-কী হচ্ছে ওখানে ?
জামিল থেমে গেল । আরিয়ানকে কষে একটা চড় মারতেই যাচ্ছিলো তখনই এই আওয়াজটা কানে এল ওর । একটু অবাক না হয়ে পারলো না ! ক্যাম্পাসের এই দিকটা ওদের আড্ডাখানা । বিশেষ করে এই গলির দিকে কেউ খুব একটা আসে না । কাউকে যখন ধরে প্যাদানি দিতে হয় তখন এইখানে নিয়ে আসা হয় । সবাই দেখলেও না দেখার একটা ভান করে চলে যায় । আর একজন কিনা উচু গলাতে জানতে চাইছে যে এখানে কী হচ্ছে !
জামিলের রাগ হল না বরং সত্যিই একটু বিস্ময় জাগছে মনে। দেখতে ইচ্ছে করছে কে বলল কথাটা !
মোটা সাতজন ছেলে রয়েছে জামিলের সামনে ! এর ভেতরে একজনকে ধরে আনা হয়েছে । আরিয়ান। বাকি ছয়জন ছেলে ওর দলের ছেলে । দুজন ছেলে ধরে রেখেছে আরিয়ানকে! আর বাকি চারজন তার সামনে । আর গলির একদম শেষ মাথায় দাড়িয়ে রয়েছে সেই ছেলেটা । জামিল ছেলেটাকে পরিস্কার দেখতে পেল । চেহারা দেখেই বুঝতে পারলো সে ফার্স্ট ইয়ারের কেউ হবে । বড়জোর সেকেন্ড ইয়ার হতে পারে । কোন পলিটিক্যাল ছেলে নয় । এই ছেলেকে সে আগে কোন দিন দেখে নি !
জামিল কিছু বলতে যাবে তার আগেই একেবারে সামনে থাকা রাজু বলল, এই কে রে ?
ছেলেটি বলল, আমি ফার্স্ট ইয়ার ভাইয়া ! আমার নাম রুপম । ঐ যে যাকে ধরে রেখেছেন ও আমার ক্লাসেই পড়ে । ওকে এখানে কী করছেন ?
-তোর এতো শুনে কী হবে । যা ভাগ এখান থেকে !###-ভাইয়া আরিয়ানের সাথে আমার একটু দরকার ছিল । এই জন্য ওকে খুজতে এসেছি ।
-তোকে বললাম না চলে যেতে এখান থেকে !
রূপম ছেলেটা চলে তো গেলই না বরং আরও সামনে এগিয়ে এল । রাজুর সামনে এসে দাড়িয়ে বলল, ভাইয়া ওকে এখনই লাগবে !
রাজুর মাথা সব সময় গরম একটু । ওর মুখের থেকে হাত বেশি চলে । রাজু সোজা একটা চড় মেরে বসলো রূপম নামের ছেলেটার গালে । তারপর বলল, এখনই ভাগ এখান থেকে । নয়তো একদম খুন করে ফেলল !
জামিল ভেবেছিলো রূপম নামের ছেলেটা বুঝি এখনই চলে যাবে । কিন্তু সে সেখানেই দাড়িয়েই রইলো । তারপর শান্ত গলায় বলল, ভাইয়া এটা কী করলেন ? আমি ভাল করে কথা বলছি আর আপনি গায়ে হাত দিলেন !
রাজু এবার একটা গালী দিয়ে বলল, তবে রে বাই$% এতো বড় সাহস !
এই বলে সে একটা ঘুসি মারতে গেল রূপমকে । তবে এটা আগের মত কিছু হল না । জামিল দেখলো ঘুসিটা অর্ধ পথ যাওয়ার আগেই থেমে গেল । রূপম চিতা বাঘের ক্ষিপ্ততায় রাজুর তলপেট বরাবর একটা ঘুসি মারলো । এতো জোড়ে যে জামিল এতো দুর থেকেও মনে হল যে ওর তলপেটের সব কিছু ছিড়ে বের হয়ে যাবে ! রাজি কেবল কোত করে একটা আওয়াজ বের করতে পারলো । তারপর মাটিতে পড়ে গেল । আর উঠলো না ।
স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়াতে রাজুর পাশের জন্য এগিয়ে আসতে গেল । কিন্তু সেও মাঝ পথেই আটকে গেল । রূপম আশ্চর্য দক্ষতায় এগিয়ে গিয়ে তার মাথার বরাবর একটা লাথি চালালো । সেও সেখান থেকেই পড়ে গেল । আর উঠলো না ।
জামিল মুখ দিয়ে কিছু করবে কী, নিজের চোখে যেন বিশ্বাস করতে পারছে না যে ওর চোখের সামনে এসব হচ্ছে । এরপর রূপম আরও দুই পা এগিয়ে এসে সোজা উড়ে আসার মত করে ডান দিকে দাড়িয়ে থাকা আযাদের বুক বরাবর একটা লাথি কষালো । আযাতও ওকে মারতে যাচ্ছিলো । লাথি খেতে সে মাটিতে পড়লো । তবে সে উঠতে যাবে তখনই রূপম চোখে ইশারায় কেবল শুয়েই থাকতে বলল। আযাদের কি হল সেটা জামিল জানে না তবে আযাদ উঠলো না । বুক চেপে মাটিতেই বসে রইলো ।
এরপর আযাদের পাশে মিরাজ দাড়িয়ে । ওর কাছে একটা বড় চাপাতি থাকে সব সময় । কোমরে গোজা থাকে । সেটা বের হয়ে এল হাত । সেটার দিকে তাকিয়ে রূপম একটু যেন হতাশার মত করে মুখ করলো । তারপর বললম, এটা কেন বের করলেন ভাইয়া? আমি তো অফেন্ডেড হয়ে গেলাম আরও ।
মিরাজ চাপাতিটা মাথা পর্যন্ত তুলতেও পারলো না তার আগেই একটা লাথি এসে লাগলো মিরাজের নাকে । মট করে সেটা ভাঙ্গার আওয়াজ শুনতে পেল সবাই । হাত থেকে চাপাতিটা ফেলে দিয়ে মিরাজ নাক চেপে ধরলো । সেখান দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে গলগল করে ! কিন্তু সেখানেই রূপম থামলো না । মিরাজ বসেই ছিল নাক ধরে, তাই পা দিয়ে কান বরাবর একটা লাথি মারতে রূপমের খুব বেশি কষ্ট হল না । মাটিতে পড়ার আগেই মিরাজ জ্ঞান হারালো ।
জামিল কেবল অবাক হয়ে খেয়াল করলো যে ওর চারজন ছেলে একমিনিটের কম সময়ে মাটিতে পড়ে গেল ! বাকি দুজন আরিয়ানের হাত ধরে ছিল । ওকে ছেড়ে দিল ওরা । তবে সামনে এগোলো না । সামনে পড়ে থাকা নিজেদের সঙ্গীদের অবস্থা দেখে সাহস হচ্ছে না এগোতে !
রূপম বলল, এরা কেবল মার খেল গায়ে হাত তোলার জন্য । অন্য কোন কারণে না । আমি বড়দের খুব সম্মান করি ! কিন্তু …।
জামিলের অবাকের ভাবটা একটু কাটতে বলল, তোর সাহস তো কম না । আমার ক্যাম্পাসে এসে আমার সামনে বেয়াদবী করিস?
-বেয়াদবীর কি দেখলেন ভাইয়া ? আপনার সামনে একজন আমাকে মারলো আর আপনি কিছু করলেন না ? আমি দাড়িয়ে দাড়িয়ে মার খাবো ?
এরপর এক লাগে জামিলের সামনে এসে দাড়ালো রূপম । জামিলের চোখের দিকে তাকিয়ে বলল, আমার সাথে যে বেয়াদবী করবে তাদের অবস্থা ঠিক এমনই হবে । এমন কি আপনিও যদি কোন দিন এমন করেন ঠিক এই ভাবে মাটিতে পড়ে থাকবেন ।
রূপম খুব শান্ত গলাতে কথাটা বলল কিন্তু জামিলের যেন মনে হল কথাটা একেবারে ওর বুকের ভেতরে গিয়ে লাগলো । ছেলেটার চোখ আশ্চর্য রকমের শান্ত । ভয় ধরানো শান্ত । এই চোখ কাউকে ভয় করে না ।
রূপম এবার আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলল, এই তুই কী করেছিস বলতো ? কেন বড় ভাইয়েরা তোর উপর রাগ করেছে ?
আরিয়ান বলল, কিছু করি নি ।
রূপম ধমকে উঠে বলল, সত্যি করে বল?
-সিগারেট ধরিয়েছিলাম ।
-তোকে ধরে আসলেই মাইর দেওয়া দরকার । বড় ভাইদের সামনে কেউ সিগেরেট ধরায় ! এই জন্য আমি বিড়িখোরদের দেখতে পারি না । সরি বল জামিল ভাইকে । সরি বল !
আরিয়ান বলল, সরি ভাই ।
রূপম এবার জামিলের দিকে তাকিয়ে বলল, ভুল হয়ে গেছে ওর । ক্ষমা করে দিয়েন । ওকে ! আমরা যাই !
আরিয়ানের হাত ধরে রূপম হাটতে শুরু করলো । জামিল কিছু বলতে যাচ্ছিলো তার আগেই রূপম আবার ফিরে তাকালো । তারপর সরারি জামিলের দিকে তাকিয়ে বলল, এখানে যা হয়েছে তা এখানেই শেষ হবে আশা করি । কারণ সামনে এগোলে সেটা অনেকের জন্য ভাল হবে না । আর ফার্স্ট ইয়ারের একটা ছেলের হাতে ক্যাম্পাসের স্বনাম ধন্য ছাত্র নেতা মাইর খেয়েছে ব্যাপারটা মোটেও সুখকর হবে না ! তাই না ! ভাল থাকুন ভাইয়া !
জামিল একটা কথাও বলতে পারলো না । বুকের ভেতরে একটা অদ্ভুত ভয় এসে জড় হল । রূপম নামের ছেলেটা সাধারণ কেউ নয় সেটা তার বুঝতে মোটেও কষ্ট হল না ।
Vai, Next part asbe naki?
এগুলো এদৃশ্যের গল্প । এখানেই শেষ বলা যেতে পারে আবার আসতেও পারে পরে কোণ পর্ব।