কাঁচের দরজাটা ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করতেই মেজাজ টা খারাপ হয়ে গেল জেরিনের । সকাল বেলা যখন বাসা থেকে বের হয়েছিল মনে মনে ঠিক করে এসেছিলো আজকে কোন কিছুতেই মেজাজ গরম করবে না । আজকে তাদের কোম্পানীর জন্য একটা বিশেষ দিন । মেজাজ খারাপ করে দিনটা খারাপ করতে চায় না সে মোটেও কিন্তু বদ ছেলেটাকে চোখের সামনে দেখে মেজাজটা আসলেই নিয়ন্ত্রণে রাখাটা কষ্টের ।
আজকেও বদমাইশটা টিশার্ট আর জিন্স পরে এসে অফিসে এসেছে । সামনের ডেস্কে বসা রীতার সাথে ফ্লার্ট করার চেষ্টা করছে । আর বদ মেয়েটাও হেসে গড়াগড়ি খাচ্ছে । জেরিনের মেজাজটা আরও একটু খারাপের দিকে গেল । লক্ষ্য করলো ওর পাটা একটু একটু কাঁপছে রাগের কারণে । রেগে গেলে জেরিনের এমনটাই হয় । পা কাঁপতে থাকে আর কথা আটকে যায় ।
জেরিন খুব ভাল করেই জানে এই রাগ হলেও অমিতের কিছু যাবে আসবে না । বদটাকে অফিসের বস অর্থ্যাৎ ওর বাবাই মাথায় তুলে রেখেছে । নয়তো এতো বড় সাহস আসে কোথা থেকে যে এই অফিসে টিশার্ট আর পরে আসে !
প্রথম যেদিন ছেলেটাকে দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিল । ভাবতেই পারছিলো না এখানে এমন কেউ আছে । প্রথমে ভেবেছিল হয়তো বাইরে থেকে এসেছে । অফিসের কোন এপ্লোয়ীইর গেস্ট হবে । কিন্তু রিসিপশনে জিজ্ঞেস করতেই জানা গেল ছেলেটা নাকি দিন দশেক আগে এখানে জয়েন করেছেে । বিস্ময়টা কাটাতে জেরিনের একটু সময় লেগেছিলো সেদিন ।
একজন নতুন এপ্লোয়ী নেওয়া হবে জেরিন জানতো কিন্তু তার বাবা এই পিচ কোথা থেকে নিয়ে এসেছে কে জানে ? জেরিন দিন পনেরোর জন্য বাইরে গিয়েছিলো আর এর ভেতরেই এই কাজ করেছে । কোথা থেকে, কে না কাকে ধরে এনে বসিয়ে দিয়েছে । জেরিনের একটা ইচ্ছে ছিল ওর এক ক্লাসমেটকে জবটা দিবে, মনে মনে ঠিক করে রেখেছিল আর ওর বাবা কিনা এই কাজ করে বসলো । বিরক্তি আর রাগে ওর শরীর জ্বলতে শুরু করলো । বাবাকে তো কিছু বলা যাবে না, রাগটা ঝাড়তে হবে এই ছোকড়ার উপর । ছোকড়াটা তখনও এক এপ্লোয়ীর সাথে আড্ডা দিয়ে যাচ্ছে ।
আড্ডা খানা বানিয়ে ফেলেছে অফিস টাকে !
জেরিন এগিয়ে গেল ছেলেটার দিকে ।
-এই যে মিস্টার ?
ছেলেটা যার সাথে কথা বলছিল সে জেরিনকে দেখেই বসে গেল মাথা নিচু করে । বস চলে এলে এপ্লিয়ীরা যেমন কাজে মনযোগ দেয় তেমন করেই মনযোগী হয়ে গেল । ছেলেটা জেরিনের দিকে তাকিয়ে বলল
-আমাকে কিছু বলছেন ?
-জি !
-বলুন ?
-কি করছেন আপনি ?
-দেখতেই পাচ্ছেন, কথা বলছি । আড্ডাও বলতে পারেন !
জেরিন অনুভব করলো তার রাগটা আরও একধাপ বেড়ে গেল । এই ছেলের সাহস তো কম না । অবশ্য ছেলেটা জানে না সে কে ? জানলে নিশ্চয় এমন করে কথা বলতো না !
-আপনি কি অফিসে আড্ডা দিতে আসেন ? নাকি এটা আড্ডা দেওয়ার জায়গা ?
-না আড্ডা দিতে আসি না । অন্তত অফিস আওয়ারে তো কাজই করি । কিন্তু এখনও অফিস আওয়ার শুরু হয় নি । মিনিট দুয়েক বাকি আছে !
জেরিন তাকিয়ে দেখলো আসলেই ঘড়িতে এখনও দশটা বাজে নি । একটু বাকি আছে । ছেলেটা আবার বলল
-কলিগদের সাথে সুসম্পর্ক রাখলে অফিসের পরিবেশ ভাল থাকে । জানেনই তো ! অন্তত অফিসের এমডির তো জানাই কথা তাই না ?
তার মানে ছেলেটা ওকে ঠিকই চেনে । কিন্তু চেহারায় এমন একটা ভাব যেন কোথাকার কোন এমডি তাতে আমার কি যায় আছে ! এতে করে জেরিনের রাগটা যেন আরো একটু বেড়ে গেল । জেরিন বলল
-অফিসের পরিবেশ নিয়ে দেখছি ভালই জ্ঞান রাখেন । তা এটা কি পোষাক পরে এসেছেন ? এটা অফিসের পোষাক ?
-সমস্যা কোথায় ? আমি কি অশালীন কিছু পরেছি ? দুনিয়ার কোটি কোটি মানুষ এই রকম পোষাক পরে ঘুরে বেড়াচ্ছে ।
-এটা অফিস !
-আমি তো বলছি না এটা রেস্টুরেন্ট ! আর এই অফিসের কিন্তু কোথায় লেখা নেই অফিসে কি টাইপের পোষাক পরে আসতে হবে । পোষাক কোড নেই । আছে কি ?
জেরিন আরও কিছু বলতে যাবে তখনই জেরিনের বাবা এসে ঢুকলো দরজা দিয়ে । সামনে দাড়ানো ছেলেটার দিকে তাকিয়ে বলল
-অমিত আমার কেবিনে আসো তো জলদি ।
-জি স্যার !
তারপর জেরিনের দিকে তাকিয়ে বলল
-বড় বসের ডাক চলে এসেছে । আপনার সাথে পরে কথা বলি । কেমন !
তারপর একটা হাসি দিয়ে চলে গেল । জেরিন আরও ৩০ সেকেন্ড সেখানেই দাড়িয়ে থাকলো । রাগে আস্তে আস্তে ফুসতে থাকলো ।
এটা তাও মাস দুয়েক আগের কথা । এই দুই মাসে অমিত প্রতিদিন এমন কিছু না কিছু করেছে যাতে করে জেরিন রেগে যায় । কিন্তু ও কিছু করতে পারে নি । বাবার কাছে অভিযোগ করতেই ওর বাবা শান্ত কন্ঠে বলেছে
-পোশাকে কি যায় আছে ? ছেলেটা কাজ জানে এটাই হচ্ছে বড় কথা ।
এই কথার প্রতিবাদ জেরিন করতে পারি নি । কারণ ছেলেটা আসলেই ভাল কাজ করে । কাজে ফাকি দেওয়ার অভ্যাসও নেই । কিন্তু ছেলেটাকে কিছুতেই সহ্য করতে পারে না ও ।
তবে কদিনের ভেতরেই জেরিন আবিস্কার করলো যে কেবল ওর বাবাই না, অফিসের প্রায়ই সবাই ছেলেটাকে পছন্দ করে । সবার সাথেই ছেলেটা চমৎকার হেসে হেসে কথা বলে । জেরিনের সাথেও হেসেই কথা বলে তবে জেরিনের মনে হয় ওকে যেন ছেলেটা উপহাস করছে । তার উপরে ছেলেটার আরেকটা কাজ জেরিন একদম দুই চোক্ষে দেখতে পারে না । সেটা হল বাঁশি বাজানো । প্রায়ই দিনই লাঞ্চ আওয়ার হলেই অফিসে ক্যান্টিনে বাঁশি বাজিয়ে সবাইকে শোনায় এবং অবাক হওয়ার ব্যাপারটা হচ্ছে সেটা অনেকে পছন্দ করে । এমন কি একদিন তো তার বাবা নিজেও সেখানে গিয়ে হাজির হয়েছিল । জেরিন এসব ভাবতেই পারে না । নিজের কেবিনে বসে বসে রাগে ফুসতে থাকে ।
জেরিন নিজের মনকে শান্ত করার চেষ্টা করলো । বারবার বলল আজকে একটা বিশেষ দিন । আজকে চীন থেকে খুব বড় কয়েকজন ক্লায়েন্ট আসবে । যদি ওদেরকে ইম্প্রেস করতে পারে তাহলে ওদের কোম্পানীটা এক লাফে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় চলে যাবে । এই জন্য ওরা গত এক মাস ধরে বেশ কষ্ট করছে । আজকে সেই কোম্পানীর লোকজনের আসার কথা । আর এই বদ ছেলে কি না ফ্লার্ট করার ব্যস্ত । জেরিন ওদের সামনে গিয়ে খুব ঠান্ডা কন্ঠে বলল
-অমিত সাহেব !
-ইয়েস ম্যাম !
-আমার কেবিনে আসুন !
-ইয়েস ম্যাম !
বলেই অমিত একটা স্যালুটের মত কর হাত টা মাথার কাছে নিয়ে এল । এটা দেখে রিসেপশনের মেয়েটা ফিক করে হেসে দিল তবে জেরিন তাকাতেই সেই হাসিটা আবার মিলিয়ে গেল সাথে সাথেই ।
কেবিনে ওর আসার একটু পরপরই অমিত একে ঢুকলো । জেরিনের রাগটা তখনও ঠান্ডা হয় নি । অমিতের দিকে তাকিয়ে বলল
-আজকে না আপনার প্রেজেন্টেশন দেওয়ার কথা ।
-ইয়েস ম্যাম ।
-তাহলে ? এই ভাবে যাবেন ক্লায়েন্টের সামনে ? টিশার্ট জিন্স, খোচা খোচা দাড়ি নিয়ে ?
-ইয়েস ম্যাম !
-আপনি আমার সাথে ইয়ার্কি মারছেন ?
-ইয়েস ম্যাম !
জেরিন কিবলবে ভেবে পেল না । ছেলেটা ওকে বিন্দু মাত্র ভয় পায় না । এই জন্য জেরিনের রাগটা আরও বেশি হয় । জেরিন বলল
-আপনি আমার সামনে থেকে যান । আর খবরদার কনফারেন্স রুমের ধারে কাছে যাবেন না । আপনার দায়িত্ব আপনি সাদিক সাহেবকে বুঝিয়ে দিবেন । ইজ ইট ক্লিয়ার ?
-ইয়েস ম্যাম !
-জাস্ট গেট লস্ট !
-ইয়েস ম্যাম !
জেরিন দেখলো অমিত আবারও সেই উপহাসের হাসি দিয়ে দরজা দিয়ে বের হয়ে গেল, যেন জেরিনের কাজ কর্মে সে খুবই মজা পাচ্ছে । মেজাজটা আরও এক ডিগ্রি যেন উপরে উঠে গেল ।
চাইনীজ ক্লায়েন্টের সাথে আলোচনা শুরুর কিছু সময় পরে যখন ওদের প্রজেক্টটা প্রেজেন্ট করার কথা তখন অমিত কনফারেন্স রুমে ঢুকলো । জেরিন প্রথমে অমিতকে দেখে ঠিক মত চিনতেই যেন পারলো না । ছেলেটার পরনে সকালের মত টিশার্ট জিন্স নেই, এমন কি মুখে খোচা দাড়িও নেই । একেবারে ফিটফাট কর্পোরেট অফিসারের মত । কালো শার্টের উপরে কালো কোটি পরেছে সেই সাথে ঘিয়ে রংয়ের প্যান্ট । কালো পোলিশ করা সু !
ওর মত জেরিনের বাবাও খানিকটা অবাক হয়েছে দেখেই বোঝা যাচ্ছে । রুমে ঢুকেই সবাইকে হ্যালো বলল । তারপর চাইনীজদের দিকে তাকিয়ে অদ্ভুত ভাষায় কিছু একটা বলল । সাথে সাথেই চারজন চাইনিজ হেসে উঠলো । প্রতি উত্তরে তারাও কিছু একটা বলল । সেটা শুনে অমিত নিজেও হাসলো । ওরা যে কয়জন রুমে ছিল কেবল বোকার মত তাকিয়ে রইলো ওদের দিকে ।
আরও কয়েকটা সময় পর একজন চাইনীজ কিছু একটা বলল । জেরিন কিছুই বুঝলো না । ওদের কথা ছিল যে সব কিছ ইংরেজিতে হবে । সেই হিসাবে সব প্রস্তুতি নিয়ে রাখা হয়েছিল । চাইনীজদেরও যদি বুঝতে কষ্ট না হয় এই জন্য তারা সাথে করে একজন দোভাষী নিয়ে এসেছিল কিন্তু এখন মনে হচ্ছে তার দরকার নেই । অমিত সেই চাইনীজের কথা শুনে জেরিনের বাবার দিকে তাকিয়ে বলল
-স্যার ওরা বলছে যে পুরো প্রজেক্টটা আমি ওদের সামনে মান্দারীন ভাষায় তুলে ধরি ! ধরবো ?
-তুমি জানো মান্দারীন ভাষা ?
জেরিনের মত জেরিনের বাবাও অবাক হয়েছে ।
-জি স্যার ! জানি ! শখ করে শিখেছিলাম !
-দ্যান গো এহেড । কোন সমস্যা নেই ।
তার পরবর্তি ৩০ মিনিট অমিত কি বলল সেইটা জেরিন কিংবা ওর বাবা কিছুই বুঝতে পারলো না কিন্তু জেরিনের কেবল মনে যে ওরা ঠিক ঠিকই কাজটা পেয়ে যাচ্ছে । কিন্তু ও খুশি হতে পাচ্ছে না । এতে করে সব ক্রেডিট চলে যাবে অমিতের কাছে । তখন অফিসে ওর প্রভাব আরও বেড়ে যাবে। কিন্তু জেরিনের কিছু করার নেই । কেবল চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া ।
#
কাজটা হাতে আসার পর থেকেই আসলেও ওদের হাতের কাজ যেন আরও বহু গুনে বেড়ে গেছে । জেরিন সহ কারোই দম ফেলার সময় নেই। জেরিন রাগ করবে কি নিজেই দম ফেলার সময় পাচ্ছে না । এদিকে অমিতের অবস্থা আগের মতই । সবার সাথে ইয়ার্কি মারছে হাসছে, হাসাচ্ছে । ঐ ঘটনার পর জেরিনের বাবা যেন আরও একধাপ এগিয়ে গেছে অমিতের ব্যাপার । জেরিনের তো মনে হতে শুরু করেছে যে ওর বাবা ওর সাথে ছেলেটার বিয়ের দেওয়ার কথাটাও চিন্তা করে ফেলেছে । অন্তত ভাব ভঙ্গিতে জেরিনের কাছে সেই রকমই মনে হচ্ছে ।
একদিন আর থাকতে না পেরে জেরিন জিজ্ঞেস করলো ওর বাবাকে ।
-আব্বু তুমি কি অমিতকে নিয়ে অন্য কিছু ভাবছো ?
ওর বাবা খুব স্বাভবিক ভাবেই বলল
-অন্য কিছু বলতে ?
-না থাক কিছু না ।
জেরিনের বাবা কিছু সময় চুপ থেকে ওর দিকে তাকিয়ে হেসে ফেলল । জেরিনের তখন নিজেকে একটা থাপ্পড় মাড়তে ইচ্ছে করছিলো । কি দরকার দিল এই টাইপের একটা কথা জানতে চাওয়ার ।
ঠিক ঐদিন ওর বাবা অফিস থেকে একটা টিম গঠন করে চকরিয়াতে পাঠালো নতুন প্রজেক্টের সাইট দেখার জন্য । অমিতের যাওয়ার কোন কথা ছিল না । কথা ছিল জেরিন সহ আরও কয়েকজন যাবে । কিন্তু জেরিনের বাবা অমিতকেও জোর করে পাঠালো । জেরিনের বুঝতে মোটেই কষ্ট হল না বাবা এটা কেন করছে । নিজের গাধামীর জন্য নিজেকে আরেকবার থাপ্পড় দিতে মন চাইলো ওর । অফিস থেকেই একটা হায়েস দেওয়া হল ওদেরকে নিয়ে যাওয়ার জন্য । অফিসের একটা রিসোর্টেই থাকার ব্যবস্থা হল ।
সারা রাস্তা জেরিন একেবারে সামনের সিটে বসে রইলো চুপ করে । এদিকে অমিতের স্বাভাবিক ভাবেই হৈ চৈ করে পার করতে পার লাগলো । তার সাথে বাকিরাও যোগ দিল । নিজেকে কেমন যেন একটু অবাঞ্চিত মনে হচ্ছিলো ওর কাছে । মুখ গম্ভীর করেই সারাটা সময় বসে ছিল ।
তবে চকরিয়াতে পৌছে কাজ যেন আরও বেড়ে গেল ওদের জন্য । টানা দুইদিন আসলেই এসব নিয়ে ভাবার কোন সময় ছিল না । দুদিন পরে যখন কাজ প্রায় শেষ হল তখন রাত ১০ টা বেজে গেছে । খাওয়া শেষ করে অমিতকে আসতে দেখেই জেরিন একটু শক্ত হয়ে বসলো । রিসোর্টের বারান্দায় বসে সামনের দিকে তাকিয়ে ছিল ।
অমিত সামনে এসে বলল
-একটা কথা বলতে এসছি !
-বলুন !
-আসলে ওরা বলতে ভয় পাচ্ছিলো তাই আমি এলাম !
-আপনার ভয় নেই ?
-আমার ?
এই কথা বলে অমিত হাসলো । তারপর বলল
-আসলে কালকে সকালে আমাদের আরেকটু কাজ আছে ।
-হ্যা ! তো ?
-ওটা ১১ টার ভেতরে শেষ হয়ে যাবে আশা করি !
-হুম ! তারপর আমরা ব্যাক করবো !
-আসলে ওর সবাই আপনার কাছে আরও একটা দিনের ছুটি চাচ্ছে । বুঝতেই তো পারছেন যে কক্সবাজারের এতো কাছে চলে এসেছি আমরা । কালকে ওরা ওখানে যেতে যাচ্ছে । প্লিজ না করবেন না ! আমরা সবাই মিলে ঘুরে আসি !
জেরিন কিছু একটা বলতে গিয়ে বলল না । ওর কলিগরা যে একেবারে অন্যায় কোন আবদার করেছে সেটা না । তাছাড়া গত কয়েক দিন সে পরিশ্রম করছে ওরা তাতে একটু ছুটি পেতে পারে !
-আচ্ছা । আমাকেও কি যেতে হবে আপনাদের সাথে ?
-অবশ্যই, কেন যাবেন না ?
-ওকে !
-থ্যাঙ্কিউ ম্যাম !
কিন্তু পরদিন জেরিনের যাওয়া হল না । সব কিছু ঠিক ছিল একজন এসে বলল
-ম্যাম আমরা তো যাওয়ার জন্য রেডি কিন্তু অমিত সাহেব নাকি যাবে না !
-কেন ?
-জানি না ম্যাম ! আপনি একটু বলবেন প্লিজ !
জেরিন নিজেই গেল অমিতের কাছে ।
-আপনি কেন যাবেন না ? আপনিই তো কাল কে বললেন যে যাবেন !
-আমি আসলে ওদের জন্য বলেছিলাম ।
-কেন যাবেন না বলুন ? আমি যাবো বলে যাবেন ?
-ছি ছি ! এই কথা কেন বলছেন ! আপনি আমাকে না পছন্দ করতে পারেন আমি আপনাকে পছন্দ করি কিন্তু !
এটা শুনে জেরিন একটু থতমত খেল । এটা ওর জানা ছিল না । নিজেকে সামলে নিয়ে বলল
-তাহলে কেন যাবেন না বলুন ?
-এটা আমার ব্যক্তিগত কারণ ! প্লিজ আমাকে জোর করবেন না ! আপনারা যান । যাওয়ার সময় আমাকে পিক করে নিলেই চলবে !
জেরিনের কেন জানি নিজেরও যেতে ইচ্ছে করলো না যাওয়ার। বাকীদের পাঠিয়ে দিয়ে নিজের রুমে চলে গেল । রাতের খাওয়ার সময় অমিত ওকে দেখে বেশ অবাক হয়ে বলল
-আপনি যান নি কেন ?
-এমনি ! আসলে আমি নিজেও অনেক বার গেছি ওখানে । এতো আগ্রহ নেই ।
অমিত হাসলো ।
-হাসছেন কেন ?
-না ! এমনি । কোন কারণ নেই ।
-আপনি কেন গেলেন না জানতে পারি কি? জানতে বেশ আগ্রহ হচ্ছে ।
-এমন কোন বড় বিষয় না । ব্যক্তিগত ।
-সেইটাই শুনতে চাচ্ছি !
অমিত কিছুটা সময় যেন কি ভাবলো । এতো দিনের মাঝে এই প্রথম অমিতকে মন খারাপ করতে দেখলো । জেরিন নিজে বেশ অবাক হয়ে গেল ব্যাপার টা দেখে ! এর আগে কখনো ওকে মন বিষন্ন করতে দেখে নি । জেরিনের মনে হয়েছিল অমিত হয়তো বলবে না । কোন কথা না বলে চুপচাপ খেতে শুরু করলো । যখন খাওয়া একেবারে শেষের দিকে তখনই অমিত বলল
-আমি এর আগে কোন দিন কক্সবাজার বীচে যায় নি ।
-কোন দিন না ?
-নাহ !
-সমুদ্র ভয় পান ?
-নাহ ! সমুদ্র আমার খুব পছন্দ । কেবল কক্সবাজার বাদ দিয়ে দেশের অন্য সব বীচেই আমি গেছি ।
-তাহলে কক্সবাজার কি দোষ করলো !
এই লাইন শুনে অমিতের মুখটা যেন আবারও আরও একটু বিষন্ন হয়ে গেল । তারপর বলল
-নিলুকে বলেছিলাম ওর হাত ধরে আমি কক্সবাজারের সমুদ্রটা দেখবো । এক সাথে । ওকে ছাড়া কোন দিন দেখবো না এই সমুদ্রটা !
-তারপর ?
-ও কথা রাখে নি । কিন্তু আমি রেখেছি । রাখছি…
অনেক টা সময় কেউ কোন কথা বল না । চুপ করেই রইলো । জেনির অনেক টা সময় পরে বলল
-তার কি হয়েছে ? কোথায় আছে সে ?
-জানি না । অন্য কারো হাত ধরে বেশ ভাল আছে একবার শুনেছিলাম । আমি এখনও পারি নি কারো হাত ধরতে ।
অমিত আর কোন কথা বললনা । উঠে গেল টেবিল থেকে । জেরিন বসেই রইলো ।
রাতের বেলা জেরিনের কেন জানি ঘুম আসলো না কিছুতেই । কোন দিন ভাবতেই পারি নি যে ছেলেটার ভেতরে এমন কিছু থাকতে পারে । এতো গুলো বছর কাউকে নিয়ে কষ্ট গুলো নিজের ভেতরে লুকিয়ে রেখেছে । আসে পাশের মানুষজনকে একটুও বুঝতে দেয় নি । আশ্চর্য !
যখন বুঝলো ওর ঘুম আসবে না তখনই বাইরে থেকে একটা করুন বাশির সুর ভেসে এল এর আগে প্রতিরাতেই একটা করে বাঁশি সুর যে ঠিকই শুনেছে কিন্তু সেগুলোতে কোন বিষন্নতা থাকতো না । কিন্তু আজকে আছে । এমন একটা বিষন্নতা যা বুকের ভেতরে সোজা গিয়ে আঘাত করে !
বারান্দায় দিকে পা বাড়ালো । নিশ্চুপ রাতের বেলা বারান্দায় বসে রইলো কিছুটা সময় । বারান্দা থেকেই অমিতকে দেখা যাচ্ছে । চাঁদের আলোয় বসে কোন বিষন্ন যুবক তার পুরানো ক্ষতটা যেন বাঁশির সুরে তুলে ফুটিয়ে ধরছে । জেরিনের হঠাৎ করেই খুব কষ্ট হতে লাগলো । এই কষ্টা কি অমিতের জন্য ?
কেন ? জেরিন এই কষ্টের উৎস কোথায় জানে না । নিজের মনের অনুভূতি দেখে নিজেই অবাক হয়ে গেল । এমন টা কেন হচ্ছে সে নিজেই জানে না ।
জেরিনের মনে হল ছেলেটার পাশে গিয়ে বসা দরকার । ছেলেটার ভেতরে অনেক বেশি কষ্টের বোঝা রয়েছে । ছেলেটার কষ্টের বোঝার খানিকটা ভার নিজের করে নেওয়ার ইচ্ছে না সে কিছুতেই দমন করতে পারলো না । আস্তে আস্তে করে এগিয়ে গেল অমিতের দিকে ।
Discover more from অপু তানভীর
Subscribe to get the latest posts sent to your email.