অতিমানব – সেকেন্ড স্টেজ

অতিমানব - অপু তানভীর
4.6
(19)

১৭/৫/২০১৪, ভোর চার টা, শাহবাগ
ব্যস্ত শাহবাগের ভোরের চিত্র একেবারের ভিন্ন । সকাল থেকেই যেখানে হাজারও মানুষের ভীড় এখন সেখানে গুটি কয়েক মানুষ শুয়ে আছে শাপলা ফুলটার কাছে । কিছু সময় পর পর একটা করে যান বাহন চলে যাচ্ছে দ্রুত গতিতে !

ঠিক এমন সময় শাহবাগের যাদুঘরের সামনে একটা মাঝারি সাইজের কাভার্ড ভ্যান এসে থামলো !

কিছুক্ষন কেউ নামলো না ভ্যান থেকে । চালক কিছুটা সংকিত চোখে এদিক ওদিক তাকিয়ে রয়েছে । কিছু একটা বোঝার চেষ্টা করছে । চালকের পাশে বসা লোকটা বলল

-চলেন ! এখন নামা যায় মনে হয় ।

চালকের মনে তবুও খানিকটা সংশয় । নামবে কিনা এখনও বুঝতে পারছে না ।

-আর দেরী করা ঠিক হবে না । লোক জন আসা শুরু হলে ভ্যান রেখে যাওয়া যাবে না !

-হুম !

আর দেরী করলো না তারা । দ্রুত দুজন নেমে পড়ল ভ্যান থেকে । গাড়ির দরজায় তালা মেরে দিল । দ্রুত দুজনের হাতেই একটা করে সুঁচালো চাকু দেখা দিল । ভ্যানের মোটা চার টা টায়ারে একটা করে ফুটো করে দিল । আস্তে আস্তে হাওয়ার বের হতে শুরু করলো সেগুলো থেকে । আর দেরী করলো না তারা । তাদের কাজ আপাতত শেষ । দ্রুত হাটা শুরু করলো । যত দ্রুত সম্ভব এই এলাকা থেকে সরে পড়তে হবে । বাঁচতে হলে যত দূরে চলে যেতে হবে ।





২৬/০৪/২০১৪ মিরপুর চিরিয়াখানা

-তুই আর যায়গা খুজে পেলি না ?

নীলার দিকে তাকিয়ে সুমন কিছুটা বিরক্তি চাপার চেষ্টা করলো । কিন্তু নীলা খুব ভাল করেই জানে সুমন মুখের ভাব যেমনই করুক না কেন ওর সাথে সময় কাটাতে সুমনের ভাল লাগে, সেটা যেখানেই হোক না কেন ! যেমন টা নীলার নিজের লাগে । নীলা মুখ বাঁকিয়ে বলল, কেন সমস্যা কি ?
-আরে আমরা এখন বাচ্চা আছি নাকি ? এখানে কেউ আসে ?
-তো এতো গুলো মানুষ কি ঘোড়ার ঘাস কাটতে এসেছে ? বেশি বকিস না । টিকেট কেটে নিয়ে আয় !

সুমন কিছু বলতে গিয়েও বলল না ! নীলাকে একটা দোকানের ছায়ার দাড়াতে বলে নিজে টিকেট কাউন্টারের দিকে এগিয়ে গেল ! লম্বা ভীড় দেখা যাচ্ছে ! কতক্ষন লাগে কে জানে ?

কিন্তু সামনে গিয়েই কেমন আস্বভাবিক গুনঞ্জন শুনতে পেল ! এবং অবাক হয়ে দেখলো মানুষজন সব হুড়মুড় করে চিড়িয়াখানার গেট দিয়ে বের হচ্ছে !

সমস্যা কি ?

কিছু একটা হয়েছে ?

একজন কে দেখে জিজ্ঞেস করলো

-সমস্যা কি ভাই ?

-আরে ভাই সিংহ খাচা থেকে ছুটে গেছে । চিড়িয়াখানার ভিতরে ঘোরাঘুরি করছে । যাকে পাচ্ছে তাকেই কামড় দিচ্ছে !


তানজিনার বুকের ভেতর টা লাফাচ্ছে ভয়ে । ও যেন দৌড়াতে ভুলে গেছে । একটা পাও নড়াতে পারছে না । মনে হচ্ছে এখনই হাটু ভেঙ্গে পড়ে যাবে ও । এক ভাবে তাকিয়ে আছে ১০/১১ ফিট সামনে দাঁড়ানো সিংহটার দিকে । সিংহ টা একভাবে ওর দিকে তাকিয়ে আছে । যে কোন সময় ওর উপর ঝাঁপিয়ে পড়বে । ডিসকভারী চ্যানেলে দেখেছে শিকারের উপর ঝাপিয়ে পড়ার আগে বন্য প্রানীরা কিছুটা সময় সেটার দিকে স্থির ভাবে তাকিয়ে থাকে !

তানজিনার মনে হচ্ছে সিংহটা মনে হয় অনেক দিন ভাল কিছু খায় না । অন্তত চেহারা আর পেটের দিকে তাকিয়ে তো তাই মনে হচ্ছে ! আজকে ওর মাংস দিয়ে দুপুরের খাবার খুব ভাল করেই হবে !
এখন কি হবে ?

মারা পড়বে ও সিংহের হাতে !

এই তো সিংহটা লাফ মারার প্রস্তুতি নিচ্ছে ! তানজিনার মনে হল ও অজ্ঞান হয়ে যাবে ।

এই লাফ মেরে দিল ওর শরীর বরাবর ! তানজিনা চোখ বন্ধ করে ফেলল ।

কিছুক্ষন নিরবতা !

তানজিনার মনে হল ও যেন অন্তত কাল ধরে অপেক্ষা করছে, অন্তত কাল ধরে দাঁড়িয়ে আছে সিংহের অপেক্ষার ।

কিন্তু কিছুক্ষন পরে মনে হল যে সিংহ ওর কাছে পৌছাতে যেন একটু বেশি সময় নিচ্ছে ! এতো সময় লাগার কথা না ।

তাহলে কি সিংহ ওকে রেখে অন্য দিকে চলে গেল ! তানজিনার তবুও চোখ খুলে দেখার সাহস হল না ! অবশেষে অনেক সাহস করে যখন চোখ খুলল তখন জীবনের সব থেকে অদ্ভুত দৃশ্যটা দেখতে পেল ।

তানজিনা দেখলো কালো রংয়ের টি শার্ট আর ঘিয়ে রংয়ের প্যান্ট পরা একটা রোগা পাতলা ছেলে সিংহের মুখ টা হাত দিয়ে ধরে রেখেছে এবং এমন ভাবে ধরে রেখেছে মনে হচ্ছে যেন সে কোন সিংহের মুখ না বরং বিড়ালের মুখ ধরে রেখেছে !

ছেলেটার মুখ দেখা যাচ্ছে না, কারন ছেলেটা একটা মাস্ক পরে আছে ! কিন্তু ছেলেটা চিনতে তানজিনার একটুও কষ্ট হল না । সেই ফ্লাইই ওভারের ছেলে টা ! ওর চোখের সামনে ও যেমন করে একটা স্কুল বাস চেপে ধরে ছিল !

সেই সুপারম্যান !!

ঢাকাইয়া সুপারম্যান !





১১/০৫/২০১৪, বকুল তলা, চারুকলা



-তুই কি বললি ?

-বললাম আমার কেন জানি মনে হচ্ছে ঐ ছেলে টা আসলে তুই !

-কোন ছেলেটা ?

-ঐ যে সুপারম্যান !

সুমন একটা কোকের বোতল খুলে মুখে দিয়েছে, নীলার কথা শুনে মুখ থেকে সব টুকু বের হয়ে এল !

-সুপারম্যান ? আমি ?

-হুম !

-তুই যে গাধা এইটা তো আমি আগে থেকেই জানতাম । এতো বড় গাধা আগে জানা ছিল না ! কি হিসাবে বললি ?

-দেখ আমার এটা মনে হচ্ছে । ওভার ব্রীজের কথা টা ধর ! ঐ দিন তোর যাত্রাবাড়ি যাওয়ার কথা ছিল । তারপর চিড়িয়াখানার কথাটা ধর, ঐ দিন তুই টিকেট আনতে গেলি আর দেখা নেই ! পরে ওখানে কে যে সিংহ টাকে ধরে সেই ছেলে টা খাঁচায় পাঠিয়ে দিয়েছে !

ওখানে একজন মেয়ে ডাক্তার ছিল । টিভিতে তার সাক্ষাৎকার আমি দেখেছি । এবং আশ্চর্যের বিষয় ওভারব্রীজের ওপাশেও মেয়েটা ছিল । মেয়েটা সুপারম্যানের চেহারা এবং বডির যে বর্ণনা দিয়েছে তা হুবাহু মিলে যায় তোর সাথে !

-কিন্তু আমি তো শুনলাম চিড়িয়াখানায় নাকি ছেলে টা মাস্ক পরা ছিল ।

-কিন্তু ওভার ব্রীজের উপরে ছিল না ! তার উপরে ……

-তার উপর ?

-গত কালকের ঘটনা ?

-গত কালকে কি ?

-তুই এমন একটা ভাব করছিস যেন জানিসই না !

-রেল ক্রসিং ?

-হুম ! জ্যামের কারনে একটা বাস রেল লাইনের উপরে আটকে যায় ! আর তখনই ট্রেন এসে হাজির ! ঠিক ঐ মুহুর্তেই ছেলেটা এসে হাজির ! পুরো বাস টা কে উচু করে পাশে সরিয়ে দেয় !

এবং

-এবং কি ?

-এবং এটার একটা ভিডিও আছে ! একজন তার মোবাইলে ভিডিও করেছে ! ইউটিউবে ছেড়ে দিয়েছে ! এই দেখ !

সুমন ভিডিওটা দেখলো । তারপর বলল কই এখানে তো কিছুই বুঝতে পারছি না !

নীলা বলল

-দেখ সুমন, ভিডিওটার কোয়ালিটি ভাল না ! কিন্তু চেনা মানুষ টা কে কিন্তু আমি ঠিকই চিনতে পারছি !

-হুম বুঝলাম !

-কি বুঝলি ?

-বুঝলাম যে তোর চোখের ডাক্তার দেখনোর সময় চলে এসেছে ! সুপার ম্যান তাও আবার আমি ? হেহে হে হে





১৭/০৫/২০১৪ সকল নয়টা, শাহবাগ



ট্রাফিক সার্জন আজিম আলী প্রথমে জিনিস টা লক্ষ্য করে ! শাহবাগ জাদুঘরের সামনে একটা মাঝারী সাইজের কার্ভাট ভ্যান দাঁড়িয়ে রয়েছে । একটা কুকুর সেই কখন থেকে ভ্যান টার সামনে দাঁড়িয়ে ডেকেই চলেছে !

আজিম আলী পায়ে পায়ে এগিয়ে গেলেন ! কাছে গিয়ে দেখেন ভ্যান টার চার চাকাতেই হাওয়া নেই । কখন থেকে পরে আছে এখানে কে জানে ? নাম্বার প্লেট দেখতে গিয়ে একটু খটকা লাগলো !! নাম্বার প্লেট নেই !

তিনি কন্ট্রোল অফিসে ফোন দিলেন !





সকাল ১১ টা ৪১



নীলা নিজের রুমে শুয়ে আছে । আজকে ক্যাম্পাসে ক্লাস নেই ! হঠাৎ মায়ের চিৎকার শুনে টিভির গিয়ে দেখে মা টিভি দেখছে !

-কি হয়েছে ?

নীলার মা কিছু বলল না কেবল তাকিয়ে রইলো টিভির দিকে ! টিভিতে একটা সংবাদ দেখাচ্ছে ! শাহবাগ থেকে লাইভ !

নিচে কেবল একটা লাইন দেখা যাচ্ছে !

বেকিং নিউজঃ শাহবাগে হাইড্রোজেন বোমা আবিস্কার !

যে কোন সময় ব্লাস্ট হতে পারে !

নীলার প্রথমে ঠিক বুঝতে পারলো না ঠিক কি দেখাচ্ছে ! নীলার মা বলল

-আমরা মারা যাচ্ছি রে নীলা !

-কি বলছো মা ?

-হুম ! খবরে দেখলো হাইড্রোজেন বোমারটার ওজন নাকি প্রায় একটন ! ব্লাস্ট হলে পুরো ঢাকা শহর টা উড়ে যাবে ! মানুষ জন কেমন পালাতে শুরু করেছে । কিন্তু কোণ লাভ নেই ! কোন লাভ নেই !

-বাবা কোথায় মা ?

-তোর বাবা অফিসে ! ফোন করেছিল ! এসে পৌছাতে পারবে কি না কে জানে ?

-মা খবর টা ভুল হতে পারে !



নীলা বলল বটে কিন্তু ওর নিজের কাছে কেমন লাগলো ! বুকের ভিতর একটা শূন্য অনুভব করলো ! মারা যাচ্ছে ! হঠাৎ করে মানুষ যদি শোনে যে সে মারা যাচ্ছে তাহলে তার অনুভুতি কেমন হওয়া উচিৎ !

নীলা নিজের অনুভূতিকে কিছুতেই ব্যাখ্যা করতে পারছে না !

সবাই মারা যাবে ।

আপনা থেকেই একফোটা পানি বের হয়ে এল চোখ দিয়ে ! এমন সময় ওর মোবাইল ফোন টা বেজে উঠলো !

সুমন !

-হ্যালো !

-একটু তোর ঘরে আয় তো !

নীলা কিছু না ভেবে নিজের ঘরের দিকে রওনা দিল । একবার মনেও হল না নিজের ঘরে সুমন ওকে কেন যেতে বলছে । যখন নিজের ঘরে আসলো সুমন বলল

-জানলা টা খোল !

বিনা বাক্যে জানলা খুলতেই নীলা একটা ছোট খাটো ধাক্কার মত খেল !

ঠিক জানালার বরাবর সুমন দাঁড়িয়ে আছে । কিন্তু ওদের বাসায় তিন তলায় ! কেউ একজন চাইলেই জানলার বরাবর দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না !

সুমন কেবল ভেসে রয়েছে শূন্যে !

সুমন বলল

-তোর ধারনাই ঠিক ! আমিই সেই রোগা পাতলা ছেলে টা !

নীলা কেবল তাকিয়ে রইলো কিছু বলতে পারলো না ! সুমন বলল

-আমি যাচ্ছি রে ! হয়তো আর দেখা হবে না ! ফিরতে পারবো কি না জানি না !

-কোথায় ?

এই কথার জবাব সুমন দিল না ! কেবল একটু হাসলো ! তারপর বলল

-একটা কথা তোকে অনেক দিক ধরে বলতে চাচ্ছিলাম ! আজকে না হলে হয়তো আর জানাতে পারবো না ! তাই জানাতে আসলাম !

নীলা জানে কথা টা কি ! খুব ভাল করে জানে !

সুমন বলল

-তোকে অনেক ভালবাসি রে !

আরও এক ফোটা জল গড়িয়ে পড়লো নীলার চোখ দিয়ে !

-আমি জানি !

-আমিও জানি যে তুই জানিস ! কিন্তু কোন দিন তো বলি নি ! আজকে যদি না বলি হয়তো আর কোন দিন বলা হবে না !

নীলা কোন কথা বলতে পারলো না !

সুমন হেসে বলল

-তুই ভয় পাস না ! আমি থাকতে তোর কিছু হবে না ! কিছু হবে না !

-তুই কি করতে যাচ্ছিস ? বল আমাকে ! বল !

-সময় নেই ! যাই !

-দাড়া ! প্লিজ ! প্লিজ ! দাড়া !!



নীলার সামনেই মাস্ক টা পরে নিল । তারপর উড়ে চলে গেল , যতক্ষন দেখা যায় তাকিয়ে রইলো সেদিকে !



একটা পরে আবারো মায়ের গলায় আওয়া পেয়ে টিভির রুমে হাজির হল !



-নীলা দেখ ! সেই ছেলেটা !

নীলা জানতো সুমন এখানেই যাবে ! টিভিতে সুমনকে সরাসরি দেখা যাচ্ছে ! সুমনের গায়ের লাল রংয়ের একটা টিশার্ট রয়েছে এই পহেলা বৈশাখে নীলা নিজের কিনে দিয়েছে ওটা ! মুখে কালো রংয়ের মাস্ক পরা !





সকাল ১১টা ৫০ মিনিট



-আপনি কি করতে চাচ্ছেন ?

সাফাত হোসাইন ছেলেটাকে জিজ্ঞেস করলো !

-এখন তো কিছু করার নাই ! সময় কম আমি জানি ! কখন ব্লাস্ট হবে ?

-সাফাত হোসাইন ঘড়ি দেখলো । এখন থেকে ঠিক ৯ মিনিট পরে ! কিন্তু আপনি এই এক টন ওজনের বোমা টা নিয়ে যাবেন কোথায় ? আমার বাঁচার কোন উপায় নেই ! আমরা এখন সবাই মারা পড়বো !

-দেখি চেষ্টা করে ! কিছু হইয় নাকি !



সাফাত হোসাইন ডিবির একজন উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা ! সেই সাথে তিনি একজন বোম স্পেশালিস্ট বটে । তিনি খবর পেয়ে বোমা টা পরীক্ষা করতে আসেন ! কিন্তু ততক্ষনে অনেক দেরী হয়ে গেছে । এই বোমা কিছুতেই নিস্ক্রিয় করা যাবে না ।। তার উপর বোমা টা দূরে নেওয়ার কোন উপায় নেই এখন ! এতো ওজনের বোমা এতো সহজে স্থানান্তর করা সম্ভব নয় ! তবে বোমা ঠিক হাউড্রোজেন বোমা না ! তবে ঐতার মতই ! কাছাকাছি !

সাফাত হোসাইন কি করবেন কিছু বুঝতে পারছিলেন না । অনেকে সরে পরেছে কিন্তু সাফাত হোসাইন যান নি । গিয়ে কোন লাভ হবে না জানেন উনি খুব ভাল করেই !



ঠিক তখনই দেখতে পেলেন ছেলেটা উপর থেকে নেমে এল । খুব স্বাভাবিক ভাবেই ! ছেলে টা সম্পর্কে তিনি আগেও শুনেছেন কিন্তু নিজের চোখে আজই প্রথম দেখছেন !

কয়েকদিন আগে বেশ হইচই ফেলে দিয়েছিল ছেলে টা ! লোকে তাকে ঢাকাইয়া সুপারম্যান বলে ডাকে । কেউ বলে দেশী সুপারম্যান । আবার কেউ বলে অতিমানব। কেউ তার আসল পরিচয় জানে না ! কোথাও কোন বড় ধরনের বিপ্দ হলেই ছেলেটা হাজির হয়ে যায় ! তবে মুখে একটা মাস্ক পরে থাকে যাতে করে তার চেহারা দেখা না যায় ! সবাই তাকে পছন্দ করে ! এমন কি তার মেয়েও এই ঢাকাইয়া সুপারম্যানের বড় একজন ভক্ত !



সাফাত হোসাইন আবাক হয়ে দেখলেন কাভার্ট ভ্যান টা থেকে কিভাবে ছেলে টা এক টন ওজনের বোমা টা টেনে বের করলো ! সাইজে খুব বেশি বড় হবে না একটা ওয়াশিং ম্যাসিনের মত সাইজ বোমাটার । কিন্তু এতো ওজন ভিতরের উপাদান গুলোর জন্য !



যখন ছেলে টা বোমা টা নিয়ে উড়াল দিল তখনই তিনি দেখলেন ছেলেটা খুব বেশি দ্রুত যেতে পারছে না । এতো ওজনের কারণে ! যে সময় আছে তাতে ছেলে খুব বেসি দূরে যেতে পারবে না ! তবুও ছেলে টা উড়ে যেতে দেখলেন ! বুকে একটু আশার আলো দেখা দিলো বেঁচে থাকার ! কিন্তু ছেলেটা নিজে কি বেঁচে থাকতে পারবে ?







বেলা এগারোটা ৫৮ মিনিট, বুড়িগঙ্গা নদী, সদরঘাট !



আব্দুল করিম কালো পানির দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলো এক ভাবে ! এটাকে পানি বললে খানিকটা ভুল হবে । অন্যে যে কারো এই পানির স্পর্শে চামড়ায় রোগ দেখা দেয় সেখানে প্রতিদিন নির্দ্বিধায় ব্যবহার করছেন ! কেবল খাওয়া বাদ দিয়ে সব কাজই চলে এই পানি দিয়ে !

আব্দুল করিম বদনা ভর্তি করে নিলেন ! তখনই একটা অবাক করা জিনিস দেখলেন !

নদীর ঠিক মাঝ খানে পানি থেকে প্রায় ১০/১২ ফুট উচুতে একজন ভেসে রয়েছে ! হাতে বড় সাইজের একটা টীনের বাক্স ! মানুষ টা পানির দিকে তাকিয়ে কছু একটা খুজছে ! চোখ বড় বড় করে আব্দুল করিম তাকিয়ে রইলো ভেসে থাকা মানুষটা দিকে !

এটা কি সম্ভব ?

কোন ভাবে মানুষ কি শূন্যে ভেসে থাকতে পারে ? তিনি ঠিক দেখছেন তো ! হাতে বদনা টা ফেলে দিয়ে চোখ কঁচলে ভাল করে তাকিয়ে দেখলেন !

না ঠিকই আছে । সেখানেই আছে ! এখনও ভেসে আছে !



আব্দুর করিম চিৎকার করে কাউকে ডাকতে যাবেন তখনই তিনি দেখলেন ভেসে থাকা মানুষটি তীব্র বেগে পানিতে ঝাপিয়ে পরলো সাথে বাক্স টা নিয়ে !



ঠিক তার এক মিনিট পরে হঠাৎ করেই পুরো এলাকা টা কেঁপে উঠলো । আব্দুল করিম দেখতে পেল ভেসে থাকা মানুষ টি যেখানে দিয়ে পানির নিচে গিয়েছিল সেখানে পানি ফুলে উঠছে । উঠতে উঠতে একেবারে ৩০/৩৫ দুট উপরে উঠে পরলো ! তারপর আবার নেমে গেল ধীরে ধীরে !





১৯/০৫/২০১৪, দুপুর বেলা



নীলা মন খারাপ করে টিভি দেখছে আনমনে ! দুদিন থেকেই টিভিতে কেবল শাহবাগের বোমার খবর দেখাচ্ছে । দেখাচ্ছে বুড়িগঙ্গার চারিপাশ টা ! সবাই বেশ আশ্চার্য হয়ে গেছে এটা দেখে যে বুড়ি গঙ্গার কালো পানি কেমন নীলচে রঙ ধারন করেছে । সেদিন সুমন নাকি বোমা টা নিয়ে এই বুড়িগঙ্গায় ডুব দিয়েছিল ! একজন ওকে প্রত্যেক্ষদর্শী দেখেছে নিজের চোখে !

যতবার টিভিতে ঐ খবর দেখছে ততবার ওর চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে । কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না । ছেলেটা এভাবে হারিয়ে যাবে ! বোমা টি তাহলে সুমন নিয়েই চলে গেল । সুমন কি আর কোন দিন ফিরে আসবে না ? কিন্তু এখনও সুমনের বডি পাওয়া যায় নি । নীলা যতক্ষন না নিজের চোখে সুমনের বডি দেখবে অতক্ষন কিছুতেই বিশ্বাস করবে না যে সুমন নেই !



তবুও নীলা আশা নিয়ে তাইয়ে থাকে টিভি পর্দার দিকে । মনে এই আশা যে হয়তো সুমন কে দেখা যাবে কোন জায়গায় !





এই গল্পটা লেখা হয়েছিল ২০১৪ সালে। আজকে নতুন নামে প্রকাশিত হয় এখানে । এর পরে আরেকটা পর্ব লেখা হবে । অনেক দিন ধরে অর্ধেক লিখে রেখেছিলাম ।

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 4.6 / 5. Vote count: 19

No votes so far! Be the first to rate this post.

About অপু তানভীর

আমি অতি ভাল একজন ছেলে।

View all posts by অপু তানভীর →

One Comment on “অতিমানব – সেকেন্ড স্টেজ”

  1. যদিও এটা গল্প। তবুও হিরো অথবা সুপার হিরোদের প্রাপ্তি সবসময়ই করুণ হয়। যারা সবার ভালো চিন্তা করে তাদেরকে আমরাই ভালো থাকতে দেই না! আমরা মানব জাতি এতটাই অকৃতজ্ঞ। আপনার লেখা সবসময়ই দারুণ। ধন্যবাদ এবং শুভকামনা রইল ভাই।

Comments are closed.