পরাজিত

oputanvir
4.6
(49)

মেসেজটার দিকে তাকিয়ে সাবা একটু হাসলো । যাক অবশেষে আরিয়ান ওর কাছে ধরা দিয়েছে । সাবা সব সময়ই জানতো যে আরিয়ান এক সময় না এক সময়ে ওর কাছে নতি স্বীকার করবেই । করতে বাধ্য । আজ পর্যন্ত কেউ পারে নি ওর আকর্ষণ থেকে দুরে থাকতে । দেশের নাম করা ফিল্ম মেকার, ক্রিকেটার রাজনৈতিক সবাই ওর জন্য পাগল হয়েছে । সেখানে আরিয়ানও যে পাগল হবে সেটা সে জানতোই । তবে এটা সাবাকে মানতেই হবে যে অন্য সবার থেকে আরিয়ানকে বাগে আনতে ওর একটু সময়ই লেগেছে । অন্য সবার বেলাতে এতো সময় লাগে নি ।

আরিয়ানের সাথে সাবার প্রথম দেখা হয় একটা এড শ্যুটে । আরিয়ানদের বেশ ভাল ব্যবসা রয়েছে । ট্রান্সপোর্ট ফুড ক্লথ থেকে শুরু করে আরও নানান ধরনের ব্যবসা রয়েছে । আরিয়ান ওর বাবার এক মাত্র ছেলে । সেই হিসাব সব কিছুর মালিক সেই । আরিয়ানদের একটা ক্লথ ব্রান্ডিংয়ের জন্য সাবার সাথে যোগাযোগ করা হয় । সাবা হয়ে ওঠে ওদের ব্রান্ড এম্বাসেডর । সেখান থেকেই পরিচয় । প্রথম দিনেই সাবার আরিয়ানকে পছন্দ হয় । সাবাও মনে হয়েছিলো যে আরিয়ান এরপর ওর পেছনে আসবে । তবে সাবাকে একটু অবাক করে দিয়ে আরিয়ান যেন ওকে ভুলেই গেল ।

শেষ এক পর্যায়ে সাবা নিজেই এগিয়ে এল আরিয়ানের দিকে । তবে সাবা সব সময় খেয়াল করতে শুরু করলো যে আরিয়ান যেন একটা দেওয়াল ঠিকই তৈরি করে রেখেছে ওদের মাঝে । সাবাকে ঠিক কাছে আসতে দিচ্ছে না । তবে সাবাও জানে কিভাবে কী করলে আরিয়ান সব কিছু ভুলে ওর কাছে এগিয়ে আসবে । সেই চেষ্টাই করে চলল । এবং প্রায় দুই মাসের চেষ্টার পরে আজকে আরিয়ান ওকে মেসেজ দিয়ে জানিয়েছে সে উইকএন্ডটা কাটাতে যাচ্ছে গাজীপুরে । ওদের একটা ফার্ম হাউজ আছে সেখানে । চাইলে সাবা ওর সঙ্গী হতে পারে ! মনে মনে সাবা হাসলো । সে যাবে জানিয়ে মেসেজ পাঠিয়ে দিল । সাবা এখন খুব ভাল করেই জানে যে এই উইকএন্ডের পর থেকেই ওদের প্রেম শুরু হবে । প্রতিবার এমনই হয় । তবে সাবার কেন জানি আরিয়ানকে বেশ মনে ধরেছে । মনে মনে ঠিক করে রেখেছে এবার অন্য গুলোর মত এতো সহজে সম্পর্কে শেষ করে দিবে না । কদিন চালিয়ে নিয়ে যাবে । তারপর যদি ভাল লাগে বিয়ে করে সেটেল্টড হয়ে যাবে। আরিয়ানকে বিয়ে করলে ঠকবে না জীবনে এটা সে ভাল করেই জানে ।

গাড়িটা যখন ফার্ম হাউজে এসে থামলো তখন রাত প্রায় দশটা ! সাবা আজকে খুব এক্সোটিক কিছু পরে নি । একটা জিন্স আর সাদা টিশার্ট পরেছে । ছোট ব্যাগে আরও দুটো পোশাক রয়েছে । রয়েছে একটা নাইটি । আজকে রাতেই হয়তো সেটা পরতে হতে পারে । আরিয়ান নিজেই দরজা খুলে দিল । সাবা আরও একটু খুশি হল । আসলে সব ছেলেরাই এমনই ।

ফার্ম হাউজটা দুই তলা । ছোট খাটো দেখতে বেশ চমৎকার । চারিদিকে গাছগাছালি দিয়ে ঘেরা । পাশ দিয়েই একটা ছোট খলের মত চলে গেছে । শোবার ঘর দিয়েই সেটা দেখা যায় । বাড়ির পেছনে আবার সুইমিংপুল আছে । সব মিলিয়ে খুবই চমৎকার একটা জায়গা !
দরজা দিয়ে ঢুকতেই সাবা দেখতে পেল একজন বৃদ্ধ এগিয়ে এল । তার উদ্দেশ্য করে আরিয়ান বলল, চাচা ওকে গেস্ট রুমটা দেখিয়ে দিন। আর জেনে নেন রাতে কী খেতে পছন্দ করবে সে !

বৃদ্ধ লোকটা বলল, আসো মা । তোমার ঘর দেখিয়ে দিই ।
সাবা একটু বিরক্ত হতে গিয়েও হল না । বাড়ির কেয়ারটেকার ওকে তুমি করে বলছে ব্যাপারটা ওর মোটেও পছন্দ হল না । তবে সাবা কিছু বলতে গিয়েও বলল না । কারণ স্বয়ং আরিয়ানকেই সে আপনি করে বলতে শুনেছে এই বৃদ্ধকে ।

সাবা ভেবেছিলো গেস্ট রুমটা সম্ভবত দুই তলাতে হবে । তবে সেটা হল না । গেস্ট রুমটা নিচ তলায় । ঠিক সুইমিং পুলের কাছেই । সাবা দেখলো আরিয়ান উপরে উঠে যাচ্ছে । ওর দিকে একবারও পেছন ফিরে তাকালো না । ব্যাপারটা ওর কাছে একটু অস্বস্তিকর লাগলো । রুমের ভেতরে ঢুকে বৃদ্ধ বলল, তুমি সম্ভবত আরিয়ান বাবা ভাল বন্ধু । তাই না ?
সাবা বলল, কেন বলছেন এই কথা?
-না মানে সে কোন মেয়েকে কখনও এখানে আনে না ! নীতু মা মনির পরে আর কোন মেয়ে এখানে আসে নি কোন দিন !
সাবা একটু অবাক হয়ে বলল, নীতু ?

সাবার মুখের ভাব দেখে বৃদ্ধও যেন একটু অবাক হয়ে গেল । সে ভেবেছিল সাবা জানবে নীতুর কথা। বৃদ্ধ বলল, তুমি জানো না নীতুর কথা ?
সাবা কেবল মাথা নাড়ালো । বৃদ্ধ বলল, নীতু মা মনি …..
বলতে গিয়ে থেমে গেল । সাবার মনে হল বৃদ্ধ যেন কষ্ট পাচ্ছে । আর কোন কথা না বলে সে ঘর থেকে বের হয়ে গেল । সাবা একটু অবাক হয়ে বিছানায় বসে পরলো । সে ঠিক মত কিছুই বুঝতে পারলো না ।

তবে সব কিছু পরিস্কার হয়ে এল রাতের খাবারের পরেই । রাতে খাবার শেষ করে আরিয়ান ওকে বলল আসুন মিস আপনাকে আমার ব্যলকুনি ভিউ দেখাই ।

সাবার তখনই মনে হল যে এবার কাজ হয়েছে হয়তো । ওর ঘরে ডাকছে তার মানে আজ রাতেই হয়তো সব কিছু হবে ।

আরিয়ানের সাথেই দোতলা দিয়ে মাস্টার বেড রুমে ঢুকলো সে । ঢুকেই সবার প্রথমে দেওয়ালের দিকে চোখ গেল । ছবি চোখে পড়লো সবার আগে । হাসি মাখা একটা মুখে একটা মেয়ে ছবি । পুরো দেওয়াল জুড়ে রয়েছে ছবিটা । এমন ভাবে রয়েছে যেন বিছানা থেকে চোখ মেলেই ছবিটার দিকে চোখ যায় । ঠিক তার উল্টো দিকে আরিয়ান আর সেই একই মেয়েটার একটা যুগল ছবি । আরিয়ানকে দেখলো ব্যালকুনি দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে রয়েছে ।

সাবা কিছু সময় দেওয়া টাঙ্গাছবি ছবির মেয়েটির হাস্যজ্জ্বল চোখের দিকে তাকিয়ে রইলো । সাবার তখনই মনে হল যে সে এখানে যা মনে করে এসেছিলো সেটা হবে না । আরিয়ান ওকে অন্য কারণে এখানে নিয়ে এসেছে ।

ধীর পায়ে সাবা এগিয়ে গেল আরিয়ানের দিকে । ব্যালকুনি দিয়ে সামনের ছোট খালের দিকে তাকালো । চাঁদের আলোতে সেটা কেমন একটা মায়াময় অবস্থার সৃষ্টি করেছে ।
সাবা পাশে আসতেই আরিয়ান বলল, নীতুর এই ব্যালকুনিটা পছন্দ ছিল খুব । আমরা এখানে বসে থাকতাম ঘন্টারপর ঘন্টা । এমন না যে খুব কথা বলতাম । চুপচাপ দুজন এক সাথে বসে থাকতাম !

আরিয়ান চুপ করলো । সাবা কী বলবে খুজে পেল না । হঠাৎ করেই ওর নিজেকে কেমন যেন ছোট মনে হচ্ছে । এমনটা কোন দিন ওর সাথে হয় নি । সামনের মানুষ গুলো কিভাবে ওকে পাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে থেকেছে সব সময় । অথচ এই মানুষটা এমন কিছুই করছে না । সাবার মনে হল যে এমন কিছু সে করবেও না ।

সাবা বলল, কোথায় উনি?
আরিয়ান এই প্রশ্নের জবাব দিল না । কেবল উত্তরে আকাশের দিকে তাকালো ।
সাবা বলল, কী হয়েছিলো উনার?
আরিয়ান আরও কিছু সময় চুপ করে থেকে বলল, ও আসলে অন্য ধর্মের ছিল । যখন আমার আর ওর পরিবারের ভেতরে একজনকে বেঁছে নেওয়ার সময় এল তখন আসলে কাউকেই বেঁছে নিতে পারে নি । বেঁছে নিয়েছিলো মৃত্যুকে । এটাই সম্ভবত সহজ ছিল ।

তারপর দীর্ঘ নিরবতা । এক সময়ে আরিয়ানই মুখ খুলল আবার । সাবার দিকে না তাকিয়েই আরিয়ান বলল, আপনি আসলে যা চাচ্ছেন তা আসলে কোন দিন সম্ভব না । আমি এই জীবনে আর কোন মেয়েকে ভালোবাসতে পারবো বলে আমার মনে হয় না । আপনি যা চেষ্টা করে যাচ্ছেন কদিন থেকে তা আসলে কখনই হবে না । এই কথাটা হয়তো অন্য ভাবেও বলা যেত তবে আমার মনে হয়েছে এইভাবে আপনাকে বললে আপনি বুঝবেন !

রাতের বেলা সাবার ঘুম এল না কিছুতেই । বারবার ঘুরে ফিরে দেওয়ালে টাঙ্গানো সেই হাস্যজ্জ্বল মেয়েটার হাসি ফুটে উঠতে লাগলো । সাবা এতোদিন দেখেছে পুরুষেরা তার জীবিত ভালোবাসার মানুষকে পর্যন্ত ছেড়ে দিয়ে ওর দিকে ছুটে এসেছে অথচ অথচ আজকে কে এমন এই সাধারণ একজন মৃত মেয়ের কাছে পরাজিত হয়েছে । এই ভাবনাটা তাকে কোন ভাবেই আর ঘুমাতে দিল না ।

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 4.6 / 5. Vote count: 49

No votes so far! Be the first to rate this post.

About অপু তানভীর

আমি অতি ভাল একজন ছেলে।

View all posts by অপু তানভীর →