রূপম

oputanvir
4.6
(41)

-কী হচ্ছে ওখানে ?

জামিল থেমে গেল । আরিয়ানকে কষে একটা চড় মারতেই যাচ্ছিলো তখনই এই আওয়াজটা কানে এল ওর । একটু অবাক না হয়ে পারলো না ! ক্যাম্পাসের এই দিকটা ওদের আড্ডাখানা । বিশেষ করে এই গলির দিকে কেউ খুব একটা আসে না । কাউকে যখন ধরে প্যাদানি দিতে হয় তখন এইখানে নিয়ে আসা হয় । সবাই দেখলেও না দেখার একটা ভান করে চলে যায় । আর একজন কিনা উচু গলাতে জানতে চাইছে যে এখানে কী হচ্ছে !

জামিলের রাগ হল না বরং সত্যিই একটু বিস্ময় জাগছে মনে। দেখতে ইচ্ছে করছে কে বলল কথাটা !

মোটা সাতজন ছেলে রয়েছে জামিলের সামনে ! এর ভেতরে একজনকে ধরে আনা হয়েছে । আরিয়ান। বাকি ছয়জন ছেলে ওর দলের ছেলে । দুজন ছেলে ধরে রেখেছে আরিয়ানকে! আর বাকি চারজন তার সামনে । আর গলির একদম শেষ মাথায় দাড়িয়ে রয়েছে সেই ছেলেটা । জামিল ছেলেটাকে পরিস্কার দেখতে পেল । চেহারা দেখেই বুঝতে পারলো সে ফার্স্ট ইয়ারের কেউ হবে । বড়জোর সেকেন্ড ইয়ার হতে পারে । কোন পলিটিক্যাল ছেলে নয় । এই ছেলেকে সে আগে কোন দিন দেখে নি !

জামিল কিছু বলতে যাবে তার আগেই একেবারে সামনে থাকা রাজু বলল, এই কে রে ?
ছেলেটি বলল, আমি ফার্স্ট ইয়ার ভাইয়া ! আমার নাম রুপম । ঐ যে যাকে ধরে রেখেছেন ও আমার ক্লাসেই পড়ে । ওকে এখানে কী করছেন ?
-তোর এতো শুনে কী হবে । যা ভাগ এখান থেকে !###-ভাইয়া আরিয়ানের সাথে আমার একটু দরকার ছিল । এই জন্য ওকে খুজতে এসেছি ।
-তোকে বললাম না চলে যেতে এখান থেকে !
রূপম ছেলেটা চলে তো গেলই না বরং আরও সামনে এগিয়ে এল । রাজুর সামনে এসে দাড়িয়ে বলল, ভাইয়া ওকে এখনই লাগবে !

রাজুর মাথা সব সময় গরম একটু । ওর মুখের থেকে হাত বেশি চলে । রাজু সোজা একটা চড় মেরে বসলো রূপম নামের ছেলেটার গালে । তারপর বলল, এখনই ভাগ এখান থেকে । নয়তো একদম খুন করে ফেলল !

জামিল ভেবেছিলো রূপম নামের ছেলেটা বুঝি এখনই চলে যাবে । কিন্তু সে সেখানেই দাড়িয়েই রইলো । তারপর শান্ত গলায় বলল, ভাইয়া এটা কী করলেন ? আমি ভাল করে কথা বলছি আর আপনি গায়ে হাত দিলেন !

রাজু এবার একটা গালী দিয়ে বলল, তবে রে বাই$% এতো বড় সাহস !
এই বলে সে একটা ঘুসি মারতে গেল রূপমকে । তবে এটা আগের মত কিছু হল না । জামিল দেখলো ঘুসিটা অর্ধ পথ যাওয়ার আগেই থেমে গেল । রূপম চিতা বাঘের ক্ষিপ্ততায় রাজুর তলপেট বরাবর একটা ঘুসি মারলো । এতো জোড়ে যে জামিল এতো দুর থেকেও মনে হল যে ওর তলপেটের সব কিছু ছিড়ে বের হয়ে যাবে ! রাজি কেবল কোত করে একটা আওয়াজ বের করতে পারলো । তারপর মাটিতে পড়ে গেল । আর উঠলো না ।
স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়াতে রাজুর পাশের জন্য এগিয়ে আসতে গেল । কিন্তু সেও মাঝ পথেই আটকে গেল । রূপম আশ্চর্য দক্ষতায় এগিয়ে গিয়ে তার মাথার বরাবর একটা লাথি চালালো । সেও সেখান থেকেই পড়ে গেল । আর উঠলো না ।

জামিল মুখ দিয়ে কিছু করবে কী, নিজের চোখে যেন বিশ্বাস করতে পারছে না যে ওর চোখের সামনে এসব হচ্ছে । এরপর রূপম আরও দুই পা এগিয়ে এসে সোজা উড়ে আসার মত করে ডান দিকে দাড়িয়ে থাকা আযাদের বুক বরাবর একটা লাথি কষালো । আযাতও ওকে মারতে যাচ্ছিলো । লাথি খেতে সে মাটিতে পড়লো । তবে সে উঠতে যাবে তখনই রূপম চোখে ইশারায় কেবল শুয়েই থাকতে বলল। আযাদের কি হল সেটা জামিল জানে না তবে আযাদ উঠলো না । বুক চেপে মাটিতেই বসে রইলো ।

এরপর আযাদের পাশে মিরাজ দাড়িয়ে । ওর কাছে একটা বড় চাপাতি থাকে সব সময় । কোমরে গোজা থাকে । সেটা বের হয়ে এল হাত । সেটার দিকে তাকিয়ে রূপম একটু যেন হতাশার মত করে মুখ করলো । তারপর বললম, এটা কেন বের করলেন ভাইয়া? আমি তো অফেন্ডেড হয়ে গেলাম আরও ।
মিরাজ চাপাতিটা মাথা পর্যন্ত তুলতেও পারলো না তার আগেই একটা লাথি এসে লাগলো মিরাজের নাকে । মট করে সেটা ভাঙ্গার আওয়াজ শুনতে পেল সবাই । হাত থেকে চাপাতিটা ফেলে দিয়ে মিরাজ নাক চেপে ধরলো । সেখান দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে গলগল করে ! কিন্তু সেখানেই রূপম থামলো না । মিরাজ বসেই ছিল নাক ধরে, তাই পা দিয়ে কান বরাবর একটা লাথি মারতে রূপমের খুব বেশি কষ্ট হল না । মাটিতে পড়ার আগেই মিরাজ জ্ঞান হারালো ।

জামিল কেবল অবাক হয়ে খেয়াল করলো যে ওর চারজন ছেলে একমিনিটের কম সময়ে মাটিতে পড়ে গেল ! বাকি দুজন আরিয়ানের হাত ধরে ছিল । ওকে ছেড়ে দিল ওরা । তবে সামনে এগোলো না । সামনে পড়ে থাকা নিজেদের সঙ্গীদের অবস্থা দেখে সাহস হচ্ছে না এগোতে !
রূপম বলল, এরা কেবল মার খেল গায়ে হাত তোলার জন্য । অন্য কোন কারণে না । আমি বড়দের খুব সম্মান করি ! কিন্তু …।
জামিলের অবাকের ভাবটা একটু কাটতে বলল, তোর সাহস তো কম না । আমার ক্যাম্পাসে এসে আমার সামনে বেয়াদবী করিস?
-বেয়াদবীর কি দেখলেন ভাইয়া ? আপনার সামনে একজন আমাকে মারলো আর আপনি কিছু করলেন না ? আমি দাড়িয়ে দাড়িয়ে মার খাবো ?
এরপর এক লাগে জামিলের সামনে এসে দাড়ালো রূপম । জামিলের চোখের দিকে তাকিয়ে বলল, আমার সাথে যে বেয়াদবী করবে তাদের অবস্থা ঠিক এমনই হবে । এমন কি আপনিও যদি কোন দিন এমন করেন ঠিক এই ভাবে মাটিতে পড়ে থাকবেন ।

রূপম খুব শান্ত গলাতে কথাটা বলল কিন্তু জামিলের যেন মনে হল কথাটা একেবারে ওর বুকের ভেতরে গিয়ে লাগলো । ছেলেটার চোখ আশ্চর্য রকমের শান্ত । ভয় ধরানো শান্ত । এই চোখ কাউকে ভয় করে না ।

রূপম এবার আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলল, এই তুই কী করেছিস বলতো ? কেন বড় ভাইয়েরা তোর উপর রাগ করেছে ?
আরিয়ান বলল, কিছু করি নি ।
রূপম ধমকে উঠে বলল, সত্যি করে বল?
-সিগারেট ধরিয়েছিলাম ।
-তোকে ধরে আসলেই মাইর দেওয়া দরকার । বড় ভাইদের সামনে কেউ সিগেরেট ধরায় ! এই জন্য আমি বিড়িখোরদের দেখতে পারি না । সরি বল জামিল ভাইকে । সরি বল !
আরিয়ান বলল, সরি ভাই ।

রূপম এবার জামিলের দিকে তাকিয়ে বলল, ভুল হয়ে গেছে ওর । ক্ষমা করে দিয়েন । ওকে ! আমরা যাই !

আরিয়ানের হাত ধরে রূপম হাটতে শুরু করলো । জামিল কিছু বলতে যাচ্ছিলো তার আগেই রূপম আবার ফিরে তাকালো । তারপর সরারি জামিলের দিকে তাকিয়ে বলল, এখানে যা হয়েছে তা এখানেই শেষ হবে আশা করি । কারণ সামনে এগোলে সেটা অনেকের জন্য ভাল হবে না । আর ফার্স্ট ইয়ারের একটা ছেলের হাতে ক্যাম্পাসের স্বনাম ধন্য ছাত্র নেতা মাইর খেয়েছে ব্যাপারটা মোটেও সুখকর হবে না ! তাই না ! ভাল থাকুন ভাইয়া !

জামিল একটা কথাও বলতে পারলো না । বুকের ভেতরে একটা অদ্ভুত ভয় এসে জড় হল । রূপম নামের ছেলেটা সাধারণ কেউ নয় সেটা তার বুঝতে মোটেও কষ্ট হল না ।

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 4.6 / 5. Vote count: 41

No votes so far! Be the first to rate this post.


Discover more from অপু তানভীর

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

About অপু তানভীর

আমি অতি ভাল একজন ছেলে।

View all posts by অপু তানভীর →

2 Comments on “রূপম”

Comments are closed.