ভালবাসার নকশা

oputanvir
4.7
(70)

রাতের খাওয়ার পরে আমার একটা আইসক্রিম খাওয়ার অভ্যাস অনেক দিনের । রাতে মোমিনের দোকান থেকে আইসক্রিম কিনে নিয়ে বাসার দিকে হাটা দিলাম । আস্তে আস্তে হাটছি আর আইস্ক্রিমের প্যাকেটটা খোলার চেষ্টা করছি তখনই খেয়াল করলাম যে একটা মেয়ে আমার পাশে পাশে হাটছে । আমার সাথে চোখাচোখ হতেই মেয়েটি আমার অবাক করে দিয়ে বলল, আইস্ক্রিমটা দিবেন আমাকে ?

আমি থেমে গেলাম । সত্যি বলতে কি আমি অনেক দিন এমন অবাক হই নি । এমন না যে আমার কাছে কখনও কেউ খেতে চায় নি । একটু আগেও আমি এই কাজটা করেছি । কিন্তু এই মেয়েটা তেমন কেউ নয় । মেয়েটার পোশাক পরিচ্ছদের দিকে তাকিয়ে তো অবশ্যই তেমন কিছু মনে হচ্ছে না। মেয়েটার পরনে একটা ডেনিম টাইট প্যান্ট রয়েছে । উপরে একটা টিশার্ট । পোশাকের ধরন দেখেই মনে হচ্ছে মেয়েটা আশে পাশে থাকে । সম্ভবত রাতের বেলা হাটতে বের হয়েছে । এমন কেউ এই ভাবে কেউ কারো আইস্ক্রিম চাইতে পারে সেটা আমার ধারণার বাইরে ছিল ।
আমি অবাক হওয়ার ভাবটা খানিকটা কাটিয়ে উঠিয়ে বললাম, এটা ?
মেয়েটা একটু হেসে বলল, হ্যা । দিবেন ?
-আমি কিনে দিই আরেকটা ?
-উহু । আপনার হাতের টাই চাই ।

আমি অর্ধেক খোলা কোণ আইস্ক্রিমটা মেয়েটাকে দিয়ে দিলাম । মেয়েটা খুব স্বাভাবিক ভাবে সেটা খুলে আমার সামনেই মুখে দিল । আমি সত্যিই কিছু সময় সেদিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম । আরও একটা কামড় দিয়ে মেয়েটা বলল, আপনি কোথায় থাকেন ?
-এই এক নম্বর গলিতে !
-চলুন হাটা যাক !

আমি মাথা নাড়িয়ে আবারও হাটতে শুরু করলাম আবার । মেয়েটা আস্তে আমার পাশে পাশে হাটছে । আমি তখনও অবাক হয়ে ভাবছি আসলে কী হচ্ছে এখানে । মেয়েটা এমন অদ্ভুত আচরন কেন করছে ! আমি আর কিছু জানতে চাইবো কিনা সেটাও আমি ঠিক বুঝতে পারছি না । তাই চুপচাপ হাটতে লাগলাম । মেয়েটাই আামকে বলল, আপনি কি এই কাজ প্রায়ই করেন ?
-কোন কাজ?
-এই যে যারাই আপনার কাছে কিছু খেতে চায় তাদের সেটা কিনে দেন !
-প্রায়ই তো আর করি না ।

মেয়েটা আইসক্রিমে আরেকটা কামড় দিল । তারপর বলল, আমি আসলে হাটতে বের হয়েছিলাম । তখনই দেখলাম । আপনি মোমিনের দোকানে দাড়িয়ে । চোখ সরে অন্য দিকে নিয়ে যাচ্ছিলাম তখনই দেখলাম একজন টোকাই এসে আপনাকে ইশারায় একটা বন কিনে দিয়ে বলল। আমি প্রায়ই আসি এই দোকানে । তাই জানি যে এরা সারাদিন এখানেই থাকে । এই ভাবেই এরা চেয়ে চিন্তে খায় । আপনি কিনে দিলেন । এরপর আরও ৫জন এল একে একে । আমি ভাবি নি যে আপনি সবাইকে কিনে দিবেন !

আমি কী বলবো খুজে পেলাম না । মেয়েটি বলল, তাই ভাবলাম আমিও আপনার আইসক্রিমের উপরে হামলা করি ।

হাটতে হাটতে আমি আমার বাসার কাছে চলে এসেছি । আমি গেটের কাছে থামতেই মেয়েটি বলল, এখানে থাকেন ?
-জ্বী !
-কয় তলা ?
-চার তলাতে ।
-ওকে আজ তাহলে আসি । আর থ্যাঙ্কিউ ফর দ্য আইসক্রিম !
-ওয়েলকাম !

মেয়েটা আবার পেছন ঘুরে হাটা দিল । মেয়েটার নাম জানতে চাইতে গিয়েই চাইলাম না । মেয়েটা নিজ থেকে বলে নি । আমি যত সময় মেয়েটাকে দেখা যায় সেদিকেই তাকিয়ে রইলাম । মেয়েটা এমন অদ্ভুত কাজ কেন করলো আমি ঠিক বুঝতে পারি নি । হয়তো খানিকটা কৌতুহল থেকে । দেখলাম একবারে মাথার দিকে মেয়েটা আমার দিকে ফিরে তাকালো । মেয়েটার মুখে আমি একটু হাসি দেখতে পেলাম । তারপর সে চোখের আড়ালে চলে গেল ।

মেয়েটার সাথে আমার আবারও দেখা হল পরদিন । একই স্থানে । আমি খাওয়া শেষ করে আইসক্রিম কিনতে যাবো দেখতে পেলাম মেয়েটা মোমিনের দোকানের সামনে দাড়িয়ে আছে । আামকে দেখে হাসলো । আমি আইসক্রিম কিনতে যাবো মেয়েটা আমাকে আইসক্রিম খাওয়ালো । তারপর ঠিক এখই ভাবে আমার সাথে গল্প করতে করতে আমার বাসা পর্যন্ত এল ।

গল্প বলতে দিন কেমন গেল, আমি করি এইসব । তবে মেয়েটা আজও নিজের সম্পর্কে কোন কথা বলল না । এমন কি নিজের নামটা পর্যন্ত বলল না । অবশ্য আমার নামও সে জানতে চাইলো না । আমাকে বাসা পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে আবার আগের দিনের মত হাটা দিল ।

এই ভাবে মেয়েটার সাথে পরপর সাত দিন দেখা হল । একই ভাবে আমি খাওয়ার পরে আইসক্রিম খেতে যেতাম । এবং মেয়েটি এসে হাজির হত । আমার থেকে আইসক্রিম নিতো । আমার সাথে গল্প করতে করতে এগিয়ে যেত আমার বাড়ি পর্যন্ত । তারপর আবারও ফিরে আসতো । কিন্তু অষ্টম দিনে মেয়েটি যখন এল না তখন একটু মন খারাপ হল । তারপর মনে হল যে মেয়েটি হয়তো অন্য কোন কাজে আটকে গেছে । এই জন্য আসতে পারে নি । কিন্তু পরের দিনও যখন মেয়েটি এল না তখন মনটা সত্যিই খারাপ হল । আমি সত্যিই ভেবেছিলাম যে মেয়েটা আসবে । মেয়েটা আমার কাছ থেকে আইসক্রিম নিয়ে খাবে । আমরা দুজন মিলে গল্প করবো, কথা বলবো ।

পরের এক মাসে মেয়েটির সাথে আমার একবারও দেখা হল না । আমার মনে হল যে মেয়েটির সাথে আমার আর হয়তো দেখা হবে না । সত্যি বলতে মনের ভেতরে একটা অদ্ভুত কষ্ট এসে জমা হল । মেয়েটাকে সেই প্রথম যেদিন দেখেছিলাম সেদিন থেকে মেয়েটার প্রতি একটা অদ্ভুত মায়া মনে এসে জমা হয়েছে । কেন হয়েছে সেটা আমার জানা নেই । কেবল আমার মনে হয়েছে যে এই মেয়েটা আমার কাছে অন্য সবার থেকে আলাদা । মেয়েটার কথা বলা, হাসা সব কিছু আমাকে মুগ্ধ করে রেখেছে । ঐ সাতটা দিন আমি যেন পুরোদিন কেবল মেয়েটার সাথে কথা বলার জন্য অপেক্ষা করেই থাকতাম । কিন্তু এই একটা মাস মেয়েটা না আসার কারণে মনের ভেতরে একটা বিষন্নতা এসে জমা হয়েছে । বারবার মনে হচ্ছিলো যে আমার কি যেন হারিয়ে গেছে । অথচ মেয়েটার নাম পর্যন্ত আমি জানি না । যখন আমার মনে হল যে মেয়েটির সাথে আমার আর দেখা হবে না তখনই আবার আমার সাথে মেয়েটির দেখা হল ।

ঠিক এক মাস পরে ঠিক একই ভাবে মেয়েটির সাথে আমার দেখা হল । সেদিনও আমি গিয়েছি আইসক্রিম কিনতে যাবো তখনই সেই কন্ঠ স্বরটা শুনতে পেলাম । আমার নাম নয়, মোমিমের নাম ধরে ডেকে সে দুটো আইসক্রিম দিতে বলল । আমি কিছু না বলে কেবল তাকিয়ে রইলাম তার দিকে । আমি চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রয়েছি তার দিকে । আমার কেন জানি ঠিক বিশ্বাস হচ্ছে না তখনও । মেয়েটা যখন আমাকে একটা আইসক্রিম ধরিয়ে দিয়ে হাটতে শুরু করলো । ঠিক যেভাবে আমার সাথে সে সাত দিন হেসেছে । আমি কিছু সময় বিমুঢ় হয়ে দাড়িয়ে থাকলেও দ্রুত তার পাশাপাশি হাটতে শুরু করলাম । মেয়েটি সেই স্বাভাবিক ভাবেই কথা বলে চলেছে । এমন ভাবে কথা বলেছে যেন কিছু হয় নি । গতকালকেই আমরা ঠিক একই ভাবে এখান দিয়ে হেটেছি ।

আমার বাড়ির সামনে এসে মেয়েটা থামলো । তারপর আমার দিকে তাকিয়ে রইলো কিছু সময় । আমি কী বলব খুজে পেলাম না । মেয়েটি বলল, ডিড ইউ মিস মি?
মেয়েটার কন্ঠে হঠাৎ একটা পরিবর্তন লক্ষ্য করলাম । কেমন একটা আকুলতা রয়েছে যেন সেখানে । আমি বললাম, হ্যা ।
-কেন?
-জানি না । কেমন মনে হচ্ছিলো তোমার সাথে কথা বলি । এই যে এই টুকু আমরা হাটছি কথা বলছি এটার জন্য মনটা বড় আকুল হয়ে ছিল !
-যদি আমি আরও একমাস পরে আসতাম, একই ভাবে কি আইসক্রিন কিনে মোমিনের দোকানের সামনে আমার জন্য অপেক্ষা করতে ?
-তুমি দেখেছিলে আমাকে?

মেয়েটা হাসলো । তারপর বলল, প্রতিদিন । বরং তোমার জন্য আমি অপেক্ষা করে থাকতাম ।
-তাহলে সামনে আসো নি কেন?
মেয়েটা আবারও হাসলো । বলল, কাল বলবো । আজকে বাসায় যাও । কাল ঠিক সন্ধ্যা সাতটায় কফি এক্সপ্রেসে আসবে । কেমন ? তোমার জন্য অপেক্ষা করবো । তবে তুমি চাইলে আমাকে যত সময় ইচ্ছে অপেক্ষা করিয়ে রাখতে পারো । আমি ঠিক ঠিক অপেক্ষা করবো !

মেয়েটা আর কিছু না বলে আগের মত হাটা দিল । আমি তার চলে যাওয়া পথের দিকে তাকিয়ে রইলাম । গলির আড়ালে চলে গেলেও দাড়িয়ে রইলাম । মনের ভেতরে একটা অদ্ভুত আনন্দ হতে লাগলো । এই কয়দিনে যে অশান্তিতে ছিলাম, লক্ষ্য করলাম যে সেটা চলে গিয়েছে । সেখানে একটা আলাদা উত্তেজনা কাজ করছে । কাল মেয়েটার সাথে দেখা হওয়ার উত্তেজনা !

দুই

পরের দিন অফিস থেকে আগে আগে ছুটি নিয়ে চলে এলাম বাসায় । সাতটার আগেই কমি একপ্রেসে গিয়ে হাজির হলাম । এখানে আমি প্রায়ই আসি । আমাকে এরা চেনে । আমি বসতেই ওয়েটার আমার পছন্দের কফি নিয়ে আসতে গেল । আমি ওকে মানা করলাম । বললাম যে একজন আসবে একটু পরে । তারপরই অর্ডার দিচ্ছি ।

আমি যদিও ভেবেছিলাম যে মেয়েটি আজকেও আমাকে অপেক্ষা করিয়ে রাখবে কিন্তু সেটা করলো না । ঠিক ঠিক সাতটা বাজে মেয়েটি আমার গেট দিয়ে ভেতরে ঢুকলো । এবং তখনই আমি খানিকটা থমকে গেলাম মেয়েটাকে দেখে !

এতোদিন মেয়েটাকে আমি একদম স্বাভাবিক পোশাকে দেখেছি । রাতের বেলা কিংবা ঘরের ভেতরে মেয়েরা যেমন থাকে ঠিক তেমন ভাবে । মুখে কোন মেকাপ ছিল না । সামান্য লিপস্টিকও না । কিন্তু আজকে মেয়েটা সেজেই এসেছে । আমার মনে হল যে অনেক দিন আমি এতো সুন্দর মেয়ে দেখি নি ।

বিশেষ করে হাতে দেওয়া গাঢ় মেহেদী আর চোখে কাজল আমাকে একেবারে বিমহিত করে ফেলল । আমার সামনে এসে মেয়েটি হাসলো একটু। তারপর বলল, আমার মনেই হচ্ছিলো যে তুমি আগেই এসে অপেক্ষা করবে !
আমি তখনও ওর দিকে তাকিয়েই আছি । ওর কথায় একটু টনক নড়লো। তারপর বললাম, আরে না না । মাত্রই এলাম । বস ।
মেয়েটি বসলো আমার সামনে । তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বলল, পছন্দ হয়েছে আমাকে ?
আমি লজ্জায় পড়ে গেলাম । বললাম, মিথ্যা বলব না তবে এরকম ভাবে তোমাকে দেখি নি আগে !
-কোন ভার্শন পছন্দ বেশি ? এটা নাকি আগের টা?
আমি খানিকটা দ্বিধায় পড়ে গেলাম । একটু চিন্তা করে বললাম, দুটোই । এটা অনেক বেশি টেম্টিং তবে লং লাস্টিং না । আগেরটা বেশি লংলাস্টিং । আরও ভাল করে বললে ধর এটা তোমার বিরিয়ানী রূপ ! আমরা সবাই বিরিয়ানী পছন্দ করি কিন্তু প্রতিদিন কেউ বিরিয়ানী খায় না । পরপর দুই তিন দিন খেলেই আগ্রহ কমে আসবে । আগের হচ্ছে ধোয়া ওঠা সাদা ভাত । আজীবন যার আকর্ষণ থাকবে !

মেয়েটা আবারও হাসলো । মনে হল আমার ব্যাখ্যা পছন্দ হয়েছে । আমার দিকে কিছু সময় তাকিয়ে বলল, আমরা কিন্তু এখনও কেউ কারো নাম জানি না ।
আমি আমার নাম বললাম । মেয়েটি বলল, আমি নীরা । সামনের হাইঠেরিটেজ বিল্ডিং দেখছো ঐটার ১১ তলাতে থাকি !
আমি নীরার দিকে তখনও তাকিয়ে আছি । নীরা বলল, তোমার মনে একটা কৌতুহল জন্মে আছে । তাই না ?
-হ্যা ।
-এই যে কেন আমি এই এক মাস তোমার সামনে আসি নি ।
-হুম !
নীরা কিছু সময় দম নিল। তারপর বলল, আসলে এটার যে কী ব্যাখ্যা আমি দিবো সেটা আমি নিজেও জানি না । তুমি হয়তো শুনলে হাসবে আমার কথা ।
-বল শুনি ।
-তোমার সাথে আমার যেদিন দেখা হল, ঐদিনই কিন্তু আমি তোমাকে প্রথম দেখি নি । তারও এক সপ্তাহ আগে তোমাকে দেখেছি ।

এই লাইনটা বলে নীরা কিছু সময় থামলো । আমি তাকিয়ে রয়েছি ওর দিকে । এরই মাঝে আমাদের জন্য কফি চলে এল । নীরা কফির কাপের দিকে কিছু সময় তাকিয়ে থেকে আমার দিকে তাকালো তারপর আবারও বলা শুরু করলো, আমার রাতের বেলা হাটার অভ্যাস অনেক দিন । রাত এগারোটার দিকে আমি হাটতে বের হই । মোটামুটি ১২টা পর্যন্ত হাটাহাটি করি । সেদিনও বের হয়েছিলাম । তখন তোমাকে দেখলাম । ক্লান্ত হয়ে মোমিনের দোকান থেকে কিছু কিনছো । চেহারা কেমন মলিন হয়ে আছে । সত্যি বলতে কী যে মনে হল আমি নিজেও জানি না । ওখানেই দাড়িয়ে রইলাম । তুমি চোখের সামনে চলে গেলে । আমি তখনও দাড়িয়েই রইলাম । ঐদিন আমার আর হাটা হল না । বাসায় ফিরে গেলাম । কিন্তু কোন ভাবেই তুমি মাথা থেকে বের হলে না । পরের দিন আবারও দাড়িয়ে থাকলাম বটে তোমাকে দেখার জন্য তবে তুমি এলে না ঐদিন । কিন্তু তোমাকে আর মাথা থেকে বের করতে পারলাম না । কিছুইতেই তুমি আর বের হলে না আমার মাথা থেকে ।

একটু থামলো নীরা । কফির কাপে চুমুক দিল একটা । তারপর আবারও বলতে শুরু করলো, তারপর ঐদিন তোমাকে দেখলাম ঐ ভাবে বাচ্চাদের খাবার কিনে দিতে । এতো ভাল লাগলো দৃশ্যটা দেখে যে বলে বোঝাতে পারবো না । সাহস করে তোমার সাথে কথা বললাম, আইসক্রিমটা চেয়ে নিলাম । এরপর পরের সাতদিন প্রতিদিন আমাদের কথা হল । এটা তো তুমি জানো । তোমার চেহারা দেখেই আমার কেন জানি মনে হচ্ছিলো আমার মত তুমিও আমাকে পছন্দ করেছো ! হুমায়ূন আহমেদের নীল অপরাজিতা বইতে একটা জটিল নকশার কথা বলা আছে । পড়েছো কিনা জানি না । সেখানে বলা আছে যে একটা ভালোবাসার নকশা মাঝ থেকে ছিড়ে দুজনের মাঝে দিয়ে দেওয়া হয় ! যখন এই দুজন একে অন্যের সামনে আসে তখন মনের ভেতর থেকেই তারা একটা আভাস পায় । আমার কেন জানি এই থিউরা খুব বিশ্বাস হয় । এই জন্যই হয়তো তোমাকে দেখে আমার ওমন মনে হয়েছিলো । মন এতো উতলা হয়েছিলো । তাই মনে হল তোমার মন যদি এমন উতলা না হয় তখন ? যদি তা কেবল ক্ষণিকের ভাল লাগা হয় । তাই ঠিক করলাম যে একটু দুরে যাই । দেখা যাক তোমার প্রতিক্রিয়া কী হয় !

বিশ্বাস করবে কিনা জানি না তবে এই একটা মাস আমি প্রতিদিন জানালা দিয়ে তোমার চেহারার দিকে তাকিয়ে থেকেছি । তোমার চোখে আমার জন্য একটা অপেক্ষা দেখেছি । বারবার আমার কেবল মনে হয়েছে যে আমি তোমাকে পেয়েছি । আমার নকশার বাকি অংশ তোমার কাছেই আছে !

নীরা একটানা কথা বলে থামলো । চোখটা আমার চোখের দিকে নিবদ্ধ ! আমার তখন সত্যিই মনে হল আমার নকশার অন্য অংশটা নীরার কাছেই রয়েছে । আমরা কেউ কাউকে বললাম না যে আমরা একে অন্যকে ভালোবাসি । তবে আমরা যে একে অন্যের প্রেমে পড়েছি সেইটা আর আলাদা ভাবে কাউকে বলে দেওয়ার দরকার পড়লো না । আমরা আমাদের ভালোবাসার নকশার বাকি অংশ খুজে পেয়েছি !

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 4.7 / 5. Vote count: 70

No votes so far! Be the first to rate this post.

About অপু তানভীর

আমি অতি ভাল একজন ছেলে।

View all posts by অপু তানভীর →