এই সব মিথ্যা গল্প ৭

oputanvir
4.5
(73)

আমি নাতাশার দিকে তাকিয়ে রইলাম । তাকিয়ে দেখি ও খানিকটা রাগ আর মন খারাপের চোখে তাকিয়ে আছে । ওর এই রকম তাকিয়ে থাকার কারণ আমি খুব ভাল করেই জানি । অন্য কেউ হলে তো আমার সাথে কথাই বলতে চাইতো না কিন্তু নাতাশা বলেই হয়তো আমার সাথে কথা বলছে । আমি অনুরোধের সুরে বললাম, কয়েকটা কথা শুনবে প্লিজ?
-কী হবে শুনে? তোমার কোন ব্যাখ্যা দেওয়ার দরকার নেই শুভ । কোন কৈফিয়ৎ তো আমি চাই নি !
-তবুও আমি কয়েকটা কথা বলতে চাই । প্লিজ শুনো একটু !

আমার একবার মনে হল যে নাতাশা আমার কথা শুনবে না ! সে আমার সাথে কোন কথাই বলতে চাইবে না । তবে সে রাজি হয়ে গেল । আমি ভেবেছিলাম যে ও হয়তো লাঞ্চ আওয়ারে বলবে আসার কথা । কিন্তু আমাকে একটু অবাক করে দিয়েই সে বলল, বল এখনই ।
-এখানে?
-এখানে বলা যাবে না?
-একটু নিরিবিলি হলে ভাল হত না ?
-ওকে এসো !

আমাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে নাতাশা হাটতে শুরু করলো । আমিও বিনা বাক্য ব্যয়ে ওর পেছন পেছন হাটতে শুরু করলাম । আমি ভেবেছিলাম ও হয়তো আমাদের অফিসের ক্যাফেটরিয়ার দিকে যাবে । তবে সেদিকে না গিয়ে সে সোজা ছাদের দিকে পা বাড়ালো । আমিও পেছন পেছন ওর সাথে ছাদে উঠে এলাম ।

আমাদের অফিসের ছাদটা বেশ বড় । কয়েকটা ছাউটির মত তৈরি করা আছে । এখানে বিড়ি খোরেরা এসে বিড়ি খায় । তবে এখন ছাদে আমরা কাউকেই দেখতে পেলাম না । ছাউনির নিচে দাড়িয়ে রইলাম দুজন কিছু সময় । নাতাশা আমার দিকে তাকিয়ে বলল, দেখো আমি আগেই বলেছি যে কৈফিয়ত দিতে হবে না কোন ভাবেই । আমি তোমাকে বিয়ের জন্য প্রস্তাব দিয়েছি, তুমি মানা করে দিয়েছো । ব্যাস ঝামেলা শেষ । আমাকে পছন্দ নাই করতে পারো !
আমি তাড়াতাড়ি করে বলে উঠলাম, না না । আমি তোমাকে …। মানে এমন না !
-কেমন ?
-আমি তোমাকে … তোমাকে …. আমার চোখের দিকে তাকাও । চোখ কখনও মিথ্যা কথা বলে না । তাকাও চোখের দিকে ।

নাতাশা আমার চোখের দিকে গভীর ভাবে তাকিয়ে রইলো । তারপর বলল, এই চোখ দেখেই তো মনে হয়েছিলো যে তুমি আমাকে পছন্দ কর । তাহলে কেন বিয়ে করতে চাও না ? ইম্পুটেন্ট তুমি ?

শব্দটা শুনে আমার কান গরম হয়ে গেল । বললাম, না ।
-তাহলে তোমার চোখ বলছে তুমি আমাকে অসম্ভব পছন্দ কর । শারীরিক ভাবেই সুস্থ । আমি দেখতে নিশ্চয়ই খারাপ নই !
-তুমি আমার দেখা সব থেকে সুন্দর মেয়ে !
-তাহলে সমস্যা কোথায় ? কেন বিয়ে করবে না আমাকে ?

আমি প্রথমেই কী বলবো খুজে পেলাম না । তবে আজকে এই কথা গুলো আমাকে বলতেই হবে। নয়তো আমি হয়তো শান্তি পাবো না । আমি মনে মনে একটু গুছিয়ে নিয়ে বললাম, সেই কথা বলার জন্যই এসেছি ।
নাতাশা কোন কথা বলল না । তবে আমি বুঝতে পারলাম যে ওর মনযোগ আমার দিকে । সেই চোখে আমি তীব্র একটা আগ্রহ দেখতে পাচ্ছি । আমি বলা শুরু করলাম !

-তুমি তো জানোই যে আমার বাবা মা ডিভোর্সড ! তাদের আলাদা হয়ে যাওয়ার পরে আমার কাস্টেডির জন্য কোর্টে কেস হয় । যা ভাবছো তা নয় । তারা আমাকে নিজের কাছে নেওয়ার জন্য নয়, বরং একে অন্যকে গছিয়ে দেওয়ার জন্য কেস লড়ছিলো ! তখন আমার বয়স সাত বছর । সেই ছোট বয়সে আমি তীব্র ভাবে উপলব্ধি করলাম অবহেলা আর অভালোবাসা টা ! একবার ভাবার চেষ্টা কর আমার ছোট সেই মনে কী চলতে পারে ? আমি সেই কথা আসলে মনে করতে চাই না । কোর্টে ঠিক হল যে আমি থাকবো আমাদের নানান আত্মীয়ের বাসায় তবে খচর পাঠাবে দুজনই । তাতে তারা রাজি হল ! সেই থেকে আমি কেবল সারা জীবন মানুষের করুনা দৃষ্টিই দেখেছি । উপলব্ধি করেছি যে কেউ আসলে আমাকে ভালোবাসে নি কোন দিন । আমিও আর সাহস করে কোন দিন কারো কাছে যাই নি । যেতেই পারি নি । কলেজে উঠে কেমন করে একটা মেয়ের সাথে আমার ভাব হয়ে গেল । তারপর প্রেম । প্রায় চার বছর প্রেম করলাম । এক সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ে উঠলাম । তারপর সেও একদিন ছেড়ে চলে গেল । বলে গেল যে আমি ঠিক তার যোগ্য না । জানো সেই সময়ে আমি দুইবার সুইসাইড করতে গিয়েছিলাম ।

আমি একটু দম নিলাম । তাকিয়ে দেকি নাতাশা একভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছে । ওর চোখের কোনে আমি জল দেখতে পেলাম যেন । আমি আবারও বলতে শুরু করলাম ।
-তারপর অনেক দিন আমি একদম একা ছিলাম । নিজেকে স্বাবলম্বী করে তুললাম । মন কে এটা বোঝালাম যে বেঁচে থাকার জন্য আসলে অন্যের দরকার নেই । তারপর এই অফিসে জয়েন করলাম । এক বছর পরে যখন তুমি এলে এখানে, তোমাকে প্রথম দেখে আমার মনের ভেতরে কেমন আন্দোলন সৃষ্টি হল সেটা আমি আজও জানি না । কেবল মনের ভেতর থেকে একটা আওয়াজ বারবার বলে উঠলো যে তোমাকে আমার চাই ই চাই । কিন্তু পূর্বাভিজ্ঞতার জন্য সব সময় দুরে দুরে থাকতাম । কিন্তু সেটাও হল না । তোমার কাছাকাছি চলে আসতেই হল । আমার মনে তোমাকে হারানোর সেই তীব্র ভয়টা এসে জড় হল । কারণ এবার যদি তোমার কাছে পেয়ে হারিয়ে ফেলি, তাহলে সত্যি আমি নিজেকে আর জোড়া দিতে পারবো না । আমি একেবারে ভেঙ্গে পড়বো ! এর থেকে না জড়াই যাতে ….. আমি

আমি কথাটা ঠিক মত বলতেই পারলাম না । আমার গলা ধরে এল কেবল । অনুভব করলাম যে আমার চোখ দিয়ে পানি পড়তে শুরু করেছে । আমি আমার কথা গুলো ঠিক ঠাক মিলাতে পারছি না । তখনই নাতাশা একটা কান্ড করে বসলো । আমি কিছু বুঝে উঠার আগেই আমাকে জড়িয়ে ধরে তীব্র ভাবে আমাকে চুমু খেতে শুরু করলো । এতো তীব্র আর জোড়ালো যে সেই অনুভূতি যে আমি কিছু সময়ের ভেতরেই নিজেকে একেবারে হারিয়ে ফেললাম ওর ঠোঁটে মাঝে ।

কত সময় পরে আমরা দুজন দুজনার থেকে আলাদা হয়েছিলাম আমার মনে নেই । নাতাশা কিছুটা সামলে নিয়ে বলল, এখন নিচে যাবে । তোমার ঐ দুই বজ্জাত বন্ধু আছে না, ওদের নিয়ে লাঞ্চ আওয়ারে হাজির হবে মগবাজার কাজী অফিসে । আমরা আজকেই বিয়ে করব।

নাতাশা আমাকে কোন অনুরোধ করলো না । ওর কন্ঠস্বর অনেকটা হুকুমের মতই শোনালো । তবে আমার কেন জানি সেই হুকুম শুনতে মোটেও খারাপ লাগলো না ।
ছাদের গেট দিয়ে যখন সিড়ির দিকে যাবো তখন নাতাশা আমার কাধ চেপে ধরলো আবারও । আবারও আরেক দফা আমার ঠোঁটে তীব্র ভাবে চুমু খেল কিছু সময় । তারপর খুব নমনীয় কন্ঠে বলল, তোমাকে ছেড়ে আমি কোন দিন যাবো না। কোন দিন না । বুঝেছো ?

আমি বুঝতে পারলাম । আমার কেন জানি সত্যিই মনে হল এই মেয়েটা কোন দিনই আমাকে ছেড়ে যাবে না ! আমাকে একা রেখে কোন দিন চলে যাবে না !

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 4.5 / 5. Vote count: 73

No votes so far! Be the first to rate this post.


Discover more from অপু তানভীর

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

About অপু তানভীর

আমি অতি ভাল একজন ছেলে।

View all posts by অপু তানভীর →