পরাজিত

oputanvir
4.6
(50)

মেসেজটার দিকে তাকিয়ে সাবা একটু হাসলো । যাক অবশেষে আরিয়ান ওর কাছে ধরা দিয়েছে । সাবা সব সময়ই জানতো যে আরিয়ান এক সময় না এক সময়ে ওর কাছে নতি স্বীকার করবেই । করতে বাধ্য । আজ পর্যন্ত কেউ পারে নি ওর আকর্ষণ থেকে দুরে থাকতে । দেশের নাম করা ফিল্ম মেকার, ক্রিকেটার রাজনৈতিক সবাই ওর জন্য পাগল হয়েছে । সেখানে আরিয়ানও যে পাগল হবে সেটা সে জানতোই । তবে এটা সাবাকে মানতেই হবে যে অন্য সবার থেকে আরিয়ানকে বাগে আনতে ওর একটু সময়ই লেগেছে । অন্য সবার বেলাতে এতো সময় লাগে নি ।

আরিয়ানের সাথে সাবার প্রথম দেখা হয় একটা এড শ্যুটে । আরিয়ানদের বেশ ভাল ব্যবসা রয়েছে । ট্রান্সপোর্ট ফুড ক্লথ থেকে শুরু করে আরও নানান ধরনের ব্যবসা রয়েছে । আরিয়ান ওর বাবার এক মাত্র ছেলে । সেই হিসাব সব কিছুর মালিক সেই । আরিয়ানদের একটা ক্লথ ব্রান্ডিংয়ের জন্য সাবার সাথে যোগাযোগ করা হয় । সাবা হয়ে ওঠে ওদের ব্রান্ড এম্বাসেডর । সেখান থেকেই পরিচয় । প্রথম দিনেই সাবার আরিয়ানকে পছন্দ হয় । সাবাও মনে হয়েছিলো যে আরিয়ান এরপর ওর পেছনে আসবে । তবে সাবাকে একটু অবাক করে দিয়ে আরিয়ান যেন ওকে ভুলেই গেল ।

শেষ এক পর্যায়ে সাবা নিজেই এগিয়ে এল আরিয়ানের দিকে । তবে সাবা সব সময় খেয়াল করতে শুরু করলো যে আরিয়ান যেন একটা দেওয়াল ঠিকই তৈরি করে রেখেছে ওদের মাঝে । সাবাকে ঠিক কাছে আসতে দিচ্ছে না । তবে সাবাও জানে কিভাবে কী করলে আরিয়ান সব কিছু ভুলে ওর কাছে এগিয়ে আসবে । সেই চেষ্টাই করে চলল । এবং প্রায় দুই মাসের চেষ্টার পরে আজকে আরিয়ান ওকে মেসেজ দিয়ে জানিয়েছে সে উইকএন্ডটা কাটাতে যাচ্ছে গাজীপুরে । ওদের একটা ফার্ম হাউজ আছে সেখানে । চাইলে সাবা ওর সঙ্গী হতে পারে ! মনে মনে সাবা হাসলো । সে যাবে জানিয়ে মেসেজ পাঠিয়ে দিল । সাবা এখন খুব ভাল করেই জানে যে এই উইকএন্ডের পর থেকেই ওদের প্রেম শুরু হবে । প্রতিবার এমনই হয় । তবে সাবার কেন জানি আরিয়ানকে বেশ মনে ধরেছে । মনে মনে ঠিক করে রেখেছে এবার অন্য গুলোর মত এতো সহজে সম্পর্কে শেষ করে দিবে না । কদিন চালিয়ে নিয়ে যাবে । তারপর যদি ভাল লাগে বিয়ে করে সেটেল্টড হয়ে যাবে। আরিয়ানকে বিয়ে করলে ঠকবে না জীবনে এটা সে ভাল করেই জানে ।

গাড়িটা যখন ফার্ম হাউজে এসে থামলো তখন রাত প্রায় দশটা ! সাবা আজকে খুব এক্সোটিক কিছু পরে নি । একটা জিন্স আর সাদা টিশার্ট পরেছে । ছোট ব্যাগে আরও দুটো পোশাক রয়েছে । রয়েছে একটা নাইটি । আজকে রাতেই হয়তো সেটা পরতে হতে পারে । আরিয়ান নিজেই দরজা খুলে দিল । সাবা আরও একটু খুশি হল । আসলে সব ছেলেরাই এমনই ।

ফার্ম হাউজটা দুই তলা । ছোট খাটো দেখতে বেশ চমৎকার । চারিদিকে গাছগাছালি দিয়ে ঘেরা । পাশ দিয়েই একটা ছোট খলের মত চলে গেছে । শোবার ঘর দিয়েই সেটা দেখা যায় । বাড়ির পেছনে আবার সুইমিংপুল আছে । সব মিলিয়ে খুবই চমৎকার একটা জায়গা !
দরজা দিয়ে ঢুকতেই সাবা দেখতে পেল একজন বৃদ্ধ এগিয়ে এল । তার উদ্দেশ্য করে আরিয়ান বলল, চাচা ওকে গেস্ট রুমটা দেখিয়ে দিন। আর জেনে নেন রাতে কী খেতে পছন্দ করবে সে !

বৃদ্ধ লোকটা বলল, আসো মা । তোমার ঘর দেখিয়ে দিই ।
সাবা একটু বিরক্ত হতে গিয়েও হল না । বাড়ির কেয়ারটেকার ওকে তুমি করে বলছে ব্যাপারটা ওর মোটেও পছন্দ হল না । তবে সাবা কিছু বলতে গিয়েও বলল না । কারণ স্বয়ং আরিয়ানকেই সে আপনি করে বলতে শুনেছে এই বৃদ্ধকে ।

সাবা ভেবেছিলো গেস্ট রুমটা সম্ভবত দুই তলাতে হবে । তবে সেটা হল না । গেস্ট রুমটা নিচ তলায় । ঠিক সুইমিং পুলের কাছেই । সাবা দেখলো আরিয়ান উপরে উঠে যাচ্ছে । ওর দিকে একবারও পেছন ফিরে তাকালো না । ব্যাপারটা ওর কাছে একটু অস্বস্তিকর লাগলো । রুমের ভেতরে ঢুকে বৃদ্ধ বলল, তুমি সম্ভবত আরিয়ান বাবা ভাল বন্ধু । তাই না ?
সাবা বলল, কেন বলছেন এই কথা?
-না মানে সে কোন মেয়েকে কখনও এখানে আনে না ! নীতু মা মনির পরে আর কোন মেয়ে এখানে আসে নি কোন দিন !
সাবা একটু অবাক হয়ে বলল, নীতু ?

সাবার মুখের ভাব দেখে বৃদ্ধও যেন একটু অবাক হয়ে গেল । সে ভেবেছিল সাবা জানবে নীতুর কথা। বৃদ্ধ বলল, তুমি জানো না নীতুর কথা ?
সাবা কেবল মাথা নাড়ালো । বৃদ্ধ বলল, নীতু মা মনি …..
বলতে গিয়ে থেমে গেল । সাবার মনে হল বৃদ্ধ যেন কষ্ট পাচ্ছে । আর কোন কথা না বলে সে ঘর থেকে বের হয়ে গেল । সাবা একটু অবাক হয়ে বিছানায় বসে পরলো । সে ঠিক মত কিছুই বুঝতে পারলো না ।

তবে সব কিছু পরিস্কার হয়ে এল রাতের খাবারের পরেই । রাতে খাবার শেষ করে আরিয়ান ওকে বলল আসুন মিস আপনাকে আমার ব্যলকুনি ভিউ দেখাই ।

সাবার তখনই মনে হল যে এবার কাজ হয়েছে হয়তো । ওর ঘরে ডাকছে তার মানে আজ রাতেই হয়তো সব কিছু হবে ।

আরিয়ানের সাথেই দোতলা দিয়ে মাস্টার বেড রুমে ঢুকলো সে । ঢুকেই সবার প্রথমে দেওয়ালের দিকে চোখ গেল । ছবি চোখে পড়লো সবার আগে । হাসি মাখা একটা মুখে একটা মেয়ে ছবি । পুরো দেওয়াল জুড়ে রয়েছে ছবিটা । এমন ভাবে রয়েছে যেন বিছানা থেকে চোখ মেলেই ছবিটার দিকে চোখ যায় । ঠিক তার উল্টো দিকে আরিয়ান আর সেই একই মেয়েটার একটা যুগল ছবি । আরিয়ানকে দেখলো ব্যালকুনি দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে রয়েছে ।

সাবা কিছু সময় দেওয়া টাঙ্গাছবি ছবির মেয়েটির হাস্যজ্জ্বল চোখের দিকে তাকিয়ে রইলো । সাবার তখনই মনে হল যে সে এখানে যা মনে করে এসেছিলো সেটা হবে না । আরিয়ান ওকে অন্য কারণে এখানে নিয়ে এসেছে ।

ধীর পায়ে সাবা এগিয়ে গেল আরিয়ানের দিকে । ব্যালকুনি দিয়ে সামনের ছোট খালের দিকে তাকালো । চাঁদের আলোতে সেটা কেমন একটা মায়াময় অবস্থার সৃষ্টি করেছে ।
সাবা পাশে আসতেই আরিয়ান বলল, নীতুর এই ব্যালকুনিটা পছন্দ ছিল খুব । আমরা এখানে বসে থাকতাম ঘন্টারপর ঘন্টা । এমন না যে খুব কথা বলতাম । চুপচাপ দুজন এক সাথে বসে থাকতাম !

আরিয়ান চুপ করলো । সাবা কী বলবে খুজে পেল না । হঠাৎ করেই ওর নিজেকে কেমন যেন ছোট মনে হচ্ছে । এমনটা কোন দিন ওর সাথে হয় নি । সামনের মানুষ গুলো কিভাবে ওকে পাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে থেকেছে সব সময় । অথচ এই মানুষটা এমন কিছুই করছে না । সাবার মনে হল যে এমন কিছু সে করবেও না ।

সাবা বলল, কোথায় উনি?
আরিয়ান এই প্রশ্নের জবাব দিল না । কেবল উত্তরে আকাশের দিকে তাকালো ।
সাবা বলল, কী হয়েছিলো উনার?
আরিয়ান আরও কিছু সময় চুপ করে থেকে বলল, ও আসলে অন্য ধর্মের ছিল । যখন আমার আর ওর পরিবারের ভেতরে একজনকে বেঁছে নেওয়ার সময় এল তখন আসলে কাউকেই বেঁছে নিতে পারে নি । বেঁছে নিয়েছিলো মৃত্যুকে । এটাই সম্ভবত সহজ ছিল ।

তারপর দীর্ঘ নিরবতা । এক সময়ে আরিয়ানই মুখ খুলল আবার । সাবার দিকে না তাকিয়েই আরিয়ান বলল, আপনি আসলে যা চাচ্ছেন তা আসলে কোন দিন সম্ভব না । আমি এই জীবনে আর কোন মেয়েকে ভালোবাসতে পারবো বলে আমার মনে হয় না । আপনি যা চেষ্টা করে যাচ্ছেন কদিন থেকে তা আসলে কখনই হবে না । এই কথাটা হয়তো অন্য ভাবেও বলা যেত তবে আমার মনে হয়েছে এইভাবে আপনাকে বললে আপনি বুঝবেন !

রাতের বেলা সাবার ঘুম এল না কিছুতেই । বারবার ঘুরে ফিরে দেওয়ালে টাঙ্গানো সেই হাস্যজ্জ্বল মেয়েটার হাসি ফুটে উঠতে লাগলো । সাবা এতোদিন দেখেছে পুরুষেরা তার জীবিত ভালোবাসার মানুষকে পর্যন্ত ছেড়ে দিয়ে ওর দিকে ছুটে এসেছে অথচ অথচ আজকে কে এমন এই সাধারণ একজন মৃত মেয়ের কাছে পরাজিত হয়েছে । এই ভাবনাটা তাকে কোন ভাবেই আর ঘুমাতে দিল না ।

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 4.6 / 5. Vote count: 50

No votes so far! Be the first to rate this post.


Discover more from অপু তানভীর

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

About অপু তানভীর

আমি অতি ভাল একজন ছেলে।

View all posts by অপু তানভীর →