ভালবাসার নকশা

oputanvir
4.7
(76)

রাতের খাওয়ার পরে আমার একটা আইসক্রিম খাওয়ার অভ্যাস অনেক দিনের । রাতে মোমিনের দোকান থেকে আইসক্রিম কিনে নিয়ে বাসার দিকে হাটা দিলাম । আস্তে আস্তে হাটছি আর আইস্ক্রিমের প্যাকেটটা খোলার চেষ্টা করছি তখনই খেয়াল করলাম যে একটা মেয়ে আমার পাশে পাশে হাটছে । আমার সাথে চোখাচোখ হতেই মেয়েটি আমার অবাক করে দিয়ে বলল, আইস্ক্রিমটা দিবেন আমাকে ?

আমি থেমে গেলাম । সত্যি বলতে কি আমি অনেক দিন এমন অবাক হই নি । এমন না যে আমার কাছে কখনও কেউ খেতে চায় নি । একটু আগেও আমি এই কাজটা করেছি । কিন্তু এই মেয়েটা তেমন কেউ নয় । মেয়েটার পোশাক পরিচ্ছদের দিকে তাকিয়ে তো অবশ্যই তেমন কিছু মনে হচ্ছে না। মেয়েটার পরনে একটা ডেনিম টাইট প্যান্ট রয়েছে । উপরে একটা টিশার্ট । পোশাকের ধরন দেখেই মনে হচ্ছে মেয়েটা আশে পাশে থাকে । সম্ভবত রাতের বেলা হাটতে বের হয়েছে । এমন কেউ এই ভাবে কেউ কারো আইস্ক্রিম চাইতে পারে সেটা আমার ধারণার বাইরে ছিল ।
আমি অবাক হওয়ার ভাবটা খানিকটা কাটিয়ে উঠিয়ে বললাম, এটা ?
মেয়েটা একটু হেসে বলল, হ্যা । দিবেন ?
-আমি কিনে দিই আরেকটা ?
-উহু । আপনার হাতের টাই চাই ।

আমি অর্ধেক খোলা কোণ আইস্ক্রিমটা মেয়েটাকে দিয়ে দিলাম । মেয়েটা খুব স্বাভাবিক ভাবে সেটা খুলে আমার সামনেই মুখে দিল । আমি সত্যিই কিছু সময় সেদিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম । আরও একটা কামড় দিয়ে মেয়েটা বলল, আপনি কোথায় থাকেন ?
-এই এক নম্বর গলিতে !
-চলুন হাটা যাক !

আমি মাথা নাড়িয়ে আবারও হাটতে শুরু করলাম আবার । মেয়েটা আস্তে আমার পাশে পাশে হাটছে । আমি তখনও অবাক হয়ে ভাবছি আসলে কী হচ্ছে এখানে । মেয়েটা এমন অদ্ভুত আচরন কেন করছে ! আমি আর কিছু জানতে চাইবো কিনা সেটাও আমি ঠিক বুঝতে পারছি না । তাই চুপচাপ হাটতে লাগলাম । মেয়েটাই আামকে বলল, আপনি কি এই কাজ প্রায়ই করেন ?
-কোন কাজ?
-এই যে যারাই আপনার কাছে কিছু খেতে চায় তাদের সেটা কিনে দেন !
-প্রায়ই তো আর করি না ।

মেয়েটা আইসক্রিমে আরেকটা কামড় দিল । তারপর বলল, আমি আসলে হাটতে বের হয়েছিলাম । তখনই দেখলাম । আপনি মোমিনের দোকানে দাড়িয়ে । চোখ সরে অন্য দিকে নিয়ে যাচ্ছিলাম তখনই দেখলাম একজন টোকাই এসে আপনাকে ইশারায় একটা বন কিনে দিয়ে বলল। আমি প্রায়ই আসি এই দোকানে । তাই জানি যে এরা সারাদিন এখানেই থাকে । এই ভাবেই এরা চেয়ে চিন্তে খায় । আপনি কিনে দিলেন । এরপর আরও ৫জন এল একে একে । আমি ভাবি নি যে আপনি সবাইকে কিনে দিবেন !

আমি কী বলবো খুজে পেলাম না । মেয়েটি বলল, তাই ভাবলাম আমিও আপনার আইসক্রিমের উপরে হামলা করি ।

হাটতে হাটতে আমি আমার বাসার কাছে চলে এসেছি । আমি গেটের কাছে থামতেই মেয়েটি বলল, এখানে থাকেন ?
-জ্বী !
-কয় তলা ?
-চার তলাতে ।
-ওকে আজ তাহলে আসি । আর থ্যাঙ্কিউ ফর দ্য আইসক্রিম !
-ওয়েলকাম !

মেয়েটা আবার পেছন ঘুরে হাটা দিল । মেয়েটার নাম জানতে চাইতে গিয়েই চাইলাম না । মেয়েটা নিজ থেকে বলে নি । আমি যত সময় মেয়েটাকে দেখা যায় সেদিকেই তাকিয়ে রইলাম । মেয়েটা এমন অদ্ভুত কাজ কেন করলো আমি ঠিক বুঝতে পারি নি । হয়তো খানিকটা কৌতুহল থেকে । দেখলাম একবারে মাথার দিকে মেয়েটা আমার দিকে ফিরে তাকালো । মেয়েটার মুখে আমি একটু হাসি দেখতে পেলাম । তারপর সে চোখের আড়ালে চলে গেল ।

মেয়েটার সাথে আমার আবারও দেখা হল পরদিন । একই স্থানে । আমি খাওয়া শেষ করে আইসক্রিম কিনতে যাবো দেখতে পেলাম মেয়েটা মোমিনের দোকানের সামনে দাড়িয়ে আছে । আামকে দেখে হাসলো । আমি আইসক্রিম কিনতে যাবো মেয়েটা আমাকে আইসক্রিম খাওয়ালো । তারপর ঠিক এখই ভাবে আমার সাথে গল্প করতে করতে আমার বাসা পর্যন্ত এল ।

গল্প বলতে দিন কেমন গেল, আমি করি এইসব । তবে মেয়েটা আজও নিজের সম্পর্কে কোন কথা বলল না । এমন কি নিজের নামটা পর্যন্ত বলল না । অবশ্য আমার নামও সে জানতে চাইলো না । আমাকে বাসা পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে আবার আগের দিনের মত হাটা দিল ।

এই ভাবে মেয়েটার সাথে পরপর সাত দিন দেখা হল । একই ভাবে আমি খাওয়ার পরে আইসক্রিম খেতে যেতাম । এবং মেয়েটি এসে হাজির হত । আমার থেকে আইসক্রিম নিতো । আমার সাথে গল্প করতে করতে এগিয়ে যেত আমার বাড়ি পর্যন্ত । তারপর আবারও ফিরে আসতো । কিন্তু অষ্টম দিনে মেয়েটি যখন এল না তখন একটু মন খারাপ হল । তারপর মনে হল যে মেয়েটি হয়তো অন্য কোন কাজে আটকে গেছে । এই জন্য আসতে পারে নি । কিন্তু পরের দিনও যখন মেয়েটি এল না তখন মনটা সত্যিই খারাপ হল । আমি সত্যিই ভেবেছিলাম যে মেয়েটা আসবে । মেয়েটা আমার কাছ থেকে আইসক্রিম নিয়ে খাবে । আমরা দুজন মিলে গল্প করবো, কথা বলবো ।

পরের এক মাসে মেয়েটির সাথে আমার একবারও দেখা হল না । আমার মনে হল যে মেয়েটির সাথে আমার আর হয়তো দেখা হবে না । সত্যি বলতে মনের ভেতরে একটা অদ্ভুত কষ্ট এসে জমা হল । মেয়েটাকে সেই প্রথম যেদিন দেখেছিলাম সেদিন থেকে মেয়েটার প্রতি একটা অদ্ভুত মায়া মনে এসে জমা হয়েছে । কেন হয়েছে সেটা আমার জানা নেই । কেবল আমার মনে হয়েছে যে এই মেয়েটা আমার কাছে অন্য সবার থেকে আলাদা । মেয়েটার কথা বলা, হাসা সব কিছু আমাকে মুগ্ধ করে রেখেছে । ঐ সাতটা দিন আমি যেন পুরোদিন কেবল মেয়েটার সাথে কথা বলার জন্য অপেক্ষা করেই থাকতাম । কিন্তু এই একটা মাস মেয়েটা না আসার কারণে মনের ভেতরে একটা বিষন্নতা এসে জমা হয়েছে । বারবার মনে হচ্ছিলো যে আমার কি যেন হারিয়ে গেছে । অথচ মেয়েটার নাম পর্যন্ত আমি জানি না । যখন আমার মনে হল যে মেয়েটির সাথে আমার আর দেখা হবে না তখনই আবার আমার সাথে মেয়েটির দেখা হল ।

ঠিক এক মাস পরে ঠিক একই ভাবে মেয়েটির সাথে আমার দেখা হল । সেদিনও আমি গিয়েছি আইসক্রিম কিনতে যাবো তখনই সেই কন্ঠ স্বরটা শুনতে পেলাম । আমার নাম নয়, মোমিমের নাম ধরে ডেকে সে দুটো আইসক্রিম দিতে বলল । আমি কিছু না বলে কেবল তাকিয়ে রইলাম তার দিকে । আমি চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রয়েছি তার দিকে । আমার কেন জানি ঠিক বিশ্বাস হচ্ছে না তখনও । মেয়েটা যখন আমাকে একটা আইসক্রিম ধরিয়ে দিয়ে হাটতে শুরু করলো । ঠিক যেভাবে আমার সাথে সে সাত দিন হেসেছে । আমি কিছু সময় বিমুঢ় হয়ে দাড়িয়ে থাকলেও দ্রুত তার পাশাপাশি হাটতে শুরু করলাম । মেয়েটি সেই স্বাভাবিক ভাবেই কথা বলে চলেছে । এমন ভাবে কথা বলেছে যেন কিছু হয় নি । গতকালকেই আমরা ঠিক একই ভাবে এখান দিয়ে হেটেছি ।

আমার বাড়ির সামনে এসে মেয়েটা থামলো । তারপর আমার দিকে তাকিয়ে রইলো কিছু সময় । আমি কী বলব খুজে পেলাম না । মেয়েটি বলল, ডিড ইউ মিস মি?
মেয়েটার কন্ঠে হঠাৎ একটা পরিবর্তন লক্ষ্য করলাম । কেমন একটা আকুলতা রয়েছে যেন সেখানে । আমি বললাম, হ্যা ।
-কেন?
-জানি না । কেমন মনে হচ্ছিলো তোমার সাথে কথা বলি । এই যে এই টুকু আমরা হাটছি কথা বলছি এটার জন্য মনটা বড় আকুল হয়ে ছিল !
-যদি আমি আরও একমাস পরে আসতাম, একই ভাবে কি আইসক্রিন কিনে মোমিনের দোকানের সামনে আমার জন্য অপেক্ষা করতে ?
-তুমি দেখেছিলে আমাকে?

মেয়েটা হাসলো । তারপর বলল, প্রতিদিন । বরং তোমার জন্য আমি অপেক্ষা করে থাকতাম ।
-তাহলে সামনে আসো নি কেন?
মেয়েটা আবারও হাসলো । বলল, কাল বলবো । আজকে বাসায় যাও । কাল ঠিক সন্ধ্যা সাতটায় কফি এক্সপ্রেসে আসবে । কেমন ? তোমার জন্য অপেক্ষা করবো । তবে তুমি চাইলে আমাকে যত সময় ইচ্ছে অপেক্ষা করিয়ে রাখতে পারো । আমি ঠিক ঠিক অপেক্ষা করবো !

মেয়েটা আর কিছু না বলে আগের মত হাটা দিল । আমি তার চলে যাওয়া পথের দিকে তাকিয়ে রইলাম । গলির আড়ালে চলে গেলেও দাড়িয়ে রইলাম । মনের ভেতরে একটা অদ্ভুত আনন্দ হতে লাগলো । এই কয়দিনে যে অশান্তিতে ছিলাম, লক্ষ্য করলাম যে সেটা চলে গিয়েছে । সেখানে একটা আলাদা উত্তেজনা কাজ করছে । কাল মেয়েটার সাথে দেখা হওয়ার উত্তেজনা !

দুই

পরের দিন অফিস থেকে আগে আগে ছুটি নিয়ে চলে এলাম বাসায় । সাতটার আগেই কমি একপ্রেসে গিয়ে হাজির হলাম । এখানে আমি প্রায়ই আসি । আমাকে এরা চেনে । আমি বসতেই ওয়েটার আমার পছন্দের কফি নিয়ে আসতে গেল । আমি ওকে মানা করলাম । বললাম যে একজন আসবে একটু পরে । তারপরই অর্ডার দিচ্ছি ।

আমি যদিও ভেবেছিলাম যে মেয়েটি আজকেও আমাকে অপেক্ষা করিয়ে রাখবে কিন্তু সেটা করলো না । ঠিক ঠিক সাতটা বাজে মেয়েটি আমার গেট দিয়ে ভেতরে ঢুকলো । এবং তখনই আমি খানিকটা থমকে গেলাম মেয়েটাকে দেখে !

এতোদিন মেয়েটাকে আমি একদম স্বাভাবিক পোশাকে দেখেছি । রাতের বেলা কিংবা ঘরের ভেতরে মেয়েরা যেমন থাকে ঠিক তেমন ভাবে । মুখে কোন মেকাপ ছিল না । সামান্য লিপস্টিকও না । কিন্তু আজকে মেয়েটা সেজেই এসেছে । আমার মনে হল যে অনেক দিন আমি এতো সুন্দর মেয়ে দেখি নি ।

বিশেষ করে হাতে দেওয়া গাঢ় মেহেদী আর চোখে কাজল আমাকে একেবারে বিমহিত করে ফেলল । আমার সামনে এসে মেয়েটি হাসলো একটু। তারপর বলল, আমার মনেই হচ্ছিলো যে তুমি আগেই এসে অপেক্ষা করবে !
আমি তখনও ওর দিকে তাকিয়েই আছি । ওর কথায় একটু টনক নড়লো। তারপর বললাম, আরে না না । মাত্রই এলাম । বস ।
মেয়েটি বসলো আমার সামনে । তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বলল, পছন্দ হয়েছে আমাকে ?
আমি লজ্জায় পড়ে গেলাম । বললাম, মিথ্যা বলব না তবে এরকম ভাবে তোমাকে দেখি নি আগে !
-কোন ভার্শন পছন্দ বেশি ? এটা নাকি আগের টা?
আমি খানিকটা দ্বিধায় পড়ে গেলাম । একটু চিন্তা করে বললাম, দুটোই । এটা অনেক বেশি টেম্টিং তবে লং লাস্টিং না । আগেরটা বেশি লংলাস্টিং । আরও ভাল করে বললে ধর এটা তোমার বিরিয়ানী রূপ ! আমরা সবাই বিরিয়ানী পছন্দ করি কিন্তু প্রতিদিন কেউ বিরিয়ানী খায় না । পরপর দুই তিন দিন খেলেই আগ্রহ কমে আসবে । আগের হচ্ছে ধোয়া ওঠা সাদা ভাত । আজীবন যার আকর্ষণ থাকবে !

মেয়েটা আবারও হাসলো । মনে হল আমার ব্যাখ্যা পছন্দ হয়েছে । আমার দিকে কিছু সময় তাকিয়ে বলল, আমরা কিন্তু এখনও কেউ কারো নাম জানি না ।
আমি আমার নাম বললাম । মেয়েটি বলল, আমি নীরা । সামনের হাইঠেরিটেজ বিল্ডিং দেখছো ঐটার ১১ তলাতে থাকি !
আমি নীরার দিকে তখনও তাকিয়ে আছি । নীরা বলল, তোমার মনে একটা কৌতুহল জন্মে আছে । তাই না ?
-হ্যা ।
-এই যে কেন আমি এই এক মাস তোমার সামনে আসি নি ।
-হুম !
নীরা কিছু সময় দম নিল। তারপর বলল, আসলে এটার যে কী ব্যাখ্যা আমি দিবো সেটা আমি নিজেও জানি না । তুমি হয়তো শুনলে হাসবে আমার কথা ।
-বল শুনি ।
-তোমার সাথে আমার যেদিন দেখা হল, ঐদিনই কিন্তু আমি তোমাকে প্রথম দেখি নি । তারও এক সপ্তাহ আগে তোমাকে দেখেছি ।

এই লাইনটা বলে নীরা কিছু সময় থামলো । আমি তাকিয়ে রয়েছি ওর দিকে । এরই মাঝে আমাদের জন্য কফি চলে এল । নীরা কফির কাপের দিকে কিছু সময় তাকিয়ে থেকে আমার দিকে তাকালো তারপর আবারও বলা শুরু করলো, আমার রাতের বেলা হাটার অভ্যাস অনেক দিন । রাত এগারোটার দিকে আমি হাটতে বের হই । মোটামুটি ১২টা পর্যন্ত হাটাহাটি করি । সেদিনও বের হয়েছিলাম । তখন তোমাকে দেখলাম । ক্লান্ত হয়ে মোমিনের দোকান থেকে কিছু কিনছো । চেহারা কেমন মলিন হয়ে আছে । সত্যি বলতে কী যে মনে হল আমি নিজেও জানি না । ওখানেই দাড়িয়ে রইলাম । তুমি চোখের সামনে চলে গেলে । আমি তখনও দাড়িয়েই রইলাম । ঐদিন আমার আর হাটা হল না । বাসায় ফিরে গেলাম । কিন্তু কোন ভাবেই তুমি মাথা থেকে বের হলে না । পরের দিন আবারও দাড়িয়ে থাকলাম বটে তোমাকে দেখার জন্য তবে তুমি এলে না ঐদিন । কিন্তু তোমাকে আর মাথা থেকে বের করতে পারলাম না । কিছুইতেই তুমি আর বের হলে না আমার মাথা থেকে ।

একটু থামলো নীরা । কফির কাপে চুমুক দিল একটা । তারপর আবারও বলতে শুরু করলো, তারপর ঐদিন তোমাকে দেখলাম ঐ ভাবে বাচ্চাদের খাবার কিনে দিতে । এতো ভাল লাগলো দৃশ্যটা দেখে যে বলে বোঝাতে পারবো না । সাহস করে তোমার সাথে কথা বললাম, আইসক্রিমটা চেয়ে নিলাম । এরপর পরের সাতদিন প্রতিদিন আমাদের কথা হল । এটা তো তুমি জানো । তোমার চেহারা দেখেই আমার কেন জানি মনে হচ্ছিলো আমার মত তুমিও আমাকে পছন্দ করেছো ! হুমায়ূন আহমেদের নীল অপরাজিতা বইতে একটা জটিল নকশার কথা বলা আছে । পড়েছো কিনা জানি না । সেখানে বলা আছে যে একটা ভালোবাসার নকশা মাঝ থেকে ছিড়ে দুজনের মাঝে দিয়ে দেওয়া হয় ! যখন এই দুজন একে অন্যের সামনে আসে তখন মনের ভেতর থেকেই তারা একটা আভাস পায় । আমার কেন জানি এই থিউরা খুব বিশ্বাস হয় । এই জন্যই হয়তো তোমাকে দেখে আমার ওমন মনে হয়েছিলো । মন এতো উতলা হয়েছিলো । তাই মনে হল তোমার মন যদি এমন উতলা না হয় তখন ? যদি তা কেবল ক্ষণিকের ভাল লাগা হয় । তাই ঠিক করলাম যে একটু দুরে যাই । দেখা যাক তোমার প্রতিক্রিয়া কী হয় !

বিশ্বাস করবে কিনা জানি না তবে এই একটা মাস আমি প্রতিদিন জানালা দিয়ে তোমার চেহারার দিকে তাকিয়ে থেকেছি । তোমার চোখে আমার জন্য একটা অপেক্ষা দেখেছি । বারবার আমার কেবল মনে হয়েছে যে আমি তোমাকে পেয়েছি । আমার নকশার বাকি অংশ তোমার কাছেই আছে !

নীরা একটানা কথা বলে থামলো । চোখটা আমার চোখের দিকে নিবদ্ধ ! আমার তখন সত্যিই মনে হল আমার নকশার অন্য অংশটা নীরার কাছেই রয়েছে । আমরা কেউ কাউকে বললাম না যে আমরা একে অন্যকে ভালোবাসি । তবে আমরা যে একে অন্যের প্রেমে পড়েছি সেইটা আর আলাদা ভাবে কাউকে বলে দেওয়ার দরকার পড়লো না । আমরা আমাদের ভালোবাসার নকশার বাকি অংশ খুজে পেয়েছি !

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 4.7 / 5. Vote count: 76

No votes so far! Be the first to rate this post.


Discover more from অপু তানভীর

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

About অপু তানভীর

আমি অতি ভাল একজন ছেলে।

View all posts by অপু তানভীর →