পাহাড় চুড়ায় প্রেম …

oputanvir
4.8
(67)

মেজর সাফায়েত ছাউনি থেকে বের হয়ে এলেন । ছেলেটা তাকিয়ে আছে বগালেকের দিকে । ঠিক বগালেগের দিকে না । বগালেকের একেবারে পাড়ে হুইলচেয়ারে বসে আছে মেয়েটি । মূলত সেদিকেই তাকিয়ে আছে সে । মেজর সাফায়েত পেছন এসে দাড়াতেই অপু তার দিকে তাকালো । সাফায়েত বলল, তুমি নিশ্চিত যে পারবে ?

তুমি করে বলল ছেলেটাকে । এখনও বিশ্ব বিদ্যালয়ের গণ্ডি পার হয় নি ছেলেটা । তুমি করে বলাই যায় ছেলেটাকে । অপু বলল, পারবো । আমাকে পারতেই হবে !
-কেন করছো এটা ?
-কেন করছি জানি না । তবে যদি আমি এই কাজটা না করতে পারি তাহলে নিজের কাছেই ছোট হয়ে থাকবো । মনে হবে যে আমি কোন ভাবেই নিশির যোগ্য না । ওকে সারা জীবন দেখে শুনে রাখতে পারবো না ।
মেজর হাসল । তারপর বলল, ভালোবাসলে মানুষ স্বাভাবিক ভাবে চিন্তা ভাবনা করতে ভুলে যায় । এটা তো জানো !
-জ্বী জানি ।
-তোমার বেলাতেও তাই হয়েছে । আমার মোটেও মনে হচ্ছে না যে তোমাদের যেতে দেওয়া উচিৎ !
-প্লিজ স্যার এমনটা করবেন না । নিশির চেহার দিকে তাকিয়ে দেখেছেন কি ? এতো দিন পরে ওর মনে একটা আনন্দময় উত্তেজনা দেখতে পাচ্ছি । ওটা নষ্ট হতে দিবেন না !
-এখন তো গাড়ি নিয়ে যাওয়া যায় ।

অপু এবার ফিরে তাকালো মেজর সাহেবের দিকে । তারপর বলল, নিশি চাইলে পাহাড়ে হেলিকাপ্টার দিয়ে যেতে পারে ! ওর বাবার কাছে সেটা অতি মামুলী একটা ব্যাপার ! সেটাই চাইলেই করা যায় !
অপু আরও কিছু বলতে যাচ্ছিলো তার আগেই নিশি ওকে ডাক দিল । অপু মেজর সাহেবের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে নিশির দিকে হাটা দিল ।

মেজর সাফায়েত অনেকটা সময় তাকিয়ে রইলো ওদের দিকে । মনের ভেতরে সত্যিই একটা আলাদা অনুভূতি হচ্ছে । এখনও মানুষ কি এভাবে ভালোবাসে ! এভাবে প্রিয় মানুষের জন্য এমন কাজ করতে চায় ? মেজর সাফায়েত হঠাৎ নিজেকে অপু নামের ছেলেটার স্থানে দেখতে পেল । তার খুব ভাল করে মনে আছে নবম শ্রেণীতে পড়া কালীন সময়ে সেও একবার ঠিক এই রকম একটা পাগলামী করেছিলো । প্রিয় মানুষটাকে জন্মদিনের শুভেচ্চা জানাতে প্রায় ৪০ কিলোমিটার পথ হেটে পার হয়েছিলো । আজও সেই কথা মনে হলে সাফায়েতের মনে হাসি আছে । তবে সেই সাথে একটা আনন্দও হয় । সেতুর মুখের সেই আনন্দময় হাসি আজও সাফায়েতের চোখে লেগে আছে !
আচ্ছা অপু যদি সত্যিই নিশিকে নিয়ে চুড়ায় উঠতে পারে তাহলে নিশির চোখে মুখেও সেই আনন্দ দেখা যাবে?
সাফায়েতের কেন জানি বড় দেখতে ইচ্ছে সেই হাসি টা !

নিশি একভাবে বগালেকের পানির দিকে তাকিয়ে রয়েছে । এতো চমৎকার টলটলা পানি সে দেখি । এটা একেবারে প্রাকৃতিক । ওদের বসার সুইমিং পুলের পানিও এতো সুন্দর না । অপু ওর পেছনে এসে দাড়াতেই নিশি বলল, এই এখানে গোসল করা যায় না ?
-গোসল করবে?
-ইচ্ছে করছে কিন্তু থাকুক !
-সাতার কাটা নিষেধ এখানে তবে ওপাশে একটা পাড় আছে । চাইলে ওখান থেকে গোসল করতে পারো !
-নাহ । সাতার না কাটতে পারলে মজা নেই । আর তুমি জানো সাতার কাটার সরঞ্জাম নেই । সুতরাং আমি পারবো না !
অপু বলল, পরের বার তাহলে এখানে সাতার কাটার জন্য আলাদা ভাবে প্রস্তুতি নিয়ে আসবো !

নিশি হঠাৎ খানিকটা গম্ভীর হয়ে গেল । অপুকে হাতের ইশারায় সামনে আসতে বলল। অপু ঠিক ওর সামনেই এসে হাটু গেড়ে বসলো । নিশি বলল, তুমি নিশ্চিত কাজটা করতে চাও ? এখনও দেরী হয়ে যায় নি । আমরা এখানেই দুটোদিন থেকে চলে যেতে পারি !
-উহু ! আমি করতে চাই । কষ্ট হবে আমি জানি । তবে বিশ্বাস কর আমি পারবো । চার ঘন্টা লাগে সাধারণত কেউক্রাডংয়ের উপরে উঠতে । আমাদের না হয় আট ঘন্টা লাগবে ! কাল ভোরে উঠে রওয়ানা দিবো ! অল্প অল্প হাটবো বিশ্রাম নিবো ! তুমি জানো আমি এর আগে কতবার এসেছি । নাকি আমার উপরে বিশ্বাস নেই !

নিশি একভাবে তাকিয়ে রইলো অপুর চোখের দিকে । নিশি খুব বেশি চায় যেন অপু কালকে কাজটা করতে পারে । কারণ যদি ওরা না উঠতে পারে কিংবা মাঝ পথেই অপু হাল ছেড়ে দেয় তাহলে নিশির হয়তো একটু মন খারাপ হবে তবে অপু সারা জীবনে নিজেকে অযোগ্য ভাববে । কোন দিন এটার থেকে বের হতে পারবে না ।

রাতের বেলা খাওয়া শেষ করে ওরা কটেজের বারান্দায় বসে রইলো অনেকটা সময় । ওদের এই কটেজটার অনেকটা বগালেকের উপরে অবস্থিত । রাতে জ্যোঁছনার আলো পানিতে পড়েছে । অপুকে পাশে নিয়ে সেদিকে দেখতে অদ্ভুত ভাল লাগছে নিশির । মনে হচ্ছে যেন এই সময় যদি থামিয়ে দেওয়া যেত তাহলে কতই না ভাল হত । অবশ্য অপু পাশে থাকলে ওর সব সময়ই ওর সব কিছু অন্য রকম লাগে । তবে আজকের এই অনুভূতির সাথে অন্য কোন কিছুর কোন তূলনা নেই !
নিশি আরেও একটু পাশে সরে এল অপুর । তারপর অপুর হাতে হাত রেখে বলল, এবার ফিরে গিয়ে আমরা বিয়ে করে ফেলবো ?
অপু বলল, সে কি ! এতো জলদি?
-হুম ! তোমার কাছ থেকে দুরে থাকতে ইচ্ছে করে না আর ! মনে হয় সারা সময় কাছে থাকতে !
-তোমার বাবা তো আমাকে ঠিক পছন্দ করেন না ।
-না করলে নাই ।
-বাবার বিরুদ্ধে গিয়ে আমার হাত ধরে চলে আসবে?
-কেন আসি নি এতো দুর । বাবা কিন্তু রাজি ছিলেন না । আমাকে তিনি আসতেই দিবেন না ।
-তারপর ?
-তারপর আমি ছুরি দিয়ে নিজের হাতের উপরে রেখে হুমকি দিলাম যে যদি না যেতে দেয় তাহলে নিজের হাতের রগ কেটে ফেলবো !
-সিরিয়াসলি?
-হুম ! তুমি বাবাকে নিয়ে এতো ভেবো না তো ! তুমি শুধু আমাকে নিয়ে ভাবো ! অন্য কিছু নিয়ে ভাবতে হবে না !
-আচ্ছা । আমি তোমাকে নিয়েই কেবল ভাবছো ।

এভাবেই গল্প করতে করতে রাতে ওরা ঘুমিয়ে পড়ে

দুই

মেজর শাফায়েত একবার অপু আর নিশির চলে যাওয়া দেখলো । ওদের সাথে একজন গাইড আর ব্যাগ বহনের জন্য আরও একজন রয়েছে । এই চারজনের দলটা এগিয়ে যাচ্ছে আস্তে । নিশিকে অপু পিঠের দিক দিয়ে কোলে নিয়েছে । নিশি দুই হাত দিয়ে অপুর গলার কাছে জড়িয়ে ধরেছে আর অপু ওর পা দুটো নিয়েছে হাতে । এভাবেই হাটবে ওরা ।

নিশির বাম পায়ে কোন জোড় নেই । ডান পা টা ঠিক থাকলেও সেটা দিয়ে ও হাটতে পারে না কোন ভাবেই । এমন ক্রস ব্যবহার করেও না । শাফায়েত এটা শুনেছে অপুর কাছ থেকে । ছেলেটার মাথায় কি চলছে কে জানে । প্রিয় মানুষটার ইচ্ছে ছিল অন্য সবার মত ট্রাকিং করে পাহাড়ে উঠবে । মানুষের মাঝে যা থাকে সেই জিনিসটা থাকে সেটা পাওয়ার একটা তীব্র আকর্ষণ জেগে ওঠে । পায়ের সমস্যার কারণে নিশির ভেতরে এই পাহাড়ে ওঠার একটা তীব্র আকর্ষণ মনের ভেতরে ছিল । অপু সেটাই পূরণ করতে চলেছে ।
ছেলেটা পারবে তো ?
শাফায়েত মনের ভেতরে একটা চঞ্চল অনুভব করলো । অপু আর নিশির জন্য একটা চিন্তা এসে জড় হল । বিশেষ করে অপুর জন্য । ছেলেটা যদি না পারে তাহলে সারা জীবনে এই না পারার কষ্ট বয়ে বেড়াতে হবে ! এটা থেকে সে কোন ভাবেই মুক্তি পাবে না !

-জামিল জামিল !
মেজর শাফায়েত ডাক দিল । জামিল এসে হাজির সাথে সাথেই ।
-ইয়েস স্যার !
-শোন একটা চারজনের দল নিয়ে তুমি ওদের পেছনে যাও । দুর থেকে ফলো করবো কেবল । তোমাদের কাজ হবে কেবল ওদের নিরাপত্তার দিকে খেয়াল রাখা । বিশেষ করে যদি কেউ অসুস্থ হয়ে যায় তাহলে ! আর যদি নিতান্তই ছেলেটা না পারে তাহলে মেয়েটা নিয়ে চুড়ায় উঠবে ! মনে থাকবে !
-জ্বী স্যার !
-তবে আশা করি যেন তোমাদের সাহায্য না লাগে ! আবারও বলছি কোন ভাবেই নিজ থেকে যাবে না । যখন দেখবে আর কোন উপায় নেই ছেলেটা পারছে না তখনই যাবে । মনে থাকবে তো ?
-মনে থাকবে স্যার !

মেজর শাফায়েতের তবুও মাথা থেকে অপু আর নিশির চিন্তা দুর হল না । তার হাতে আসলে যা ছিল সব তিনি করেছেন । এই পাহাড়ে খুব বড় বিপদ হবে না । আর অপু এর আগেও অনেকবার এই পথেই ট্রেকিং করেছে । ওর অভ্যাস আছে ।

নিজের কটেজের দিকে যাবে তখনই মেজর শাফায়েত দলটাকে দেখতে পেল । মোট ছয়জনের একটা দল কেইক্রাডাংয়ের দিকে যাচ্ছে । আজকে বগালেকে টুরিস্ট একদম নেই । গতকাল কেবল নিশিরা এসেছে আর এই দলটা এসেছে । আর কেউ নেই এখানে । আজকেও কেন জানি মনে হচ্ছে আর কেউ আসবে না । যদিও ওয়ার্কিং ডেইজে টুরিস্ট আসে কম । তবে একদমই যে আসে না এমন টা না । আজকে দেখা যাচ্ছে কেউ আসে নি এই দুইটা দল ছাড়া । ব্যাপারটা একটু অস্বাভাবিকই লাগলো

তিন

রাকিবকে এগোতে হচ্ছে সাবধানে । ওর পেছনে আরও ৫জন রয়েছে । সবার চোখেই সতর্ক দৃষ্টি । ওরা সবাই প্রোফেশনাল । নিজেদের কাজ খুব ভাল করেই বোঝে । রাকিব ভেবেছিলো যে কেবল বুঝি অপু আর নিশিদের কেউ ফলো করবে । কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে আর্মির একটা দলও অপু আর নিশির পেছনে আছে । এটা সে আশা করে নি । সাধারণ কারো পিছু নেওয়াটা খুব একটা কঠিন কিছু না । সেখানে খুব সাবধানতা অবলম্বন না করলেও চলে কিন্তু একটা প্রশিক্ষিত আর্মির দলের পেছনে থাকাটা মোটেই সাধারণ কিছু কোন ব্যাপার না । এই জন্যই বাড়তি সাবধানতা !
এমন সময় রাকিবের পকেটের ফোনটা একটু কেঁপে উঠলো । এই পাহাড়ে সাধারণ ফোনের নেটওয়ার্ক থাকার কথা না । সেটা ভরশায় রাকিব থাকেও নি । ফোনটা বিশেষ ভাবে তৈরি করা । স্যাটেলাইট থেকে সরাসরি সংযুক্ত । সেখান দিয়েই সংযোগ পাওয়া যায় । ফোন সেটটা বের করে নম্বরটা দেখতেই একটু সাবধান হয়ে গেল । এই মানুষটাকে সে এতো অস্থির হতে এর আগে কোন দিন দেখে নি । অবশ্য রাকিব নিজেও হয়তো এমনটাই করতো !

-জ্বী স্যার !
-ওরা কোথায়?
-কী করছে ?
-স্যার ছবি তুলছে !
-আর ?
-আর কী করবে ?
-ইডিয়েট ! আর কী করবে মানে কী ? তোমাকে ওখানে কেন পাঠানো হয়েছে !
-সরি স্যার । ওরা সামনে আছে । ছবি তুলছে হাটছে গল্প করছে ।

রাকিব ফোনের ওপাশ থাকা মানুষটার মুখের ভাবটা একটু কল্পনা করার চেষ্টা করলো । তার মুখের ভাবটা সে কিছুতেই কল্পনা করতে পারছে না । রাকিব একটু ভয়ে ভয়ে বলল, স্যার চিন্তা করবেন না । ম্যামদের কোন সমস্যা হচ্ছে না । আর যে কোন সমস্যা হলে আমরা আছি ।

ফোনের ওপাশ দীর্ঘ সময় নিশ্চুপ হয়ে রইলো । তারপর রাকিব একটা আশ্চর্য কন্ঠস্বর শুনলো ।, রাকিব প্লিজ কিপ মাই ডটার সেফ !
রাকিব সত্যিই চমকে গেল । রাকিব কোন ওপাশের মানুষের মুখ থেকে এমন অনুরোধ শোনে নি । রাকিব বলল, স্যার আপনি কোন চিন্তা করবেন না । আমরা আছি । তবে আমার কেন জানি মনে হচ্ছে ম্যামের আমাদের হেল্প লাগবেই না !

চার
নিশি একভাবে তাকিয়ে রয়েছে অপুর দিকে । একটু একটু হাঁপাচ্ছে অপু । ওরা রাস্তার এক পাশে বসে রয়েছে । একটু আগে ওকে নামিয়ে অপু পাশে বসেছে । নিশি জানে অপুর কষ্ট হচ্ছে । বারবার মনে হচ্ছে এখনই আবার ফিরে যেতে কিন্তু সেই সাথে আবার সামনে এগিয়ে যেতেও ইচ্ছে করছে । ও জানে চাইলেই এখন অপুকে এই কষ্ট থেকে সে মুক্তি দিতে পারে । কিন্তু সেটাও করতে ইচ্ছে করছে না । ওর জন্য অপু যে কষ্টটা করছে সেটা দেখে ওর ভাল লাগছে ।
এতো দিন নিশির জীবনে ওর বাবা ছাড়া আসলে আর কেউ ছিল না । সব সময় দেখে এসেছে যে ওর বাবা ওর জন্য সব কিছু করেছে সব কষ্ট স্বীকার করে নিয়েছে । এছাড়া ওর জীবনে যারাই এসেছে সব সময় ওকে খানিকটা করুণার চোখে দেখেছে নয়তো নিজেদের স্বার্থের জন্য ওর কাছে থেকেছে । নিজের মন থেকে কোন দিন তারা কিছু কখনও করে নি । নিশি এটা বুঝতে পারতো খুব ভাল ভাবেই । এমনটাই যে হবে সেটা সে মেনেও নিয়েছিলো । কিন্তু অপুর ব্যাপারে সব হিসাব উল্টে পাল্টে গেল ।

অপুর সাথে নিশির পরিচয়ের ঘটনা বেশ মজার ছিল । সেদিন আকাশ ভেঙ্গে বৃষ্টি নেমেছিলো । নিশি নিজের হুইল চেয়ারে বসে অপেক্ষা করছিলো নিজের গাড়িটা আসার । তবে ওর চোখ ছিল আকাশের দিকে । মনে একটা ইচ্ছে জাগছে যে বৃষ্টিতে ভিজতে হবে । কিন্তু একা একা যেতে ইচ্ছে করছে না । তখনই অপু এসে হাজির হল নিশির পেছনে । ওর ইলেক্ট্রিক চেহারটা ধরে ধাক্কা দিয়ে বৃষ্টির ভেতরে নিয়ে গেল । নিশি একটু চমকে গেল বটে । অবাক হয়ে তাকালো পরিচিত মানুষটার দিকে । অপু তার ক্লাস মেট হলেও কথা বার্তা হয় নি খুব একটা । এভাবে সে নিশিকে বৃষ্টির ভেতরে নিয়ে আসবে সেটা নিশি মোটেও ভাবতে পারে নি ।
তবে সেদিন নিশি মোটেও কোন কথা বললো না । অপুকে বৃষ্টির ভেতরে ওকে নিয়ে যেতে দিল । দুজন বেশ কিছু সময় বৃষ্টিতে ভিজলো ওরা । তারপর অপু ওকে গাড়িতে উঠিয়ে দিল । সেদিন আশ্চর্য ভাবে দুজনের ভেতরে কোন কথা হল না । কেবল নিরব চাহনীতে একে অন্যকে দেখেছিলো কেবল । তার পরে যখন আবার তাদের দেখা হল পরদিন তখন আর কথা অভাব হয় নি ।

নিশি অপুর দিকে পানির বোতলটা তুলে দিল । কিছুটা পানি খেয়ে অপু বলল, চল আবার যাওয়া যাক ।
-আরেকটু বিশ্রাম নাও ।
-আরে বেশি বসলে আর উঠতে ইচ্ছে করবে না । চল চল ! দাড়ও আগে তোমার আরও কয়েকটা ছবি তুলে দিই ।

পাঁচ
মেজর শাফায়েত এরই ভেতরে কয়েকবার চুড়ার ক্যাম্পে যোগাযোগ করেছেন খোজ নেওয়ার জন্য । তবে সেখান থেকে কোন সুখবর পাওয়া যায় নি । ঘড়িতে বারবার সময় দেখছেন । স্বাভাবিক সময়ে চার ঘন্টা গানে সাধারন মানুষের জন্য । ওদের জন্য উনি ছয় ঘন্টা থেকে আট ঘন্টা সময় ধরে রেখেছেন । কিন্তু চার ঘন্টা পার হতেই নিজেই বারবার যোগাযোগ করছেন । ক্যাম্পের লোকেরাও আজকে বেশ অবাক হয়েছেন মেজর শাফায়েতের আচরণে। আজকে তাদের স্যারের আচরন সত্যিই তাদের কাছে একটু অন্য রকম মনে হচ্ছে । স্যার এই রকম কাজ সাধারণত করেন না কখনও । আজকে এমন আচরন কেন করছেন সেটা কেউই বুঝতে পারছে না

রেডিও রুমে বসেই ছিল তখনই চুড়া থেকে বার্তা এল । মেজর সাফায়েত সাথে সাথে সে ধরলো ।
-জামিল !
-জ্বী স্যার !
-কী খবর ?
-হি ডিন ইট স্যার ! আমাদের কোন সাহায্য লাগে নি !

মেজর শাফায়েতের মনের ভেতরে একটা তীব্র অনুভূতি কাজ করলো । সেই কত বছর আগের প্রিয় মানুষটার হাস্যজল মুখের ছবিটা ভেসে উঠলো ।
চোখের কোনে একটা জলের বিন্দু এসে যুক্ত হল । খুব ইচ্ছে হল নিশির চেহারাটা দেখার জন্য । নিশির হাস্যজ্জ্বল চেহারাটাতে কি একই আনন্দের আলো ছড়িয়ে আছে ?
জামিল বলল, স্যার ?
-বল জামিল । ওরা এখন চুড়াতে ।
-কী করছে ?
-নিশি অপুকে জড়িয়ে ধরে আছে । তারপর এখন চুমু ….
-ঠিক আছে জামিল এতো কিছু বলতে হবে না । আজকে ওখানেই থাকো । কাল ওদের নিয়ে এক সাথেই এসো ।

  • জ্বী স্যার !

মেজর রেডিও রুম থেকে বের হয়ে এল । অধীনস্তদের সামনে নিজের এই আবেগঘন চেহারাটা মোটেই দেখাতে চায় সে ! তবে আজকে এতো দিন পরে তার সেই পুরানো দিনের প্রিয় মুখটাকে বড় দেখতে ইচ্ছে করছে ।

আরেকটা পর্ব হয়তো লিখবো… গল্পটা পড়ে আপনাদের অনুভূতি জানতে আগ্রহী !

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 4.8 / 5. Vote count: 67

No votes so far! Be the first to rate this post.

About অপু তানভীর

আমি অতি ভাল একজন ছেলে।

View all posts by অপু তানভীর →

2 Comments on “পাহাড় চুড়ায় প্রেম …”

  1. ভালো লেগেছে ভাই। আপনার যদি ইচ্ছা হয় তাহলে লিখতে পারেন আরেকটা পর্ব….

  2. ভালো লেগেছে। আরেকটা পর্ব পড়তে অবশ্যই ভালো লাগবে!!!???

Comments are closed.