দ্যা ড্রিমারিষ্ট

oputanvir
4.7
(27)

হালকা সবুজ রংয়ের আকাশটা যেন আজকে খুব কাছে চলে এসেছে । গাঢ় নীল রংয়ের পানিটাকে কেমন জানি একটু ফিকে মনে হচ্ছে সবুজ রংয়ের আকাশটা কাছে । তার উপর সবুজ আকাশের ছায়া পরেছে নীল সমুদ্রের পানির উপর । কেমন একটা মিশ্রন ফুটে উঠেছে সমুদ্রের পানিতে । মনে হচ্ছে অন্য জগতে রয়েছি ।

অন্য জগৎ ?

এই সন্ধ্যা নামবে মনে হয় একটু পরেই । এই আলোতেই নিহিনকে অন্য রকম লাগছে । আমি তাকিয়েই থাকি । বাকি সব যেন থেমে গেছে আমার জন্য ।

-এই কী দেখো ?

-তোমাকে দেখি ।

-ইস । ঢং । আমাকে দেখতে হবে না । দেখো না কি চমৎকার লাগছে সূর্যটা । নীল পানি আর সবুজ আকাশের মাঝে । দেখো না ।

-আমার কাছে অন্য কিছু আছে দেখার ।

-তুমি না !

নিহিনের মুখের দিকে তাকিয়ে দেখি ওর মুখটা একটু লাল হয়ে গেছে ।

আমি এই দৃশ্যটা খুব পছন্দ করি । যেমন টা এই ডুবন্ত লাল সূর্যটা আমার পছন্দ তার থেকেও নিহিনের এই লজ্জা মিশ্রিত চেহারা টা ।

-আমি একটু শোব তোমার কোলে ?

-শোবে ? আচ্ছা ।

আমি আস্তে করে নিহিনের কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়ি । একটু দুরের ভেসে আসছে নীল সমুদ্রের মৃদু গর্জন সাথে নিহিনের কোলে মাথা রেখে শুয়ে থাকা । আমি চোখ বন্ধ করে এই সময়টা উপভোগ করতে থাকি ।

আমি চাই এমন টা সারা জীবন হোক । এই সময়টা যেন কিছুতেই শেষ না হয় । আমি চাইলে হয়তো আরও লম্বা হবে এই দৃশ্যটা কিন্তু লম্বা করে কি লাভ ।

-এই অপু ।

আমি চোখ খুলে দেখি নিহিন এক ভাবেই ডুবন্ত সূর্যের দিকে তাকিয়ে আছে । আর আলতো করে আমার মাথায় হাত বুলাচ্ছে ।

তাহলে কে ডাকছে ?

-এই অপু ।

ডাকে কে ?

চোখ মেলে দেখি মা ডাকছে ।

-কিরে ক্লাসে যাবি না ?

-হুম । কটা বাজে ?

আমি ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি নটার কাছাকাছি বাজে । জাহিদ স্যারের ক্লাস সাড়ে দশটায় । আমি ধীরে সুস্থে বিছানা ছাড়ি ।

নিহিন আমার সোজা-সুজি বসেছে । একটু পরপরই আমার চোখ ওর দিকে চলে যাচ্ছে । জাহিদ স্যার এক মনে ক্লাস নিয়ে চলেছে পেছনে কে তার কথা শুনছে সে দিকে তার কোন লক্ষ্য নেই । আমি মাঝে মাঝে তাকাচ্ছি নিহিনের দিকে । যতবার আমার সাথে নিহিনের চোখাচোখি হয়েছে ততবার নিহিন কেমন একটা অস্বস্থি নিয়ে আমার দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে নিয়েছে । আমি মনে মনে হেসেছি কেবল । নিহিন তো একটু অস্বস্থি অনুভব করবেই । যে মানুষটা সে প্রায় প্রতিদিন স্বপ্নে দেখে যে মানুষটা ওর কোলে মাথা রেখে সূর্যাস্ত দেখে তাকে যদি চোখের সামনে দেখতে হয় তাহলে তো একটু অস্বস্থি লাগারই কথা ।

সকাল বেলা ঠিক যে স্বপ্নটা দেখে আমার ঘুম ভেঙ্গেছে , আমি জানি নিহিনের ঠিক ঐ একই স্বপ্নটা দেখে ঘুম ভেঙ্গেছে । প্রতিদিনই এমন হয় ।

শুনতে খানিকটা অন্য রকম হলেও আসলে ব্যাপারটা এমনই । বাস্তব জীবনে আমরা যেমন হেটে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতে পারি ঠিক তেমনি আমি স্বপ্নের দুনিয়াতে একজন থেকে অন্যজনের কাছে যেতে পারি ।

ব্যাপারটা আরেকটু পরিস্কার করি ।

মনে করা যাক আমাদের বাড়িওয়ালার মেয়েটি স্বপ্নে দেখছে সে বিকেল বেলা সে ছাদের উঠে চা খাচ্ছে । আমি ইচ্ছে করলেই সেই ছাদে গিয়ে হাজির হতে পারি । মেয়েটির সাথে কথা বলতে পারি । সোজা কথায় আমি আর সে একসাথে একই স্বপ্ন দেখতে থাকবো ।

চমৎকার না ?

আরও একটু সোজা করে বলি । বাস্তবের একটা দৃশ্যের কথা কল্পনা করি । মনে করুন আপনি রুমের ভিতর শুয়ে শুয়ে বই পড়ছেন । এটা আপনার একটা নিজের দৃশ্য । ঠিক তখনই আপনার মা পাশের রুম থেকে আপনার রুমে আসলো । আপনার মা যখন পাশের রুমে ছিল তখন সেই পাশের রুম টা ছিল তার নিজের দৃশ্য । কিন্তু সে যখন পাশের রুম থেকে আপনার রুমে চলে এল তখন আপনার রুম টা হয়ে গেল তার নিজের বাস্তব দৃশ্য । কিন্তু আপনার নিজের রুমটা তো আপনার নিজের দৃশ্যের অন্তর্ভুক্ত । তাহলে কি হবে ?

এই এখন আপনার নিজের রুমে যা হবে সেটা আপনার এবং আপনার মায়ের সম্মিলিত দৃশ্য । এখানে যা ঘটবে তা আপনাদের দুজনের জীবনেরই অংশ । দুজনের জীবনেই তার একটা স্মৃতি জমে থাকবে ।

ঠিক একই ভাবে মনে করেন আপনি স্বপ্নে ছাদের ঘুরে বেড়াচ্ছেন । সেটা আপনার নিজের স্বপ্ন । আমি ছাদের দরজা ঠেলে আপনার ছাদে ঢুকে পড়লাম, মানে আপনার স্বপ্নের ভিতর ঢুকে পড়লাম । তখন এইটা আমারও স্বপ্ন হয়ে যাবে । আমরা একসাথে স্বপ্নটা দেখতে শুরু করবো ।

ইনসেপশন মুভি আছে অনেক টা সেই রকম । তবে একটা পার্থক্য হল আমি চাইলেই স্বপ্নের দৃশ্যটা নিজের মত করে তৈরি করে নিতে পারি । ঠিক যেমন আজকে সকালে করেছিলাম ।

মাঝে মাঝেই আমি নিহিনকে নিয়ে নিজের তৈরি এই রকম অনেক জায়গায় চলে যাই । ওর সাথে ঘুরে বেড়াই । বাস্তবে ওর সাথে কথা না বললেও আমার স্বপ্ন সে আমার প্রেমিকা । আমি তার হাত ধরে ঘুরে বেড়াই তার কোলে মাথা ঘুমাই । তার দিকে তাকিয়ে থাকি । যা ইচ্ছা তাই করতে পারি ।

সেখানে নিহিন নিজেও সেটা মনে করে । সে যেন আমার মনের মানুষ । কিন্তু ঘুম ভাঙ্গেই সেটা আর থাকে না । তবে তার ঠিকই মনে থাকে স্বপ্নে সে কার সাথে ছিল কার হাত ধরে সমুদ্র পাড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছিল । এই রকম স্বপ্ন প্রায়ই দেখে সে । আর দেখার পর যখন আমাকে তার সামনে দেখে তখন তার লজ্জার সীমা থাকে না কিংবা খুব অস্বস্থিতে পরে যায় সে ।

এই রকম ক্ষমতা কবে থেকে আমার ভিতর এসেছে আমি ঠিক জানি না । তবে যেদিন থেকে বুঝতে পারি সেদিনের কথা আমার স্পষ্ট মনে আছে ।

তখন ক্লাস সেভেনে পড়তাম । আমার সব থেকে কাছের বন্ধু সবুজ । প্রায়ই আমাকে এসে বলতো আজকে স্বপ্নে আমাকে দেখে । আমরা নাকি একটা খেলার মাঠে দুজন দৌড়াচ্ছি । আমি কেবল অবাক হতাম । কারন ঠিক একইস্বপ্ন আমিও দেখতাম ।

আমি ওর কাছে জানতে চাইলাম যে ও কখন থেকে এই স্বপ্নটা দেখতে শুরু করেছে । এই প্রশ্নের জবার দেওয়া সময় ও ঠিক কেমন যেন একটু ভ্যাবা চ্যাকা খেয়ে গেল । মাথা দুলিয়ে বলল ঠিক বলতে পারবে না । ও কেবল দেখতে শুরু করে যে আমরা দৌড়াচ্ছি ।

কিন্তু আমি এই জিনিসটা দেখতাম না । আমার যতদুর মনে আছে আমি দেখি একটা অন্ধকার মত জায়গায় আমি পৌছে গেছি যেখানে ক্ষনে ক্ষনে জায়গায় বিভিন্ন আলো । আমার নিজের সাথেও একটা আলো মত থাকতো । আমি যেখানে যেতাম সেটা যেত আমার সাথে সাথে । আর অন্য সব আলোর কাছে গিয়ে আমি একে রকম দৃশ্য দেখতে পেতাম একেক রকম মানুষের সাথে । সেই মানুষ গুলোর বেশির ভাগই আমি চিনি কিছু অবশ্য অপরিচিত মানুষও আছে । আমি যে আলোটার ভিতর ঢুকে যেতাম সেখানে তাকে পেয়ে যেতাম ।

আরো কয়েক দিন পরে আমি বুঝেছি আসলে ওগুলো হল অন্যের স্বপ্নের ঢোকার প্রবেশ পথ ।

তারও বেশ কিছু দিন পরে আমি আবিস্কার করি আসলে আমার সাথে যে আলোটা থাকে সেটা আমি ইচ্ছা মন অনুযাযী পরিবর্তন করতে পারি । তারপর কেবল আমি যে আলোর ভিতর ঢুকে পড়লেই হল । সেইটা আমার নিজের মত হয়ে যায় ।।

আমি নিহিনকে বেশ পছন্দ করতে শুরু করি সেই প্রথম থেকেই । আমি তখন প্রায়ই সময় স্বপ্ন নিহিনের আলো খুজতে থাকি । কিন্তু আসে পাশে এতো আলো ছিল যে ওকে খুজেই পাই না ।

অনেক চেষ্টার পর ওর আলোটা খুজে পাই ।

প্রথম যেদিন ওর স্বপ্ন ঢুকি সেদিনের কথা বলি । ঘুম ভাঙ্গার পরে আমি ডায়রীতে লিখে রেখেছিলাম ।

ঐ দিন নিহিন একটা বৃষ্টির স্বপ্ন দেখছিল । চারিদিকে ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে নিহিন তার ভিতর ভিজছে । খোলা মাঠ । নিহিন সেই মাঠে একা একা ভিজছে । আমি দুর থেকে দাড়িয়ে দেখছি ওর বৃষ্টিতে ভেজা । হঠাৎ করেই দেখতে পেলাম ও আমাকে লক্ষ্য করছে ।

পরপর কদিন ওকে খুজে পেতে একটু খুজে পেতে কষ্ট হয়েছে । প্রথম প্রথম আমরা নতুন জায়গার রাস্তা খুজে পেতে যেমন হয় আর কি ।

তারপর থেকে আমি কেবল লুকিয়েই দেখতাম ওকে । বাস্তবে তো দেখতামই স্বপ্নের ভিতরেও আমি ওর কাছে যেতে লজ্জা পেতাম ।

একদিন এক সাহস করে বরফ ঢাকা একটা পাহারের স্বপ্ন নিয়ে হাজির হয়ে গেলাম নিহিন স্বপ্নের কাছে । তারপর থেকে খুজে খুজে হাজির হতাম আমার স্বপ্ন গুলো নিয়ে ।

প্রথম প্রথম না হলেও কয়েক দিন পরে নিহিনের চোখের দৃষ্টি আমি লক্ষ্য করা শুরু করি । নিহিন আমাকে অন্য দৃষ্টিতে দেখা শুরু করেছে ।

আমি কেবল অপেক্ষায় আছি কোন দিন নিহিন আমার কাছে আসবে ।

আমি জানি আসবে একদিন না একদিন আসবেই ।

এর ভিতর একদিন একটা বাজে ঘটনা ঘটে গেল । আমাদের এক ইয়ার সিনিয়ার বড় ভাই, রাসেল নিহিনের পেছনে লাগা শুরুর করলো । পথে ঘাটে ওকে ডিষ্টার্ব করা শুরু করলো ।

দাড়া শালা কে মজা দেখাই ।

রাতের বেলা হাজির হলাম রাসেলে স্বপ্ন । এমন একটা পরিবেশ তৈরি করলাম যেখানে রাসেল দৌড়াচ্ছে পেছনে একটা পাগলা কুকুর ওকে তাড়া করছে । এক পর্যায়ে কুকুরটা রাসেলের জামা কাপড় টেনে সব ছিড়ে ফেলতে শুরু করলো । আস্তে আস্তে একেবারে উলঙ্গ করে ফেলল ।

এর পর আমি আস্তে আস্তে রাসেলের স্বপ্নটা টেনে পরিচিত সবার স্বপ্নের কাছে জুড়তে শুরু করলাম । একপার্যায়ে দেখা গেল রাসেল উলঙ্গ হয়ে সবার সামনে হেটে বেড়াচ্ছে ।

পরদিন ক্যাম্পাসে গিয়ে আমি রাসেলের আসে পাশে হাটছি । যেই রাসেলের দিকে তাকাচ্ছে সেই হাসছে । এমন আর রাসেল বিব্রত চোখে সবার দিকে তাকাচ্ছে । এই রকম চলতে লাগলো প্রতিদিন ।

বেচারা কাউকে মুখ দেখাতেও লজ্জা পাচ্ছিল । আরও কদিন এই রকম যন্ত্রনার ভিতরে রাসেলকে নিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা ছিল কিন্তু একটু মায়া হল ।

একদিন রাসেলের মোবাইলে একটা অপরিচিত নাম্বার থেকে মেসেজ পাঠালাম । লিখলাম “যতদিন তুই মেয়েদের সাথে বেয়াদবি করতে থাকবি তত দিন তোকে দেখে মানুষজন হাঁসবে”

কাজ হল পরদিনই । দেখলাম রাসেল যাকে যাকে বিরক্ত করতো সবার কাছে ক্ষমা চাইলো । যদিও আমি সবার সামনে ওকে ক্ষমা চাইতে বলি নি তবুই দেখলাম ও ক্ষমা চাইলো ।

যাহ ওকে ছেড়ে দিলাম ।

এদিকে আমি প্রতিদিন নিহিনের সাথে স্বপ্নে ঘুরে বেড়াই । নিজের স্বপ্ন রাজ্যে আমার রাজ কন্যা কে নিয়ে ঘুরে বেড়াই । দিন ভালই কাটতে লাগলো ।

-বলবে তো ?

আমি নিহিনের দিকে তাকাই । কিছু একটা বলতে চাই কিন্তু পারি না । কিছু একটা যেন আটকে যাই ।

-তুমি যদি কালকে আমাকে না বল তাহলে আমি আর তোমার সাথে আসবো না ।

আমি তবুও চুপ ।

কদিন থেকে নিহিন কেমন যেন হয়ে গেছে । মানুষের মন বড় অদ্ভুত জিনিস । যদিও ও স্বপ্ন দেখছে তবুও ও যেন খানিকটা বুঝে গেছে আসলে ও যা দেখছে সেটা সত্য না । তাই ওর ইচ্ছা আমি ওর বাস্তবেই কথা বলি । কিভাবে বুঝলো আমি ঠিক বুঝলাম না । মানুষের মন বড় অদ্ভুদ জিনিস ।

প্রথম যেদিন কথাটা বলল আমি ভেবেছিলাম হয় তো ও পরের দিন মনে রাখবে না । কিন্তু পরের দিন ওর ঠিকই মনে রইলো ।

স্বপ্নের ভিতর আমি খানিকটা অস্থিতার ভিতরে পড়লাম । ভালই চলছিল । ওকে নিয়ে প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও যাচ্ছিলাম । ওর হাত ধরছিলাম ওর কোলে মাথা রাখছিলাম ।

কিন্তু নিহিনের যেন এসব কিছু ভাল লাগছিল না ।

পরের কদিন নিহিনের আর কোন দেখা পেলাম না । অনেক খুজলাম । কিন্তু তার কোন খোজ নাই । একটাই মানে হতে পারে নিহিন আজকে কোন স্বপ্ন দেখছে না । তারমানে ও হয়তো ঘুমাই নি রাতে ।

একটু চিন্তা হল । এমন কেন হবে ।

সপ্তাহ খানেক পরের কথা । ক্লাস শেষে বের হতে যাবো ঠিক তখনই নিহিন আমার সামনে এসে হাজির । ওর চোখ টা কেমন লাল ।

বুঝলাম না ঘুমানোর ফল ।

আমাকে প্রথম বারের মত বলল

-তোমার কি একটু সময় হবে ?

-হুম ।

-এসো আমার সাথে ।

এই বলেই ও হাটতে লাগল । এমন একটা ভাব যেন আমি ঠিকই ওর পিছু নেব । আমি ওর পিছু পিছু হাটতে শুরু করলাম ।

-আমি জানি না আমি কি করছি ।

আমি চুপ করে আছি ।

গত কয়েক দিন তুমি আমার দেখা পাও নি । তাই না ?

-হুম । তুমি তো ক্লাসে আসো না ।

-আম ক্লাসে আসার কথা বলছি না ।

-তাহলে ?

-তুমি বোকা সাজার চেষ্টা করবে না প্লিজ । তুমি খুব ভাল করেই জানো আমি কিসের কথা বলছি ।

আমি তবুও কথা বলি না । চুপ করে থাকি ।

নিহিন ব্যাগ থেকে একটা কাগজ বের করে আমার সামনে ধরলো । আমি তাকিয়ে দেখি একটা ড্রয়িং ।

নীল সমুদ্রের পানি । সামনে খোলা সবুজ আকাশ । আকাশের বুকে সূর্য আস্তমিত যাচ্ছে । সমুদ্র তীরে বসে আছে একটি ছেলে আর একটি মেয়ে ।

নিহিন বলল

-মেয়েটি আমি । ছেলেটিকে তুমি কি চিনতে পারছো ?

আমি চুপ । নিজেকে একটা কষে চড় মারতে ইচ্ছা করছে । এখনও সংকোচ !!

বেটা বলে ফেল ।

কিন্তু সত্য কথা বলার পরে কি হবে ?

নিহিন যদি আমাকে দোষারোপ করে । আমি কেন আর কিভাবে ওর স্বপ্নের ভিতর যাই ।

এটা কিভাবে সম্ভব ! যদি ও সব জানার পরে আমার আমার কাছ থেকে দুরে চলে যায় !

আমার এই বিশেষ ক্ষমতাটা আছে এটা আমি কাউকে বলতে চাই না । নিজের এই ক্ষমতা টা লুকিয়ে রাখতে চাই । তার অবশ্য একটা কারনও আছে । ক্লাস নাইনে পড়ি তখন । তখনও নিহিনের মত একটা মেয়েকে পছন্দ করি । টুকটাক কথা হত । একদিন বলেছিলাম ওকে আমার এই স্বপ্ন ভ্রমনের কথা টা । ও প্রথমে বিশ্বাস করে নি ।

যখন সেদিন রাতে ওর স্বপ্নে হানা দিলাম বলে কয়ে তারপর থেকেই ও আমাকে কেমন যেন ভয় ভয় চোখে দেখতো । আমাকে এড়িয়ে চলতো ।

যদি নিহিনও এমন কিছু করে তাহলে ?

নিহিন আবারও বলল

-তুমি চিনো না এই জায়গা টা ?

আমি চুপ করে রই ।

নিহিন বলল

-দেখো, আমি জানি তুমিও দেখো স্বপ্নটা । কিংবা আমার মনে হচ্ছে সাম হাউ তুমি নিজেই কোন ভাবে আমার স্বপ্ন হানা দাও । যাই হোক না কেন আমি এইকয় দিনে …..

-এই কয় দিনে ?

-যতবার তুমি আমাকে নিয়ে এ সব জায়গায় গেছে তার সারাটা সময় আমি কেবল তোমার কথা ভেবেছি । কেন ভেবেছি আমি জানি না । তবে ভেবেছি ।

-তুমি ভয় পাও নি ।

-কেন পাবো ? আমার স্বপ্নটা যে আমার মনের মত । কিন্তু আমি আর কেবল স্বপ্নে বাঁচতে চাই না । আমি বাস্তবেও এমন টা চাই ।

প্রথমে মনে হল আমি ঠিক শুনছি তো ।

নিহিনও তাও চায় । সত্যিই তাই চায় তো ?

পরিশিষ্টঃ

-এই নাও ।

-এটা কি ?

-এটা পড়বা । আর ভিতরে কয়েকটা ড্রয়িং আছে । আজকে এখানে যাবো । মনে থাকবে তো ?

আমি খামটা নেই ।

মনে মনে হাসি । নিহিন সারা দিন বসে ঠিক করে আজকে রাতে আমরা কোথায় যাবো । নিজের হাতে ছবি আকে । নিজর স্বপ্নের দেশে আমরা একসাথে ঘুরে বেড়াই । বাস্তবের মতই ।

জীবনটা নেহৎ খারাপ না ।

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 4.7 / 5. Vote count: 27

No votes so far! Be the first to rate this post.

About অপু তানভীর

আমি অতি ভাল একজন ছেলে।

View all posts by অপু তানভীর →