিছু একটা আছে । আমি চোখ সরিয়ে নিতে গিয়েও নিতে পারলাম না । মেয়েটি নিজেই চোখ সরিয়ে নিল ।

আমি একটু পরেই যন্ত্রের মত উঠে গিয়ে মেয়েটির সামনে গিয়ে দাড়ালাম ।

বসতে বসতে বললাম
-আপনার কি মন খারাপ কোন কারণে ?
-আপনার কেন মনে হল আমার মন খারাপ ?
-জানি না । কেবল আপনার চোখের দিকে তাকিয়ে মনে হল ।
-তাই? চোখের ভাষা আপনি পড়তে পারেন ?
-হয়তো ? আবার হয়তো না ।
-আচ্ছা, আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলুন তো আমি এখন কি ভাবছি ?

এসব কি বলছি ? কেনই বা বলছি ।
আমার কোন ধারনা নেই ।
আমি মেয়েটার চোখের দিকে তাকালাম । সত্যি বলতে কি দুর থেকে মেয়েটার চোখ দেখে আমার মেয়েটাকে খানিকটা বিষন্ন মনে হয়েছিল কিংবা অন্য কিছু, এতো কাছ থেকে এবং সরাসরি তাকানোর ফলে মেয়েটার চোখ টা আমার কাছে কেমন যেন অন্য রকম মনে হল । এমন চোখ আমি অন্য কোন মেয়ের দেখেছি বলে পরছে না আপাতত । নেশা ধরার মত ।
কেমন একটা অন্য রকম রহস্য রয়েছে মেয়েটার ভিতর ।
-কই বলুন ? আমার মনে কি আছে ?
-আপনি এখন ভাবছেন যে এমন কেউ কি আজকে আমাকে এই রোজ ডে তে একটা রোজ দিবে ?

আমি কথাটা বলার পরে নিজেই খানিকটা চমকে উঠলাম । আমি কি মেয়েটার সাথে ফ্ল্যার্ট করার চেষ্টা করছি ?
কেন করছি ?
আমি আসলেই ব্যাপারটা ঠিক মত বুঝতে পারছি না । তবে মেয়েটা যে আমাকে কোন কারণে খুব বেশি আকর্ষন করছে সেটা আমি পরিস্কার বুঝতে পারছি । বিশেষ করে মেয়েটার চোখের ভিতর কিছু আছে । অন্যরকম কিছু একটা আছে ।

মেয়েটা কিছুটা সময় আমার দিকে তাকিয়ে থেকে হেসে ফেলল । বেশ জোরেই হাসলো ।
-তাই ? আমার চোখের ভাষা পড়ে আপনি এই তথ্য খুজে পেলেন ?
-হুম । সত্যি ? এই তথ্যই পেলাম। কম্পিউটারের তথ্য যেমন করে প্রিন্ট করা যায়, কিন্তু চোখের তথ্য প্রিন্ট করার কোন উপায় নেই । থাকলে প্রিন্ট করে দেখাতাম ।
আমার এই কথা শুনে মেয়েটি আরও জোরে হেসে ফেলল ।
আমি বললাম
-তবুও এই দেখুন প্রমান হিসাবে আমি আপনার জন্য গোলাপ নিয়ে এসেছি ।

পকেট থেকে গোলাপটা বের করে মেয়েটার দিকে বাড়িয়ে দিলাম । যদিও গোলাপটা আমি এমনিতেই কিনেছিলাম । কাউকে দেওয়া জন্য নয় । অবশ্য কাউকে দেওয়ার মত আমার কেউ নেইও।

মেয়েটি হাসতে হাসতেই আমার হাতের গোলাপ টা নিল।
-হ্যাপি গোলাপ ডে , মানে রোজ ডে।
-থ্যাঙ্কিউ। আমি অন্যন্যা।
-আমি সায়েম, সায়েম হাসান ।
-তো মিস্টার হাসান, কি করেন আপনি ?
-কিছু না, হাওয়া খাই, মাঝে মাঝে সুন্দরী মেয়েদের সাথে বিকেল খাই ।
-বিকেল কিভাবে খেতে হয় ?
-এই তো এখন আমরা যা করছি । এভাবেই।
-ইন্টারেস্টিং । তা আর কি কি খাওয়া যায় ?
-অনেক কিছুই।

অন্যন্যার সাথে কথা চলতে থাকলো। কখন যে সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত হয়ে গেছে টেরই পায় নি । এক সময় অন্যন্যা বলল
-যেতে হবে ।
-এখনই ?
-হুম। রাত হয়ে যাচ্ছে ।
-আপনার সাথে সময় ভাল কাটলো । আসলে কখন যে সময় চলে গেল টেরই পেলাম না । এখন বাসায় গেলে আর সময় কাটতে চাইবে না ।

অন্যন্যা কি যেন ভাবলো । তারপর আমাকে খনিকটা অবাক করে দিয়ে বলল
-যদি সমস্যা না থাকে তাহলে আপনি আমার সাথে আসতে পারেন ?
-মানে ?
-আমি বাসায় একাই থাকি । কেউ নেই আর কি । আপনি চাইলে আমার সাথে আসতে পারেন । আপনার সময় কাটাতে সমস্যা হবে না ।

আমি এতো তাড়াতাড়ি এই প্রস্তাব আশা করি নি । তবুও আজকে কেন জানি রাজি হয়ে গেলাম । কেন রাজি হলাম সেটা আমার কাছে পরিস্কার না । আমি তো এমন মানুষ নই মোটেও । তাহলে ?
কিছু কি সমস্যা আছে ? আমি নিজেকে বোঝানোর চেষ্টা করলাম । বিশেষ করে অন্যন্যার ঐ চোখের মাঝে এমন কিছু অবশ্যই আছে যেটা আমাকে ওর দিকে আকর্ষিত করে চলেছে । আমার স্বাভাবিক চিন্তা ভাবনার উপর প্রভাব ফেলছে ।

বললাম
-চলুন ।

অন্যন্যার নিজের গাড়ি আছে জেনে একটু অবাকই লাগলো । বড় লোকের মেয়ে নিশ্চয়ই । গাড়ি আবার সে নিজেই চালায় ।
কালো রংয়ের ফারারীরটার ভিতরে ঢুকতেই ভেতরে কেমন একটা মিষ্টি মিষ্টি সুবাস আমার নাকে এসে লাগলো । প্রথম প্রথম ভালো লাগলেও একটু পরেই আমার মাথার ভেতরে কেমন একটা ঘোর লাগা সৃষ্টি হল । আমি ঠিক বুঝতে পারছিলাম আমার সাথে কি হচ্ছে ।
অন্যন্যার সাথে দেখা হওয়ার পর থেকেই সব কিছু কেমন দ্রুত ঘটে চলেছে । বলা যায় যা কিছু হচ্ছে আমার চোখের সামনেই হচ্ছে কিন্তু সেটাতে যেন আমার কোন নিয়ন্ত্রন নেই । মনে হচ্ছে আমাকে ঠিক নাটকের স্ক্রীপ্টের মত কেউ বলে দিচ্ছে আর আমি সেই মোতাবেক অভিনয় করে চলেছি ।

নিঃশব্দে গাড়ি চলছে । আমার তখনই নিজের উপর নিয়ন্ত্রন ফিরে পেলাম মনে হল । পরিস্কার বুঝতে পারলাম এভাবে হুট করে গাড়িতে ওঠা আমার মোটেই ঠিক হয় নি । কিছু একটা সমস্যা নিশ্চয়ই আছে । নিশ্চয়ই কিছু একটা কিছু ঠিক হয় নি । এখনই আমার এই গাড়ি থেকে নেমে পড়তে হবে । গাড়ি খুব বেশি দুর যাইও নি ।

-অন্যন্যা গাড়ি থামান প্লিজ ।
-কেন ?
-না মানে হঠাৎ করেই ভাল লাগছে না । আমার মনে হয় আমার বাসায় যাওয়া উচিৎ ।
-ওখানে গিয়ে কি করবেন ? শরীর খারাপ হলেও সেখানে দেখার তো কেউ নেই । আমার বাসায় চলুন । আমি আপনার দেখা শোনা করবো।
-জি না । দেখুন আমার কেন জানি মনে হচ্ছে আমি একটা ঘোরের ভিতরে রয়েছি । আসলে আমি …..।
-আপনি আসলে ?
-আপনার ঐ চোখের ভিতরে কিছু একটা আছে । নিশ্চয়ই । আপনি গাড়ি থামান । প্লিজ গাড়ি থামান ।

অন্যন্যার ভেতরে গাড়ি থামানোর কোন লক্ষ্যণ দেখলাম না । আমি যখন ঠিক করেছি এবার কঠিন করে অন্যন্যাকে কিছু বলবো ঠিক তখনই একটা অদ্ভুত ব্যাপার ঘটলো । হঠাৎ করেই আমার মাথায় ভিতরে কেমন চক্কর দিয়ে উঠলো । আমি ঠিক মত চিন্তা করতে পারলাম না । কিছু একটা যেন ঠিক নেই ।
অন্যন্যার চোখের দিকে তাকাতেই আমার সেই ধারনাটা আরও দৃঢ় হল । ওর চোখ দুটো আমার কাছে কেমন কুটিল মনে হল । একটু আগেও যেখানে রহস্য ছিল এখন সেটা একটা শয়তানের ছায়া মনে হল । শেষ বারের মত চোখ বন্ধের আগে আমি সেখানে একটা অদ্ভুত শয়তানী হাসি দেখতে পেলাম ।

পরিশিষ্টঃ
আকাশ এমনিতেও অন্যান্য মেয়েদের দিকে খুব একটা তাকায় না । আরও ভাল করে বলতে হলে সে ঠিক মত তাকাতও পারে না ।
এই নিয়ে তার বন্ধু-বান্ধব অনেক হাসাহাসি করে । ছোট বেলা থেকেই সে এমন তবে না তাকানোর অন্যতম কারনটা হচ্ছে ওর গার্লফ্রেন্ড লিলা এটা একদম সহ্য করতে পারে না । তাছাড়া আকাশ মনে করে যে ভালবাসার মানুষকে ছাড়া অন্য মেয়েদেরকে দেখা ঠিক না ।
কিন্তু যত বার মেয়েটার দিকে তাকাচ্ছে ততবার আকাশে মনের ভিতর কেমন একটা অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে । ঐ চোখে নিশ্চয়ই কিছু আছে । যতবার চোখাচোখি হচ্ছে মেয়েটার সাথে ততবারই মনে হচ্ছে মেয়ে খুব বেশি বিষন্ন হয়ে আছে । ও যদি একটু গিয়ে ওর সাথে কথা বলতো তাহলে মনে হয় মেয়েটার বিষন্নতা কেটে যেত ।

আকাশ ঘড়ির দিকে তাকালো । লিলা এখনও আসে নি । আসতে আরও একটু দেরি হবে ওর । এর ভিতরেই মনে হয় মেয়েটির সাথে কথা বলে আসা যাবে ।

আকাশ আর চিন্তা ভাবনা করলো না । উঠে দাড়ালো । অদ্ভুত বিষন্ন চোখের মেয়েটার দিকে হাটতে লাগলো ।

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 4.5 / 5. Vote count: 26

No votes so far! Be the first to rate this post.

About অপু তানভীর

আমি অতি ভাল একজন ছেলে।

View all posts by অপু তানভীর →